তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব-১৬+১৭

0
268

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সবাই ফ্রেশ হয়ে সমুদ্রের কাছে আসলো।কি অপরুপ দৃশ্য।বাতাসের সাথে পানি তাল মিলিয়ে কি সুন্দর খেলা করছে।অধরা এসে একটু দূরে দাঁড়ালো।একটু পরে আহান এসে অধরা-কে সমুদ্রের আরো কাছে নিয়ে গেলো।অধরা যাবে না।আহান এক প্রকার হাত ধরে টেনে-ই নিয়ে গেছে অধরাকে।

–এখানে দাঁড়িয়ে থাকো।দেখবে একটু পরে পানি এসে,তোমার পা ধুইয়ে দিয়ে যাবে।

বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অধরা দেখলো।সত্যি সমুদ্রের পানি গর্জন করতে করতে এসে,অধরার পা ধুইয়ে দিয়ে গেলো।বিষয়টা বেশ ভালো লাগছে অধরার।অধরা আরেকটু পানির কাছে যাবে।তখনি আহান অধরার হাত ধরে ফেলে।

–বেশি দূরে যেও না।তুৃৃমি সাঁতার জানো না।পরে গেলে কি হবে একবার ভেবে দেখেছো।

–আহান,অধরা এদিকে এসো সবাই সকালের খাবার খেয়ে নেই।পরে আবার আসবো।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।ওনার কথা মতো সবাই চলে গেলো।এগারোটার দিকে সবাই আবার আসলো।

আকাশ আর রোহানের মধ্যে বেশ ভালো মিল হয়ে গেছে।দু’জন মিলে খেলা করছে।আশার সমুদ্র বেশ ভালো লাগে।আহানের বড় ভাইয়ের সাথে পানির মধ্যে নেমে অনেক মজা করছে।তিতির তার স্বামীকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তিতলি ভিডিও করছে।বিভিন্ন রকমের ছবি তুলছে।আশরাফুল চৌধুরী,মিসেস আফরোজা চৌধুরী বসে বসে ছেলে মেয়েদের আনন্দ দেখছেন।

–ঐ দেখো আমার ছেলে আর ছেলের বউ দাঁড়িয়ে আছে।ওদের কয়টা সুন্দর করে ছবি তুলে দিবে।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–আচ্ছা স্যার।বলেই লোকটি আহান আর অধরার কাছে গেলো।গিয়ে বলল স্যার,ম্যাডাম আপনারা একটু একসাথে দাঁড়ান ছবি তুলবো।

–আমি ছবি তুলবো না।বলল অধরা।

–আপনি আমার একা ছবি তুলে দিন।আমি ও মেয়ের সাথে ছবি তুলবো না।

–আশরাফুল স্যার আমাকে পাঠিয়েছেন।এখন আমি ওনার কথা কিভাবে অমান্য করবো।প্লিজ স্যার কয়টা ছবি তুলবো।

আহান গিয়ে অধরার পাশে দাঁড়ালো।

–নিন তুলুন।বলল আহান।

–স্যার এভাবে ছবি তোলা যায়।একটু কাছাকাছি আসুন।না হলে ছবি ভালো আসবে না।আহান গিয়ে আরো একটু কাছে দাঁড়ালো।

–স্যার যদি কিছু মনে না করেন।তাহলে আপনার একটা হাত ম্যাডামের কাঁধে রাখুন।

–আচ্ছা আপনি আমাদের ছবি তুলতে এসেছেন।নাকি সিনামার শুটিং করতে এসেছেন।

–সরি স্যার।আহান আলতো করে অধরার কাঁধে হাত রাখলো।লোকটি একটা ছবি তুললো।

–একটা কাজ করুন।আপনি আমার কোলের মধ্যে বসে পড়ুন।না হলে আমাকে আপনার কোলের মধ্যে বসিয়ে নিন।তবু্ও এত ঘা ঘেঁষাঘেঁষি করবেন না।রেগে বলল অধার।আহানর সত্যি সত্যি অধরাকে তুলে নিলো।

–এবার পারফেক্ট হয়েছে স্যার।ম্যাডাম আপনি স্যারের গলা জড়িয়ে ধরুন।তারপরে স্যারের দিকে তাকান।স্যার আপনি ম্যাডামের দিকে তাকাবেন।

–এত নাটক করতে পারবো না।আমাকে নামিয়ে দিন।আচ্ছা বদমাইস লোক তো আপনি।বলল অধরা।

–চুপচাপ কয়টা ছবি তোলো।এতে তুমিও মুক্তি পেয়ে যাবে।আর আমি’ও।

অধরা আর কোনো কথা বলল না।লোকটির কথা মতো কয়টা ছবি তুলে নিলো।লোকটি চলে যেতে-ই দু’জন আলাদা হয়ে গেলো।

অধরা এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।বাতাসে অধরার চুলগুলো উঠছে।দু’জন বাড়িয়ে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিলো অধরা।আহান এসে পেছনে থেকে অধরার সব চুল খুলে দিলো।তারপরে টানতে টানতে সমুদ্রের পানিতে নিয়ে গেলো।কিছুদূর নিয়ে যেতেই অধরাকে রেখে দৌড়ে আসতে লাগলে অধরা আহানের পা ধরে ফেলে।

–আপনার মতো খারাপ মানুষ দু’টো দেখি নাই।আপনি আমাকে মারতে চান।এতটা খারাপ আপনি।আমাকে রেখে যাবেন না।আমি সাঁতার জানি না।

–আগে তুৃমি আমার পা ছাড়ো।আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি।পা ধরে এতবার মাফ চাইতে হবে না।

–আহানের বাচ্চা,আমি আপনাকে তাজাই খেয়ে ফেলবো।

–পেতনীরা সব পারে আগে নিজে নিজেকে বাঁচিয়ে দেখাও।বলেই আহান চলে যেতে লাগলো।অধরা দু’হাতে আহানের পা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

–এখন কেমন লাগছে।আমার সাথে আর ঝগড়া করবে বলো।যদি আমাকে কথা দাও আমার সাথে আর ঝগড়া করবে না।তাহলে তোমাকে নিয়ে যাব।

রাগে অধরা আহানের পা ছেড়ে দিলো।তার দুর্বলতা কে কাজে লাগাচ্ছে আহান।অধরা কারো কেনা গোলাম না।যে,উনি যা বলবে তাই শুনতে হবে।বাতাসের সাথে পানি তাল মিলিয়ে দ্রুত গতিতে কিনারা দিকে এগিয়ে আসছে।আহান দৌড়ে গিয়ে অধরা কে তুলে ফেললো।

–ছাড়ুন আমাকে আপনি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন।

–ঐ দেখো তোমার শশুর তোমার দিকে এগিয়ে আসছে।এখন যদি না যাও।তাহলে তোমার শশুর এসে তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে।বলেই আহান দৌড় দিলো।অধার’ও আহানের পিছু পিছু দৌড়ে দিলো।

সন্ধ্যা বেলা আহান ঘুমিয়েছে।অধরা চুপচাপ আহানের পাশে বসে আছে।হঠাৎ মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসলো অধরার।নিজের ব্যাগ থেকে
ত্রিম,পাউডার,লিপস্টিক,কাজল বের করলো।অধরার তো মেক-আপ নেই।এখন কি করবে।তখনি তিতিরের কথা মনে পড়লো।কোনো কথা না বলে আস্তে করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।তিতিরের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অধরা।ডাক দিবে কি না সেই ভেবে ইতস্ত বোধ করছে অধরা।তখনি তিতিরে স্বামী দু’হাতে খাবার নিয়ে অধরার পেছনে দাঁড়াল।

–কি ব্যাপার নতুন বউ যে,দাঁড়িয়ে আছো কেনো।তোমার আপুকে ডাক দেও।

–আসলে ভাইয়া।

–হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না।বলে-ই তিতির কে ডাকলো।তিতির এসে দরজা খুলে দিলো।

–আরে অধরা তুমি,কোনো সমস্যা বোন।কিছু লাগবে তোমার।

তিতিরের স্বামীর জন্য বলতে পারছে না।তিতিরের স্বামী বুঝতে পেরে ভেতরে চলে গেলো।

–আপু আপনার কাছে একটা জিনিস নিতে আসছিলাম।

–কি লাগবে বলো।এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে।

–আপু আপনার মেক-আপ আছে।

–হ্যাঁ আছে।কেনো তোমার লাগবে।

–জ্বী আপু।বেশি সময় লাগবে না।আমি একটু পরেই দিয়ে যাব।

–সমস্যা নেই।আমার কাছে একটা ছোট মেক-আপ আছে।তুমি ওটা নিয়ে যাও।তুমি তো মেক-আপ করো না।কি ব্যাপার!

–তেমন কিছু না আপু।তিতির আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে একটা মেক-আপ বক্স এনে,অধরার হাতে দিলো।অধরা মেক-আপ হাতে পেয়ে পারে তো খুশিতে নাচ শুরু দেয়।ইস আজ আহান চৌধুরী কোথায় যাবে।অধরা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে নিজের রুমে আসলো।তারপরে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে দুটো ঝুটি করে দিলো আহানের চুলে।তারপরে মুখে মেক-আপ করতে লাগলো।আহান একটু নড়েচড়ে উঠলে,অধরা হাত পেছনের দিকে লুকিয়ে ফেলে।পুরো মুখে মেক-আপ করা শেষ হলে,ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে দিলো।আহানের দিকে তাকিয়ে না হেঁসে পারলো না অধরা।শব্দ করে হেঁসে দিলো।আহানের কয়টা ছবি তুলে রাখলো।আটটার দিকে আহানের ঘুম ভাঙলো।

–কি হয়েছে আমাকে এত জরুরি তলব ডেকেছো কেনো।তোমাকে না বলছি আমাকে এভাবে ডাকবে না।আমার সমস্যা হয়।

–আমি তোমাকে ডাকতে চাই নাই।তোমাকে না জানিয়ে আমি একটা কাজ করে ফেলছি।এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।প্লিজ আমাকে সাহায্য করো।

–কেনো তোমার সব ক্ষমতা টুস।সেই আমার পায়ের নিচে-ই আসতে হলো।

–একদম বাজে কথা বলবে না।তুমি আর আমি কি আলাদা বলো।তুমি আমার সাথে সব সময় এমন করো কেনো।

–মুখ দিয়ে মধু ঝড়ছে।এতদিন তোমার এত মিষ্টি কোথায় ছিলো।আমাকে ছাড়া তুমি কখনো উদ্ধার হতে পারবে না।সেটা আমি ভালো করেই জানি।কেনো শুধু শুধু আমার সাথে লাগতে যা-ও বলতো।

–আমি তোমাকে এখন যা,বলবো তার জন্য তুমি প্রস্তুত হও।চিৎকার করবে না।তারপরে মহিলাটি মেয়েটির কানে কানে কিছু বলল।মেয়েটি চিৎকার করতে যাবে।তখনি মহিলাটি মেয়েটির মুখ চেপে ধরলো।

–আস্তে প্লিজ চিৎকার করো না।আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি।তাই তোমাকে বললাম।আমরা যতই যুদ্ধ করি না কেনো।একটা কথা ভেবে দেখো,আমরা নিজেদের কথা অন্য কাউকে কখনো বলছি বলো।

–তুমি দেখছি আমার থেকে-ও বড় খেলোয়াড়।তোমার লজ্জা করে না।তুমি পারো কি করে এসব।তোমার মরে যাওয়া উচিৎ।

–সাবধানে কথা বলো।আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়।তাই সন্মান দিয়ে কথা বলো।

–সন্মান পাওয়ার মতো কি কাজ তুমি করেছো।যে,তোমাকে আমি সন্মান করবো।আমাকে এভাবে যখন তখন ডাকবে না।আমার সমস্যা হবে।বলেই মেয়েটি চলে গেলো।

–শুনো আমার কথাটা আমাকে সাহায্য করো।তাহলে আর ডাকবো না।মেয়েটি শুনতে পেলো না।মহিলাটি মেয়েটিকে ফোন করলো।

–তোমাকে বলছি আমাকে ফোন করবে না।রাতে পেয়ে যাবে।দয়া করে আর বিরক্ত করো না।আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও।বলেই রেগে ফোনটি কেটে দিলো।

আহানের ঘুম ভাঙতেই অধরাকে নিজের পাশে দেখে অবাক হলো।কিছু বলল না।অধরা আহানের দিকে তাকিয়ে মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানো চেষ্টা করছে।শেষে না পেরে জোরে হেঁসে দিলো।আহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে।মেয়েটা পাগল হয়ে গেলো নাকি।মাথায় হাত দিতে-ই আহান অনুভব করলো তার চুলগুলো বাঁধা।সেটা দেখার জন্য উঠে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই আহানের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।অধরা এই সুযোগে মেকআপ নিয়ে পালিয়ে যেতে লাগলে,আহান অধরাকে পেছনে থেকে ধরে ফেলে।

–কোথায় পালাচ্ছো।আমার এই অবস্থা করেছো কেনো।

–আমি করি নাই।আপনি তো এভাবে সেজে ঘুমিয়ে ছিলেন।

–আমার সাথে মজা করো।তোমাকে আমি কি করি দেখো।

বলেই অধরার হাতে থেকে মেক-আপ কেঁড়ে নিলো।অধরা দৌড়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে বালিশে মুখে গুঁজে দিলো।আহান যেনো তার মুখে কোনো কিছু করতে না পারে সেজন্য।আহান গিয়ে অধরাকে নিজের দিকে ঘোড়ালো।এক পা অধরার দুই পায়ে উপরে তুলে যেনো অধরা পালাতে না পারে।তারপরে অধরার ওপরে উঠে কাজল দিয়ে অধরার দাঁড়ি বানিয়ে দিতে লাগলো।আধরা আশেপাশে যেটা পাচ্ছে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে।আহান যেনো একটাও ধরতে না পারে।ওগুলো তুলতে গেলে অধরাকে ছেড়ে দিতে হবে।আহান কাজল দিয়ে অধরার গালে তিনটা করে ছয়টা দাগ একে দিলো।এবার ভালো লাগছে দেখতে।আহান লিপস্টিক ধরতে যাবে।তখনি অধরা লিপস্টিক ফ্লোরে ফেলে দিলো।

–তুমি কি ভেবেছো।আমি তোমাকে লিপস্টিক দিয়ে দিতে পারবো না।

–তাই নাকি কি করে দিবেন।যান ফ্লোরে থেকে তুলে নিয়ে আসুন।

–আমাকে কি বোকা পেয়েছো।বলেই আধরার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।অধরার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।দুচোখ বন্ধ করে ফেললো।ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে অধরা।আহানের গরম নিশ্বাস অধরার মুখে পড়তেই, অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে অধরার মাঝে।আহান’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবে।সেই শক্তি টুকু পাচ্ছে না সে।একটু পরে আহান নিজেই অধরাকে ছেড়ে দেয়।আহানের বেশ লজ্জা লাগছে এখন।রাগের বসে কি করে ফেললো সে।অধরা আহানের দিকে একবারো তাকাচ্ছে না।কেমন জানি লজ্জা করছে।আহান কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আহান ফ্রেশ হয়ে এসে,সোজা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।ওদের রুমের জানালা থেকে রাতের সমুদ্রে বেশ ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে।চাঁদের আলো সমুদ্রের পানিতে জ্বলজ্বল করছে।চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে।একটা মানুষজন নেই।অথচ দিনের বেলা এই সমুদ্রে মানুষ গিজগিজ করে।অধরার সামনে’ও যেতে পারছে না।কেমন জানি লজ্জা লাগছে।কি বলবে বুঝতে’ও পারছে না।একটু পরে খাবার দিয়ে গেলে।অধরা আর আহান চুপচাপ খেয়ে নিলো।কেউ কোনো কথা বলল না।দু’জন পাশাপাশি শুয়ে আছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।সন্ধ্যা বেলায় ঘুমানোর জন্য আহানের ঘুম আসছে না।অধরা খেয়ে-ই ঘুমিয়ে গেছে।রাত দুইটার সময় অধরার ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসলো।আহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।এতরাতে কিসের মেসেজ।কে পাঠালো।আহান অধরার ফোন নিতে যাবে।তখনি অধরা আহানের হাত ধরে ফেললো।

–কারো অনুমতি না নিয়ে,কারো জিনিস ধরতে নেই।আপনি সেটা জানেন না।

–তোমার ফোনে এতরাতে কিসের মেসেজ আসলো।

–তুমি ঘুমা’ও নি।এতরাতে তোমার ফোনে কিসের মেসেজ আসলো।কে মেসেজ পাঠিয়েছে তোমাকে।

–সেই কৈফিয়ত আমি আপনাকে দিব নাকি।আপনি আমার কে।

–আমি তোমার স্বামী।আমার জানার অধিকার আছে।দেখি ফোন টা দাও।আমাকে দেখতে দাও।

অধরা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল।

–স্বামী।কিসের স্বামী?”আমার ওপরে কোনো অধিকার আপনার নেই।আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না।

–তুমি আমাকে কি স্বামী হিসেবে মানো না।আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানি না।আমি শুধু একজনকে ভালোবাসি সেটা হলো রুহি।আর আমি বিয়ে করে,যদি কারো সাথে সংসার করি।তাহলে রুহির সাথে-ই করবো।বাসায় গিয়ে তোমাকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিব।লাগবে না তোমার মেসেজ দেখা আমার।বলে-ই রেগে শুইয়ে পড়ল আহান।

আহানের বলা কথা গুলো অধরার বুকে গিয়ে লাগলো।কি ধারাল অস্ত্রের মতো এসে ভেতর টাকে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে।জীবনে সবকিছুর আঘাত সয্য করা যায়।কিন্তু কথার আঘাত সয্য করা যায় না।উনি যখন ওনার গার্লফ্রেন্ড কে ভালোবাসেন।তাহলে আমাকে কেনো বিয়ে করলেন।সত্যি সত্যি উনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন।ভাবতে-ই অধরার দু-চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।আহান-কে সে,ভালোবেসে বিয়ে না করলেও।অধরার জীবনে আহান-ই প্রথম পুরুষ।তার প্রথম ভালোলাগা-ই হচ্ছে আহান।আস্তে আস্তে আহানের প্রতি সে,দুর্বল হয়ে পড়ছে।মনের গভীর থেকে আহানের প্রতি টান ও দুর্বলতা অনুভব করতে পারে অধরা।তবে কি সে,আহানকে ভালোবেসে ফেললো।অধরা চোখের পানিটুকু মুছে নিলো।আহানের বিপরীতে পাশে শুইয়ে পড়ল।

পরের দিন সবাই মিলে আবার সমুদ্রে নামছে।অনেক মজা করছে।আজ রাতে-ই বাসায় ফিরে যাবে।তিতিরের স্বামী আর আহানের বড় ভাইয়ের অফিসের ছুটি বেশি পায় নাই।তাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে।রাতের পরে আহান অধরা কেউ কারো সাথে কথা বলে নাই।দু’জন দু’দিকে।অধরা আকাশের সাথে পানি ছিটিয়ে খেলা করছে।তিতলি এসে’ও ওদের সাথে যোগ দিলো।অধরা কয়টা শামুক কুড়িয়ে নিলো।সাদা সাদা শামুক দেখতে কি সুন্দর লাগছে।

বিভিন্ন রকমের আচারের দোকান দেখতে পেলেন মিসেস আফরোজা চৌধুরী।তিতি গিয়ে বিভিন্ন রকমের আচার কিনে নিলেন।শামুক দিয়ে তৈরি বিভিন্ন রকমের গহনা দেখে বেশ ভালো লাগলো তার।তিনি সবার জন্য কিনে নিলেন।দুপুরে সবাই মিলে রেস্টুরেন্ট খেতে গেলো।খাওয়া দাওয়া করে নিজেদের রুমে এসে বিশ্রাম নিলো।এই অল্প সময়ে বেশি ঘোরাঘুরি করতে পারলো না সবাই।কিন্তু পরিবারের সাথে এত সুন্দর মুহুর্তে সময় কাটালো।এটা ভেবেই সবার মন ভালো হয়ে গেলো।বিকেলে অধরা সমুদ্রের কাছে আসলো।সমুদ্রের ধারে বড় করে নিজের নাম লিখলো।তারপর খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে প্রাণ ভরে কয়েকবার জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো।রুমে গিয়ে নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিলো।গাড়িতে ওটার সময় আহান বলল।

–বাবা আমি ড্রাইভারের কাছে বসবো।

–কেনো বাবা কি হয়েছে।তুৃমি অধরার পাশে বসো।

–অধরার কাছে আকাশ বসবে।

–না ভাইয়া আমি আমার মতামত বদলে ফেলছি।আমি তিতলি আপুর পাশে বসবো।বলল আকাশ।

–সবাই আগের মতো যে,যার জায়গায় বসে পড়লো।আহান এক প্রকার বাধ্য হয়ে-ই অধরার পাশে বসলো।কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না।কারো মুখে কোনো কথা নেই।এমন ভাব করছে,কেউ কাউকে চিনে না।আগে কখনো দেখে নাই।অধরা এবার আগের মতো বায়না ধরলো না।সারারাত এতটুকু ঘুমোয় নাই।যদি ভুল করে আবার আহানের কাছে চলে যায়।আহান তো তাকে ছেড়ে-ই দিবে।শুধু শুধু মিথ্যা মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই।এখানে-ই থেমে যা অধরা।বেশি ভালোবাসলে বেশি কষ্ট পাবি।এখন থেকে যতটা সম্ভব পারা যায়।আহানের থেকে দূরে থাকতে হবে।বাসায় গিয়ে নানির কাছে চলে যাব।চৌধুরী বাড়িতে আর যাব না।এসব ভাবছিলো অধরা।সারারাত না ঘুমানোর জন্য অধরার চোখ লাল হয়ে আছে।মুখটা ফুলে উঠেছে।সারা রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিয়েছে অধরার চোখে।কিন্তু অধরা ইচ্ছে করে ঘুমোচ্ছে না।ভোর প্রায় হয়েই আসছে।চৌধুরী বাড়িতে যাওয়ার আগে অধরার নানির বাসা আগে পড়ে।ভোরের আলো ফুটে উঠেছে।

–স্যার আমার নানির বাসার কাছে গাড়িটা একটু থামাতে বলবেন।

–কেনো মা।

–এটা আমার রিকুয়েষ্ট।প্লিজ আমাকে নামিয়ে দিবেন।আমি সেখানে গিয়ে আপনাকে বলবো।

অধরার নানির বাড়ির কাছে আসলে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দেয়।অধরা গাড়ি থেকে নেমে আকাশ-কে গাড়ি থেকে টেনে নামালো।আকাশ ঘুমিয়ে ছিলো।ঘুমের মধ্যেই বায়না ধরলো।সে,তিতলির সাথে যাবে।অধরা একটা ধমক দিলো।

–সরি স্যার আমি আর আপনাদের বাসায় যেতে পারবো না।আমাকে মাফ করবেন।আপনার সাথে আমার কি কথা হয়েছিলো।আপনি নিশ্চয় সেটা ভুলে যান নাই।বলেই অধরা নিজের ব্যাগ আর আকাশকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।আশরাফুল চৌধুরী অসহায় দৃষ্টিতে অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সে,তো ভেবেছিল অধরা ভুলে গেছে।আহান আর অধরার মধ্যে একটু হলে-ও ভাব ভালোবাসার সম্পর্ক হয়েছে।তবে কি তার ধারনা ভুল।একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আশরাফুল চৌধুরী।আহান একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।ভেতরে কেমন জানি শূন্য শূন্য লাগছে।অধরা চলে যাওয়াতে কেনো সে,শূন্যতা অনুভব করছে।কাল রাতে বেশি খারাপ ব্যবহার করা হয়ে গেছে।ওভাবে কথা বলা একদম উচিৎ হয় নাই।কিন্তু এতরাতে কে ওকে মেসেজ করলো।আমারও তো জানার অধিকার আছে।আমি ওর স্বামী।তাহলে’ও আমার সাথে কেনো ওমন ব্যবহার করলো।আর আমি কেনো এসব ভাবছি।একদম ঠিক করেছি।আমি রুহিকে ভালোবাসি।ও মেয়ের কোনো জায়গা নেই আমার জীবনে।বলে-ই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।মুখে এক কথা বলছে।কিন্তু মন তো আর মানছে না আহানের।গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো।আহানের কেমন জানি সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

অধরা কলিং বেলে চাপ দিলো।বেশ কয়েবার চাপ দেওয়ার পরে,অধরার নানি এসে দরজা খুলে দিলো।ভোর বেলা আকাশ আর অধরাকে দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলো।

–তোরা এত সকাল বেলা,ব্যাগ নিয়ে।

–কক্সবাজার গিয়েছিলাম মাত্র আসলাম।সারারাত ঘুম হয় নাই।ঘুমোতে দাও।বলেই ব্যাগ রেখে ভেতরে চলে গেলো।অধরার নানি ব্যাগ বাসার ভেতরে নিয়ে আসলো।আকাশের চোখে পানি দেখে।অধরার নানি বলল।

–কি হয়েছে তুই কাঁদছিস কেনো।

–আপাই বোকছে।

–তোকে আমি মারি নাই।এটা-ই তোর ভাগ্য ভালো।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় কর।বলেই অধরা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়ল।

আহান বাসায় গিয়ে একটু ঘুমিয়ে আটটার দিকে উঠে পড়ল।মনটা বড্ড ছটফট করছে।এক পলক অধরাকে দেখার জন্য।সকালে উঠে অধরার ঘুমন্ত মুখের তাকলে অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করতো আহান।আজ সকালে অধরাকে দেখতে না পেরে খুব অস্থির হয়ে উঠেছে আহান।সেজন্য চোখে হাজারো ঘুম থাকা শর্তেও উঠে রেডি হয়ে অফিসে আসলো।অফিসে এসে আহান নিরাশ হলো।অধরা অফিসে আসে নাই।আহান ভেবেছিল অধরা অফিসে আসবে।দুপুরের দিকে আহান বাসায় চলে আসলো।শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে।খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।

সন্ধ্যা বেলায় অধরার ঘুম ভাঙলো।উঠে গোসল করে খেয়ে নিলো।অধরার নানি বেশ অবাক,অধরা কোনোদিন এত ঘুমোই না।হয়তো সারারাত ঘুৃম হয় নাই।তাই ঘুমিয়েছে।অধরা নিজে’ও বেশ অবাক,সে কি করে এত ঘুমালো।অধরা তার মায়ের কাছে গেলো।অধরাকে দেখে তার মা দূরে সরে গেলো।অধরা বুঝতে পারলো,তার মায়ের কাছে গেলে আবার পাগলামি শুরু করে দিবে।কোনো কথা না বলে নিজের রুমে গেলো।

রাতে আহানের ঘুৃম ভাঙলো।সে,আর থাকতে পারলো না।তাকে এখনি অধরার কাছে যেতে হবে,না হলে দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে সে।কোনো কথা না বলে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।রাত বারোটায় কলিং বেলের আওয়াজ পেতে-ই ভ্রু কুঁচকে তাকালো অধরা।এতরাতে কে আসতে পারে।অধরা দরজা কাছে গিয়ে।দুইবার প্রশ্ন করলো কে।কিন্তু কোনো উওর পেলো না।অধরা কৌতুহল বশত গিয়ে দরজা খুলে দিলো।অধরাকে ঠেলে আহান ভেতরে প্রবেশ করলো।আহানকে দেখে অধরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।ভুল দেখছে নাতো।আহান গিয়ে অধরার রুমে বসলো।অধরা দরজা লাগিয়ে নিজের রুমে আসলো।আহান মাথা নিচু করে বসে আছে।জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে আহান,দেখে-ই বোঝা যাচ্ছে।অধরা কিছু বলতে যাবে।তখনি আহান এসে অধরার দুই হাত দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।অধরা রেগে বলে।

–সমস্যা কি আপনার।

–তোমার সমস্যা কি।

–আমার কোনো সমস্যা নেই।আপনি কেনো এসেছেন।এখনি বেড়িয়ে যান বলছি।

–যদি না যাই তাহলে কি করবে।

–ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব।

–দেখি তোমার কত ক্ষমতা।আমাকে বের করে দেখাও দেখি।

আহানের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।অধরার দু-হাত শক্ত ভাবে ধরে আছে।ছেলে মানুষের শক্তির সাথে মেয়ে মানুষ তাই পারে।আহান’কে এক চুল পরিমাণ সরাতে পারলো না অধরা।আহান অধরাকে ছেড়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।তারপরে অধরা কে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো।অধরা উঠতে যাবে।তখনি আহান অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুইয়ে পড়ল।অধরা আহানের থেকে ছোটবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে।কিন্তু আহানের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।এক পর্যায়ে অধরা শান্ত হয়ে গেলো।মানুষটা চাইছে টা কি।এমন করছে কেনো।দুজনেই জেগে আছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।কেউ শান্তি পাচ্ছে।প্রান ভের নিশ্বাস নিচ্ছে।কেউ ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।কথা গুলোর আঘাত বারবার আঘাত করছে অধরাকে।

রাত বাজে দু’টো।ঘুম আসতে শুরু করেছে দুচোখের পাতায়।তখনি অধরার ফোনে মেসেজ আসলো।আহান চোখ মেলে তাকালো।পকেটে থেকে ফোন বের করে দেখলো দু’টো বাজে।আহানের এবার খুব রাগ হলো।প্রতিদিন অধরাকে কে মেসেজ পাঠায়।আজ সে,দেখেই ছাড়বে।অধরার ফোন নেওয়ার জন্য হাত বাড়াবে তখনি অধরা ফোন বন্ধ করে দিল।আহান অধরাকে ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।

–ফোন টা দাও।

–দিব না।

–তোমাকে প্রতিদিন কে মেসেজ পাঠায়।আজ আমি দেখেই ছাড়বো।

–আমি আপনাকে সেই অধিকার দেই নাই।আপনি রুহির সাথে কথা বলেন কি না বলেন।আমি দেখতে যাই।

–অধরা আমাকে রাগিও না।ফোনটা দাও আমাকে।কে তোমাকে প্রতিদিন মেসেজ পাঠায়।

–মনে করেন আমার ভালোবাসা মানুষ।আমার খুব কাছের মানুষ।আমার প্রিয় মানুষ।

–কে সে।

–আপনাকে বলতে বাধ্য নই।

–তারমানে তুৃমি অন্য কাউকে ভালোবাসো তাই না।বলে-ই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।তারপরে দেওয়ালে জোরে একটা লাথি মেরে চলে গেলো আহান।

–শুনুন আমার কথা।একবার আমার কথা টা শুনে যান।অধরার কথা আহানের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।

–ধুর আবার আমাকে ভুল বুঝলো।ভালো লাগে না।বলেই অধরা শুয়ে পড়ল।

পরের দিন সকাল বেলা অধরা অফিসে গিয়ে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।

চলবে…..