তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব-০২

0
458

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_০২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

‘কাক ভেজা হয়ে নানির বাসার সামনে এসে,কলিং বেলে চাপ দিলো অধরা।এই অচেনা শহরে তার নানি ছাড়া কেউ নেই।বৃষ্টিতে ভিজে এখন বেশ বিরক্ত লাগছে।নানি দরজা খুলছে না।দেখে,একনাগাড়ে কলিং বেল বাজিয়ে-ই যাচ্ছে অধরা।একটু পরে অধরার নানি এসে দরজা খুলে দিলো।

–কি রে তুই আসবি আমাকে বলিস নাই তো।কখন রওনা দিয়েছিলি।

–বললে কি তুমি আমার জন্য এরোপ্লেন পাঠিয়ে দিতে,যে বাড়িতে আমার মায়ের জায়গা হয় না।সে বাসায় আসার জন্য তুমি আমার জন্য গাড়ি পাঠাবে।এটাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে নানি।হস্যকর।

–ছোট মানুষ ছোট মানুষের মতো থাকবি।একদম পাকনামি করতে আসবি না।তুই জানিস না।ও মেয়ের নাম নেওয়া এই বাসায় নিষেধ।দূর থেকে এসেছিস।যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি তোর জন্য খাবার বাড়ছি।

অধরা আর কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে চুপচাপ খেয়ে নিজের ফোন টা হাতে নিলো।বাসায় ফোন দিলো রিং হতেই আকাশ ফোন ধরে বলল।

–আপাই তুই কখন আসবি।আপাই জানিস কি হয়েছে।আমাদের ঘরের চাল ফুটো হয়ে গেছে।বৃষ্টি হলে টপটপ করে পানি পড়ে।আপাই জানিস আমার না।রাতে অনেক ক্ষুদা লাগে।আমি রাতে আম্মুর থেকে খাবার চেয়েছিলাম।আম্মু আমাকে কি বলেছে জানিস আপাই।আমাকে বলে তুই বিষ খেয়ে মরে যা।গরীবের ঘরে জন্ম নিয়েছিস।তোর এত খাই খাই আসে কোথায় থেকে।আপাই তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়।তোকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না।রাতে আমার ক্ষুদা লাগলে আম্মু তোর মতো খাবার জিনিস বের করে দেয় না।ছোট আকাশের একমাত্র ভরসা আর ভালোবাসার মানুষ অধরা।অধরার ফোন পেয়ে ছোট আকাশের অভিযোগের কোন শেষ নেই।যতো বায়না তার আপাইয়ের কাছে।অধরার বেশ ভালো লাগে আকাশের অভিযোগ গুলো।অধরা রেগে বলল।

–কি মা তোকে এই কথা বলেছে।দেখি মাকে ফোনটা দে আমি মাকে বকে দিচ্ছি।তুই চিন্তা করিস না ভাই।আমি তোর খাবার আনিয়ে দেওয়ার ব্যবস্তা করে দিচ্ছি।আকাশ দৌড়ে গিয়ে তার মায়ের কাছে ফোনটা দিলো।

–না-ও গো সৎ মা।আপাই ফোন করছে।তোমার সাথে কথা বলবে।এবার বুঝবে আমাকে বকেছো না।আকাশ রেগে গেলে তার মাকে সৎ মা বলে ডাকে।এতে মিনারা বেগমের কলিজা কেঁপে উঠে।কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না।কোনো কথা ছাড়াই ফোন হাতে নিলো।অধরা সালাম দিয়ে বলল।

–আম্মু তুমি আমার ভাইকে কি বলেছো।দুনিয়ায় এত খাবার জিনিস থাকতে,আমার ভাই কেনো বিষ খাবে।তুমি এখনি যা-ও সুমন কাকার দোকানে।আমার ভাই যা যা খেতে চায় কিনে দিবে।

–বলি টাকা কি গাছে ফলে।তোর ভাইয়ের এত খাই খাই আসে কোথায় থেকে।ওকে আমি বিষ দিয়ে মারবো।ঘরে চাল নেই।পরের মাস চলবো কি করে।চিন্তা করে মরছি।উনি আসছেন ওনার ভাইয়ের জন্য দরদ দেখাইতে।এত যখন খাইতে ইচ্ছে করে বড়লোক ঘরে জন্ম নিতো।সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাতো।

–আমার ভাই বড়লোক ঘরে জন্ম নেয় নাই ঠিকি।কিন্তু বড়লোক ঘরের ছেলে-মেয়ের থেকে ভালো চলাচলা ফেরা করবে আমার ভাই বুঝছো।তোমার এত চিন্তা করা লাগবে না।যতদিন আছে তুমি চালিয়ে না-ও।পরের মাসে চলার জন্য আমি টাকা পাঠিয়ে দিব।

–তুই টাকা কোথায় পাবি।তোর কি চাকরি হয়েছে।

–এখনো জানিনা সঠিক।তবে আমার বিশ্বাস হয়ে যাবে।আর তুমি সুমন কাকার দোকানে আমার নাম করে বাকি নিবে।আকাশ যা যা চাইবে সব দিবে।আমার ভাইয়ের কোনো দিকে যেনো কমতি না থাকে।এখন রাখো আমার ক্লান্ত লাগছে।পরে কথা বলবো।আমি কিন্তু পরে কল দিয়ে আকাশের থেকে শুনবো।বলে-ই অধরা ফোন কেটে দিলো।পাশে বসে সবকিছুই শুনছিলো অধরার নানি।অধরা অসহায় ভাবে তার নানির দিকে তাকালো।অধরার নানির আর বুঝতে বাকি রইলো না।অধরা এখন কি বলতে চায়।তাই আগে-ই গর্জন করে বলে উঠলো।

–খবরদার বলছি।একদম ও মেয়ের সংসারের জন্য আমার কাছে টাকা চাইবি না।এক টাকা কেনো,এক পয়সা আমি দিব না।বলে-ই গটগট করে চলে গেলো অধরা।

অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।অধরা বুঝে উঠতে পারে না।তার নানিদের অবস্থা বেশ ভালো।পড়াশোনার জন্য বেশ সাহায্য করেছে তার নানি তাকে,কিন্তু নিজের মেয়েকে কেনো দেখতে পারে না।নিজের মেয়েকে কেনো অস্বীকার করে এর রহস্য টা আজ-ও জানতে পারলো না অধরা।নানি জেনে শুনে কেনো-ই তার মাকে গরীব ঘরে বিয়ে দিলো।নানির এত টাকা পয়সা থাকা শর্তেও কেনো তার মেয়ে কে সাহায্য করে না।তার মেয়ে পাশে থাকে না।অধরার ভাবনার মাঝে-ই অধরার ফোনে মেসেজ আসলো।অধরা সিলেক্ট হয়েছে।তার মানে আমার চাকরি টা হয়ে গেছে।অধরা খুশি হয়ে রুমের মধ্যে লাফালাফি করছিলো।তখনি তার নানি এসে বলে।

–মেয়ে মানুষ এভাবে লাফালাফি করছিস কেনো।পরে গিয়ে হাত-পা ভেঙে গেলে,কেউ তোকে বিয়ে করতে চাইবে।

–এই বুড়ি তুমি চুপ থাকো।আমি বিয়ে করবো না।তোমার শখ হলে তুৃমি করো।আমাকে একদম বিয়ের কথা বলবে না।আমি আগে আমার বাবা-মা ভাইয়ের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দিব।তারপরে নিজের চিন্তা করবো।

–সব সময় অন্যের কথা ভাবতে হয় না।কিছু কিছু সময় নিজের ভালোর জন্য স্বার্থপর হতে হয়।

–আচ্ছা তুমি আমার মাকে দেখতে পারো না কেনো।আজ তোমাকে বলতে-ই হবে।অধরার কথায় অধরার নানি রেগে রুম থেকে চলে গেলো।মায়ের কথা বললে-ই এই বুড়ি খালি রেগে যায়।ইস কি ডং।ওনার রাগ আছে।আর মনে হয় কারো রাগ নেই।কিন্তু যে করেই হোক,নানির থেকে টাকা নিতে হবে।তার একটু ঘুমের প্রয়োজন।অধরা আর কোনো কথা বলল না।ঘুমিয়ে গেলো।

চৌধুরী বাড়িতে সাজানোর ধুম লেগে গেছে।চৌধুরী বাড়ির বড় মেয়ে তিতিরের ছেলের জন্মদিন বলে কথা।একটু জাঁকজমক ভাবে না করলে হয়।আজ তিতির শশুর বাড়ি থেকে বাবাট বাসায় এসেছে।আশরাফুল চৌধুরীর কড়া আদেশ।তার নাতির জন্মদিন,তার বাসায় হবে।সবাই পুরো বাড়ি সাজাতে ব্যস্ত।

–বাবা এত সাজানোর কি আছে।এটা জন্ম দিনের অনুষ্ঠান।বিয়ের অনুষ্ঠান না।বলল তিতির।

–আমার একমাত্র নাতির জন্ম দিন বলে কথা।এতটুকু না করলে তাই হয়।তাছাড়া আরেকটা কারন আছে।বলা যাবে না।সবাইকে চমকে দিব।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–আপু বাবা সাথে দাঁড়িয়ে থেকে কথা বললে হবে।ভেতর এসে ফ্রেশ হয়ে না-ও।সবাই তোমার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছে।কতদিন পরে এলে বলোতো।বলল তিতলি।তিতিরের ছোট বোন।

–ফ্রেশ ওরে হবো,আগে বল আহান কই।আমার ভাই টা কেমন আছে।নাকি এখনো আগের মতো পাগলামি করে।

–তোমার ভাই আগের মতো-ই আছে।শুধু পাগলামি করা ছেড়ে দিয়েছে।চুপচাপ থাকে।গিয়ে দেখে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে,বসে আছে।

–আমি ওর সাথে দেখা করতে চাই তিতলি।কতদিন হলো ওকে দেখি নাই।

–যাওয়ার আগে ফোনের আলো টা জ্বালিয়ে নিও।রুম একদম অন্ধকার করে রাখে তোমার ভাই।

–আমার ভাই আমার ভাই করছিস কেনো।তোর কি খালাতো ভাই লাগে নাকি।

–তুমি এসে আহানের কথা বলছো।তোমার যে,আরো দু’টো ভাই বোন আছে।তাদের কথা কি তোমার মনে আছে।

–পাগলি মেয়ে রাগ করিস না।আমি তোদের সবাই’কে খুব ভালোবাসি।বলে-ই চলে গেলো তিতির।

পরের দিন সকাল বেলা অধরা খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।অফিসে আসতেই সবাই অধরা-কে স্বাগতম জানালো।আশরাফুল চৌধুরী।ম্যানেজার আদিল’কে দায়িত্ব দিয়েছে।অধরার কোনো সমস্যা হলে,তাকে শিখিয়ে দিতে।আশরাফুল চৌধুরী অফিসের সকল কর্মচারীদের ডেকেছেন।আজ সন্ধ্যায় সবার দাওয়াত চৌধুরী বাড়িতে।

–মা অধরা তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে।না বললে চলবে না।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–কিন্তু স্যার আমি তো নতুন।এ শহরে তেমন কিছু চিনি না।আমাকে মাফ করবেন স্যার আমি যেতে পারবো না।

–তোমার চিন্তা করা লাগবে না মা।তুমি অফিস শেষ করে সোজা আমার সাথে আমার বাসায় যাবে।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–কিন্তু স্যার আমার নানি আমার জন্য খুব চিন্তা করবে।আমি তাকে বলে আসি নাই।

–এখন ফোন করে জানিয়ে দাও।তোমার নানির নাম্বার টা আমাকে দাও।আমি তোমার নানি’কে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।অধরা আর কোনো কথা না বলে নাম্বার টা দিয়ে দিলো।আশরাফুল চৌধুরী অধরার নানিকে ফোন করে জানিয়ে দিলো।অধরার নানি অধরাকে দেখে শুনে রাখতে বলছে।অধরা নতুন,শহরে কিছু চিনে না।প্রথম তিনি রাজি হন নাই।আশরাফুল চৌধুরীর সুন্দর ব্যবহারে তিনি রাজি হয়ে যান।

–হাই ম্যাডাম আমি মিমি।আপনার নাম কি।

–আমার নাম অধরা।

–অনেক সুন্দর নাম আপনার ম্যাডাম।আপনার কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবেন।আমি আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।

–ওকে সাহায্য করার জন্য আমি আছি।তুমি তোমার কাজ করো।অধরার দায়িত্ব স্যার আমাকে দিয়েছে,তোমাকে না।তাই গিয়ে নিজের কাজ করো।বলল আদিল।

–অধরা আপনি আপনার কেবিনে যান।এটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করার জায়গা না।

–আপনি দেখেছেন আমি এখানে গল্প করছি।স্যার সবাইকে ডেকেছে দেখতে পারছেন না।স্যার সবার সাথে কথা বলছে।সেখানে আপনি এসে আমাকে কেবিনে যেতে বলছেন।স্যার কি আপনাকে অনুমতি দিয়েছে।

–আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো।আমি আজকে একটু দেরি করে আসছি।তাই বুঝতে।পারি নাই সরি অধরা।

হনুমানের বাচ্চা।একে তো দেরি করে আইছোস।আবার আমাকে জ্ঞান দিতে আইছোস।আমি অধরা নিজের দায়িত্ব পালন করতে কখনো হেয়ালি করি না।আদিলের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দিলো মনে মনে।

সারাদিন কাজ করে অধরার ইচ্ছে করছে না।আশরাফুল চৌধুরীর সাথে যেতে।তাকে কেউ যদি একটা পাটি বিছিয়ে দিতো।তাহলে সেখানে-ই ঘুমিয়ে যেতো।কি আর করার,অফিসের বস বলে কথা।তাই কিছু বলতে পারছে না।আশরাফুল চৌধুরীর সাথে তার বাসায় গেলন।গাড়ি থেকে নেমে।অধরা অবাক হয়ে সবকিছু দেখছে।কি সুন্দর করে পুরো বাসা সাজিয়েছে।

–অধরা তুমি আমার সাথে এসো মা।আমি জানি তোমার ক্লান্ত লাগছে।আগে ফ্রেশ হয়ে নিবে চলো।তিতির এসে আহানের রুমে আলো জ্বালিয়ে দিয়ে আহানের রুমটা সুন্দর ভাবে গুছিয়ে দিলো।আহানের সাথে একটু কথা বলে বাহিরে চলে গেলো।বাসায় প্রচুর মানুষ।আহানের একদম সয্য হচ্ছে না।ইচ্ছে করছে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে।বড় বোনের জন্য পারছে না।বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিচের মানুষজন দেখছে আহান।বাসার সব রুম ভর্তি মানুষ।কোনো ওয়াশরুম ফাঁকা নেই।সবগুলো তেই মানুষ।অবশেষে আহনের রুমে গিয়ে দেখলো সেখানে একটা মানুষ নেই।আশরাফুল চৌধুরী।অধরাকে আহানের ওয়াশরুম পাঠিয়ে দিয়ে বলল।আমি না আসা পর্যন্ত তুমি কোথাও যাবে না।সারাদিন তোমার কিছু খাওয়া হয় নাই।আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।অধরা ফ্রেশ হতে চলে গেলো।আহানের প্রচুর রাগ হচ্ছে এত মানুষের আনাগোনা।তাই বেলকনিতে থেকে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে,রুমে লাইট অফ করে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে পড়তে যাবে।তখনি আহান আর অধর দু’জন দু’জনের মাথায় বারি খায়।

চলবে…..