#তুমি_আছো_তাই
#পর্বঃ০৫
#লেখিকা_তাসনিম
“কিরে তুই চোখমুখের এ হাল করে বসে আছিস কেন,তোর না একটু পরে ফ্লাইট, রেডি হয়ে নে”
“আহাদ,আম্মু কই”
“রুমে আছে হয়তো আন্টিকে তো দেখিনি,তুই রেডি হয়ে নে, বেশি সময় নেই তো আর”
শাকিল রেডি হয়ে নিল এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য, বাবা-মার কাছে বিদায় নিতে গেলে কেউ ওর সাথে কথা বলে না।ও মন খারাপ করে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে।আহাদ বললো,
“তুই তোর ড্রিম পূরণ করতে যাচ্ছিস,তোর মুখে হাসি নেই কেন,আংকেল আন্টিও খুশি বলপ মনে হলো না,কি হয়েছে বলবি”
“ফ্লাইট কয়টায়”
“এগারোটায়,কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবো এয়ারপোর্টে”
এয়ারপোর্টে পৌঁছে শাকিল কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহাদ ওকে বললো,
“দাঁড়িয়ে আছিস,যাবি না ভিতরে”
“নাহ,যাবো না,চল”
“কিহহ,তোর মাথা ঠিক আছে, তোর ইউএসএ তে জব রেডি লাইফ সেটেল্ড”
“বাবা-মা কে কষ্ট দিয়ে তাঁদের চোখের পানি এনে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না”
“কি বলবো আর,চল তবে”
“হুমম চল”
আনিকা অনুর সাথে কথা বলছিল,এমন সময় রেহানা বেগম এসে বললেন,
“অনু তোমার এঙ্গেজমেন্ট রিং টা কোথায়,তোমার বাবা ফেরত দিয়ে দিবে”
“ওর হাতেই তো আছে এখনো,খুলে ফেল তোর জন্য আমরা আরো অনেক সুন্দর জামাই নিয়ে আসবো তুই চিন্তা করিস না”
অনু রিং টার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর খুলে ওর মা কে দিয়ে দিলো,উনি রিং টা নিয়ে আফজাল সাহেব কে দিয়ে দিলেন।আফজাল সাহেব বললেন,
“আগামীকাল অনু কে দেখতে আসবে,ওকে রেডি করে রেখো”
“কালই,না মানে মাত্র এ ঘটনা টা ঘটলো ওকে একটু সময় দেও”
“কেন সময় দিতে হবে কেন,আমরা ছেলে দেখেছিলাম পরে ছেলের কারণে বিয়ে ভেঙে গেছে, এতে ওর কি সমস্যা হয়েছে”
“তাও ওর সাথে তো ঘটনাগুলো সম্পর্কিত তাই বলছিলাম”
“এতো কথা শুনতে চাই না,ওকে রেডি করে রাখবে,আনিকা যেন কাল না যায়,রায়হানের সাথে আমি কথা বলবো”
শাকিল বাসায় এসে ওর মার কাছে গেল, উনি ওকে দেখে বেশ অবাক হলেন,শাকিল ওর মা কে জরিয়ে ধরে বললো,
“আম্মু আমি যায়নি,আমি তোমাকে রেখে যেতে পারেনি,আমি যাবো না,আমি তোমাদের সাথে থাকবো”
“সত্যি বলছিস”
“হ্যা,আম্মু তোমরা যা বলবে আমি তাই করবো”
“তবে যাও অনু কে এ বাসার বউ করে নিয়ে আসো”
“আব্বু,অনু আংকেল কি রাজি হবে,অনু কি রাজি হবে”
“এতো কিছু জানি না,অনুকে এ বাসার বউ হিসেবে দেখতে চায়,তাহলেই তোমাকে আমরা মেনে নিব,আর না হয় চলে যাও এ বাসা থেকে”
“তুমি কি বলছো এসব,ও আমাদের ছেলে কোথায় যাবে ও”
“তুমি মাঝে কথা বলো না,তুমি নিশ্চয় শুনতে পেয়েছো আমি কি বলেছি”
“ওকে আব্বু অনু কে নিয়ে আসবো আমি এখনি যেতে হবে”
“অবশ্যই”
“মানে এখনি বিয়ে করে নিয়ে আসবো”
“তুমি যতটা সহজ ভাবছো বিষয় টা এতো সহজ না,আফজাল সম্পর্কে তোমার এখনো ধারণা হয়নি,তোমাকে এক মাসের সময় দিলাম আমি”
“আব্বু আফজাল আংকেল তো হবেন আমারই শ্বশুর সো তাকে কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় তা আমি বুঝে নিব,তোমরা বিয়ের আয়োজন করো,আহাদ চল”
শাকিল আহাদ কে নিয়ে অনুর বাসার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।আহাদ বললো
“ভাই অনুর বাবা কি বেশি রাগী নাকি”
“হুমম কিছুটা,এক কথার মানুষ আর কি”
“বুঝিস,রাগী মানুষকে হ্যান্ডেল করা কিন্তু অনেক কঠিন”
“তুই অনুর বাবার কথা বাদ রাখ অনুকে মানাতে হবে আগে,ওকে রাজি করাতে না পারলে ওর বাবা কে দিয়ে কি করবো আমি”
“অনুর কাছে পৌছানোর আগে ওর বাবা কে অতিক্রম করতে হবে বৎস”
“তুই লজিক্যাল কথা বলিস ভালোই,আচ্ছা চল আল্লাহ ভরসা”
“দেখ ভাই বিপদের আশংকা দেখলে আমি চলে আসবো”
“আমাকে রেখে”
“মানে তোকে নিয়ে,তুই একটু আমার কথা শুনিস”
শাকিল আর আহাদ অনুর বাসায় চলে আসলো,শাকিল কলিংবেল দিলো,রেহানা বেগম এসে দরজা খুললেন,আফজাল সাহেব ড্রইয়িংরুমেই বসে ছিলেন।
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা,তুমি এখানে”
“কেন আন্টি এটা তো আমারও বাসা তাই না,সেদিন না আমাকে কত আদর করে খাওয়ালেন”
“হ্যা মানে,অনুর বাবা বাসায় আছে তো”
“কার সাথে কথা বলছো আনিকার মা”
“আংকেল আসসালামু আলাইকুম”
আফজাল সাহেব ড্রইয়িংরুম থেকে উঠে আসলেন,শাকিল কে দেখে উনি একবার রেহানা বেগমের দিকে তাকালেন তারপর শাকিলের দিকে তাকিয়ে বললো
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,কি চাই এখানে,এঙ্গেজমেন্ট রিং,দাঁড়াও নিয়ে আসছি”
আফজাল সাহেব রুম থেকে রিং টা এনে শাকিলের হাতে দিয়ে দিলো।
“চলে যেতে পারো এখন”
“নাহ আংকেল ঠিক আছে, আবার নতুন করে আমি অনুকে রিং পড়াবো,আংকেল আ’ম সরি আমাকে আরেকটা সুযোগ দিন প্লিজ,আমি অনু কে বিয়ে করতে চাই”
“চলে যাও এখান থেকে”
“আংকেল আমি চলে যাবো, কিন্তু আপনি বলুন অনুকে আমার বাসার বউ করে নিয়ে যেতে দিবেন”
“ফাইজলামি তোমার কাছে সব,এটা তোমার ইউএসএ না যে এখনি বলবে আমি বিয়ে করবো না আবার কিছুক্ষণপর এসে বলবে হ্যাঁ আমি বিয়ে করবো,আমার মেয়ের জীবনটা কি তোমার খেলনা মনে হচ্ছে, তোমার মতো কারো সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিবো না”
আফজাল সাহেবের চিৎকারে আনিকা অনু রুম থেকে বেরিয়ে আসে,শাকিলকে দেখে অনু অবাক হয়ে যায়,শাকিলের চোখও অনুর দিকে যায়,আফজাল সাহেব পিছনে ঘুরে অনুকে দেখে এক ধমক দিয়ে ওঠেন,অনু আর আনিকা কিছু না বলে মাথা নিচু করে রুমে চলে যায়।
“তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো”
“ভাই চল”
“আংকেল আমি আজ চলে যাচ্ছি, কিন্তু অনুক নিয়ে আমি সাজিয়ে আমার বাসার বউ করে নিয়ে যাবো,আসি আজ”
শাকিল আর আহাদ অনুর বাসা থেকে বেরিয়ে আসে, গাড়িতে বসে রিং টার দিকে তাকিয়ে রইলো।আহাদ বললো
“তোর রিং টা দিয়ে আসলি না কেন,আংকেল কে আমি বোঝাবো এমন রাগী লোকের মেয়েকে বউ বাননাের কোনো দরকার নেই মেয়েও এমনি হবে”
“আমি অনুকেই বিয়ে করবো,আমি কেন রিং ফেরত দিয়ে আসবো,অনুর হাতেও আবার এ রিং উঠবে,আগে আমাকে অনুকেই মানতে হবে”
“মেয়ের বাবার এক ধমকে মেয়ে তোকে ছেড়ে দিবে বুঝছিস”
“দেখা যাক”
#চলবে
(ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)