তোমাতে বিভোর আমি পর্ব-০৬

0
196

#তোমাতে বিভোর আমি
পর্ব,,,,,,৬
লেখিকা,,,, মৌমো তিতলি

**********

শামীমা বেগম আস্তে আস্তে ছেলের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান,,,,

নিথর হয়ে বিছানায় বসে আছে আদ্র,,,তার পুরো পৃথিবী যেন থমকে গেছে,,,, চারপাশের কোন শব্দ যেনো তার কানে পৌঁছাচ্ছে না,,,,কানে একটা কথাই ঝম ঝম করে বাজছে,,,,,,,

“অধরা নিজে এই বিয়েতে হাসিমুখে সম্মতি দিয়েছে”

দু হাত দিয়ে কান চেপে ধরলো আদ্র,,,,, ডুকরে কেঁদে উঠলো সে,,,,,,,

:কেনো অধরা?? কেনো এমন করলি,,,,,??
আমাকে এই ভাবে ইগনোর করতে পারলি তুই?? তোর চোখে যে আমি আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছিলাম সেটা কি ভুল ছিল?? সবটাই কি তোর ছলনা?? সবটাই অভিনয়????আমাকে তোর জীবনে কি কোন ইম্পর্ট্যান্স নেই?? তুই কিভাবে পারলি রূদ্রকে বিয়ে করতে রাজি হতে???
চিৎকার করে কাঁদতে থাকে আদ্র,,,,
আদ্রদের বাড়ির সবকটা রুম সাউন্ডপ্রুফ থাকায় সেই চিৎকার কারো কান পর্যন্ত পৌঁছায় না,,,,,,,
আদ্র কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ে,,,,

**********

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে বসে সবাই,,,,,শুধু আদ্র আর অধরা আসেনি,,,,
আরমান খান স্ত্রী শামিমা বেগমকে জিজ্ঞাসা করে,,,,,

:আদ্র কি এখনো ঘুমাচ্ছে নাকি??? এখনো নিচে এলো না যে,,,,, এতক্ষণ তো সে ঘুমায় না,,,,,!!!!!

স্বামীর কথায় শামীমা বেগমের বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো,,,,,, কাল সারারাত আদ্রের ওপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে গেছে সেটা তিনি মা হয়ে সবটা অনুভব করতে পারছে,,,,, বাড়িতে আজ মেহমান আসবে,,,আদ্রকে কিভাবে সামলাবেন সেই চিন্তায় তিনি বিভোর হয়ে আছেন,,,,

:কি ব্যাপার চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন???? দেখো গিয়ে ছেলেটা উঠলো কিনা,,,, তাছাড়া অধরার বিয়ের ব্যাপারেও তো তাকে কিছু বলা হয়নি,,,,,সেটা নিয়েও কথা বলার দরকার ছিলো,,,,যাও আদ্রকে নিচে আসতে বলো,,,,,

স্বামীর কথায় শামীমা বেগম নড়েচড়ে উঠে,,,, বলেন,,,,

:তার কোন দরকার নেই,,,,কাল রাতে আমি আদ্রকে সবটা বুঝিয়ে বলেছি,,,, আসলে কাল অনেক রাত করে বাড়ি ফিরেছে তো,,,হয়তো ভালো ঘুম হয়নি,,তাই ঘুমাচ্ছে,,,,

:ওহ,,,

ছোট্ট কথায় জবাব দেন আরমান খান,,,,,
অধরার আব্বু হাসিমুখে ফোনে কথা বলতে বলতে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে,,,,

: হ্যাঁ হ্যাঁ,,,,কোন সমস্যা নেই,,,, আপনারা আসতে পারেন,,,,

:____________

: জ্বী,,,,জ্বী,,,আরে রূদ্র তো আমাদের বাড়ির ছেলে,,,,তাকে তো ছোট থেকেই দেখছি,,,, তাকে নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন কেনো থাকবে,,,

:__________________!!!

: আচ্ছা,,,,তাতেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই,,,,তা ছাড়া শুভ কাজে দেরি করে লাভটাই বা কি বলুন,,,

:_____________!!!

: আচ্ছা ঠিক আছে,,, রাখছি তাহলে,,ওকে,,ভালো থাকবেন,, আসসালামুয়ালাইকুম,,,

ফোনটা কেটে দিয়ে আরিফ খান হাসিমুখে বড় ভাইয়ের পাশে গিয়ে বসে,,,,,

:বুঝলে ভাইজান,,,রূদ্রের বাবা আর দেরি করতে চায়ছেন না,,,, আমাদের অধরা মা কে তো তারা ছোট থেকে দেখে আসছে,,,যেমন আমরা রূদ্রকে দেখছি,,,
তাদের জোড়া যেনো একেবারে সোনায় সোহাগা,,,,,

:হুম,,,,,,তো কি বলছেন শরিফ সাহেব???
গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আরমান খান,,,,

:ওনারা বলেছেন আজ ফর্মালিটি পুরণ করতে আংটি পড়াবে,,,,, কিন্তু বিয়েটা তিন দিন পরেই দিতে চাইছেন,,,,

তিন দিন পর বিয়ের কথা শুনে শামীমা বেগম আৎকে উঠলেন,,,,হড়বড় করে জিজ্ঞাসা করলেন,,,,,,

:তিন দিন পর কোনো ভাইজান??? এতো তাড়াহুড়ো না করলে হতো না???

বড় ভাবির কথায় আরিফ খান বলেন,,,

:রুদ্র নাকি আবার বিজনেসের কোন একটা কাজে সামনের সপ্তাহে এক মাসের জন্য সিঙ্গাপুরে যাবে,,,,,,তাই তারা আর লেট করতে চাইছেন না,,,,

সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে সবটাই শুনলো আদ্র,,,পা যেন তার চলছে না,,, কোনমতে ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় বসে পড়ে আদ্র,,,,, আসেপাশে অধরাকে দেখা যাচ্ছে না,,,,ভালোই হলো,,,,,আদ্রও আর চায়ছে না অধরার মুখোমুখি হতে,,,যে তার কথা একবারও ভাবলো না,,তাকে তার দুর্বলতা আর চোখের পানি কোনটাই আর দেখাতে চায় না আদ্র,,,,,অধরা যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখি হতে চাই তাহলে তাই করুক,,,,
সেও সবসময় স্বাভাবিক হয়ে থাকবে ঠিক করলো,,,,
মনে মনে বললো,,,

: তোর ইচ্ছাটা পূরণ হোক অধরা,,,আমিও তোর বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব পালন করবো,,,,তুই যদি পারিস,,আমিও তোর সামনে ভেঙে পড়বো না,,, তুই কত কঠিন সেটা আমিও দেখি,,,,,,

**********

অধরা নিচে নামতে নামতে দেখে আব্বু বড় আব্বু আর আদ্র তার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে,,,,আদ্র একদম স্বাভাবিক,,,

“শালা কুত্তা বিলাই,,,মুখ দেখো,,,কেমন হেসে হেসে বিয়ের প্ল্যান করছে,,,মনে হচ্ছে কাজিন নয় নিজের বোনের বিয়ে,,,,, যত্তসব 😡 😡😡”
বিরক্ত মুখে আবার রুমে চলে যায় অধরা,,,,,
গিয়ে আবারো ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল,,,,

: তারমানে সত্যিই আদ্র ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে না,,,,যদি বাসতো তাহলে এভাবে স্বাভাবিক হয়ে আমার বিয়ের প্ল্যান করতে পারতো না,,,,আদ্র ভাইয়া কেনো এমন করলে তুমি?? কি দোষ ছিল আমার???
অঝোরে কাঁদতে লাগলো অধরা,,,,,

******
সকাল ১১টার দিকে শরিফ আহম্মেদ আসলেন তার ফ্যামিলি নিয়ে,,,,,
অধরার বিয়ের কথা শুনে অধরা সব বন্ধু বান্ধবীরা অধরা দের বাড়িতে এসেছে,,,,,, রিয়া সোমা তামান্না অধরাকে সাজাতে ব্যস্ত,,,,, লিমন আর আলেক্স ড্রইং রুমে আদ্রের সাথে বসে গল্প করছে,,,,
আদ্র ওপরে ওপরে একেবারেই স্বাভাবিক হয়ে বসে আছে ,,,,,,কিন্তু ভেতরে সে দুমড়ে-মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে,,,,, সেটা মাত্র একজন বুঝতে পারছে ,,সেটা হল আদ্রের মা,,,,, তিনি ছেলের এমন স্বাভাবিক হয়ে বসে থাকাটা মানতে পারছেন না,,,,, অবাক হয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন শামীমা বেগম,,,,,

কিছুক্ষণ বাদেই বান্ধবীরা মিলে অধরাকে নিচে নিয়ে আসে,,,, অধরা গিয়ে সবাইকে সালাম দেয়,,,,
শরীফ আহমেদ হাসিমুখে অধরাকে বসতে বলে,,,,
অধরা ও গিয়ে তার বড় আব্বুর পাশে বসে,,,,,

রুদ্র অপলকে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,, আগে সে বাবার মুখে অনেকবার অধরার রূপের কথা শুনেছে,,,, আজ স্বচক্ষে দেখছে অধরাকে,,,,,, তার মনে হচ্ছে বাবা হয়তো একটু কম করেই বলতো,,,, অপ্সরীর মতো সুন্দরী দেখতে লাগছে অধরাকে,,, প্রথম দেখাতেই রুদ্র মনের আসনে অধরা কে বসিয়ে দিয়েছে,,,,,

অধরার ঠিক পেছন দিকে আদ্র দাঁড়িয়েছিল,,,,,, রুদ্রকে অধরার দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাত মুঠো করে রাগ সংবরণ করে আদ্র,,,,
অধরা নির্বিকার ভাবে বসে আছে,,,,,

অনেকক্ষণ নানা কথাবার্তার পর শরীফ আহমেদ আরিফ খান কে বলেন,,,

:তাহলে আর দেরি করে লাভ কি!!!! আমরা তো এখন বিয়াই হয়ে গেলাম,,,, আংটিটা তাহলে পরানো হোক,,,

আদ্রের বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে,,,,, দ্রুত পায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় আদ্র,,,,,

শরীফ আহমেদ পকেট থেকে একটা আম ডায়মন্ড রিং বের করে ছেলের হাতে দিয়ে বলেন,,,,,

: রুদ্র এটা অধরা মায়ের হাতে পরিয়ে দে,,,,,,

রুদ্র হাসিমুখে রিংটা নিয়ে অধরার পাশে বসে,,,,,,, অধরা অজান্তেই তামান্নার হাতটা খামচি দিয়ে ধরে,,,,,
তামান্না অধরার কাঁধে হাত রেখে সান্তনা দেয়,,,,,

রুদ্র অধরার অনামিকায় আংটি পরিয়ে দেয়,,,,,,

তারপর সবাই মিষ্টিমুখ করে,,,,, কিছুক্ষণ বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করে তিনদিন পর বিয়ে ঠিক করে,,,,,

অধরা ছুটে নিজের রুমে চলে যায়,,,,, দরজা লাগিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে,,,,,, তামান্না সোমা রিয়া অধরা রুমের দরজায় ধাক্কাতে থাকে,,,,,

: অধরা দরজা খোল ,,,,,,,দরজা আটকে দিলি কেনো??? কি হয়েছে তোর ???অধরা শোন দরজা খোল,,,,,,
অধরা দরজাটা খুলে দেয়,,,, সবকয়টা বান্ধবী হুড়মুড় করে ঢুকে অধরার ঘরে,,,,,

:কি ব্যাপার ওভাবে দরজা আটকে দিল বিয়ের কথা শুনে বুঝি লজ্জ্বা পেয়েছিস,,,,,

অধরা মুখ নিচু করে থাকে কিছু বলে না,,,, বান্ধবীরা সবাই অধরার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় ,,,,,,,বলে হলুদের দিন সবাই আসবে,,,,,

সন্ধ্যায় সবাই ড্রইংরুমে বসে,,,, আরিফ খান জেসমিন বেগম অধরার বড় আব্বু সবাই বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে,,,, অধরা আস্তে আস্তে নিচে এসে আব্বুর পাশে বসে,,,,,, চুপচাপ সবার কথা শুনতে থাকে,,,,,

ঠিক তখন আদ্র ড্রইং রুমে প্রবেশ করে,,,, আরমান খান ছেলেকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,,,,

:কি ব্যাপার আদ্র তখন ওভাবে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলে,,, কোথায় গেছিলে,,???

: বাবা একটু আর্জেন্ট কাজ এসে গেছিল তাই বেরোতে হয়েছিল,,,,, তোমরা ব্যস্ত ছিলে তাই কাউকে কিছু বলিনি,,,,,
আদ্র আড়চোখে একবার অধরা দিকে তাকায় ,,,,,,তার নজর যায় অধরার আঙ্গুলে জ্বলজ্বল করতে থাকা রিংটার দিকে,,,,, মুহূর্তেই আদ্রের চোখ ঝাপসা হয়ে যেতে থাকে,,, আদ্র আবারো দ্রুত পায়ে উপরে চলে যায়,,,,,, শামীমা বেগম ছেলের দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন,,,,,

এদিকে অধরা মনে মনে ভাবছে,,,,,

“আর্জেন্ট কাজ না ছাই,,,,,,, বাড়িতে এরকম একটা অনুষ্ঠান রেখে তার কি এমন রাজকাজ পড়ে গেলো যে কাউকে কিছু না বলে চলে গেলো,,,,,,,, নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছিলো,,,,, বুঝি না আবার হুহহ😏😏😏”

*******”””

💛💛💛অধরার হলুদ সন্ধ্যা 💛💛💛

বাড়ির সামনে গেটের ওপরে বড় বড় করে কার্ডের উপরে লেখাটার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে আদ্র,,,,,

এই হলুদ সন্ধ্যা,,,এই বিয়ে সবকিছু নিয়ে তার মনে তো অন্যরকম একটা দৃশ্য কল্পিত ছিল,,, যেখানে ছিল খুশি,, আনন্দ,, ভালোবাসা,,, আর অধরা,,,,
এই হলুদ সন্ধ্যাটা অধরারই নামে,,,, কিন্তু আজ এই হলুদ সন্ধ্যায় কোথাও আদ্রের অস্তিত্ব নেই,,,, অথচ এই হলুদ সন্ধ্যা টা তার হতে পারত তার নিজের,,,,,,
টুপ করে কয়েক ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে আদ্রের গাল বেয়ে,,,,,,একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে হাতের তালুতে চোখের পানিটা মুছে নেয় আদ্র,,,,,

********

অধরার বান্ধবীরা সবাই অধরাকে হলুদ শাড়িতে আর হলুদ ফুলের গহনাই সুন্দর করে সাজিয়েছে,,,,
অধরাকে স্টেজে নিয়ে গিয়ে বসায় বান্ধবীরা একটু পরেই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে,,,,,
লিমন আলেক্স আর অধরার বান্ধবীরা সবাই আদ্রকে ধরে বেধে স্টেজের সামনে নিয়ে আসে,,,,, সবাই বলতে থাকে অধরাকে হলুদ লাগাতে,,,,,,

এদিকে আদ্রের কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে,,,, মুখে তার কিছুই প্রকাশ করতে পারছে না,,,,, তার যে কি অবস্থা হচ্ছে সে নিজেই বুঝতে পারছে না,,,, মনে হচ্ছে সবকিছু ছেড়েছুড়ে এখান থেকে পালিয়ে যায়,,,,,,
তার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন,,,, কি-দোষ-ছিল-আমার কোন অপরাধে এমন শাস্তি দিচ্ছিস তুই অধরা???? কি করে পারছিস তুই????

সবার আবদারে হলুদ নিয়ে অধরাকে লাগাতে যায় আদ্র,,,,,, ঠিক তখনই আশুরার সাদা বিড়ালটা স্টেজে ঢুকে পড়ে,,,,আশুরা আর আরিয়ান দুষ্টুমি করে বিড়াল টা ধরতে যায়,,,, ছুটোছুটি করতে গিয়ে আদ্রের হাতে ধাক্কা লেগে হলুদের বাটিটা ছিটকে পড়ে,,,, আদ্র আর অধরা দুজনই হলুদে মাখামাখি হয়ে যায়,,,,,
মুহূর্তেই এসব কিছু হয়ে যাওয়াতে সবাই হা করে অধরা আর আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,অধরা আর আদ্র তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে,,,,,

শামীমা বেগম ছুটে এলেন সামলাতে,,,,, আদ্র কে টেনে নিয়ে গেলেন,,,, হাসিমুখে বললেন ,,,

:বাচ্চারা বুঝতে পারিনি ধাক্কা লেগে পড়ে গেছে ,,,আমি আর এক বাটি হলুদ পাঠিয়ে দিচ্ছি,,,,, আদ্র কে টেনে নিয়ে চলে গেলেন শামীমা বেগম,,,,,,

অধরা আর তার বান্ধবীরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,, একটু পর শামীমা বেগম আর এক বাটি হলুদ তামান্নার হাতে দিয়ে চলে যায়,,,, ওরা আবারো হলুদ সন্ধ্যায় মেতে ওঠে,,,,,,

আদ্র সোজা তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ডুকরে কেঁদে ওঠে,,,,,,,,

*******

❤️❤️❤️আজ অধরার বিয়ে ❤️❤️❤️

চারিদিকে আত্মীয়-স্বজন,, বাচ্চাকাচ্চার হইচই,, বিয়ের আয়োজনে মুখরিত পরিবেশ,,,,,,
গেস্টদের যথারীতি আপ্যায়নের দায়িত্বভার পড়েছে আদ্রের ওপর,,,
আদ্র চেয়েছিল বিয়ের দিন সকালেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে,,,, কিন্তু তার বাবা কাকার জন্য সেটা হয়ে ওঠেনি ,,,,কাজে লাগিয়ে দিয়েছে আদ্র কে ,,,,,বুকে পাথর চাপা দিয়ে হাসিমুখে গেস্টদের তদারক করছে আদ্র,, সাথে লিমন আর আলেক্স হেল্প করছে তাকে,,,,,,

বান্ধবীরা মিলে অধরাকে কনের সাজে সাজিয়ে দেয়,,,,
আজ চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগছে অধরাকে,,,,, সবাই বিভিন্ন রকমের হাসি ঠাট্টা করছে কিন্তু সুখ আনন্দ নেই অধরার মনে,,,,
এ কয়দিন শক্ত হয়ে থাকলেও আজ ভেতরে ভেতরে কষ্টের দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে তার মনটা,,,,, সত্যিই কি কিছুক্ষণ পর সারা জীবনের মতো হারিয়ে যাবে আদ্র তার জীবন থেকে ???সত্যিই কি অধরা হয়ে যাবে অন্য কারো???,,,,,, চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে,,,,,
বান্ধবীরা অধরাকে রেখে বাইরের পরিবেশ দেখতে বেরিয়ে যায়,,,,, অধরা একাই ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে পুরনো কথা ভাবতে থাকে,,,,,,

সেসময় হাসিমুখে অধরার রুমে প্রবেশ করে একটা মেয়ে,,,,,পিছন থেকে অধরা দু কাঁধে হাত রেখে বলে,,,,,

: তুমি তাহলে অধরা!!! বাহ তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে আজকে,,,, একেবারে পরী,,,,,😄😄

অধরা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় মেয়েটার মুখ দেখে চমকে ওঠে,,,,, এটাতো আদ্র ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড,,,, সেদিন ক্লাবে এই মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরেছিল আদ্র,,
মেয়েটিকে দেখে অধরার বুকের ভেতরে ঢিপঢিপ করে বাঁজতে থাকে,,,,,, অজানা এক কষ্ট এসে গলা টিপে ধরে অধরা কে,,,,,

“বাহ,,!!! আজ তার গার্লফ্রেন্ডকেউ ইনভাইট করতে ভোলেনি দেখছি,,,,”
অধরা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে,,,,,
মেয়েটি আবারও বলে,,,,,

: আমি মেঘলা,,, আদ্রের বান্ধবী,, আদ্রের মুখে তোমার অনেক কথা শুনেছি,,, আজকেই তোমাকে প্রথম দেখলাম,,,,,

:হ্যাঁ ,,,আপনি হয়তো আজ আমাকে প্রথম দেখছেন,,, কিন্তু এর আগে আমি আপনাকে দেখেছি,,,,, আপনিতো আদ্র ভাইয়ার গার্ল………….

অধরা আরো কিছু বলতে নিবে তার আগেই লম্বা ফর্শা একটা স্মার্ট ছেলে ছোট একটা বাচ্চা ছেলেকে কোলে নিয়ে অধরা রুমে প্রবেশ করে,,, হাসতে হাসতে মেঘলার দিকে এগিয়ে এসে বলে,,,,,,,

: মেঘলা ধরো তোমার ছেলেকে,,,,, আমি সামলাতে পারছিনা,,, জানো তো ও তোমাকে ছাড়া কারও কাছেই স্থির হয়ে থাকতে চাই না,,,, বাইরে অনেক কাজে আদ্রকে হেল্প করতে হচ্ছে,,,, ধরো তুমি তোমার ছেলেকে,,,,,

মেঘলা শব্দ করে হেসে এগিয়ে গিয়ে বাচ্চা ছেলেটি কে পরম যত্নে বুকে আগলে ধরে,,,, হাসিমুখে বলে,,,,

: বাবা হয়ে ছেলেকে সামলাতে পারছো না????
তুমি তো দেখছি বাবা নামের কলঙ্ক,,,,,!!!!

: হ্যাঁ এখন তো সেটা বলবেই,,,,,, ধরো তুমি ওদিকে কাজ আছে,,,,,
বলে বাচ্চা ছেলেটি কে মেঘনার কোলে দিয়ে বেরিয়ে যায় ছেলেটা,,,,,,

অধরা এতক্ষণ হতবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলো,,,, কি হচ্ছে সেটা বোধগম্য হচ্ছে না অধরার,,,, মাথাটা পুরো ঝিমঝিম করছে,,, চোখের সামনে ফাঁকা হয়ে আসছে যেনো,,,,,,
অধরা কে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘলা হেসে বলে,,,,

: আমার ছেলের টুকুন,,,, আর ওইটা আমার হাজব্যান্ড,,,, জানোতো অধরা ,,,!!! আমার ছেলেটা জন্মের পর থেকেই বেশ অসুস্থ ছিলো,,, রক্তশূন্যতায় ভুগছিলো,,,, ডাক্তার বলেছিলো পরিমাণ মতো রক্ত তার শরীরে দিতে না পারলে আমার ছেলেকে বাঁচানো যাবে না,,,, খুব ভেঙে পড়েছিলাম ,,,সেসময় আদ্র নিজের রক্ত দিয়ে আমার ছেলেটাকে সুস্থ করে তোলে,,, আসলেই আদ্রের মত বন্ধু পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার,,,,,, সময়ে অসময়ে আদ্র আমাদের অনেক হেল্প করেছে,,,,,

অধরার কান কথাগুলো যেন হজম করতে পারছে না,,,,, এসব কি শুনছে অধরা ,,,,তাহলে সেদিন তার চোখের দেখা টা ভুল ছিলো,,,, সেদিন গার্লফ্রেন্ড বলে নয় বরং বন্ধুত্বর কৃতজ্ঞতায় জড়িয়ে ধরেছিল আদ্র ভাইয়াকে,,,, আর আমি কিনা,,,,,,,,,,, আর ভাবতে পারেনা অধরা,,,,,,, দুচোখ ছাপিয়ে জল চলে আসে,,,,,

মেঘলার ছেলে হিসু করাতে মেঘলার ড্রেসটা অনেকখানি ভিজে যায় মেঘলা সেটা পরিষ্কার করতে অধরার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,,,,,

মেঘলা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই অধরা ধাম করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়,,,,,,,

কি করবে এখন অধরা,,,, একটা তুচ্ছ কারণে ভুল বুঝে এত বড় স্টেপ নিলো অধরা ,,,,,অথচ আদ্রের কোন দোষই এখানে নেই,,,,, কিভাবে আদ্র কে ফেস করবে অধরা ??কত বড় ভুল করতে যাচ্ছে সে,,,,আর এর শেষ কোথায়???? কি করবে এখন ??? সারা ঘরময় অস্থিরভাবে পায়চারী করতে থাকে অধরা,,,,, গলা শুকিয়ে আসছে,,, মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে,,, কষ্ট আর কান্না গুলো গলায় দলা পাকিয়ে আসছে,,,,
কি করবে সে ???পালিয়ে যাবে ??নাকি আদ্র ভাইয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলবে,,,,
না না কিভাবে আদ্র ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে অধরা !!!!!!খুব বড় যে অন্যায় করে ফেলেছে সে,,,,,,,

মাথা কাজ করে না অধরার ,,,,,,কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারে না সে,,,,,কিন্তু এই বিয়েটা কি করে করবে সে??? ভুল বুঝে আদ্রের চোখের সামনে এত বড় একটা কাজ সে কিছুতেই করতে পারে না,,,,,,
ছুটে ব্যালকনিতে যাই অধরা,,,,, পালাবে ,,,,,,হ্যাঁ সেই বিয়ে থেকে পালিয়ে যাবে,,,,,,,

ব্যালকনিতে গিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে আত্মীয় স্বজন গিজগিজ করছে ,,,,,আবারো হতাশ হয়ে ফিরে আসে রুমে,,,,, না,,,, পালাবে না,,,,, সামনে তো নয়ই,, পেছনের রাস্তায় আত্মীয়-স্বজনের ভরে আছে,,,, পালানোর রাস্তা বন্ধ ,,,,,এখন কি করবে অধরা ???সবার সামনে গিয়ে এখন এই মুহূর্তে বিয়েকে “না” বলে বাবা-মায়ের অসম্মান সে কি করে করবে ????আবার সবটা জানার পরেও আদ্র কে ছেড়ে এত বড় একটা ভুল কি করে করবে সে???

কোন একটা কঠিন সিদ্ধান্ত তাকে নিতেই হবে,,,, চোখমুখ শক্ত করে অধরা,,,,, রুম থেকে বের হতে যাবে তখনি কানে আসে,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,বর এসেছে বর এসেছে,,,,,,,,,,,,,

অধরা রুমের দরজা লাগিয়ে ছিটকে এসে পড়ে,,,, কান দুটো চেপে ধরে চিৎকার করে কেঁদে ফেলে,,,,,
এই বিয়ে থেকে বেরোনোর সব রাস্তায় তো বন্ধ হয়ে গেছে এক এক করে,,,,,, শুধুমাত্র তার ছোট্ট একটা ভুলের কারণে আজ তার জীবনের সব থেকে মূল্যবান জিনিস কে হারাতে বসেছে সে,,,,

কিছু একটা ভেবে অধরা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে,,,,,, সে বুঝে যায় তার কি করতে হবে,,,,, হ্যাঁ এছাড়া আর কোন উপায় সে দেখতে পাচ্ছে না,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,