তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-১৬+১৭

0
605

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১৬

সত্যিই তো আদ্রিয়ান তার থেকে স্মার্ট সুন্দরী মেয়েকে পেয়ে তাকে ভুলে গেলো। আদ্রিয়ানের ভালোবাসা সে কখনোই ছিল না শুধু মোহ ছিল। কণার সাথে যে এতোদিন মিস বিহেভ করেছে এর জন্য ছোঁয়া একটুও অনুতপ্ত হয়নি। বরং তার মনে দাউ দাউ করে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। আরুহির এই সৌন্দর্য সে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবে।

আদ্রিয়ান বার কয়েক বার আরুহিকে ডাকে। আরুহি শুনেও না শোনার ভান করে। এক কথায় আরুহি আদ্রিয়ানকে পাত্তায় দিচ্ছে না। এটা আদ্রিয়ানের ইগোতে লাগে। আদ্রিয়ান আরুহির হাত ধরে ফেলে। আদ্রিয়ানের আরুহির হাত ধরতে হয়তো দেরি হয়েছে কিন্তু আরুহির আদ্রিয়ানকে থাপ্পড় মারতে দেরি হয়নি। সবাই অদ্ভুত ভাবে আদ্রিয়ান আরুহির দিকে তাকিয়ে আছে।

উৎসুক জনতা চেয়ে আছে এর পরে কি হয় সেটা দেখার জন্য। ছোঁয়া ক্ষিপ্ত বাঘিনার মতো আরুহির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। রেগে চিৎকার করে বলে,

তোর কত বড় সাহস তুই আমার কলিজার গায়ে হাত দিস। তোর এই হাত আমি কেটে ফেলবো। রূপের খুব অহংকার তোর তাই না? তোর এই অহংকার আমি মাটিতে মিশিয়ে দিব।

ছোঁয়া আরুহিকে থাপ্পড় দিতে গেলে আদ্রিয়ান ছোঁয়ার হাত ধরে ফেলে। আদ্রিয়ান ছোঁয়াকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ছোঁয়ার গালে। ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এইসব কিছু দেখে একজন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। এই এক তৃপ্তির হাসি।
ছোঁয়াকে আর আদ্রিয়ানকে অপমানিত হতে দেখে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে। আদ্রিয়ান ছোঁয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

জীবনে অনেক মেয়ে দেখছে তোর মতো বেশরম মেয়ে জীবনেও দেখি নাই। একটা মানুষ এতোটা ছ্যাঁচড়া কী করে হতে পারে? তোকে যেনো নেক্সট টাইম আমার বা আরুহির আশেপাশে না দেখি। আর তুই যদি আরুহির কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করিস এর ফল খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।

কথাগুলো বলেই আদ্রিয়ান আরুহির হাতটা শক্ত করে ধরে। আরুহি ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই আরো জুড়ে চেপে ধরে। ছোঁয়ার নকের আঁচড়ে আরুহির গলার কাছে অনেকটা ছিলে গেছে। আদ্রিয়ান আরুহির দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে,

একদম চুপচাপ আমার সাথে যাবে। ড্রেসিং কর়াতে হবে। নাহলে ইনফেকশন হয়ে যাবে।

আদ্রিয়ান আরুহির হাত ধরেই ড্রেসিং করাতে নিয়ে চলে যায়। ছোঁয়া ওদের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। ছোঁয়া অনুভব করছে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারো সাথে দেখলে কেমন অনুভূতি হয়। এতক্ষণ ধরে সম্পূর্ণ ঘটনাটাই নিরবে দেখছিল কণা আর ঐশি। ঐশি তো খুশিতে রীতিমত লাফাচ্ছে। কিন্তু কণার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না কণার মনে কি চলছে। ঐশি ছোঁয়ার কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে এগিয়ে আসে। ঐশি ছোঁয়াকে উদ্দেশ্য করে ছোঁয়ার কথাগুলোই ব্যঙ্গ করে বলে,

একদিন বলেছিলাম না তোর ভালোবাসাকে আমি কেড়ে নিবা। দেখ তোর ভালোবাসা আজকে আমার। আমাকে ছাড়া আর কিছু বুঝে না। আদ্রিয়ানের মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলের পাশে শুধু আমার মতো একটা সুন্দরী মেয়েকেই মানায়।

কারো ভালোবাসা কেউ কেড়ে নিয়ে কখনো সুখী হতে পারে না। দেখলি তো আজকে তার নমুনা। আদ্রিয়ান তোকে না সৌন্দর্য ছাড়া কিছুই বুঝে না। আদ্রিয়ানের পাশে আরুহিকেই মানায়। তা বাবু নিজের ভালোবাসার হাতে থাপ্পড় খেয়ে কেমন লাগলো? তোকে তো বেশরম মেয়েও বলে গেলো।

ছোঁয়া লজ্জায় অপমানে দৌড়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়। ঐশি ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

কেউ কাউকে ঠকিয়ে কখনো সুখী হতে পারে না।

সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য সুন্দর চেহারা বা অঢেল টাকার প্রয়োজন নেই। একটি সুন্দর আর পবিত্র মনই এর জন্য যথেষ্ঠ।

৩৭

ছোঁয়া অমিতকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। অমিত অস্থির হয়ে নিজের বোনের কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। ছোঁয়ার কান্না থামার পরিবর্তে আরো বেড়ে যাচ্ছে।

ছোঁয়া কী হয়ছে? এভাবে কাঁদছিস কেনো? বলবি তো আমাকে? তুই না বললে আমি বুঝবো কী করে তুই কেনো কাঁদছিস?

ভাইয়া ও আমাকে ঠকিয়েছে। ও আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি। এতোদিন আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছে। আজকে আমার থেকে সুন্দরী মেয়ে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে। আমাকে নিজের জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।

ছোঁয়া ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা একে একে খুলে বলে অমিতকে। সবকিছু শুনে রাগে অমিতে ছোঁয়াল শক্ত হয়ে আসে।

ঐ কুত্তার বাচ্চার কত বড় সাহস আমার বোনের গায়ে হাত তুলেছে। ওকে আমি শেষ করে দিব।

না ভাইয়া তুমি আদ্রিয়ানের কিছু করো না। আমি আদ্রিয়ানকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি আরুহির একটা ব্যবস্থা কর।
আরুহির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই তো আদ্রিয়ান আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। তুমি আরুহির ঐ সৌন্দর্যকেই শেষ করে দাও।

অমিত কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসে।

৩৮

আবারও ঐ অগান্তুকের সামনে একটা লোক পড়ে আছে। হাত পা বাধা। শরীরে অসংখ্য মারের দাগ। লোকটা চোখের ইশারা করতেই একটা ছেলে এসে ঐ লোকটাকে মাটি থেকে তুলে হাত পায়ের বাধন খুলে দেয়। মুখে পানি দেয় লোকটা পিটপিট করে চোখ খুলে। অগান্তুক ঐ লোকটার মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে বলে,

দেখ তোকে লাস্ট বারের মতো বলছি। যদি এখনও সত্যিটা শিকার না করিস তাহলে তোকে জানে মেরে দিব। বল তোকে কে বলেছিল আমার মিহুপাখির মুখে এসিড মারতে?

বলবো না।

দেখ আমার মাথা গরম করিস না। আমার মাথা গরম হয়ে গেলে নিজেকে কনট্রোল করতে পারি না। গুলি করে তোর মাথার খুলি উড়িয়ে দিতেও দুই বার ভাববো না।

নাম না বললে তো শুধু আমি একা মরবো। নাম বললে আমি সহ আমার পুরো পরিবারকে মরতে হবে। ওরা আমাদের বাঁচতে দিবে না।

সামনে বসে থাকা লোকটা কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসে। ঐ ছেলেটাকে ইশারা করতেই একটা ভিডিও বের করে।

প্লিজ না আমার পরিবারের কিছু করবেন নাহ। আমি বলবো। আমি নাম বলবো।

বল তাহলে।

নামটা শুনেই লোকটা হিংস্র হয়ে ওঠে। চোখ মুখ দিয়ে যেনো আগুন বের হয়ে আসছে। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলেছে। তার সন্দেহটাই একদম ঠিক। ঐ লোকটার মাথায় পর পর তিনটা গুলি করে দেয়।

তোদের মতো কীটদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। টাকার জন্য অন্যের জীবন নরক করে দিতে দুই বার ভাবে না। তাদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তোরা বেঁচে থাকলে কোনো মা-বোন একা নিশ্চিন্তে ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না।

৩৯

কণা আবারও একই স্বপ্ন দেখে মাঝ রাতে চিৎকার করে ওঠে। কণার চিৎকার শুনে সাফাত আর আহসিন আহম্মেদ দৌড়ে আসে। কণাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কণা পাগলের মতো ব্যবহার করছে। এবারের স্বপ্নটা যে প্রতিদিনের থেকে অনেক বেশি ভয়ংকর। কণা নিজেকে নিজেই আঘাত করছে। সাফাত আর তাহসিন আহম্মেদ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সাফাত জোর করে কণাকে স্লিপিং পিল খাইয়ে দেয়।

_____________

কেটে গেছে দুই সপ্তাহ। সবার জীবনেই একটু পরিবর্তন এসেছে। কণা ঐ দিনের পর থেকে নিজেকে আরো গুটিয়ে নিয়েছে। প্রয়োজনের বাইরে কারো সাথে একটা কথাও বলে না। ঠিক মতো ভার্সিটিতেও যায় না। আরুশি আর আদ্রিয়ান অনেকটা ক্লোজ হয়ে গেছে। অহি চীন যাওয়ার জন্য এপ্লাই করেছে। যদি সে চান্স পেয়ে যায়। সারাজীবনের মতো এই দেশ ছেড়ে চলে যাবে। আর ফিরে আসবে না। ওখানে সেটেল্ড হয়ে যেতে পারলে পুরো পরিবারকে ওখানে নিয়ে যাবে। কোনো পিছুটান রাখবে না। আভিয়ান আর ঐশির সম্পর্কে একটু তিক্ততা এসে গেছে। আভিয়ান ঐশিকে আগের মতো সময় দেয় না। ঠিক মতো কথাও বলে না। এই নিয়ে ঐশির মনে অভিমানের পাহাড় জমেছে। সাফাত আর বন্যার সম্পর্কটা আগের মতোই আছে।

আজকে প্রায় ৫ দিন পর কণা ভার্সিটিতে এসেছিল। সবকিছু নোট করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সাফাত তিশান আহম্মেদকে নিয়ে ডক্টর দেখাতে গেছে। তাই কণাকে একাই বাসায় যেতে হবে। কণা একটা নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখে আরুহিকে ঘিরে বেশকিছু ছেলে গোল করে ঘুরছে। যেমনটা ঘটেছিল ঠিক তার সাথে। আরুহির সাথেও কী একই ঘটনা ঘটতে চলেছে।

চলবে……

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১৭

আজকে প্রায় ৫ দিন পর কণা ভার্সিটিতে এসেছিল। সবকিছু নোট করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সাফাত তিশান আহম্মেদকে নিয়ে ডক্টর দেখাতে গেছে। তাই কণাকে একাই বাসায় যেতে হবে। কণা একটা নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখে আরুহিকে ঘিরে বেশকিছু ছেলে গোল করে ঘুরছে। যেমনটা ঘটেছিল ঠিক তার সাথে। আরুহির সাথেও কী একই ঘটনা ঘটতে চলেছে?

কণা ভাবছে তার আরুহিকে সাহায্য করা দরকার। কিন্তু সে নড়তে পারছে না। পা অবশ হয়ে আসছে। চোখের সামনে ভাসছে সেই ভয়ঙ্কর রাতের ঘটনা। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে মনে হচ্ছে। মাথা ভন ভন করে ঘুরছে। একটা ছেলে এসে আরুহির হাত ধরে ফেলে। এটা দেখেই কণার আত্না কেঁপে ওঠে। তাকে আরুহিকে সাহায্য করতেই হবে। সে আরেকটা মেয়ের ভবিষ্যৎ কিছুতেই নষ্ট হতে দিবে না।

সে দৌড়াতে যেয়েও দৌড়াতে পারছে না। পা দুটো নড়ছেই না। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। কণা ঝাপসা ঝাপসা চোখে দেখে আরুহিদের সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে একজন সুদর্শন পুরুষ বের হয়। নিঃসন্দেহে একটা মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ। কণার লোকটাকে চেনা চেনা লাগছে মনে হচ্ছে আগেও কোথাও দেখেছে। হঠাৎই কণার মনে পড়ে সে এই লোকটাকে টিভিতে দেখছে। কণা লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

সেই লোকটা আর কেউ না। সেই লোকটা আদিয়াত আয়মান তুর্ণ। আদিয়াতকে দেখে সেই ছেলেগুলো ভয় পেয়ে যায়। আদিয়াতের পিছন পিছন চারটা বডিগার্ড এসে ছেলেগুলোকে মেরে গাড়ি করে নিয়ে চলে যায়। আরুহি আদিয়াতের দিকে সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বলে,

থ্যাংক ইউ।

মেনশন নট। এটা আমার কর্তব্য ছিল। আর তুই আমার দায়িত্ব। অন্য কারো আমানত। আমানতের খেয়াল তো ঠিক ঠাক রাখতে হবে।

ও তোমার সাথে কথা বলতে বলতে আমি তো কণার কথায় ভুলে গেছি।

কণা কে?

আরুহি আদিয়াতের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে উত্তর দেয়,

আমার ক্লাসমেন্ট। আমাকে যখন ছেলেগুলো এ্যাটাক করে তখন আমি ওকে এখানেই দেখতে পেয়েছিলাম।

আদিয়াত একটু দুরে তাকিয়ে দেখে কেউ একজন পড়ে আছে। আদিয়াত দৌড়ে যায়। আরুহিও যায়। আরুহি গিয়ে দেখে কণা। আদিয়াত কণাকে কোলে তুলে নেয়। কোলে করে গাড়িতে এনে শুইয়ে দেয়। কণাকে নিয়ে হসপিটালের রাস্তার দিকে রওনা দেয়।

৪০

সাফাত আর বন্যা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। আজকে বন্যার বার্থডে সে উপলক্ষ্যেই এখানে আসা। সাফাত চেয়েছিল বন্যার বার্থডে সেলিব্রেইট করতে। কিন্তু বন্যা না করে দিয়েছে। সে নিজের বার্থডে উপলক্ষ্যে সাফাতের কাছে চেয়েছিল আজকে সারাদিন যাতে তাকে সময় দেই। সাফাতও রাজি হয়ে যায়। আজকে সারাদিন তারা অনেক ঘুরাঘুরি করেছে। রাস্তায় বসে ফুচকা খেয়েছে। কড়া রৌদ্দুরে হাতে হাত রেখে হেঁটেছে। রিকশা করে সারা শহর ঘুরেছে। পার্কে দৌড়া দৌড়ি করেছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আইসক্রিম খেয়েছে। সদ্য প্রেমে পড়া কিশোর কিশোরীর মতো করে সারাটা দিন কাটিয়েছে।

সাফাতের নজর যায় রেস্টুরেন্টের এক কোণে। যেখানে অহি আর একটা ছেলে বসে আছে। সাফাতের বুকের ভিতর চিন চিন ব্যথা অনুভব করে। সাফাত তার নজর সরিয়ে ফেলে। বন্যাতে তার দৃষ্টি স্থির করে। এর মাঝেই ওয়েটার খাবার দিয়ে যায়। অহি এতক্ষণ সাফাত আর বন্যাকে খেয়াল করেনি।

অহি সাফাত আর বন্যাকে খেয়াল করতেই সেই ছেলেটাকে বিদায় জানিয়ে সাফাত আর বন্যার কাছে আসে।

আরে সাফাত ভাই যে। কেমন আছো? এটা বুঝি আমাদের ভাবি।

অহির মুখে ভাই শুনে সাফাত একটু চমকে যায়। অহি তাকে আগে কখনোই ভাই ডাকতো না। তবু সাফাত নির্বিকার। কারণ মানুষ পরিবর্তনশীল এই কথাটা সাফাত মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। আর অহির সাথে তার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর দেখা হলো। এর মাঝে অহির বিহেভিয়ারের পরিবর্তন হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। অহির মুখে ভাবি ডাকটা শুনে বন্যার গাল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে রক্তিম আভা।

সাফাত বন্যার সাথে অহির পরিচয় করিয়ে দেয়। বন্যা আর অহি বক বক করছে সাফাত নির্বিকার চেয়ে আছে।

৪১

কেটে গেছে দুই মাস। এই দুই মাসে কারো কাছে নিয়ে এসেছে কারো প্রিয় মানুষকে আবার কারো কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দিয়েছে তার প্রিয় মানুষকে। জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়। ভার্সিটির বেস্ট কাপলটা আজ ছন্নছাড়া। বিক্ষিপ্তভাবে জীবন যাপন করছে দুটো মানুষ। হঠাৎ করেই আভিয়ান আর ঐশির মাঝে দুরত্ব বেড়ে গেছে। যারা এক মুহূর্ত একজনকে ছাড়া আরেকজন থাকতে পারতো না তারা আজ বহুদুর। প্রত্যেকদিন ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো। তারা এখন সপ্তাহেও দুই মিনিট কথা বলে না। অহি মন দিয়ে পড়াশোনা করছে। সাফাত আর বন্যার সম্পর্কে কোনো রকম ফাটল ধরেনি। বরং তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে। হয়তো কিছুদিনের মাঝেই বিয়ে করবে। নোমান সে তো কল্পনায় তার প্রেয়সীকে নিয়ে সংসার সাজাতে ব্যাস্ত। আরুহি আর আদ্রিয়ান রিলেশনে আছে। অবশ্য সেটা কেউ জানে না। আদ্রিয়ান আরুহি বলতে পাগল। আরুহিকে ছাড়া কিছু বুঝে না। কণাও ভালোবেসে ফেলেছে তার চিঠি প্রেরককে। আদ্রিয়ানের জন্য তার মনে এক বিন্দু পরিমাণ জায়গাও নেই। কণা তার চিঠি প্রেরককে এখনো দেখেনি। ইনফ্যাক্ট নামও জানে। সে জানতেও চায় না। ভালোবাসলে যে তাকে দেখতে হবে ছুঁতে হবে তার কোনো মানে নেই। অনুভবেও ভালোবাসা যায়। সেই ভালোবাসায় না থাকে কোনো চাওয়া আর না পাওয়া। আরুহির সাথে কণার একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। ছোঁয়া ক্ষিপ্ত বাঘিনীর নেয় হয়ে ওঠেছে। সে যে কোনো উপায়ে আরুহির ক্ষতি করতে চায়।

____________

আরুহিদের বাসার ছাদে বসে আছে আরুহি আর কণা। আরুহি কণাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

এবার বলা শুরু করো।

দিনটা ছিল শনিবার। আমার ভার্সিটির প্রথম দিন। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির প্রথম দিন সবাই এক্সাইটেট থাকে তেমনি আমিও ছিলাম। আমি বরাবরই দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। আমার কৌতুহলটাও বরাবরই বেশি ছিল। ভার্সিটি এসে সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। তখনি এক সিনিয়র আপু আর ভাইয়াতে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলি। ভাইয়াটা নির্বিকার থাকলেও আপুটা ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ভাবছিল আমি যদি স্যারকে বলে দেই তাহলে ক্যারিয়ার শেষ। আমি কিছু না বলে ওখান থেকে চলে আসি। অফ পিরিয়ডে ক্যান্টিনে গিয়েছিলাম। সেখানে এক সিনিয়র ভাইয়া এসে বলে আমাকে ডাকা হয়েছে। কে ডেকেছে সেটা বলেনি। বললাম না ঐ যে আমি কৌতূহলী প্রাণী। সবকিছুতেই কৌতূহল বেশি। আমি বিনা বাক্য বেয়ে ঐ ভাইয়াটার পিছন পিছন যেতে থাকি। ভাইয়াটা আমাকে একটা রুমে নিয়ে যায়। ঐ রুমে আরো অনেকগুলো ছেলে ছিল। দেখেই বুঝা যাচ্ছিল এরা ভার্সিটির গুন্ডা পান্ডা। একটা ছেলে বেঞ্চে বসে ছিল আর বাকিরা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল। বেঞ্চে যে ছেলেটা বসে ছিল সে ছিল আদ্রিয়ান। তাদের সবার কথা বার্তায় বুঝতে পারছিলাম। তখনকার ঘটনার জন্য আমাকে এখানে ডাকা হয়েছে। আমি যাতে কাউকে কিছু না বলি তার জন্য থ্রেট দিতে নিয়ে আসছে। সবাই আদ্রিয়ানকে ধাক্কাচ্ছে কথা বলার জন্য। কিন্তু আদ্রিয়ান নির্বিকার কারো কোনো কথার উত্তর দিচ্ছে না। বরং আমার দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ানের এমন তাকিয়ে থাকা দেখে আমার রাগ হচ্ছিল। আবার এতক্ষণ ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য বিরক্তও হচ্ছিলাম। রাগে বিরক্তে চেঁচিয়ে বলি, আমাকে কী এখানে সঙয়ের মতো দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য নিয়ে আসছেন? সিনিয়র হইছেন বলে কী যা ইচ্ছে তাই করবেন? একটা ছেলে আমাকে ধমক দিতেই আদ্রিয়ান তার দিকে চোখ গরম করে তাকায়। হুট করেই আদ্রিয়ান বেঞ্চ থেকে নেমে পকেট থেকে একটা রিং বের করে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।

তারপর।

পানি দেও।

আরুহি কণার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়। কণা এক ঢোকে সম্পূর্ণ পানি খেয়ে ফেলে।

ওখানে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। বিষ্ময়ে আমার চোখও বড় বড় হয়ে গিয়েছিল।

কণার ফোন বেঁজে ওঠে। কণা ফোনটা রিসিভ করেই স্তব্ধ হয়ে যায়। ফোনটা হসপিটাল থেকে করেছিল। সাফাত এক্সিডেন্ট করেছে। সাফাতের অবস্থা বেশি ভালো না। কণা কী করবে বুঝতে পারছে না? নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তার।

চলবে…….