তোমাতে বিভোর আমি পর্ব-০৫

0
256

#তোমাতে বিভোর আমি
পর্ব,,,,,,,,৫
লেখিকা,,,, মৌমো তিতলি,,,,

****””””

সারাদিন বেশ আনন্দেই ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় ফিরে এলাম আমরা,,,,, আদ্র ভাইয়া আজকে আমাকে একবারও বকে নি,,,,,, বেশ আনন্দ উপভোগ করেছি আমরা সবাই,,,,

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই ফ্রেশ হয়ে নিয়ে এলাম আমি,,,, রান্না ঘরে ঢুকে দেখলাম আম্মু রান্না করছে,,, যথারীতি বড়মা আর লাকি আপু উপস্থিত,,,, লাকি আপু ছুরি দিয়ে আলু ছিলছে আর আরিয়ান হাত দিয়ে সেটা কাড়ার চেষ্টা করছে,,,, বিরক্ত হয়ে লাকি আপু আমাকে দেখে বলল,,,,,

: অধরা আরিয়ানকে একটু কোলে নে তো,,, দেখছিস তো কেমন দুষ্টুমি করছে ,,,,কোন কাজ ঠিকভাবে করতে দিচ্ছে না,,,, আশুরা ইস্কুলে গেছে তুই ওকে একটু সামলাতো,,,,,!!!!

আমিও আরিয়ানকে কোলে নিয়ে রান্নাঘর থেকে চলে এলাম,,,,

বড় আব্বু আর আব্বু মিলে ভাইয়াকে বিভিন্ন রকমের এডভাইস দিচ্ছে,,,, আজ তার অফিসের প্রথম দিন কিনা,,,,, ভাইয়া ও মনোযোগ দিয়ে সেগুলো শুনছে,, আমি গিয়ে টিভির সামনে একটা সোফায় গিয়ে বসলাম,,,,, টিভি সাউন্ড কমিয়ে টম এন্ড জেরি দেখতে লাগলাম,,,, আরিয়ান টমকে দেখে উৎসাহিত হয়ে বলল,,,,

: খালামণি,,,আতুলিল থাদা বিলাল কই,,,,!!!

বুঝতে পারলাম আরিয়ানকে বেশ ভালো রকম বিড়াল পাগলা বানিয়ে দিয়েছে আশুরা,,,,, টিভিতে টমকে দেখে সাদা বিড়ালটাকে মিস করছে আরিয়ান,,,,
আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম বিড়ালটা কোথাও দেখা যাচ্ছে না মনে হয় স্কুলে নিয়ে গেছে এক মুহূর্তও বিড়ালটাকে কাজ ছাড়া করছে না মেয়েটা,,,,

আরিয়ান খুব দুষ্টুমি করছে ,,,,ছোটাছুটি করছে,,, ওকে সামলানো খুব একটা সহজ কথা নয় ,,,ভারী দুষ্টু হয়েছে ছেলেটা,,,,,

আদ্র আড়চোখে একবার অধরা দিকে তাকালো,,,, অধরার বাচ্চা সামলানো দেখে হাসি পাচ্ছে তার,,,,
একটু পরে আদ্র আস্তে আস্তে অধরার দিকে এগিয়ে গেলো,,,,, অধরা সেটা খেয়াল করেনি,,,, আদ্র এগিয়ে গিয়ে অধরার পেছনে দাঁড়িয়ে সোফার দুপাশে হাত রেখে খানিকটা ঝুকে অধরার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,,,,,,

: বাহ অধরা,,, এখনই বাচ্চা সামলানোর ট্রেনিং নিচ্ছিস নাকি,,,???

আদ্র ভাইয়ার প্রশ্ন শুনে আমার আক্কেল গুড়ুম হওয়ার অবস্থা,,,,,চোখ বড় বড় করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম আমি,,,,, ভাইয়ার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি সেদিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে আবারো আরিয়ানকে নিয়ে খেলতে লাগলাম,,,,,

একটু পরে ব্রেকফাস্ট সেরে উপরে চলে গেলাম রেডি হতে,,,, ভাইয়া আমাকে অফিসে যাওয়ার পথে কলেজে ছেড়ে দেবে বলেছে,,,,,

রেডি হয়ে বেরোনোর সময় আদ্র ভাইয়া বড় আব্বুকে বলল,,, আজ আসতে একটু দেরি হবে ,,,,বন্ধুরা আবদার করেছে আজ সন্ধ্যায় পার্টি রাখতে ,,,,যেহেতু সে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে এইটুকু বন্ধুদের পাওনা থেকে যায়,,,,

বড় আব্বু হাসিমুখে অনুমতি দিল,,,

আমি গিয়ে গাড়িতে বসলাম,,,,, আদ্র ভাইয়া এসে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো,,,, তারপর আমার দিকে ঝুঁকে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো ,,,,,সেটা লাগানোর সময় ভাইয়ার মাথা আমার মুখের সামনে চলে আসলো,,,, তার চুলের মাতাল করা স্নেল নাকে এসে ঠেকছে,,,,,
অমনি হার্টবিট টা ধক করে উঠলো কয়েকটা বড় বড় ঢোক গিললাম আমি,,,,
ভাইয়া হয়তো সেটা খেয়াল করেছে,,,, মুচকি হেসে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিল,,,,,

কলেজের সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো আদ্র ভাইয়া,,,,,

আমি কলেজের ভিতরে ঢুকে হারামিগুলা রে খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে গেলাম,,,,, যথারীতি তারা বকুল তলায় বসে আছে,,,, আমিও গিয়ে তামান্নার পাশে বসলাম,,,
রিয়া কাল তোন্ময়ের সাথে কোথায় কোথায় বেড়িয়েছে,,, কি কি হয়েছে সেসবেরই বিশদ বিবরণ নিয়ে বসেছে,,,,,

আমার মনটা কেমন খালি খালি লাগছে হয়তো সেটা আদ্র ভাইয়া ভার্সিটিতে নেই বলেই,,,,

আমাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে লিমন বলল,,,

: কিরে অধরা আজকে তুই বাংলার পাঁচের মত মুখ করে আছিস কেন?? কি হয়েছে তোর???

তামান্না আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

: তাইতো অধরা তুইতো এসে পটর পটর শুরু করে দিস আজ এমন চুপ করে আছিস কেন!!!!!
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,,,

: আরে দেখছিস তো রিয়া কত আগ্রহের সাথে গল্প করছে,,,, সেটা মনোযোগ দিয়ে না শুনে আবার আমার পেছনে পড়লি কেন,,,,

আলেক্স হেসে বলল,,,

: আসলে অডরা,,, টুমি কটা না বললে আমাডের কেমন কুসকুস করে মনের ভিটরে,,,,,টাই আর কি,,,,

আমি ভ্রু কুচকে আলেক্স এর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম ওঃ কি বলতে চাইল,,,,, কিছুক্ষণ পর ওর বাক্যটা উদ্ধার করতে পেরে বললাম,,,,,

: উউউহহহহহ,,,,,,ওটা কুসকুস নয় আলেক্স,,, উসখুস হবে,,,,!!!!

: ওই একই কটা,,,,

:কটা নয় কথা,,,ক,,,থাআ,,,,,, আলেক্স কে শুদ্ধ উচ্চারণ শেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলাম,,,, শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম,,,,

: বাদ দে এসব,,, চল ক্লাসে চল ,,,,একটু পরে গোপাল দাদু ক্লাসে চলে যাবে দেরি হয়ে গেলে আর ক্লাসের ঢুকতে দেবেনা,,,,,
অগত্যা সবাই দৌড়ে ক্লাসের দিকে চলে গেলাম,,,,,

আজ দুপুরের পর আর কোন ক্লাস ছিল না তাই তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এলাম,,,
বাসায় ঢুকতেই কয়েকটা কথা কানে আসতেই থমকে গেলাম আমি,,,,,
আব্বু বড় আব্বুকে আমাকে নিয়েই কিছু একটা বলছে,,,, ওখানে দাঁড়িয়ে কথাটা শোনা বেয়াদবির মতো,,,, তাই আর না দাঁড়িয়ে সোজা রুমে চলে গেলাম,,,,,
মনের মধ্যে কেমন একটা উসখুস করছে,,,,, কি বলছিলো আব্বু আমাকে নিয়ে,,,,, এভাবে আমাকে নিয়ে তো আলাদাভাবে কোন কথা বলতে কখনো শুনিনি,,,,
আব্বুর মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো কোন একটা সিরিয়াস বিষয়ে কথা বলছে,,,,

দুপুরে খাবার টেবিলে বসে,,,,,,,

হঠাৎ আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

: অধরা মা তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে???

: জ্বী আব্বু,, ভালোই!!!!!

: বলছি আমরা বড়রা একটা ডিসিশন নিয়েছি,,,, তোমাকে বলার দরকার মনে হলো,, তাই বলছি,,,,,
দেখো তুমি তো এখন বড় হয়েছো,,, প্রত্যেকটা বাবা-মা তাদের সন্তান,, বিশেষ করে মেয়ে যখন বড় হয় তাকে নিয়ে নানা চিন্তা ভাবনা করতে হয়,,,,

আমি আব্বুর মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম আসলেই কি বলতে চাইছে আব্বু,,,,,, এভাবে তো কখনও কথা বলে না,,,,, আড়চোখে বড় আব্বুর দিকেও তাকালাম,,,, বড় আব্বুও থমথমে মুখে বসে আছে,,,,,,
আমি আবারও জিজ্ঞাসু চোখে আব্বুর দিকে তাকালাম,,,, আব্বু আবারো বললো,,,,

: তুমি তোমার শরীফ আংকেল কে চেনো তো!!!!

: হুম চিনি তো!!!! কেন আব্বু????

: তোমার শরীফ আঙ্কেল অনেক দিন ধরেই তার ছেলে রুদ্রের সাথে তোমার বিয়ে দেয়ার কথা বলছিলো,,,,,
এতদিন তোমার ব্যাপারে আমি এসব কিছু ভাবি নি তাই তাকে বিশেষ করে কিছু বলা হয়নি,,,, কিন্তু আজ কয়দিন শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না,,, তাই আর বেশী দেরী করতে চাইলাম না,,, ছেলেটা ভালো,,,, আমাদের চোখের সামনেই বড় হয়েছে,,,,এখন আমরা তোমার বিয়ের কথা নিয়ে ভাবছি,,,, ওনারা আসতে চেয়েছেন কালকে,,,,,

আব্বুর কথা শুনে যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল আমার,,,,, খাবার গলায় আটকে যাওয়ার উপক্রম হলে,,,, কোনমতে খাবারটা গিলে নিলাম,,,
মাথাটা ভনভন করছে,,,,, আব্বু কি বলল সেটা বোধগম্য হচ্ছে না,,,, মাথাটা নীচু করে আস্তে আস্তে আমতা আমতা বললাম,,,

: আদ্র ভাইয়া জানে????

আব্বু কেমন যেন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

: না,,,,,,,আর্দ্র কে এখনো কিছু বলিনি আমরা,,,, ছেলেটা আজ প্রথম অফিসে জয়েন করেছে তাই বেশি কিছু বলিনি,,,, কাল সকালে না হয় তাকে সবটা বুঝিয়ে বলবো,,,, তুমি কাল কলেজে যেও না,,, কেমন!!!!!

আব্বু বা বড় আব্বুর মুখের ওপর আমি কোনদিনও কিছু বলিনি কোনমতে মাথা নেড়ে সায় দিলাম,,,,
আমার চোখ ফেটে পানি আসতে চাইল কোনমতে খাবার টা শেষ করে উপরে চলে এলাম,,,,

আদ্র ভাইয়াও এখন বাসায় নেই,,,,, আমি রুমের মধ্যে পায়চারী করতে লাগলাম,,,, যে করেই হোক কথাটা আদ্র ভাইয়াকে জানাতে হবে,,,, সে নিশ্চয় কিছু একটা করবে,,,,, আর যাই হোক আমাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে কখনোই হতে দেবে না ভাইয়া,,,,, এটা ভেবে ও একটু যেন আশ্বস্ত হলাম আমি,,,,,,
তবু যেন শান্তি পেলাম না,,,, কথাটা এখনই আদ্র ভাইয়াকে জানানোর জন্য মনটা ছটফট করতে লাগলো,,,,

আদ্র ভাইয়াকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে সেটা আমি খুব ভাল করে জানি ভাইয়া বলেছিল আজ বন্ধুদের সাথে পার্টি রেখেছি আর তাদের পার্টি কোথায় হয় সেটাও আমি জানি,,,,,
সন্ধ্যার একটু আগে আব্বু আর বড় আব্বু কেউই বাসায় ছিল না,,,, তাদের কোনো এক বন্ধুর মেয়ের জন্মদিন ছিল সেখানেই দাওয়াত রক্ষা করতে গিয়েছিল তারা,,,,,
এই সুযোগে আমি আম্মুকে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম,,,, আমার স্কুটিটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,,, উদ্দেশ্য “সানমুন পার্টি ক্লাব”

************

ক্লাবের সামনে কোনরকম এই স্কুটিটা পার্ক করে
হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে ভাইয়াদের খুজতে লাগলাম,,,,,, কিছুটা ভেতরে গিয়ে এই কাংখিত মানুষটার ওপরে চোখ পড়লো আমার,,,,,
,
মুখে বিস্তর হাসি ফুটে উঠতেই দপ করে নিভে গেল সেই হাসি,,,,, চোখের সামনে এমন কিছু দেখবো সেটা কল্পনাও করতে পারিনি আমি,,,,, চোখ ছাপিয়ে পানি এসে গেল আমার,,,,,

ক্লাবের ঝলমলে আলোয় স্পষ্ট দেখতে পারছি আদ্র ভাইয়া কোন একটা মেয়েকে পরম আবেগে জড়িয়ে ধরে আছে আর মেয়েটাও ভাইয়াকে,,,,,,
আশেপাশে তার বন্ধুরা সবাই সোল্লাসে চিৎকার করে তাদেরকে চিয়ার্স দিচ্ছে,,,,,,,
এমন একটা দৃশ্য দেখে পা যেন পাথর হয়ে গেছে আমার,,, না সামনে এগোতে পারছি না পেছনে আসতে পারছি,,,,,, দু’গাল বেয়ে টপ টপ করে ঝরে পড়ল চোখের পানি,,,,,
যার কাছে ছুটে এলাম সে আমাকে এভাবে ঠকালো,,,, আমি ভাবতেই পারছিনা আদ্র ভাইয়া কখনো আমার সাথে এরকম টা করতে পারে,,,, কিন্তু নিজের চোখেই তো দেখলাম নিজের চোখকে অবিশ্বাস কি করে করবো,,,, কোনমতে চোখের পানি মুছে ভারী শরীরটা টেনে টেনে ক্লাব থেকে বেরিয়ে এলাম,,,,,

সবকিছু কেমন বিরক্ত লাগছে,,,, বিষাক্ত হয়ে গেছে চারদিক,,,,, স্কুটি টা স্টার্ট দিয়ে ফিরতে লাগলাম বাড়ির দিকে,,,, হাজারো কথা হাজারো স্মৃতি মাথার মধ্যে একত্রে কিলবিল করতে লাগলো,,,, শুনশান একটা ব্রিজের ওপর স্কুটিটা দাঁড় করালাম,,,,, দৌড়ে হেসে রেলিং চেপে ধরে কাঁদতে লাগলাম,,,,, কিছুতেই মন মেনে নিতে চাইছে না,,,,,

এতদিনের স্বপ্ন ভালোবাসা সবকিছু এক নিমিষে ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি আমি,,, তাহলে আমার প্রতি আদ্র ভাইয়ার এত কেয়ার,, এত আবেগ দেখানো,, সবটাই কি মিথ্যে?? নাকি আমার বোঝার ভুল ছিলো,,,,, আমি শুধুমাত্র তার কাজিন তাই কি আমার সাথে তার এই ব্যবহার???? আর আসলে সে ভালোবাসে অন্য কাউকে!!!!যাকে সে আজ পরম আবেগে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেছিল,,, আর কিছু ভাবতে পারলাম,, না চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম আমি,,,,,,

বাসায় এসে রুমে চলে গেলাম রাতে খাবার খেতেন নিচেই এলাম না,,,,, একটু পর আম্মু আর বড় আম্মু খাবার নিয়ে আমার রুমে এলো,,,, আমার চোখ দেখে বড় আম্মু আমার পাশে বসে বলল,,,,,

: কিরে অধরা আব্বুর ডিসিশন শুনে কি কান্নাকাটি করেছিস???

আমি ছলছল চোখে বড় আম্মুর দিকে তাকালাম,,,
আম্মু খাবার মেখে আমার মুখে ধরে বললো,,,

: তুই যে এত বড় হয়ে গেছিস সেটা আমরা কেউই খেয়াল করিনি রে,,,, তোকে বিয়ে দেবো ভাবলেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠছে,,,,,
হঠাৎ করে তোর আব্বু এরকম ডিসিশন নিলো,,,,, জানি এটা মানতে তোরও একটু কষ্ট হবে,,,,,
কিন্তু তুই তো জানিস,, তোর আব্বু ,,বড় আব্বু কখনোই তোর খারাপ চাইবে না ,,,,,সবসময়ই তোদের ভালোটা চেয়ে এসেছেন তারা,,,,

বড় আম্মু আম্মুকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,,,,

: অধরা তুই বল তোর কি কারো পছন্দ আছে নাকি!!!!
তুই আমাদেরকে বলতে পারিস,,,,, তোর আব্বুর দেখা ছেলেকে বিয়ে করতে কি তোর আপত্তি আছে????

আমি মুখ ফুটে কিছু বলতে নিলেই সন্ধ্যার সেই দৃশ্যটা মাথায় এসে যায়,,,,, চোখমুখ শক্ত করে আমি কোনমতে কান্না আটকে বললাম,,,,,

: আমার কাউকে পছন্দ নেই বড়মা,,,,, তোমরা বড়রা যে ছেলে ঠিক করবে,, তাকে বিয়ে করতে আমার কোন আপত্তি নেই!!!!!তোমরা নিশ্চিন্তে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারো,,,,
আম্মু আর বড় মা আমার কথায় খুশি হলো তারা খুশি মনে আমার ঘর থেকে চলে গেল,,,,, আমি আস্তে আস্তে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম,,,,,, সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল এক নিমিষেই,,,,,
আকাশের চাঁদ নেই,,,, আকাশে হাজার কোটি তারা থাকা সত্ত্বেও চারদিকটা কেমন নিকষ কালো অন্ধকারে ঢেকে আছে,,,,, একমুহূর্তেই মনে হল আজ বুঝি আমাবস্যা!!!!! ঠিক যেমন আমাবস্যা এসে গেছে আমার মনে,,,,,,
মনে মনে ঠিক করলাম আর কখনো আদ্র ভাইয়ের মুখোমুখি হবো না,,,,, আব্বুরা যে ডিসিশন নিয়েছে মুখ বুজে সেটাই করব আমি,,,,, এগিয়ে গিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে আঁটকে দিলাম,,,,,,

********””””

অনেক রাতে বাসায় ফিরলো আদ্র,,,,,, ভরপুর আনন্দ হয়েছে আজ বন্ধুদের সাথে,,, অফিসের প্রথম দিন তাও আজ খুব ভালো কেটেছে,,,, ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি ফিরেছে সে,,,,, ড্রইং রুমে প্রবেশ করতেই দেখেন আম্মু খাবার টেবিলে তার জন্য অপেক্ষা করছে,,,,,

যদিও আদ্রের খিদে নেই,,,, তবুও সে জানে না তার জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করছে,,,, আদ্র হাসিমুখে বলল,,,,

: আম্মু তুমি খাবার নিয়ে আমার রুমে চলে এসো আমি ফ্রেশ হয়ে নি,,,,,
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আদ্র উপরে চলে গেল,,,,, অধরা রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল,,, পকেট থেকে একটা ডেইরি মিল্ক চকলেট বের করে হাসিমুখে এগিয়ে গেল দরজার দিকে,,,, আজ সারাদিন অধরাকে দেখি নি আদ্র,,,, সেই সকাল বেলা কলেজের ছেড়ে দিয়েছিল তাকে,,,,,
দরজা হাত দিয়ে ঠেলতেই দেখল দরজাটা বন্ধ,,,,,
ভ্রু কুঁচকে গেল আদ্রের,,,,, অধরা তো কখনো দরজা লাগিয়ে ঘুমায় না,,, আজ দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ কেন??? ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হল না আদ্রের,,,,,,

কিছুক্ষণ পর মুখে হাসি ফুটলো তার,,,, হয়তো আজ সারাদিন তার খোঁজ নেইনি সেজন্য মহারানী রাগ করেছে,,,, আচ্ছা ঠিক আছে,,,,, এখন হয়তো সে ঘুমাচ্ছে,,,,, কাল সকালে নাহয় মহারানীর রাগ ভাঙানো যাবে,,,, আদ্র আজ সত্যি খুব ক্লান্ত,,,,,

আদ্র ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মা তার বিছানায় খাবার নিয়ে বসে আছে,,,,,,, মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে,,,,

আদ্র এগিয়ে গিয়ে মায়ের পাশে বসে জিজ্ঞাসা করে,,,,

: কি হয়েছে আম্মু আজ মুখটা এমন করে আছো কেন!!!!!
বলেট খাবারটা নিয়ে চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো,,,,,
শামীমা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলো,,,,, বললো,,,,,,,

: একটা কথা বলার ছিলো তোকে,,,,,,!!!!!

আদ্র মায়ের কথাটা শুনে চোখ তুলে তাকালো মায়ের দিকে,,,, মায়ের গলাটা কেমন যেন শুনতে লাগছে,,,,

: হ্যাঁ মা বলো,, কি বলবে বলো,,,,!!!!

: বলবো আগে তুই খেয়ে নে!!!!

: আরে বলো বলো,,,,,,

শামীমা বেগম খুব ভালো করেই জানেন ছেলের মনের খবর,,,,ছোটবেলা থেকে যা কিছুই হোক আদ্র কখনো তার মায়ের কাছে লুকাইনি,,,, তাই অধরার প্রতি আদ্রের মনে ঠিক কতটা জায়গা,,, কেমন জায়গা সেটা তিনি খুব ভালো করেই জানেন,,,, কিন্তু আজ অধরার বিয়েতে রাজি হওয়াটা তাকে যারপরনাই অবাক করেছে,,,কয়েকদিন আদ্রের ব্যবহার,, কথা শুনে মনে হয়েছিলো দুজনের ক্ষেত্রেই একই অনুভূতি কাজ করে,,,,,, কিন্তু আজ অধরার বিয়েতে সম্মতির কথা শুনে তার হিসেবে গরমিল হয়ে গেলো,,,,,,,, আদ্র এটা শুনে কেমন রিয়াক্ট করবে সেটাই তিনি এখন ভাবছেন,,,,, ঢোক গিলে জিব্বা দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিয়ে বলল,,,,,,

: তোর ছোট আব্বু আর তোর আব্বু মিলে অধরার বিয়ে ঠিক করছে!!!!!!

মায়ের মুখে অধরার বিয়ের কথা শুনে থমকে গেল আদ্র ,,,,,,হাত থেকে চামচটা মাটিতে পড়ে গেল,,,,, অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

: এটা তুমি কি বলছো মা!!!! অধরার বিয়ে মানে,,,,

: হ্যাঁ ,,,,তোর শরীফ আঙ্কেল আছে না!! তার ছেলে রুদ্রের সাথে অধরার বিয়ে ঠিক করেছে তোর ছোট আব্বু,,,,,কাল তোর শরীফ আঙ্কেল আর তার ছেলে আসবে এবাড়িতে,,,অধরাকে আংটি পরাবে বোধহয়,,,,,,
মুহূর্তের রাগে লাল হয়ে গেল আদ্রের মুখটি,,,,, ধুম করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল বিয়ে দেবে আংটি পড়াবে বললেই হলো???? অধরা কখনো এই বিয়েতে রাজি হবে না,,, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বিয়ে দেবে নাকি,,,,

: তুই একটু শান্ত হয়ে বস,,,,,, আমার কথা এখনো শেষ হয়নি,,,, তাছাড়া অধরা নিজেই এই বিয়েতে রাজি হয়েছে,,,, সে কোন অসম্মতি জানায়নি,,,,,,,

অধরা রাজি হয়েছে এটা শুনে আদ্রের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো,,,,,, সে যেনো কিছুতেই কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না,,,, মায়ের দিকে তাকিয়ে অবিশ্বাস ভরা চোখে বললো,,,,,

: মা এটা তুমি কি বলছো,,,আমি যেমন অধরাকে ভালোবাসি অধরাও আমাকে ভালোবাসে ,,,,,,অধরা কিছুতেই বিয়েতে রাজি হতে পারে না ,,,,,,তুমি ভুল বলছো ,,,,,, অধরা কি করে রাজি হবে এই বিয়েতে????? কিছুতেই হতে পারে না,,,, কিছুতেই না,,, বলতে বলতেই ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল আদ্র,,,,

শামীমা বেগম ছেলের অবস্থা দেখে নিজেই কেঁদে ফেললেন,,,, বিয়ের কথাটা শুনেই আদ্রের এই অবস্থা সে যদি অধরার মুখ থেকে এই কথাটা শুনতো তাহলে তার কি হতো এটা ভেবেই অজানা এক সংখ্যায় বুকটা কেঁপে উঠল শামীমা বেগম এর,,,,, মুখ শক্ত করে তিনি বললেন,,,,

: আমি ভুল বলছি না আদ্র,,,, আমি নিজে গিয়েছিলাম অধরার কাছে শুনতে,,, সে হাসিমুখেই সম্মতি দিয়েছে,,, তুই হয়তো ভুল জানিস,,, ও তোকে ভালবাসে না,,,,,

মায়ের কথা শুনে আর্দ্র শূন্য চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,