তুমিময় নেশা পর্ব-০৬

0
120

#তুমিময়_নেশা (৬)

অদ্ভুত লাগে সবটা। অদ্রি’র সাথে রাগীবের সম্পর্কটা খুব দ্রুতই আগাচ্ছে। রাগীব যত্নশীল। সর্বদা খোঁজ খবর রাখে। মাঝে মাঝে অদ্রি’র মনে হয় এই পৃথিবীটা এত সুন্দর রাগীবের সাথে সম্পর্ক না হলে, ও সত্যিই জানত না। স্বভাবতই গোসল শেষে চুল শুকাচ্ছে অদ্রি। তার চুল গুলো রাগীব একটু বেশিই পছন্দ করে। যখনই কাছে আসবে তখনই ছুঁয়ে দেখবে। চুলের গন্ধ নিয়ে বলবে এই চুলে মাদক রয়েছে। অদ্রি তখন কি এক লজ্জায় নুয়ে থাকে। অথচ কোনো কালেই সে লাজুক ছিল না। সব কেমন স্বপ্ন, এক ঘোর। অদ্রি চোখ বন্ধ করেও রাগীবের উপস্থিতি টের পেল। এর কারণ ছেলেটার গায়ে মাখা মারফিউম। ও যখন চোখ মেলে চাইল। মৃদু হেসে বলল,”রাগীব?”

কিয়ৎকাল যাওয়ার পর ও রাগীব কোনো জবাব দিল না। অদ্রি হেসে পেছন ঘুরে তাকাল। না কেউ নেই। অদ্রি একটু অবাক হলো। ছেলেটা তার সাথে মজা নিচ্ছে? হতেও পারে। অদ্রি বুক ভরে শ্বাস নিল। ঘ্রাণটা এখনো আছে।

চুল শুকিয়ে তবেই নিচে নামল সে। এসে দেখল রাগীব বসে আছে। কিছুটা চিন্তিত দেখাচ্ছে। অদ্রি কাছে এসে বলল,”কি হয়েছে?”

“কিছু না। বোসো।”

অদ্রি বসতেই মেয়েটিকে নিজ বাহুডোরে আগলে নিল রাগীব। অদ্রি কিছুটা নিচু সুরে বলল,”আন্টি আছেন তো।”

“তো?”

“তো মানে। লজ্জা পাব না?”

“হুম।”

“কি হুম? আপনার কি হলো?”

রাগীব জবাব দিল না। অদ্রি চেয়ে রইল চাতক পাখির মতন। এক সময় অধৈর্য হয়ে শুধাল,”রাগীব, কথা বলছেন না কেন?”

রাগীব চাইল। তার চোখে মুখে চিন্তা দৃশ্যমান। অদ্রি দু হাতে পুরুষটির গাল ছুঁয়ে দিল।

“কী?”

“তেমন কিছু না।”

“বলবেন না?”

“সত্যিই কিছু না। তুমি টেনশন কোরো না। পড়াশোনা কেমন হয়?”

“ঠিক ঠাক।”

“আচ্ছা।”

“হুম। একটু আগে যখন ডাকলাম তখন সাড়া কেন দিলেন না?”

“কখন?”

“ঐ তো ছাদে……

ওদের কথা ওখানেই থেমে গেল। রোকেয়া দোতলা থেকে নামছেন। দুজন দূরত্ব সৃজন করে বসল। অথচ তাদের সম্পর্কটায় খুব বেশি লুকোচুরি নেই। তাদের এই দূরত্ব নেহাতই ভদ্রতার খাতিরে।

“রাগীব কখন এলে?”

“এই তো আম্মু।”

“চা খাবে তোমরা?”

অদ্রি মাঝ পথে বলল,”আমি আনছি আন্টি।”

রাগীব ওর হাত টেনে ধরল। অদ্রি অসহায় নয়নে তাকিয়ে। রোকেয়া তাদের দুজনের দৃষ্টিই যেন পড়তে পারলেন। তাই মৃদু হেসে বললেন,”আমি আনছি। তোমরা বসো।”

রোকেয়া চলে যেতেই অদ্রি কিছুটা অসন্তোষ সুরে বলল‍,”এটা কী হলো?”

রাগীবের ভাবলেশহীন জবাব,”কী আবার?”

“আপনি আন্টির সামনে ওমন কেন করলেন?”

“কারণ………এমনি।”

“উফ আপনি একটা অদ্ভুত লোক।”

অদ্রির বলার ভঙ্গিমায় হেসে ফেলল রাগীব। অদ্রি চেয়ে রইল। এক সেকেন্ড দু সেকেন্ড করে অনেকটা সময় পার হলো। রোকেয়া চা হাতে নিয়ে ফিরতেই রাগীব একটা জরুরি কাজে বাইরে চলে গেল। চা খাওয়া আর হলো না।এতে মন খারাপ নেমে এল অদ্রির চোখে মুখে। রোকেয়া মেয়েটির মাথায় হাত রাখলেন। কিছু সময় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,”ও ফিরে আসবে মা। টেনশন কোরো না।”

কি এক অদৃশ্য ব্যথায় অদ্রির দু চোখ ভরে ওঠল। রোকেয়া মাতৃ স্নেহে কন্যাটিকে কাছে টেনে নিলেন। ভরসার সাথে বললেন,”খুব দ্রুত দুজনের বিয়ের ব্যবস্থা করব।”

পরেরদিন ভার্সিটি থেকে আসার পথে একটি মহিলার সাথে ধাক্কা লাগল। অদ্রি বেশ ব্যথা পেল। ব্যথার চোটে হাঁটতেও তার কষ্ট হচ্ছে। পথের যাত্রীরা তাকে টেনে ওঠিয়ে রিকশা করে বাড়ি পাঠাল। এই খবরটি রাগীব পেতেই ছুটে এল অফিস থেকে। তাকে বিভ্রান্ত লাগছে। এদিকে অদ্রির পায়ের বেশ কিছু অংশ আ ঘা ত প্রাপ্ত। হাতেও চোট লেগেছে। ঠোঁটের এক কোণ কে টে ছে। সব মিলিয়ে খুবই বাজে অবস্থা। রাগীব এসেই মেয়েটির যত্ন শুরু করে দিয়েছে। কেমন যেন করছে। তার এই অবস্থা দেখে অদ্রি চুপ। রাগীবের প্রতি তার ভালোবাসাটা কেমন বেড়েই চলেছে। ওর কান্না পাচ্ছে। একটা মানুষ এতটা ভালোবাসতে পারে?

এক গ্লাস পানি পান করে ঘুমাতে এল অদ্রি। রাগীব এসে মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে। অনেক নির্দেশ দিয়েছে। সবটা শুনতে হয়েছে অদ্রিকে। চোখ বন্ধ করেও অদ্রির ঘুম আসছে না। কী এক যন্ত্রণা। অদ্রির খুব ইচ্ছা করছে ফোন চাপার। সে ওঠে এসে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করল। ব্যাগের চেইন লাগাতে যাবে ওমনি কিছু একটা নজরে পড়ল। একটা খামের মতন। অদ্রির কেমন লাগল। এটা তো ওর না। তবে? ও খামটা তুলে নিল চটপট। তারপর বিড়াল পায়ে বেডের কাছে এসে দাঁড়াল। লাইট জ্বালিয়ে যেই না খামটা ধরবে ওমনি কল এল। সেতু কল করেছে। নিশ্চয়ই খবর পেয়েছে।

“হ্যাঁ আপু। কী খবর?”

“ভালো।”

“অনেক চোট পেয়েছিস?”

“ভালোই। ধাক্কা লেগে ইটের সাথে আ ঘা ত লেগেছে।”

“ইস খুব কষ্ট হচ্ছে না রে?”

“বেশি না। তুই বাবা মা কে কিছু জানাস নি তো?”

“না।”

“ঠিক আছে তবে। টেনশন করিস না।”

“আচ্ছা। তাহলে ঘুমা।”

“হুম তুই ও।”

কল রেখে অদ্রির একটু মন খারাপ হলো। রোকেয়া, রাগীব যথেষ্ট যত্ন করেছেন। তবে মায়ের যত্নের কথাটা স্মরণ হয়। অদ্রির যখন শরীর খারাপ হয়, তখন মা সারারাত বসে থাকেন। বাবা বার বার দেখে যান। সেতু পায়ের কাছে ঘুমিয়ে থাকে। সবটা স্মরণ করেই অদ্রির এই মন খারাপ। একটা সময় পর কান্নাকাটিও করল। অথচ এই কান্নার কোনো মানে নেই।

অদ্রির ঘুম ভাঙল ভোরের আলোর ছোঁয়াতে। গতরাতে কান্নাকাটি করে কখন যে ঘুমিয়েছে কে জানে। মেয়েটির মুখেই চোখের পানি শুকিয়েছে। কেমন একটা আঠালো ভাব। ও ওঠে গিয়ে মুখ ধুঁয়ে এল। এবার ভালো লাগছে। আয়নার সামনে এসে নিজেকে ভালোমতন দেখল। পায়ের ব্যথাটা কিছুটা কম। তবে হাতের চোট ভালোই। অদ্রি নিজের অগোছালো চুল গুলো গুছিয়ে নিয়ে একটা নিশ্বাস ফেলল। বের হবে তাই বেড থেকে ওড়না নিবে সেসময়েই খামটা নজরে এল। এক কোণে পড়ে আছে। গতরাতের ঘটনা স্মরণ হলো ওর। ও চট করেই খামটা তুলে নিল। আগ্রহ নিয়ে খামটা খুলতেই বেরিয়ে এল বেশ কিছু ছবি। প্রতিটা ছবি ভালো মতন দেখল অদ্রি। ওর মনে হতে লাগল মাথার ওপর আকাশ ভে ঙে ছে। দু চোখ নামিয়েছে নোনা জলের ফোয়ারা।

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি