তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব-০৯

0
264

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_০৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আহান সুইমিংপুলে দুই পা ঝুলিয়ে বসে আছে।একটু থেমে থেকে দুই পা নাড়িয়ে পানির সাথে খেলছে।মন খারাপ দেখে-ই বোঝা যাচ্ছে।তিতির পেছনে থেকে এসে রাগ দেখিয়ে বলল।

–এটা তোর কেমন ব্যবহার আহান।এভাবে সবাইকে কিছু না বলে,এখানে এসে বসে আছিস কেনো।তুই জানিস সবাই কি চিন্তা করছে তোর জন্য।

–আপু আমি বিয়ে করবো না।

–বাবা বাহ তুমি বিয়ে করবে না।রাগ করে এসে সুইমিংপুলে এসে বসে আছো।বর সাজতে একদম ভুলো নাই।ডং না করে তাড়াতাড়ি উঠে আয়।আমাদের যেতে হবে।বর সেজে আগে আগে বসে আছে।এখন বলছে বিয়ে করবে না।উনি ছোট বাচ্চা ফিডার খায়।এখন ফিডার এনে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।

–হ্যাঁ দরকার পড়লে তাই যা-ও।তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে আপু।এখন যদি আমাকে কোলে করে এখানে থেকে নিয়ে না যা-ও।তাহলে আমি সত্যি বিয়ে করতে যাব না।

তিতির আহানের কথার কোনো উওর দিলো না।তার স্বামী’কে ফোন করে কি জানি বলল।একটু পরে তিতিরের বর আর আহানের ফ্রেন্ডরা এসে হাজির।কোনো কথা না বলে সবাই মিলে আহান’কে কোলে তুলে নিলো।আহান আশ্চর্যের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলো।তিতির সত্যি সত্যি তাকে কোলে করে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে।সে,কল্পনাও করতে পারি নাই।এখন কেমন জানি লজ্জা লাগছে আহানের।এত বড় ছেলে তাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে,বিয়ে করাতে।সবাই যদি জানে কি হবে আমার।ভাবতেই লজ্জায় দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো।আহানের কেনো জানি খুব লজ্জা লাগছে।

–কি শালা ওভাবে মুখ ধরে আছিস কেনো।আশিক আহানকে ফিডার টা হতে ধরিয়ে দে।খোকাবাবু ফিডার না খেয়ে বিয়ে করবে না।কোলে করে বিয়ে করতে যাবে।বলল তাসরিফ।বলেই সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো।ইস কি লজ্জার ব্যাপার,কেনো আপুর সাথে রাগ দেখাতে গেলাম।আহানকে গাড়িতে এনে বসিয়ে দেওয়া হলো।আশরাফুল চৌধুরী ছেলেকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন।যদি-ও ছেলের ওপরে ভিষণ রেগে আছেন।কিন্তু বিয়েতে কোনো সমস্যা তিনি সৃষ্টি করতে চান না।তাই চুপ রইলেন।গাড়ি এসে অধরাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো।সবাই আস্তে আস্তে নেমে আসলো।আহানদের একটা রুমে বসানো হলো।সবাই এসে বরকে দেখে যাচ্ছে।

রুমের মধ্যে জড়োসড়ো বসে আছে অধরা।একটু আগে বর এসেছে এই কথা শুনেছে সে।হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।ভেতর কেমন জানি একটা ভয় কাজ করছে।বুক চিরে কান্না আসছে অধরার।কিন্তু পাথরের ন্যায় বসে আছে।একটু পরে কাজী সাহেব আসলেন।আহানের রুমে গিয়ে বলল।

–সবাই একটু সরে দাঁড়ান,আমাকে যেতে দিন।আমি বিয়েটা পড়িয়ে চলে যাব।তখন সারাদিন আপনারা বর দেখবেন।সবাই সরে দাঁড়ালো,কাজী সাহেব ভেতরে প্রবেশ করলেন।বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।আহান’কে কবুল বলতে বললে।চুপ করে থাকে সে,মুখ দিয়ে হ্যাঁ,না কোনোটাই বের করছে না।তিতির হাত দিয়ে ভাইকে ঠেলা দিচ্ছে।আশরাফুল চৌধুরী আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে তিন বার কবুল বলে দিলো।সবাই মিলে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।কাজী সাহেব আহানদের রুম থেকে বেড়িয়ে অধরার রুমে গেলো।অধরার রুম ফাঁকাই ছিলো।কাজী সাহেব আসতে-ই পুরো রুমে মানুষ এসে ভরে গেলো।কাজী সাহেব আবার বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।অধরাকে কবুল বলতে বললে।অধরা আর চুপ থাকতে পারলো না।হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।কিছুতে-ই কান্না থামছে না।শেষ অধরার নানি এসে।অধরাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।বুঝিয়ে সুঝিয়ে অনেক কষ্টে তিনবার কবুল বলিয়ে নিলেন।অধরা এখনো তার নানিকে জড়িয়ে ধরে আছে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছে।

বিয়ের সব কাজ শেষ।এবার বিদায়ের পালা।এখানেই হলো সমস্যা।সে,কিছুতেই যাবে না চৌধুরী বাড়িতে।তার সাথে এমন কথা ছিলো না।অধরার নানি বুঝিয়ে পারলো না।আশরাফুল চৌধুরী আসলেন অধরার কাছে।

–দেখো মা,আমাদের একটা মান-সন্মান আছে না।তুমি আজ আমাদের সাথে চলো।আবার চলে আসবে।শুধু সবাই দেখবে আমার ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে।সবাই যখন ঘুমিয়ে যাবে।তুমি তখন চলে আসবে।দরকার পড়লে আমি নিজে তোমাকে রেখে যাব।কান্নার জন্য ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না অধরা।আশরাফুল চৌধুরীর কথায় রাজি হলো সে।

রাত নয়টাই চৌধুরী বাড়িতে এসে পৌঁছালো সবাই।পুরো বাড়ি জুরে মেহমান।অনেকে ঘুমিয়ে গেছে।আহানের মা মুখ কালো করে অধরাকে বাসার ভেতরে নিয়ে গেলো।সবাই আড্ডা দিয়ে যে,যার মতো ঘুমিয়ে গেলো।রাত বারোটার মধ্যে পুরো বাসা একদম নীরব হয়ে গেলো।দু’দিনের ক্লান্তি একসাথে জেঁকে বসেছে।তিতির অধরাকে আহানের রুমে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো।পুরো বাসা শান্ত হতে দেখে।অধরা নিচে নেমে আসলো।

–স্যার সবাই ঘুমিয়ে গেছে।এখন আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।বলল অধরা।

তখন ড্রয়িং রুমে তিতির,তিতিরের স্বামী,আহান,আহানের ফ্রেন্ডরা গল্প করছিলো।অধরার কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো।

–রাত করে পাগলামি করে না মা।দু’টো দিন যাক।মেহমানরা নিজেদের বাসায় ফিরুক।তারপরে না হয় তুমি তোমার বাসায় যাবে।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–না স্যার।আমি পারবো না।আমার পক্ষে সম্ভব না এই বাঁদর টার সাথে এক বাসায় থাকা।বলল অধরা।

–তুমি আমাকে বাঁদর বলার কে।তুমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো তুমি কি।বলল আহান।

–দু’জন মিলে ঝগড়া করলে চলবে।আজ তোমাদের বাসর রাত।দু’জন মিলে একটু ভাব ভালোবাসা করবে।তা-না করে কি ঝগড়া শুরু করছো।বলল তিতিরের বর।

আশরাফুল চৌধুরী হালকা কাশি দিলেন।তিতিরের বর চুপ হয়ে গেলো।আহানের বন্ধুরা মুখ টিপে হাসছে।

–বাসর তা-ও আবার এই হাতি সাথে।কখনো না,আমার অকালে প্রাণ হারনোর শখ হয় নাই।

–সামান্য মশার সাথে বাসর করে আমি’ও আমার মান ইজ্জত হারাতে চাই না।আহান চৌধুরীর টেস্ট এতটা খারাপ না।

–চার পা আলা দেবের বাচ্চা।আপনি আমাকে মশা বললেন।

–এই মেয়ে একদম বাবাকে নিয়ে কিছু বলবে না।মেরে তোমার দাঁত ফেলে দিব।অসভ্য মেয়ে একটা।বাবা যাও এই মেয়েকে তার বুড়ি নানির কাছে রেখে আসো।বলেই গটগট করে নিজের রুমে চলে গেলো।

–আমি’ও থাকবো না।বলেই অধরা হাঁটা শুরু করলো।আশরাফুল চৌধুরী অধরার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন।

–এভাবে চলে যেও না মা।সকালে উঠে যদি সবাই তোমাকে না দেখে তাহলে সবাইকে আমি কি উত্তর দিব।

–আপনি চিন্তা করবেন না স্যার।আমি সকালে ঠিক চলে আসবো।বলে’ই অধরা চলে গেলো।আশরাফুলের চৌধুরী গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।অধরার নানিকে বলে দিয়েছে।অধরার নানিও বেশ অবাক।তবে কিছু বলল না।দরজা খুলে আগে থেকে দাঁড়িয়ে আছে।কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।অধরাকে নিয়ে সোজা ছাঁদ চলে গেলো উনি।

–তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।কেউ জানলে কি হবে বুঝতে পারছিস।

–এত কথা বলবে না।চিলেকোঠার ঘর টা খুলে দাও।রাতটা ওখানে পার করে দেই।সকালে চলে যাব।অধরার নানি আর কোনো কথা বলল না।ড্রেস চেঞ্জ করবে।তখন মনে হলো অধরার সব জামা কাপড় চৌধুরী বাড়িতে।অধরার নানি অধরার সুবিধার জন্য দিয়ে দিয়েছিলো।এখন এসব সব হাবিজাবি পড়ে ঘুমোতে হবে।একরাশ বিরক্ত নিয়ে শুয়ে পড়লো।আল্লাহ রে কি মশা।এই দিন টাও তোর দেখতে হলো অধরা।

আহান নিজের রুমে এসে রাগে ফঁসছে।আমাকে হাতি,বাঁদর বলে।ফাজিল মেয়ে একটা।

–আহারে বন্ধু আমার একা একা বাসর করছে।বলল তাসরিফ।

–প্রথম রাতেই তোর বউ তোকে রেখে চলে গেলো রে আহান।কি কষ্ট আমার বন্ধু টার।বলল আশিক।

–তোর বউ চলে গেছে তো কি হয়েছে।আমরা আছি।দরকার পড়লে তোর সাথে আমার সবাই মিলে বাসর করবো।বলল নিলয়।

নিলয়ের কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো।আহান রেগে বলল।

–শালা তোরা আমাকে নিয়ে মজা করছিস।তোদের একটারও বিয়ে হবে না।বলে দিলাম,তখন দেখবি কেনম লাগে।বলল আহান।

–আহারে বউয়ে শোকে বেচারা দশ গ্রাম শুকিয়ে গেছে।চিন্তা করিস না।আমরা তোর বউকে এনে দিব।বলল তাসরিফ।

–কি সুন্দর করে বাসর সাজানো শালার ভাবি বুঝলো নারে।তোর বাসর ঘর দেখে এখন আমারই বাসর করতে ইচ্ছে করছে,না মানে বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।বলল আশিক।

–ফালতু বকবক বাদ দে।ভাবি যেহেতু ভাইকে ছেড়ে চলে গেছে।আজ রাত আমরাই আহানের রুমে আড্ডা দিয়ে পার কে দেই।এই সাবাই গান ধর।বলল নিলয়।

–দেখেছি প্রথম বার।তাল গাছে মুরগীর খামার।কত্তা নাচে,কুত্তা নাচে,কুত্তা নাচে।বলল তাসরিফ।

–গিয়েছি কক্সবাজার খেয়েছি আমের আচার।ট্যাংগা লাগে,ট্যাংগা লাগে,ট্যাংগা লাগে।বলল আশিক।

–এসেছি বাপেরি বাড়ি।খেয়েছি মধুর হাঁড়ি।মিষ্টি লাগে,মিষ্টি লাগে,মিষ্টি লাগে।বলল নিলয়।

–গিয়েছি শশুর বাড়ি খেয়েছি।ঝাঁটার বারি।কষ্ট লাগে,কষ্ট লাগে,কষ্ট লাগে।বলল তাসরিফ।

–পরে কি হবে তা আমি ভুলে গেছি।বলল আহান।

আহানের কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো।আহান রেগে বলল।

–বাহিরে গিয়ে দেখ রাস্তার কুত্তা গুলো সব আমার বাসার সামনে এসে হাজির হয়েছে।তোদের গান শুনে।এখন সবাই যা আমাকে ঘুমোতে দে।বলেই আহান সবাইকে বের করে দিলো।নিলয় দরজার ওপাশ থেকে বলল।শালা আজকাল কারো ভালো করতে নেই।বলেই তাঁদের যে,রুমে থাকতে বলা হয়েছে তারা সেই রুমে চলে গেলো।

চলবে…..