#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:7
#Mishmi_muntaha_moon
গাছের পিছে লুকিয়ে থেকে আরিশ ভাইয়ার পিছু নিচ্ছি। কেমন উইয়ার্ড ফিল হচ্ছে। কিন্তু কি করার! আরিশ ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে সামনে থাকা একতলা সুন্দর একটা বিল্ডিংয়ের ভিতরে ঢুকলো।
আর আমি বাহিরে দাড়িয়েই পায়চারী করতে লাগলাম।প্রায় 15 মিনিটের মতো হলো এখনো বের হচ্ছে না।আমার তো।মনে হচ্ছে এইটাই আরিশ ভাইয়ার সেই স্পেশিয়াল মেয়ে মানে উনার ভালোবাসা আরকি!কারণ উনি অফিস ছেড়ে এখানে এসেছেন মানে উনার জন্য খুব ইম্পর্ট্যান্ট হবে নিশ্চয়ই।
কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে উনারা বাড়ির ভিতরে যদি আরিশ ভাইয়া উনার গার্ল্ফ্রেন্ডের সাথেও দেখা করতে যায় তাহলে আমি দেখবো কি করে।
গাছের পিছন থেকে বেড়িয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে বাড়ির সামনে গেলাম একটা দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে মেইন গেটের সামনে।আমি গেটের কাছে যেতেই আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলো।
–কে আপনি?
আমি গেট দিয়ে একটু ভিতরে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে ফিসফিস করে বললাম
–না আসলে একটু আগে একটা হ্যান্ডসাম ছেলে ভিতরে গেলো না দেখেছেন নিশ্চয়ই? এইটা কি ওই ছেলের গার্লফ্রেন্ডের বাড়ি।
দারোয়ান যেনো আমার কথা কিছু বুঝতেই পারলো না।আমার কথার বিপরীতে বিরক্ত হয়ে বলল
–আপনি কার সাথে দেখা করতে চান।
দারোয়ানের কথা শুনে মাথাটাই বিগড়ে গেলো আমি কি বলছি আর উনি কি বুঝছে।আর জোরে জোরে কথা বলছে আরিশ ভাইয়া শুনে ফেললে আমি শেষ। আমি দারোয়ানের একটু কাছে গিয়ে আবারও ফিসফিস করে বললাম
–আস্তে কথা বলুন আংকেল প্লিজ চেচাচ্ছেন কেনো।আর আপনি একটু বলে দিন না যে এইটা কি আরিশ ভা,,না না স্যারের গার্লফ্রেন্ডের বাড়ি কি না?
দারোয়ানের ভাব দেখে মনে হলো উনি আমার কথায় ভীষণ রকম বিরক্ত। আমার কথার জবাব না দিয়ে উনি মৃদু চেচিয়ে বলতে লাগলো।
–কে আপনি বলছেন না কেনো?
দারোয়ানের চেচামেচি শুনে একটা সুন্দর মেয়ে এসে দারোয়ানকে ধমকের সুরে বলল
–আপনি এভাবে চিৎকার চেচামেচি করছেন কেনো।আপনি জানেন না আমি একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করছি।
মেয়েটার কথায় দারোয়ান সব দোষ আমার উপর দিয়ে দিলো।আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো
–কে আপনি?কাকে চান?
আমি চুপ করে থাকতেই উনাদের দুইজনের ফাক দিয়ে আরিশ ভাইয়াকে এখানে আসতে দেখে পিছন দিকে দৌড় দিতে নিবো তখনই কেউ পিছ থেকে খপ করে হাত ধরে।
আমি ভয়ে ভয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি আরিশ ভাইয়া চোয়াল শক্ত করে রক্তিম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।উফফ পরলাম বিপদে।বাইচান্স আরিশ ভাইয়া যদি রাগ ধরে রাখতে না পেরে আমাকে থাপ্পর টাপ্পর মেরে দেয় মানইজ্জতের তেরোটা বেজে যাবে হে খোদা!
–এখানে কি করছিস তুই?
ভাইয়ার কথায় নিচু মাথা আস্তে আস্তে করে উঠিয়েভাইয়ার দিকে তাকালাম।কিন্তু কিছু বললাম না।চোখটা একটু ডানের দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা ভ্রু কুচকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
–কি হলো কি করছিস এখানে।
আরিশ ভাইয়ার ধমক শুনে কেপে উঠলাম।কিছু বলতে নিবো তার আগেই মেয়েটা আরিশ ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বলল
–আরিশ তুমি এই মেয়েকে চিনো?
আরিশ ভাইয়া মেয়েটার কথা শুনে আমার হাত শুক্ত করে ধরে মেয়েটার উদ্দেশ্যে বলল
–আজকের মিটিং টা কাল করবো এন্ড এক্সকিউজ আস।
আরিশ ভাইয়া আর কথা না বাড়িয়ে আমার হাত চেপে ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।এতো জোরে ধরেছে মনে হচ্ছে হাতের হাড্ডি ভেঙে যাচ্ছে। আমি আরেকহাত দিয়ে ভাইয়ার হাত ছুটানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু উনার হাত ছুটানোর সাধ্য আমার নেই।
গাড়ির কাছে গিয়ে আমার ছেড়ে দিয়ে গাড়ির সাথে চেপে ধরে বলল
–এখানে কি করছিলি।
আমি মাথা নিচু করে কেপে কেপে বললাম
–আসলে,,,আসলে,,,
–আমি তোকে আসল নকলের জ্ঞান দিতে বলি নি।
–না ভাইয়া,,, আসলে,,,আমার একটা ফ্রেন্ডের বাড়িতে এসেছিলাম কিন্তু আমি তো চিনি না তাই আরকি ভুল বাড়িতে পৌছে গিয়েছি।
আরিশ ভাইয়া আমার কথা শুনে আমার গাল চেপে ধরে বলল
–একদম মিথ্যা বলবি না আমায়।এই জ্বর নিয়ে আমার পিছু নিতে এসেছিস?
–আহ,,,
আমি ব্যাথায় মৃদু আওয়াজ করে উঠতেই আরিশ ভাইয়া গাল টা ছেড়ে দিলো।গাল ছাড়তেই আমি গাল দুটোয় হাত বুলাতে লাগলাম।
–এবার বল কেনো পিছু নিচ্ছিস আমার?
আরিশ ভাইয়ার রাগ দেখে আর কিছু লুকালাম না অদ্রি আর রাত্রির কথাগুলো সব ফটফট করে বলে দিলাম।লুকিয়ে নিজের বিপদ না এনে বলে দেওয়াই ঠিক।
আরিশ ভাইয়া আমার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থেকে থ্রেট দিয়ে বলল
–অদ্রি আর রাত্রির থেকে দূরে থাকবি বেশি মিশবি না ওদের সাথে নাহলে আমি কি করতে পারি আর কতোটা কঠিন রূপ ধারন করতে পারি এই ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই তোর।
ভাইয়ার কথা শুনে মাথা নিচু করে ঘার হেলালাম।
–
আরিশ ভাইয়া আর আমাকে একসাথে আসতে দেখে আন্টি আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো যে আরিশ ভাইয়া আমাকে পেলো কোথায়?হেনতেন!আরিশ ভাইয়া বাসায় এসেই সোজা উপরে চলে গিয়েছে। আর আন্টি উত্তরের আশায় আমাকে আটকিয়েছে।
আন্টির প্রশ্নে আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই রাত্রি আর অদ্রি এসে আমাকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে বলে নিয়ে গেলো। রুমে গিয়ে আমার সাথে চাপা রাগ দেখাতে লাগলো।
রাত্রি রাগ নিয়ে বলল।
–জিনাত তুমি আরিশ ভাইয়ার সামনে সব দোষ আমাদের দুজনের উপর চাপিয়ে দিলে।
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে আবারও অদ্রি বলল
–একদমই ঠিক করো নি বিশ্বাসঘাতক মেয়ে।সেলফিশ কোথাকার।ভাইয়া আমাদের কতো বকলো।
ওদের দুজনের কথা শুনে আমিতো চরম অবাক হলাম।সব দোষ ওদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার কি আছে দোষ তো ওদের ছিলো প্লেন টাও তো ওদেরই ছিলো আমিতো নাও করেছিলাম কিন্তু শুনে নি এখন আমাকে শুনাচ্ছে।
আমি অবাক হয়ে বললাম।
–প্লেন টা তো তোমাদেরই ছিলো আমি তো না ও করেছিলাম।এখন আমি সেলফিশ কি করে হলাম।
আমার কথা শুনে যেনো ওরা দুবোন আরও জ্বলে উঠলো। রাগ নিয়ে বলল
–চুপ করো। তোমার সাথে আমরা কথাও বলতে চাই না।
বলেই ওরা আমার রুম থেকে চলে গেলো। আমি আর কি করবো এভাবেও আরিশ ভাইয়া ওদের থেকে দূরে থাকতে বলেছে।আমি ক্লান্তি আর হতাশা নিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। জ্বর নিয়ে বাহিরে গিয়ে আরিশ ভাইয়ার পিছু নিলাম এখন ওই দুই জনের কাছে আমিই খারাপ।
–
সকাল সকাল আমার রুমে এমন চেচামেচি আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে দেখি আপু দাঁড়িয়ে আছে।চোখ কচলে আবার তাকালাম আপু এক গাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আগের মতই।আমি আশেপাশে তাকালাম নাহ আমাদের বাড়ি না তো আন্টিদের বাড়ির মতই লাগছে।
–কতো ঘুমাবি আর?উঠ।
আপুর কথা শুনে উঠে বসে বললাম
–তুই এখানে কি করছিস?এক মুহুর্তের জন্য ভেবেছিলাম আমি আমাদের বাড়িতে আছি।
মিথিলা আপু আমার সাথে বসতে বসতে বলল
–আন্টি আসতে বলল।বিকেল দিক দিয়ে নাহিদ আসবে আমাদের নিয়ে যেতে।
নাহিদ ভাইয়া আসবে শুনে ভ্রু কুচকে বললাম
–বিয়ের তুই সব কিছুতে নাহিদ ভাইয়াকে জরাস কেনো।উনি আমাদের নিতে আসবে আমরা একাই তো চলে যেতে পারি বেশি তো দূর ও না।
–থাক আমি চাইছি বিয়ের আগে আরেকটু বেশি বন্ডিং হলে ভালো না।তাই এতে খারাপ কি?
আপুর কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম
–নাহ কিছুই না
আমি উঠে ব্রাশ করে আপুর সাথে নিচে গেলাম।আরিশ ভাইয়া নেই দেখে সস্তির নিঃশ্বাস নিলাম।সকালের নাস্তা করে আপু আর আমি আমার রুমে গল্প করতে লাগলাম।আমার জ্বরটাও চলে গেছে মনে হচ্ছে।গল্পের মাঝেই দেখি রাত্রি আর অদ্রি আমাদের রুম পেরিয়ে আরিশ ভাইয়ার রুমে গেলো। কিন্তু আমি পাত্তা দিলাম না ভাই বোনের ব্যাপার আমি এত কি বলবো?
–
বিকাল দিক দিয়ে দেখি নাহিদ ভাইয়া এসে হাজির।আন্টি নাহিদ ভাইয়াকে দেখে অনেক খাতিরদারি করতে লাগলো।
আপাতত নাহিদ ভাইয়া অসহায় হয়ে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে খাবারের দিকে।পুরো টেবিল ভরে আছে খাবারে।আমিও সোফায় বসে আছি।রাত্রি আর অদ্রিও নাহিদ ভাইয়ার সাথে ভালোই মিল দেখাচ্ছে।কিন্তু আমার সাথে একটা কথাও বলছে না।একটু পরই আরিশ ভাইয়া ক্লান্ত হয়ে বাসায় এলো। থমথমে মুখে একবার সোফার সাইডে তাকিয়ে উনার রুমে চলে গেলো।
বিকেল দিকে আন্টিদের বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে চলে গেলাম।
বাড়িতে পৌছে গিয়ে নাহিদ ভাইয়া তাৎক্ষনাৎ উনি চলে গেলো। আমি রুমে বসে আছি আর আপু ওয়াশরুমে।
তখন মোবাইলে আননোন নাম্বারে কল আসায় রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলি
–কে?
–আমি একটু পর পরাতে আসবো।
আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে মুখ হা হয়ে গেলো। অলরেডি পরানোর সময় পেরিয়ে গেছে তবুও আসবে।
–কিন্তু ভাইয়া,,,
–কিন্তু কি?
ভাইয়া ত এমন ফটাফট জবাবে আর কিছু বলার সাহস পেলাম না।
–না কিছু না।
ভাইয়া ফোন কাটতেই মোবাইল বিছানায় ফেললাম।এই আরিশ নামের ব্যাক্তিটা পুরো লাইফ ত্যানা ত্যানা করে দিলো।মনে হচ্ছে আজকের দিনটাই আমার জন্য খারাপ আর কি কি আমার জন্য ওয়েট করছে আল্লাহ জানে ।পড়া ও পারি না।
হঠাৎ আকাশে ভাজ পড়ায় চমকে উঠি মনে মনে খুশিও হই হয়তো আরিশ ভাইয়া আর পড়াতে আসবে না।অবশ্য এখনও বৃষ্টি শুরু হয় নি কিন্তু অনেক বাতাস হচ্ছে।
আম্মুকে আমার রুমে আসতে দেখে জানালার সামনে থেকে সরে দরজার কাছে দারালাম।আম্মুর মুখে গোলাপী আভা ফুটে আছে।আম্মু যখন অনেক বেশি রেগে যায় তখন আম্মুর মুখের অবস্থা এমন থাকে কিন্তু এখন আমি কিছু করেছি বলে মনে হচ্ছে না।তখনই আপু মুখ মুছতে মুছতে বলল
–কিরে এই চিঠিটা কার জন্য লিখেছিস চু,,,,
আপু মুখ থেকে টাওয়াল সরিয়ে আম্মুকে দেখে থেমে গেলো।
ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে তা আন্দাজ করে ঠোঁট কামড়ে ধরে চুপ করে থাকে। আম্মু থমথমে মুখে নিয়ে আপুর সামনে যায়।তারপর বলে
–কোন চিঠির কথা বলছিলি এখন?
আম্মুকে আমরা যথেষ্ট ভয় পাই।আব্বুর থেকেও বেশি। ঘরে একজন থাকে যাকে সবাই ভয় পায় আমাদের বাড়িতে সেইটা হচ্ছে আম্মু।
মিথিলা আপু থতমত খেয়ে বলে
–কো,,ন চিঠি আমার কাছে কোনো চিঠি নেই।
আম্মু আপুর কথা শুনে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাতেই আপু ওর হাতে থাকা চিঠিটা আম্মুকে দিয়ে দেয়।আমি রোবটের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি আম্মু এতো রেগে কেনো ছিলো আর আপুই বা কোন চিঠি আম্মুকে দিলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না।তখনই আরিশ ভাইয়া আসতে দেখি।উনি আমার রুম পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়ে পরে।আমি ভাইয়ার দিক থেকে নজর সরিয়ে আম্মুর দিকে তাকাতে নিবো তখনই আমার গালে একটা ঠাস করে থাপ্পড় পরলো।
চলবে,,,
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই🥰🥰🥰