তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-০৪

0
961

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:4
#Mishmi_muntaha_moon

রুমে বসে আছি।আম্মু তো মুখ টাকে একদম বাংলার পাঁচ করে রেখেছে।একটু কথা ও বলা যাচ্ছে না রেগে ফায়ার হয়ে আছে।তাই সামনে যাচ্ছি না একটু আগে আব্বু আসার পর আব্বুর সাথেও কিছুক্ষন আমাকে নয়ে চিল্লাচিল্লি করেছে।আব্বু আম্মুকে বুঝিয়ে শান্ত করায় এখন একটু শান্ত হয়েছে।
আপু বাহিরে গেছে নাহিদ ভাইয়ার সাথে নাহিদ ভাইয়া আমাকেও সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আমার মাতাজি সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে।আমি মোবাইল নিয়ে মেসেঞ্জারে ঢুকলাম। আমার মেসেঞ্জারে অপরিচিত কারো সাথে ফ্রেন্ড নেই।সব ফেমিলি শুধু নাহিদ ভাইয়া কিন্তু কয়েকদিন পরে উনি ও ফেমিলি হয়ে যাবে আর আরেকটা ছেলে আছে আমাদের ক্লাসের নাম রাইয়ান। আমাকে এক্টিভ দেখে মেসেজ দিলো।

–হাই জিনাত।কেমন আছো?

মেসেজ টা সিন করে রিপলাই দিলাম

–হুম ভালো আছি।

আমি মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথে সিন করে আবার মেসেজ দিলো আমায়

–কি করছো?তোমাকে আজ বিকেলে ছাদে দেখলাম। খুব সুন্দর লাগছিলো।

সিন না করে নোটিফিকেশনে মেসেজ টা পরলাম।কোনো রিপলাই না দিয়ে নেট অফ করে ফেললাম।আমি এমবি দিয়েই নেট চালাই।
কতক্ষন হ্যাবলাদের মতো বসে থাকতেই আব্বু ভাত নিয়ে এলো আমার পাশে বসে ভাত মাখতে মাখতে বলল

–নিচে খেতে এলে না?

আমি মনখারাপ করে বললাম

–ক্ষিদে লাগে নি।

আব্বু আমার মুখে ভাত তুলে দিয়ে বলল

–থাক এই স্যার চলে গেছে বলে কি হয়েছে স্যারের অভাব পরেছে নাকি?

আব্বু খাইয়ে চলে গেলো। আমি ঘুমাতে নিবো তখন আপু এলো। হাতে একটা ব্যাগ রুমে ঢুকে আমার হাতে ব্যাগ টা ধরিয়ে দিল। আমি জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকাতেই বলল

–তোর ভাইয়া কিনে দিয়েছে।

আপুর কথা শুনে ব্রু নাচিয়ে বললাম

–ওয়াও বিয়ে না হতেই ভাইয়া?

আমার কথা শুনে আপু মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আমি ব্যাগ থেকে আইস্ক্রিম বের করে খেতে লাগলাম।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি 10টার কাছাকাছি বাজে।

সকালে গরম লাগাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে কিছুক্ষন এদিক সেদিক করে উঠলাম।তখনই আম্মু এসে বলল

–এতোক্ষণ ধরে ডাকছি কানে শুনতে পাশ নি?

আমি ঘুমু ঘুমু চোখে চেয়ে বললাম

–ওহ তুমি ডাকছিলে আমি তো আরও ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি।

আম্মু আমাকে উঠতে বলে চলে গেলো। আমি উঠে বসে বাহিরে তাকিয়ে দেখি মেঘে কালো হয়ে গেছে আকাশ।আকাশ দেখে মন টা খুশিতে নেচে উঠলো। এরকম ওয়েদার আমার অন্নেক বেশি ভালো লাগে। খুব বাতাস ও আসছে।আমি তারতারাই করে ফ্রেশ হয়ে ছাদে গেলাম। আন্টিকে আসতে দেখে আরও ভালো লাগল।আমি ছুটে নিচে গেলাম।আজ শুক্রবার একটু পরেই যোহরের আযান দিবে।
আন্টির সাথে কিছুক্ষন কথা বলে আমার রুমে গেলাম তারপর গোসল সেরে নামাজ পড়ে বাহিরে গিয়ে দেখি
আরিশ ভাইয়া সাদা পাঞ্জাবি পরে হাতে টুপি নিয়ে সোফায় বসে আব্বুর সাথে কথা বলছে। আমাকে দেখে একনজর আমার দিকে তাকিয়ে আবারও কথা বলতে লাগল।

বিকেলে,,,,
আরিশ ভাইয়ার সামনের চেয়ারে বই খাতা নিয়ে বসে আছি।
কি আর বলবো।খাবার খেয়ে সকলে একসাথে বসে কথা বলার মাঝেই আম্মু উঠালো আমার কথা।এইসব কথার ফলেই এখন আমার স্যার হিসেবে আরিশ ভাইয়ার কাছে পরতে হচ্ছে।
আমার অলওয়েস সব সাব্জেক্টের রেসাল্ট ভালো হলেও ইংরেজি তে কম পাই।তাই ভাইয়া আমাকে আগে ইংরেজি বই বের করতে বলে।প্রথম কিছুক্ষন সেন্টেন্স চেঞ্জ করা বুঝিয়ে পেরাগ্রাফ মুখস্থ করতে দেয়।বসে বসে পরছি কিন্তু কিচ্ছুটি মাথায় ঢুকছে না আসল আমার পরতেই ইচ্ছা করছে না।ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি তারাহুরো করে নজর ফিরিয়ে বইয়ের দিকে তাকাই।কিছুক্ষন পর ভাইয়া জিজ্ঞেস করল

–টাইমস আপ এখন আর পড়াপড়ি চলবে না।এবার তুই আমায় পুরোটা পড়া দিবি। বলা শুরু কর।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে কেদে দেওয়ার উপক্রম।একটা লাইন ও এখনও মুখস্থ করতে পারি নি আর উনি বলছে পড়া বলতে। আমি নিচে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম

–মুখস্থ হয় নি এখনো।

ভাইয়া আমার কথা শুনে টেবিলের ড্রয়ার থেকে কিছু খুজতে লাগে। হঠাৎ স্যারের দেওয়া ডেয়রি মিল্ক টা হাতে নিতেই আমি চিল্লিয়ে বলি

–আমার চকলেট নিলেন কেনো?

ভাইয়া আমার কথাকে পাত্তা না দিয়ে সামনের জানালা দিয়ে চকলেট ছুরে মারে তারপর আবার আরাম করে চেয়ারে বসে।ভাইয়ার এমন কান্ড দেখে রাগ লাগছে। চকলেট আমার অনেক বেশি ফেবারিট সবথেকে বেশি।আর উনি ওইটা ফেলে দিলো। আর রাস্তায় পরলেও একটা কথা হতো কিন্তু চকলেট গিয়ে পাশের লেকে পরেছে।আমি রেগে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম

–আমার চকলেট ফেলে দিলেন কেনো।

–একে তো পড়া পারিস নি তার উপর আমাকে প্রশ্ন করছিস সাহস তো কম বড় না তোর।

–এর জন্য আপনি আমায় শাস্তি দিতেন কিন্তু আমার চকলেট কেনো ফেললেন।

–এইটা কোনো শাস্তি না।চকলেট টা তুই পড়া পারলেও ফেলতাম।

ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে চুপ করে গেলাম।উনি আমাকে বাড়ির পড়া দিয়ে উঠে বাহিরে গেলো আমিও বই গুছিয়ে বাহিরে গিয়ে দেখি নাহিদ ভাইয়া সাথে উনার বোন নাদিয়া।নাদিয়া আমার এজের। ওর সাথে আমি খুব ফ্রেন্ডলি। আমাদের দেখে আমাকে নিয়ে রুমে গেলো। মিথিলা আপু ও রুমেই ছিলো। নাদিয়াকে দেখে মিথিলা আপু কিছুক্ষন কথা বলার মাঝেই নাদিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে

–আচ্ছা জিনাত ওই ছেলেটা কে?

নাদিয়া আপুর কথা শুনে বললাম

–উনি আমার খালাতো ভাই আরিশ।

নাদিয়া কিছু বলার আগেই মিথিলা আপু বলে

–আরিশ ভাইয়ার কথা জিজ্ঞাসা করে কোনো লাভ নেই উনার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের গার্লফ্রেন্ড থাকবে না। জাস্ট ইমপসিবল।

নাদিয়া উঠে বাহিরে যেতে যেতে বলল

–উফ তা যাই হোক আমিতো আরিশ ভাইয়ার সাথে মিটমাট করতে যাচ্ছি।যদি কোনো গার্লফ্রেন্ড না থাকে তাহলে নাহিদ ভাইয়া, তোমার আর আরিশ ভাইয়ার সাথে আমার বিয়েটা হয়ে যাবে।

নাদিয়া বাহিরে চলে যেতেই মিথিলা আপু হাসতে লাগলো। আমি উঠে বাহিরে গিয়ে দেখি নাদিয়া আরিশ ভাইয়ার সাথে বসে কথা বলার চেষ্টা করছে।আমি আন্টির সাথে বসতেই আরিশ ভাইয়া একটা জরুরি কল এসেছে বলে সাইডে যায়।তারপর কিছুক্ষন পর এসে আমার পাশে বসে।
আরিশ ভাইয়াকে আমার সাথে বসতে দেখে নাদিয়া আমাকে চোখের ইশারায় উঠে যেতে বলে। আমার জায়গায় ও বসবে বলে। আমি উঠতে নিবো তখনই আরিশ ভাইয়া আমার হাত চেপে ধরে বলল

–চুপচাপ এখনে বসে থাক।

— আপনার কি আমি যেখনে ইচ্ছা সেখনে বসবো।

–আমার কি এইটা পরেই বুঝতে পারবি।

রাত হয়ে গেছে আমি রুমে বসে আছি আরিশ ভাইয়া রুম থেকে বের হতে মানা করেছে।আমিও উনার কথা মতো বসে আছি।আরিশ ভাইয়া যে কেনো আমার সাথে এমন করে।সবাই তো বাহিরে বসে আছে কিন্তু উনি আমাকে রুমে বসে থাকতে বলেছে। নাহিদ ভাইয়ারা এখনো যায় নি।
হঠাৎ কারেন্ট চলে যাওয়ায় ভয় পেয়ে যাই।হাতরিয়ে হাতরিয়ে বাহির পর্যন্ত যেতেই দেখি সবাই মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে বসে আছে।আম্মু আমাকে দেখে চার্জার লাইট জ্বালিয়ে আনতে বলল। আমি আস্তে করে হেটে হেটে গেস্ট রুমের সামনে যেতেই দেখি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আরিশ ভাইয়া কারো সাথে কথা বলছে কথা না সাধারণ ধমক দিচ্ছে।আরেকটু সামনে যেতে নিবো তখনই কেউ আমার হাত টেনে রুমের ভিতরে নিয়ে গিয়ে মুখ চেপে ধরলো। কোনো কথা বলতে পারছি না।কারো গরম নিঃশ্বাস আমার কপালে পরছে।
সামনে থাকা ব্যাক্তিটা যে ছেলে এইটাও বুঝতে পারলাম।ব্যাক্তিটা আচমকা আমার ডান গালে চুমু খাওয়াতে পুরো স্থব্দ হয়ে যাই।

চলবে,,,