তোমার চোখের অনন্ত মায়ায় পর্ব-২৮ এবং শেষ পর্ব

0
481

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_২৮ (অন্তিম পর্ব)

—অডিওক্লিপ টা প্লে করলেই সকলের সামনে আসল সত্যি টা প্রমাণিত হয়ে যাবে,মহামান্য বিচারকের কাছে আমার অনুরোধ,দয়া করে এই অডিওক্লিপ টা সকলের সামনে প্লে করা হোক।

**সাউন্ডবক্সে অডিও প্লে করা হলে শোনা গেলো,

❝-হ্যালো,
হ্যা,ওই শা*লা ডাফা*রের বাচ্চা কল ধরিস না কেন,আমি সিরাজ বলছি চিনিতে পারছিস?

-ওহ্ হ্যাঁ হ্যাঁ,আরে বন্ধু আমি বাথরুমে ছিলাম তাই কল ধরতে পারিনি,এতবার কল করছিস যে,ইমার্জেন্সি কিছু?জাহিদ ঠিক আছে তো?

-ম*রেনি,একদম ঠিক আছে,আজ বিকালে অপারেশন আছে ওর।

-ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে,টেনশন নিস না।

-আরে বন্ধু টেনশন তো ওইটা নিয়েই,জাহিদ সুস্থ হয়ে গেলে বিপদ আমারই,শা*লা দুধকলা দিয়ে কালসাপ পুষছি বুঝলি, ভাড়ার থেকে উঠায় এনে রাজার হালে বড় করলাম আর এখন সেই ছোড়া আমার পিছেই ছুড়ি মারতে চায়।

-কি বলছিস,বুঝতে পারছি না আমি?

-আর কইস না,ও-ই যে আমার এরিয়ায় ৫টন সয়াবিন তেল আসছে না,ওইটাতো মনে কর আমার আন্ডারে আসছে,ভাবলাম মাসখানেক ওই তেলগুলো সব আমার গোডাউনে মজুদ রাইখা ধীরেধীরে চড়া দামে বেইচা দিব,কিন্তু জাহিদ আমাকে হুমকি দেয় এই কথা নাকি পাবলিক করে দিবে।কত করে কইছি আমার বিজনেস দেখাশোনা কর,আমার সবকিছু তো তোরই,কে শুনে কার কথা,আমার কাজে তো সাহায্য করেইনা আবার আমার সাথে বেইমানি করে,মানে আমার বিড়াল আমারেই ম্যাঁও।

-তুই কি বলতে চাচ্ছিস আমি বুঝতে পারছি না।

-জাহিদ কে শেষ করে দিতে হবে
-কিহ্

-এক ঢিলে দুই পাখি মা*রবো,ওর মতো কুলাঙ্গার ছেলের কোনো দরকার নাই আমার,কথায় আছে না পর পরই হয়, আমার রক্ত হলে এরকম বেইমানি করতো না।দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।
শোন,ও-ই যে দীপক মুখার্জি আছে না?যা র‍্যাঙ্কিং দেখছি,মনে হয় পরের নির্বাচনে ও জিতবে,ও থাকলে আমি হেরে যাব।
কয়দিন ধরে দেখছি ওই হারা**দা হসপিটালে ভালোই যাওয়াআসা করছে ভাবতিছি জাহিদ কে শেষ করে দিয়ে ওর ওপরে দোষ চাপিয়ে দিব,ওর নামে কেসকাসারির ট্যাগ লাগলে মনে কর জনগণ ওকে আর সাপোর্ট করবে না,কেস এখন যেরকমই হোক,জনগণ কি আর এতকিছু দেখতে আসবে।

-প্ল্যান তো ঠিকঠাক কিন্তু কি করে শেষ করবি?

-আরে বেডা,এইজন্যই তো তোকে কল করলাম,তোর পরিচিত এক ডাক্তার আছে না,তোর ভাতিহা হয়,কি যেন নাম

-কে,নিলয়ের কথা বলছিস?
-হ্যাঁ হ্যাঁ,তোর ভাতিজা হয়না?
-হুম,কেন?

-আজতো জাহিদের অপারেশনে ওই নিলয়ও থাকবে,ওকে কিছু টাকাপয়সা ঘুষ দিয়ে কাজ হাসিল করা যায় না?

-তোর মাথা ঠিক আছে,কি বলছিস তুই?

-দেখ,আমি সব খবরই রাখি,তুই আর তোর ভাতিজা মিলে হসপিটালে যে দুর্নিতি করে বেড়াস,ভেজাল ওষুধের কারবার চালাস আমি জানিনা মনে করছিস,ভালোয় ভালোয় আমার কথায় রাজি হয়ে যা,মোটা অঙ্কের টাকা পাবি,নাহলে সব খবর লিক করে দিব।

-হুমকি দিচ্ছিস?

-যা মনে করিস,শোন আলমাস,আমি এক কথার লোক,যেটা বলি সেটা করি,এবার ভেবে দেখ কি করবি?

-কাজ হয়ে যাবে,তুই মুখ বন্ধ রাখ❞

কল রেকর্ডিং শুনে পুরো আদালত কক্ষ জুড়ে কানাঘুঁষা শুরু হয়ে গেছে,সিরাজুল ইসলাম উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে লাগলে ইন্সপেক্টর এসে ওনাকে সহ ডক্টর নিলয় মন্ডল কে ধরে নিলো।কাশেম মোল্লা উঠে দাড়িয়ে বললো,

—অবজেকশন মাই লড,এই কলরেকর্ড থেকে প্রমাণিত হয়না আমার মক্কেল সিরাজুল ইসলাম দোষী,হতেও তো পারে এটা সাজানো,আজকাল তো বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে মানুষের ভয়েস নকল করা যায়।

—ইওর ওনার,আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু হয়তো ভালো ভাবে শুনেননি,নকল আর আসল ভয়েসের মধ্যে তফাৎ রয়েছে।
সকলের সামনে দয়া করে নিজেকে হাস্যকর বানাবেননা।
মাই লড,আপনি অনুমতি দিলে আমি ডক্টর নিলয় মন্ডল কে কাটগোড়ায় ডাকতে চাই।

—অনুমতি দেওয়া হলো,

পুলিশ ইন্সপেক্টর ডক্টর. নিলয় মন্ডল কে কাটগোড়ায় নিয়াসার পর শপথ করানো হলো,এরপর আব্দুর জব্বার শেখ বললেন,

—সবটা প্রমাণ হয়ে গেছে ডক্টর মন্ডল,এবার আপনি দয়া করে বলুন কিভাবে কি করেছেন।

—আমি কি ছু করিনি,আমাকে শুধু শুধু ফাঁসানো হচ্ছে।

—আমার কাছে আপনার বিরুদ্ধেও যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে,আমি সেগুলোর সব আদালতে পেশ করেছি।
অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে আপনি ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের কেবিনে গিয়েছিলেন,তাকে গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি পান করিয়েছেন,সেই গ্লাস টেস্ট করে তার মধ্যে ঘুমের মেডিসিন পাওয়া গেছে।আপনি একজন ডক্টর হয়েও কাজটা পারফেক্টলি করতে পারেননি।
ইওর ওনার,সেই গ্লাস টেস্টের রিপোর্ট আমি ইতিমধ্যে জমা দিয়ে দিয়েছি,আর ডক্টর মন্ডলের ডক্টর জামানের কেবিনে যাওয়া-আসার সিসিটিভি ফুটেজও জমা দিয়েছি,প্লে করলেই বুঝতে পারবেন।
তো,ডক্টর মন্ডল,আপনি সরাসরি সবটা বলবেন নাকি আমরা অন্য ব্যবস্থা নিবো।আপনি ভনিতা না করে প্রথমেই সব বললে হয়তো সাজা কিছুটা কম হতে পারে নাহলে আপনিতো শেষ, কেউ বাঁচাতে আসবে না আপনাকে।আপনিতো ভেজাল ওষুধের কারবারির জন্য এমনিতেও ফেঁসে গেছেন।

আব্দুর জব্বার শেখ এর কথায় বেশ ভয় পেয়ে গেলেন ডক্টর নিলয় মন্ডল,ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,

—আমি যা করেছি আমার কাকু আলমাসের কথায়,আমি নিজ ইচ্ছায় কিছু করিনি।কাকু আমাকে বলেছিলো আমি কাজটা না করলে আমাদের ব্যবসার কথা ভাইরাল হয়ে যাবে তাই বাধ্য হয়ে আমি একাজ করেছি।

—কিভাবে কি করলেন,ক্লিয়ার করে বলুন আদালত কে,নাহলে সাজা বাড়বে বই কমবে না,অবশ্য চুপ করে থেকেও লাভ হবে না,রিমান্ডে দিলে সব কথাই বেড়িয়ে আসবে।

—ডক্টর ইন্তিহাজ জামান প্রতিটি অপারেশনের আগেই গ্লুকোজ পানি খান,তাই আমি এটার সুযোগ নিয়ে স্লিপিং পিল মিক্সড করে ওনাকে দিয়েছিলাম।
অটিতে সার্জারী শুরুর আগে ওনার ঘুম আসতে শুরু করে,সেই সুযোগ কে কাজে লাগাই আমি,সবাই ডক্টর জামানের ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী কাজ করলেও আমি সুকৌশলে পয়জন পুশ করে দিই জাহিদের শরীরে,সব ঠিকই ছিলো,জাহিদের মৃত্যুর পর সবাই সেটাকে নরমাল ডেথ হিসেবে মেনে নিয়েছিলো,আমি ভেবেছি এখানেই সব শেষ।
কিন্তু কাকু আমাকে কল করে বলে ডক্টর জামান কে ফাঁসাতে হবে,তানাহলে দীপক মুখার্জি কে ফাঁসানো যাবে না,তাই আমি সবার অগোচরে জাহিদের পোস্টমর্টেম করিয়ে ডক্টর ইন্তিহাজ জামান কে ফাঁসিয়েছিলাম,আমি ভুল করে ফেলেছি,বুঝে উঠতে পারিনি কিছু।

বেশকিছু সময় পর বিচারপতি রায় দিলেন,

—ইন্সপেক্টর সৈয়দ রানা,আপনারা হসপিটালের মেডিসিন সেক্টরের ওনার আলমাস মন্ডল কে কাস্টার্ডিতে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
ডক্টর নিলয় মন্ডল কে খুন ও ভেজাল ওষুধ কারবারি’র সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হলো এবং তার ডাক্তারী লাইসেন্স ক্যান্সেল করা হলো।
খুনের পরিকল্পনা ও সুপারি দিয়ে খুন করানোর অপরাধে নেতা সিরাজুল ইসলাম কে ৫লক্ষ টাকা ও ৩৫বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হলো।
ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের বিরুদ্ধে কোনোরকম প্রমাণ না থাকায়,এবং সঠিক প্রমাণসহ প্রমাণিত তিনি এই মার্ডার কেসের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত নন,তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ,এই আদালত তাকে সসম্মানে খালাস দিচ্ছে।
দ্য কেস ইজ ক্লোজড।

রায় হওয়ার পর সকলে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো,ইন্তিহাজকে ঘিরে পরিবারের লোকজন নানান কথা বলছে,আদালত কক্ষের বাইরে আসতেই মিডিয়ার লোকজন হামলে পড়েছে ইন্তিহাজের ওপর।
এক সাইডে আব্দুর জব্বার শেখ ও মোছাঃজেরিন ইসলামের সামনে দাড়িয়ে আছে ইয়ানা।

—ধন্যবাদ আন্টি,আপনার জন্যই আমরা এত দ্রুত ওনাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলাম,আপনার হেল্পের জন্যই সব সম্ভব হলো।

—তুমিও তো কম চেষ্টা করোনি মা,তুমি নিজে যেভাবে ওনার সাথে কল রেকর্ডিং কালেক্ট করেছো,তোমার বুদ্ধি আছে মা। (জব্বার শেখ)

—আঙ্কেল,আমার স্বামী কে রক্ষা করা আমার কর্তব্য,আমি সেটাই করেছি,তবে আপনি প্লিজ কখনো কাউকে বলবেন না এই অডিওক্লিপ আমি কালেক্ট করেছি,আমি চাইনা এই কথাটা সবাই জেনে যাক।

—কিন্তু কেন মা?
—আমি ওনার কাছে সারাজীবন এমন পিচ্চি হয়েই থাকতে চাই,আর কোনো ক্রেডিট নিতে চাইনা।
আন্টি,আপনাকে সত্যিই অসংখ্য ধন্যবাদ।

—আরে মা,আমি তো চেয়েছিলাম আমার ছেলের প্রকৃত খু’নির সাজা হোক,আমার স্বামী খারাপ জানতাম কিন্তু এতটা খারাপ ভাবিনি।তবুও আজ শান্তি পাচ্ছি,পশুটার সাজা তো হলো,আমার ছেলের আত্মা এবার শান্তি পাবে (জেরিন ইসলাম)


ইন্তিহাজ বাড়িতে আসতেই আমেনা খাতুন একবাটি পায়েশ নিয়ে দৌড়ে এসে ইন্তিহাজের মুখে দিলো,তার আনন্দ যেন ধরে না।
কিন্তু ইন্তিহাজের চোখজোড়া ইয়ানা’কে খুঁজে চলেছে,সেই যে কোর্টে একবার দেখা হলো,তারপর থেকেই উধাও।
ইন্তিহাজ কে এমন উঁকিঝুঁকি করতে দেখে বহ্নি দাঁত কেলিয়ে বললো,

—কি ভাইয়া,আমাদের ইয়ানা মানে ভাবিজি কে খুঁজছো নাকি হুম (চোখ নাচিয়ে)

—আহ্ বহ্নি,ছেলেটা আসতে না আসতেই কি শুরু করলি? (ধমক দিয়ে বললেন খাদিজাতুল নেসা)

—আম্মু,তুমি দেখো ভাইয়া কেমন করছে,আমিতো ভুল বলিনি,ভাইয়া যেভাবে শকুনের মতো উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে,আমিতো শিওর ভাইয়া ইয়ানা’কেই খুঁজছে,কারণ আমরা সবাই তো এখানে রয়েছি,শুধু ইয়ানা ছাড়া।

সকলের সামনে বহ্নি’র এধরণের কথা বলায় বেশ লজ্জাবোধ হলো ইন্তিহাজের,বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সে বললো,

—বহ্নি,তোর হাজবেন্ড কোথায় রে,আমিতো ওকেই খুজছিলাম,কোর্টেও একদিনও দেখলাম না,তাই ভাবছি তোর বর টা আবার তোর মতো শাঁকচুন্নি’র সাথে টিকতে না পেরে সন্ন্যাস নিয়ে ঘর ছারলো নাকি?

—ভাইয়া,ভালো হচ্ছে না কিন্তু

—দুই ভাইবোনে শুরু হয়ে গেলো,থামবি তোরা।
বাবা ভেতরে আয়তো,ইশ একয়দিনে কতো শুকিয়ে গেছে ছেলেটা (আমেনা খাতুন)

ইন্তিহাজ ভেতরে এসে সোফায় বসে পায়ের মোজা খুলতে খুলতে বললো,

—আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,অনেক টায়ার্ড লাগছে

—হ্যা যাও যাও,তোমার বউ ভেতরে ওয়েট করছে (বহ্নি)

—বহ্নি,আমরা সবাই আছি এখানে,কি শুরু করছিস তুই (খাদিজাতুল নেসা)..

ইন্তিহাজ ওপরে এসে নিজের রুমের দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো,ভেতরটা অন্ধকার।
ভ্র-কুচকে রুমের ভেতরে আসলো সে,রুমের বাল্বগুলো নষ্ট হয়ে গেলো নাকি আজব,ইন্তিহাজের ভাবনার মাঝেই একজোড়া হাত এসে ওর চোখ চেপে ধরলো,

—ইয়ানা,আমি জানি এটা তুই,আমি তোর মতো ভীতু না যে ভয় পাব,রুম অন্ধকার করে রাখছিস কেন,কি শুরু করলি এখন আবার।
আরে আজবতো,চোখ ছার,কি শুরু করলি

—সারপ্রাইজ আছে,এসো আমার সাথে
—মানে,কোই যাব এভাবে।আর তুই হাইটে এতো লম্বা হয়ে গেলি কিভাবে।

ইয়ানা কোনো প্রতিত্তোর না করে ইন্তিহাজের চোখ ধরে রেখেই ওকে নিয়ে বেলকনিতে আসলো,বেলকনিতে এসে ইন্তিহাজের চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো ইয়ানা।
ইন্তিহাজ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ওর সামনে একটা টি টেবিলের ওপর গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো,মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে আছে,মাঝখানে একটা ছোট্ট র‍্যাপিং করা গিফট বক্স।

—এসব কি,আজতো কোনো বিশেষ দিন না?

—খুলে দেখো,তোমাকে সেদিন বলেছিলাম না সসম্মানে বাসায় ফিরে আসো,সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।

—কি সারপ্রাইজ
—খুলে দেখো বক্স টা,তাহলেই জানতে পারবে।

ইন্তিহাজ ইয়ানা’র কথামতো হাঁটু গেড়ে বসে বক্সটা হাতে নিয়ে খুলতে শুরু করলো,অবশেষে বক্সের ঢাকনা খুলে দেখে বক্সের ভেতরে একটা প্রেগন্যান্সি টেস্টের কিট রয়েছে,কিট টিতে দুই দাগ স্পষ্ট,এটা দেখার পর ইয়ানা’র দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকালো ইন্তিহাজ,ইয়ানা মুচকি হেসে বললো,

—কি কেমন দিলাম
—এটা সত্যিই?
—কোনো সন্দেহ আছে? (চোখ নাচিয়ে)

ইন্তিহাজ কোনো কথা না বলে উঠে দাড়িয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইয়ানা’কে,চোখ থেকে দু’ফোটা আনন্দের অশ্রু ঝরে পরলো ওর।

—এতবড় খুশির খবর তুই আগে কেন জানাস নি আমায়?

—আগে জানালে তুমি আজকের মতো এতটা এন্জয় করতে পারতে না মিঃ,আর আমি যেদিন জানতে পেরেছি আমি মা হতে চলেছি,সেদিনই তোমাকে ওরা… (মন খারাপ করে)

—খুব কষ্ট পেয়েছিস তাইনা,কি করবো বল,সময়তো সবসময় আমাদের অনুকূলে থাকে না,ভালো সময়ের পাশাপাশি খারাপ সময়ও আসবে,ভালো খারাপ সবটা নিয়েই আমাদের এই জীবন।
আর সবশেষে কি জানিস,যে যতই অন্যায় করুক না কেন,দিনশেষে জয় কিন্তু সত্যেরই হয়,কোনো অপরাধ কখনো লুকায়িতো থাকে না,একদিন না একদিন সেটা প্রকাশ পাবেই, জয় হবে সত্যের,তাইতো দেখ আমি সশরীরে সসম্মানে আবারও ফিরে আসতে পেরেছি।

ইয়ানা’র চোখ থেকে অশ্রুজল গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে,ইন্তিহাজ ইয়ানা’কে ছেড়ে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলো,কপালে চুমু এঁকে দিয়ে ,পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ঠোঁটে দুষ্টু হাসি টেনে নিয়ে বললো,

—এইযে ছিছকাদুনি একআনা,আজ এতো লম্বা হয়ে গেলি কি করে বলতো,আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ পেয়ে ম্যাজিক করছিস নাকি,তুইতো এই এতটুকু পিচ্চি ছিলি,গাট্টু

—এই ভালো হচ্ছে না কিন্তু ইফাজে’র আব্বু

ইন্তিহাজ ইয়ানা’র পায়ের দিকে খেয়াল করতেই শব্দ করে হেসে দিয়ে বললো,

—ওও আচ্ছা আচ্ছা,তাহলে এই ব্যাপার।
পেন্সিল হিল পরে ম্যাডাম লম্বা হয়েছেন,তাইতো বলি গাট্টু থেকে হঠাৎ এত লম্বা কি করে হলো।

—একদম ইনসাল্ট করবে না,আমি মোটেও গাট্টু নই,আমি ৫ফিট ৩ইঞ্চি ওকে।
আর বেশি ভাব নিওনা ওকে,আমার ইফাজ দেখবা তোমার চেয়েও হাইটে বেশি লম্বা হবে হুম।

—দেখা যাবে,কিন্তু আমাদের ছেলে না হয়ে তো মেয়েও হতে পারে তাইনা,তো ইফাজ ইফাজ বাদ দিয়ে একটা মেয়ের নামও ভেবে রাখ

—নো প্রবলেম,মেয়ে হলেও ইফাজ নাম রাখবো।ইফাজ অর্থ কি জানো,”উপকার করা”,আমি চাই আমাদের ছেলে বা মেয়ে যেটাই হোক না কেন,সে যেন পরোপকারী হয়।
আর এখনকার জেনারেশনে ছেলেমেয়ের নাম কোনো ফ্যাক্ট না, এক নাম দু’জনেরই হয়।

—কিম্তু আমি তো ভাবছি মেয়ে হলে নাম রাখবো ফাইজা,ফাইজা অর্থ “বিজয়িনী”, আমি চাই আমাদের মেয়ে সকল সৎ পথে সফল ভাবে জয়ী হোক,কি নামটা কেমন?

—মাশাল্লাহ,অনেক সুন্দর নাম।
আল্লাহ ছেলে বা মেয়ে যেটাই দিক,আমি তাতেই খুশি।নামগুলো অনেক সুন্দর বলো,আর ইউনিকও।

—হুম। (বলেই আপসেট হয়ে গেলো ইন্তিহাজ)
—কি হলো,হঠাৎ আপসেট হয়ে গেলে যে?
—একটা কথা ভাবছি বুঝলি…
—কি বলোতো?

—এইযে হঠাৎ করে আমার আইনজীবী এই অডিওক্লিপ টা কোথায় পেলো বলতো,আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম,উনি বললেন কোনো এক শুভাকাঙ্ক্ষী নিজের লাইফরিস্ক নিয়ে অডিওক্লিপ রেসকিউ করেছে ডক্টর নিলয় মন্ডলের কেবিন থেকে। সে নাকি সন্দেহবসত ডক্টর মন্ডলের কেবিন সার্স করতে গেছিলো লয়্যার মিঃশেখের হয়ে।
কিন্তু কে সেই শুভাকাঙ্ক্ষী,বুঝলাম না,পরিচয় গোপন কেন করছে সে?

—থাকুক না কিছু কথা না জানা,এতো ভেবে কি কাজ বলোতো,বাদ দাও।
তুমি সসম্মানে ফিরে আসতে পেরেছো এই আলহামদুলিল্লাহ।

—কিন্তু…

—কোনো কিন্তু নয়,এই মূহুর্তটা নষ্ট করো নাতো।শোনোনা আজকে তুমি আমাকে গান গেয়ে শোনাবে,আমি নাহিদের গিটার এনেছি নাও ধরো।

—আমি গাইতে পারি না,জানিস তো

—যা পারো তাই গেয়ে শোনাও,আমার জন্য না হলেও আমাদের বেবির জন্য প্লিজ,আমার অনেক ইচ্ছে আমার হাজবেন্ড আমাকে গান গেয়ে শোনাবে।

—ইয়ানা,পাগলামি করিস না,আমি সত্যিই গাইতে পারি না,সুর আসে না আমার।

—তো কি হয়েছে,বাইরের লোকজনতো শুনবে না,আমরা আমরাইতো।

—(হ্যাঁ,ইজ্জতের ফালুদা করি আরকি,কেটে পরতে হবে এখানে থেকে) -বিরবির করে বললো ইন্তিহাজ।
একটা ইমারজেন্সি কল আসছে বুঝলি,আমি কথা বলে এখুনি আসছি।

—হ্যাঁ,অজুহাত দিয়ে কেটে পরার ধান্দা,বুঝিনা নাকি আমি, গান শোনাও,আজকের এই দিনটায় আমার কথাটা রাখো প্লিজ

ইন্তিহাজ ইয়ানা’র চোখের দিকে তাকিয়ে ওর আবদার আর ফেরাতে পারলো না,কি মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটা,এই মায়া ভরা দৃষ্টিই তো পাগল করেছে ওকে,যে চোখের দিকে তাকালে ওর হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে যায়,শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে।ইয়ানা’র চোখের দিকে তাকিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে ইন্তিহাজ সুর তুললো…

❝ডুবেছি আমি #তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়
ভুলগুলো জমিয়ে রেখে বুকের মণিকোঠায়
আপন মনের আড়াল থেকে ভালবাসবো তোমায়
ভালবাসবো তোমায়…..

তোমার চিরচেনা পথের ঐ সীমা ছাড়িয়ে
এই প্রেম বুকে ধরে আমি হয়তো যাবো হারিয়ে
চোখের গভীরে তবু মিছে ইচ্ছে জড়িয়ে
একবার শুধু একটিবার হাতটা দাও বাড়িয়ে
ডাকবেনা তুমি আমায় জানি কোনোদিন
তবু প্রার্থনা তোমার জন্য হবেনা মলিন
হবেনা মলিন…
ডুবেছি আমি #তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়❞

༆༄সমাপ্ত༄༆