তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-০৭

0
631

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৭

কণা দৌড়ে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে আসে। পিছন থেকে আভিয়ান আর ঐশি কণাকে অনেক ডাকে। কিন্তু কণা তাদের ডাক উপেক্ষা করে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসে। সাফাতও পার্কিং এড়িয়ার দিকে যাচ্ছিল। হুট করে একটা মেয়ে এসে সাফাতকে জড়িয়ে ধরে। মেয়েটাকে দেখে কণার মুখে আলতো হাসি ফুটে ওঠে।

কণার মতো সাফাতের মুখেও হাসি ফুটে ওঠে। সাফাতও দুই হাতে আগলে নেয় তার ভালোবাসাকে। সাফাতকে জড়িয়ে ধরা মেয়েটি হচ্ছে বন্যা। বন্যা সাফাতের গার্লফ্রেন্ড। বন্যা আর সাফাতের চার বছরের রিলেশন। বন্যার সাথে সাফাতের দেখা হয় এক্সিডেন্টলি। প্রথম দেখায় সাফাতের বন্যাকে ভালো লেগে যায়। পর পর কয়েকবার বন্যার সাথে সাফাতের দেখা হয়। দেখাটা ইচ্ছাকৃত ছিল নাকি এক্সিডেন্টলি ছিল সেটা সাফাত জানে না। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব তারপর ভালোবাসা।

কণা সাফাত আর বন্যার দিকে এগুতে গিয়েও থেমে যায়। উল্টোপথে হাঁটা দেয়। তার কুৎসিত চেহারার জন্য যদি আভিয়ানের মতো বন্যাও তাকে ঘৃণা করে বা তার ভাইয়ের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেয়। সে এটা মেনে নিতে পারবে না। সে চায় না তার জন্য আর কেউ তার ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে সরে যাক।

সবাই সবার ভালোবাসার মানুষের সাথে ভালো থাকুক। সে না হয় সবার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিবে। কী দরকার অন্যের সুখে বাধা হওয়ার? সে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবে তার বাবাকে নিয়ে আর কারো প্রয়োজন নেই তার।

বন্যা ঠিকই কণাকে দেখে ফেলে। বন্যা সাফাতকে জিঙ্গেস করে,

ঐ মেয়েটা কণা না?

সাফাত কণার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে, হুম।

কণা হলে আমার কাছে আসলো না কেনো? এভাবে চলে গেলো কেনো?

বন্যা কণাকে ডাকতে শুরু করে। কণা বন্যার ডাক উপেক্ষা করে দ্রুত হাঁটা শুরু করে। বন্যা হাবলার মতো তাকিয়ে আছে কণার যাওয়ার দিকে। সে বুঝতে পারছে না কী হয়ছে? কণা একটা খালি রিকশা দেখে ওঠে পড়ে। কণা রিকশায় ওঠার সাথে সাথেই আভিয়ানও কণার সাথে রিকশায় ওঠে। কণা প্রথমে চমকে ওঠলে ও পরে আভিয়ানকে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়।

তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

আমি জানি আপনি কি বলবেন। তাই আর বলার দরকার নাই। আমি ঐশির থেকে দূরে থাকবো। ওর সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিব। আপনি চিন্তা করবেন না।

একটা থাপ্পড় দিব। খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না? আমাকে আপনি বলা হচ্ছে। এক চড়ে সব দাঁত ফেলে দিব। আমার কথা না শুনেই পকর পকর করা শুরু করেছিস। আমি তোর থেকে ঐশিকে দুরে থাকতে বলেছিলাম ঐশিকে পরীক্ষা করার জন্য। আমি তোর নামে আজে বাজে কথা বললে ঐশি কেমন রিয়েক্ট করে। তোর কাছ থেকে দুরে সরে যেতে বললে চলে যায় নাকি? কিন্তু দেখ ঐশি তোকে ছাড়বে না। ঐশি আমাকে ছেড়ে দিতে পারবে কিন্তু তোকে না। ইনফ্যাক্ট ঐশি তোর জন্য আমার সাথে ব্রেকআপও করে ফেলছে। এতে আমি খুশি হয়েছিলাম। কারণ আমি এমনি একজন চেয়েছিলাম আমার লাইফ পাটর্নার হিসেবে যে মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেয় না। সম্পর্ক আগলে রাখতে জানে সম্পর্কগুলোকে ভালোবাসতে জানে। ঐশি যদি তোকে রেখে আমাকে বেছে নিতো। তাহলে আমি নিজেই ঐশির সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে দিতাম।

আভিয়ান বলেই চলেছে কিন্তু কণা একটা টু শব্দও করলো না। কণাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে সে কোনো গভীর চিন্তায় মগ্ন। হুট করেই কণা রিকশাওয়ালাকে রিকশা থামাতে বলে। রিকশা থামতেই কণা ফট করে রিকশা থেকে নেমে পড়ে। রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে একটা সিএনজিতে বসে পড়ে।

আভিয়ান হাবলার মতো বসে আছে। কিছুই তার বোধগম্য হলো না। কী থেকে কী হলো। রিকশাওয়ালার ডাকে সাফাতের ধ্যান ভাঙে। রিকশাওয়ালাকে বাসার ঠিকানা দিয়ে সেও গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়।

১২

বাসার সামনে সিএনজি আসতেই কণা সিএনজি থেকে নেমে পড়ে। ভাড়া মিটিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। লিফট ওঠে ৬ তালায় এসে নেমে পড়ে। তার কাছে থাকা এক্সট্রা চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ফ্ল্যাটে ডুকে। তাহসিন আহম্মেদ বাসায় নেই। তিনি এখন অফিসে। তাহসিন আহম্মেদ একটা সাধারণ চাকরি করে। বাসায় আসবেন বিকেল ৫ টায় আর এখন বাজে ১১ টা।

কণা নিজের রুমে চলে এলো। কণার প্রচুর গরম লাগছে তাই শাওয়ার নিয়ে নিলো। মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে কিচেনে চলে গেলো। নুডুলস রান্না করে নিলো। নুডুলসটা নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো। কণা নু়ডুলস খাচ্ছে আর ভাবছে আভিয়ান হয়তো ঐশিকা পরীক্ষা করার জন্য এসব করেছিল। কিন্তু বন্যা? সে তো আর আভিয়ানের মতো হবে এর তো কোনো গ্যারান্টি নেই। বন্যা হয়তো তার কুৎসিত চেহেরা দেখে ঘৃণা করবে। সাফাতকে বলবে তাদের দুজনের মাঝে একজনকে বেছে নিতে হয় কণা না হয় বন্যা। তখন সাফাত কী করবে? একদিকে তার বোন আরেক দিকে তার ভালোবাসা। সে কোনটা বেছে নিবো?

কণা আর ভাবতে পারছে না। কণা খাবারের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। ফোনের মেসেজ টোনে কণার ধ্যান ভাঙে। কণা মেসেজটা ওপেন করে। মেসেজটা দেখে ভয়ে কণার হাত পা কাঁপছে। তার মাথা ঘুরছে। কণা টেবিলের ওপর নুডুলস ফোন সব রেখেই দৌড়ে রুমে চলে যায়। কণার বুক ধড়ফড় করছে। কপালে জমছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। কণা বেড সাইড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে নেয়।

১৩

হাত পা বাধা অবস্থায় অঙ্গান হয়ে রুমের এক কোণে পড়ে আছে একটা লোক। তখনি আরেকটা লোক রুমের ভিতর প্রবেশ করে। রুমের লাইট অন করতেই কৃত্রিম আলোয় আলোকিত হয়ে যায় রুমটা। এবার লোকটাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ব্ল্যাক কালার জিন্স প্যান্ট, অফ হোয়াইট কালার শার্ট, পায়ে সাধারণ স্লিপার, মুখে মাক্স। চুল থেকে এখনো পানি পড়ছে হয়তো মাত্রই শাওয়ার নিয়ে আসছে। ঐ লোকটার পিছনে আরেকটা ১৯-২০ বছরের একটা ছেলে এক বালতি গরম পানি নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।

লোকটি ইশারা করতেই ঐ ছেলেটি হাতে থাকা বালতির গরম পানিটা ঐ অঙ্গান হয়ে পড়ে থাকা লোকটার দিকে। লোকটা ধড়ফড়িয়ে ওঠে।

কী ঘুম ভাঙলো ইহান?

কে আপনি? আমাকে কেনো এখানে আটকে রেখেছেন?

আমি তোর যম। তোকে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু যন্ত্রণা অনুভব করানোর জন্য এখানে আটকে রেখেছি। তোকে তিলে তিলে মারার জন্য এখানে নিয়ে আসছি।

আমি কী করেছি? আপনি কেনো আমাকে মারবেন?

লোকটা পাগলের মতো হাসতে থাকে। তারপর এক হাঁটু গেড়ে বসে বলে,

তুই কিছু করিসনি বুঝে? নিষ্পাপ শিশু তুই? তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস। তুই তো সেই মেইন কালপ্রিট যে আমার ভালোবাসার দিকে এসিড ছুঁড়ে মেরেছিলি। তোদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে আমি নিজের হাতে শাস্তি দিব।

মুহূর্তেই লোকটার চোখ লাল টকটকে হয়ে যায়। চোখে প্রকাশ পাচ্ছে শুধু হিংস্রতা আর হিংস্রতা। অগান্তকের চোখ দেখে ভয়ে সিটিয়ে যায় ইহান অগান্তক ইশারা করতেই ঐ ছেলেটি দৌড়ে গিয়ে এক বাটি ফুটন্ত গরম পানি নিয়ে এসে ঐ লোকটার সামনে রাখে। অজানা লোকটা ইহানের হাত ফুটন্ত গরম পানিতে ডুবিয়ে দেয়। মুহুর্তেই আর্তনাদ করে ওঠে ইহান।

শুধু এই টুকুতেই এতো চিৎকার। তাহলে ভাব কাউকে এসিড মারলে তার কতোটা কষ্ট হয়। তোদের প্রত্যেকের আমি এমন অবস্থা করবো যে, পরবর্তী কোনো মানুষ সাহস পাবে না কোনো মেয়ের দিকে এসিড ছুঁড়ে মারার। আমি চাইলে তোদের পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারতাম। কিন্তু সেখানে তোরা উপযুক্ত শাস্তি পেতি না।

অগান্তক একটা নাইফ বের করে ইহানের শরীরের আঘাত করতে থাকে। সেই ক্ষত স্থানে লবণ দেয়। ইহান যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে। এক সময় অঙ্গান হয়ে যায়।

অজানা লোকটা নিজের ফোনের ওয়ালপেপারের দিকে তাকিয়ে বলে,

প্রেয়সী তোমাকে যারা কষ্ট দিয়েছিল। তাদের সবাইকে আমি এক এক করে খুঁজে বের করবো আর কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দিব।

১৪

আজ তিন দিন হলো কণার কোনো খোঁজ নেই। সাথে তাহসিন আহম্মেদকেও খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাফাত বাসায় গিয়েছিল কিন্তু কাউকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। সাফাত পাগলের মতো খুঁজে চলছে তার বোন আর বাবাকে। কিন্তু কোথাও খোঁজে পাচ্ছে না।

চলবে……..