তোমাকে চিনতে ভুল করেছি পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
591

#তোমাকে চিনতে ভুল করেছি (পর্ব:-৫-শেষ)
লিখা:- AL Mohammad Sourav

ছোট বেলা তোমাকে আমরা অপাইয়া বলে হাসপাতালে রেখে চলে আসি আর আজ তোমাকে ভাগ্যবতি বলছি। সেদিনের জন্য আমরা সবাই তোমার কাছে লজ্জিত আমাকে ক্ষমা করে দিও। ওনি হঠাৎ করে নিরার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে কেনো? আর আজ হঠাৎ করে নিরাকে ভাগ্যবতি বলছে কেনো? এসব শুনে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তখনি ওনি আমাদের কাছে এসেছে আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে আমি আজ সবার সামনে ওকে নিজের নাতনী হিসাবে মেনে নিচ্ছি আয় নিরা আমার সাথে আয় বলে ওনি নিরাকে সাথে নিয়ে যাচ্ছে তখনি আমি বলি।
সৌরভ:- আপনি কে আর নিরাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? তখনি লোকটি বলে
আমি নিরার দাদা আর নিরাকে ওর যোগ্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছি তুমি সৌরভ নিরার স্বামী তুমিও এসো আমার সাথে। আমি কোনো কথা না বলে নিরার সাথে গেলাম সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতেই বড় একটা বিশাল রুমে আমাদের দুজনকে নিয়ে গেছে। রুমটা একদম সাজানো গুচানো আর একটা বড় ছবি টানানো ছবিটা দেখে চিনতে পারছি নিরার বাবার ছবি সাথে ওর মা আছে।
দাদা:- নিরা এই নাও তোমার মায়ের সব গহনা ঘাটি আর এই হচ্ছে দলিল সবকিছু এখন তোর নামে আমি কোনো কিছু অনিয়ম করিনি তোর বাবা যতটুকু সম্পত্তির ভাগ পেতো সবকিছু তোর নামে লিখে দিয়েছি এই নে সব কাগজ পত্র। নিরা হাত বাড়িয়ে নিতে যাবে তখনি দাদা বলে।
দাদা:- হ্যা সবকিছু তোকে দিবো আর আমরা তোকে মেনে নিবো তবে একটা শর্ত আছে সেটা হচ্ছে নিরবকে তোর বিয়ে করতে হবে আর এই ছেলেটাকে ডির্ভোস দিতে হবে। আমি তোর খালামনির সাথে কথা বলেছি ওনি বলেছে যদি তুই রাজি থাকিস তাহলে এতে ওনার কোনো আপত্তি নেই। নিরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি মনে মনে খুশি হচ্ছি তার মানে আম্মা এই জন্য আমাকে সাথে পাঠিয়েছে তখনি নিরা বলে।
নিরা:- এই জন্য আমাকে এত ফোন করে রিকুয়েস্ট করে নিয়ে এসেছো? আমার কোনো কিছুর দরকার নেই আমি সৌরভকে ছাড়তে পারবো না বলে আমার হাতটা ধরে বলে সৌরভ তুমি চলো।
দাদা:- নিরা আমি বুঝতে পারছি তুই তোর বাবার মত হয়েছিস তবে সত্যি আমি তোকে পরীক্ষা করছিলাম যে সৌরভকে তুই সত্যি মন থেকে মেনে নিয়েছিস কি না হ্যা তুই মন থেকে মেনে নিয়েছিস এবার নে ধর এখানে দুইটা সাইন করে দিলেই সবকিছু তোর তখনি আমি বলি।
সৌরভ:- নিরা তুমি এসব কিছু ধরবে না! আর সাইন করবি না যদি তুমি এসব কিছু ধরো আর সাইন করো তাহলে আমার ভালোবাসা কোনো দিন পাবে না।
নিরা:- সৌরভ কি বলছো?
দাদা:- নাত জামাই আমার বয়স হয়ছে আমি মানছি নিরার সাথে আমি অন্যায় করেছি কিন্তু এখন নিরার এসব কিছু পাপ্য। আমি সত্যি নিরাকে পরীক্ষা করে দেখছিলাম আর তোমার মায়ের সাথে আমার কোনো রকম কথাবার্তা হয়নি।
সৌরভ:- নিরাকে আমি বিয়ে করেছি আমার মায়ের কথা শুনে তবে আজ আমি নিরাকে কারো কথা শুনে হারাতে চাই না। নিরা তুমি এসো আমার সাথে বলে ওর হাত ধরে নিয়ে আসতেছি তখনি বাড়ির সবাই এসে জড়ো হয়েছে তখন নিরা বলে।
নিরা:- সৌরভ এমন ভাবে নিয়ে যাচ্ছো কেনো?
সৌরভ:- সেটা তোমাকে পড়ে বলবো তবে তুমি কোথাও সাইন করবে না ঠিক তখনি ঐ ছেলেটাকে যে ছেলেটা নিরার হাত ধরেছিলো রেস্টুরেন্টের ভিতরে। তখনি নিরা বলে
নিরা:- ভাইয়া এসব কি আর তুমি তো বলেছিলে আমাকে ওরা ওদের বাড়ীর মেয়ে হিসাবে মেনে নিবে?
নিরব:- নিরা তুই কোনো চিন্তা করিস না আসলে দাদা তোদের সাথে মজা করেছে। চল আমার সাথে বলে নিরার হাতটা ধরতে ছিলো তখনি আমি নিরাকে টান দিয়ে আমার কাছে নিয়ে যায়। নিরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তখন আমি বলি।
সৌরভ:- নিরা তুমি এখুনি আমার সাথে যাবে দরকার নেই কারো পরিচয় আমি তোমার সব আজ থেকে আমি তোমাকে তোমার মত করে ভালোবাসবো তুমি যা বলবে আমি তাই করবো চলো আমার সাথে তখনি নিরা আমাকে জড়িয়ে ধরে আর সাথে ওরা সবাই হাসা হাসি শুরু করে।
দাদা:- যাক তাহলে আমাদের আয়ডিয়া কাজে লাগছে দেখলে তো নাতনী সে তোমাকে ভালোবাসে তখন এক এক করে নিরার এক চাচা আর জেঠু আর ওনাদের পরিবারের সবাই এসেছে। তখনি নিরার বাড়ির সবার সম্পর্কে ওর দাদা বলতে লাগলো নিরব নিরার জেঠুর ছেলে ও বিবাহিত ও-র একটা রাজকন্যা আছে। তোমার মা ফোন করে বলেছে তুমি আসা মাত্র আমরা সবাই জেনো নিরার সাথে এমনটা করি।
নিরা:- দাদা ধন্যবাদ আর সৌরভ ওনাদের আমি কিছুদিন আগেই চিনতে পারি ওনারা সবাই একদিন তোমাদের বাড়িতে গেছিলো আর তখন সবাইকে দেখেছি। তুমি তো বেশির ভাগ সময় বাহিরে থাকতে তাই তুমি এসব কিছু জানতে পারোনি।
দাদা:- আচ্ছা মজা অনেক হয়ছে এবার আয় খেতে বসবি। আর নিরা ওকে নিয়ে ভিতরে আয়। নিরা আমার হাতটা ধরেছে তখন একজন এসে আমাদের একটা ঘরে নিয়ে গেছে আর বলে আমরা এই ঘরে থাকবো। নিরা আমার দিকে তাকিয়ে হাসতেছে আমি নিরার হাসি দেখে তাকিয়ে আছি তখনি মাথায় ভূত চেপে বসেছে নিরাকে জড়িয়ে ধরে সোজা খেটের উপরে পড়েছি।
নিরা:- সৌরভ কি করছো তুমি?
সৌরভ:- চুপ কোনো কথা বলবে না আমাকে বোকা বানাতে চেয়েছো তাইনা আজ তোমাকে বলেই ওর ঘারে মুখ গুজে দিলাম। নিরা এখনো হাসতেছে আর বলে।
নিরা:- আমার শুড়শুড়ি লাগছে আর দরজাটা খুলা আছে। নিরার কোনো কথা না শুনে ও-কে একের পর এক চুমু দিতেছি এবার নিরার ঠোঁটে আমি ঠোঁট গুজে দিলাম নিরা আমার কাজে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এভাবে কিছুকক্ষণ যাবার পর ওকে ছেড়ে দিয়েছি।
সৌরভ:- যাও এবারের মত ক্ষমা করে দিলাম। নিরা কিছু না বলে চলে গেছে আমিও ওর পিছু পিছু গেছি দুজনে খেতে বসেছি সবাই আম্মার অনেক প্রশংসা করছে।
নিরার জেঠু:- আচ্ছা আমরা তো শুনেছি নিরার সাথে তোমার কোনো মিল ছিলো না তাহলে বিয়ে করেছো কেনো?
সৌরভ:- আম্মার জন্য তবে বিয়ের পর থেকে আমি যেই কাজে যাই সেই কাজে সফল হয়।
দাদা:- এই বুদ্ধিটা আমি দিয়েছি তোমার মাকে আর তোমার মা সেইটা করেছে তবে তোমার বাবা রাজি ছিলো না এখন সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে এতেই আমি খুশি। আর নিরা তোর বাবার সম্পত্তি গুলা আমি তোর নামে দিয়েছি তুই চাইলে সেই গুলি বিক্রি করে টাকা নিয়ে যেতে পারবি। নিরা হ্যা না কিছুই বলেনি তারপর সবাই যার যার মত খাবার খেয়ে উঠে গেছে আমরা খাওয়া দাওয়া করে কিছুটা রেস্ট নিয়ে বিকালে এলাকা ঘুরতে বেরুলাম। সবাই আমাদের দেখে কি যেনো মনে মনে বলে। নিরা আমার বাম হাতটা জড়িয়ে ধরে রাখছে এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে নিরাকে ভালোসাটা আরও আগে দরকার ছিলো। রাতটা থেকে পরের দিন সকালে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিরাকে নিয়ে বাড়িতে এসেছে।
আম্মা:- কিরে শ্বশুড় বাড়ি থেকে এত তাঁড়াতাড়ি চলে এসেছিস কেনো?
সৌরভ:- আমার ভালো লাগে না আর তাছাড়া শ্বশুর বাড়িতে শ্বশুর শ্বাশুড়ি না থাকলে তেমন একটা শ্বশুর বাড়ি ফিল হয় না তাই চলে এসেছি তবে নিরার দাদা তো নিরার নামে সব সম্পত্তি দিয়ে দিছে।
নিরা:- আসলে খালামনি আমি চলে এসেছি আগামী কাল আমার অফিসে যেতে হবে তাই আমি নিজেই চলে এসেছি।
আম্মা:- যাক ভালো করেছিস।
সৌরভ:- আম্মা তুমি সব লুকিয়ে রেখেছো আমার কাছ থেকে তোমরা সবাই মিলে আমাকে বোকা বানালে?
আম্মা:- সত্যি বলতে নিরা তোকে অনেক পছন্দ করে সেটা যখন রুবা আমাকে বলেছে তখন আমি আর নিরার দাদা সেটা আলোচনা করি তখন ওনি সম্মতি দেয়। যতই হোক নিরার দাদার সাথে তো বিয়েটা আলোচনা করা দরকার ছিলো তাই আরকি।
সৌরভ:- কি নিরা আমাকে আগে থেকে পছন্দ করে? তখনি নিরা দৌড়ে চলে গেছে আম্মা হেসে দিয়েছে। আমি লজ্জা পেয়ে ঘরে চলে এসেছি নিরা ওয়াশরুমে যাচ্ছে তখনি আমি ওর হাতটা ধরে বলি আমাকে তুমি আগে থেকেই ভালোবাসতে?
নিরা:- হ্যা কিন্তু বলতে সাহোস হয়নি কারণ আমার মুখ দেখে কোথাও গেলে তো তোমার অমঙ্গল হয় তাই।
সৌরভ:- তাহলে এখন হয়না কেনো?
নিরা:- সেটা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না তবে আমার মনে হয় তুমি আমাকে ভালোবাসো তাই তখনি নিরাকে কোলে তোলে নেয়। সৌরভ কি করছো তুমি ছাড়ো পড়ে যাবো?
সৌরভ:- আর ছাড়ছি না বলে নিরাকে নিয়ে সোজা খাটের উপর আর আমাদের দুজনের মধ্যে ভালোবাসা রোমান্স সবকিছু হয়েছে।

আস্তে আস্তে আমি নিরাকে অনেক বেশি ভালোবাসতে লাগলাম আর নিরাও তবে এখন আর নিরাকে কেউ অপাইয়া অলক্ষী নামে কেউ ডাকে না কারণ নিরাকে দেখে কেউ গেলে সত্যি কিছু হয়না। এদিকে রুবার বিয়ে হয়ছে ছেলের নিজের ব্যবসা আছে বাবা এখন কম বসে দোকানে আর নিরা চাকরিটা করতেছে কারণ চাকরিটা খুব ভালো আমি বারণ করছি তবে নিরা বলেছে এক বছর করে ছেড়ে দিবে। নিরাও আমার প্রতি খুব যত্নশীল আর মা তো নিরা বলতে অজ্ঞান আমি নিরাকে ভয়ে কিছু বলতেও পারি না।

দেখতে দেখতে নিরা আজ মা হতে যাচ্ছে আমি অনেক ভয়ে আছি। ডাক্তার এসে যখন বলেছে আপনার কন্যা শন্তান হয়ছে আমি অনেক খুশি হয়েছি তবে সাথে নিরার কথা জিজ্ঞেস করেছি বলেছে নিরা খুব ভালো আছে। বাবা মা রুবা অনেক খুশি হয়েছে নির যতদিন ছিলে হাসপাতালে আমিও ততদিন ছিলাম এতে করে নিরা খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে গেছে। নিরার প্রতি আমার ভালোবাসা বেরেই চলছে আর নিরাও আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। আম্মা আব্বা অনেক খুশি আর আমাদের আশে পাশের মানুষ গুলি নিরাকে কোনো খারাপ কথা বলে না আমিও নিরাকে নিয়ে খুব সুখে আছি।

সমাপ্তি।