তুই তারারে ভিনদেশী পর্ব-১০

0
717

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫

লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

পর্বঃ10

সবাই একসাথে বসে ভুতের মুভি দেখছে। হঠাৎ করে মুভিতে ভূতের আগমন ঘটলে আফরিন বলে

—- ওয়াও ভূতটাকি কিউট। সবাই একসাথে আফরিনের দিকে তাকিয়ে। ভূতটার দাঁতগুলো ছিলো এতো বড় বড় আর রক্তে মাখানো। মুখের অবস্থার কথা না হয় বাদই দিলাম। অহনা বলে

—- তোকে তো আবার ভূতে ধরলো না? আফরিন হাসি দিয়ে বলে

—- ভূতের ঠ্যাকা পরছে। আদিত্য বলে

—- তুমি আদেও মেয়ে? আফরিন বলে

—- না আমি তো আপনার জমজ ভাই। কি মুভি এইটা!! রাতের বেলা কেউ এগুলো দেখে। আমি গেলাম ঘুমাতে। বলেই আফরিন চলে যায়। আর সবাই একসাথে হেসে দেয়। তখনই আদিত্য বলে

— একটা জরুরি কল,, তোরা দেখ আমি আসছি।

আফরিন রাগ দেখিয়ে চলেতো এসেছে কিন্তু এখন ভয় লাগছে। ড্রয়িং রুম থেকে মুভির মিউজিক গুলো স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে। তখন তার ফোনে কল আসে। আফরিন রিংটোন শুনে ভয় পেয়ে যায় কিন্তু পরে দেখে তার ফোন বাজছে। সে ফোনটা তুলে কারণ সে জানে এটা কে। ওপাশ থেকে বলে

—- কি খবর মেম!! আজকের সারপ্রাইজটা কেমন লাগলো। আফরিন কি বলবে বুঝতে পারছে না তাই সে বলে

—- কে আপনি? ওপাশ থেকে একটু নিরব থেকে বলে

—- বললামতো খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবে। খেয়েছ? আফরিন বলে

—– হুম,, আপনি?

—- হুমম,,, তারপর কি করছিলে?

—- ভূতের মুভি দেখছিলাম।

—- ভূতেরা কিন্তু অনেক কিউট হয়,, দেখ আবার তোমার মতো কিউটিকে পেয়ে না বলে,, তুমিও কিউট আমিও কিউট চলো বিয়ে করে নেই। ছেলেটা এটা লাগে। আফরিন রেগে গিয়ে বলে

—- তাহলে আপনি বা কেমন সাইকো লাভার? যে নিজের পছন্দের মানুষটাকে আরেকজনের হাতে তুলে দিবে। আফরিন রাগের মাথায় কি বলেছে সে বুঝতে পারেনি যখন মনে আসে। সে চুপ করে যায়। ছেলেটা বলে

—- অন্যার হাতে তোলাতো দূরে থাক। কেউ চোখ দিয়ে তাকালে জানে মেরে দিব। আফরিন কথা ঘুরানোর জন্য বলে

—- মানুষ চোখ দিয়েই তাকয়,, কান দিয়ে না।

ছেলেটা বুঝতে পারছে আফরিন কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছে তাই সে বলে

—- আচ্ছা মুভি দেখো যাও। আফরিন বলে

—- আপনি কি ভাবে!! কথা শেষ হওয়ার আগেই ছেলেটা বলে

—- মাথামোটা তুমি বলছো। আল্লাহ হাফেজ। বলেই ফোনটা কেটে দেয়। আফরিন বলে

—- খবিশ একটা। আমি একা ঘুমাতে পারবো না। ঐখানে যাই। একরকম সবাই একসাথে বসে বসে মুভি দেখেছে আফরিন গিয়ে বসে পরে আদিত্যর পাশে। অন্যা কৌশালকে বলে

—- আমার ভয়ে খুদা লাগছে কি খাবো। কৌশাল বলে

—- দাড়াঁও ভূত কাউকে মারুক তারপর যখন ঘার মটকে রক্ত খাবে তখন বলবনে আমার পত্নীটাকেও একটু দাও। অন্যা মুভির তালে তাল মিলিয়ে বলে

—- ঠিক আছে। আর তখনই কৌশাল জুড়ে হেসে দেয়। আফরিন ভয়ে সোফার উপরে দাড়িয়ে যায়। প্রথম দিকে সবাই ঘাবড়ে যায় পরে যখন কৌশাল সবটা বলে,, সবাই একসাথে হেসে দেয়। অন্যা বলে

—- প্যারা নাই,, এখন আমি তোমার রক্ত খাবো। তার আগেই কৌশাল উঠে দাড়ায় আর বলে

—- চকলেট? সবাই রাজি হয়ে যায়। কিন্তু আদিত্য নিজের চকলেট টা সাইডে রেখে আফরিনকে বলে

—- তুমি উঠ নয়তো তোমার কোলে শুব। আফরিন বলে

—- কেন উঠব আমি এখানেই বসবো। আপনি রুমে গিয়ে ঘুমান আদিত্য ঠুস করে আফরিনের কোলে শুয়ে বলে

—- ভালো মতে বলেছিলাম শুনুনি,, এখন আমাকে ডিসটার্ব করবা তো দেখ। আফিরন বলে

—- বেশি বেশি হচ্ছে। আদিত্য বলে

—- আচ্ছা শুন আমার মাথার চুলগুলো টেনে দাও তাহলে টেবিলে রাখা চকলেট টা তোমার। সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে । আফরিন রেগে বলে

—- আমি আপনার বিয়ে করা বউ নাকি। আদিত্য চোখ বুজে বলে

— হতে কতখন? আর আমার ইচ্ছে নেই তোমাকে বিয়ে করারা। আমার একজন আছে। আফরিন বলে

—- তো তার কাছে জান না। আর এগুলো মরার মতো কি দেখছে। আদিত্য বলে

—দেখুক তুমি তোমার কাজ কর। আর চকলেট টা যেহেতু খাবা না আমি,, আর আফরিন সাথে সাথে চকলেট নিয়ে নেয়। আদিত্য কিছু বলেনা।

আফরিন চকলেট খাচ্ছে আর মাঝে মাঝে আদিত্যের মাথায় বিলি কাটছে। একসময় সে আদিত্যর মুখের কাছে চকলেট টা নিয়ে যায় আদিত্য একদফা অবাক হয় কিন্তু পরে নিজেও খেতে লাগে। আফরিন ভুলে গিয়েছে এটা আদিত্য সে মনে করেছে এটা অহনা। আফরিন যখন অহনাদের বাসায় আসে তারা প্রায় এমন করে।সাথে কৌশালও তাল মিলাতো। অহনা হঠাৎ করে আফরিনের দিকে তাকিয়ে দেখে আদিত্য আফরিনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে মুভি দেখছে আর চকলেট খাচ্ছে। অহনা আহানকে ধাক্কা দিয়ে দেখায়। আহান তা দেখে মুচকি হাসি দেয়। কৌশালকে ইশারা করলে কৌশাল বলে

— সে আগেই দেখেছে।।

__________

দেখতে দেখতে সূর্যের আলোক রশ্মি চারদিকে ছড়িয়ে পরছে। আদিত্য চোখমেলে তাকিয়ে দেখে সে এখনো আফরিনের কোলে ঘুমানো। আফরিন সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। মুভি এখনো চলছে অটো প্লে থাকার কারণে। মুভি দেখতে দেখতে কাল কখন যে সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছিল তা জানা নেই, সবাই অনেক ক্লান্ত ছিল। অহনা আহানের কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছে, কৌশাল সিঙ্গেল সোফায় বসে বসে হা করে ঘুমাচ্ছে আর অন্যা অহনার কোলে। আদিত্য উঠে বসে। সকালটা এভাবে শুরু হবে ভাবতে পারেনি সে। তারপর একে একে সবাইকে ডাকে। সবাই ঘুম থেকে উঠে। ১০ টার দিকে সবাই ভার্সিটির জন্য বেড়িয়ে পরে। অহনা যায় আহানের বাইকে আর অন্যা যায় কৌশালের বাইকে। আফরিন রিক্সায় যেতে চাইলে আদিত্য দেয় এক ধমক। তারপর সেও আদিত্যর সাথে ভার্সিটির জন্য বেড়িয়ে পরে।।।।
__________

দুইটা ক্লাস করার পর আফরিনের আর ক্লাসে মন বসছে না। তাই সে,,, অহনা আর অন্যা ক্লাস না করে কেন্টিনে চলে যায়। সেখানে আদিত্য, কৌশাল আর আহান আরো অনেকে ডেকোরেশন করা জিনিস গুলো খুলছে। কৌশাল অহনা ওদের দেখে বলে

—- তোরা এখানে কি করছিস ক্লাস না করে? অন্যা বলে

—- আপনার শালীকার ভালো লাগছিল না। তাই আর আমাদের ক্লাস করা হয়নি। আহান বলে

—- এখন কোথায় যাচ্ছো? আফরিন বলে

—- কেন্টিনের দিকে। আদিত্য সেখান থেকে বলে

—- সোজা বাসায় যাও। আফরিন বলে

—- আসছে যাবো না। আদিত্য বলে

—- আমি যদি আসি তাহলে,, আফরিন বলে

—- কচু,, আপনার এতো কিসের সমস্যা। আদিত্য আর কথা বারায় না। চুপচাপ নিজের কাজে লেগে যায়। অন্যা বলে

—- আফরিন এমন ভাবে না বললেও পারতি,, ভাইয়াতো খারাপ কিছু বলেনি। অহনা বলে

—- ঠিক বলছিস বেশি না বকলে তো ওর ভালোই লাগে না। আফরিন বলে

— বাদদে তো।

———-
রাত ১২টা বাজে আফরিন ফোন হাতে বসে আছে কিন্তু ,,,,, তার কোনো খুঁজ খবরই নেই। আজকে সারাদিনে না কোনো কথা হয়ছে না কোনো রকম দেখা। কেন জানি জিনিসটা আফরিনকে বেশ করে জ্বালাচ্ছে।তার পরের দিন আফরিন তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে পৌঁছে যায়। কারণ কালকে ক্লাস করেনি। সামনে পরীক্ষা তাই নোটও করতে হবে। সকাল সকাল বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। তার মা বললেও সে শুনেনি। বলেছে কেন্টিন থেকে খেয়ে নিবে। ৮ টার দিকে ভার্সিটি পৌঁছে সে নিজের মতো নোট করতে লাগে। এক কাপ কফি হলে মন্দ হয় না। তাই লাইব্রেরি থেকে বেড়িয়ে আসে কেন্টিনে যাবে। কিন্তু আফরিন মাঠের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। পরপর ১২টা বাইক ভার্সিটিতে প্রবেশ করে। কিন্তু আফরিনের নজর মুখে রুমাল বাঁধা ছেলেটার দিকে। সাথে কৌশাল , আহান। এর মানে এটা আহানদের গ্রুপ। রুমাল পরা ছেলেটা নিজের রুমালটা…..

চলবে.