তোমাকে চিনতে ভুল করেছি পর্ব-০৩

0
271

#তোমাকে চিনতে ভুল করেছি (পর্ব:-০৩)
লিখা:- AL Mohammad Sourav

সৌরভের সাথে নিরার বিয়েটা দিতে বারণ করেছি তাও তুমি দিয়েছো এবার বুঝো! সবার সাথে সবার মিল হয়না আর নিরার সাথে সৌরভের ছোট থেকেই সমস্যা তাও তুমি বিয়ে দিয়েছো এখন যে ওর চাকরিটা চলে গেছে এখন তো বুঝতে পারছো নিরা যে সৌরভের জন্য শনির দশা হয়ে আসছে। আব্বার কথা গুলি নিরা দাঁড়িয়ে শুনছে আম্মা তখন বলে।
আম্মা:- নিরা তুই অফিসে যা আর সৌরভ তুই নিরাকে বাইকে করে নামিয়ে দিয়ে আয়।
আব্বা:- তুমি তাও নিরার হয়ে কথা বলবে?
আম্মা:- দেখো চাকরি চলে গেছে আবার চাকরি পাবে কিন্তু নিরা আর সৌরভের মধ্যে বিয়ের সম্পর্কটা শেষ করতে পারবো না। সৌরভ দাঁড়িয়ে আছিস কেনো তোকে যা বলেছি তুই তাই কর।
সৌরভ:- হ্যা যাচ্ছি বলে ঘরে গিয়ে বাইকের চাবিটা এনে বাইক বের করেছি। নিরা এসে বসেছে তবে আজ কোনো গ্যাপ রাখেনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসেছে। নিরার এমন কাজে আমি কিছুটা অবাক হলাম। নিরাকে নিয়ে আমি ওর অফিসের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে আসছি। আজ ভার্সিটিতে গিয়ে দুইটা ক্লাস করেছি মনটা কেমন জানি ভালো লাগছে। সন্ধার দিকে গিয়ে নিরাকে অফিস থেকে নিয়ে এসেছি। আজ নিরার সাথে তেমন কোনো ঝগড়া করিনি রাতে খাবার খাচ্ছি তখন আব্বা বলে।
আব্বা:- সৌরভ এসব পার্ট টাইম চাকরি না করে আমার সাথে দোকানে কিছুটা সময় দিলে তো হয়।
আম্মা:- হ্যা তোর বাবা যেইটা বলেছে সেইটা কর চাকরি করার কোনো দরকার নেই।
সৌরভ:- এসব দোকান করা আমার কাছে বিরক্তিকর লাগে।
আব্বা:- এটা তো বিরক্তিকর লাগবে আগামীকাল থেকে তুই আমার সাথে দোকানে বসবি এসব চাকরি বাকরি করার দরকার নেই।
আম্মা:- ঠিক আছে বসবে এত রাগ করার দরকার নেই।
সৌরভ:- ঠিক আছে যাবো বলে উঠে যেতেছি তখনি আম্মা বলে।
আম্মা:- সৌরভ তুই একটু আমার সাথে আয় বলেই আম্মা উঠে আমার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে গিয়ে বলে। সৌরভ তুই সত্যি করে বলবি নিরাকে মন থেকে বৌ হিসাবে মেনে নিয়েছিস? আমি চুপচাপ হয়ে আছি তখনি আম্মা আবার বলে সৌরভ নিরা আমার জন্য লাকী কেনো জানিস কারণ আমি নিরাকে মন থেকে ভালোবাসি আর নিরাও আমাকে মন থেকে ভালোবাসে। তুই নিরাকে মন থেকে মেনে নিস তাহলে দেখবি তোর জন্য নিরা লাকী হয়ে আসবে।
সৌরভ:- ঠিক আছে আম্মা আমি চেষ্টা করবো বলে ঘরে এসে চেয়ে দেখি নিরা খাটের উপরে শুয়ে আছে আমি গিয়ে বলি। কি হলো আজ তুমি খাটের উপরে শুয়ে আছো কেনো?
নিরা:- এখন থেকে আমি খাটের উপরে থাকবো যদি তোমার কোনো আপত্তি থাকে তাহলে তুমি নিচে শুয়ে পড়ো।
সৌরভ:- বুঝতে পারছি আম্মা তোমাকে কিছু বলেছে যার কারণে এমন করছো তবে শুনো আমি তোমাকে মন থেকে ভালোবাসতে পারবো না।
নিরা:- সেটা তোমার ব্যপার তবে আমি আজ থেকে তোমাকে স্বামী হিসাবে মেনে নিলাম তোমাকে এতটা ভালোবাসবো যতটা ভালোবাসা তুমি কল্পনা করতে পারবে না।
সৌরভ:- হঠাৎ করে আমাকে ভালোবাসবে বলছো তার মানে তোমার বয়ফ্রেন্ড তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তখনি নিরা শুয়া থেকে উঠে বলে।
নিরা:- আমার বয়ফ্রেন্ড আসবে কোথা থেকে আমি তো কাওকে কোনো দিন ভালোবাসিনি!
সৌরভ:- ছিঃ তুমি এমন মিথ্যা কথা বলতে পারলে?
নিরা:- দেখো ভালো হবে না কিন্তু আমি কাওকে ভালোবাসি না আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই তখনি আমার মোবাইলটা বের করে নিরার হাতে দিয়ে ভিডিওটা দেখিয়ে বলি।
সৌরভ:- তাহলে এইটা কি মিথ্যা? নিরা ভিডিওটা দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে।
নিরা:- তার জন্য তুমি আমার সাথে এমন করতেছো?
সৌরভ:- শুনো নিজেকে এতটা সতি সাবিত্রী আমার কাছে সাজাতে এসো না। আমি জানি তুমি বললে বিশ্বাস করবে না যার কারণে ভিডিওটা করে রাখছি। নিরা কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়েছে তখন আমি বলি এখন কোনো কথা বলছো না কেনো? কি হলো সবকিছু ফা’স হয়ে গেছে যার কারণে এখন একদম চুপচাপ হয়ে গেছো তাইনা?
নিরা:- দেখো আমি মিথ্যা বলি না বলেছি আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই এখন যতই বলবো ততই তুমি আমাকে অবিশ্বাস করবে কারণ তুমি আমাকে দেখেছো আমি একটা ছেলের সাথে রেস্টুরেন্ট বসে আছি আর ছেলেটা আমার হাতটা ধরতেছে।
সৌরভ:- সব চোর ধরা পড়লে এমন কথা বলে শুনো তুমি আমাকে যা কিছু বলো এতে করে আমি তোমার কথা বিশ্বাস করতেছি না। আগামীকাল থেকে তুমি একা একা অফিসে যাবে আম্মা যদি বলে তাহলে মেইন রাস্থায় নামিয়ে দিবো সেখান থেকে তুমি চলে যাবা। যদি আমার কথা না শুনো তাহলে আম্মাকে ভিডিওটা দেখিয়ে দিবো।
নিরা:- ঠিক আছে তাই হবে তবে তুমি এর জন্য আফসোস করবে আমি বলে দিলাম এইটা বলে নিরা বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়েছে আর আমি খাটের উপরে শুয়ে পড়েছি। সকালে উঠে নিরা নিজের মত করে ফ্রেশ হয়েছে আমিও আমার মত করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিরাকে নিয়ে গিয়ে মেইন রাস্থাতে নামিয়ে দিয়েছি যখনি নিরা রিকশা করে চলে গেছে আমি কিছুকক্ষণ ঘুরে ভার্সিটিতে গেছি কিছু ক্লাস করে আব্বার দোকানে বসেছি।
আব্বা:- সৌরভ তুই দোকনে বস আমি কিছু মাল ছামান কিনে নিয়ে আসি মার্কেট থেকে।
সৌরভ:- ঠিক আছে। আব্বা চলে গেছে তবে আমি এবার প্রথম বসিনি আমি মাঝে মাঝে প্রায় দোকানে বসতাম আর কোন মাল কোথায় রাখা আছে সেটা খুব ভালো করেই জানি বিকালটা ভালোই কাটছে সন্ধা হওয়ার পর আব্বা এসেছে।
আব্বা:- সৌরভ তুই নিরাকে আনতে যা পরে আবার তোর মায়ের কাছে নালিশ করবে।
সৌরভ:- ঠিক আছে। আমি বেরিয়ে বসে আছি নিরার আসার কোনো নাম নেই আরও কিছুকক্ষণ অপেক্ষা করে নিরার অফিসের সামনে গেলাম তখন চেয়ে দেখি মহা রানী বসে আছে আমাকে দেখেই এগিয়ে এসে বলে।
নিরা:- এত দেরি করলে কেনো?
সৌরভ:- আমি দেরি করেছি মানে তুমি এখানে বসে আছো কেনো? তোমাকে তো বলেছিলাম রিকশা করে চলে যেতে।
নিরা:- এখন থেকে প্রতিদিন তুমি আমার অফিসে এসে নিয়ে যাবে। আমি রিকশা করে যেতে পারবো না।
সৌরভ:- এতদিন তো নিজে নিজে এসেছো আর গেছো এখন যেতে পারবে না কেনো শুনি?
নিরা:- আগে বাইকে উঠে বসি তারপর বলছি বলেই নিরা বাইকের পেছনে উঠে বসেছে আমি বাইকের স্পীড বাড়িয়ে দিয়েছি তখন নিরা আমাকে অনেক শক্ত করে ধরেছে আমি বুঝতে পারছি নিরা ভয় পাচ্ছে তাই স্পীড কমিয়ে দিয়েছি তখনি নিরা বলে। জানতে চাইলে না কেনো এখন একা একা যেতে পারবো না?
সৌরভ:- হ্যা বলো?
নিরা:- কারণ এখন তো আমার বর আছে ওনি থাকতে আমি কেনো একা একা যাবো।
সৌরভ:- দেখো নিরা আমি কিন্তু তোমাকে ভালোবাসি না তোমার মুখ দেখে বেরুলে আমার সারাটা দিন মাটি হয়ে যায়।
নিরা:- আজ তোমার কোনো ক্ষতি হয়েছে?
সৌরভ:- মানে?
নিরা:- মানে আজ সকালে তো আমার সাথেই বেরিয়েছো আজ কি তোমার কোনো ক্ষতি হয়েছে? নিরার কথাটা শুনে একটু চিন্তা করেছি আর মনে মনে ভাবছি সত্যি তো আজ তো কোনো রকম ক্ষতি হয়নি এর কারন কি? তখনি নিরা বলে কি হলো বলো?
সৌরভ:- যা ক্ষতি করার তা তো করেই দিয়েছো এখন একটা ক্ষতি করার বাকী আছে সেটা হলো আমি মরে গেলেই তোমার শান্তি হবে।
নিরা:- আমার আগে তোমার মৃ’ত্যু হবে না আর এত তাঁড়াতাড়ি ম`র`তে চাও কেনো এখনো তো অনেক কিছু দেখোনি।
সৌরভ:- জীবনে যা দেখেছি এতেই যথেষ্ট নতুন করে আর কোনো কিছু দেখার দরকার নেই। বাড়িতে এসেছি এবার কষ্ট করে নামো। নিরা নেমেছে আমি বাইক রেখে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে যাবো তখনি নিরা দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেছে। নিরা এই নিরা তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করোনি? নিরা দরজাটা খুলেছে তখন ওর দিকে তাকিয়ে আছি আর আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
নিরা:- কি মন ভরেছে নাকী আরও কিছু দেখবে?
সৌরভ:- থাক আর কিছু দেখার দরকার নেই। নিরা মুচকি হেসে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে শাওয়ার নিচ্ছে আর সৌরভ এখনো চিন্তা করছে সে কি দেখছে।

কিছুকক্ষণ পর নিরা বেরিয়ে এসেছে তখন দেখে সৌরভ মোবাইলটা হাতে নিয়ে গেইম খেলছে তখনি নিরা গিয়ে আম্মাকে বলে খালামনি আমি একটু আমার অফিস কলিগের গায়ের হুলুদের অনুষ্টানে যাবো কিন্তু সৌরভ রাজি হচ্ছে না তুমি একটু ওকে বলে দিবে?
আম্মা:- কি হারামজাদা তোকে বারণ করেছে তবেরে বলে যাচ্ছে তখনি বলে আচ্ছা নিরা তোকে আমি যা বলেছি তুই কি সেইটা করেছিস?
নিরা:- হ্যা তবে মনে হচ্ছে তোমার আইডিয়াটা কাজে আসবে।
আম্মা:- হ্যা আমারো মনে হচ্ছে। তখনি নিরাকে সাথে নিয়ে আম্মা এসেছে আমি মোবাইলে গেইম খেলতেছি আর হাসতেছি তখনি আম্মা এসে আমার হাত থেকে মোবাইলটা টান দিয়ে নিয়ে গিয়ে বলে সৌরভ নিরা তোকে যেখানে নিয়ে যেতে বলছে সেখানে নিয়ে যা আমি হ্যা না কোনো কিছু শুনতে চাইনা।
সৌরভ:- আম্মা এখন তো অফিস থেকে এসেছে আবার কোথায় যাবে? আর তাছাড়া আমার বাইকে তেল শেষ এখন যেতে পারবো না ওকে বলো রিকশা করে চলে যেতে তখনি আম্মা আমার কান টেনে ধরে বলে।
আম্মা:- নিরা তোর বৌ ও-কে তোর নিয়ে যাওয়া কর্তব্য তুই এখুনি ও-কে নিয়ে যা বলে দিলাম।
সৌরভ:- নিয়ে যাচ্ছি তুমি কানটা ছাড়ো। আম্মা কানটা ছেড়ে আম্মা চলে গেছে আর নিরা হাসতেছে তবে আজ নিরাকে কেমন অন্য রকম লাগছে বাসন্তী কালার শাড়ি মেচিং চুড়ি চুল ছাড়া তখন আমি বলি। নিরা এতো হেসো না পড়ে কিন্তু কান্না করতে হবে এখন বলো কোথায় যাবে? তখনি নিরা গিয়ে একটা শপিং ব্যাগ এনে আমার হাতে দিয়ে বলে।
নিরা:- নাও আগে এই গুলি পড়ে এসো।
সৌরভ:- কেনো আমি এসব পড়বো কেনো?
নিরা:- আমি যা বলছি তাই করো তানা হলে কিন্তু খালামনি তখনি নিরার মুখ চেপে ধরি বলি।
সৌরভ:- যাচ্ছি তো বলেই ও-কে ছেড়ে শপিং ব্যাগটা নিয়ে ওয়াশরুমে গেছি। শপিং ব্যাগ খুলে দেখি নিরার সাথে মেচিং করা পাঞ্জাবি আর সাথে কালো পায়জামা। যাক মন্দ লাগছে না পাঞ্জাবিতে আমিও একদম তৈরি হয়ে বেরিয়েছি তখন নিরা হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
নিরা:- তোমাকে তো অনেক কিউট আর হ্যান্ডসাম লাগছে।
সৌরভ:- কথা কম বলে বলো কোথায় যেতে হবে?
নিরা:- আজ তোমাকে নিয়ে অনেক জায়গা যাবো। তবে প্রথমে আমার কলিগের গায়ের হুলুদে যাবো
সৌরভ:- দেখো আমি বেশি জায়গাতে যেতে পারবো না তোমার অফিস কলিগের গায়ের হুলুদ শেষ হলেই চলে আসবো এই শর্তে যেতে রাজি আছি নিরা শর্ত মেনে রাজি হয়েছে। দুজনে বাইকে বসেছি নিরা লোকেশন দিচ্ছে আমি সেই লোকেশন মত জায়গাতে গেছি।
নিরা:- বাইকটা পার্কিং করে এসো আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি।
সৌরভ:- একটা কথা বলবো?
নিরা:- হ্যা বলো?
সৌরভ:- আমি ভিতরে যাবো না তুমি যাও।
নিরা:- তোমাকে যেতে হবে তানা হলে আমিও যাবো না।
সৌরভ:- তবে যেতে পারি তার জন্য তোমাকে একটা কথা দিতে হবে?
নিরা:- কি কথা?
সৌরভ:- ভেতরে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমি তোমার কি হয় তাহলে তুমি বলবে আমি তোমার কাজিন মানে খালাত ভাই লাগি? নিরা কিছুটা চুপ চাপ থেকে বলে।
নিরা:- ঠিক আছে চলো। তখন আমি বাইক পার্কিং করে এসেছি নিরা আমার হাতটা ধরে ভিতরে ঢুকতে চাচ্ছে তখন আমি হাতটা ছেড়ে আলাদা ভাবে ঢুকেছি। নিরা সবাইকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবার জন্য ওদের সামনে গেছে। আমি তো অনেক খুশি যাক এসে ভালোই হয়ছে এখান থেকে কাওকে পটিয়ে নিবো তখনি নিরা ডাক দিয়ে বলে সৌরভ এদিকে এসো আমি কাছে গেছি অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে এসেছে। সত্যি বিয়ে বাড়িতে সব সুন্দর মেয়েদের দেখা মিলে তখনি নিরা আমার হাতটা ধরে বলে আপনারা সবাই আমার স্বামীর ছবি দেখতে চায়ছিলেন না আজ আমি আপনাদের সবাইকে আমার স্বামীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেছি বলে নিরা আমার বাম হাতটা জড়িয়ে ধরে বলে এইটাই আমার পিচ্ছি বর যার সাথে মাত্র দুই দিন আগেই বিয়েটা হয়ছে ও ভালো কথা ও কিন্তু আমার কাজিন মানে খালাত জামাই। নিরার কথা শুনে আমার মাথায় আসমান ভেংগে পড়ছে এটা তুমি কি করলে নিরা তখনি নিরা বলে।

চলবে…