তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-০৩

0
743

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩

কণা কথা বলতে বলতে কখন যে রাস্তার পাশে চলে এসেছে সে খেয়ালই করেনি। কণা রাস্তার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। হুট করে একটা গাড়ি এসে কণার পিছনে দাঁড়ায়। একটা লোক কণার মুখে রুমাল চেপে ধরে গাড়িতে তুলে নেয়। ব্যাপারটা এতো দ্রুত ঘটে যে আভিয়ান বা ঐশি কেউই কিছু বুঝতে পারে না। যখন তারা ব্যাপারটা বুঝতে পারে তখন আভিয়ানের আর ঐশির সামনে আরেকটা গাড়ি চলে আসে।

গাড়িটা পাশ কাটিয়ে সামনে যেতেই দেখে ঐ গাড়িটা অলরেডি চলতে শুরু করছে। আভিয়ান দৌড়ে পিছু যেতে নেয়। তারপর কিছু একটা ভেবে থেমে যায়। রাস্তার এ মাথা ঐ মাথা পর্যন্ত চোখ বুলায় কিন্তু একটা গাড়িও দেখতে পায় না। যে কণাকে কিডন্যাপ করছে তার ফেইস আভিয়ান বা ঐশি কেউই দেখতে পায় না। কারণ লোকটা মুখে মাস্ক আর চোখে কালো রঙের সানগ্লাস পড়ে ছিল।

আভিয়ান কী করবে ভেবে পাচ্ছে না? এদিকে ঐশি কান্না-কাটি করছে। এদিকে আভিয়ান আজকে গাড়ি নিয়ে আসতে ভুলে গেছে। আভিয়ানের নিজের মাথা নিজেই ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কেনো যে আজকে গাড়ি নিয়ে আসতে ভুলে গেলো।

আমার এখন নিজের মাথা নিজেই এক বাড়ি দিয়ে ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। আজকেই গাড়ি নিয়ে আসতে ভুলে যেতে হলো।

রাস্তা থেকে একটা ইট তুলে মাথা ফাটিয়ে দাও। তুমি না পারলে আমাকে বলো এক বাড়ি দিয়ে দুই ভাগ করে দেই।

কথাগুলো বলেই ঐশি রাস্তা থেকে একটা ইটের টুকরা হাতে তুলে নেয়। বিষ্ময়ে আভিয়ানের চোখ দুটো বড়ো হয়ে গেছে। যেনো এখনি কোঠর থেকে চোখ দুটো বেরিয়ে আসবে। আভিয়ান তো কথার কথা বলেছিল। কিন্তু ঐশি যে সেটাকে সত্যি ভেবে সত্যি সত্যি মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার জন্য রাস্তা থেকে ইট তুলে নিবে এটা আভিয়ানের ভাবনার বাইরে ছিল।

এসব কী করছো তুমি? তুমি সত্যি সত্যি মাথা ফাটিয়ে দেবে নাকি? আমি তো জাস্ট কথার কথা বলছি।

এই তোর কী মনে আমি দেখানোর জন্য হাতে ইট তুলে নিয়েছি? তুই কথার কথা বললেও আমি সিরিয়াস। আমি আজকে তোর মাথা ফাটিয়েই দিব। সবকিছুই তোর জন্য হয়েছে।

আমি আবার কী করলাম?

তুই এখানে না আসলে এতকিছু হতো না?

আসলেই মেয়েদের মন বুঝায় দায়। তাদের মুড কখন কী হয় তা বুঝা মুশকিল? কিছুক্ষণ আগেই কণার জন্য কান্না-কাটি করছিলে। কণাকে কে কিডন্যাপ করলো এটা ভেবে। আর কিছুক্ষণের মাঝেই কণার কথা ভুলে আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিলে।

কণাকে কে কিডন্যাপ করলো? আমি আংকেলকে কী বলবো? আংকেল আমাকে কণার খেয়াল রাখার দায়িত্ব দিয়েছিল। আমি নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারলাম না। আমার চোখের সামনে থেকে কণাকে তুলে নিয়ে গেলো আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করতে পারলাম না।

প্লিজ এসব কান্না-কাটি বন্ধ করো। আমাদের এখন কণাকে খোঁজতে হবে।

আমরা কণাকে কোথায় খোঁজবো? আমরা তো জানি না ঐ লোকটা কণাকে কোথায় নিয়ে গেছে।

আমরা এখন থানায় যাব। থানায় গিয়ে কমপ্লেইন করে আসবো। আর শুনো এখনি আংকেলকে কিছু বলার দরকার নেই। আংকেল হার্টের প্যাসেন্ট এই কথা শুনলে সহ্য করতে পারবে না। জানোই তো তুমি ঐ ঘটনার পর থেকে আংকেল কণাকে নিয়ে কতোটা ভয়ে থাকে।

ঐশি শুধু মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়। ঐশি আভিয়ানের এই দুই রুপ মিলাত পারছে না।

কণার ঙ্গান ফিরলে নিজেকে একটা চেয়ারে হাত পা বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করে। সে যে রুমটায় বসে আছে সেই রুমের অর্ধেকাংশ আলোকিত আর অর্ধেক অংশ অন্ধারে ঢাকা। কণা যে অংশটুকুয় বসে আছে সেই অংশটুকু আবছা আলোয় আলোকিত । আর কণার সামনের অংশটুকু গাঢ় অন্ধকার আলোর ছিঁটে ফোটে নেই। অন্ধকার থেকেই কেউ একজন বলে ওঠলো,

আপনার ঘুম ভাঙলো তাহলে?

কে আপনি?

আমি কে? সেটা তোমার জানতে হবে না।

কেনো জানতে হবে না? আপনি আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসে এখানে আটকে রাখবেন আর আমি আপনাকে জিঙ্গেস করতে পারবো না আপনি কে? আচ্ছা যান আপনি কে? সেটা বলতে হবে না আপনাকে। আপনি আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসছেন? আপনার সাথে আমার কীসের শত্রুতা? আমি আপনার……..

হুশশশশ। নো মোর টক। এতো কথা বলা আমি পছন্দ করি না। আমি কারো প্রশ্নের উত্তর দেই না।

কণা এবার রেগে বলে, মগের মুল্লুক নাকি? আমি কারো প্রশ্নের উত্তর দেই না। বললেই হলো নাকি? আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য? কে আপনি? আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসছেন? আপনার উদ্দেশ্য কী?

তোমার প্রথম প্রশ্ন আমি কে? উত্তর আমি তোমার প্রেমিক পুরুষ।

তোমার দ্বিতীয় প্রশ্ন তোমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসছি? উত্তর তোমাকে আদর করার জন্য এখানে নিয়ে আসছি।

তোমার তৃতীয় প্রশ্ন আমার উদ্দেশ্য কী? উঃ আমার উদ্দেশ্য তুমি। পেয়েছো তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর।

এতক্ষণ কণা অনেক কষ্টে নিজের রাগ কনট্রোল করে রেখেছিল। এখন রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কণা এবার ক্ষীপ্ত গলায় বলে,

না পায়নি আমার প্রশ্নের উত্তর। আপনার লজ্জা করে না এভাবে একটা মেয়েকে আটকে রেখে নির্লজ্জের মতো কথা বলতে। আপনার লজ্জা করে না একটা ছেলে হয়ে একটা মেয়েকে ভয় পাচ্ছেন।

আমি আবার কখন কোন মেয়েকে ভয় পেলাম।

এই যে আমাকে দেখে আপনি ভয় পাচ্ছেন।

আমি কখন তোমাকে দেখে ভয় পেলাম?

ভয় পাচ্ছেন বলেই তো আমার হাত পা বেধে রেখেছেন। আচ্ছা আপনি পুরুষ তো। আপনার মাঝে কোনো ডিফেক্ট নাই তো।

তুমি যতই আমাকে তোমার কথা দ্বারা প্রভাবিত করতে চাও না কেনো পারবে না? আমি ঐসব মানুষের মাঝে পড়ি না যারা অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে কাজ করে। আই কনট্রোল মাই সেলফ। আমি রাগের বশে কোনো কাজ করি না।

কণার নিজের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। কেনো এই ছেলে কোনো কথার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে না? এই লোকটা কেনো তাকে নিয়ে আসছে? বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। উত্তেজিত হলে চলে না। ঠান্ডা মাথায় এই লোকটার সাথে কথা বলতে হবে।

মিহু বেবি কী ব্যাপার বলো তো? আমি তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসলাম। তোমার তো চিৎকার চেঁচামেচি করা উচিত। কিন্তু তুমি তা না করে চুপচাপ বসে আছো।

আমি চিৎকার চেঁচামেচি করলে কী আপনি আমাকে ছেড়ে দিবেন? দিবেন না তো? তাহলে চিৎকার চেঁচামেচি করে লাভ কী? শুধু শুধু নিজের এনার্জি লস হবে।

বাহ আমার মিহু সোনা তো খুব বুদ্ধিমান। আই লাইক ইট। তুমি এতো কিছু বুঝো এটা কেনো বুঝো না তুমি নিজেকে কুৎসিত বললে আমার কষ্ট হয়। ঠিক বুকের বা পাশটায়।

কণা ভ্রু কুচকে বললে, আমি নিজেকে কুৎসিত বললে আপনার কষ্ট হবে কেনো? আর এই মিহু সোনাটা আবার কে?

প্লিজ মিহু সোনা এভাবে ভ্রু কুচকে তাকিয়ো না। এভাবে তাকালে তোমাকে ভীষণ কিউট লাগে ইচ্ছে করে তোমাকে খেয়ে ফেলি।

অজানার লোকটার কথা শুনে কণা হু হা করে হেসে দেয়। যেনো লোকটা কোনো জোক্স বলেছে। যেটা শুনে সে নিজের হাসি আটকে রাখতে পারছে না। কণা নিজের হাসিটা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে আটকে বলে,

লাইক সিরিয়াসলি। আমি আর কিউট? নাইস জোক্স। জোক্স অফ দ্যা ইয়ার। আমি ভ্রু কুচকে তাকালে আমাকে কিউট লাগে। হা হা। যার মুখ দেখলে বাচ্চারা ভয়ে পালিয়ে যায়। বড়রা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাকে আপনি কিউট বলছেন। আপনি আমাকে এভাবে অপমান না করলেও পারতেন।

চলবে……