তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব-১৮+১৯

0
256

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

নিজের চোখকে’ও বিশ্বাস করতে পারছে না অধরা।আহান রাগ করেছে।ভেবে আজ আগে অফিসে এসেছে অধরা।আহানকে সত্যি টা বলবে।এসে নিজে-ই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো।আহানকে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।এই দৃশ্য দেখে অধরার বুকের ভেতর টাই ব্যাথা করে উঠলো।অধরাকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে,থাকতে দেখে আহান বলল।

–অধরা কারো রুমে প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিতে হয়।সেটা মনে আপনি ভুলে গেছেন।

–সরি স্যার বলে-ই অধরা চলে গেলো।অধরা যাওয়ার সাথে আহান রুহি-কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।

–তোমার সাহস কি করে হয়।আমাকে স্পর্শ করার।বলল আহান।

–এসব তুমি কি বলছো আহান।আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে ছোঁয়ার অধিকার আমার আছে।বলল রুহি।

–এতদিন তোমার ভালোবাসা কোথায় ছিলো।সেদিন নিজের ক্যারিয়ারের জন্য আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে,সেদিন তোমার ভালোবাসা কোথায় ছিলো।একদম নাটক করবে না।ভালোভাবে বের হবে,নাকি দারোয়ান ডেকে,ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব।

–আমি জানি।তুমি আমার ওপরে রেগে আছো।তুমি আমাকে মারো,বকো,কাটো যা ইচ্ছে খুশি করো।আমি তোমাকে কিছু বলবো না।আমি জানি আমার ওপরে তোমার অনেক অভিমান তৈরি হয়েছে।আমি এবার চলে এসেছি।আমার ভালোবাসা দিয়ে,তোমার সব অভিমান ভেঙে দিব।

–তোর মতো কালনাগিনীর কোনো জায়গা আহান চৌধুরীর জীবনে নেই।আমাকে ছুঁইয়ে একদম অপবিত্র করে দিয়েছিস।পুরো শীরর আমার রিরি করছে।আহানের পরনে থাকা ব্লেজার টা খুলতে খুলতে বলল।ব্লেজার টা খুলে ছুরে ফ্লোরে ফেলে দিলো।

–এমন করে বলো না আহান।আমি মরে যাব।তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।আমি কার জন্য করেছি বলো।আমি তোমার ভালোর জন্য-ই করেছি তাই না বলো।

–তুমি মরে যা।তবু-ও আমার অফিস থেকে বেড়িয়ে যা।তোর মতো নোংরা মেয়ে।আমার অফিসে থাকলে আমার অফিসের অসন্মান হয়ে যাবে।

–বেশ ভালো কথা বলতে শিখে গেছো তুমি।আগে তো এমন ছিলে না।আগে শান্ত,বোকাসোকা সহজ-সরল অবুঝ আহান ছিলে।নিজেকে এতটা পরিবর্তন কিভাবে করতে পারলে আহান।বলল রুহি।

–তোকে আমার সব কৈফিয়ত দিতে হবে।আমি শেষ বারের মতো বলছি।ভালো-ই ভালো-ই বেড়িয়ে যা-ও।আমি রেগে গেলে তোমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।

–যতক্ষণ না তুমি আমাকে মাফ করবে।আমি ততক্ষণ এক চুল পরিমাণ সরবো না।আমি রাগ ভাঙিয়ে তারপরে যাব।কথা টা শেষ হবার আগে-ই আহান রেগে রুহির ঘাড় ধরে নিজের রুম থেকে বের করে দিলো।তাল সামলাতে না পেরে,রুহি ফ্লোরে পরে গেলো।রুহির এভাবে পড়ে যাওয়া দেখে,কয়েকজন শব্দ করে হেঁসে উঠলো।আহান রুমে এসে পানির বোতল বের করে হাত ধুইয়ে নিলো।

অধরা নিজের কেবিনে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ল।ভেতর টা পুরে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।নিজের ওপরে নিজেরি বেশ রাগ হচ্ছে,অধরার।আগে তো সে,এমন ছিলো না।এখন কোথায় কোথায় এমন কান্না করে কেনো,তা-ও ছোট খাটো বিষয়ে।এটা তো সত্যি আহান তাকে ভালোবাসে না।এই সত্যটা মেনে নিতে এত কষ্ট কেনো হচ্ছে আমার।সত্যি নিজের ভালোবাসার মানুষরে পাশে অন্য কারো ছায়া’ও সয্য করা যায় না।সেখানে একটা মেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।এটা দেখার পরে অশান্ত মন-কে কিভাবে শান্ত করবো।মাথা কাজ করছে না আমার।নিজকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে।আহানের থেকে খুব বেশি দূরে দূরে থাকতে হবে।তা-না হলে শেষ হয়ে যাবি অধরা।বাঁচতে পারবি না।আমি এত সহজে দুর্বল হয়ে যেতে পারি না।আমি এমন কেনো হয়ে গেলাম।এক হাতে চোখের পানি মুছছে।আর নিজের মতো একা বকবক করছে।তখনি আদিল আসে অধরার কাছে।অধরা তড়িঘড়ি করে চোখের পানি মুছে।

–কিছু বলবেন।

–কি হয়েছে তোমার।কান্না করছো নাকি।তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেনো।বলল আদিল।

–আপনি যে,কাজে এসেছেন।সেটা বলুন।এসব দেখা আপনার কাজ না।

–সরি।আসলে আমি এই প্রজেক্ট টা করতে পারছি না।তুমি যদি একটু সাহায্য করতে।আমি জানি নিজের কাজ নিজেকে-ই করতে হয়।কিন্তু আজকে আমার একটু তাড়া আছে।আমার আম্মু অসুস্থ।আম্মুকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে।তা-না হলে আমি করতাম।

–আচ্ছা আপনি বসুন আমি আপনাকে সাহায্য করছি।তারপরে আদিল একটা চেয়ার নিয়ে এসে অধরার পাশে বসলো।দু’জন মিলে এক ঘন্টা কাজ করে সফল হলো।আদিল অধরা-কে ধন্যবাদ জানিয়ে।অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে গেলো।বিকেলের দিকে কাজ করে।নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে বাসার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ল।তখনি অধরার ফোনে একটা ফোন আসলো।

–হ্যাঁ বলো।

ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন কিছু বলে উঠলো।

–আচ্ছা চিন্তা করো না।আমি এখনি আসছি।বলে-ই উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করলো।

রাত আটটা বেজে গেছে।অধরা তাড়াতাড়ি করে ফাঁকা রাস্তায় হাঁটছে।ভেতরে ভেতর ভয় কাজ করছে।সন্ধ্যার পরে খুব কম মানুষ চলাফেরা করে এই দিকে।একা আসা ঠিক হয় নাই।কিন্তু না এসে’ও উপায় ছিলো না।এর পরে থেকে দিনে আসবো।এসব ভেবে জোরে জোরে হাঁটছিল অধরা।আরেকটু গেলে-ই মেইন রাস্তায় উঠতে পারবে।তখন আর মানুষজন গাড়ির অভাব হবে না।পেছনে থেকে কেউ ডেকে উঠলো।

–কুইন।

অধরা পেছনে তাকালো না।আগের মতো হাঁটা শুরু করলো।আবার ডেকে উঠলো।

–আমার কুইন।

তবু’ও অধরা দাঁড়াল না।সে,জানে রাতের বেলা এই জায়গাটা কতটা বিপদজনক।বাজে লোকেরা রাতের বেলা এখানে আসে।হুট করে কয়েকজন কালো পোশাক পড়া লোক এসে অধরার সামনে দাঁড়াল।

–রাজকন্যা বুঝি আমার ডাক শুনতে পায় নাই।এত সুন্দর করে ডাকলাম।তবু’ও দাঁড়ালে না আমার পাগল রানী।বলল একজন লোক।

–বাহ আপনি তো অনেক সুন্দর করে কথা বলেন।দেখাতে’ও মাশাল্লাহ।অনেক স্মার্ট।লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল।

লোকটি অবাক হয়ে অধরার তাকিয়ে আছে।মেয়েটির সাহস দেখে অবাক হচ্ছি।অন্য কেউ হলে পালাতে শুরু করে দিতো।না হলে বাঁচার জন্য চেষ্টা করতো।এই মেয়ে পালানো তো দূর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ পর্যন্ত নেই।উওর না পেয়ে অধরা আবার বলল।

–এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলবো নাকি।হাঁটা শুরু করবেন।

–তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।তোমার ভয় লাগছে না।

–কিসের ভয়।আপনারা আমার সর্বোচ্চ কি করতে পারবেন।আমাকে মেরে ফেলবেন এর থেকে বেশি কিছু করতে পারবেন না।প্রতিটি জীবকে-ই মৃত্যুর সাধ গ্রহণ করতে হবে।আমি দু’দিন পরে মরতাম।এখন না হয় দু’দিন আগে মরতো।

–দারুণ কথা বলো তুমি।তোমাকে আমার বেশ ভালো লাগছে।আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।তুমি যদি রাজি থাকো।

–আশেপাশে কেউ নেই।এখানে আপনাদের দশজন-কে খুন করে রেখে গেলে।আমার মনে হয় কেউ টের পাবে না।চারিদিকে অন্ধকার।সিসি ক্যামেরা’ও নেই।বলল অধরা।

–স্যার পেছনে তাকিয়ে দেখুন।আমরা দশজন এসেছিলাম।পেছনে থেকে ছয়জন নেই হয়ে।লোকটি পেছনে তাকিয়ে দেখলো সত্যি।এই সুযোগ অধরা দৌড়ে দিলো।আরেক-টু গেলে-ই মেইন রাস্তায় উঠতে পারবে।অধরা আর বেশি দূরে যেতে পারলো না।তার আগে-ই লোকটি অধরার পায়ে হকিস্টিক ছুড়ে দিলো অধরার ডান পায়ের দিকে।অধরা পায়ে ব্যাথা পেয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।ব্যাথা পায়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটাতে শুরু করলো।একটু দূর যেতে-ই কালো রং এর একটা গাড়ি দেখতে পেলো।গাড়ির সামনে একটা ছেলে কালো রং এর শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে।হয়তো কোনোকিছু দিয়ে চিন্তা করছে।অধরা হাঁটতে হাঁটতে লোকটির কাছে চলে এসেছে।পেছনের চারজন’ও অধরার কাছে চলে এসেছে।কারো পায়ের শব্দ পেয়ে আহান পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো।অধরাকে আসতে দেখে অবাককে শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।অধরা আহানকে দেখে প্রান ফিরে পেলো।কোনো রকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে আহানের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল।

–আমাকে বাঁচান।ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।বলল অধরা।

–তুমি এত রাতে এই রাস্তায় কি করতে এসছো।

–আমার আরেকটা শশুর বাড়ি আছে।তাদের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।

লোকগুলো আহান কে দেখে বলল।

–স্যার আপনি।

–তোমরা মেয়েদের পেছনে ঘুরো।তোমাদের এই কাজের জন্য আমি রাখছি।তোমরা জানো তোমরা কার দিকে হাত বাড়াতে চেয়েছিলে।তোমাদের এই অসভ্যতামির শাস্তি তোমরা পাবে।বলল আহান।

–সরি স্যার আর হবে না।আমাদের ভুল হয়ে গেছে।আমাদের মাফ করে দিন।আমরা তো অন্য কাউকে মনে করে ওনার পেছনে পেছনে আসছিলাম।

–আমার সামনে থেকে চলে যা-ও।তোমাদের মুখ দেখতে চাচ্ছি না।তোমাদের আমি পরে দেখে নিব।লোক গুলো চলে গেলো।

–ধন্যবাদ আপনাকে।

–কিসের জন্য।

–এই যে,আপনি আমাকে বাঁচালেন।আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে।আজ তাহলে আসি।বাসার সবাই আমার জন্য চিন্তা করছে।বলে-ই অধরা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটা শুরু করলো।আহান দৌড়ে গিয়ে অধরার সামনে দাঁড়াল।

–এতরাতে কোথায় গিয়েছিলে।পায়ে কি হয়েছে তোমার।

–তেমন কিছু না।একটু ব্যাথা পেয়েছি।সমস্যা নেই আমার অভ্যাস আছে।

–আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।

–ধন্যবাদ স্যার,লাগবে না।আমি যেতে পারবো।

–না তুমি যেতে পারবে না।হাঁটতে পারছো না।আবার বলছো যেতে পারবে।

–আমাকে নিয়ে এত না ভাবলে’ও চলবে আপনার।

–তাহলে কে ভাব্বে।

–আমি নিজের টা নিজে-ই ভাবতে পারি।অনেক রাত হয়েছে আসি।বলে-ই সামনের দিকে এগোতে যাবে।তখনি আহান অধরাকে কোলে তুলে নিলো।পায়ে ব্যাথা থাকায় ছোটাছুটি’ও করতে পারছে না।

–আমাকে নামিয়ে দিন।লজ্জা করে না আপনার।এভাবে অন্য একটা মেয়েকে যখন তখন না বলে,কোলে তুলে নেন।

–বউ হও তুমি আমার।তুমি পায়ে ব্যাথা পেয়েছো।এই অবস্থা একা যেতে পারবে না।স্বামী হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না।

–কিসের স্বামী।আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না।নামিয়ে দিন আমাকে।

আহান কোনো কথা বলল না।অধরাকে হালকা করে ছেড়ে দিতে লাগলে,অধরা ভয়ে আহানের গলা জড়িয়ে ধরলো।আহান হালকা হেঁসে অধরাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।অনেকক্ষন হলো আহান গাড়িতে বসে আছে।গাড়ি চালাচ্ছে না দেখে।অধরা বিরক্ত হয়ে বলল।

–কি হলো গাড়ি চালাচ্ছেন না কেনো।

–তোমাকে একটা গিফট দিবো নিবে।

আহানের কোথায় অধরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

–কেনো আপনার গার্লফ্রেন্ডের বুঝি পছন্দ হয় নাই।তাই আমাকে দিতে আসছেন।বলল অধরা।আহান রেগে অধরার দিকে তাকালো।অধরা নিজের দৃষ্টি নামিয়ে নিলো।খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো।সকালের মেয়েটি কে ছিলো।কেনো আপনাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো।এত সাহস কোথায় পেলো।আপনি বা কিছু বলছিলেন না কেনো।কিন্তু মনের কথা গুলো মনে-ই রেখে দিলো।কেউ কোনো কথা বলছে।দু’জনের মধ্যে নিরবতা বিরাজমান করছে।আহান পকেট থেকে একটা লাল রং এর বক্স বের করলো।বক্সটি খুলে একটা সোনার আংটি বের করলো।অধরার বাম হাত নিজের দিকে নিয়ে আসলো।অধরা হাত সরিয়ে নিয়ে আসতে চাইলে আরো শক্ত করে ধরলো অধরার হাত।অধরার হাতে আংটি টা পড়িয়ে দিয়ে অধরার হাতে চুমু খেলো আহান।অধরা দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো।

–কি হচ্ছে টা কি।আমাকে যদি না নিয়ে যাবেন।তাহলে কেনো এভাবে আটকে রেখেছেন।আমাকে যেতে দিন।আমার খুব খারাপ লাগছে।বাসায় যাব আমি।

–কেনো খারাপ লাগছে।কি হয়েছে।আমাক কেনো সয্য করতে পারছো না।

অধরা আর কোনো কথা বলল না।চুপ করে রইলো।

–আমার একটা কথা রাখবে।

অধরা আহানের দিকে তাকালো।আহান বলতে শুরু করলো।

–তুৃমি এই আংটি টা কখনো খুলবে না।যত যাই কিছু হয়ে যাক না কেনো।কখনো খুলবে না।আমাকে কথা দাও।

–আমি এসব কথা দিতে পারবো না।আমি এসব পড়তে ভালোবাসি না।এসব আমার লাগবে না।বলে’ই আংটি টা খুলে দিতে লাগলো অধরা।

আহান অধরার হাতে ওপরে হাত রেখে বলল।থাক কথা দিতে হবে না।তুমি তোমার কাছে-ই রাখো।তোমার যা ইচ্ছে খুশি করবে।বলেই গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

রাত নয়টা’র দিকে,আহান অধরা-কে নিজের বাসার সামনে, নামিয়ে দিলো।অধরা নেমে সোজা চলে যাবে।তখনি আহান পেছন থেকে ডাক দিলো।

–বাসার ভেতরে আসার জন্য একবার’ও তো বললে না।

–অনেক রাত হয়েছে।আপনি বাসায় ফিরে যান।সবাই আপনার জন্য অনেক চিন্তা করবে।

–আর তুমি।

–মানে।

–মানে,তুমি চিন্তা করবে না।

–আপনি আমার কে”?যে,আপনার জন্য চিন্তা করতে যাব।

–সেটা-ই আমি তোমার কে”আসছি।বলে-ই আহান চলে গেলো।
অধরা বাসায় আসতে-ই অধরার নানি প্রশ্ন করলো।

–এতরাত হলো কেনো”।

–একটু কাজে আঁটকে পড়েছিলাম।

–আচ্ছা যা,খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।সকালে চৌধুরী বাড়ির সবাই বেড়াতে আসবে।চৌধুরী সাহেব সকালে ফোন করেছিলো।

–কেনো আসবে।

–এটা আবার কেমন প্রশ্ন অধরা”।

–সরি নানি।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।বলে-ই চলে গেলো অধরা”।

পরের দিন সকাল বেলা অধরা অফিসে যাওয়ার,কিছুক্ষণ পরে-ই চৌধুরী বাড়ির সবাই আসলো।অধরা’র নানি আর মিনারা বেগম,সকাল থেকে রান্নার কাজ শুরু করে দিয়েছে।তিতির গিয়ে ওদের সাথে সাহায্য করছে।অধরা’র নানি অবশ্য নিষেধ করেছিলেন।তিতির শুনে নাই।

সবাই মিলে বেশ গল্প করছে।আড্ডায় মেতে উঠেছে রুবিনা বেগমে’র বাসা।মিনারা বেগম কিছু বলছে না।আগের থেকে অনেক’টা স্বাভাবিক হয়েছে,তিনি।বেশিরভাগ সময় চুপচাপ থাকে।খুব কম কথা বলেন।মা’কে কাজে সাহায্য করে।কিন্তু কোনো কথা বলে না।মাঝে মাঝে আকাশ’কে ভালোবাসেন।

অধরা অফিসে কাজ করছে,আদিল এসে অধরা’কে ধন্যবাদ জানালো।

–অধরা কি করছো।বলল রিয়া।

–কাজ করছি।তোমার কাজ নেই।

–কাজ আছে।এখন লাঞ্চের জন্য সময় দিয়েছে।

–ওহ্ আমি খেয়াল করি নাই।

–কালকে কি হয়েছিল জানো,আমার ভাইয়া আর আমি রাত দুটো’র সময় বাইক নিয়ে,ঘুরছিলাম।অনেক মজা হয়েছিল।ফাঁকা রাস্তা কেউ ছিলো না।বলল রিয়া।

–আমার’ও অনেক দিনের ইচ্ছে,রাতে বাইকে করে নিজের প্রিয় মানুষের সাথে ঘুরবো।কিন্তু আফসোস।আমার না আছে প্রিয় মানুষ।আর না আছে বাইক।

–আফসোস করতে হয় না।হতে’ও পারে আল্লাহ তোমার মনের ইচ্ছে পূরণ করে দিলো।

–আচ্ছা যা-ও,আমি কাজ করছি।আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।রিয়া চলে গেলো।

সন্ধ্যাবেলা ছাঁদে পাটি বিছিয়ে,সবাই মিলে আড্ডা দিতে বসেছে।অধরা ফ্রেশ হয়ে ছাঁদে আসলো।আহান এক কোণে বসে আছে।অধরা আড়চোখে একবার আহানের দিকে তাকালো।আকাশ গিয়ে তিতলির কোলের মধ্যে গিয়ে বসেছে।এই আকাশের একটা ব্যবস্থা করতে হবে।তিতলি কি এমন করেছে।যে,আকাশ তিতলির জন্য পাগল।অধরা’র নানি সবার জন্য নাশতা দিয়ে গেলো।আশরাফুল চৌধুরী অধরা’র নানি-কে বলল মুরি মাখিয়ে দিয়ে যেতে,তাহলে আড্ডা টা দারুণ জমবে।একটু পরে অধরার নানি মুরি মাখিয়ে দিয়ে গেলেন।মিনারা বেগম-কে ডাকলে তিনি আসেন নাই।অধরা গিয়ে তিতিরের পাশে বসলো।

–অধরা মা তোমাকে একটা কথা বলবো।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–জ্বী স্যার বলুন।

–আমি তোমার স্যার হই।এখন থেকে ডাক টা পরিবর্তন করতে হবে মা।আমি তোমার বাবা হই না।আমাকে বাবা বলে ডাকবে কেমন।

–জ্বী আমি চেষ্টা করবো।

–আমি তিতলির বিয়ে ঠিক করেছি।পরশু দিন এঙ্গেজমেন্ট করতে চাচ্ছি।তুৃমি তো চৌধুরী বাড়ির বউ।তুৃমি যদি না থাকো,তাহলে সবাইকে কি জবাব দিব,আমি বলতো।

–আচ্ছা সমস্যা নেই।আমি পরশু দিন যাবনি।আমার জন্য আপনাদের অসন্মান হবে।আমি এমন কোনো কাজ করবো না।চিন্তা করবেন না।

–একটা কথা বলবো।

–বলেন।

–তুমি কাল-ই চলো আমাদের সাথে।অনেক কাজ আছে।তাছাড়া বাড়ির বউ হিসেবে তোমার একটা দায়িত্ব আছে না।

অধরা বুঝতে পারলো।আশরাফুল চৌধুরী তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এতকিছু করছেন।অধরা আর কিছু বলল না।যাবে বলে সম্মতি জানাল।

আশা উঠে এসে অধরার পাশে বসলো।

–কি গো কেমন আছো।তুৃমি খালি আমার ছোট দেবর টাকে একা ফেলে চলে আসো কেনো।বলল আশা।

–উনি আমাকে পছন্দ করেন না।তাছাড়া এই বিয়ের আগে স্যারের সাথে আমার একটা শর্ত হয়েছিল।বলল অধরা।

–এভাবে নিজের স্বামীকে ছেড়ে রাখতে নেই বোন।কখন কিভাবে অন্যের হাতে চলে যায়।সেটা বোঝা মুশকিল।থাকতে মূল্য দাও।হারিয়ে গেলে খুঁজো না আবার।

আশার কথা শুনে অধরা,র বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।এমন কথা বলল কেনো ভাবি।

–ভাবি উনি অন্য কাউকে ভালোবাসে।তাই উনাকে হারানোর ভয় আমার নেই।

–মন থেকে বলছো।আমি জানি অধরা তুৃমি আহান’কে ভালোবাসতে শুরু করেছো।তুৃমি যে,দিন কক্সবাজার থেকে এসে নিজরে বাসায় যাচ্ছিলে।সেদিন আমি তোমার চোখে আহানের জন্য ভালোবাসা আর একবুক ভরা অভিমান দেখতে পেয়েছি।কিন্তু বলতে পারি নাই।তোমার সাথে আমার সম্পর্কটা এখনো এতটা ভালো হয়ে উঠে নাই।তুমি যদি কিছু মনে করো।তাই আমি তোমাকে কিছু বলি নাই।একটা কথা সব সময় মনে রাখবে,নিজের ভালোবাসা’র মানুষ-কে পেতে হলে,কখনো কখনো স্বার্থপর হতে হয়।সেখানে আহান তোমার নিজের স্বামী।তুমি কেনো তোমার স্বামীর ভাগ অন্য কাউ-কে দিবে।

–ভাবি অধরা যে,শুধু আহান-কে ভালোবাসে এমনটা না।আহান’ও অধরা-কে ভালোবাসে।আমি দেখছি আহানর অধরা আর ওর ছবি বুকে নিয়ে রাতে ঘুমায়।অধরা-কে দেখার জন্য রাত করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।তোমরা এসব দিকে খেয়াল রাখো না।আমি ঠিকি রেখেছি।বলল তিতির।

–আমি’ও অধরা-কে তাই বোঝাচ্ছি।যাকে ভালোবাসো তাকে নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দাও।মানুষের বিয়ে একবার হয়।বারবার হয় না।এভাবে স্বামীর থেকে দূরে দূরে থেকো না।আমার বলার আমি বললাম।এখন কি করবে সেটা তোমার ব্যক্তিগত বিষয় বোন।বলে-ই উঠে চলে গেলো আশা।

–অধরা আমি’ও তোমাকে বলছি।তুমি আহানে’র থেকে আর দূরে দূরে থেকো না।এখন আহানের কাছে থাকাটা তোমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আশা ভাবি একদম ঠিক কথা বলেছে।ভেবে দেখো আমাদের কথা।সবাই গানে গানে মেতে উঠেছে।তিতির গিয়ে ওদের সাথে যোগ দিলো।অধরা অসহায় দৃষ্টিতে ওদের দিয়ে তাকিয়ে আছে।এখন সে,কি করবে।অনেক কষ্ট নিজের মন’কে বুঝিয়ে নিয়েছিলো অধরা।এরা দু’জন সবকিছু এলোমেলো করে দিলো।

–এত চিন্তা করো না।বেশি চিন্তা করলে,অল্প বয়সে চুল সব পেকে যাবে।সবাই তখন বুড়ি বলবে।বলল আহান।

অধরা কোনো উওর দিলো না।

–আমাকে ইগনোর করছো।

–আপনি কি এমন এসে গেছেন,আপনাকে ইগনোর করতে হবে।

–মনে তো হচ্ছে করছো।অধরা কোলে মাথা রেখে শুইতে শুইতে বলল।

–আরে!

–কি’রে”?

–আপনি এখানে সবার সামনে অসভ্যের মতো আমার কোলে শুইয়ে পড়লেন কেনো।

–আমি কি ভুল করে অন্যের বউয়ের কোলে শুইয়ে পড়েছি।

–না।

–তাহলে এত কথা বলছো কেনো।মাথা ব্যাথা টিপে দাও।

–আপনার লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই।

–না নেই।বিয়ে করেছি সব লজ্জা সরম আমার বউ খেয়ে ফেলছে।

–একদম বাজে কথা বলবেন না।আমি কিভাবে আপনার লজ্জা সরম খাইলাম।

–তাহলে শিকার করলে,তুমি আমার বউ।

–হ্যাঁ,না মানে ইয়ে।

–না মানে ইয়ে শেষ হলে,চুল গুলো একটু টেনে দাও।

অধরা আর কোনো কথা বলল না।আশা আর তিতির ওদের দেখে হাসছে।একটু পরে আহানের বন্ধুরা এসে হাজির।আহান ওদের দেখে লাফ দিয়ে উঠে বলল।

–আংকেল এখানে গানে অনুষ্ঠান হচ্ছে।আমরা সবাই মিলে গান গাইবো।

বাসর রাতে যে,গান শুনিয়ে ছিলো সবাই।এদের কিছুতে-ই গান গাইতে দেওয়া যাবে না।আহান চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো।

–না তোরা গান গাইবি না।তোরা এখানে আসলি কি করে।

–আমরা তোর বাসায় গিয়েছিলাম।তোকে খুঁজতে,কিন্তু গিয়ে দেখি পুরো বাসা ফাঁক।তোকে ফোন দিয়েছি।তুই ধরিস নাই।পরে তিতলি আপুকে ফোন করলাম।তিতলি আপু আমাদের বলেছে।তারপরে ভাবির নানি বলল আসতে তাই আসলাম।

–তোদের লজ্জা করে না।তোদের বলল আর নির্লজ্জের মতো চলে এলি।

–আমাদের কোনোদিন লজ্জা ছিলো না।আর কোনোদিন হবে না।বলল তাসরিফ।

ওদের ঝগড়া দেখে সবাই হাসাহাসি শুরু করলো।সবাই মিলে খুব সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটালো।যা,সারাজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।পরের দিন সকাল বেলা সবাই চৌধুরী বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।আহানের বন্ধুরা রাতে-ই চলে গিয়েছিলো।আকাশ আগে গিয়ে গাড়িতে বসছে।আকাশ-কে রেখে যেতে চেয়েছিল অধরা।কিন্তু তিতলির জন্য পারলো না।এই আকাশের কিছু একটা করতে হবে।এখন নিজের বোনকে-ই চিনে না এই ছেলে।অধরা তিন দিনের ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে,আহান বাসায় এসে আবার অফিসে চলে গেলো।

একটু রাত করে-ই বাসায় ফিরলো আহান।হাতে কতগুলো ব্যাগ।আহান ফ্রেশ হতে গেলে,অধরার আগ্রহ হলো ব্যাগ গুলোর মধ্যে কি আছে।অধরা দেখতে যাবে।তখনি আহান বলল।

–এত দেখাদেখি কিছু নেই।ওগুলো তোমার জন্য-ই নিয়ে এসেছি।পড়ে রেডি হয়ে নাও।বাহিরে যাব।

–এত রাতে বাহিরে যাব কেনো।

–শহরের বাহিরে তোমাকে ফেলে দিয়ে আসবো।যেনো আর কখনো ঝগড়া করতে না পারো।এত মুখে মুখে কথা বলো কেনো বেয়াদবের মতো।

আহানের কথা শুনে অধরা মুখ ভার করে ফেলল।তা দেখে আহান বলল।

–তোমার যদি সমস্যা হয়।আমাকে বলতে পারো।আমি তোমাকে সাজিয়ে দিচ্ছি।

–লাগবে না।বলে-ই ওয়াশরুমে চলে গেলো।ব্যাগ গুলো খুলতে-ই অনেক গুলো শাড়ি দেখতে পেলো।তারমধ্যে খয়েরী রঙের শাড়িটা অধরা পড়ে নিলো।বাহিরের এসে হালকা করে সেজে নিলো।ঘুরতে অধরা’র বেশ ভালো লাগে।কোথাও ঘুরে যাবে।শুনলেই অধরা’র মন ভালো যায়।আজকে আর চুল বাঁধলো না অধরা।চুলগুলো ছেড়ে দিলো।অধরা-কে দেখে আহান মনে মনে বলল।মাশাল্লাহ।

–তুমি ঠোঁট লিপস্টিক দিয়েছো।

–না নারিকেল তেল দিয়েছি।কেনো আপনি দিবেন।আবার শখ জেগেছি বুঝি।দেখতে পাচ্ছেন না।

–হ্যাঁ দিব।অধরা লিপস্টিক নিয়ে আহানের দিকে এগিয়ে গেলো।আহানের ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে যাবে।তখনি আহান অধরার হাতে থেকে লিপস্টিক টা নিয়ে ফেলে দিলো।দু’হাতে অধরাকে নিজের কাছে টেনে নিলো।

–আমি এভাবে লিপস্টিক নিব না।তোমার ঠোঁট থেকে নিব।নাও দিয়ে দাও।

অধরা চোখ বড় বড় করে আহানে দিকে তাকালো।

–অসভ্য লোক একটা।আমি আপনার সাথে কোথায় যাব না।আপনি একাই যান।

–তুমি তো দেখি আচ্ছা স্বার্থপর।আমার ঠোঁটে থেকে তোমাকে লিপস্টিক দিয়ে দিয়েছিলাম।তখন তো ভালো-ই নিয়েছিলে।তাহলে এখন কেনো তুমি দিচ্ছো না ।এটা কিন্তু একদম ঠিক না অধরা।আহানে’র কথা শুনে দু’হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল অধরা।

মানুষটা দিন দিন কি বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।মুখে কিছু আটকায় না।

চলবে…..