তুই তারারে ভিনদেশী পর্ব-০৩

0
765

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫

লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

পর্বঃ০৩

ব্যাগ খুলে যেন আকাশ থেকে পরলো আফরিন ব্যাগ ভরতি চকলেট। আর একটা বক্স। আফরিন ভাবে বমটম কিছু হবে নাতো আবার!!! কানের কাছে নিয়ে দেখে টিকটিক করে শব্দ আসছে। আফরিন সেটা শুনে ভয় পেয়ে যায় আর সেটা বিছানায় ছুড়ে মারে। তাড়াতাড়ি করে সে নিচে নামতে যাবে কিন্তু তার আগে তার ভালো করে দেখা উচিত সেটা আদেও বম কিনা। দরজা লাগিয়ে বসে পরে বক্সটা নিয়ে। রেড কালারের রেপিং পেপার দিয়ে খুব সুন্দর করে রেপিং করা।
___________

আফরিনের যখন সেন্স আসে দেখে নিজেকে হসপিটালের বেডে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে অহনা আর অন্যা আসছে। আফরিনের সেন্স ফিরে আসেতে দেখে। অহনা আর অন্যা এক বিশ্বজয়ের তৃপ্তিতে হাসি দেয়। তখনই ভিতরে ঢুকলো আহান আর কৌশাল। আফরিনকে দেখে কৌশাল বলে

—– ফাজিল মেয়ে ভয় দেখিয়ে দিয়েছিলে। আফরিনের ওদের কোনো কথা কানে যাচ্ছে না। তার একটাই কথা একটা মানুষ এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে। এর প্রতিশোধ তো আফরিন ঠিকই নিবে।

অন্যা বলে

—– কিরে কই হারিয়ে গেলি। নাকি স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছিস। আফরিন বলে

—- পানি খাবো একটু। অহনা পানি এনে দেয় আফরিনকে তিনবারে পানিটা শেষ করে। কিছু সময় রেস্ট নিয়ে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসে আফরিন। মা বাবা জানলে তুলকালাম লেগে যাবে। হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসার সময় আফরিন খেয়াল করে একটা বাইক। এটা তো আদিত্যর!!!! আশ্চর্যের ব্যাপার আদিত্যর বাইক হলে সে কোথায়?? আর একই বাইক অনেকেরই থাকে।

______________

আফরিন চুপচাপ বাসায় চলে আসে। সারাটা রাস্তা ভেবেছে কিভাবে আদিত্যকে শায়েস্তা করতে পারবে। ব্যাটা এনাকন্ডার তালগাছ, নারকেলগাছ। বাসায় এসে দেখে শাওয়ান বসে বসে টিভি দেখছে……. আর। তার মা তার বাবা আর অনুকে খেতে দিয়েছে। পরিবারটা তাদের বেশ ছোট কিন্তু সুখে ভরপুর। আফরিন মুচকি হাসি দিয়ে বলে

—— আম্মু খাবার দাও ফ্রেশ হয়ে আসছি। শাওয়ান বলে

—– আসছে মহা রাণী ভিক্টরিয়া। আফরিন বলে

—– জানিতো হিংসে হয় আমার থেকে জানি!! আফরিনের বাবা বলে

—— পরীক্ষা কেমন হলো আরু? আফরিন বলে

—– বেশ ভালো। আফরিনের আম্মু ধমক দিয়ে বলে

—– আফরিন ফ্রেশ হয়ে আয় যা।

__________

আফরিন নিজের রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। তখনই মনে পরে অহনাকে একটা কল দিয়ে জানিয়ে দেওয়া উচিত যে সে ঠিক ভাবে বাসায় পৌঁছে গিয়েছে। (বাকিটা জানেন) আফরিন বক্সটা খুলে দেখে ঘড়ি। ঘড়িটা তার খুব পছন্দের। যখন আফরিন, অহনা আর অন্যার সাথে সপিং করতে গিয়েছিল তখন তার ঘড়িটা খুব পছন্দ হয়। তখনই অহনা এসে আফরিনকে নিয়ে যায় আরেকটা সপে। পরে আফরিন ঘড়িটার খুজ করলেও সপের মালিক বলে ঘড়িটা কেউ নিয়ে গিয়েছে। আর সেম ঘড়ি ছিল না।

আফরিন এই সব ভাবছে আর তখনই তার ফোনটায় টুং করে আওয়াজ হয়। দেখে একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে মেসেজ। মেসেজটা দেখে আফরিন ভরকে যায়। মেসেজে লেখা

★ ইচ্ছে ছিল নিজ হাতে ঘড়িটা পরিয়ে দিব। কিন্তু না নিজ হাতে তোমাকে রিং পরাবো। আর আজকে যেটা হয়েছে সেটা ঠিক হয়নি। এর জন্য আদিত্যকে শাস্তি পেতে হবে।★

আফরিন রেগে গিয়ে বলে

—– কেরে তুই তোর রিং পরানোর এতো ইচ্ছা । সামনে আসলে একদম মাথা টাক করে তবলা, ড্রাম সব বাজাবো। ইচ্ছা তোর ইচ্ছার মায়ের খালা। আরেকবার মেসেজ দিলে তোকে ফোনের ভিতর ঢুকে পিটাবো। আর ঐ এনাকন্ডার তালগাছকে আমি নিজে দেখে নিব। বায়

…………….

মেসেজের এমন রিপ্লাই পেয়ে মুহূর্তেই মুখ হাসি ফুটে উঠে সেই ব্যাক্তির। সে বলে

—– তা তুমি যা ইচ্ছে দিবে। কিন্তু আদিত্য কে শাস্তি পেতে হবে।

_____________

পরের দিন সকালে ভার্সিটি গিয়ে আফরিন আরেক দফা অবাক । আদিত্যর পরণে সাদা শার্ট ব্লাক পেন্ট সু মাথায় বেন্ডেজ করা, হাতে বেন্ডেজ করা। মানে এর মানে ঐ লোকটা সত্যি বলেছিল । আদিত্যর এই অবস্থার জন্য আফরিনের খারাপ লাগছে। কিন্তু কালকে যেটা করেছে তা ভেবে রাগ। কিন্তু কালকে যে আফরিনকে মেসেজ দিয়ে ছিল সে যে একটা সাইকো সেটা আফরিন বেস বুঝতে পারছে। কিন্তু আফরিন অবাক হয় তখন যখন সে অহনাকে দেখে। এই যেন এক নতুন অহনা।

একটা লেডিস লং কালো রঙের শার্ট । সামনে দিয়ে চুল কাটা মুখে হালকা মেকাপ। ফোনে টাইপ করতে করতে হাসতে হাসতে আসছে। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে আজকে আফরিনও সেম এসেছে অহনার মতো শুধু একটাই তফাত আফরিন হিজাব করা। শার্ট গুলো তারা একসাথেই কিনেছিল। আফিরন এগুলো পরে অবস্থ হলেও অহনা কখনো পরতে চাইতো না। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে অহনার দিকে। আহান পানি খাচ্ছিল হঠাৎ করে অহনাকে এই রূপে দেখে রেগে যায়। রেগে বোতলটা দূরে ছুড়ে মারে। আহানের রাগ হচ্ছে দুইটা কারণে কাল রাতে কোল দিয়েছিল প্রথম ২টা রিং হলে,পরে ফোন অফ দেখায়। সকালে কল বেকও করেনি আর এখন এই রূপে। !!! আহান পিছন থেকে বলে

—— অহনা। কিন্তু অহনা যেন শুনতেই পায়নি এমন ভাব নিয়ে আসে আফরিনের কাছে। আদিত্য কৌশালের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয় কৌশালও সেই হাসির অর্থ বুঝতে পারে।

__________

আফরিনের কাছে গিয়ে অহনা বলে

—– মুখ বন্ধ কর নয়তো মশা, মাছি সব তোর পেটে গিয়ে বাসা বাঁধবে। আফরিন অহনার কোপালে হাত দিয়ে বলে

—- বোইন তোর জ্বর আসছে। না মানে তুই এমনে কেমনে? অহনা বলে

—– বাদদে তো। এখন চল আজ অন্যা আসবে না। ওর নাকি শরীর খারাপ।

আহান রেগে বম হয়ে গেছে । আদিত্য গান ধরে

—- Aggg… asi lagai maza agaya…. কৌশাল সহ সবাই হাহাহ করে হেসে দেয়। আহান বলে

—– মজা নিচ্ছিস? দেখছিস কিভাবে এসেছে ও এভাবে কেন আসবে? কাল রাতে কল ধরেনি।৷ আর আজ সবার সামনে ইগনোর?

কৌশাল বলে

—— ওতো একদিন করেছে তুই!! আর তুই তো ব্রেক চেয়েছিলি তাই না?! তো প্যারা নিস কেন? প্যারা নাই চিল বাবু। আদিত্য বলে

—- চল ক্লাস শুরু হবে। তখনই কৌশাল বলে

—-, আদি তুই কিন্তু বললি না তোর এই অবস্থা কিভাবে হলো? আদিত্য বলে

—– বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছে। আর কথা না এবার চল।

_____________

১ম ক্লাস শেষ করে গান গাইতে গাইতে বের হচ্ছে আফরিন

—— পানির নিচের ডলফিনডা তো জঙ্গলের মতোন হেইডাতো জঙ্গলের মতোন। অহনা বলে

—- ঐ ছ্যামরি পাগল হয়ে গেছেছ কি উল্টা পাল্টা কস!!! আফরিন রাগী চোখে তাকিয়ে বলে

—- হো পাগল হইছি। তোর রূপের আগুনে পাগল। জীবনে এমনে আইছোছ ভার্সিটি কেলেজেও তো দেখি নাই!! এমন পরিবর্তন কেমতে হইলো। কবি এখন নয়তো তোরে তিতা করল্লার জুস পান করাইয়া ইন্তেকাল করামু।

অহনা বলে

—– তুই একটা পাগল কি বলস। আর ঐ ডলফিনের কথা কার থিকা শিখলি? আফরিন বলে

—– ইয়ামিন। ওকে আমার সেই ভালোলাগে পুরাই রসগোল্লা। মনডা চায়। অহনা বলে

—– চুপ যা। সামনে দেখ। এতখন আফরিন উল্টো দিকে ঘুরে হাটছিল আর কথা বলছিল। এখন তাদের বায়োলজি ক্লাস তাই ল্যাবে যাচ্ছিল। আফরিন যেই না সামনে ঘুরতে যাবে তখনই কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে যায় সরি উপরে পরে যায়। আর সেই মহান ব্যাক্তি আর কেউ না…… আমাদের আদিত্য।

( নাও দিলাম একটু রোমান্টিক সিন এখন যদি কেউ বলছ অশ্লীলতা তাইলে জীবনে গল্প লেখুম না)

আদিত্যর হাতে আগে ব্যাথা ছিল এখন আবার আফরিন তার উপরে পরে যাওয়াতে বেশ ব্যাথা পেয়েছে। সে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে। আফরিন তাড়াতাড়ি উঠে পরে আদিত্যও। আফরিন খেয়াল করে দেখে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আফরিন রেগে বলে

—— এখানে মাদারী খেলা হচ্ছে না। যাও এখান থেকে। বলতে বলতে নিজেও দেয় দৌড় । আদিত্য বলে

—– হেই অহনা তোমার ঐ ইস্টুপিট বান্ধবীকে ডাকো। আমি ধরলে খবর আছে। অহনা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে

—- আমি কেন এখন যদি সয়ং আমার হাসবেন্ডও ডাকে তাহলেও আসবে না। আহান মনে মনে খুশি হয়ে যায়। আদিত্য বলে

—– তা বিয়ে করলে কবে.? অহনা বলে

—– করেনি করব ইনশাআল্লাহ্ পাত্র দেখেন। এখন আসি ভাইয়া। অহনার শেষের কথাটা যেন আহানের জন্য আগুনে ঘি ঢালার মতো ছিল। রেগে গিয়ে দেওয়ালে পান্ঞ্চ মারতে গেলে অহনা ধরে ফেলে আর বলে

—– আরে আরে পাগল নাকি? এভাবে কেউ মারে? এইভাবে মারে। বলেই আহানের মাথাটার পিছন দিক দিয়ে ধরে দেওয়ালের সাথে বেশ জুড়েই মারে। এই ঘটনায় সবাই অবাক। আদিত্যের ধারণার বাইরে ছিল অহনা রেগে এমন কিছু করবে। অহনা বলে

—– এখন ঠিক আছে একটু পর এখানে মিষ্টি আলু হবে৷ আসি,,, ভাইয়া আজকে আমি আফরিনের বাসায় যাবো। আর সেখানেই থাকবো। শাওয়ান ভাইয়ার কাছে কিছু পড়া দেখে আসবো।

কৌশাল তো মুখ চেপে হাসছে কারণ সে জানে তার বোন সহজে রাগে না কিন্তু রাগলে ২য় মুক্তি যুদ্ধ শুরু।

________

ভার্সিটি ছুটি হতে ১০ মিনিট বাকি। অহনা গিয়েছে লাইব্রেরীতে। আর আফরিন বাইরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে হঠাৎ করেই কেউ একজন পিছন থেকে তার মুখ বন্ধ করে তার পাশের ফাঁকা ক্লাস টায় নিয়ে যায়,,,

চলবে।