তোমাকে চিনতে ভুল করেছি পর্ব-০৪

0
282

#তোমাকে চিনতে ভুল করেছি (পর্ব:-০৪)
লিখা:- AL Mohammad Sourav

আমাদের নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে তো তাই আমার হাত ধরতে ও একটু লজ্জা পায় আবার হয়ছে কি সে আমার থেকে বয়সেও ছোট যার কারণে আমার থেকে একটু দূরে দূরে থাকে। সত্যি বলতে ছোট বেলা থেকেই আমার বর একটু বেশি লজ্জা বোধ করে যার কারণে সে এখানেও আসতে চাইনি কিন্তু আমি অনেক জোড় করে নিয়ে এসেছি তাইনা সৌরভ? তখন নিরার কানের কাছে গিয়ে বলি।
সৌরভ:- আজ বাড়িতে চলো এর জন্য তোমাকে মজা দেখাবো।
নিরা:- মজা তো আমি দেখাবো তুমি শুধু দেখবে আর কিছুই করতে পারবে না।
সৌরভ:- নিজেকে বেশি চালাক মনে করছো করো তবে এটা ভালো লক্ষন নয়। তখনি একজন বলে উঠে।
কি হলো মিস নিরা দুজনে কি ফুসুরফাসুর করছেন?
নিরা:- ঐ তেমন কিছু না আমাকে নাকী আজ একটু বেশি সুন্দর লাগছে সৌরভ সেটা বলছে। তখন সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে আমার নিরার এম কথাবার্তা খুব বিরক্তি লাগছে তাও মুখ বুঝে দাঁড়িয়ে আছি। পরিচয় পর্ব শেষ হয়েছে সবাই কনের কাছে গেছে তবে নিরা একটা মুহুর্তের জন্য আমার হাতটা ছাড়ছে না এটা আমার কাছে একবার ভালো লাগছে তবে যখনি সুন্দর সুন্দর মেয়ে গুলি দেখছি তখনি মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে অনুষ্টান শেষ আমরা খাওয়া দাওয়া করে দুজনে চলে আসছি বাড়িতে। নিরা অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে আমিও অনেক ক্লান্ত রাতে ঘরে এসে দুজনে আজ এক সাথে শুয়ে পড়েছি ঝগড়ার কোনো এনার্জি শরীরে নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নিরা রুমে নেই আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসেছি তখনি আম্মা বলে।
আম্মা:- আজ শুক্রবার এত তাঁড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়লি যে?
সৌরভ:- আজ শুক্রবার?
আম্মা:- হ্যা শুক্রবার তবে উঠে যখন পড়েছিস তাহলে গিয়ে কিছু বাজার করে নিয়ে আয়।
সৌরভ:- আমি বাজার করতে যেতে পারবো না তুমি আব্বাকে বলো এই বলে চলে আসতেছি তখনি আম্মা বলে।
আম্মা:- বাজার করা না শিখলে বৌয়ের ওনাপেনা আর বকা খেতে হবে এর থেকে ভালো এখন বাজার করাটা শিখ।
সৌরভ:- আমাকে বকা দিবে আম্মা তুমি কি যে বলো না আমার পা টিপে অবসর পাবে না আবার মারবে।
আম্মা:- সেটা সময় বলে দিবে এমন কথা তোর বাবাও বলেছিলো কিন্তু এখন তোর বাবা আমার মুখের উপর দিয়ে কথা বলার সাহোস পায়না। কথা না বাড়িয়ে যা বাজার থেকে ভালো দেখে মাছ আর কিছু তৈ-তরকারি কিনে নিয়ে আয়।
সৌরভ:- যদি খারাপ হয় আমাকে কিছু বলতে পারবে না এখন টাকা দাও। আম্মা দুই হাজার টাকা দিয়েছে আমি বাজারে চলে গেলাম আজ মাথায় সয়তান চেপে বসেছে তখন ইচ্ছে করে সব গুড়া মাছ কিনেছি আর তাজা শিং মাছ। মহা রানী আজ তোমার জন্য আমাকে বাজারে আসতে হয়ছে আমি জানি তুমি আম্মাকে বলেছো আমাকে বাজার করতে আজ মাছ কুটতে কুটতে তোমার কোমড় ব্যথা বানিয়ে ফেলবো সাথে চুনোপুঁটি মাছ আহা কি আনন্দ আকাঁশে বাতাশে এসব বলতে বলতে বাড়িতে এসেই অনেক হাসি মুখে ব্যাগটা নিয়ে ঘরে ঢুকতেই নিরা এসে আমার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়েছে। আমি কিছু না বলে ঘরে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে আরামছে গান শুনতেছি কিছুকক্ষণ পর আমার দরজাতে জোড়ে জোড়ে ধাক্কা আমি একটু ইয়ার ফোন খুলেছি তখনি আম্মা বলে।
আম্মা:- সৌরভ তুই গুড়া মাছ আনলি কেনো? এই গুলা কে কুটবে এখন? আমি আর কোনো শুনতে পায়নি কানে আবার ইয়ারফোন।

দুপুরবেলা জুম্মার নামায পড়তে গেলাম নামায পড়ে এসে দেখি নিরা সবে সাত্র ফ্রেশ হতে যাচ্ছে আর আমার দিকে রাগি চোখে তাকাচ্ছে। মনে মনে বলি লাভ নেই আমাকে বাজারে পাঠানোর প্রতিশোধ আর বলবে আম্মাকে বাজারে পাঠাতে? নিরা চুপচাপ ওয়াশরুমে গেছে আমি শুয়ে আছি কিছুকক্ষণ পর নিরা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে তখনি রুবা এসে বলে।
রুবা:- ভাইয়া আপু তোদের আব্বা ডাকছে আজ সবাই এক সাথে খাবে।
সৌরভ:- হ্যা আসতেছি। নিরা আমার আগেই চলে গেছে আমি কিছুটা পড়ে গেছি। সবাই এক সাথে খাবার খেতে বসেছি তবে মজার কথা হলো আম্মা নিরা দুজনে আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমি মিট মিট করে হাসতেছি তখনি আম্মা বলে।
আম্মা:- সৌরভ বাজারে কত টাকা খরচ হয়ছে?
সৌরভ:- যা দিয়েছো তার থেকে দুইশত টাকা বেশি খরচ হয়ছে?
আম্মা:- পচা মাছ কিনতে এত টাকা খরচ হয়ছে সত্যি করে বল কত টাকা চুড়ি করেছিস?
সৌরভ:- আম্মা আমি কি ছোট যে বাজারের টাকা থেকে চুড়ি করবো? সব গুড়া মাছ কিনতে টাকা শেষ পড়ে শিং মাছ দুই কেজি কত টাকা দাম একবার চিন্তা করে দেখো?
আব্বা:- খেতে বসে তোমরা এমন শুরু করেছো কেনো? আর তাছাড়া ও বেকার বাজারে পাঠালে একটু আট্টু টাকা মারবে এইটা চিন্তা করে ওকে বাজারে পাঠাবে তখনি নিরা হেসে দিয়েছে সবাই নিরার হাসিটার দিকে তাকিয়ে আছে এত জোড়ে নিরা সহজে হাসে না কিন্তু আজ হেসেছে সাথে বাবা মা রুবাও হেসেছে আর কেউ কোনো কথা বলেনি সবাই সবার মত করে খাবার খেয়ে চলে গেছে। বিকালে নিরা আমার কাছে এসে বলে।
নিরা:- তুমি কি চাকরি করবে?
সৌরভ:- নাহ আমি বাবার দোকানে বসবো অন্যের কথা আমার সহ্য হয়না আর তোমার রেফারেন্স চাকরি সেটা তো জীবনেও করবো না।
নিরা:- সৌরভ সবকিছু ভুলে গেছি আমি জানি তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না কিন্তু সত্যি তুমি তখনি নিরা থেমে যায়।
সৌরভ:- থামলে কেনো?
নিরা:- থাক বলেও কোনো লাভ হবে না আমি ঘুমাবো বলেই খাটের উপরে শুয়েছে আমি কিছুই বলিনি।

দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন চলে গেছে নিরার সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি তবে একটা জিনিস লক্ষ করছি সেটা হচ্ছে এখন আমার তেমন কোনো সমস্যা হয়না নিরাকে দেখে গেলে আমার আরও ভালো হয় তবে হঠাত করে এমন পরিবর্তন এর মানে খোঁজে পাচ্ছিনা তার কারণে একদিন আমি নিরাকে দেখে ইচ্ছে করেই একটা বড় কম্পানিতে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেছি আর সেই চাকরিটা আমার হয়ে গেছে এতে করে আমি আরও অবাক হলাম। বাড়িতে এসে আম্মাকে সবটা বলার পর আম্মা আমাকে বলে তুই নিরাকে আপন করে এখনো নিতে পারিস নাই আর নিরা তোকে আপন করে নিয়েছে এই কথাটার মানে আমি কিছুই বুঝিনি তবে চাকরিটা আর করিনি কারণ বাবা অসুস্থ তাই দোকানে নিয়মিত সময় দিতে পারে না আমি এখন দোকানে সময় দেয়। নিরাও ওর মত করে আছে আমি তেমন ঝগড়া করিনা তবে ওর থেকে দূরে থাকি হঠাৎ একদিন আম্মা ডেকে বলে।
আম্মা:- সৌরভ নিরাকে নিয়ে ওদের বাড়ি থেকে ঘুরে আয়। আর শুন কোনো রকম কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি বলেছি তুই যাবি এই হলো নিরার বাড়ির ঠিকানা নে ধর আমার হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলে।
সৌরভ:- এতদিন পর ঐখানে কেনো যাবে?
আম্মা:- তুই গেলে সব বুঝতে পারবি। আমি আর কিছু বলিনি নিরাকে সাথে নিয়ে রওনা দিলাম প্রায় তিন ঘন্টা পর ওদের বাড়ির কাছে এসেছি। তাও অনেক কষ্ট করে কতজনকে যে জিজ্ঞেস করেছি ঠিক বলতে পারবো না। নিরাদের বাড়ির সামনে আসতে দেখি বিশাল বড় এক গেইট সেখানে লিখা জাবেদ মঞ্জিলে স্বাগতম। নিরাকে নিয় ভেতরে যাচ্ছি আর অবাক হচ্ছি এক এক করে বাড়ির ভেতরে সবাই এসে হাজির হয়েছে। কিন্তু আরও অবাক হচ্ছি যখন দেখেছি নিরাকে সবাই এসে জিজ্ঞেস করছে এটা তোমার বর ওর সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছে। তখনি নিরার কানের কাছে গিয়ে বলি।
সৌরভ:- নিরা আমার জানা মতে তুমি কখনো এই বাড়িতে আসোনি তাহলে সবাই তোমাকে চিনে কি করে?
নিরা:- সেটা ঠিক আমিও বলতে পারবো না তখনি একজন বয়স লোক এসেছে আর সবাই কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে আমি তো অবাক ওনাকে দেখে এত ভয় পাওয়ার কি আছে তখনি ওনি যা বলেছে তা শুনে আমি আরও অবাক হয়ে গেছি।

চলবে…