তোকে ছাড়া আমি শূন্য পর্ব-৫+৬

0
4782

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ৫
#Faria_siddique

৯.

রুদ্র হাই স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে আর একহাত দিয়ে আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।আমি চেষ্টা করেও ছুটতে পারছি না।

আমার হাত পা ছুড়াছুড়ি দেখে রুদ্র আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।কিন্তু আমি তো আমিই।আমি আরও বেশি করে চেষ্টা করতে লাগলাম।

হঠাৎ করে রুদ্র একটা ব্রিজের ওপর গাড়ি থামাল।আমি ছাড়া পেয়ে তারাতারি গাড়ি থেকে নেমে পরলাম।রুদ্রও নামলো।

আমিঃআমরা এখানে এসেছি কেন??(রাগিভাবে)
রুদ্রঃতোমাকে ব্রিজ থেকে নিচে ফেলে দেওয়ার জন্য। (বিরক্ত হয়ে)
আমিঃসমস্যা নেই আমি সাতার পারি।(ভাব নিয়ে)
রুদ্র আর কিছু না বলে আমার কাছে এগিয়ে আসলো।
রুদ্রঃতোমাকে এখন কি শাস্তি দেয়া যায় বল তো??
আমিঃকিসের শাস্তি??
রুদ্রঃওই যে তুমি আমার সাথে একটু বেশিই সাহস দেখিয়ে ফেলেছ তারই শাস্তি।
আমি কোন কথা না দাড়িয়ে রইলাম।
রুদ্রঃনাও দেখি একপা তুলে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক।

আমি অবাক হয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছি।
রুদ্রঃতারাতারি করো।যত দেরি করবা ততই তোমার সময় বাড়বে।
আমিঃবললেই হলো নাকি!!!ধরবো না আমি কান।
রুদ্রঃতুমি যদি কান না ধর তাহলে আমি এখন তোমাকে কিস করবো। তা আমার মনে হয় সেটাই ভালো হবে।

আমি ভয় পেয়ে একপায়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে গেলাম।খুব কস্ট হচ্ছে।আমি পারছিই না দাঁড়িয়ে থাকতে।

আমি অসহায় চোখে রুদ্রের দিকে তাকালাম। রুদ্র আমাকে পাত্তা না দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।

প্রায় ৩০ মিনিট পর আমি আর থাকতে না পেরে রাস্তায় বসে গেলাম।তা দেখে রুদ্র হাসতে হাসতে আমার কাছে আসলো।

আমি রাগ করে রুদ্রের দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি।রুদ্রও কিছু না বলে আমাকে কোলে তুলে নিল।

আমি কিছু বললাম না কারন আমার পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ।এই উগান্ডার কাইল্লা বিলাইএর লাইগা আমার পায়ের এই অবস্থা।

আমাকে গালাগালি করে লাভ নেই।চুপচাপ থাকো।আর কোনদিন আমার কথার অবাধ্য হলে এর চেয়েও বেশি ভয়ংকর শাস্তি দিব।

রুদ্র আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।গাড়িতে আমি চুপচাপ বসে ছিলাম।আমাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে রুদ্র বলল
রুদ্রঃআমাদের এই ডিলটা নাকি তুমি আর ফারহান হ্যান্ডেল করছো।
আমিঃহুম।
রুদ্রঃকালকে আমার অফিসে আসবা।কিছু কাজ আছে।
আমিঃকালকে আমার এক ফ্রেন্ডের জন্মদিন।তাই আমি কালকে সারাদিন তাকে সময় দিব।
রুদ্রঃছেলে নাকি মেয়ে??(রাগি সুরে)
আমিঃমেয়ে
রুদ্রঃও আচ্ছা।কিন্তু কালকের দিনই শুধু।

আমি আর কোন কথা বললাম না।কারন এই লোকের সাথে কথা বলে লাভ নেই।
তাই আমি চুপচাপ এ বসে ছিলাম।

রুদ্র আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তার সামনে দাড় করিয়ে কপালে কিস করে গালে হাত দিয়ে একটু মুচকি হেসে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।

আমি রুমে এসে বসে বসে ভাবতে লাগলাম রুদ্রের কথা।

ঠিক তখনি আমার কল আসলো। আমি না দেখেই রিসিভ করলাম।
আমিঃহ্যালো।
রুদ্রঃআমার কথা ভাবছ বুঝি?
আমি এবার ভালো করে নাম দেখলাম।
আমিঃনা।
রুদ্রঃতাহলে কার কথা ভাবছিলে??(রেগে)
আমিঃসেটা আপনাকে বলবো কেন?
রুদ্রঃআমাকে বলবি না মানে?(রেগে চিল্লিয়ে)
আমিঃধুর।
এই বলেই কল রেখে দিলাম।

রুদ্র আমার এরকম ব্যবহারে খুবই রেগে গেল।রুদ্রের চোখ মুখ হিংস্র প্রাণীর মত হয়ে গেল।
রুদ্রঃতুমি খুব বড় ভুল করে ফেললে কিন্তু আমি তোমাকে এবার মাফ করে দিলাম।কিন্তু একটা ছোট শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।

আমি রুদ্রের ওপর রাগ ঝারতে ঝারতে ঘুমিয়ে পরলাম।

৯.

আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি দাভাই আমার রুমের সোফায় বসে ল্যাপটপ কাজ করছে।আমাকে উঠতে দেখে মুচকি হেসে আমার কাছে এসে বসল।

আমাকে কফি দিয়ে বলল
দাভাইঃরুদ্রের সাথে তুই আর ছোটু ডিলটা ফাইনাল করবি.
আমিঃহুম।
দাভাইঃতোর কি মন খারাপ টুকু???
আমিঃনা ভাইয়া।
দাভাইঃকালকে তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
আমিঃকি?
দাভাইঃকালকেই দেখতে পাবি।এখন ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।সবাই একসাথে নাস্তা করবো।
আমিঃহুম তুমি যাও আমি আসছি।

তারপর আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি মুচকি হেসে ভাইয়াদের মাঝখানে বসলাম।আর তারা আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।

খেয়েদেয়ে বাবা হসপিটালে চলে গেলো। আর আমরা তিনভাইবোন শপিং করতে গেলাম।কারন আজকে আমাদের তেমন কোন কাজ নেই।

আমরা ঠিক করেছি আমরা আজকে বাইকে করে ঘুরবো।তাই দাভাই আমাদের তিনজনের জন্য বাইক কিনে এনেছে।

আমি তো বাইক পেয়ে সেই খুশি।আমার খুশি দেখে আমার ভাইয়ারাও খুশি।আর আমাদের তিনজনের খুশি মানেই আমাদের বাবার খুশি।

চলবে……..

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ৬
#Faria_Siddique

১১.

আমি আর আমার ভাইয়ারা ফুল স্পিড এ বাইক শপিংমলের সামনে পার্ক করি।যেহেতু আমরা তিনজনই বাইক খুব ভালোভাবেই চালাতে পারি সেজন্য আমাদের কোন সমস্যা হয় নি।

চারপাশের সবাই আমাদের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।কারন আমরা তিনজন একই কালারের জামা পরেছি।

আমরা আজকে কালো কালারের শার্ট আর সাদা কালারের জিন্স পরেছি।আমি চুলগুলা ছেড়ে দিয়েছি।আর ভাইয়াদের কথা কি বলব।ওদেরকে সবসময়ই খুব সুন্দর লাগে।

আমরা শপিংমলে গিয়ে ঘুরতে লাগলাম।একটার পর একটা দোকান ঘুরতে লাগলাম।কিন্তু আমার ভাইয়াদের আমার জন্য কোন জামা পছন্দ হচ্ছে না।

আমি আর কি করবো আমি ও মাথায় হাত দিয়ে তাদের সাথে ঘুরতে লাগলাম।কিন্তু হঠাৎ আমার চোখ একটা গাউনের ওপর।
গাউনটা খুবই সুন্দর।

আমি সাথেই সাথেই দাভাই আর ভাইয়াকে দেখালাম।দাভাই যেই জামাটা আনতে যাবে ওমনি একটা মেয়ে এসে জামাটা নিয়ে নিল।

এইটা দেখে আমার দাভাই তো সেরকম রাগ করেছে।দাভাই মেয়েটার হাত থেকে টান মেরে জামাটা নিয়ে আমাদের কাছে নিয়ে এসে আমার হাতে দিল।

মেয়েটা রাগে ফুসতে ফুসতে দাভাইয়ের সামনে আসলো।
মেয়েঃআপনার সাহস কি করে হয় আমার হাত থেকে জামা আনার।এই মেহেক চৌধুরীর হাত থেকে জামা নেয়ার।

দাভাই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তাতে যেন মেয়েটার রাগ আরও বেশি হচ্ছে।আর দাভাইয়ের এমন ভাব দেখে আমি আর ভাইয়া মিটমিট করে হাসছি।

মেহেক আবার বলতে শুরু করার আগেই দাভাই বলল
দাভাইঃদেখুন মিস আপনি যেই হোন তাতে আমার কিছু আসে যায় না।এই জামাটা আমার বোনের পছন্দ হয়েছে আর আমার বোন জামাটা আপনার আগে দেখেছে।তাই এই জামা আমার বোনের।so,আজাইরা পেচাল না পেরে অন্য জামা দেখে নিন।

মেহেক রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা ছেলে এসে মেহেককে বলল
ছেলেঃকি রে তুই এখানে??তুই আবার ঝগড়া করছিস???

মেহেক কিছু বলার আগেই দাভাই বলতে শুরু করলো
দাভাইঃতোমার বন্ধুকে কোন ভালো মেন্টাল হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করাও।

ছেলেটা দাভাই আর আমাদের এতক্ষনে খেয়াল করল।
ছেলেটাঃআরে ফারহান সিদ্দিকী আর ফারদিন সিদ্দিকী!!!!!!! (অবাক হয়ে)
মেহেকঃতুই চিনিস???(ভ্রু কুচকে)
ছেলেটাঃআরে ওরা তো ইন্টারন্যাশানল টপ বিজনেসম্যান।

ছেলেটার কথা শেষ হতে না হতেই দাভাই জামাটা কিনে নিয়ে আমাদের নিয়ে অন্যদিকে চলে গেল।

আর ছেলেটা আর মেহেক আমাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। মেহেক তো রাগে ফুসছে।
মেহেকঃআমি এই লোককে দেখে নিব(রেগে)
ছেলেটাঃহয়েছে এবার চল।

ছেলেটা মেহেককে নিয়ে চলে গেল।

এবার আসুন মেহেকের সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া,যাক

(মেহেক চৌধুরী স্পর্শ। দেখতে খুব সুন্দর। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।তার বাবাও একজন নামকরা বিজনেসম্যান। চৌধুরী গ্রুপের মালিক।

মেহেকের পড়াশুনা শেষ।এখন বাবার কোম্পানিতে বসে।দেখতে খুবই সুন্দর। উচ্চতা ৫” ৫।খুবই মিস্টি মেয়ে।কিন্তু খুবই চঞ্চল।)

জামা কিনে আমি আমার ফ্রেন্ডের জন্য গিফট কিনলাম।তারপর আমরা বাসায় চলে এলাম।বাসায় এসে আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম।

১১.

সন্ধ্যায় আমি রেডি হয়ে নিচে গেলাম।গিয়ে দেখি আমার দুইভাই আর বাবা বসে আছে।আমি তাদের কাছে গেলাম।

আমাকে দেখে তারা তিনজন আমার কাছে আসলো
বাবাঃআজকে আমার প্রিন্সেসকে অনেক সুন্দর লাগছে।
ভাইয়াঃদেখতে হবে না কাদের বোন।
আমিঃহয়েছে হয়েছে আর ভাব মাইরো না।

আমার কথা শুনে সবাই হেসে দিল।তারপর শুরু হল আমার দুইভাই আর আমার বাবার আদেশ।
দাভাইঃটুকু সাবধানে থাকবি আর ছেলেদের সাথে কম কথা বলবি।
ভাইয়াঃআর কেউ কিছু বললে আমাদের এসে বলবি।

আমি রেগে গিয়ে বললাম।
আমিঃদাভাই আর ভাইয়া আমি শুধু কয়েক ঘন্টার জন্য যাচ্ছি।সারাজীবনের জন্য না।

আমার কথা শুনে বাবা এবার হেসে দিল।
আমি বাবার দিকে অসহায় ভাবে তাকালাম।
বাবাঃতোর ভাইদের তুই এ সামলা।
এই বলে বাবা চা খাওয়ায় মন দিল।

আমি অসহায় ভাবে ভাইয়াদের কথা শুনতে লাগলাম।
দাভাইঃশুন তোর সাথে আমি কয়েকটি বডিগার্ড পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আমিঃদাভাই আর ভাইয়া আমি সব মেনে নিলাম।এখন আমি যাই।
ভাইয়াঃহুম যা।

আমি তারাতারি বের হয়ে আসলাম।

আজ আমি একটা অফ হোয়াইট কালারের গাউন পরেছি।ওরনা একপাশে ছেড়ে দিলাম।চুলগুলা মাঝখানে সিতা করে দুইপাশে ছেড়ে দিলাম।কানে বড় বড় দুল পরলাম।হাতে দাভাইয়ের দেয়া ব্রেসলাইট আর ভাইয়ার দেয়া আংটি পরলাম।আর হালকা মেকাপ।

আমি পৌঁছে গেলাম।আমি গাড়ি থেকে নেমে বাড়ীর ভিতরে গেলাম।আমাকে দেখে একটা মেয়ে দৌড়ে আসলো।

আমিও মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলাম।
মেয়েঃজানিস তোকে আমি কত মিস করছি।বাই দা সড়ক তোর তো সকালে আসার কথা ছিল?(রেগে)
আমিঃসরি রে আসলে ভাইয়ারা ছিল তাই আর আসা হয়নাই।
মেয়েঃআচ্ছা ঠিক আছে।

আর কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি কেউ পিছন থেকে ডাক দিল রুশা বলে।

হা প্রিয় পাঠক আপনাদের রুদ্রের বোনই আমার বান্ধুবি।

চলবে……….