তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-০৩

0
1037

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part :3
#Mishmi_muntaha_moon

আরিশ ভাইয়া চোখ খুলার সাথে সাথে এক হাত দূরে গিয়ে দারালাম।ভাইয়া শুয়া থেকে উঠে বসে আমার দিকে পূর্ন দৃষ্টিতে তাকায়।

–আসতে এতো দেরি হলো কেনো?

–ভুলে গিয়েছিলাম।

আরিশ ভাইয়া আবার শুয়ে বলল

–আচ্ছা মাফ করলাম।এখন আমার মাথাটা টিপে দে।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে আবারও রাগ উঠে যায়। শক্ত গলায় বলি

–আমি কেনো টিপে দেবো।আমি পারবো না।

আমি যেতে নিবো সাথে সাথে আরিশ ভাইয়া আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে উনার কাছে টেনে নেয়।
উনার এমন কাজে আমার জান যায় যায় অবস্থা কোনো ছেলের এতো কাছে কখনো হই নি।তাই আরও অস্থিরতা।আরিশ ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বলে

–পারবি না?

আমি যেমন তেমন করে নিজেকে সামলিয়ে বললাম

–হুম পারবো।ছারুন এবার।

আমার কথা শুনে বাকা হেসে আমার হাত টা ছেড়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরল ।আমারও আর কি করার বলে যখন ফেলেছি এখন তো টিপে দিতে হবেই।বিরক্ত মুখ নিয়ে আরিশ ভাইয়ার মাথা টিপতে লাগলাম ইচ্ছে তো করছে গলাটাও সাথে টিপে দেই।
আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি চোখ জোরা বন্ধ করে আছে।

সকালে ঘুম ভাংতেই দেখি আরিশ ভাইয়ার রুমের বিছানায় ঘুমিয়ে আছি।মাথার উপর ফেন ঘুরছে আর গায়ে কাথা দেওয়া।কিন্তু আমি তো ঘুমাই নি ভাইয়ার মাথা টিপছিলাম উনি কি আমায় শুইয়ে দিলো।
এগুলো ভেবে চোখ মুখ কুচকে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে আরিশ ভাইয়াকে খুজতে লাগলাম।কোথাও নেই। আরিশ ভাইয়ার বিছানা থেকে উঠে বাহিরে যেতে নিবো তখনই টেবিলে থাকা ভাইয়ার মোবাইলের দিকে চোখ গেলো। স্ক্রিনে বৃষ্টি নামের একটা মেয়ের মেসেজ জ্বলে আছে। দেখতে না চাইতে ও চোখ চলে গেলো

-আমার মেসেজের রিপলাই কেনো দিচ্ছো না আরিশ।আমার সাথে কি কথা বলাও নিষেধ আছে নাকি তোমার প্রিয়তমার কাছ থেকে।

মেসেজটা পরে ভ্রু কুচকে গেলো। আরিশ ভাইয়া রিপলাই দিচ্ছে না তারপর ও কেনো মেসেজ করে এই মেয়ে।যাই হোক আমার কি। আমি রুমে থেকে বের হয়ে আমার রুমে চলে গেলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।
নিচে গিয়ে দেখি আরিশ ভাইয়া ডাইনিং টেবিলে বসে চুপ করে খাবার গিলছে।আন্টিও খাবার খাচ্ছে আংকেল নেই বাড়িতে কোথাও গেছে হয়তো।আমি আন্টির কাছে গিয়ে বললাম

–আন্টি আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।

আন্টি আমার কথা শুনে আমার হাত ধরে বলল

–কেনো এখন চলে যাবি কেনো?থাক আজ।

–না আন্টি আমি আজই বাসায় যাবো।

আমার কথা শুনে আন্টি ভ্রু কুচকে বলল

–আচ্ছা কিন্তু এখন না খেয়ে যেতে দেবো না আমি, বস আমার পাশে।

আন্টির স্বভাব একদম ভালো করে জানা আছে আমার উনি না খেয়ে আমাকে যেতে একদমি দেবে না।তাই আন্টির পাশের চেয়ারে বসলাম। আন্টি ব্রেকফাস্ট দিতেই আমি একটু খেয়ে উঠে পরলাম।তারপর ইনোসেন্ট মুখ করে আন্টিকে বললাম

–আন্টি এখন আমি চলে যাবো প্লিজ।

আন্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

–আচ্ছা ঠিক আছে।আরিশ তুই অফিসে যাওয়ার সময় যাওয়ার সময় জিনাত কে বাড়িতে রেখে যাস।

আরিশ ভাইয়া আন্টির প্রতিউত্তরে কিছু না বলে খাবার খেতে লাগল যেনো আন্টির কথা কানেই ঢুকেনি।আরিশ ভাইয়ার এমন আচরণে একটু ইনসাল্টিং ফিল হলো। আমি মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে আন্টিকে বললাম

–থাক আন্টি আমি একাই যেতে পারবো।

–চুপ আর একটাও কথা না।আমি যা বলেছি তাই হবে।

আমি কিছু বললাম না।আরিশ ভাইয়ার খাবার শেষ হওয়া পর্যন্ত উনার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। আরিশ ভাইয়া আস্তে ধীরে খাবার শেষ করে উনার রুম থেকে মোবাইল আর গাড়ির চাবি নিয়ে কিছু না বলেই বাহিরে চলে গেলো। উনাকে কিছু না বলে বাহিরে চলে যেতে দেখেয়ামি আন্টির দিকে তাকালাম।আমি তাকাতেই আন্টি বলল

–যা ও তোকে বাসায় দিয়ে আসবে।

আমি আন্টির কথার উত্তরে কিছু না বলে বাহিরে গিয়ে আরিশ ভাইয়ার গাড়িকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিতেই ভাইয়া গাড়ির গ্লাস নামিয়ে বলল

–তোকে কি কোলে করে গাড়িতে বসাতে হবে?

ভাইয়ার কথা শুনে মেজাজ টা আবারও নষ্ট হয়ে গেলো কিন্তু মুখের উপর কিছু বললাম না।চুপ করে আরিশ ভাইয়ার পাশের সিটে বসে পরলাম।ভাইয়া সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।আমার ওই বৃষ্টি নামের মেয়েটার মেসেজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করছে অনেক কিন্তু উনার মুখ দেখে মুড গেস করা যাচ্ছে না তাই কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।

আমাদের বাড়িতে আসতেই আমি গাড়ি থেকে নেমে তারাতারি করে বাড়িতে ঢুকে গেলাম। মেইন গেট দিয়ে যাওয়ার সময় পিছে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।উনার এই চাহনি দেখে কেমন কেমন লাগল।আমি নজর ফিরিয়ে তারাতারি ঘরে ঢুকে গেলাম।

আহ,,,বাড়িতে এসে খুব শান্তি লাগছে।একটা কথা আছে না নিজের বাড়ির মতো শান্তি কোথাও নেই।
আমি বাড়িতে এসে আমার রুমে গেলাম। আপু বারান্দা থেকে এসে বিছানায় বসে।আমাকে দেখে ব্রু নাচিয়ে বলল

–কিরে আরিশ ভাইয়ার সাথে আসলি?

আমি ব্যাগ টেবিলে রেখে পানি খেয়ে বললাম

–হুম আরিশ ভাইয়া দিয়ে গেছে।

–ও,,।

আপুর কথার টোন শুনে ব্রু কুচকে কিছু বলতে নিতেও চুপ হয়ে গেলাম।একটু বিশ্রাম নিতে নিবো তখনই আম্মু এসে বকতে লাগল

–এতোদিন তো বেরিয়ে এলি এখন সারাদিন পরবি।পরা লেখার ব্যাপারে তো কোনোই চিন্তা নেই।কি করবি তুই ভবিষ্যতে?

আম্মুর কথা শুনে অনেক বিরক্ত লা্গছে।সারাটা দিন বকতেই থাকে আমাকে।আম্মুকে থামিয়ে দিয়ে বিরক্ত নিয়ে বললাম

–তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না আজ এইটা একদম কনফার্ম হয়ে গেলো। আমি আসলাম মাত্র একটু জিজ্ঞাস করবে সকালে ব্রেকফাস্ট করেছি কি না?কিন্তু নাহ তুমি আমাকে সোজা বকাবকি শুরু করলা।

আমি বলে ঠোঁট উল্টে বসে রইলাম। আম্মু ও আমার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থেকে চলে গেলো তার কিছুক্ষন পর আবার এসে বলতে লাগল

–তিনদিন স্যারের পরা মিস গিয়েছে আমি ফোন করে স্যারকে আজই আসতে বলেছি।বিকেলে পরাতে আসবে কোনো ভনিতা শুনতে চাই না।

আম্মু উনার কথা শেষ করে চলে গেলো। আমি মুখ হা করে তাকিয়ে আছি। একটু আগে আম্মু আমার কথা শুনে চলে যাওয়াতে ভেবেছিলাম আম্মু হয়তো আমার কথায় ইফেক্টেড হয়ে চলে গেছে কিন্তু এখন দেখি আম্মু স্যারকে ফোন করতে গিয়েছিলো। কি আর করার ভেবেছিলাম আজ আর পরতে হবে না কিন্তু আমার আম্মু থাকতে এইটা কখনো সম্ভব না।ধুর বিকেলে আসলেই ভালো হতো।
মন খারাপ করে পড়ার টেবিল থেকে বই নিয়ে পরতে বসলাম।

বিকেল সাড়ে ৪ টা বাজে।বই খাতা নিয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছি।৪ টা বাজে আসার কথা ছিলো স্যারের এখনো আসে নি।গালে হাত দিয়ে বসে আছি। কলিং বেলের আওয়াজে ছুটে বাহিরে গিয়ে দরজা খুললাম। আরিশ ভাইয়াকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুড টাই চেঞ্জ হয়ে গেলো।
আরিশ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলো। আম্মু আরিশ ভাইয়াকে দেখে খুশিতে আত্নহারা হয়ে উনাকে সোফায় বসিয়ে রান্নাঘরে গেলো। চা নাস্তা বানাতে।আমি দরজা বন্ধ করে ধীর পায়ে রুমে যেতে নিতেই আবার বেল বেজে উঠলো।আমি আবারও ধীর পায়ে দরজা খুললাম স্যার এসেছে।স্যার কে দেখে সালাম দিয়ে উনাকে রুমে নিয়ে গেলাম।
পড়ার টেবিল থেকে বাহিরে তাকালে সরাসরি সোফা দেখা যায়।চেয়ারে বসে বাহিরে তাকাতেই দেখি আরিশ ভাইয়া চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি উনার দিক থেকে নজর সরিয়ে স্যারের কথায় মনোযোগ দিলাম।

১ ঘন্টা পরিয়ে স্যার বাড়ির পড়া বুঝিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো আমিও উনার হাসির বিপরীতে হাসলাম।স্যার যাওয়ার আগে আমাকে একটা ডেইরি মিল্ক দিলো। আমি নিতেই স্যার চলে গেলো। স্যার যেতেই আরিশ ভাইয়াও আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
স্যারের এতো লেকচার শুনে অনেক ক্লান্ত হয়ে পরেছি তাই এক কাপ চা বানিয়ে ছাদে চলে গেলাম।
চা খেয়ে কিছুক্ষন হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতেই আম্মুর আগমণ ঘটলো। আম্মু কে রাগী অবস্থায় দেখে আমি কান থেকে হেডফোন খুলে আম্মুর দিকে তাকালাম

–কিছু বলবে?

আমার কথা শুনে আম্মু আরেকগুন বেশি রেগে বলল

–তুই স্যারের সাথে কি বেয়াদবি করেছিস?

আম্মুর কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমি আবার স্যারকে কি করেছি সব দিন থেকে আজকে আরও ভদ্র ভাবে পরেছি তাহলে আম্মু এইগুলো কি বলছে।আমি অবাক হয়ে বললাম

–আমি কেনো বেয়াদবি করবো।আর তুমি বা এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাস করছো কেনো স্যার বিচার দিয়েছে?

আমার কথা শুনে আম্মু বলল

–একদম চুপ তুই কিছু না করলে এম্নেতেই স্যার তোকে পড়াতে বারণ করে দিবে। আমি লাস্ট বার বলছি বেয়াদবি কম কর নাহলে কিন্তু অনেক খারাপ হবে

আম্মু উনার কথা বলে ছাদ থেকে নেমে চলে গেলো। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। স্যার কেনো আমাকে পড়াতে বারণ করবে আমি তো সুন্দর ভাবেই পরলাম।আজব তো আম্মুও আমাকে কিছু বলার সুযোগ ও দিলো না।

চলবে,,,