তোমাতে বিভোর আমি পর্ব-০৪

0
268

#তোমাতে বিভোর আমি
পর্ব,,,,,,,৪
লেখিকা,,,,,, মৌমো তিতলি

************

আদ্র ভাইয়া রেগেমেগে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলেন লাকি আপু ,,বড়মা আর আম্মু,,,,, আমি তখনো কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে কাঁদছি,,, লাকি আপু এসে আমাকে ধরে জিজ্ঞাসা করলো,,,

: কি হয়েছে অধরা?? কি করেছিস তুই ??ভাইয়া এত রেগে গেল কেনো??

আম্মু আমাকে টেনে এক পাশে এনে বললো,,

: নিশ্চয়ই তুই কোন অন্যায় করেছিস ,,না হলে আদ্র কখনো এতটা রেগে যায় না,, কি করেছিস বল??

বড়মা রাগ করে বললো ,,,,,

:তোরা সব সময় অধরাকে কেনো দোষ দিচ্ছিস সবটা না জেনে?? জানিস তো আদ্রের কেমন রাগ,,,,,
তারপর আমাকে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,,,

: অধরা আমি জানি তুই এমন কোন কাজ করতে পারিস না যার জন্য আদ্র এতটা রেগে যাবে,,, কিন্তু কি হয়েছে তুই খুলে বল আমাদের,,,,,

কিন্তু আমার তখন রাগে মাথা দপদপ করছে ,,,এত কিছুর কথা বলা বা শোনার কোন ইচ্ছা আমার নেই,,,, আম্মু ,,লাকি আপু ,,বড়মা সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করছে কিন্তু আমি কারো কথার জবাব দিলাম না ,,,ওখান থেকে এক দৌড়ে নিজের ঘরে চলে এলাম,,, দুম করে দরজাটা লাগিয়ে বিছানার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বালিশ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম,,,

কেন ভাইয়া সব সময় আমার সাথে এরকম করে,,, আমার তো কোন দোষ ছিল না,,, নিজের বন্ধু বান্ধবীদের সাথেও কি আমি একটু আনন্দ করতে পারবোনা!!! কি এমন অপরাধ করে ফেলেছি যার জন্য আমার সাথে আজ এত বাজে ব্যবহার করলো,,,,,

আমি আর কখনো ভাইয়ার সামনে যাবোনা,,, কখনো তার সাথে কথা বলবো না,,, আমি তো খারাপ ,,,আমার সাথে কারো কথা বলার দরকার নেই,,,,
সারাদিন আর ঘর থেকে বের হলাম না ,,,,রাতে খাবার জন্য সবাই ডাকাডাকি করলেও আমি দরজা খুললাম না,,,,,

এদিকে আদ্র রেগেমেগে সেই দুপুর বেলা নদীর পাড়ে এসে বসে আছে মাথার মধ্যে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার,,,, অধরা কেন বোঝেনা আমি ওকে খুব ভালোবাসি,,, ওর আশেপাশে কোন ছেলে আমার সহ্য হয় না,,, ওকে বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও কেন ছেলেদের সাথে কথা বলবে,,, কখনো আবির কখনো তন্ময় সবাই কেন অধরার দিকেই ঝুঁকে পড়বে,,,,, অধরা কি বোঝে না যে আমি সবার থেকে ওকে লুকিয়ে রাখতে চাই আমার এই বুকের মাঝে,,,, ওকি শুধু আমার শাসনটাই দেখতে পাই?? ওকে হারানোর ভয় ওর প্রতি আমার ভালোবাসা সেগুলোকে ও দেখতে পাই না???

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আদ্র খুব ভালো করে বুঝে গেছে,, আজকের কাজটা ও একদম ঠিক করেনি,,, খুব বাজে ব্যবহার করে ফেলেছে অধরার সাথে,,,

ওভাবে রেগেমেগে চলে আসলাম ,,জানিনা মেয়েটা কি করছে এখন,,, এ কথা মনে হতেই হুড়মুড় করে গাড়ি নিয়ে আদ্র বাড়ির দিকে ছুটলো,,,,,,

বাড়িতে ফিরে আদ্র দেখে সবাই ডাইনিং টেবিলে মুখ গোমড়া করে বসে আছে,,,, আদ্র কে দেখে তার মা শামীমা এগিয়ে এসে বলল,,,,

:কোথায় ছিলি তুই??? দুপুরে মেয়েটার সাথে ওভাবে রাগারাগি করে বেরিয়ে গেলি,,,, সেই থেকে মেয়েটা দরজা আটকে বসে আছে,,,, বাড়িতে এতগুলো লোক এখনো পর্যন্ত না খেয়ে বসে আছে ,,,,তার মুখে খাবার না তুলে কেউ কখনো খেয়েছে তুই বল?????
কি বলেছিস তুই ওকে??? যার জন্যও কারো কথাই শুনছে না,,, ওর বড় আব্বুর কথাও শুনলো না,,, আমরা সবাই ডাকলাম কারো কথা শুনলো না ,,,,,দরজাটাও খুললো না,,,,, জানিনা ভিতরে বসে মেয়েটা কি করছে,,,,

মায়ের কথাগুলো শুনে আদ্রর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল,,,,

: কি বলছ তুমি আম্মু??? ও দুপুর থেকে ঘর থেকে বের হয়নি???
বলেই হন্তদন্ত হয়ে অধরার ঘরের দিকে ছুটল আদ্র,,,,

এদিকে আমি মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছি ঘরের মধ্যে,,, বেরোবোই না আজ,,, যা হয় হবে,,,
হঠাৎ আবার দরজা ধাক্কানোর শব্দে চমকে উঠলাম,,,

কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পারলাম আদ্র ভাইয়া এসেছে,,,,

: অধরা দরজা খোল,,,, শুনতে পাচ্ছিস তুই ???আমি বলছি দরজা খোল!!!!

মুখ ভেংচে বিড়বিড় করে বললাম,,,,উউউউউ,,,,, আইছে দরজা খোল ,,,,,খুলবোনা দরজা,,,,😏😏😏😏

: অধরা এবার কিন্তু রাগ হচ্ছে ,,,,,আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলবো,,,, তারপর তোর কি অবস্থা হবে ভেবে দেখ ,,,,,এতগুলো মানুষ তোকে বলছে কারো কথা তোর কাছে মূল্য নেই না???? দরজা খোল বলছি!!!!!

আমি একেবারে ফোলা বেলুনের মত মুখ ফুলিয়ে বসে আছি,,,,, কিন্তু এই ছেলের কথাবার্তা গুলো শুনে আমার এখন ফ্রিতে উগান্ডা চলে যেতে ইচ্ছা করছে,,,
আমি রাগ করেছি কোথায় ভালোবেসে আমার রাগ ভাঙ্গাবে তা না!!!! রীতিমতো থ্রেট দিচ্ছে এই সাদা বিলাইটা,,,,,, এত এটিটিউড কোত্থেকে আসে লোকের,,,, আল্লাহ এখনো একটু সুবুদ্ধি দাও,,,,,,

আদ্র ভাইয়া আবার হুংকার দিল,,,,,,

: অধরা আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না,,,,, দরজা কিন্তু সত্যিই ভেঙে ফেলবো,,,, আর তার সাথে তোর শরীরে যতগুলো হাড় আছে সবগুলা একটা একটা করে ভেঙে রেখে দেবো বলে দিচ্ছি,,,,, এতই যখন ঘরের মধ্যে থাকার ইচ্ছে একেবারে ঠ্যাং ভেঙে ঘরের মধ্যে বসিয়ে রাখবো,,,,

এই ছেলেকে দিয়ে মোটেও বিশ্বাস নেই ,,,যা বলছে সেটা করতে পারে,,,, আল্লাহ গো,,আমার তো এখনো বিয়েও হয়নি ,,,আমার রোমান্টিক গুলুমুলু জামাই হয়নি এখনো,,, আমার পুচকু পুচকু বাঁচ্চাও এখনো হয়নি,,,, আর এখনই যদি আমার হাত-পা ভেঙে ঘরের মধ্যে বসিয়ে রাখে তাহলে তো আমার বিয়ে হবে না,, এই শালা উগান্ডার জামাই,,,ধলা ইঁদুর ,,সফেদ হাতি যা বলছে সেগুলো করতেই পারে ,,,,,,তার থেকে ভালো আমি দরজাটা খুলে দিই,,,,, এদিকে দরজা ধাক্কানোর শব্দে আমার কান ঝালাপালা,,,

আমি গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে আবার বিছানায় এসে মুখ ফুলিয়ে বসে পড়লাম,,,,
আদ্র ভাইয়া শান্তভাবে আমার ঘরের মধ্যে ঢুকলো,,,, তা আসুক গে 😏😏😏,,,, আমার কি,, আমি তো ঠিক করেই নিয়েছি আর কথা বলবো না😖,,,, যা বলে বলুক আমি কোনো উত্তর দেবো না,,,,🤐🤐

আদ্র ভাইয়া আস্তে করে এসে আমার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসলো,,,, তারপর আমার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,,,,

: সরি অধু,,,,,

:___________

: প্লিজ সরি,,,,,,

:__________________

: কথা বলবি না??? খুব রাগ হয়েছে আমার উপর???

______________

: আচ্ছা কি করলে তোর রাগ ভাঙবে বল?? কান ধরবো??? তুই বল তাহলে আমি কান ধরে উঠবস করছি,,, বল,,, বল করবো???

:😳😳😳😳😳😳 দ্য গ্রেট আদ্র বলে কি এগুলা🤔🤔 ভাবা যায়???,,,, আমার রাগ ভাঙ্গাতে সে কিনা কান ধরে উঠবস করতে চাইছে??? ভেতরে হাসিগুলো সুড়সুড় করে উপরের দিকে উঠতে চাইছে,,,, কিন্তু আমিতো হাসবো না,,,, আইএম সিরিয়াস,,,,🙄🙄🙄🙄

: বল অধু,,,,, প্লিজ কথা বল বলছিতো সরি,,,,,

:_____________

: এই তোর ভালো কথা কানে যায় না ???এবার কিন্তু আমার রাগ হচ্ছে!!!! এক থাপ্পর মেরে সবগুলো দাঁত ফেলে দেবো বেয়াদব কোথাকার!!!!!! বড়দের কথা কানে যায় না????

:🥺🥺🥺🥺🥺 দেখেছো দুমিনিট যায়নি অমনি নিজের ফর্মে ফিরেছেন মিস্টার আদ্রিয়ান রাইজাদা আদ্র,,,,,,

আমাকে তাও কথা বলতে না দেখে এবার হুট করেই আমাকে কোলে তুলে নিলো আদ্র ভাইয়া,,,, তারপর গটগট করে হেঁটে এসে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিলো,,,,

বড়মা প্লেটে খাবার সাজিয়ে দিলে সেটা নিয়ে আমার মুখে খাবার ধরলো,, বললো,,,,

: আর একটাও কথা নয় ,,,,হা কর!!!!!

:☹️☹️☹️☹️☹️

: অধরাআআআআআ 😠😠😠😠😠😠😠😠😠

আদ্র ভাইয়ার সিংহ গর্জনে অন্তর কেঁপে উঠলো আমার,,,, আর চুপ করে বসে থাকতে সাহস হলো না,,, অমনি লক্ষী মেয়ের মত হা করলাম ,,,সাথে সাথে এক দলা খাবার আমার মুখের ভিতরে প্রবেশ করলো,,, তারপর আস্তে আস্তে সব খাবার শেষ করে আবার গটগট করে ঘরে চলে এলাম ,,তবু কথা বললাম না,,,,

আজ রাতেও আমি অনুভব করলাম কারো কোমল দুটি হাত আমার সারা মুখ জুড়ে বিরাজ করছে ,,,,তারপর ঠোটে ,,কপালে ,,মুখে অসংখ্যবার কারো ঠোটের ছোয়া অনুভব করতে পারছি,,, হঠাৎ করে মনে হলো আমার মুখের ওপর ঠান্ডা তরল কিছু পড়লো ,,,,সাথে সাথে নড়েচড়ে উঠে চোখ খুলে ফেললাম,,,, ঘর পুরো অন্ধকার হয়ে আছে ,,,,কে ছিল ঘরে ???কেউ কি এসেছিলো??? অন্ধকারে তো কিছুই দেখা যাচ্ছে না,,, হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিলাম ,,,,,আশুরা গুটিসুটি মেরে এক পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে,,,, দরজাটা এমনিতেও লক করা হয় না যেমন ভেজিয়ে দেয়া থাকে তেমনি আছে,,,,, তাহলে আমার এরকম মনে হল কেনো যে কেউ ঘরে ছিলো,,,, হঠাৎ করেই আমার হাতটা মুখের ওপরে চলে যায় ,,হাতটা সামনে এনে দেখি পানি ,,,,তারমানে আমার মুখের উপর পানি জমে আছে,,, কিন্তু এখানে পানি কোত্থেকে আসবে??? কিছুই বুঝতে পারলাম না ,,,সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে,,, এসব ভাবতে ভাবতে আবার শুয়ে পড়লাম,,, তারপর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম,,,,,

***********

সকালের স্নিগ্ধ রোদ্দুর মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল আমার,,,,,, ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখি বড় আব্বু আর আব্বু মিলে কিছু একটা প্ল্যান করছে,,,, যথারীতি বড়মা আম্মু আর লাকি আপু খাবার গোছাতে ব্যস্ত,,,, আশুরা আরিয়ানকে নিয়ে খেলছে সাথে তাদের বিড়ালটা,,,
আমি গিয়ে আব্বুর পাশে বসলাম,,,, সালাম দিলাম আব্বু আর বড় আব্বুকে,,,,,

বড় আব্বু হাসিমুখে জবাব দিয়ে বললেন,,,,

: অধরা মা,,,,,, আমরা একটা প্ল্যান করছি আশা করছি তোমার পছন্দ হবে,,,,

: কিসের প্লেন বড় আব্বু???

:গত দু বছরে তো করোনার জন্য চারিদিকের অবস্থা খুবই খারাপ,,, তাই বিগত দুবছর আমরা কোথাও বেড়াতে যাইনি,,,, এবারও কোথাও বেরোনো হবে না,,, তাই ভাবছি বাড়ির সদস্যরা আর তোমার কিছু বন্ধু বান্ধবী মিলে আমাদের বাগান বাড়িটাতে একটা পিকনিকের আয়োজন করবো,,,,, কেমন হয় বলতো????

: ওয়াও,,,, দারুন প্ল্যান বড় আব্বু,,,,😁😁😁😁 আমারতো এখনি খুব আনন্দ হচ্ছে 😄😄😄😄কবে হবে বড় আব্বু????

: এই তো সামনের শুক্রবারে,,,,, প্ল্যানটা কিন্তু আমরা করিনি,,,, আদ্র করেছে,,,,, নেক্সট উইকে আদ্র অফিসে জয়েন করছে তারপর তো আর সে এরকম কোনো সুযোগ সহজে পাবে না তাই এই আয়োজন করা হয়েছে,,, তুমি তোমার বন্ধু বান্ধবী দেরকে ইনভাইট করে ফেলো,,,,

সাদা বিলাইটা কথা শুনে আবার মনটা খারাপ হয়ে গেল,,, এনি ওয়ে,,,,,, যার প্ল্যান হয় হোক,,,, আমারতো পিকনিক হলেই মজা,,, বাকিটা পরে দেখা যাবে,,,,,,

এক ছুটে ঘরে এসে এক এক করে সবাইকে ফোন করে বলে দিলাম ,,,,রিয়া আসতে পারবে না বলে দিলো,,, শুক্রবারে তন্ময় এর সাথে কোথাও যাওয়ার প্ল্যান করেছে বোধহয়,,,, বাকি তামান্না,, সোমা ,,লিমন আর আলেক্স আসবে বলে দিলো,,,

আমরাও গভীর আগ্রহের সাথে নেক্সট শুক্রবারের অপেক্ষা করতে লাগলাম,,,,,,

********
শুক্রবার সকালে সবাই গোছগাছ করে রেডি হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম,,,, এই কয়েকটা দিন আমি একবারও আদ্র ভাইয়ের সাথে কথা বলিনি,,,,,
আদ্র ভাইয়াটাও যেন কেমন হয়ে গেছে,,, আগের মতো খুব একটা কথা বলছে না,,, কেমন একটা খাপছাড়া অন্যমনস্ক ভাব,,,,, যা হয় হোক,, আমি কেন এতো ভাবছি,,,,,😏
সে তো একবারও আমার কথা ভাবেনি,,, নিজে থেকে একবারও কথা বলতেও আসেনি,,, আমিও ভাববো না,,,
যদিও সত্যিই এই এক সপ্তাহ খুব শূন্যতা অনুভব করেছি,,,, আসলে সাদা বিলাটাকে মিস করেছি,,,, আমি রাগ করলেও সাদা বিলাইটা রাগ,, বকা ,,,শাসন,, কেয়ারিং এসব কিছুই একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছি,,,, আজ কয়েকটা দিন সেই অভ্যেসের গড়মিলে আমিও কম কষ্ট পাইনি,,, তবুও সে তো কথা বলতে আসিনি ,,,,আমি কেনো যাবো কথা বলতে 😏😏😏

গাড়িতে আমি সোমা আলেক্স তামান্না লিমন সবাই আনন্দ করতে করতে বাগান বাড়িতে এসে উপস্থিত হলাম,,,,

বাগানবাড়ি টা আগেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে,,, আসলেই অপরূপ প্রকৃতির মাঝে বাগান বাড়িটা দেখতে ছবির মতোই সুন্দর,,,,, চারিদিকে সবুজের সমারোহ আর বাহারি রঙের ফুল ফলের গাছ এ ভরা দেখলেই কেমন চোখটা জুড়িয়ে আসে,,,, আমি গিয়ে ফুলের বাগানে দোলনায় বসে পড়লাম,,, আমার পাশে তামান্না আর একপাশে সোমা,,,,, আলেক্স আমাদের দোল দিতে লাগলো আর লিমন ভিডিও করতে লাগলো,,,,

হঠাৎ করে তামান্না বলল,,,,

: কিরে অধরা তুই কি আদ্র ভাইয়ের সাথে কথা বলছিস না ???আদ্র ভাইয়াকে তো কোথাও দেখছি না,,,

আমার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল,,,,, বললাম,,

: দেখ তিমি,,,,, এসব কথা এখন বলিস না ভালো লাগছেনা,,,,, আমরা এখানে আনন্দ করতে এসেছি আনন্দ করি,,,,
আমার কথা শুনে আর কেউ কিছু বলল না,,,,

আমরা বেশ আনন্দের সাথে ঘোরাফেরা করছি এরই মাঝে আকাশে ঘন মেঘের আগমন ,,,দেখেই বুঝতে পারলাম একটু পরে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামবে ,,,আমি সোমা আর তামান্নার হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে গেলাম,,, বৃষ্টি হলেই ভিজবো সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য,,,,,
আমার ধারণা খুব একটা ভুল নয় কিছুক্ষণ পরেই ঝমঝম করে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামলো,,,,আমরা তিনজন ছাদে লাফালাফি করে ভিজতে লাগলাম বৃষ্টিতে ভিজতে বরাবরই আমার খুব ভালো লাগে আগে তো বাড়িতে থাকতে আদ্র ভাইয়ের জন্য খুব একটা ভেজা সুযোগ পেতাম না,,,, কিন্তু এখন তো আর ভাইয়ার সাথে কথা বলছি না,,, তাই সাহস করেই ভিজতে চলে এসেছি,,,,

আদ্র গিয়েছিল দুপুরের কিছু খাবারের আইটেম কিনে নিয়ে আসতে,,,, আসতে আসতে বৃষ্টির কবলে পড়েছে সে,,,, সাথে গাড়ি থাকায় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি,,, বাড়ির পার্কিং লটে গাড়ি রেখে নেমে বাসার ভেতরে প্রবেশ করবে তার আগেই তার নজর যায়য়
ছাদের দিকে,,,,, চোখ দুটো মুগ্ধতায় আটকে যায় আদ্রর,,,,,

দুহাত মেলে চোখ বুজে বৃষ্টিবিলাসে মেতে আছে অধরা,,,, সাদা রংয়ের চুরিদার পরেছে অধরা,,হাতে সাদা চুড়ি,,, কানের সিলভার কালারের ঝুমকো,,, বৃষ্টিতে ভিজে জামা শরীরের সাথে মিশে আছে,,,,, সেদিকে তার কোন হুশ নেই,,,,, আদ্র আস্তে আস্তে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে হাতের জিনিসপত্র গুলো রেখে ছাদের দিকে পা বাড়ায়,,,,,

আদ্র কে ছাদে আসতে দেখে সোমা আর তামান্না এক ছুটে বেরিয়ে যায় ছাদ থেকে ,,,,,,কিন্তু অধরার কোন হুশ নেই ,,,সে দুহাত মেলে বৃষ্টিবিলাসে ব্যস্ত ,,,, সোমা আর তামান্না যে ছাদ থেকে চলে গেছে সেটাও বুঝতে পারিনি অধরা,,,,, আদ্র আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় অধরার দিকে,,,
অধরার পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে দুহাত মেলে অধরার হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে আঙুল আলতো করে চেপে ধরে আদ্র,,,,পেছনে কারো অস্তিত্ব আর হাতের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে ওঠে অধরা,,,,,,

আরামে আনন্দে বৃষ্টি বিলাস করছিলাম হঠাৎ করেই মনে হলো পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে ,,,,তারপর আমার হাতের আঙ্গুলে ভাজে অন্য কারো আঙুলের অস্তিত্ব টের পেয়ে বুঝতে পারলাম পিছনে কে দাঁড়িয়ে আছে,,,, সাথে সাথে হার্ট বিট জোরে জোরে বিট করতে থাকলো,,,,,
আমার পিঠ থেকে চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে মুখগুলো আদ্র ভাইয়া,,,,, সাথে সাথে আমার হাতের মাঝে আটকে থাকা ভাইয়ার হাত চেপে ধরলাম আমি,,,,, অদ্ভুত অনুভূতির শিহরণ বয়ে যাচ্ছে সারা শরীরে,,,,,
আমার কাঁপুনি টের পেয়ে আদ্র ভাইয়া কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,,,,

: আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারলি অধু???

:_____________🥺🥺🥺🥺

: তুই জানিস এই এক সপ্তাহ আমার কতটা কষ্ট হয়েছে,,,,কিভাবে পারলি তুই ???আমিতো তোকে সরি বলেছিলাম!!! তারপরও কি তোর হৃদয় গললো
না???? এত কেন নিষ্ঠুর তুই??? আমাকে এভাবে কষ্ট দিতে, এভাবে পোড়াতে তোর খুব ভালো লাগে বল??? আর কত কষ্ট দিতে চাস আমায়???????

ওমা,,,,,😲😲😲 বলে কি এই সাদা বিলাই,,,, আমার সাথে কথা না বলে এতোটাই কি কষ্ট পেয়েছে ভাইয়া??? কিন্তু কেন পেয়েছে??? আমি তো খারাপ আমার সাথে কথা না বলে তার এত কষ্ট হওয়ার কি আছে???

: সেদিন তোকে রেগে কিছু কথা বলেছিলাম তার জন্য তুই এক সপ্তাহ আমার সাথে কথা বললি না,,,,সেদিন তুই যতটা কষ্ট পেয়েছিস তার থেকে হাজারগুন কষ্ট তুই আমাকে ফিরিয়ে দিলি,,, তারপরও কি তোর মন ভরে না???

আমি কি বলব বুঝতে পারছি না ,,,আদ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে,,, কিন্তু কেন হচ্ছে ???আদ্র ভাইয়ার কষ্ট যেন আমার সহ্য হচ্ছে না ,,,,গলায় কান্না দলা পাকিয়ে আসছে,,,,,, এটা অভিমান না অন্য কিছু বুঝতে পারছিনা,,,,,

আদ্র ভাইয়া আস্তে করে আমাকে তার দিকে ফেরালো,,,, আমার মুখটা দু হাতে আলতো করে উঁচু করে ধরে কেমন একটা ধরা গলায় বললো,,,,

: অধু তাকা আমার দিকে,,,,!!!!!!

:🙄🙄

:ওভাবে তাকাচ্ছিস কেনো ???ভালো করে তাকিয়ে দেখ আমার চোখে!!!! কোন কষ্ট কি তুই দেখতে পাচ্ছিস না??? তুই কি কিছুই বুঝিস না????

:🥺🥺🥺🥺🥺🥺🥺🥺🥺

আমাকে ছেড়ে দিয়ে কেমন একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল আদ্র ভাইয়া,,,,,, বলল,

: আজ এতটাই ঘৃণার পাত্র হয়ে গেছি আমি তোর কাছে,,, তাই একেবারে কথা বলবি না বলেই ঠিক করেছিস তাই না???

: ভ,,ভা,,ভাইয়াআআআ,,,,🥺🥺🥺 অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলাম আমি,,,

আদ্র ভাইয়া যেন থমকে গেছে,, হুট করে আমার দিকে তাকিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,,,,, বললো,,,

: প্লিজ অধু আমাকে ক্ষমা করে দে ,,,,তুই আমার সাথে কথা না বললে আমি সহ্য করতে পারিনা,,, বিশ্বাস কর আমার এখানে খুব কষ্ট হয়,,,,, বলে আমার হাতটা ভাইয়ার বুকের বাম পাশে চেপে ধরলো,,,,

আমি অবাক হয়ে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি,,, এমন কেন করছে আজ আদ্র ভাইয়া!!!!
তার চোখে যেনো আমি আজ অন্য একটা ফিলিংস দেখতে পাচ্ছি,,,, যা আমি মাঝে মাঝেই দেখেছি,,, কিন্তু আজ সেই ফিলিংসটা আমি কিছুতেই এগিয়ে থাকতে পারছি না,,,, কি বলতে চাচ্ছে আদ্র ভাইয়ের চোখ দুটো???? ওই চোখের দিকে আমি বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলাম না,,,, চোখ নামিয়ে নিলাম আমি,,,,

বুকের মধ্যে এক অজানা অনুভূতি এসে আঁকড়ে ধরলো,,,, তাহলে কি আমার অপেক্ষার দিন শেষ হলো,,, আমিও কি আদ্র ভাইয়ের প্রতি এক অন্যরকম অনুভূতি পোষণ করি না ?????
কেন আমি তার এই শাসন তার এই অত্যাচার বকা সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করি সেটা কি আদৌ ভাইয়া বোঝে????
আমার মনে আদ্র ভাইয়ের জন্য কি জায়গা সেটা তো আমিও বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি বারবার,,,, কিন্তু আজ আদ্র ভাইয়ের চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারছি না,,, তাহলে কি আদ্র ভাইয়াও ,,,,,,,,,,,,,,,,,

আর কিছু ভাবতে পারলাম না আমি,,,, চোখে পানি এসে যাচ্ছে আমার,,,, বৃষ্টির পানিতে সেই পানি একাকার হয়ে আড়াল করে নিচ্ছে আপন খেয়ালে,,, আমি জানি এটা আমার “আনন্দ অশ্রু”

ভাইয়া কি আর কিছু বলতে দিলাম না আমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আদ্র ভাইয়াকে,,,,,
আদ্র ভাইয়াও পরম আবেশে আমাকে জড়িয়ে ধরলো,,,
মিটে গেল সব মান অভিমান,,, ধুয়ে মুছে গেলো সব আজকের এই বৃষ্টির পানিতে,,,,,

চলবে…………….