তুমি আছো তাই পর্ব-০৪

0
255

#তুমি_আছো_তাই
#পর্ব_০৪
#লেখিকা_তাসনিম

“বাবা তোমার সাথে একটু কথা ছিলো”

“এখন না পরে কথা বলবো,যাও এখন”

অনু শাকিলের দিকে তাকালে,শাকিল ইশারা করে এখনি বলার জন্য।

“বাবা,জরুরি কথা ছিল”

“কি কথা”

“বাবা আমমমি এ বিয়ে টা কররতে পারবো নাা”

“কিইই,কি বললা তুমি”

“বাবা,তুমি যা শুনেছো আমি তাই বলেছি”

“মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার,কি সব বলছো এসব”

“নাহ বাবা আমি ভেবে…”

আফজাল সাহেব সবার সামনে অনুকে চড় মেরে বসে, অনু তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়,সবাই অবাক হয়ে যায় এমন কান্ডে।

“এতো বড় সাহস হয় কি করে তোমার, তুমি এ কথা বলো”

“আফজাল ভাই কি হয়েছে আপনার কি বলেছে ও এমন করলেন কেন আপনি”

“রেহানা তোমার মেয়েকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও,আমি ওর মুখ দেখতে চায় না”

অনুর মা অনুকে নিয়ে যাচ্ছিল,তখন শাকিলের বাবা অনুকে আটকালো।

“মা,তুমি কি এ বিয়ে করবে না এমন কিছু বলেছো”

অনু কিছু বললো না ওর দিকে টপটপ করে পানি পড়ছে শুধু। সাহেদ সাহেব শাকিলের দিকে তাকালেন।তারপর আফজাল সাহেব কে গিয়ে কিছু একটা বললেন,অনুষ্ঠান ওখানেই শেষ হয়ে গেল। শাকিল আফজাল সাহেবের এই ভয়ংকর রূপ দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাসায় আসার পর থেকে ওর বাবা মা কেউ ওর সাথে কথা বলছে না,শাকিলের অনেক গিল্টি ফিল হচ্ছিল, ও ভাবতে পারে নি এমন কিছু হবে।অনু ঠিক আছে তো।এমন সময় শাহেদ সাহেব রুমে এলেন

“আমি জানি অনু নিজে থেকে কিছু বলেনি, তুমি ওকে জোর করে বলিয়েছো,যাই হোক চলে যেতে চাও তুমি চলে যাও,তোমাকে আটকাবো না,তুমি আসলে অনুর মতো ভালো কোনো মেয়েকে ডিজার্ব করো না,তোমার জন্য মেয়ে টাকে সবার সামনে ওর বাবার হাতে চড় খেতে হলো,এখনও কি হচ্ছে আমি জানি না,আমি আফজাল ভাইকে বুঝিয়ে এসেছি কিন্তু তার মাথার ঠিক নেই,তোমাকে এসব বলে লাভ নেই,শুধু যাওয়ার আগে আফজাল ভাইকে বলে যেও অনুর কোনো দোষ ছিল না,না হয় মেয়ে টা শান্তি তে বাঁচতে পারবে না”

“বাবা আমি…”

“আমাদের কোনো ছেলে নেই,আমরা নিঃসন্তান”

“বাবা,তুমি এটা বলতে পারলে”

শাহেদ সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।শাকিল চুপ করে বসে রইলো।

“বনু তুই এমন টা কেন বললি বাবা কে,তুই তো বলেছিলি তোর শাকিল কে ভালো লেগেছে তাহলে কেন”

“তোকে আমি আগেও বলেছিলাম বাবা যেটা বলবে সেটা মেনে নিও,এমন কাজ কেন করলে তুমি”

“আনিকা,রেহানা তোমরা যাও এখান থেকে আমি অনুর সাথে কথা বলবো”

“বাবা ও ছোট মানুষ বুঝতে পারে নি”

“হ্যাঁ,আপনি ওর উপর রাগ করবেন না,শাহেদ ভাই তো কিছু মনে করে নি”

“তোমাদের যেতে বলেছি”

“বাবার মুখের উপর কোনো বলিস না”

অনু চুপ করে বসে রইলো কারো কথার কোনো জবাব দিল না। আফজাল সাহেব অনুর সামনে বসলো,অনু নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। আফজাল সাহেব বললো,

“তোমার কোনো পছন্দ আছে”

“নাহ বাবা”

“শাকিল কে পছন্দ হয়নি তোমার”

“হয়েছে”

“শাকিল কিছু বলেছে তোমাকে”

“নাহ”

“তাহলে কি ফাইজলামি করো তুমি কোনো সমস্যা নেই তাও তুমি বিয়ে করবে না,আমার সম্মান টা কি তোমার কাছে খেলনা, যা ইচ্ছে করবে,কেন করবে না তুমি বিয়ে কি সমস্যা তোমার”

“আংকেল আমি বলছি কি সমস্যা”

আফজাল সাহেব আর অনু সামনে তাকিয়ে দেখলো শাকিল দাঁড়িয়ে আছে।শাকিল আফজাল সাহেবের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো

“আসলে আংকেল শুরু থেকেই আমার এ বিয়েতে কোনো মত ছিল না,আমি এই বিয়ে টিয়ে পছন্দ করি না,আমি কিছুদিনের জন্য আমার বাবা মার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম,কিন্তু আমার বাবা মা আমাকে জোর করে পাত্রী দেখাচ্ছিল,তাদের ইচ্ছা ছিল আমি যেন এখানে বিয়ে করে বাবার বিজনেস জয়েন করি,কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল আমি ইউএসএ গিয়ে ওখানে জব করবো,বিয়ে করবো না আমি,কিন্তু আমাকে জোর করে নিয়ে আসা হলো আপনাদের বাসায় এখানে এসে এঙ্গেজমেন্ট হয়ে যায় আমাদের, তারপর আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম দেখে অনুর সাথে দেখা করি, ওকে আমি সব খুলে,ওকে আমি অনুরোধ করি যেন আপনাকে বুঝিয়ে বলে,কিন্তু ও রাজি হয়নি আমার কথায় ও বার বার বলছিল আপনি অনেক রাগ করবেন,কিন্তু আমি এ কথা বিশ্বাস করছিলাম না,পরে আমার জোরাজোরিতে আজকে অনু আপনাকে এ কথা বলে”

“তোমার কথা যে সত্যি এ কথা কেন আমি বিশ্বাস করবো,অনু কে বাঁচানোর জন্য ও তুমি বলতে পারো”

“আমার বাবা মাই তো সবচেয়ে বড় প্রমাণ,তারা তো জানে সব দোষ যে তাদের ছেলের,কিংবা আংকেল আমি তো জাস্ট আমার স্বপ্ন টা পূরণ করতে চেয়েছিলাম, আমার বাবা মা কি আমাকে সেটা পূরণ করতে দিতে পারতো না”

“শাহেদের উচিত ছিল আমাকে আগে এসব জানানোর,আমাকে শাহেদের সাথে কথা বলতে হবে”

আফজাল সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন,শাকিল অনুর সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো

“আমাকে ক্ষমা করে দিও অনু,আমি সত্যিই বুঝতে পারেনি,বিশ্বাস করো তোমার এ স্পেশাল দিন টাকে আমি এভাবে খারাপ করতে চাইনি,আ’ম সরি,প্লিজ ক্ষমা করে দিও আমাকে”

“আপনার স্বপ্ন পূরণ হবে এখন,উইশ ইউ অল দ্য বেস্ট ফর ইউর ফিউচার”

“আ’ম সরি”

“আপনি সাবধানে যাবেন,কাল তো ফ্লাইট আপনার”

“হুমম সব হারিয়ে আমি স্বপ্ন পূরণ করতে যাবো,পারলে ক্ষমা করে দিও”

শাকিল আর ওখানে দাঁড়ালো না, অনুর বাসা থেকে বেরিয়ে ও খালি রাস্তায় হাঁটতে লাগলো।কাল ওর ফ্লাইট এতদিন যার জন্য ও পাগলের মতো বাবা মা কে বুঝিয়েছে,অনুকে বুঝিয়েছে, আজকে সবাই ওকে পারমিশন দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু ওর সবাইকে কাঁদিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।কেন এমন হচ্ছে…….

#চলবে

(ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)