তোকে ছাড়া আমি শূন্য পর্ব-০৯

0
4560

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ৯
#Faria_Siddique

১৬.

সকালে

আযানের ধ্বনিতে আমার ঘুম ভেঙে গেল।আমি উঠে অযু করে নামাজ পরে নিলাম।নামাজ পরে আমি বারান্দায় গেলাম।বসন্তের ছোয়া প্রকৃতিতে লেগে গেছে।চারদিকে কোকিলের ডাক শুনতে পেলাম।আমাদের বাড়ীটা ঢাকায় হলেও গাছে ভরপুর।কারন আমার বাবা এবং আমরা সবুজ গাছগাছালি খুব পছন্দ করি।আমাদের বাড়ীর গাছগুলোতে নতুন পাতা গজিয়েছে।দেখতে অসাধারণ লাগছে।হালকা বাতাস মনকে শান্ত করে তুলল।নিচে খেয়াল করে দেখলাম আমাদের বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে।মালি কাকা গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে।আমারও কেমন জানি ইচ্ছা হল আজকে বাগানের গাছ গুলোর সাথে খেলার।তাই আর দেরি না করে টি-শার্ট এর সাথে গলায় একটা স্কার্প পেচিয়ে বাগানে দৌড় দিলাম।

বাগানে গিয়ে আমি মালি কাকার পাশে দাড়ালাম।
আমিঃকাকা দাও আমি আজকে পানি দেই।
মালি কাকাঃকি কও আম্মাজান!!!!বড় সাহেব(বাবা),বড়আব্বা(দাভাই),ছোটআব্বা(ভাইয়া) দেখলে অনেক রাগারাগি করবো।
আমিঃকিছু হবে না কাকা।দাও তো
মালিঃনা আম্মা।
আমিঃ তুমি আমাকে দাও।আর তুমি গিয়ে আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আসো।
মালি কাকা আমার দিকে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে।
আমিঃকি হল যাও কাকা।আর শুনো আজকে আমি বিরিয়ানি খাব।কাকিকে বলবা যাতে খুব মজা করে বিরিয়ানি রান্না করে।
কাকা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
আমিঃকি হইলো কাকা এভাবে তাকাইয়া আছো কেন???
কাকাঃআম্মা তোমার শরীর ঠিক আছে তো??
আমিঃআমি একদম ঠিক আছি।কেন বলতো?
কাকাঃনা মানে অন্য দিন তো তোমারে জোর কইরাও কিছু খাওয়ান যায় না আর আজকে তুমি নিজের থাইক্কা বিরিয়ানি খাইতে চাইছো এজন্যই জিজ্ঞাইলাম আরকি।
আমিঃহয়েছে এবার গিয়ে কফি নিয়ে আসো।
কাকা মুচকি হেসে চলে গেল।

কাকা যেতেই আমি গাছে পানি দিতে লাগলাম।আমার খুব ভালো লাগছে।মন হালকা হয়ে গেল।গাছে পানি দেয়া শেষ করে আমি দোলনায় গিয়ে বসলাম।কাকা আমার কফি নিয়ে আসল।আমি দোলনায় বসে কফি খেতে লাগলাম।আর আশেপাশের পরিবেশ উপভোগ করতে লাগলাম আর কালকের কথা ভাবতে লাগলাম।সামিয়ার কথা মনে পরতেই রাগ উঠল।সামিয়ার কথা মনে পরলেই তার করা বিশ্বাসঘাতকতার কথা মনে পড়ে যায়।বিশালের সে সময়ের অবস্থার কথা মনে পরে যায়।বিশাল যাওয়ার পর পরই দিভাই আমাকে ছেড়ে চলে গেল।বিশালকে আমার বাবা আর ভাইয়ারাও খুব ভালোবাসত।বিশালকে আমি আর ভাইয়ারা আমাদের আরেকভাই মানতাম।

এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখের কোনে পানি চলে আসল।আর ঠিক তখনি আমার মোবাইল বেজে উঠল।দেখলাম স্ক্রিনে রুদ্র নাম জ্বলজ্বল করছে।আমি মুচকি হেসে কল ধরলাম।
রুদ্রঃকি করা হচ্ছে জানপাখি?
আমিঃআমি যাই করি তাতে আপনার কি?
রুদ্রঃআমারই তো সব কিছু।
আমিঃআজাইরা কথা না বইল্লা কি জন্য কল করেছেন সেটা বলেন?
রুদ্রঃআজকে তোমাকে আমার অফিসে আসতে হবে মনে আছে তো।
আমিঃএই রে আমার তো একদম মনে নাই.(মনে মনে)
আমিঃহা হা মনে আছে।(মিথ্যা বললাম)
রুদ্রঃমনে থাকলে ভাল না থাকলেও সমস্যা নাই আমি আছি না মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
আমিঃহয়েছে আপনার কথা??
রুদ্রঃহুম।আর তারাতারি চলে এসো।
আমি কিছু না বলে কল কেটে দিলাম।

তারপর রুমে গিয়ে আমি শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নিলাম।

আজ আমার কেন জানি ইচ্ছা হল শাড়ী পরার।তাই কাকি কে ডাক দিয়ে শাড়ী পরিয়ে দিতে বললাম।কাকি আমাকে শাড়ী পরিয়ে চলে গেল আর বলল যে নিচে সবাই আমাকে খাওয়ার জন্য ডাকছে।

আজ আমি লাল কালারের সুতির শাড়ী পরেছি।কানে মাঝারি সাইজের ঝুমকো,হাত ভর্তি চুরি, চুলগুলা ছেড়ে দিলাম, চোখে কাজল আর হালকা লিপস্টিক।ব্যস আমি রেডি

আমি নিচে নামতেই সবাই আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
দাভাইঃছোটু আমি স্বপ্ন দেখছি না তো??
ভাইয়াঃআমার মনে হচ্ছে আমিও স্বপ্ন দেখছি না তো..
বাবাঃআমার মনে হচ্ছে আমিও স্বপ্ন দেখছি।
ওদের কথা শুনে কাকা আর কাকি হাসতে লাগল।

আমি খাওয়া শেষ এ বের হয়ে আসার সময় দাভাই বলল।
দাভাইঃটুকু তুই রুদ্রের অফিসেই আছিস??
আমিঃহুম দাভাই।কেন বল তো।
দাভাইঃআসলে তোর সারপ্রাইজটা পাঠাবো তো তাই।
আমিঃ কি সারপ্রাইজ??
দাভাইঃ সেটা সময় হলেই দেখতে পাবি।
আমিঃও আচ্ছা।
তারপর আমি বের হয়ে গেলাম।

১৭.

in bangladesh airport

বিশাল এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে দেখল তার জন্য একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।সাথে সাথে তার মোবাইল কল আসল
বিশালঃহ্যালো
…………………………………
বিশালঃthank you bhai
………………………..
বিশালঃআচ্ছা
…………………………
বিশালঃআচ্ছা ভাই
………………………………..
বিশালঃআচ্ছা তুমি আমাকে লোকেশান পাঠিয়ে দাও
………………………………..
বিশালঃআচ্ছা
………………………..
বিশালঃবাই

কল রেখে বিশাল গাড়িতে উঠে পরল।তারপর গাড়ি চলে গেলো।

অন্য দিকে

আমি রুদ্রের অফিসে ডুকতেই সবাই আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
একজন স্টাফ এগিয়ে এসে বলল
স্টাফঃম্যাম আপনাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।
আমিঃধন্যবাদ।
আমি মুচকি হেসে রুদ্রের কেবিনের দিকে গেলাম।

অফিসের সবাই আমাকে আর ভাইয়াকে ভালো করেই চিনে।কারন ওইদিন রুদ্র সবার সাথে ভালোভাবেই আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।তাই সবাই আমাদেরকে ভালো করেই চিনে।

আমি রুদ্রের কেবিনে নক করতেই রুদ্র ভিতরে আসতে বলল।
রুদ্র আমাকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি তা দেখে রুদ্রের চোখের সামনে তুরি বাজালাম।
আমিঃএভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন???
রুদ্রঃতোমাকে।
আমিঃআপনার দেখা শেষ হলে আমরা কাজের কথায় আসি।
রুদ্র কিছু না বলে আমার দিকে এগোতে লাগলো।আমি পিছালাম না আমি যেখানে আছি সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলাম।আমি ঠুস করে চেয়ারে বসে পরলাম।
আমিঃমি.খান আমাদের কাজের কথায় আসা উচিত।
আমার কথায় রুদ্র সোজা হয়ে দাড়ালো।
রুদ্রঃতুমি ঠিক বলেছ।আমাদের আগে প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলা উচিত।রোমেন্স পরে করা যাবে।

রুদ্রের এই কথা শুনে আমি অবাক আর রাগি ভাবে রুদ্রের দিকে তাকাতেই রুদ্র মুচকি হেসে দিল।তারপর আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল
রুদ্রঃতোমাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে জানপাখি।তোমার চোখের নিচের তিলটা আমার বড্ড টানছে।আর তোমার গলার নিচের তিলটা খুবই সুন্দর লাগছে।এই লাল শাড়ীতে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।পুরাই আমার লাল পরী।

কথাগুলো বলেই রুদ্র নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পরল।আর আমি ফ্রিজ হয়ে বসে আছি।আমার এই অবস্থা দেখে রুদ্র মুচকি হেসে আমার সামনে তুরি বাজাল।

আমি রুদ্রের দিকে তাকাতেই রুদ্র বলল
রুদ্রঃকাজের কথায় আসি।
আমিঃহুম।
তারপর আমরা দুইজন প্রজেক্ট নিয়ে অনেক কথা বললাম।আমাদের কথা প্রায় শেষ এর দিকে ঠিক তখনি রাজ দরজায় নক করল।
রুদ্রঃকামিং।
রাজঃস্যার ম্যামের সাথে একজন দেখা করতে আসছে।
রুদ্র ভ্রু কুচকালো।
আমিঃআমার সাথে???
রাজঃহুম ম্যাম।
রুদ্রঃপাঠিয়ে দাও।
আমিঃনাম বলেছে?
রাজঃনা ম্যাম।বলেছে আপনার খুব কাছের প্রিয় মানুষ।
আমি কিছু বলার আগেই রুদ্র বলে উঠল।
রুদ্রঃছেলে না মেয়ে??
রাজঃছেলে…..
রাজ ছেলে বলতেই রুদ্রের চোখ মুখ লাল হয়ে এল।
আমিঃআচ্ছা তুমি পাঠিয়ে দাও।

রাজ যেতেই দাভাইয়ের কল আসল।
আমিঃহ্যালো দাভাই।
দাভাইঃতোর সারপ্রাইজ তোর কাছে চলে গিয়েছে।
আমিঃকই
দাভাইঃআর কিছু মুহুর্তের পরই চলে আসবে।
আমিঃহুম
দাভাই কল রেখে দিল।

আমি রুদ্রের দিকে তাকাতেই দেখলাম রুদ্র আমার দিকে রাগিভাবে তাকিয়ে আছে।
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই দরজায় কেউ নক করল।

আমি পিছনে ঘুরতেই যাকে দেখলাম তাতে আমার মুখ থেকে আপনাআপনি আমার মুখ থেকে বিশাল নাম বের হয়ে আসল।
রুদ্র আমার মুখে বিশাল নাম শুনেই শান্ত হয়ে আমার পাশে দাড়ালো।

আমার মাথা ঘুরতে লাগল।আমি পরে গেলাম।আমার আর কিছুই মনে নেই।।চোখ খুলতেই আমি নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করলাম।

চলবে………………