তোকে ছাড়া আমি শূন্য পর্ব-৭+৮

0
4806

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ৭
#Faria_Siddique

১৩.

আমি আর রুশা কথা বলছিলাম ঠিক তখনি কেউ পিছন থেকে রুশা বলে ডাক দিল।আমি আর রুশা একসাথে পিছনে ফিরলাম।

পিছনে ফিরে আমি ফ্রিজ হয়ে তাকিয়ে আছি।অবাক তো হয়েছিই।আমরা পিছনে ফিরে দেখি রুদ্র রুশাকে ডাকছে।

রুদ্র আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তারপর কি জানি ভেবে একটা বাকা হাসি দিল।আমি তো ভয়ে শেষ।

রুশা আমাকে টানতে টানতে রুদ্রের কাছে নিয়ে গেল।আমি এখনো আমার অবাক হয়া কাটিয়ে উঠতে পারি নি।

রুদ্র আমার এই অবস্থা দেখে মুচকি হাসল।
রুশাঃভাইয়া তোকে আমি আমার এক কিউট ফ্রেন্ড এর কথা বলেছিলাম না??এই হচ্ছে সেই কিউট ফ্রেন্ড ফারিয়া।

রুদ্র আমাকে অনেক মনোযোগ সহকারে দেখতে লাগলো। আমার রুদ্রের এই চাহনি দেখে আমার অসস্তি হচ্ছে।

রুশা এর মধ্যে তার বাবা মাকেও ডেকে আনল।
রুশাঃবাবা ও হচ্ছে ফারিয়া।মা আমি তোমাকে যার কথা বলেছিলাম এই হচ্ছে সেই।
আমি ওদেরকে সালাম করলাম।ওরা মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

আমি ওদের সাথে কথা বলছি আর রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছি।রুদ্র সেই কখন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।একবারের জন্যও চোখ ফেরায় নি।

হঠাৎ করে রুদ্রের কল আসলো। রুদ্র বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল।

আমি আর রুশা রুশার আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে রুশার ফ্রেন্ডদের কাছে চলে গেলাম।সবাই আমাকে দেখে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরল।

আমিও তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে লাগলাম।কারন তারা সবাই আমাদের ফ্রেন্ড। সবাই আমরা অনেক কথা বললাম।

রুশা সবাইকে বলল এখন কেক কাটা হবে।আর আমাকে বলল আমার জন্য নাকি কি সারপ্রাইজ আছে।

আমি ভাবলাম কি এমন সারপ্রাইজ হতে পারে।আমি ভাবতে ভাবতে রুশার কাছে গেলাম।আমি গিয়ে দাড়াতেই রুদ্র আমার সাথে এসে আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরলো।

আমি তাকাতেই আমার দিকে রাগিভাবে তাকালো।যার মানে তুমি যদি আর একবার নড়াছড়া কর তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

রুশার কেক কাটা শেষ হলে সে আমাদের সবাইকে কেক খাইয়ে দিল।সবার কেক খাওয়া শেষ হলে রুদ্র আমার মুখের সামনে কেক ধরলো।

আমি খেতে না চাইলেও আমাকে জোড় করে খাইয়ে দিল।আমি হা হয়ে রইলাম।আমার অবস্থা দেখে রুদ্র মুচকি হাসলো।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুশা সবাইকে ডাকল।আমরা সবাই গেলাম।আমি গিয়ে একটা চেয়ারে বসতেই রুদ্র এসে আমার পাশে বসলো।

আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই রুদ্র আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলল।
রুদ্রঃতোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আজকে।

আমি কিছু বললাম না।আমার এরকম নিরবতা দেখে রুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল
রুদ্রঃআমাকে কেমন লাগছে বল??(দাতে দাত চেপে)

আমি এতক্ষনে রুদ্রিকে ভালো করে খেয়াল করলাম।রুদ্রকে আজকে খুবই সুন্দর লাগছে

রুদ্র আজ একটা কালো কালারের পাঞ্জাবী পরেছে।আর সাদা ধুতি।চুলগুলা একপাশে এনে ওপরের দিকে স্পাইক করা। মুখে চাপদাড়ি থাকায় আরও সুন্দর লাগছে।

আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলল
রুদ্রঃএভাবে তাকিয়ো না প্রেমে পরে যাবে।
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
রুদ্রঃকই বললে না তো আমাকে কেমন লাগছে???
আমিঃভুতের মত লাগছে।

রুদ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুশা বলল।
রুশাঃএখন আমাদেরকে গান গেয়ে শুনাবে ফারিয়া।

এই কথা শুনে আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম।
আমিঃ আমি গান পারি না।আর আমি গান গাইব না।

ঠিক তখনি কেউ পিছন থেকে বলে উঠল
-তুই গাইবি না তোর গাড় গাইবে৷

আমি পিছনে তাকালাম।তাকিয়ে যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমার চোখে আপনাআপনিই পানি চলে আসল।

১৪.

দাভাই ঘরের মধ্যে বসে বসে অফিসের কাজ করছে।ঠিক তখনি দাভাইয়ের কল আসলো।

দাভাই দেখল একটা আননোন নাম্বার।কল রিসিভ করল।
দাভাইঃহ্যালো।ফারদিন সিদ্দিকী স্পিকিং।
ওইপাশঃ…………………..
দাভাইঃহ্যালো কে বলছেন?
…………………………..

দাভাই এবার বিরক্ত হয়ে কল রেখে দিল।

দাভাই কল কেটে দিলে ওইপাশ থেকে কেউ একজন মুচকি হেসে দাভাইয়ের ছবি বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরল।

চলবে……………

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ৮
#Faria_siddique

১৫.

জীবন আমাদের কখন কি দেখায় তা আমরা কেউ বলতে পারি না।জীবনের কিছু মানুষ এবং কিছু কিছু মুহুর্ত আমরা চাইলেও ভুলতে পারি না।বিশেষ করে মানুষ। এক জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ মানুষটাও কোন না কোন সময়,কোন না কোন কারনে জীবন থেকে কোন একসময় হারিয়ে যায়।কিন্তু মন থেকে কখনও হারায় না।মনের কোন না কোন এক কোনায় তাদের রাজত্য চলতেই থাকে।তাদের প্রতি অভিমানটা অনেক বেশী কাজ করে।এক সময়ের প্রিয় মানুষটা অপ্রিয় হয়ে উঠে।অভিমানের পাহাড় ডিঙিয়ে সেই ব্যক্তিকে আর আগের মতো প্রিয় মানুষ বলা হয়ে উঠে না।

আমার জীবনটাও এরকম জীবনের মাঝখানে পরে।আমি পিছনে ফিরে যেই মানুষটাকে দেখলাম সে আর কেউ নয় আমারই কোন একসময়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল।

আমি তাকে দেখার পর আমার চোখ থেকে আপনাআপনিই পানি পরতে শুরু করলো। কারন ওর জন্য আমি আমার আরেক বেস্ট ফ্রেন্ড কে হারিয়েছি।

আসুন এবার জানা যাক অতীতে আমার আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ডদের কাহিনি।

(আমি,বিশাল আর সামিয়া আমরা তিনজন একই স্কুলে পড়তাম।আমরা তিনজন বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।বলতে গেলে একে অপরের জান ছিলাম।আমরা একসাথে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম।কলেজের প্রথম বছরের শেষ এর দিকে বিশাল সামিয়াকে প্রপোজ করে।আর সামিয়াও গ্রহণ করে নেয়।সব কিছু ভালই চলছিল।আমরা তিনজনও খুব হ্যাপি ছিলাম।

কিন্তু আমাদের এই সুখ দুঃখে পরিনত হল যখন সামিয়া আর বিশালের মধ্যে আরেকজনের প্রবেশ ঘটল।সামিয়া আর বিশালের মাঝখানে একটা ছেলের আগমন ঘটল।সেই ভাইয়াটা ছিল সিনিয়র একটা ভাইয়া।

ওই ভাইয়াটার সাথে সামিয়া খুব বেশিই ক্লোজ হয়ে গেল।বিশালকে সে পাত্তাও দিত না এমনকি আমার সাথেও তেমন কথা বলত না।

আর এসব দেখে বিশাল সহ্য করতে পারত না।আমি সামিয়াকে ওই ছেলের থেকে দূরে আসতে বললে সামিয়া আমাকে জানায় যে সামিয়া আর ছেলেটা রিলেশনে আছে।আর সে কিছুদিনের মধ্যেই বিশালের সাথে ব্রেকাপ করে ফেলবে।

এই কথা শুনে আমার পায়ের তলার থেকে মাটি সরে গেল।আমি সামিয়াকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু সে বুঝল না।

আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না।বিশাল কে আমি কি করে সামলাব।

কিছুদিন পরে সামিয়া বিশালের সাথে সামিয়া ব্রেকাপ করে দিল।আমার সামনে সামিয়া করলো।আমি গিয়ে সামিয়াকে সজোরে একটা থাপ্পর মারলাম আর বললাম
আমিঃতোর আর আমার ফ্রেন্ডশিপ আজ থেকে এখানেই শেষ। আর কোনদিন তোর মুখ তুই আমার সামনে আনবি না।

আমি সামিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বিশালকে নিয়ে চলে আসলাম।কিন্তু এরপর বিশাল নিজেকে একদম গুটিয়ে নিয়েছে।

সারাদিন রুমে বসে থাকত। কারোর সাথে কথা বলত না।তার এই অবস্থা তার মা বাবা মেনে নিতে পারছিল না তাই তারা তাকে আমেরিকা পাঠিয়ে দেয়।

এরপর আজ ৩ বছর বিশালের সাথে আমার কথা হয় নাই।)

আর রুশা আমাদের তিনজনের ব্যাপারে জানে কারন রুশা আমাদের সাথেই পড়ত।

বিশাল আর সামিয়া চলে যাওয়ার পর ওই আমাকে সামলিয়েছে।ও ভেবেছিল আমি পুরনো সব কিছু ভুলে যাব সামিয়াকে দেখার পর।

কিন্তু হল তার উল্টো। সামিয়াকে দেখতেই আমার বিশালের কথা মনে পরল।সামিয়ার করা বিশ্বাসঘাতকতার কথা মনে পরল।

বিশালের কথা মনে পরতেই আমার চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করলো।

আমি এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে সামিয়া আমার সামনে এসে পরেছে আমি বুঝতেই পারলাম।

সামিয়া যেই আমাকে জড়িয়ে ধরতে যাবে ওমনি আমি সরে গিয়ে অনেক জোরে একটা থাপ্পড় মারলাম।আমি সামিয়াকে দেখে আমার রাগ কন্ট্রোল করতে পারি নি।

আমার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। আমার এই অবস্থা দেখে রুশা আমার কাছে আসতে যাবে তার আগেই রুদ্র এসে আমাকে নিয়ে বসাল।

রুদ্রের চোখে হাজারো প্রশ্ন। রুদ্র আমাকে ইশারায় শান্ত হতে বলল।কিন্তু আমি শান্ত হতে পারছি না।

সামিয়া যেই আমার সামনে আসতে যাবে আমি বললাম
আমিঃপ্লিজ তুই আমার সামনে আসিস না।তাহলে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না।(রেগে)

আমার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।সামিয়া আর সাহস পেল না আমার সামনে আসার।সে আমার থেকে দূরে দাড়িয়েই কান্না করতে লাগলো।

আমার এই অবস্থা দেখে রুশা আমার কাছে আসল।
আমিঃপ্লিজ রুশা আমি এখন তোর কোন কথা শুনতে চাই না।
রুশাঃপ্লিজ ফারি আমার কথা………
রুশা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্র ওকে ইশারায় থামিয়ে দিল।

আমি এবার উঠে দাড়ালাম।
আমিঃআমি এখন বাসায় যাব।
রুদ্রঃআমি তোমাকে দিয়ে আসছি।
আমিঃআমি একাই যেতে পারবো
রুদ্রঃআমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি নি(রেগে)

আমি কিছু বা বলে সামিয়ার,সামনে গেলাম।
আমিঃআমার সামনে আসার মত দুঃসাহস আর কোন দিন যদি দেখিয়েছিস তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।(রেগে)
সামিয়াঃআমাকে কি মাফ করা যায় না??(কান্না করে)
আমিঃআগে আমাকে আমার আগের বিশাল ফিরিয়ে দে,আমাকে আমার সেই সময়গুলা ফিরিয়ে দে তাহলে আমি তোকে মাফ করে দিব।

সামিয়া আর কিছু না বলে কান্না করতে লাগলো।আমি চলে আসলাম।রুদ্র ও চলে আসল।আমি গাড়িতে বসে কান্না করতে লাগলাম।

রুদ্রও গিয়ে গাড়িতে বসল।তারপর গম্ভীর কণ্ঠে আমাকে প্রশ্ন করল
রুদ্রঃবিশাল কে জানপাখি??
আমিঃআমার বেস্ট ফ্রেন্ড,আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমার আরেকটা ভাই।

রুদ্র আর কিছু না বলে মুচকি হেসে গাড়ি চালাতে লাগলো।

১৫..

রুদ্র আমাকে পৌছে দিয়ে চলে গেল। আমি বাসায় এসে দেখলাম হল রুমে কেউ নেই।আমি তারাতারি নিজের রুমে চলে গেলাম।

আমি লম্বা একটা শাওয়ার নিলাম।শাওয়ার নেয়ার সময় আমি অনেক কান্না করলাম।শাওয়ার নিয়ে এসে আমি দেখলাম রুদ্র কল করেছে।

আমি কল ধরতেই রুদ্র উদ্ধিগ্ন হয়ে বলল
রুদ্রঃকই ছিলা তুমি এতক্ষন??
আমিঃআমি শাওয়ার নিচ্ছিলাম।
রুদ্রঃএত রাতে শাওয়ার নিতে কে বলেছে স্টুপিড।(রেগে)
আমি কিছু না বলে মুচকি হাসলাম।
রুদ্রঃভিজা চুল নিয়ে ঘুমাবা না। চুল শুকিয়ে তারপর ঘুমাবা।
আমিঃহুম।
রুদ্রঃআচ্ছা আমি এখন রাখি।
আমিঃহুম।

রুদ্র কল রেখে দিয়ে রুদ্রের রুমে থাকা আমার ছবির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো
রুদ্রঃতোমার সব কস্ট আমি দূর করে দিব পাখি।তোমার জীবন আবার আগের মত করে তুলবো আমার ভালোবাসা দিয়ে।আমি যে তোমাকে খুব ভালবাসি জানপাখি। #তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য।

এসব বলেই মুচকি হেসে ছবিতে আমার গালে আলতো করে কিস করে বারান্দায় চলে গেল।সেখানে গিয়ে রকিং চেয়ারে বসে আমার কথা ভাবতে লাগলো।

অন্যদিকে

আমি আমার আর বিশালের একটা ছবি নিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম।ছবি টা দেখেই আমার কান্না চলে আসল।
ছবিতে আমি কলেজ ড্রেস পরে দুইবেনি করে আছি আর বিশাল আমার দুইবেনি ধরে টানছে।

ছবিটা জড়িয়ে ধরে আমি কান্না করতে করতে বলতে লাগলাম
আমিঃকেন আমার সাথে এমন হয়??আমার প্রিয় মানুষ গুলা কেন আমাকে ছেড়ে চলে যায়???প্রথমে তুই চলে গেলি তারপর দিভাই চলে গেল।আমি যে খুব অসহায় তোদের ছাড়া। (কান্না করতে করতে)

in America

বিশালঃআমি আসছি জানু।সামিয়ার জন্য আমি তোকে অনেক কস্ট দিয়েছি।নিজের অজান্তেই আমি তোকে খুব কস্ট দিয়ে ফেলেছি।কিন্তু আর না আমি আসছি।তোর ভাই আসছে।আর হা সামিয়াকে তার পাওনা দিতেও আমি আসছি।be ready samiya.আমি আসছি।

কথাগুলা বলে বিশাল কাকে যেন কল করে টিকেটের ব্যবস্থা করতে বলল।

তারপর একটা ভিলেনি হাসি দিয়ে কল রেখে দিল।

চলবে………