তোমার চোখের অনন্ত মায়ায় পর্ব-২৬+২৭

0
271

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_২৬

—ছেলে কেমন আমি কি জানিনা,আমিও শিওর ওকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করছে,তোরা সবাই নিশ্চিন্তে থাক,আল্লাহর ওপরে ভরসা রাখ।

—নিশ্চিন্তে কি থাকা যায় ভাই,হুট করে কি থেকে কি হয়ে গেলো,সব তো ভালোই চলছিলো।কার এমন শত্রুতা আছে আমার ছেলের সাথে (ইয়াকুব জামান)

এরমধ্যেই খাদিজাতুল নেসা চলে আসলেন,ইয়াকুব জামান ও আয়ুব জামান কে দেখে নাহিদ বলে উঠলো,

—চাচি আম্মু,ও-ই যে আব্বু আর বড় আব্বু,চলো

—কোথায়,আমার ছেলে কোথায়? (এগিয়ে এসে)

—কাস্টার্ডিতে আছে,এখন দেখা করা যাবে না (আয়ুব জামান)

—আমি আমার ছেলের সাথে দেখা করতে চাই,বুঝতে পারছো

—পাগলামি করোনা খাদিজা,এখানে আমাদের ইচ্ছেমতো কিছু চলবে না,কেউ বা কারা আমাদের ছেলেকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে (ইয়াকুব জামান)

—আসসালামু আলাইকুম ভাবি,আমি ইন্তিহাজের কেস টা হাতে নিয়েছি,আমি ওকে নির্দোষ প্রমাণ করবোই,চিন্তা করবেন না (আব্দুল জব্বার শেখ)


রাত সাড়ে ন’টা…
খাবার খাওয়ার জন্য ইয়ানা’কে বারবার ডাকা স্বত্ত্বেও সে আসছে না,দরজা বন্ধ করে বসে আছে।আমেনা বেগম এবার রেগে ওপরে যেতে লাগলে আয়ুব জামান বললেন,

—ছেলেটা থানায় আছে,এইজন্যই মেয়েটার মন খারাপ,ওকে আর ডেকো না

—এই অবস্থায় খাবারে একদম অবহেলা করা যাবে না,ও কি বাচ্চা নাকি যে আমাদের সব বুঝিয়ে বলতে হবে,ও কি এখন একা যে যা মন চায় তাই করবে,আরে বাচ্চাটার কথাও তো ভাবতে হবে নাকি।

—বাচ্চা মানে? (ইয়াকুব জামান)

—তোমাদের একটা কথা জানানো হয়নি,ইয়ানা মা হতে চলেছে।কিছুদিন ধরেই নানান সিনড্রোম দেখা দিচ্ছিলো,আজ প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে দেখি পজিটিভ আসছে (খাদিজাতুল নেসা)

—হোয়াট,ইয়ানা প্রেগন্যান্ট আর তুমি এখন বলছো আমাদের, এতবড় একটা সুখবর..

—এই নিউজটা ইন্তিহাজ জানলে কতো খুশি হতো আজ, আজকে এতবড় একটা খুশীর দিনে ছেলেটা জেলে রয়েছে (হতাশাগ্রস্ত ভাবে বললেন আয়ুব জামান)

—আল্লাহ যে কি লিখে রাখছে কপালে,তিনিই জানেন,কার নজর যে পড়লো আমাদের ছেলেটার ওপর।
ভাই,আপনি একটু খাবার নিয়ে যান না,ইয়ানা তো আপনার কথা শুনে বলেন (খাদিজাতুল নেসা)

—হুম দাও,খাবার বেড়ে দাও,আজ বাবা-মেয়ে একসঙ্গে ডিনার করবো।


বালিশে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কেঁদে চলেছে ইয়ানা,হঠাৎ দরজায় এসে কড়া নাড়ছে ওর আব্বু,এতদিন পর ওর বাবা এভাবে ভালোবেসে ডাকছে,বেশ অবাক হলো ইয়ানা।
ব্যস্ততার কারণে ওর বাবা তো ওকে সময়ই দিতে পারে না আলাদা ভাবে,চোখ মুছে ইয়ানা ধীরেসুস্থে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো,ওর আব্বু খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় এসে বসলেন।

—কি হয়েছে আম্মু,বাড়ির সবাই তোমাকে ডাকাডাকি করছে তুমি কথা শুনছো না কেন?

—আব্বু ওদিকের কি খবর বলো না,সব ঠিক হয়ে যাবে তো?

—হুম হবে,কিন্তু তোকেও তো ঠিক থাকতে হবে মা,তোর তো এখন অনেক কেয়ারফুল থাকতে হবে।

—আমার কিছু ভালো লাগছে না আব্বু

—এখানে বসতো দেখি,আজ আমরা বাবা-মেয়ে একসঙ্গে খাবার খাবো।মনে আছে,সেই তোর ছোটবেলায় তোকে আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিতাম,কত বায়না করতি আমার থেকে খাওয়া জন্য।
ভাবতেই পারছিনা আমার সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ এত বড় হয়ে গেছে,সে আজ মা হতে চলেছে (চোখের পানি মুছতে মুছতে)


কোর্টে…
আদালতে সকলেই উপস্থিত আছে,মিথিলা,ইন্তিহাজের সাথে থাকা ডক্টর’স,পরিবারের লোকজন,ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম,তার চ্যালারা,বিপক্ষ দলের আইনজীবী।
১০টা বাজা’র ২মিনিট আগে অর্থাৎ সকাল ৯টা ৫৮মিনিটে দু’জন পুলিশ ইন্তিহাজ কে নিয়ে উপস্থিত হলো বিচারকক্ষে,ইন্তিহাজ কাটগোড়া তে গিয়ে দাঁড়ানোর পর বিচারপতি’ও ঠিকঠাকভাবে বসলেন।
প্রতিপক্ষের আইনজীবী কাশেম মোল্লা ইন্তিহাজ কে দোষী প্রমাণ করতে যেন উঠে পরে লেগেছেন,কথার জালে সকলকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে ইন্তিহাজের আইনজীবী আব্দুর জব্বার শেখ’কে দমিয়ে দিচ্ছেন।

—মাই লড,আমি সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যে দেখিয়ে দিয়েছি, সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ডক্টর ইন্তিহাজ জামানে’র কেবিনে দীপক মুখার্জি,তার অ্যাসিস্ট্যান্ট বেশকয়েকবার যাতায়াত করেছে,এবং সেটা জাহিদ ইসলামের ওই হসপিটালে এডমিট হওয়ার পর থেকে।
এখানে আমরা উপস্থিত সকলেই জানি,ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে দীপক মুখার্জি’র রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে,তাদের মধ্যে একপ্রকার সাপেনেউলে সম্পর্ক রয়েছে,এ-র আগেও বহুবার দীপক মুখার্জি’র লোকজন সিরাজুল ইসলামের পরিবারের ওপর আঘাত হানার চেষ্টা করেছে।
এবারে হসপিটাল ডিডব্লিউ তে সিরাজুল ইসলামের ছেলে জাহিদ ইসলামের এডমিট হওয়ার পরপরই জাহিদ ইসলামের জন্য নিযুক্ত ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের সঙ্গে দীপক মুখার্জি’র দেখা করা,তার পরপরই জাহিদুল ইসলামের মৃত্যু,ব্যপার টা সন্দেহজনক না?আমিতো সুস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মাই লড,এই ডক্টর ইন্তিহাজ জামান নিজে এই মার্ডারের সূত্রপাত ঘটিয়েছে, নিজে সার্জারী না করলেও তার সহকারী ডক্টরের দ্বারা পয়জন প্রবেশ করিয়ে মার্ডার করিয়েছে জাহিদুল ইসলাম কে।

—মাই লড,আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু হয়তো গল্প বানাতে ভালোবাসেন,তাই তিনি নিজের ইচ্ছে মতো গল্প সাজিয়ে আদালতে উপস্থাপন করছেন।
আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন,এটা আদালত আপনার বাড়ির ড্রয়িং রুম নয়,আদালত প্রমাণে বিশ্বাসী,গল্পকথায় নয়।
মাই লড,আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু যে সিসিটিভি ফুটেজ পেশ করেছে সেটা সত্যি,তবে আমাদের এটাও জেনে রাখা উচিত আমার ক্লাইন্ট ইন্তিহাজ জামান একজন ডক্টর,তার কাছে এপয়েন্টমেন্ট নিতে যে কেউ আসতে পারে,দীপক মুখার্জি নিজের শারীরিক অসুস্থতার কারণেই ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের সঙ্গে দেখা করেছিলো,এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আদালত অনুমতি দিলে আমি সিস্টার মিথিলা খানম কে কাটগোড়ায় ডাকবো,যিনি ওইদিন কেবিনে উপস্থিত ছিলেন,এবং অপারেশন থিয়েটারেও তিনি ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের সঙ্গে ছিলেন।

—অনুমতি দেওয়া হলো।

বিচারপতির অনুমতি পেয়ে আব্দুর জব্বার শেখ মিথিলা’কে কাটগোড়ায় ডাকলে মিথিলা কাটগোঁড়ায় এসে দাঁড়ালো, পবিত্র কুরআন শরীফ স্পর্শ করে সত্যি বলার প্রতিজ্ঞা করার পর জব্বার শেখ প্রশ্ন করলেন,

—মিসেসঃ মিথিলা খান,ওইদিন সন্ধায় যখন দীপক মুখার্জি ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের সঙ্গে দেখা করে আপনি তখন কোথায় ছিলেন?

—জ্বী আমি ওই কেবিনেই ছিলাম,আমি ডক্টর ইন্তিহাজ জামানকে হেল্প করছিলাম।

—আপনি কি আদালতে বলতে পারবেন ওইদিন ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের সঙ্গে দীপক মুখার্জি’র কি ধরনের কথা হয়েছিলো?

—জ্বী,দীপক মুখার্জি বেশ কিছুদিন যাবৎ মাথার সমস্যায় ভুগছিলেন,অতিরিক্ত মাথা যন্ত্রণা করতো,একারণেই তিনি ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের সঙ্গে দেখা করেন,তার ধারণা ছিলো তার মাথায় হয়তো জটিল কিছু হ’য়েছে।

—অবজেকশন মাই লড,সিস্টার মিথিলা খানমের কথা যুক্তিহীন,তিনি যে ওইদিন ঐ সময় কেবিনে ছিলেন তার কি কোনো প্রমাণ আছে? (কাশেম মোল্লা)

—মাই লড,আমার কাজের সময় আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু যদি এভাবে বাঁধা সৃষ্টি করে তাহলে আমার জিজ্ঞাসাবাদে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে,আমি আদালতের কাছে অনুরোধ করবো আমার পুরো জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না করা অবধি আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু কে স্থীর থাকার জন্য।

—অবজেকশন অভারাইড,আপনি বসুন,ওনাকে নিজের কাজ করতে দিন (বিচারপতি)

—ধন্যবাদ মাই লড।
তো মিসেসঃ মিথিলা খানম,এরপর আরও দু’বার দীপক মুখার্জি ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের সঙ্গে দেখা করেছেন,ও একবার তার অ্যাসিস্ট্যান্ট।এর কারণ কি আপনি বলতে পারবেন?

—এরপর একদিন দীপক মুখার্জি তার ব্রেন স্ক্যানের জন্য এসেছিলেন,পরদিন তার অ্যাসিস্ট্যান্ট রিপোর্ট নেওয়ার জন্য এসেছিলেন,এবং তারপরের দিন দীপক মুখার্জি আবারও এসেছিলেন শিওর হওয়ার জন্য,তার সত্যিই কোনো জটিল সমস্যা হয়েছে কি-না জানার জন্য।

—কি এমন সমস্যা হয়েছিল তার?

—অতিরিক্ত টেনশনের জন্য তার মাথা যন্ত্রণা করতো,হাই মাইগ্রেন প্রবলেম ছিল তার,এছাড়া জটিল কোনোকিছু ছিলো না।ডক্টর ইন্তিহাজ জামান তাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে ইনশিওর করার পর তিনি আর আসেন নি।

—ঠিক আছে,আপনি এবার আসতে পারেন।
মাই লড,আমার কাছে আমার ক্লাইন্ট ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের কেবিনে’র সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে,আমি সেটা আদালতে পেশ করছি,আপনারা স্ব চোখে দেখুন।

**কিছুক্ষণ পর…
—এবার আপনিই বলুন,এখানে ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের দোষটা কোথায়,সিসিটিভি ফুটেজ হতে প্রমাণিত তার সঙ্গে দীপক মুখার্জি’র অন্য কোনো কথা হয়নি।

পুরো আদালত কক্ষ জুড়ে সবাই কানাঘুষো করছে,এদিকে সময়ও শেষ,

—সাইলেন্ট
আজকে সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আজকের আদালতের কার্যক্রম এখানেই মুলতবি ঘোষণা করছি,পরবর্তী শুনানি তে সঠিক প্রমাণ পাওয়ার পর রায় ঘোষণা করা হবে নতুবা শুনানি চলতেই থাকবে।


আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ইয়ানা,এ দু’দিনে কান্না করে করে মেয়েটার চোখের নিচ দিয়ে কালো দাগ পরে গেছে, ভালো করে যে ঘুমায় না সেটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে,মিথিলা ইয়ানা’র হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
ইন্তিহাজ কে গাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় ইয়ানা’র সোজাসুজি এসে দাঁড়িয়ে গেলো ইন্তিহাজ,ইয়ানা’র কান্নামাখা মুখ দেখে ওর ভেতরেও যেন চুড়মাড় হয়ে যাচ্ছে,কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার।কনস্টেবল ইন্তিহাজ কে বললেন,,

—আপনার ওয়াইফ?
—হুম
—একবার কি কথা বলবেন ওনার সাথে?
—না,কোনো দরকার নেই,এতে ও আরও ভেঙে পরবে।
চলুন


—ডক্টর ইন্তিহাজের কেবিনের সব সিসিটিভি ক্যামেরা নাকি অফ করে দিয়েছিলি তাহলে ওই সিসিটিভি ফুটেজ টা কোথা থেকে আসলো (রেগে বললেন অজ্ঞাত ব্যক্তি)

—স্যার,বিশ্বাস করুন যতগুলো ক্যামেরা ছিল আমি নিজের হাতে সব অফ করেছিলাম,কিন্তু আমার অগোচরে যে সিক্রেট কোনো ক্যামেরা ছিল আমি জানতাম না।

—ওহ্ শিট,তাহলে তো ওই ক্যামেরায় তোকেও দেখা গেছে

—না,আমি মেইন সুইচ অফ করে তারপর কেবিনে গেছিলাম।
—গুড,কিন্তু আমার প্ল্যানিং তো ভেস্তে গেলো।

ডক্টর ইন্তিহাজ জামান প্রফেশনে নতুন,ভাবলাম ওর ঘাড়েই দোষ চাপিয়ে আমার কার্য হাসিল করবো,দীপক মুখার্জি কে ডোবাবো,কিন্তু কি হচ্ছে টা কি এসব,আমার এতদিনের সাজানো প্ল্যানিং এভাবে নষ্ট হতে পারে না।

—নিশিন্তে থাকুন স্যার,কিছু হবে না।
আমরাই জিতবো,দীপক মুখার্জি’র ফাঁসি নিশ্চিত হবেই,শুধু ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের জন্য একটু খারাপ লাগছে।বেচারা, সবে মাত্র র‍্যাংকে উঠছিলো,ইয়াং জেনারেশনের ইয়াং সাকসেসফুল একজন ডক্টর,অল্পদিনে ভালোই খ্যাতি অর্জন করেছিলো কিন্তু এইভাবে সব ধুলিসাত হয়ে গেলো,আহারে।

—বড়বড় কাজে এসব ছোটছোট লোকজনদের বলি দিতেই হয়,নাহলে আমরা যে টিকতে পারবো না,ওদেরকে বলিদান দিতেই হবে,হাহাহা।
এডভোকেট কাশেম মোল্লার সাথে কথা বল,যত টাকা লাগে দিব,প্রয়োজনে আমাদের জন্য যেন নকল সাক্ষী কিনে আনে, যেভাবেই হোক কেস টায় আমাকে জিততেই হবে।


পরবর্তী শুনানি…
আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর প্রথমেই কাশেম মোল্লা বললেন,

—মাই লড,আপনি অনুমতি দিলে আমি আমার মক্কেল ওয়ার্ডবয় দুলাল কে কাটগোড়ায় ডাকবো,ওইদিন অটি তে সকল মেডিসিন,সার্জারী সরঞ্জাম দুলালই নিয়ে গিয়েছিলো।
—অনুমতি দেওয়া হলো।

**
—মিঃ দুলাল,আপনি ওইদিন কোন দ্বায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন?
—জ্বী,আমি সার্জারীর সমস্ত জিনিপত্র ওটি তে নিয়ে গেছিলাম।

—আপনি কি বলতে পারবেন,মেডিসিন গুলো কেমন ছিল, মানে আমি বলতে চাচ্ছি যে আপনাকে দেখানো হলে কি বলতে পারবেন কোনকোন মেডিসিন আপনি নিয়ে গেছিলেন।

—হ্যা পারবো
—ঠিক আছে

কাশেম মোল্লা নিজের অ্যাসিস্ট্যান্টের থেকে একটা স্টিলের ট্রেতে বেশকিছু মেডিসিন নিয়ে দুলালের সামনে ধরলে সে বেশ কয়েকটা মেডিসিনের প্যাকেট আলাদা করে বললো,

—সবগুলোর কথা ভুইলা গেছি কিন্তু এইগুলাও ছিল,আরও অনেকগুলান ছিলো কিন্তু মনে নাই।

—আপনিকি শিওর,এগুলো ছিল
—হ্যা,অবশ্যই

—ঠিক আছে,আপনি নিজের জায়গায় গিয়ে বসুন
মাই লড,এই মেডিসিন গুলোর মধ্যে এটি দেখুন,এই পয়জন টাই ইনজেকশন মাধ্যমে জাহিদুল ইসলামের শরীরে পুশ করা হয়েছে,যার ফলে মৃত্যু ঘটে তার।
ওয়ার্ডবয় দুলাল তো আর মিথ্যা কথা বলবেননা,তিনি তো এতো শিক্ষিতো নন,কোন মেডিসিন কি ধরনের কাজ করে তিনি সে সম্বন্ধে জানেন না,কিন্তু আপনাদের সকলের সামনে এতগুলো মেডিসিনের মধ্যে তিনি কিছু মেডিসিন আইডেনটিফাই করতে পেরেছেন যেগুলো ওইদিন সার্জারী করতে ব্যবহার করা হয়েছে,এগুলোর মধ্যে এই পয়জন টাও রয়েছে।আর মজার ব্যাপার হলো,এই সবগুলো মেডিসিনই ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের সাজেস্ট করা।
সুতরাং প্রমাণিত,ডক্টর ইন্তিহাজ জামান জেনে-বুঝেই ঠান্ডা মাথায় মার্ডার করিয়েছে।

—অবজেকশন মাই লড,আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু’র হয়তো মাথায় সমস্যা রয়েছে,আই এম সরি টু সেয়,আমি এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি।
ওয়ার্ডবয় দুলাল একজন অল্পশিক্ষিত লোক,ম্যাট্রিক পাশ করেছেন মানবিক বিভাগ থেকে,তিনিতো কথাই ভালো করে বলতে পারেননা।সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো কোনো ম্যাডিসন এভাবে খোলামেলা অবস্থায় অটিতে নিয়ে যাওয়া হয়নি,প্যাকেটে মোড়ানো ছিলো,তাহলে উনি মেডিসিন গুলো আইডেনটিফাই কি করে করলেন,ডক্টর ছাড়া এই মেডিসিনগুলো খোলার পারমিশন কারোর নেই। কিন্তু আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু ও ওয়ার্ডবয় দুলাল এর বক্তব্য অনুযায়ী মনে হচ্ছে ওয়ার্ডবয় দুলাল প্যাকেট গুলো খুলে খুলে সব দেখেছেন।
এখানে থেকে কি ধারণা করা যায়না,কারোর কথা অনুযায়ী তিনিই মেডিসিন চেঞ্জ করে দিয়েছেন….

To be continue…..

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_২৭

—এখানে থেকে কি ধারণা করা যায়না,কারোর কথা অনুযায়ী তিনিই মেডিসিন চেঞ্জ করে দিয়েছেন,অথবা এ্যাড করেছেন।

—অবজেকশন মাই লড,উনি কিন্তু আমার মক্কেল দুলাল কে মিথ্যা দোষারোপ করে অপমান করছেন।

—মাই লড,আমার বক্তব্য এখনো শেষ হয়নি,আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু বারবার ডিস্টার্ব করে আমার কাজে অসুবিধা সৃষ্টি করছেন।

—অবজেকশন অভাররেড,আপনি নিজের জায়গায় গিয়ে বসুন,ওনাকে নিজের কাজ করতে দিন। (বিচারপতি)

—ধন্যবাদ মাইলড।
আদালত অনুমতি দিলে,আমি সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য পরবর্তী সাক্ষী ডক্টর কামাল হোসেন কে কাটগোড়ায় ডাকতে চাই।

—অনুমতি দেওয়া হলো

*ডক্টর কামাল কাটগোঁড়ায় এসে শপথ করার পর আব্দুর জব্বার শেখ এগিয়ে এসে বললেন,

—ওইদিন অপারেশনের সময় আপনি কোথায় ছিলেন?

—আমি ওইদিন ডক্টর ইন্তিহাজ জামান,ও বাকি ডক্টর দের সঙ্গে অটি রুমেই ছিলাম,আমরা ডক্টর জামানের ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী সার্জারী করছিলাম।

—ওইদিন অটিতে কিকি হয়েছিলো যদি আদালতকে স্পষ্ট করে বলতেন?

—জ্বী,ওইদিন সিস্টার মিথিলা খানম,জিনিয়া সুলতানা,মরিয়ম খাতুন ছিলেন আমাদের সঙ্গে।ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের সঙ্গে আমি,ডক্টর আমিরুল ইসলাম ও নিলয় মন্ডল ছিলেন।যথাসময়ে আমরা সকলে অটিতে প্রবেশের পর সবকিছু ভালো ভাবে সেট করে নিয়ে সার্জারী শুরু করার প্রস্তুতি নেই। কিন্তু সার্জারী শুরুর ঠিক আগ মূহুর্তে ডক্টর ইন্তিহাজ জামান হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন,আমরা সকলে দ্বন্দ্বে পরে গেছিলাম কি করে কি করবো,কারণ আমাদের মধ্যে একমাত্র ডক্টর জামান’ই এক্সপার্ট ছিলেন।
এদিকে পেশেন্টের অবস্থা খুব একটা ভালো না,ইমিডিয়েটলি অপারেশন করতে হবে।
পরে ডক্টর জামান জানান তিনি আমাদের ইন্সট্রাকশন দিবেন, সেই ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী আমাদেরকেই সার্জারী টা করতে হবে।আমরা সেই মোতাবেকই কাজ করছিলাম,কিন্তু সার্জারী চলাকালীন সময়ে হঠাৎই পেশেন্ট জাহিদ ইসলাম রেসপন্স করা বন্ধ করে দেন,অবস্থা ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিলো। আমরা অনেক ট্রাই করেও কিছু করতে পারছিলাম না।ডক্টর জামান নিজেও উঠে এসে চেষ্টা করেছেন কিন্তু কিছুসময়ের মাঝেই পেশেন্ট এর শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়,এবং মৃত্যু ঘটে তার।
আমরা তখন ভেবেছিলাম হয়তো সার্জারী চলাকালীন সময়ে তিনি অতিরিক্ত ভয়ের কারণে স্টোক করেছিলেন,তাই এমন হয়েছিল,কিন্তু পরে পোস্টমর্টেমের পরে তো জানতে পারলাম সবকিছু পয়জনের জন্য হয়েছে।

—আপনিকি এটা বলতে পারবেন,এই পয়জন ইনজেকশন টা কে পুশ করেছিলো?

—আমি জানিনা,খেয়াল করি নি

—ধন্যবাদ,আপনি আসুন
ইওর ওউনার,আমি এবার আমার ক্লাইন্ট ডক্টর ইন্তিহাজ জামানকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

—অবশ্যই

—ধন্যবাদ।
তো ডক্টর জামান,আপনি ওইদিন ঠিক কোনধরনের শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করছিলেন?

—হঠাৎই আমার কেমন যেন ঘুম আসতে শুরু করে,প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছিলো,নিজের ওপর ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারছিলাম না,অতিরিক্ত ঘুমের কারণে আমি সবকিছু অস্পষ্ট দেখছিলাম।
আমি আমার লাইফে কখনো এধরণের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি,হঠাৎই কেন এমন হচ্ছিলো আমি নিজেও জানিনা,ইভেন আমি থানায় আসার পরেও এই ঘুমের রেশটা কাটছিলো না।

—অবজেকশন মাই লড
আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু শুধু শুধু অযৌক্তিক কথা বাড়িয়ে আদালতের সময় নষ্ট করছেন ।

—অবজেক্শন গ্রান্টেড।

—ধন্যবাদ।
একজন সিনিয়র ডক্টর কোনো অপারেশন এর আগে সর্বপ্রথম নিজের শারীরিক অবস্থা টা দেখে,তারপর অপারেশন কক্ষে যায়।একজন সিনিয়র ডক্টর হয়ে তিনি এতবড় একটা ক্রিটিকাল অপারেশনের আগে কিভাবে নিজের প্রতি কেয়ারলেস হন।
অপারেশন থিয়েটারে ঘুম পাওয়ার বিষয়টা নিছকই কাল্পনিক মনে হচ্ছে না,আমার বিশ্বাস ডক্টর ইন্তিহাজ জামান অন্যদের দ্বারা সার্জারী অর্থাৎ মৃত্যু নিশ্চিত করানোর জন্য ইচ্ছে করে এই অসুস্থতার নাটক করেছেন,তাছাড়া কোনো কারণ ছাড়া একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের এমন অস্বাভাবিক ঘুম কেন পাবে,আর সেটাও ঠিক সার্জারীর আগ মূহুর্তে।

—অবজেকশন মাই লড,আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু কোনোরকম প্রমাণ ছাড়া আমার ক্লাইন্ট ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের সম্বন্ধে এভাবে বলতে পারেন না।

—আপনার কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে? (বিচারপতি)

—এইমূহুর্তে আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই কিন্তু আমি…

—মাই লড,আমি তাহলে আমার পরবর্তী সাক্ষী কে কাটগোড়ায় ডাকতে পারি? (জব্বার শেখ)

—জ্বী অবশ্যই
আর আপনি,নিজের জায়গায় বসুন।

—আমার পরবর্তী সাক্ষী পুলিশ ইন্সপেক্টর সৈয়দ রানা,আপনি দয়া করে যদি কাটগোঁড়ায় আসতেন।

ইন্সপেক্টর সৈয়দ রানা কাটগোঁড়ায় এসে সত্যি বলার শপথ নেওয়ার পরে আব্দুর জব্বার শেখ প্রশ্ন করলেন,

—হসপিটাল থেকে আপনিইতো ডক্টর ইন্তিহাজ জামান কে থানায় নিয়াসেন,কি ঠিক বললাম তো?
—জ্বী,আমিই নিয়েসেছিলাম

—আপনারা যখন আমার ক্লায়েন্ট ডক্টর জামান কে থানায় নিয়াসেন তখন ওনার ফিজিক্যাল কন্ডিশন কেমন ছিলো?—উনি ঝিমাচ্ছিলেন,বারবার নিজের ওপর ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলেছিলেন,আমরাই ওনাকে ধরে রেখেছিলাম।
থানায় নিয়াসার ২দিন পরে উনি নরমাল হন,কিন্তু তবুও ঘুমের রেশ টা ওনার বেশিই ছিলো।

—ধন্যবাদ
মাই লড,ইন্সপেক্টর সৈয়দ রানা’র বক্তব্যে প্রমাণিত আমার ক্লায়েন্ট ডক্টর ইন্তিহাজ জামান সত্যি সত্যিই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন,আমার বিশ্বাস কেউ ইচ্ছে করে ওনাকে কড়া স্লিপিং পিল খাইয়েছেন ওনার অগোচরে।আমি হলক করে ব…

আব্দুর জব্বার শেখ পুরো কথা শেষ করার আগেই ওনার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইমন বিচারালয়ে প্রবেশ করে জব্বার শেখ কে ডাকলেন।আব্দুর জব্বার শেখ বিচারপতি’র অনুমতি নিয়ে ইমনে’র থেকে পেপারস গুলো নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখলো,ঠোটের কোণায় হাসি ফুটে উঠলো তার।

—মাই লড,আমার হাতে এইমাত্র এসে পৌছেছে জাহিদ ইসলামের ডিএনএ রিপোর্ট ও ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট।
আমার ক্লাইন্ট ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী স্পষ্ট প্রমাণিত তার রক্তে হাই ডোজের ঘুমের ঔষধ ছিলো,আমার সন্দেহ একদম ঠিক ছিল,তাই আমি এই টেস্ট করিয়েছিলাম।
আর এইযে জাহিদ ইসলামের ডিএনএ রিপোর্ট,এই রিপোর্ট হতে প্রমাণ জাহিদ ইসলাম ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলামের নিজের ছেলেই নয়,তাদের ডিএনএ ভিন্ন,এই নিন পেপার্স।

আব্দুর জব্বার শেখ এর কথা শেষ হতেই বিচারকক্ষে উপস্থিত সকলে যেন অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেছে,কানাঘুঁষা শুরু হয়ে গেছে,সকলের নজর এখন নেতা সিরাজুল ইসলামের দিকে।
কাশেম মোল্লা উঠে দাড়িয়ে বললেন,

—অবজেকশন মাই লড

—অবজেকশন অভাররেড,আপনি বসুন।
মিঃশেখ আপনি বলুন

—ইওর ওনার,আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিলো ডক্টর জামান কে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করছে,তা-না হলে হঠাৎ করে সে এমন অসুস্থ হয়ে কেন পরবে,সেটাও সার্জারীর আগে।
ডক্টর জামানের ব্যাক রেকর্ড চেক করলে জানা যায় তিনি যথেষ্ট সৎ ও দ্বায়িত্ববাণ একজন মানুষ,টাকার বিনিময়ে নিজেকে অন্তত বিক্রি করার মানুষ উনি নন।
এই অপারেশনের মূল দায়িত্বে যেহেতু আমার ক্লায়েন্ট ডক্টর ইন্তিহাজ জামান ছিলেন তাই তাকে সরানোটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল,মূলত এ কারণেই তাকে এভাবে ফাঁদে ফেলা হয়েছে, কৌশলে তাকে হাই ডোজের ঘুমের মেডিসিন দেওয়া হয়েছে।যাতে তিনি অপারেশন টা নিজে না করতে পারেন,আর এতে সুবিধা হয় তার,যে এই কাজ করেছে।

—আপনি কি জানেন,সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি টি কে?

—ক্ষমা করবেন মাই লড,আমি এই মূহুর্তে তার নাম জানিনা,তবে ঠিকই প্রমাণ দিবো।
আমার নেতা সিরাজুল ইসলামের আচরণে বেশ সন্দেহ ছিলো,নিজের ছেলের মৃত্যু নিয়ে তার মধ্যে কোনো শোকের ছায়া আমি দেখতে পাইনি,তিনি শুধু এই কেসে জিতে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন,সন্দেহভাজন ব্যক্তি দীপক মুখার্জি কে আইন আওতায় নিয়াসার জন্য যেন উঠেপড়ে লেগেছেন, আমি সোর্স লাগিয়ে গোপন সূত্রে খবর পাই জাহিদ ইসলাম সিরাজুল ইসলামের নিজের ছেলে নয়,পালিতো সন্তান।
বিষয়টাতে শিওর হওয়ার জন্য আমি গোপনে ডিএনএ টেস্ট করাই,তাতে প্রমাণ হয়ে যায় কথাটা সত্যি।
আমি বিষয়টা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য মহামান্য বিচারপতির কাছে অনুরোধ করবো নেতা সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মোছাঃজেরিন ইসলাম কে কাঠগোঁড়ায় নিয়াসার জন্য।

—অনুমতি দেওয়া হলো

**
—আপনার পরিচয়?

—জ্বী আমি মোছাঃজেরিন ইসলাম

—আপনি নেতা সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী?

—জ্বী

—অবজেকশন মাই লড,আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু এধরণের অযৌক্তিক কথা বলে আদালতের সময় নষ্ট করছেন (কাশেম মোল্লা)

—অবজেকশন অভাররেড?
মিঃশেখ আপনি প্রশ্ন করুন।

—ধন্যবাদ মাই লড
তো মোছাঃজেরিন ইসলাম,জাহিদ ইসলাম কি আপনার নিজের সন্তান?

—না,অনাথ আশ্রম থেকে দত্তক নিয়েছিলাম ওকে।
আমাদের বিয়ের ৭বছর হওয়ার পরেও কোনো বাচ্চা হচ্ছিলো না তাই আমরা সিদ্ধান্ত নেই বাচ্চা দত্তক নিব,জাহিদ আমাদের দত্তক নেওয়া ছেলে।

—বুঝলাম,জাহিদ কি বিষয়টা জানতো?

—জাহিদের বয়স ১৫বছর হওয়ার পরই ও সত্যটা জানতে পেরেছিলো।

—কিছু মনে করবেন না,একটু পারসোনাল প্রশ্ন করতে পারি?
—জ্বী বলুন

—জাহিদ এর সঙ্গে আপনার ও আপনার হাজবেন্ডের কেমন সম্পর্ক ছিল,মানে আমি বলতে চাইছি যে ভালো মন্দ এমনকিছু…

—জাহিদ আমাকে নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসতো,ও কখনো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি,শান্তশিষ্ট এক ছেলে ছিলো।কিন্তু আমার স্বামী’র সঙ্গে ওর খুব একটা পরতো না,এতে অবশ্য দোষ আমার ছেলে জাহিদের ছিলো না,দোষ টা ওনারই ছিল।আমার হাজবেন্ড সবসময়ই চাইতেন জাহিদ কে রাজনীতি তে নিয়াসবে,ওনার কার্যক্রম সামলাবে কিন্তু জাহিদ বরাবরই এসব রাজনীতি,দ্বন্দ্ব,মারামারি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতো,শান্ত স্বাভাবিক পরিবেশ পছন্দ করতো,ও কখনোই রাজনীতি তে জড়াতে চায়নি,মূলত একারণেই আমার স্বামীর সঙ্গে ওর পরতো না,নিত্যদিনই বাড়িতে অশান্তি চলতো।

—আচ্ছা,জাহিদের যে ব্রেন টিউমার হয়েছে এটা আপনারা কবে কিভাবে জানতে পেরেছেন?

—সত্যি বলতে আমরা বিষয়টা জেনেছি ওর অপারেশনের ১০-১২দিন আগে, আমাদের জাহিদ নিজের সমস্যা,চাহিদা সম্পর্কে কখনো আমাদের জানাতো না,আমার স্বামীর অবৈধভাবে রোজগার করা টাকা সে কখনোই নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চায়নি,টিউশনি করিয়ে নিজের সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করতো।
ওর যে এতবড় একটা সমস্যা ছিল,আমরা কিছুই জানতাম না এবিষয়ে,ও কখনোই কিছু বলেনি।
একদিন সন্ধ্যায় জাহিদ বাইরে থেকে বাড়ি আসার পরপরই হঠাৎই সেন্সলেস হয়ে পরে যায়,আমরা আমাদের পারিবারিক ডাক্তার কে খবর দিলে তিনি চেকআপ করে বলেন হসপিটালে নিয়ে আসার জন্য।
হসপিটালে নিয়াসার পর টেস্ট করে জানতে পারি ওর মাথায় ব্রেনটিউমার হয়েছে।

—ঠিক আছে,আপনি বসুন
প্রয়োজনে আপনাকে আবারও ডাকা হবে।
ইওর ওউনার,সিরাজুল ইসলামের স্ত্রীর মুখ থেকে আমরা জানতে পারলাম মৃত জাহিদ ইসলামের সঙ্গে নেতা সিরাজুল ইসলামের সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিলো না,সব সূত্র একসঙ্গে করলে কেমন একটা খটকা লাগছে না,আমার তো মনে হয় এই মার্ডার কেস এর সঙ্গে নেতা সিরাজুল ইসলামও জড়িতো,নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমার ক্লায়েন্ট ডক্টর ইন্তিহাজ জামান কে ফাঁসিয়ে ছে।

—অবজেকশন মাই লড,আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু এভাবে কোনো প্রমাণ ছাড়া আমার মক্কেল সিরাজুল ইসলামের দিকে আঙুল তুলতে পারেন না,মানহানি করার অধিকার ওনার নেই।

—অবজেকশন গ্রান্টেড।
মিঃশেখ আপনি প্রমাণ ছাড়া এভাবে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেন না।আদালতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আজকের সকল কার্যক্রম এখানে মুলতবি ঘোষণা করছি, পরবর্তী শুনানি তে আশা করি আপনারা যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করবেন।


ইন্তিহাজ সবার সঙ্গে টুকটাক কথা বলে পুলিশ গাড়িতে উঠতে যাবে তখনই ইয়ানা ছুটে আসলো,মিথিলাও ইয়ানা’র পিছুপিছু দৌড়ে এসে ইয়ানা’কে বকতে শুরু করলো,

—পাগল হয়ে গেছিস তুই,কমনসেন্স নেই,এ অবস্থায় দৌড়াচ্ছিস কেন তুই।

ইয়ানা মিথিলা’র কথার প্রতিত্তোর না করে ইন্তিহাজের দিকে তাকিয়ে ইন্তিহাজের চোখে চোখ রেখে চেঁচিয়ে বললো,

—আজ কতগুলো দিন হয়ে গেলো,তুমি সবার সঙ্গে কথা বললেও আমার সাথে কোনো কথা বলা তো দূর আমার দিকে তাকাওনা পর্যন্ত,কি সমস্যা টা কি তোমার,আমাকে কি মানুষ মনে হয়না তোমার,আমারও মন আছে,অনুভূতি আছে।

—ইয়ানা,এটা কোর্ট এরিয়া,আস্তে কথা বল

—কিসের আস্তে কথা বলবো,কি হয়েছে তোমার বলো?
আমি জানি তুমি নির্দোষ,তোমাকে আমরা সবাই মিলে নির্দোষ প্রমাণিত করেই ছারবো,আমি তো তোমাকে ভুল বুঝিনি তাহলে তুমি কেন আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করছো বলো।

ইন্তিহাজের সাথে থাকা পুলিশ কন্সটেবল দু’জন একটু দূরে সরে দাঁড়ালো,ইন্তিহাজ ইয়ানা’র হাত ধরে বললো,

—খুব শীঘ্রই বাড়ি ফিরবো আমি,চিন্তা করিস না।
আমি জানি আমার জন্য তুই কষ্ট পাচ্ছিস,কিন্তু আমি চাইনি আমার সঙ্গে কথা বলার পর তোর কষ্টের মাত্রা টা আরও বৃদ্ধি পাক।তোকে তো আমি চিনি,তুই যে অনেক ইমোশনাল ইয়ানা।

—আবার তুই তোকারী করছো (চোখের পানি মুছতে মুছতে)

—তুই তো একটা বাচ্চা,তোকে তুই করে বলতেই ভালো লাগে (হেসে দিয়ে)

—তুমিওতো আমার অনেক সিনিয়র,তোমাকে ভাইয়া বলতেই ভালো লাগে

—ফাইজলামি করছিস?
—না-তো,সত্যি বললাম

ইন্তিহাজ আরও কিছু বলতে যাবে তখনই কনস্টেবল দু’জন এসে বললেন,

—স্যার,চলুন,দেরি হয়ে যাচ্ছে

—হুম
এই-যে এক’আনা,রেডি থাকিস,আগামী দিনেই বাড়ি ফিরছি ইনশাআল্লাহ,তারপর তোর পানিশমেন্ট শুরু

—আমি সব পানিশমেন্টের জন্য তৈরি,অপেক্ষায় রইলাম।
তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে,বাড়ি ফিরলেই সেটা পাবে।

ইন্তিহাজ মুচকি হেসে ইয়ানা’র মাথায় হাত বুলিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।


পরবর্তী আদালতে…
বিচারপতির কাছে কিছু পেপারস জমা দিয়ে আদালতের কার্যক্রম শুরু করলেন আব্দুল জব্বার শেখ।সর্বপ্রথমে তিনি সরাসরি বললেন…

—ইওর ওউনার,মোঃ সিরাজুল ইসলাম এই মার্ডার কেসের মাস্টারমাইন্ড,সেটার প্রমাণস্বরূপ আপনার কাছে কল রেকর্ডিং এর অডিওক্লিপ জমা দেওয়া হয়েছে,অডিওক্লিপ টা প্লে করলেই সকলের সামনে আসল সত্যি টা প্রমাণ হয়ে যাবে…..

To be continue…..

(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করুন ও লাইক দিন)