তুমি যে আমার পর্ব-০১

0
1711

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_1

বিয়ের ভরা আসরে থেকে একটা কালো পোশাক পরিহিত লোক এসে বর্ষার হাত ধরে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগলো।তার মুখে মাক্স এজন্য মুখ দেখা যাচ্ছে না। বিয়ে বাসায় সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। পরিচিত রা এগিয়ে এসে ধরার চেষ্টা করছে চেঁচামেচি করতেছে। এতে লোকটার মাঝে কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। সে বর্ষাকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার সাথে গার্ড আছে যারা তাকে প্রটেক্ট করে নিচ্ছে কেউ তার ধারের কাছে ও আসতে পারছেনা।
বর্ষার বাবা ( নিবিড় আহমেদ) এলো এগিয়ে মেয়েকে রক্ষা করতে তাকেও ধাক্কা দেওয়া হলো। তা দেখে বর্ষা বাপি বলে চিৎকার করে উঠলো। হাঁটতে পারছে না বর্ষা টেনে হেঁচড়ে নিচ্ছে। লেহেঙ্গায় বেজে যাচ্ছে বর্ষা অতিরিক্ত লম্বা হ‌ওয়ায় লেহেঙ্গা। হুট করেই লোকটা বর্ষা কে ছেড়ে দিলো। বর্ষা ছাড়া পেয়ে যেন মুক্ত পাখির মতো আনন্দ আটখানা হয়ে গেলো।আর দৌড়ে দিতে যাবে এই অপরিচিত লোকটার থেকে তার আগেই বর্ষা নিজেকে শূন্যে ভাসতে দেখলো।লোকটা বর্ষা কে পাঁজকোলে তুলে নিয়েছে। বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে বর্ষা। কালো সানগ্লাস এর পরা লোকটা এজন্য চোখ দেখা যাচ্ছে না। পুরো কালো আবরনে ঢাকা এই লোক কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে‌? মনে মনে ভাবছে বর্ষা।
বাসায় সবাই আতংকিত হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। বর্ষা ওর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। বাবার কপালে রক্ত বর্ষা কষ্ট লাগছে। ইশ আমি বাবার কাছে যেতে পারছি না। অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে বাবা আমার দিকে।
আস্তে আস্তে সবাইকে পার করে বাইরে চলে এলো লোকটা বর্ষাকে নিয়ে।
বাইরে এসেও কালো পোশাক পরিহিত তার সাথে হাতে বন্দুক নিয়ে আরো কয়েকজন রাস্তা করে দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পেল বর্ষা। বর্ষাকে কোলে নেওয়া লোকটা একটা কালো গাড়ির সামনে এসে থামলো একজন দরজা খুলতেই ফট করে আমাকে ভেতরে ছুড়ে মারলো। আমি চিৎকার করে উঠলাম।

“কে আপনি? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? ছারুন আমি বাপির কাছে যাব।”
ফুপাতে ফুপাতে বললাম।

কেউ বর্ষার কথার উত্তর দিলো না। বর্ষা কটমট করে তাকিয়ে আছে। ওই ফাজিল লোকটা এসে বর্ষার পাশে উঠে বসলো। তারপর গাড়ি চলতে লাগলো বর্ষা হা করে তাকিয়ে আছে। বারবার বলছে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? কেন নিয়ে যাচ্ছেন? কে আপনি? কথা বলতে বলতে গলা ব্যাথা হয়ে গেছে বর্ষার। লোকটা মহা খচ্চর কিছু বললো না। এমন ভাব করে বসে ফোন টিপছে যেন বর্ষা যে এখানে আছে সেটা মিথ্যা। বর্ষার কথা যেন শুনতেই পেল না।
বর্ষার রাগ মাথায় উঠে গেল। রেগে ওনার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো বর্ষা।

এবার কালো পোশাক পরিহিত লোকটা বর্ষার দিকে তাকালো। রেগে নাকি বুঝা যাচ্ছে না। কারণ তিনি মুখে মাস্ক দিয়ে রেখেছে আর চোখে সানগ্লাস। বর্ষা কথা বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই ফট করে লোকটা বর্ষার গালে ঠাস করে চর বসিয়ে দিলো। বর্ষা গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে। জীবনে কেউ বর্ষার গায়ে হাত তুলেনি। বর্ষা বাসায় একমাত্র মেয়ে কিনা সবার আদরের এর। প্রথম কারো হাতে থাপ্পড় খেয়ে বর্ষা হতভম্ব হয়ে গেলাম। সাথে সাথে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো।
লোকটা বর্ষার দিকে আরেকবার তাকালো তারপর চোখ সরিয়ে নিলো।
বর্ষা কেঁদেই যাচ্ছে। এই লোকটা আমাকে মারলো কেন? কেন নিজে জোর করে নিয়ে এলো আবার মারছে? ডাকাতের খপ্পরে পরলাম এখন আমার কি হবে?

বর্ষা নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদছে। হঠাৎ খেয়াল করলো বর্ষা পাশের ফাজিল লোকটা ওর দিকে একটা রুমাল ধরে আছে। বর্ষা কিছু না ভেবে রুমাল নিয়ে নাক চোখ মুছলো।তখন খেয়াল হলো রুমালে আমার মেকাপ উঠে গেছে ইশ আজ বিয়ে ছিলো কতো সেজেছিলাম।
বিয়েটা হলো না। মনটা খারাপ হয়ে গেল। বর্ষা রেগে আবার বললো,,,

“এই যে আপনি কি বোবা কথা বলতে পারেন না। এতো কথা বলছি আর আপনি মুখ ডেকে মেয়ে হয়ে বসে আছেন কেন? আপনি আমাকে বিয়ে থেকে তুলে আনলেন কেন? আপনার জন্য আমার বিয়ে ভেঙে গেল।”

রেগে বর্ষা ওনার হাতের বাহু ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বললো।
লোকটা রেগে ফোনে কিছু টাইপ করে বর্ষার সামনে ধরলো তাতে লেখা,

“কথা অফ করো নাহলে আমি অফ করাতে বাধ্য হবো।”

লেখাটা পরে বর্ষা নিশ্চিত হলো এই লোক বোবা। এই বোবা লোক আমাকে কিডন্যাপ করলো কেন? কি উদ্দেশ্যে এর।

“আপনি তাহলে সত্যি বোবা। আপনার জন্য একটু কষ্ট হলো কিন্তু বেশি না। কারন আপনি আমার বাপির মাথা ফাটিয়ে রক্ত বের করেছেন। আমাকে বাপির কাছে নিয়ে চলুন। আজকে আমার বিয়ে। আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।”

রেগে তাকালো লোকটা। তারপর সামনের লোকটাকে কিছু ইশারা করলো লোকটা একটা স্পে দিলো বর্ষার মুখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বর্ষা কি এটা?
উনি হুট করে স্পে আমার নাক মুখ দিলো কেন? সাথে সাথে বর্ষা ঠলে পরলো পাশে বসা লোকটার ওপর। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।

“স্যার মেয়েটা খুব বেশি কথা বলে তাইনা।”

সামনে থেকে কথাটা বলল ড্রাইভার। তা শুনে কড়া চোখে তাকালো ছেলেটা। ছেলেটার কড়া চাহনী দেখে লোকটা ঢোক গিলে সামনে তাকালো।
ছেলেটা বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। বাঁচাল একটা মেয়ে। পাঁচ মিনিট এ মাথা নষ্ট করে ফেলেছে। এতো কথা বলতে পারে উফ।
এক হাত উঁচু করে কপালে রাখলো।
মেয়েটা এখনো ওর বাহুতে পরে আছে গাড়ির ঝাঁকুনিতে ঝুঁকে নিচে পরে যাচ্ছিলো দেখে তারা তারি ধরে সামলে নেই।
বাকি রাস্তা ছেলেটা বর্ষাকে হাত দিয়ে আগলে রাখে যাতে না পরে।
এসব করতে বিরক্ত হলেও করে।

চোখ পিটপিট করে খুলে বর্ষা আকাশ দেখতে পেলো। বর্ষা ভ্রু কুঁচকে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এই আকাশ কোথা থেকে এলো। বর্ষা ঘুমিয়ে ছিলো তখন ওকে একটা বাসায় এনে রেখেছে । আর বর্ষা ভাবছে আমি কি খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়েছি। কিন্তু আমার তো বিয়ে ছিলো ঘুমালাম কখন? মাথা চেপে উঠে বসলো বর্ষা। মাথা ব্যাথা করছে। নিজের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো বর্ষা ওর শরীর এখনো বিয়ের পোশাক।হঠাৎ মাথায় এলো ওকে তো একটা গন্ডার এর মতো লোক কিডন্যাপ করেছে।
হুম সে কোথায় আমি কোথায়? মাথা উঁচু করে আশেপাশে তাকিয়ে চমকালাম এটা তো রুম একটা তাহলে আমি যে আকাশ দেখলাম উপরে তাকিয়ে দেখি উপরে আকাশ প্রেন্ডিং।

নিজের মাথায় চাপড় দিয়ে বলল, মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর বর্ষা।
আমাকে এখানে এনেছে ওই কিডন্যাপারটা। উনার কি মতলব? আমার সাথে কি শত্রুতা তার?
ভাবতে ভাবতে বিছানায় থেকে নামলো বর্ষা। রুমে মধ্যে একটা বিছানা ছাড়া কিছুই নাই। বর্ষা উঠে দরজার কাছে গেলো দরজা লাগানো। উফফ আমাকে এখানে বন্ধি করেছে তাহলে। বর্ষা দরজার মধ্যে কয়েকবার ধাক্কা মারলো।
খুলছে না। বর্ষার চোখ ছলছল করছে কি উদ্দেশ্যে এই লোকটার? কেন ওকে ধরে নিয়ে এলো। আব্বু আম্মু কতো কষ্ট পাচ্ছে বোধহয়।
লোকটা তখন কি দিয়েছিল ওর মুখে যে ওর কিছুই মনে নেয়।
শত চিন্তা করেও মনে করতে পারলো না বর্ষা।
রাগে দুঃখে কান্না করতে লাগলো বর্ষা।
এই হলো বর্ষা। আব্বু আম্মুর একমাত্র আদরের মেয়ে। ওর ভাই বোন কেউ নেই। আজকে ওর বিয়ে ছিলো অভ্রের সাথে। অভ্র ওদের তেমন পরিচিত কেউ না। সে নাকি ওকে ভালোবাসে। তাই বাসায় বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে আসে সে একজন ডাক্তার। পরিবার ভালো তাই আব্বু রাজি হয়ে যায়। বর্ষা ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরে। ছেলে খুব ভালো এ জন্য আব্বু দ্বিমত পোষণ করে নি‌। ছেলে ভালো তাই কিন্তু বর্ষা রাজি ছিলো না। কারণ বর্ষার খুব শখ ও প্রেম করে বিয়ে করবে। কিন্তু সেটা করা হলো না। তার আগেই কিনা বিয়ে ঠিক করে ফেললো। বর্ষা সাথে সাথে না করে দিলো। আব্বু অসহায় মুখ করে তাকিয়ে বলল, মা আমি কথা দিয়ে দিয়েছি। তুমি কি চাও তোমার আব্বুর কথায় খেলাপ হোক।
দুটানায় পরে গেলাম। আব্বুর অসহায় মুখ দেখে রাজি হলো বর্ষা। আব্বু কে খুব ভালোবাসে বর্ষা। তাকে কষ্ট দিতে পারবো না। কিছুতেই।
তখন দরজা খুলে কেউ ভেতরে আসলো। তার দিকে তাকিয়ে আতকে উঠলো বর্ষা।

চলবে~~~~~