তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-০৫

0
921

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part :5
#Mishmi_muntaha_moon

কারেন্ট আসতেই নাহিদ ভাইয়া কে দেখে আরও বেশি চমকে যাই।নাহিদ ভাইয়ার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে উনি আমার থেকেও বেশি শকড সাথে অপরাধীও।নাহিদ ভাইয়া আমার থেকে এক হাত দূরে সরে গিয়ে বলল

–জিনাত তুমি এইখানে।

নাহিদ ভাইয়ার কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পরলাম।কেমন ফিলিং নিজেই ধরতে পারছি না।চোখ নিচে নামিয়ে এদিক সেদিক করতেই রুমের দরজার সামনে আরিশ ভাইয়া দাতে দাত চেপে থমথমে হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে দেখি।নজর একটুও নড়চড় হচ্ছে না।আরিশ ভাইয়া এক পা বাড়িয়ে ভিতরে ঢুকতে নিতেই নাহিদ ভাইয়া আবারও বলল

–আমিতো ভাবলাম মিথিলা তাই,,,,বাট ট্রাস্ট মি আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু করি নি।

নাহিদ ভাইয়াকে এভাবে অপরাধীর মতো মাফ চাওয়াতে আমি মাথা নিচু অবস্থায় আমতা করে বললাম

–ইটস ওকে ভাইয়া।অন্ধকার ছিলো আমিও ধরতে পারি নি কে?

আমার কথায় নাহিদ ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

–মিথিলা কে বলো না এই ব্যাপারে। আমি তোমাকে অলওয়েস ছোট বোনের নজরে দেখি।

আমি কিছু বললাম না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। নাহিদ ভাইয়া হাসফাস করে চলে যায়। যাওয়ার সময় আরিশ ভাইয়াকে দেখে উনাকে বলে

–আরিশ তুমি এখানে।

নাহিদ ভাইয়ার কথা শুনে আমি আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকালাম উনি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে থমথমে মুখ করে বলল

–একটা জরুরি কল এটেন্ড করছিলাম।

–ওহ।

নাহিদ ভাইয়া আরিশ ভাইয়াকে সাইড কেটে চলে গেলো। আমারও আরিশ ভাইয়াকে দেখে অনেক অপ্রস্তুত লাগছে।আমি মাথা নিচু করে আরিশ ভাইয়াকে পাশ কেটে যেতে নিবে তখনই ভাইয়া আমার হাত চেপে ধরে উনার সামনে দার করায়। উনার এহেন কাজে আমি ব্রু কুচকে উনার দিকে তাকাই।

–নাহিদ তোকে কিস করায় মনে মনে তো অনেক খুশি হয়েছিস।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বলি

–কি সব বলছেন আমি খুশি হতে যাবো কেনো?

ভাইয়া দুই হাত পকেটে গুজে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল

–কি ভেবেছিস ওই চিরকুটের কথা তুই কাউকে বলবি তাই বলে কেউ জানতেও পারবে না।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে মুহূর্তেই মুখে ভয়ের ছাপ ছড়িয়ে পরল।

আমি চুপ করে দাড়িয়ে থাকার মাঝেই আরিশ ভাইয়া ধুপধাপ পায়ে হেটে চলে গেলো।
আমি এখনো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে আমার এই সিক্রেট সকলেই জেনে যাবে অথবা জানে।

আমি নিজেকে সামলে রুম থেকে বের হয়ে সোফার রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি নাহিদ ভাইয়ারা চলে গেছে।আরিশ ভাইয়াকেও দেখা যাচ্ছে না।আম্মু আমাকে দেখে ব্রু কুচকে প্রশ্ন করল

–কিরে তোকে একটা লাইট আনতে পাঠিয়ে ছিলাম। তোর জন্য সকলকে অন্ধকারে বসে থাকতে হয়েছে।কোথায় ছিলি এতক্ষন?

আমি কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম। কিছুই ভালো লাগছে না।নাহিদ ভাইয়ার সামনে কি করে যাবো আর আরিশ ভাইয়ার সামনেই বা কি করে যাবো। আর উনি এই কথা জানলেন কি ভাবে?
রুমে এসে বাথরুমে গিয়ে কিছুক্ষন মাথাটা ভিজিয়ে মুখ ধুয়ে আসি।তারপর দরজা লক করে ফেন অন করে কাথা গায়ে দিয়ে ঘুম দেই।

ঘুম থেকে উঠতেই সারা শরীর ব্যাথায় শিউরে ওঠে।খুব শীতও করছে তাই ফেন অফ করে আবার একটু ঘুমাতে নিবো তখনই মোবাইলের স্ক্রীন খুলে দেখি 10:30 বাজে।টাইম দেখে তারাতারি কাথা থেকে বেড়িয়ে হাত মুখে ধুয়ে দরজা খুলে বের হই।বের হয়ে সেখি আব্বু আম্মু আপু সবাই একসাথে সোফায় চিন্তিত অবস্থায় বসে আছে আমাকে দেখেই আম্মু কাছে এসে বলল

–শরীর ভালো তোর।কাল না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলি আবার এতো বেলা করে ঘুম থেকে উঠলি।কতোকরে ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই।

আমি আব্বুর সাথে সোফাতে বসে আম্মুর উদ্দেশ্যে বললাম

–না আমি একদম ঠিক আছি কিছুই হয়নি আমার।

আমার কথা শুনে আম্মু একটু চিন্তা মুক্ত হয়ে আমাকে নাস্তা দিলো। আমি একটু খেয়ে উঠে রুমে চলে গেলাম। জানি না আজ আরিশ ভাইয়া পরাতে আসবে কিনা কাল উনাকে দেখে মনে হচ্ছিলো অনেক রেগে আছে।তবুও আমি আরিশ ভাইয়ার দেওয়া পড়া গুলো মুখস্থ করে নিলাম।
একটু পর আপু আমার সাথে এসে বসল।আপু্কে আমার পাশে বসাতে আবার কালকের কথাগুলো মাথায় এসে পরল।আমি মাথা নিচু করে লিখতে লাগলাম। আপুর কোথায় হুশ আসে আমার।

–কিরে কি আবোল তাবোল লিখছিস?

আপুর কথা শুনে খাতায় তাকিয়ে দেখি ইংরেজি পেরাগ্রাফ এর মাঝে বাংলা লিখা শুরু করেছি।তারাতারি খাতা অফ করে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম

–না কিছু না এভাবেই ভুল হয়ে গেছে।তুই বল কি বলবি?

–আসলে নাহিদের সাথে দেখা করতে যেতাম। তুই ও আমার সাথে চল।

আপুর কথা শুনে আমি সাথে সাথে বললাম

–না না,,তুই যা আমি তোদের মাঝে কাবাবের হাড্ডি হবো নাকি একদমই না।

আপু আমার কথা শুনে অনুরোধের সুরে বলল

–না প্লিজ চল না আমার একা যেতে কেমন যেনো লাগছে।আর আম্মুও আমাকে বিয়ের আগে এভাবে একা একা যেতে না করেছে।তুই রেডি হয়ে নে তারাতারি।

আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই আপু চলে গেলো।কি আর করার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বই খাতা গুছিয়ে রেডি হয়ে নিলাম।
একটু পরে আপু এসে আমাকে সাথে নিয়ে গেলো।

রেস্টুরেন্টে বসে আছি।আমি সাথে আসাতে নাহিদ ভাইয়া প্রথম অপ্রস্তুত হয়ে পরলেও এখন মনে হচ্ছে বেশ স্বাভাবিক কিন্তু আমি কোনো কথা বলতে পারছি না চুপ করে বসে আছি।আপু খুশি মনে নাহিদ ভাইয়ার সাথে কথা বলছে হাসাহাসি করছে।আমি কিছুক্ষন বসে থাকার মাঝেই নাহিদ ভাইয়া আমার উদ্দেশ্যে বলল

–তোমার জন্য কি অর্ডার করবো জিনাত।

নাহিদ ভাইয়ার কথায় মিথিলা আপুর দিকে একবার তাকিয়ে নাহিদ ভাইয়ার দিকে তাকাই তারপর বলি

–আপনারা যা অর্ডার করবেন আমার জন্যও তাই করেন।

রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় ফিরে দেখি আরিশ ভাইয়া আম্মুর সাথে সোফায় বসে আছে।আমাকে দেখে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে নজর ফিরিয়ে নিলো। আম্মু আমাকে দেখে বলল

–তারাতারি ফ্রেশ হয়ে নে ছেলেটা কতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে।

আমি তারতারি করে ড্রেস চেঞ্জ করে মুখ ধুয়ে পড়ার টেবিলে বসে আরিশ ভাইয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম।আরিশ ভাইয়া এসে সোজা চেয়ারে বসে অংক করাতে লাগল একটা কথাও বলল না।আমিও কিছু বলার সাহস পেলাম না উনার মেজাজ দেখে।
আরিশ ভাইয়াকে কেউ কল দিতেই আমাকে অংক করতে বলে রিসিভ করে।আমি অংক করছি আর মাঝে মধ্যে আড়চোখে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি আর উনাদের কথা শুনছি।

–দেখ আমার মুড ভালো না এখন এই সব কথাবার্তা বলা বন্ধ কর।

ওই পাশের ব্যাক্তির কথা শুনা গেলো না।ভাইয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে রেগে বলল

–তোর প্রবলেম আমাকে শুনাচ্ছিস কেনো। আর কল করবি না।

আরিশ ভাইয়া নিজেই কল কেটে টেবিলের সাইডে রেখে আমার দিকে তাকালো। ভাইয়া তাকাতেই আমি তারাতারি চোখ খাতায় আবদ্ধ করলাম।আরিশ ভাইয়া এতো রেগে আছে কেনো কে জানে?

–করেছিস অংক।

ভাইয়ার কথা শুনে চুপ করে রইলাম।৮ টার মতো অংক করতে দিয়েছিলো কিন্তু আমি অর্ধেক সময় উনার কথা শুনিয়েই কাটিয়ে দিলাম মাত্র ৪ টা অংক করেছি।
আমার ভাবনার মাঝেই ভাইয়া হাত দিয়ে টেবিলে বারি দিতেই আমি কেপে উঠি।আরিশ ভাইয়া ধমকে বলতে লাগল

–বাহিরে ঘুরার কথা শুনলে ভালোই লাগে কিন্তু পড়ার সময় ভালো লাগে না।তাহলে পড়া লেখা করিস কেনো তোর বাবাকে বল বিয়ে দিতে পড়ায় তো মন বসছে না তাই না। এখন শাস্তির জন্য রেডি হয়ে নে।বিল্ডিং এর পাশে যে পুকুর আছে সেটার ৫ টা রাউন্ড দিবি।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে মাথা নিচু করে বসে আছি অনেক খারাপ লাগছে আরিশ ভাইয়ার সব কথাগুলো শুনে।

–কি হলো বসে আছিস কেনো তারাতারি যা।

ভাইয়ার কথায় তারাতারি উঠে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে হাটা দিলাম।

৫ বার রাউন্ড দিয়ে মনে হচ্ছে আমি আর এই পৃথিবীতে নেই পা দুটো ব্যাথায় শেষ হয়ে যাচ্ছে এভাবেই সকাল থেকে খারাপ লাগছে খেতে পারি নি ভালো করে এখন আবার এতো হাটতে হলো। বাড়িতে গিয়ে দেখি আম্মু ঝালমুড়ি বানিয়েছে।আপু আর আম্মু বসে বসে খাচ্ছে আমাকে দেখে আম্মু বলে

–শাস্তি পেয়েছিস? সম্মান থাকতে ঠিক হয়ে যা।নে মুড়ি খেয়ে পড়তে বস।

আম্মুর কথা শুনেও কোনো হেলদোল না করে রুমে চলে গেলাম।অনেক দুর্বল লাগছে।শ্বাস নিতেও অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।ফেন টা অন করে কিছুক্ষন বসে থেকে শুয়ে পরলাম।।

সকাল,,
এদিক ওদিক করে ঘুম থেকে উঠে পরলাম। তারপর টেবিল থেকে মোবাইল টা নিয়ে দেখি ৭ টা আজে।অনেক আগেই ঘুম ভেঙেছে কিন্তু এপিঠ ওপিঠ করতে করতে ৮ টা বেজে গেলো।বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গেলাম। আস্তে আস্তে চারপাশে রোদ ফুটছে।দাড়িয়ে থাকতেও ভালো লাগছে না তাই রুমে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরলাম।

আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।হাত মুখ না ধুয়েই বাহিরে যাই। অনেক ঘুম পাচ্ছে। এমন মনে হচ্ছে যেনো ঘুমে চোখ খুলতে পারছি না।আম্মুকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমিও সেখানে যাই তারপর দরজার বাহিরে তাকাতেই দেখি আরিশ ভাইয়া হোয়াইট শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে সাথে একটা সুন্দরী মেয়ে লেডিস শার্ট আর জিন্স পরে উনার পাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে,,,
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। ❤️❤️