তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-০৬

0
863

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:6
#Mishmi_muntaha_moon

আমি মেয়েটার দিক থেকে নজর সরিয়ে আম্মুকে বললাম

–কেনো ডাকছিলে?

–তোর আন্টি তোকে পাঠাতে বলেছে তারাতারি রেডি হয়ে নে।

আম্মুর কথা শুনে বিরক্ত নিয়ে বললাম

–আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। আমি এখন যেতে পারবো না।তুমি উনাদের চলে যেতে বলো আমি পরে একা চলে যাবো।

আমি আমার রুমের দিকে যেতে নিবো তখনই আরিশ ভাইয়া আমার হাত টেনে বাহিরে নিয়ে যেতে যেতে আম্মুর উদ্দেশ্যে বলল

–আমি ওকে আবার বাসায় পৌছে দিবো তুমি চিন্তা করো না।

আরিশ ভাইয়া হাত টেনে আমাকে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেলো। আমি ভাইয়ার হাত ছুটিয়ে বললাম

–আজব তো ব্রাশ ও করতে দিলেন না।

আরিশ ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসে বলল

–চুপ করে আমার পাশে বস।

ভাইয়ার কথা শুনে আমি আর কিছু বললাম না। ভাইয়ার পাশে বসেলাম।
গাড়ি স্টার্ট দিতেই বাহির থেকে বাতাস আসতে লাগল।আমি কাচটা নামিয়ে মাথাটা আরেকটু বের করতে কাচ
বন্ধ হয়ে যায়।রাগী চোখে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।

–কাচ নামান বলছি।

আমার কথায় আরিশ ভাইয়ার কোনো হেলদোল হলো না।আমি আবারও দ্বীগুন জোরে বলি

–আজব তো কানে শুনতে পান না নাকি?কাচ নামান

ভাইয়া সামনের দিকেই তাকিয়ে ধমকে বলল

–থাপ্পর খেতে না চাইলে চুপ করে থাক। জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে কিন্তু আন্টি এই ব্যাপারে কিচ্ছু জানে না।কেনো বলতে কি শরম লাগছিলো? এখন বেশি কথা না বলে নিরবতা পালন কর

ভাইয়ার কথা শুনে সিটে গা এলিয়ে দিলাম উনাকে আর কিছু বলে কোনো লাভ নেই তা ভালো করেই বুঝতে পারছি।ভালো লাগছে না ঘুম আসছে কিন্তু গাড়ি তে আমি একদম ঘুমাতে পারি না।
কিছুক্ষন পর গাড়ি থামায় চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আরিশ ভাইয়া পিছে তাকিয়ে বলছে

–বৃষ্টি তুমি একটু সামলে নিয়ো। আজ আমি অফিসে আসবো না।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে ঘাড় ফিরিয়ে পিছে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি নামের মেয়েটা অসহায় দৃষ্টিতে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর আমার দিকে একনজর তাকিয়ে আরিশ ভাইয়াকে বলল

–কিন্তু আরিশ তুমি তো কখনো সামান্য জিনিসের জন্য অফিস মিস দাও না তাহলে,,,,,

মেয়েটা আর কিছু বলার আগেই আরিশ ভাইয়া চাপা রাগ নিয়ে বলল

–আমি কাউকে এক্সপ্লেইন দেইনা আমার কাজের।আর আমি যেই কারণে যাচ্ছি সেইটা অবশ্যই আমার জন্য অনেক ইম্পর্টেন্ট।

মেয়েটা নামতেই আরিশ ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দিলো। আমি আবারও গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিতেই আরিশ ভাইয়া আমার হাত টান দিয়ে উনার বুকে ফেলে দিলো। আমি উঠতে নিতেই ভাইয়া আমাকে হাত দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে বলল

–একদম নড়াচড়া করবি না।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে স্টেচু হয়ে উনার বুকের সাথে লেপ্টে রইলাম। ভালো লাগছে তাই আমি আর কিছু বললাম না চোখ বুজে রইলাম।

কারো ডাকে ঘুম থেকে উঠে পরি।মাথাটা ভাড় হয়ে আছে।উঠে সামনে তাকিয়ে দেখি আন্টি আমার পাশে বসে আছে।আমি উঠতেই মৃদু কন্ঠে বলে

–নে খেয়ে নে।তারপর ঔষধও তো খেতে হবে।এতো জ্বর আসল কি ভাবে।

আন্টির কথায় মাথা চেপে ধরে দরজার দিকে তাকালাম। আরিশ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আন্টি আমাকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল

–তুই আজ আমাদের বাড়িতেই থাকবি আমি তোর আম্মুকে বলে দিয়েছি।আর আজ আমার ননদরা আসবে।

আমি আন্টির কথা শুনে বললাম।

–ওহ। তাহলে আমি চলে গেলেই ভালো হতো।

–কেনো।আমাদের বাড়িতে যেমন উনারা আসতে পারে তাহলে তুইও আসতে পারবি আর তোর তো আমাদের বাড়িতে আরও বেশি অধিকার।

আমি কিছু বললাম না। আন্টি খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো আর যাওয়ার আগে আমাকে সম্পূর্ন রেস্টে থাকতে বলল।

শুতে নিবো তখন আমার মোবাইলের কথা মনে পরল।

–মোবাইল তো আমার সাথেই ছিলো। কিন্তু আমাকে তো হয়তো আরিশ ভাইয়া গাড়ি থেকে নিয়ে এসেছেন।ধুর আমাকে ডাক দিলেয় হতো বেশি বুঝে এই আরিশ ভাইয়া ঘুম না হলে কি মরে যেতাম নাকি আমি।এখন আমার ফোন কোথায় রেখে দিলো কে জানে?

বিছানা থেকে উঠে দরজার দিকে পা বাড়াতেই দেখি দরজার পাশে আরিশ ভাইয়া আমার মোবাইল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষন আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে যেতে লাগল।আরিশ ভাইয়াকে মোবাইল না দিয়েই চলে যেতে দেখে দৌড়ে পথ আটকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলি

–আমার মোবাইল দিন।

আরিশ ভাইয়া আমার মোবাইল উনার পকেটে ঢুকিয়ে বলে

–মোবাইল আর এখন পাবি না।

আরিশ ভাইয়া ধাপধুপ পায়ে হেটে চলে গেলো। আমি নিজের মাথায় চটি মেরে রুমে চলে গেলাম।বেশি কথা বললে আমাকে এমন সমস্যায় তো পরতেই হবে।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকার মাঝেই নিচ থেকে চেচামেচির আওয়াজ শুনে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে উঁকি দিলাম। একটা মাঝবয়েসী মহিলা আর সাথে দুইটা সুন্দরী মেয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে থাকার মাঝেই আন্টি আমাকে নিচে যেতে বলল। আমিও তারাতারি চুল গুলো একটু ঠিক করে নিচে গেলাম কেমন যেনো আনকম্ফর্টেবল লাগছে।তবুও নিচে গিয়ে আন্টির পাশে দাঁড়িয়ে আন্টির ননদ কে সালাম দিলাম। আন্টি উনার ননদের উদ্দেশ্যে বলল

–এইটা আমার বোনের মেয়ে জিনাত।

–ওহ।খুবই মিষ্টি মেয়ে।

আন্টির ননদের কথা শুনে অনেক হাসি পাচ্ছে।কেউ প্রশংশা করলে কেমন হাসি পায়।আন্টি আর উনার ননদ রান্নাঘরের দিকে যেতেই মেয়ে দুইটা আমার সাথে কথা বলতে লাগল। আমিও হেসেই কথা বললাম কিছুক্ষনের মধ্যেই বেশ সখ্যতা গড়ে গেলো।

অদ্রি,রাত্রি আর আমি আমার রুমে বসে আছি।ওরা দুজন জমজ বোন কয়েক মিনিটের ছোট বড়।আমাদের মাঝে এখন আরিশ ভাইয়ার কথা চলছে।আরিশ ভাইয়ার কাসিনদের কথা আর উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছে ওরা দুইজন আরিশ ভাইয়ার খুব পাগল।
আমি কথার মাঝে বৃষ্টি নামের মেয়েটার কথা বলায় মনে হচ্ছে কোনো খাজানার চাবি পেয়ে গেছে।রাত্রি ভীষণ আগ্রহ নিয়ে বলল

–ওয়াও জিনাত তুমি তো দেখছি অনেক কিছু জানো। প্লিজ প্লিজ বলো না আরিশ ভাইয়ার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে কি না।

রাত্রির কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে বললাম

–আমি যতটুকু জানি তোমাদের তো বললাম।সিরিয়াসলি আমি আর কিছু জানি না।

আমার কথা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে অদ্রি বলল

–তুমি তো প্রায়ই এখানে আসো তাহলে তুমিই তো জানবে।বলো না নাহলে আমরা তো দেবদাসের ফিমেল ভার্সন হয়ে যাবো।

বেচারিদের কথা শুনে অনেক হাসি পাচ্ছে।তবুও আমি সেড হয়ে বললাম।

–আমি জানলে লুকাতাম কেনো তোমাদের কাছে?

–এইটাও ঠিক।

রাত্রি কিছুক্ষন ঠোঁট উল্টে বসে থেকে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো

–আই হেভ আ আইডিয়া।

রাত্রির এভাবে চিৎকার করে উঠাতে আমি আমি ভয় পেয়ে গেলাম।বুকে থু থু দিয়ে বললাম

–আস্তে আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।

রাত্রি এক্সাইটেড হয়ে বলল

–আমরা তিনদিন এখানে থাকবো। তুমিও থেকো আমরা তিনজন মিলে আরিশ ভাইয়ার গার্ল্ফ্রেন্ডের ব্যাপারে খোজ নিবো।

রাত্রির এই ছন্নছাড়া কথা শুনে আমি স্পষ্ট নাকচ করলাম।

–না আরিশ ভাইয়া যেই ডেঞ্জারাস উনাকে দেখলেই আমার এখন ভয় করে।তোমার এই প্লেন একদমই এক্সিকিউট করার মতো না।

আমার কথা শুনে রাত্রি অনেক অনুরোধ করতে লাগলো কিছুক্ষন পরে রাত্রির সাথে ওর বোন অদ্রিও তাল মিলাতে লাগলো।
আমি অনেক না করার পরও একটা কথাও শুনে না তাই না পেরে হ্যা করে দেই কিন্তু ওদের পরবর্তী প্লেন শুনার পর আমার পরান পাখি যায় যায় অবস্থা।

আন্টির কাছ থেকে অনেক রিকুয়েস্ট করে বাহিরে যাওয়ার পারমিশন পেলাম।কিন্তু যেই কারণে মিথ্যা বলে বের হলাম সেটা করতেই এখন প্রচুর ভয় লাগছে।
ওদের প্লেন ছিলো আরিশ ভাইয়ার পিছু নিয়ে উনার গার্লফ্রেন্ডের ব্যাপারে খোজ নেওয়া।প্লেন গুলো ঠিকই ওদের ছিলো কিন্তু পিছু নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে আমাকে।
অনেক না করার পরও ওরা আমাকেই পাঠালো।প্লেন ঠিকই ওদের ছিলো কিন্তু বাঘের মুকজে পা দিতে হচ্ছে আমায়।আর সেই কথার জন্যই এখন আমি ভাইয়ার পিছু করতে করতে একটা বাড়ির সামনে এসে পৌছে গেলাম।

চলবে,,,