তোমার চোখের অনন্ত মায়ায় পর্ব-২০+২১+২২

0
274

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_২০

—এখন কি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় বলোতো ভাই,থানায় কেস করবো নাকি অন্যকিছু (বললেন আয়ুব জামান)
—ওও ভাই,আমারে পুলিশে দিয়েননা,আমার ভয় করে।
ওও ভাই,ভাবি পায়ে পরি,আমারে পুলিশে দিয়েননা (কাঁদতে কাঁদতে বললেন মালেকা বেগম)
—তোমার ন্যাকা কান্নায় কাজ হইবো না মালেকা,তুমি আজ যেইডা করছাও আমি ম*ইরা গ্যালেও তোমারে মাফ করুমনা, তোমার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নাহ্।
ভাই,আমি আর এইখানে থাকমুনা,কালকেই গ্রামে চইলা যামু, তারপর এইডারে দেখতাছি (শফিক রহমান)
—হ্যারে মালেকা,তোর কি বিবেকবুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে কি-রে,এতবড় কাহিনি করার পরেও তোর মধ্যে কোনো অনুশোচনাবোধ দেখছিনা,নিজেকে নিয়ে ভেবে যাচ্ছিস কেমন মা তুই কিরে (খাদিজাতুল নেসা)
—আমিতো জানতাম মায়েরা সন্তানদের জন্য নিজের জীবন দিতেও পিছপা হয়না,কিন্তু ইনিতো সম্পূর্ণ উল্টো,ধিক্কার জানাই এমন মানুষকে (আয়ুব জামান)
—শোন শফিক,তুই কালকে চলে যাবি ভালো কথা,কিন্তু শিমলা আমাদের সাথেই থাকবে,ওর পুরো রেসপনসেবলিটি আমাদের (আয়ুব জামান)
—কিন্তু ভাই…
—আমি এবিষয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাইনা,তুই তোর বউকে নিয়ে চলে যাস।শিমলা এখানেই থাকবে,ওর যত্নআত্তির কোনো ত্রুটি হবে না,নিশ্চিন্তে থাকিস।বরঞ্চ গ্রামে গেলেই আরও সমস্যা হবে,ওর ছোট্ট মস্তিষ্কে,স্পেশালি এতবড় ঘটনার পরে ওর গ্রামে না যাওয়াটাই বেটার,ও এখানেই ভালো থাকবে,আমরা সবাই দেখে রাখবে ওকে,কোনো সমস্যা হবে না
—ঠিক আছে ভাই
—আচ্ছা,মা কি কিছু জানে?
মা কোথায় (আয়ুব জামান)
—আমিতো আম্মাকে সন্ধার আগে ওষুধ দিয়েছিলাম,মা ঘুমাচ্ছে,এসব কিছু জানে না (আমেনা খাতুন)
—মা’কে এসব জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই,কষ্ট পাবে।
বাচ্চাদেরকেও কিছু বলোনা কেউ।আর শোনো,ইন্তিহাজ এখন দেশে নেই,ওকেও এসব বিষয়ে কিছু বলার প্রয়োজন নেই,শুধু শুধু টেনশন করবে ছেলেটা,সব খবর বাইরে দিতে নেই।


ইয়ানা টিউশানি থেকে ফিরলো সন্ধায়,বাড়িতে ঢুকতেই দেখে ড্রয়িং রুমে সবাই একসঙ্গে বসে ল্যাপটপে কারোর সঙ্গে কথা বলছে,তৃষা ইয়ানা’কে দেখে বলে উঠলো,

—আপু,ইন্তিহাজ ভাইয়া কল দিয়েছে,তাড়াতাড়ি এসো

ইয়ানা জুতো খুলে দ্রুত ল্যাপটপের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই কল কেটে দিলো ইন্তিহাজ,

—এটা কি হলো,আপু আসতেই ভাইয়া কল কেটে দিলো (তৃষা)
—ফোনের চার্জ শেষ মনে হয় (শিমলা)
—ইন্তিহাজতো ল্যাপটপে কথা বলছিলো (খাদিজাতুল নেসা)
—ওয়াই-ফাই অফ হয়ে গেছে মনে হয় তাই কল কেটে গেছে, তাছাড়া ইন্তিহাজ কেন না বলে কল কাটবে (আমেনা খাতুন)
—ওহ্ কামঅন আম্মু,এটা কানাডা,বাংলাদেশ নয়,যে ওয়াই-ফাই ডিস্টার্ব দিবে (তৃষা)
—আমি আসার কারণে হয়তো কল কেটে দিয়েছে,আচ্ছা তোমরা থাকো,আমি রুমে যাই।

ইয়ানা মনখারাপ করে রুমে চলে গেলো,রুমে গিয়ে নিজের ফোন বের করে নেট-অন করে হোয়াটসঅ্যাপ,ইমু,মেসেঞ্জার সবজায়গা চেক করেও ইন্তিহাজের কোনো মেসেজ বা কল দেখতে পেলো না,বাহ্ এতো তাড়াতাড়িই ভুলে গেলো,ভালোই।

ইয়ানা বোরকা,হিজাব খুলে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে নাহিদ বসে থেকে ওর ফোন ঘাটাঘাটি করছে,কিন্তু লক খুলতে পারছেনা।

—কি হয়েছে ভাইয়ু,গেম খেলবে?
—হুম,ওই পাজল গেমটা বের করে দাওনা,আমি সলভ করবো
—মুখ মুছে নিই তারপর দিচ্ছি কেমন (জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)
—আপুই,তুমি কি মন খারাপ করছো?
—কেন সোনা?
—ওই-যে,ভাইয়া তোমার সাথে কথা না বলেই কল কেটে দিলো,তোমার সাথে কথা বললো না
—আচ্ছা সোনা ভাইয়ু আমার,একটা কথা বলোতো…
—কি কথা আপুই?
—ভাইয়া কি একবারও আমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলো?
—হুম,একবার শুধু বলেছিলো “ইয়ানা কোথায়”,আম্মু বলছে তুমি টিউশনিতে গেছো।
—আর কিছু বলেনি?
—না-তো
—মানে এটুকু ছাড়া আমাকে নিয়ে আর কিছুই বলেনি?
—নাহ্ (ডানে-বামে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো নাহিদ)
আচ্ছা আমায় এবার গেম বের করে দাও

ইয়ানা নাহিদ’কে গেম বের করে দিয়ে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে বসলো,হঠাৎ কি হলো ইন্তিহাজের।দু’দিন ধরে কোনো খবর ছিল না,আজকে যে-ই কল দিলো,শুধু ফ্যামিলির সঙ্গে কথা বললো,অথচ ইয়ানা’কে কল করাতো দূরে থাক,কোনো মেসেজ পর্যন্ত করেনি,হঠাৎ করে এমন ইগনোর করার মানেটা কি আজব,যাওয়ার সময়তো সব ঠিকঠাকই ছিল,তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো।

—ভাইয়ু,ফোনটা দাও তো,একটু কাজ আছে
—আপু,আর একটু,এইতো পাজল টা মিলে যাবে এক্ষুনি,তারপর দিচ্ছি
—তোমার পড়াশোনা নেই?
—পড়বো তো,কিন্তু আরেকটু পরে,আগে সল্ভ করে নিই।
—যাও গিয়ে পড়তে বসো,আমিও পড়বো,কিন্তু একটু কাজ আছে,তাড়াতাড়ি দাও ফোনটা
—১মিনিট প্লিজ,নাহলে নেক্সট লেভেলে যেতে পারবো না,এইতো হয়ে এসেছে,আর একটু।
—তাড়াতাড়ি করো

কিছুক্ষণ পরেই নাহিদ ইয়ানা’কে ফোন ফেরত দিয়ে বেড়িয়ে গেলো,ইয়ানা ইন্তিহাজ কে মেসেঞ্জারে মেসেজ করলো,কিন্তু ইন্তিহাজ এক্টিভ থাকা স্বত্তেও কোনো রিপ্লাই করছে না।রাগে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে ইয়ানা’র,উপায় না পেয়ে এবার কল দিলো ইয়ানা,কিন্তু রিং হতে না হতেই বারবার কল কেটে দিচ্ছে ইন্তিহাজ,বেশ-কয়েকবার চেষ্টার পরেও ঘুরেফিরে একই কাহিনী দেখে কল করা অফ করলো ইয়ানা।
ভয়েস মেসেজে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো,

—বাহ্ খুব ভালো,ওখানে যেতে না যেতেই আমাকে ইগনোর করা শুরু করে দিছো,ওয়াও জাস্ট ওয়াও,অসাধারণ।
নতুন পাইছো তাইনা,ওইখানে তো সব ডানাকাটা হুরপরীদের অভাব নেই,আমার মতো মেয়েকে কেন ভালো লাগবে।আমি তো খারাপ,তোমার মতো পড়াশোনায়ও তেমন ভালো নই, আমাকে তো ভালো লাগবেই না।তো মেয়েটার পিক দিও, আমিও দেখি কেমন দেখতে।দেশে থাকতে আমায় দিয়ে যা খুশি করতে আর এখন ওখানে অন্য মেয়ের সাথে।তাইতো বলি এতো তড়িঘড়ি করে চলে গেলে কেন,এবার বুঝলাম সবটা,তোমার পেটে পেটে এতো কিছু ছিল,খুব ভালো,খুবই ভালো, সুখে থাকো,আমিও দেখায় দিব আমিও পারি,তুমি পারলে আমি কেন পারবোনা,আমিও পারবো।দেখায় দিবো আমিও রিলেশন করতে পারি।
রিপ্লাই দিতে হবে না,তুমি তোমার ওনাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকো, ভালো থেকো,আর কখনো তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না,বায়।

ইয়ানা ভয়েস মেসেজ সেন্ড করার কিছুক্ষণ পরেই ইন্তিহাজ রিপ্লাই করলো,

—এসব কি ধরনের কথাবার্তা ইয়ানা,আমি কি তোর বয়ফ্রেন্ড লাগি নাকি যে এসব বলছিস,কাকিয়াকে কি বলবো আমি?
—ভাইয়া…
—কিসের ভাইয়া,পড়াশোনা নেই তোর,নেটে কি করছিস তুই? খুব কথা বলা শিখছিস তাইনা,উলটাপালটা মেসেজ করছিস, বেয়াদব কোথাকার,কমনসেন্স নেই তোর,যা পড়তে বস
—ভাইয়া,এভাবে বলছো কেন,তুমিইতো যাওয়ার সময় বলেছিলে সুযোগ পেলেই আমাকে কল করবে তাহলে আমাকে কল কেন করোনি,জানো আমি তোমার কলের আশায় অলওয়েজ নেট অন করে রাখি,কিন্তু তুমি একটা কল, মেসেজ কিছুই করলে না।বাড়িতে কল দিয়ে সবার সাথে কথা বললে অথচ আমায় দেখে কল কেটে দিলে,কেন?আমার সাথে কি কথা বলার ইচ্ছে নেই তোমার,কি করেছি আমি বলো
—আমি বলেছি সুযোগ পেলে কল দিব,আমি এখন বিজি আছি,আর বাড়িতে কল দিলেই তোর সাথে কথা বলতে হবে এটা কি বাধ্যবাধকতা নাকি,নেট অফ করে পড়তে বস যা।
—ভাইয়া,শোনো না,বলছ…

ইয়ানা পুরো কথা শেষ করার আগেই কল কেটে দিলো ইন্তিহাজ,ইয়ানা ফোনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে ওর,ইন্তিহাজের থেকে এধরনের আচরণ মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,কিন্তু ইন্তিহাজ আগেওতো বহুবার এমন করেছে,কোই তখনতো এতোটা কষ্ট হয়নি তাহলে আজ কেন এত হৃদয়বিদারক কষ্ট হচ্ছে,কেন,কি কারণ?বুকের ভেতরে এক অদ্ভুত অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে ওর।
বাংলাদেশ এবং কানাডা’র মধ্যকার সময়ের ব্যবধান ১১ঘন্টা, বাংলাদেশে এখন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা বাজে,তারমানে কানাডায় এখন সকাল সাড়ে আটটা বাজে,ইন্তিহাজ হয়তো ব্যস্ত আছে, নিজের মনকে এই বুঝ দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো ইয়ানা। পড়ার টেবিল থেকে বই নিয়ে শুয়ে পরলো,কিন্তু কিসের আর পড়া,বই হাতে নিলেই প্রাকৃতিক ওষুধ অটোমেটিকলি চোখে ঘুম এসে যায়,আর বাঙালি হলে তো কথাই নেই,আমাদের ইয়ানা’র ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিসের,বই খুলে কিছুক্ষণ বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওইভাবেই ঘুমিয়ে গেলো ইয়ানা।


পরদিন সকালে রেডি হয়ে কলেজে যাচ্ছে ইয়ানা,সঙ্গে ওর ফ্রেন্ড মিথিলাও রয়েছে। কলেজের কাছাকাছি আসতেই দু’টো ছেলে বাইক নিয়ে ইয়ানা’র সামনে দিয়ে সিটি দিতে দিতে চলে গেলো,এই ছেলেগুলো কিছুদিন ধরেই ফলৌ করছে ওকে। ইয়ানা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে এসে ওর ফ্রেন্ড-সার্কেলের কাছে গেলো।বৃষ্টি,রাজিয়া ওদের সঙ্গে মাছুম আর সূর্য নামে দু’জন ছেলেও রয়েছে।ইয়ানা আর মিথিলা ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই বৃষ্টি বললো,

—গুড মর্নিং দোস্ত,কি খবর?
—বা*লের মর্নিং মর্নিং করিসনাতো,কিসের গুড,কোনো গুড নেই আমার লাইফে,আমার লাইফে সবকিছুই ব্যাড ওকে।
—কিরে বান্ধবী,সকাল সকল মেজাজ চটে আছে মনে হচ্ছে, কি হয়েছে তোর জানস্? (রাজিয়া)
—আর কইসনা,ও-ই যে ওই ছেলেগুলো আজকেও টিজ করেছে,রাস্তায় সিটি মা*রছিলো জানিস,সব-কয়টাই একেকটা অসভ্যের জাত বংশ,বেয়াদব কোথাকার (মিথিলা)
—কারা রে,তোদের আবার কারা টিজ করছে (বললো সূর্য)
—তা কি করে জানবি তোরা,কেমন ফ্রেন্ড যে খোঁজ রাখিসনা, অন্যসময় তো ফ্রেন্ড ফ্রেন্ড করে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলিস
—আরে ইয়ানা,ইয়ার তুই তো জানিস আমার গায়ে পক্স বের হয়েছিলো,তাই বাড়িতে ফুল বেড রেস্টে ছিলাম,কি করে জানবো আমি,তুইতো কিছুই বলিসনাই আমাকে,মেসেজও তো করতি না,আবার আমাকেই এভাবে বলছিস,বাহ্ ভেরিগুড

ইয়ানা এবার মাছুমের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালে মাছুম জিহ্ব কেটে বললো,

—আমিতো কলেজেই আসিনি বা*ল,পরিক্ষার ভয়ে দাদুবাড়ি গেছিলাম,ওখানে নেট খুব খারাপ বুঝলি,তাই কন্টাক্ট করতে পারিনি তোদের সাথে, সরি রে বান্ধবী,রাগ করিস না কেমন
—তোর সরি’র গুষ্টি কিলাই,ওই ছেলেগুলোর এ টু যেড পুরো বায়োডাটা চাই,সব ইনফরমেশন যদি না দিতে পারিস তোদের আস্ত রাখবো না বলে দিচ্ছি,আমাকে ভালো করেই চিনিস তোরা,ওই ছেলেগুলোর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে বুঝলি।
—ওকে ডান,কালকের মধ্যে সব খবর পেয়ে যাবি,টেনশন নট।
—একদম,আমরা চলে এসেছি যখন,তখন আর কোনো সমস্যা নেই,আমরা ষষ্ঠ পান্ডব যেখানে,ভয়ডর নাই সেখানে।


কানাডা টাইম রাত সাড়ে ১১টা…
ল্যাপটপে কিছু জরুরি প্র্যাকটিক্যাল প্রোজেক্ট চেক করছিলো ইন্তিহাজ,হঠাৎ ফোনে টুং করে আওয়াজে হতেই ফোনটা হাতে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে গেলো ইন্তিহাজ,”Source-1″ নামে এক আইডি থেকে কিছু ফটো’স এসেছে,ইন্তিহাজ ইনবক্সে গিয়ে দেখলো ইয়ানা একজন ছেলের হাতধরে দাঁড়িয়ে আছে একটা ফুচকার দোকানের সামনে,ইয়ানা ফটোজ গুলো দেখামাত্রই নম্বরটি তে কল করলো,কল রিসিভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো ইন্তিহাজ,

—ছেলেটা কে,নাম কি,কোথায় থাকে,ইয়ানা’র সঙ্গে কি ধরনের সম্পর্ক সবটা জেনে আমাকে বলিস,ফুল ইনফরমেশন না নিয়ে আমাকে এভাবে পিক দিবিনা,মনে থাকে যেন,রাখ (টুটটুটটুট)


রাত ১২টা…
গ্রুপ কলে আড্ডা দিচ্ছে ইয়ানা,হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে কল আসতেই ইয়ানা মেসেঞ্জারে গ্রুপ কল কেটে দ্রুত হোয়াটসঅ্যাপে আসা কল রিসিভ করলো,ইন্তিহাজ কল দিয়েছে,

—এতো রাতে অনলাইনে কি করছিস তুই?
—এমনেই নিউজফিড দেখছিলাম।
—আর?
—আর কিছুই না।
—কি করছিলি সেটা বল,মিথ্যা বলা আমি পছন্দ করি না সেটা তুই জানিস ইয়ানা।
—সত্যি বলছি আর কিছুই করছিনা,গান শুনছি আর নিউজফিড দেখছি,সন্ধ্যা থেকে পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেছি আমি তাই একটু রিল্যাক্সড করছিলাম আরকি
—শাট আপ,জাস্ট শাট আপ।
গুছিয়ে ভালো মিথ্যা বলা শিখে গেছিস দেখছি,মেসেঞ্জারে কার সাথে কথা বলছিলি তুই,কয়বার কল দিছি দেখ,বারবার ওয়েটিং দেখাচ্ছে,আবারও কারোর সঙ্গে রিলেশনে গেছিস?
—ভাইয়া ইয়ে মানে আসলে আমি…

ইন্তিহাজ কল কেটে দিয়ে মেসেঞ্জারে ভিডিও কল দিলো, ইয়ানা কল রিসিভ করলে ইন্তিহাজ বললো,

—স্ক্রিন শেয়ার কর
—কিহ্
—কথা কানে যায়নি,বললামতো স্ক্রিন শেয়ার কর
—আমার অ্যাপস নেই
—অ্যাপসের দরকার নেই,এমনেই হবে,এইযে আমি স্ক্রিন রেকর্ড করে পাঠিয়েছি দেখ,এবার স্ক্রিন শেয়ার কর ফাস্ট
—ভাইয়া,আসলে বলছিলাম যে আমি সত্যিই কারোর সঙ্গে রিলেশনে যাইনি,আমি ওই একটু পড়াশোনার ব্যাপারে আমার বান্ধবীর সঙ্গে কলে কথা বলছিলাম আরকি,এটাই সত্যি।
—স্ক্রিন শেয়ার করবি না তাইতো?
—আমিতো ব…
—হ্যাঁ নাকি না
—না মানে…
—ওকে ফাইন,যা মন চায় কর

কথাটা ব’লেই কল কেটে ইয়ানা’কে ব্লক করে দিলো ইন্তিহাজ।

—(আজবতো,এত রাগ কোই থেকে আসে আজব,কথায় কথায় ব্লক দেওয়া কি ধরনের স্বভাব।আমি তো সত্যিই এখন কারোর সঙ্গেই রিলেশন করি না,কিন্তু এই হিটলার যদি দেখে এতরাতে আমি পড়াশোনা,ঘুম বাদ দিয়ে ফ্রেন্ডস দের সাথে গ্রুপ আড্ডা দিচ্ছি তাহলে তো খবর খারাপ করে দিবে,আমি কি স্ক্রিনশেয়ার করতে পারিনা নাকি,কনভার্সন ডিলিট করেও যদি স্ক্রিনশেয়ার করি তাহলে কার সঙ্গে কথা বলছিলাম তার কি জবাব দিবো,একনিমিষে ধরা পরে যাব,এই হিটলার টা যে পরিমাণ চালাক,খুটেখুটে খুঁত বের করে ছাড়বে,কিন্তু এখন আমি কি করি,ব্লক কবে খুলবে কি জানি।হোয়াটসঅ্যাপে তো ব্লক দেইনি,ওখানে কল দিয়ে একটি বুঝানোর চেষ্টা করি,ধুরর ভালো লাগে না বা*ল,রাতবেরাতে এসব প্যারা কারোর ভালো লাগে,জীবনটাই প্যারাময়,শান্তি কবে পাব আল্লাহ মালুম,ধ্যাত

ইয়ানা হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার কল করার পর কল রিসিভ করলো ইন্তিহাজ,ইয়ানা কিছু বলার আগেই ইন্তিহাজ কড়াস্বরে বলে উঠলো,

—কি সমস্যা টা কি তোর,বারবার কল দিচ্ছিস কেন?
তোর কাছে সময়ের মূল্য না থাকলেও আমার আছে,নেক্সট আমাকে কল করবি না,যার সঙ্গে কথা বলছিলি তার সাথেই কথা বল,আমাকে আর একবার কল দিলে এখানেও ব্লক খাবি বলে দিলাম
—ভাইয়া,সত্যি সত্যিই আমি কারোর সঙ্গে রিলেশনে যাইনি, কসম কেটে বলছি,আমি সত্যিই ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম।
—স্টোরি দিয়েছিস,ওই পিক টা কে তুলে দিয়েছে?
—মিথিলা
—তোর সঙ্গে আর কেকে ছিলো ফুচকার দোকানে?
—আমি আর মিথিলা,আর কে থাকবে? (ঘাবড়ে গিয়ে)
—সত্যি করে বল,কে ছিল আর
—সত্যিই কেউ ছিল না,আমি আর মিথিলাই ছিলাম শুধু
—ওকে,কল রাখ
যেটা মন চায় সেটা কর,ছেলেদের হাত ধরা ধরি সহ আরও যা যা মন চায় কর,আমার ফোনে তোর থেকে যেন কল,মেসেজ না আসে।।

বলেই কল কেটে দিলো ইন্তিহাজ,এদিকে সূর্য বারবার মেসেঞ্জারে কল করছে ইয়ানা’কে,ইয়ানা কল রিসিভ করতেই বললো,

—কিরে গ্রুপ কল থেকে বেড়িয়ে আসলি কেন,কি সুন্দর গানের কলি খেলছিলাম,খেলা জমে উঠেছিলো ইয়ার,সব ভেস্তে দিলি তুই।
—আরে রাখ তোর খেলা,এদিকে আমার লাইফ ভেস্তে যাচ্ছে আর উনি খেলা নিয়ে পরে আছেন।
—কেন রে,কি হয়েছে তোর?
—আমার ক্রাশ ভাই কল দিছিলো,আমায় ওয়েটিং পাইছে এবার বুঝ কি হতে পারে,আমাকে মেসেঞ্জার থেকে ব্লক দিছে।
—তোর ক্রাশ ভাই মানে,ওই ইন্তিহাজ ভাইয়া নাকি?
কিন্তু তোর ভাই তো কানাডায় চলে গেছে বললি,আর তোর ভাই তো তোকে সহ্যই করতে পারে না তাহলে এতরাতে কেন কল দিবে?
—আমায় এক্টিভ দেখছে তাই,আর ভাইয়া আমার পড়াশোনা নিয়ে অনেক সিরিয়াস,ইয়ারচেন্জ পরিক্ষায় ৩সাবজেক্টে ফেইল করছি না,তাই ভাইয়া আরও রেগে আছে।
—ভাগ্যিস আমি অসুস্থ ছিলাম,সারাবছর যে ফাঁকি মার*ছি বইন,আমিতো সব সাবজেক্টে ফেইল করতাম,আমায় আর বাড়িতে রাখতো না রে,বেঁচে গেছি আমি।
আচ্ছা,তোর ওই ফটো কে তুলছে?
—কোনটা?
—ওইযে ফুচকার দোকানের?
ফটোগ্রাফার কে তো অস্কার সরি সরি পুরষ্কার দেওয়া উচিত,হ্যাভি ছবি তুলছে বইন।
—মিথিলা তুলছে,ফুসকা অনেক টেস্টি ছিলো রে।
তোকে কতো করে টানলাম,তুই চলে গেলি,তোর এতো শক্তি যে তোর হাত ধরে টেনেও ধরে রাখতে পারলাম না।
—বুঝতে হবে,আই এম এ বয়,ইউ আর এ গার্ল।আমাদের বলশক্তি অনেক,আমাদের এক হাতের যে বল, তোদের ৬হাতের বলও কম হয়ে যাবে (ভাব নিয়ে বললো সূর্য)
—শয়*তান কোথাকার,সর
আমাকে প্ল্যান দে এখন,ভাইয়াকে কি করে ম্যানেজ করবো,অনেক রেগে আছেরে দোস্ত…..

To be continue…..

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_২১

—আমাকে প্ল্যান দে এখন,ভাইয়াকে কি করে ম্যানেজ করবো,অনেক রেগে আছেরে দোস্ত।
—আমি কি করে বলবো,আমি তো জানিনা তোর ভাইয়া কি-সে অনুরাগী,আমি না-জেনে কোনো আইডিয়া দিলে হিতে বিপরীত হবে।
—সব তোদের জন্যই হলো,ধুরর ভালো লাগে না আর,রাখ

ইয়ানা কল কেটে দিয়ে নেট অফ করে ফোনটা রেখে দিলো, এখন উত্তেজিত মাথায় কিছু করতে গেলে প্রবলেমস এর সলিউশন তো হবেই না,উল্টো আরও খারাপ হয়ে যাবে,সব সময় ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে কাজ করতে হয়,সুতরাং এখন রিল্যাক্সে ঘুমানোটাই শ্রেয়,কাল সকালে সবটা ভাবা যাবে।
ইয়ানা লাইট অফ করে দিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।


পরদিন সকালে ইয়ানা খাবার টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে, তখনই আয়ুব জামান এসে ওর পাশের চেয়ারে বসলেন,নাস্তা করে উনিও অফিসে যাবেন।

—ইয়ানা,তোর ফোন কোই?
—কেন আব্বু?
—তোর ইন্টার পরিক্ষার আগে তোকে আর ফোন দেওয়া যাবে না,পরিক্ষার পরে ফোন পাবি,এই ফোনের জন্যই তোর পড়াশোনা সব লাটে উঠছে।শেষে ইন্টারেও যদি ফেইল করিস তখন এই বংশের রেপুটেশন বলে আর কিছু থাকবে না,এতো টাকাপয়সা খরচ করে পড়াশোনা করাচ্ছি কিসের জন্য,শুধু ভালো রেজাল্টের আশায়।
—আব্বুউ,আমার অনলাইন ক্লাস করতে হয়,নোটস কালেক্ট করতে হয়,ফোন নিয়ে নিলে কিভাবে করবো
—থাক মা,আমি তোমার বাবা,আমাকে অন্তত অনলাইন ক্লাসের অজুহাত দিওনা।
ভালো মেয়ের মতো ফোনটা দিয়ে দে
—আম্মুউউ (আমেনা খাতুনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ইয়ানা)
—কথা কানে যায়না তোর,বেয়ারাগিরি বন্ধ করে ফোনটা তোর বাবার হাতে জমা দে (ধমকে বললেন আমেনা খাতুন)

বাধ্য হয়ে ইয়ানা ফোন রিসেট করে ওর আব্বুর হাতে জমা দিলো,ব্রেকফাস্ট শেষে ইয়ানা রুমে গিয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো,ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে বের হতে যাবে তখনই নাহিদ বললো,

—আপুই মন খারাপ করো না,ইন্তিহাজ ভাইয়া বলেছে তুমি ভার্সিটিতে চান্স পেলে আইফোন কিনে দিবে,কিন্তু এখন তোমার পরিক্ষার আগে ফোন দিলে নাকি তুমি ফেইল করবে।
—কিহ্,ইন্তিহাজ ভাইয়া আব্বুকে এসব বলেছে নাকি?
—হুম,রাতে কল দিয়েছিলো
—(ওহ্ আচ্ছা,এবার সবটা ক্লিয়ার হয়ে গেলো আমার কাছে। শা*লা হিটলার,আমার সাথে যাতে কথা না বলতে হয়,আমি যা-তে তোকে ডিস্টার্ব না করতে পারি এইজন্য আমার ফোনটাই কেড়ে নিলি,ওকে ফাইন,এর শোধও আমি শুধে আসলে তুলবো,আমার নামও ইয়ানা)—বিড়বিড় করে বললে ইয়ানা)

কলেজে আসতেই ইয়ানা’র কাছে দৌড়ে আসলো মাছুম,হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

—দোস্ত,সব ইনফরমেশন কালেক্ট করেছি।
ছেলেটার নাম শুভ,গ্রামের বাড়ি নওগাঁ তে,এখানে ওর আব্বু ব্যাংকের জব করে,সেই সূত্রেই ওরা ফ্যামিলি সহকারে এখানেই থাকে,শুভ’র ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো খারাপ কিছু নেই, যথেষ্ট ভদ্র,ও ভালো ছেলে,পড়াশোনায়ও মোটামুটি ভালোই, কমার্স নিয়ে পড়ছে।
—ওহ্,কিন্তু এতোই যখন ভদ্র ছেলে,তাহলে আমার সাথে এমন অসভ্যের মতো আচরণ করে কেন,পুরো রাস্তার বখে যাওয়া পোলাপাইনদের মতোন
—সেটাতো জানিনা,বাট আই থিঙ্ক হি লাইক ইউ,তাই তোর এ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য এমন করে সিগন্যাল দেশ।
—তাই বলে এমন অভদ্রভাবে?
—তবে যাই বলিস,তোর সঙ্গে কিন্তু ভালোই যায়,একদিন কথা বলিস,মনে হয়না বাজে ব্যবহার করবে।
—ধুরর,আমি এইসবে নাই,বাদ দে-তো।
আমার ভাইয়া জানলে আমাকে আস্তো রাখবে না,এমনিতেই আমার ফোনটা নিয়ে নিছে।
—মানে?
—মানে আর কি,কি বলবো দুঃখের কথা,তাহলে শোন (ইয়ানা সবটা খুলে বললো)

তারপর মন খারাপ করে শহিদ মিনারের মঞ্চের ওপর গিয়ে বসলো।


কিছুদিন পর…
ইয়ানা সোফায় বসে টিভিতে সিনেমা দেখছে,সঙ্গে তৃষা,শিমলাও রয়েছে, আজ ফ্রাইডে,তাই সবাই বাড়িতে।
খাদিজাতুল নেসা এখানে এসে ইয়ানা’র হাতে নিজের ফোন ধরিয়ে দিয়ে বললো,

—ইয়ানা,দেখতো মা,মেয়েটা কেমন?

ইয়ানা ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে মিষ্টি কালার লং কোর্ট পড়ুয়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,তার চুলগুলো ফ্রান্স বেনি করে একপাশে রাখা,ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক,ছবিটিতে অসাধারণ লাগছে মেয়েটিকে।ছবিটা দেখার পর ইয়ানা ভ্রু-কুচকে বললো,

—এটা কে মামনি?
—আগে বল,কেমন দেখতে?
—মেয়েটা তো অনেক সুন্দর চাচি আম্মু,বেশ স্মার্ট মনে হচ্ছে।আমাদের অনেক সিনিয়র হবে তাইনা (তৃষা)
—ইয়ানা,তোর কেমন লাগলে?
—মাশাল্লাহ,মেয়েটা অনেক সুন্দর,কিন্তু কে ও?
—ওর নাম সিমি,আমার ভাইয়ের ফ্রেন্ডের মেয়ে।ওনারা সপরিবারে কানাডায় থাকে,সিমি’কে আমাদের ইন্তিহাজের সাথে ভালো মানাবে বল?
—কিহ্
—সিমি ইন্তিহাজের থেকে ৩বছরের ছোটো,সিমি যোলজি নিয়ে পড়াশোনা করছে,ইন্তিহাজ তো এখন ওদের বাসাতেই থাকে।কালকে ভিডিও কলে সিমি কে দেখার পর মনে হলো আমাদের ইন্তিহাজের সঙ্গে বিয়ে দিলে মন্দ হয়না।
—কি বলো ভাবি,বিদেশি মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে?
মানছি সিমি তোমার পরিচিত,কিন্তু ও তে কানাডা’র কালচারে বড় হয়েছে তাইনা,আমাদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের সাথে কি ও মানিয়ে নিতে পারবে?
—আরে পারবে পারবে,ভারি মিষ্টি মেয়ে, আচার-আচরণও বেশ ভালো।ওই দেশে বড় হলেও আমাদের দেশি কালচার ভুলেনি।আমি তো ভাবছিলাম আর পাঁচটা মেয়ের মতো আমাদের সিমিও ওইরকম উচ্ছৃঙ্খল হয়ে গেছে,কিন্তু না,কাল ওর সাথে কথা বলে যা বুঝলাম ও সেরকম নয়।বেশ শালিন আর সাবলীলভাবেই চলাফেরা করে,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,রোজা রাখে,পড়াশোনায়ও অনেক ভালো।
একয়দিনে ইন্তিহাজের সাথে ভালোই বন্ধুত্ব হয়েছে দেখলাম, ভালোই লাগলো আমার।আমাদের ইন্তিহাজ তো আবার সহজে সবার সঙ্গে মিশতে পারে না কিন্তু সিমি’র সাথে ভালোই মিশে গেছে।আমায় মেসেজ করেও আমার কাছে জানতে চেয়েছে সিমি’কে আমার কেমন লাগে,আমার মনে হয় ইন্তিহাজও সিমি’কে পছন্দ করে বুঝলি?

—ওও আচ্ছা,ভালোতো।
বিদেশের মাটিতে পরিচিত কেউ থাকলে আর চিন্তার কোনো কারণ থাকে না,এমনিতেই ভালো লাগে,আর নিজেদের চেনাজানা হলে তো আলহামদুলিল্লাহ।
ছেলেটা যাওয়ার পর থেকে টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম, এখন একটু চিন্তামুক্ত হলাম (আমেনা বেগম)

ইয়ানা এখানে আর বসে না থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,

—মামনি,তোমার ফোনটা একটু রাখি?
একটু গান শুনতে ইচ্ছে করছে,প্লিজ,জাস্ট ১ঘন্টা
—তোর আব্বু জানলে মে*রে ফেলবে,ফোন দেওয়া যাবে না
—আব্বুতো এখন বাড়িতে নেই,আমি তো জাস্ট কিছুক্ষণের জন্যই চাচ্ছি,তারপর দিয়ে দিবো।
ও মামনি,তুমি একটু বোঝাও না
—আহ্ আমেনা,কিছুক্ষণের জন্যই তো চাইছে মেয়েটা, বকাবকি করিস নাতো।
তুই ফোনে গান বা কি দেখবি দেখ,কিছুক্ষণ পরে দিয়ে দিস
—থেঙ্কু মামনী

ইয়ানা ফোন’টা নিয়ে নিজের ঘরে এসে নেট অন করে ফেসবুকে গেলো,নিজের আইডি লগইন করতে গিয়েও করলোনা,আইডি অ্যাক্টিভ দেখালে আবার প্রবলেম হতে পারে তাই ইয়ানা খাদিজাতুল নেসা’র আইডি দিয়েই ইন্তিহাজের প্রোফাইলে গেলো।
মেডিকেলের,আউটডোরের,ওয়ার্কটাইমের,ল্যাবে বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন ধরনের পিক আপলোড করা হয়েছে,অনেক জায়গায় ইন্তিহাজের সাথে ওই সিমি নামের মেয়েটাকেও দেখা যাচ্ছে,ইন্তিহাজের হাত ধরে বেশ হাসিখুশী ভাবেই ছবি উঠেছে মেয়েটা,ইন্তিহাজ কেও খুশি দেখাচ্ছে।
ইয়ানা প্রোফাইল থেকে বের হয়ে মেসেজে গিয়ে দেখলো ইন্তিহাজের মেসেজ, ❝ammu,Simi ke tomar kemon lage boloto,meyeta ki valo?❞

যা-কিছু দেখার ছিল দেখা শেষ,এই কারণেই তাহলে ইন্তিহাজের এতো ব্যস্ততা,এইকয়দিনের একটা দিনও ইন্তিহাজ ইয়ানা’র সঙ্গে কথা বলেনি,দুই-এ দুই-এ কেমন চার হয়ে যাচ্ছে যেন,কার আশায় বসে আছে ও যে কি-না অন্য নারীতে মেতে আছে।
ইয়ানা নেট অফ করে চোখের কার্ণিশে আসা পানিটুকু মুছে নিলো,ফোনটা খাদিজাতুল নেসা’কে দিতে গেলে তিনি বললেন,

—কিরে এইতো ফোনটা নিয়ে গেলি,আবার দিয়ে যাচ্ছিস যে, গান দেখলিনা?
—এমনেই ভালো লাগছে না,পরে দেখবো মামোনি।

কথাটা ব’লেই ইয়ানা ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলো, যেটা দেখার ছিল সেটাতো দেখা হয়েই গেছে,আর কিছু দেখা বা বোঝার বাকি নেই।আজ খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর।

★★★
৫বছর পর…
আজ দেশে ফিরছে ইন্তিহাজ,আর মিনিট দ’শের মধ্যেই প্লেন ল্যান্ড করবে।
এই পাঁচ বছরে ইন্তিহাজ ইয়ানা’র সঙ্গে কথা বলার অনেক চেষ্টা করলেও সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনি,প্রথমত অনার্সের আগে ইয়ানা’র কাছে ফোন ছিলোনা,দ্বিতীয়ত অনার্সে ওঠার পরে ফোন পাওয়া স্বত্তেও ইয়ানা ইচ্ছে করে ইন্তিহাজের সাথে কন্টাক্ট করেনি।বাড়ির লোকদের কল দিয়ে ইয়ানা’কে দিতে বললেও ইয়ানা বারবার রিফিউজ করেছে,ইয়ানা কোনোভাবেই ইন্তিহাজের সঙ্গে কথা বলেনি।
ইন্টারে ৪.০১ পেয়ে পাশ করার পর ভার্সিটি এক্সাম দিয়ে একটাতেও টিকতে পারেনি,শেষে নিজের কলেজ থেকেই সমাজবিজ্ঞানে অনার্স শেষ করলো ইয়ানা।
৩বছর আগেই বিয়ে হয়ে গেছে শিমলা’র,বর্তমানে সে ৩মাসের গর্ভবতী।ওর হাজবেন্ড একজন স্কুল টিচার।তৃষা সাড়ে ৪পয়েন্ট পেয়ে ইন্টার পাশ করে এডমিশন দিয়েছে,ফলাফল এখনো বের হয়নি।নাহিদ বর্তমানে ক্লাস সেভেনে পড়ে,কিন্তু ওকে দেখে মনে হয় দশম শ্রেণির ছাত্র,বেশ লম্বা ও সুঠাম দেহের অধিকারি হয়েছে ছেলেটা।
ইন্তিহাজ প্লেন থেকে নেমে লাগেজ নিয়ে এগিয়ে আসতেই দেখে বোরকা ও মাস্ক পড়া একটা মেয়ে,একটা লম্বা করে ছেলে,ও ইন্তিহাজের আব্বু মো.ইয়াকুব জামান দাঁড়িয়ে আছে।
ইন্তিহাজ মুচকি হেসে এদিকে এগিয়ে আসতেই তৃষা বললো,

—ভাইয়া,আমি তৃষা,আমাকে চিনতে পেরেছো?
—বাহ্ বড় হয়ে গেছিস দেখছি,কত পিচ্চি ছিলি।
আরে এটা কে,আমার নাহিদ সোনা টা না,কতো বড় হয়ে গেছে
—হবোইতো,আমি ৩বেলা কম্প্লেইন খাই হুম।
—গুড গুড।
—কিরে,তোর আসতে কোনে প্রবলেম হয়নিতো?
—না আব্বু,সব ঠিক আছে (এদিকে-ওদিকে তাকাতে তাকাতে)
—কিরে,কাউকে খুঁজছিস?
—বলছিলাম যে ইয়ানা আসেনি?
—আপুই আসবে কি করে আপুইতো এখন…

নাহিদ’কে পুরো কথা বলতে না দিয়ে ইয়াকুব জামান বললেন,

—নাহ্,বাড়ি গিয়ে দেখা করিস।
চল এখন,যাওয়া যাক।


ইন্তিহাজ বাড়ি এসে দেখে বাড়ির আশপাশ সহ পুরো বাড়িই লাইটিং করা হয়েছে,কিন্তু এতো আয়োজন কিসের সেটাই মাথায় ঢুকছে না,ওর আসার উপলক্ষে এরকম আয়োজন করবে এটাতো সম্ভব না,দেখে মনে হচ্ছে বাড়িতে কোনো বড় অনুষ্ঠান হচ্ছে।

—এতো আয়োজন কিসের রে নাহিদ,বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান আছে নাকি?
—পরেই জানতে পারবে,তোমার জন্য এটা সারপ্রাইজ ভাইয়া।

বাড়ির মেইন দরজায় কলিং বেল বাজাতেই আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে দরজা খুলে দিলেন আমেনা খাতুন, এতোগুলো বছর পর ইন্তিহাজ কে দেখে তিনি আর নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না,

—ভাবি,দেখে যাও কে এসেছে
ওগো শুনছো,আমাদের ইন্তিহাজ এসেছে,বহ্নি,শিমলা কোথায় তোরা,বাইরে আয় মা
—কাকিয়া,এতো ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কিছু হয়নি,আমি তো আবারও চলে যাচ্ছি না।
একি কাঁদছো কেন তুমি,চলো

ড্রয়িং রুমে সবাই উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত শুধু ইয়ানা, সকলে ইন্তিহাজ কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে,খাদিজাতুল নেসা তো ছেলেকে পেয়ে গদগদ,ইয়াকুব জামান এবার কড়া কণ্ঠে বললেন,

—ছেলেটা এতো জার্নি করে এসেছে,ফ্রেশ হওয়ার দরকার, তোমরা যা শুরু করেছো কি বলবো
—তাইতো,এই সবাই ওকে ছাড়,ছেলেটাকে রেহাই দে।
যা বাবা,তুই ফ্রেশ হয়ে আয়,এই রাতের বেলায় গোসল দিস না আবার,ঠান্ডা লেগে যাবে (আমেনা খাতুন)
—কাকিয়া,ইয়ানা কোথায়গো,ওকেতো দেখছি না?
—ওর ঘরে আছে মনে হয়,পরে দেখা করিস,এখন ফ্রেশ হ যা।
তোর পছন্দের সব খাবারদাবার বানিয়েছি আজ।
—(আশ্চর্য,আমি আসার খবর পেয়েও আসলোনা মেয়েটা,এতো ইগো,দাঁড়া তোর হচ্ছে,ব্যবস্থা করছি আমি, এতদিন যা ইচ্ছে করছিস কিছু বলিনি,এবার চলে এসেছি আমি) — বিড়বিড় করতে করতে নিজের রুমে গেলো ইন্তিহাজ।


অন্ধকারে নিজের রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে ইয়ানা,কিছু সময় আগেই ইন্তিহাজ এদিক দিয়ে বাড়িতে ঢুকলো,কতো স্মার্ট হয়ে গেছে সে।
আগের চেয়েও বেশি সুদর্শন,স্মার্ট হয়েছে,চোখ ফেরানো যাচ্ছিলোনা,মনে হচ্ছিলো একছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে।
অতৃপ্তির তৃষ্ণা নিবারন করতে,কবে থেকে ওই বুকে মাথা রাখা হয়না,আড়ালে ফেইক আইডি দিয়ে তার চেহারা দেখলেও কথা হয়না আজ কত বছর হলো।
শুধু হাহাকার,মায়া বাড়িয়ে কি লাভ,চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে চোখের পানি ফেলছে ইয়ানা।
হঠাৎ পেছনে কারোর উপস্থিতি অনুভব হতেই পুরো শরীরে হিমশীতল ঠান্ডা হাওয়া বয়ে গেলো যেন,

—কে
—আমি

পরিচিত কণ্ঠস্বর পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো ইয়ানা,

—তুমি এখানে কি করছো ইন্তিহাজ ভাইয়া?
—কেন,আমি আসা তে তুই খুশি নস?আমাকে এয়ারপোর্টে নিতে গেলিনা ইভেন বাইরেও আসিস নি কি ব্যাপার বলতো?
এখনো অভিমান করে আছিস আমার ওপর,আমি তো তোর ভালোর জন্যই ওমন করেছিলাম রে পা*গলি,তাই বলে এতগুলো বছর ধরে আমাকে এভাবে শাস্তি দিলি,এখনও এমন করছিস?এতো অভিমান আমার ওপর?
—অভিমান? হাহ্ (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
জানোতো ভাইয়া,যেখান থেকে আবেগের অধ্যায় শেষ হয় সেখানে থেকে শুরু হয় জীবনের আসল মানে।আর ওইযে বললেনা অভিমানের কথা,নারীর অভিমান বড়ই আজব,বুঝলে ভালোবাসা বাড়ে আর না বুঝলে দূরত্ব পারে। এটাই বাস্তবতা,এনিওয়েস তুমি আসায় অখুশি কেন হবো।
তোমার বাসায় তুমি এসেছো এতে আমার কি,আমিতো এ বাড়ির দু’দিনের অতিথি মাত্র,কাল বাদে পরশু চলে যেতে হবে

কথাগুলো বলে ইয়ানা চলে যেতে নিলেই ইন্তিহাজ ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে বেলকনির দেয়ালের সাথে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

—এমন ইগনোর কেন করছিস,কি হয়েছে তোর?
—আমার হাতে ব্যাথা লাগছে,ছাড়ো ভাইয়া
—আমার প্রশ্নের উত্তর দে তুই,এমন কেন করছিস?
—তোমার সিমি কোথায় ভাইয়া,সঙ্গে করে নিয়াসোনি?
আমার বিয়ের পরেইতো তোমাদের বিয়ে হওয়ার কথা
—হোয়াট,সিমি’র সঙ্গে আমার বিয়ে মানে?কি আজেবাজে কথা বলছিস?
—ভুল বলচি নাকি আমি,ভালোই ফটোশুট করছিলে,টাইম স্পেন্ড করেছো একসঙ্গে,এইজন্যই আমার সঙ্গে ওরকম করতে তাইনা
—আমি স্টাডি’র জন্য গেছিলাম,এসবের কোনো ইনটেনশন আমার ছিলোনা,তোর মাথায় কি এসব ছাড়া আর কিছু আসে না?
—তাহলে মামনী কি আমাকে মিথ্যা বললো?
—মানে?

ইয়ানা সবটা খুলে বলতেই ইন্তিহাজ বললো,

—ওফ শিট,শি ইজ অনলি মাই ফ্রেন্ড।আমি ওকে ছোটবোন প্লাস ভালো বন্ধু মনে করি,ওরতো বয়ফ্রেন্ড আছে,ইভেন শি ইজ ইঙ্গেজ্ড।আম্মু তোকে এগুলো বলেনি?
—কিহ্,তাহলে মামনী যে বললো…
—এগুলোর জন্য তুই এতগুলো বছর আমার সাথে কথা বলিসনি?
—বাদ দাও,এখন এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই ভাইয়া,অনেক দেরী হয়ে গেছে।
—মানে,কিসের দেরী?
—পরশুদিন আমার বিয়ে ভাইয়া (মাথা নিচু করে বললো ইয়ানা)

ইন্তিহাজ ইয়ানা’কে দেওয়ালের সাথে আরও জোরে চেপে ধরে বললো,

—আর ইউ কিডিং উইথ মি?
—(নিশ্চুপ)
—ইয়ানা,ফাইজলামি করিসনা,সব বিষয়ে মজা করা ঠিক না
—আমি মজা করছি না ভাইয়া,সত্যি সত্যিই পরশুদিন আমার বিয়ে,তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য তোমাকে কেউ কিছু জানায়নি।তোমার দেশে ফেরার ডেট জেনেই সে অনুযায়ী আমার বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়েছে,কালকে গায়ে হলুদ তারপর বিয়ে,আমি শশুরবাড়ি চ…

ইয়ানা পুরো কথা শেষ করার আগেই ইন্তিহাজ ইয়ানা’কে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো…..

To be continue…..

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_২২

ইয়ানা পুরো কথা শেষ করার আগেই ইন্তিহাজ ইয়ানা’কে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো,ইয়ানা কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে ফোঁফাতে শুরু করলো।
ইন্তিহাজ ওর মায়ের রুমে এসে নক করলে ওর মা মিসেসঃ খাদিজাতুল নেসা এসে দরজা খুলে দিলো,ইন্তিহাজ ঘরে ঢুকতেই খাদিজাতুল নেসা বললেন,

—কিরে,এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে,কি হয়েছে,সব ঠিক আছে তো বাবা?
—কি ঠিক রেখেছো তুমি আম্মু,কিচ্ছু ঠিক নেই।
আমি বারবার তোমাকে বলেছিলাম ইয়ানা’কে তোমার কাছে আমানত স্বরুপ রেখে যাচ্ছি কিন্তু তুমি কি করলে?
—দেখ বাবা,আমরা যা করেছি তোদের দু’জনের ভালোর জন্যই করেছি,এতে তোদের দু’জনেরও ভালো হবে আর আমাদেরও।
—আম্মু প্লিজ,তুমি অন্তত এসব বুঝাইতে এসো না।
তুমি জানতে না বলো আমি ইয়ানা’কে ছোট থেকে পছন্দ করি, তোমার কাছে তো কখনো কিছু লুকাইনি,তুমিওতো আমার পক্ষে ছিলে,কথা দিয়েছিলে আমি প্রতিষ্ঠিত হবার পরে ওর সঙ্গে আমার বিয়ে দিবে,তাহলে আজ কেন এমন করছো তুমি?
—আমি আমার পরিবারের ভালোর জন্যই এই ডিসিশন নিয়েছি,আমি তোর মা ইন্তিহাজ,আমি অবশ্যই খারাপ চাইবো না।
—এর আগে শিমলা’র সঙ্গে আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য তুমি আমার এগেইন্স্টে গেছিলে,তখনও কোনো যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারোনি।আমি কানাডায় যাওয়ার পর তুমি ইয়ানা’কে বলেছো আমার সঙ্গে নাকি সিমি’র বিয়ে হবে,আমি সিমি’কে পছন্দ করি।তুমি ভালো করেই জানো আম্মু আমি সিমি’কে বোনের নজরে দেখতাম,আর তাছাড়াও সিমি ইঙ্গেজ্ড।তাহলে তুমি ইয়ানা’র নজরে আমাকে কেন খারাপ করলে?কেন আম্মু কেন?আজ তোমাকে আনসার দিতেই হবে।

—তুই এসব বুঝবি না,ডক্টর হয়েছিস,এখন বিভিন্ন লজিক দেখিয়ে আমাকেই ভুল প্রমাণ করবি,কিন্তু সত্যি টা তো বদলাবে না,শুধু এটুকু শুনে রাখ,আমি যেটা করেছি তোদের দু’জনের ভালোর জন্যই।
—আম্মু,আমি সবটা জানতে চাই,প্লিজ এরকম টা করোনা।তুমি হুট করে ডিসিশন কেন চেন্জ করলে,ইয়ানা’কে আমার থেকে কেন দূরে সরাচ্ছো,আমি এর কারণ জানতে চাই জাস্ট।
—এমন কোনো প্রশ্ন করিস না যার উত্তর আমি দিতে পারবো না।
—তোমাকে আমার দিব্যি আম্মু,আজ তোমাকে সবটা বলতেই হবে এন্ড ইট’স এনি কস্ট।
চুপ করে থেকো না,প্লিজ বলো।তুমি তোমার ছেলেকে ভালো করেই চেনো,আমাকে সিনক্রিয়েট করতে বাধ্য করল না প্লিজ।

খাদিজাতুল নেসা কিছুক্ষণ দম ধরে থেকে মুখ খুললেন,

—ইয়ানা’র ব্লাডগ্রুপ জানিস তুই?
—হ্যা,AB-
কেন বলোতো?
—তোর কি?
—O+
—তুই জানিস না,দুটো আলাদা গ্রুপ আই মিন নেগেটিভ পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের ছেলেমেয়ের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্কে যাওয়া উচিত নয়,কখনও বাচ্চা জন্ম নিতে পারবেনা,বাচ্চা পৃথিবীতে আসার আগেই গর্ভাবস্থায় মারা যাবে।
সব জেনেশুনে কি করে তোদের বিয়ে দিই বলতো?
আমাদের কি নাতিনাতনি দেখার শখ নেই?
—তোমাকে এসব ফালতু কথা কে বলেছে আম্মু,কে বলেছে বাচ্চা হবে না?
—আমি জানি এসব,আমি কেন সবাই জানে,আর এমনটা হয়েও আসছে,ভুল তো কিছু নয়,মেডিক্যালি প্রুফ ইট।
—ইউ আর রং আম্মু,বাচ্চা নিতে কোনো সমস্যা নেই।তনে হ্যাঁ দ্বিতীয় বাচ্চা মা*রা যাবে কিন্তু ১ম বাচ্চার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা নেই, ট্রাস্ট মি।
—আমাকে ভুজুংভাজুং বুঝাসনা ইন্তিহাজ,আমি জানি তুই ইয়ানা’কে বিয়ে করার জন্য এগুলোই বলবি,তাই তোর দেশে আসার কথা শুনে আমরা তড়িঘড়ি করে ইয়ানা’র বিয়ে ঠিক করেছি তোকে না জানিয়ে,তোকে জানালে তুই সব শেষ করে দিতি।
—আম্মু,তুমি ভুল জানো।
সবকিছুরই সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা রয়েছে, আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি শোনো।
পজিটিভ ব্লাড গ্রুপ কে বলে (Rh+) এবং নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপকে বলে (Rh-)। সাপোচ বাবা (Rh+),মা (Rh-),Rh+ (Rh-) এর জন্য এন্টি ভাইরাস আইমিন বিষ হিসেবে কাজ করে,প্রতিটি মানুষের শরীরেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে এন্টিবডি তৈরি হয়।আর (Rh+) থেকে নিজেকে প্রতিরক্ষা করতে (Rh-) ব্লাডগ্রুপে ওয়ালা মানুষের শরীরে Anti-Rh Antibody সৃষ্টি হয়,আর এটি সৃষ্টি হতে সময় লাগে ১৪মাস।
সাধারণত প্রতিটি শিশুই তার বাবার ব্লাডগ্রুপ পায়,বাবা (Rh+) হলে সন্তানও সেটাই হবে।নরমালি শিশু গর্ভে থাকে ১০মাস ১০দিন,(Rh+) ব্লাড গ্রুপের শিশু তার মা অর্থাৎ (Rh-) ব্লাডের শরীরে অবস্থান করলে তার মায়ের শরীরে থাকা (Rh-) এর সঙ্গে সংঘর্ষ করার চেষ্টা করবে,এটা স্বাভাবিক।কিন্তু মায়ের শরীরে যেহেতু Anti-Rh Antibody সৃষ্টি হতে ১৪মাস সময় লাগে সেকারণে ১ম বাচ্চার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না,বাচ্চার মায়ের কিছু ফিজিক্যালি সিনড্রোম দেখা দিতে পারে কিন্তু এটা সেরকম সিরিয়াস কিছু নয়।নির্বিঘ্নে বাচ্চা পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হবে।

—মানলাম ১ম বাচ্চার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলো না,কিন্তু ২য় বাচ্চাতো মা*রা যাবে,তোদের কি ভবিষ্যতে আর বাচ্চাকাচ্চা নেওয়ার ইচ্ছে নেই নাকি?
কি আর বলবো,মা হয়ে এসব কথা বলতে লজ্জাও লাগছে কিন্তু না বলেও পারছিনা।

—না আম্মু,এতেও কোনো সমস্যা হবে না।
কিন্তু ১ম বাচ্চা জন্ম নেওয়ার ৩বছর পরে ২য় বাচ্চা নিতে হবে। Anti-Rh antibody নষ্ট হতে সময় লাগবে।৩বছরের আগে বাচ্চা নিলে মায়ের শরীরে থাকা Anti-Rh antibody বাচ্চার শরীরের (Rh+) কে আক্রমণ করবে,ফলে বাচ্চার শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে বাচ্চা গর্ভেই বাচ্চা মা*রা যাবে।
গ্রামের কিছু অশিক্ষিত লোকজন,আর অল্ড জেনারেশনের লোকজন এই বিষয়গুলো জানতো না,তারাতো বিয়ের পরপরই বাচ্চা বাচ্চা করে লাফালাফি করে,ইভেন এখনো অনেক জায়গায় এমনটা হয়ে আসছে,ফলস্বরূপ বাচ্চা পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই গর্ভাবস্থায় মা*রা যায়,আর দোষারোপ করা হয় ব্লাডগ্রুপ নিয়ে,যেমনটা আজ তুমি বলছো।
আর আম্মু,তুমি হয়তো জানোনা,এখনকার চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক কতটা উন্নত,ইনজেকশনের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা যায়,যতখুশি তত বাচ্চা নিলেও ব্লাডগ্রুপ নিয়ে অন্তত কোনো প্রবলেমস হবে না।

—(নিশ্চুপ)
—তুমি আমাকে এবিষয় টা আগে শেয়ার করলে আমি তখনই তোমাকে সবটা ক্লিয়ারলি বলতাম আম্মু,কিন্তু তুমি কিছু না জেনেশুনে লোকজনদের কথায় এতবড় ডিসিশন নিলে?আমি ছোটো থেকেই তোমাকে অনেক বুদ্ধুমতি মনে করতাম কিন্তু আজ তুমি আমার সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিলে,তোমার থেকে এমনটা আমি মোটেও আশা করিনি।
তুমি আমার থেকে আমার ইয়ানা’কেই আলাদা করার চেষ্টা করলে?ছি আম্মু,একটাবার জাস্ট একটা বার তুমি আমাকে বলতে পারতে কিন্তু না,তোমরা সবাই আমার অগোচরে এভাবে….

—দেখ বাবা,যা হওয়ার হয়ে গেছে।
এখনতো কিছু করার নেই,কালকে গায়ে হলুদ,তারপর বিয়ে।সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে,এখন আমাদের করার মতো কিছুই নেই,যা হচ্ছে চুপচাপ হতে দে।

মায়ের মুখে এই কথাটা শোনার পর ইন্তিহাজ নিজের রাগটা আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলোনা,হাত ঝাড়ি দিয়ে চেঁচিয়ে টেবিলের ওপরে থাকা ফুলদানি টা ফ্লোরে ফেলে দিলো।

—নিকুচি করেছে বিয়ের,এই বিয়ে কি করে হয় আমিও দেখে নিবো।
জীবনে কোনোদিন তোমাদের কোনো কথার অবাধ্য হইনি, সারাটাজীবন পড়াশোনা নিয়েই ছিলাম,কিন্তু তোমরা যে আমার জীবনের সাথে এভাবে শত্রুতা করবে,বিশ্বাসঘাতকতা করবে আমি কখনোই ভাবিনি,আমি বেঁচে থাকতে এই বিয়ে কিছুতেই হতে দিবো না।
—ইন্তিহাজ,দোহায় লাগে বাবা এমন কিছু করিসনা,আমাদের পরিবারের মানসম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে।তই বুঝ বিষয় টা

ইন্তিহাজ আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো,ড্রয়িংরুমে এসে দেখে ইয়ানা কারোর সঙ্গে হেসেহেসে ভিডিও কলে কথা বলছে,ইন্তিহাজ কে দেখে বহ্নি এগিয়ে এসে বললো,

—ভাই,খাবে কিছু তুমি?
—ও কার সাথে কথা বলছে (গম্ভীর ভাবে)
—শুভ’র সাথে
—শুভ?
—আরে ভাইয়া,আমাদের হবু দুলাভাই এর নাম শুভ,ইয়ানা আপুর উডবি হাজবেন্ড। (তৃষা)

কথাটা শোনা মাত্রই ইন্তিহাজ ইয়ানা’র দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালো,সঙ্গে সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেলো দুজনের।
ইন্তিহাজের লাল হওয়া চোখের দিকে তাকাতেই ভয়ে ঢোক গিললো ইয়ানা।

—ইয়ানা,তোর সাথে আমার কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিল,আমার রুমে আয়তো
—কিন্তু আমি তো এখন ওর সাথে কথা বলছিলাম,একটু পরে আসি (ভয়ে ঢোক গিলে বললো ইয়ানা)
—নাহ না,কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই তোর,নিজের ঘরে যা (খাদিজাতুল নেসা)
—৫মিনিটের মধ্যে তোকে যেন আমার রুমে পাই,আই ওয়েটিং ফর ইউ

কথাটা বলেই ইন্তিহাজ নিজের রুমে চলে গেলো।
বেশ কিছুক্ষন পরে ইয়ানা ভয়েভয়ে ধীরপায়ে গিয়ে ইন্তিহাজের রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো,টোকা দিতেও ভয় লাগছে,বড় একটা শ্বাস নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে সাহস করে দরজার্য় একটা টোকা দিতে না দিতেই এক বলিষ্ঠ হাত এসে ওকে টান দিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকিয়ে বন্ধ দরজার সাথে চেপে ধরলো,
ইন্তিহাজের লাল হওয়া চোখ,আর জোরেজোরে নেওয়া শ্বাসপ্রশ্বাস সব আছড়ে এসে পরছে ইয়ানা’র মুখে,ভয়ে আরও গুটিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা।ইন্তিহাজ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

—তোরও বিয়েতে পুরো সম্মতি ছিল,এখনো আছে তাইনা
—(নিশ্চুপ)
—ওয়ান্ডারফুল,আই এম স্পিচলেস
আমি কানাডায় যাওয়ার আগে কি বলেছিলি মনে আছে?
আমার ফোনে তোর নম্বর থেকে করা লাস্ট মেসেজ কি ছিল?
তুই নাকি আমাকে ভালোবাসিস?এটা তার নমুনা?
ভালোবাসা কি তোর কাছে ছেলেখেলা নাকি ইয়ানা?
—তুমিতো আমাকে ভালোবাসোনি,মনে আছে কি বলেছিলে আমাকে।অলওয়েজ আমাকে ধমকাধমকি করেছো,কিন্তু শুভ? সে কখনো আমাকে ধমকাধমকি তো দূরে থাক,উঁচু গলায় কথা পর্যন্ত বলেনি।আমাকে বুঝার চেষ্টা করেছে,আমার ভালোমন্দ, চাওয়া-পাওয়ার প্রায়োরিটি দিয়েছে।
তুমিতো আমাকে বোনের নজরে দেখো তাইনা,তাহলে এখন তোমার এতো জ্বলছে কেন,তুমি এরকম রিয়াক্ট কেন করছো,হুয়াই?
—বেশি কথা বলা শিখে গেছিস তাইনা,ওই শুভ’র সাথেও রিলেশন করছিস?
—করতেই পারি,সো হোয়াট…
—আমারই ভুল,বেশি ছাড় দেওয়া হয়ে গেছে,১ম থেকেই নিজের অধিকার টা ফলানো উচিত ছিল তাহলে এতো বাড়বাড়তি না তুই।
ভেবেছিলাম দেশে ফিরে তোকে সারপ্রাইজ দিব,কিন্তু আমাকেই যে এভাবে সারপ্রাইজড হতে হবে ভাবিনি।
—মানুষ সবসময় যেটা ভাবে সেটা যে হবে সেটা কোথায় লেখা আছে।আর চাইলেই যে সবকিছু পাওয়া যেতো তাহলে এই পৃথিবীতে কেউই দুঃখী থাকতো না
—আমি নিজের টা আদায় করে নিতে জানি,তোর বিয়ে আমার সঙ্গে হবে সেটা মনে রাখিস
—হোয়াট?
—ইয়েস,জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ
—সরি,আই এম নট ইন্টারেস্টেড
—ওকে,দেন আই এম সরি

কথাটা বলেই ইন্তিহাজ হুট করে ইয়ানা’র গলায় ছোট্ট করে কামড় বসিয়ে দিতেই ইয়ানা ধাক্কা দিয়ে ইন্তিহাজ কে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো,ক্ষিপ্তভাবে বললো,

—ইউ মলেস্ট মি ভাইয়া
তোমার অধিকার নেই আমাকে এভাবে টাচ করার,আই এম ইঙ্গেজ্ড এন্ড নেক্সট মানডে মাই ওয়েডিং।
—ওকেহ্

ইন্তিহাজ রহস্যময় বাঁকা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো, ইয়ানা ধপ করে নিচে বসে পরলো,

—আমাকে ক্ষমা করে দিও,আমি তোমাকে বিয়ে করে মামনী কে কিছুতেই কষ্ট দিতে পারবো না।আজকে জানিনা এতো সাহস কোথায় পেলাম আমি,তবে ভালোই হয়েছে।আমি চাই তুমি আমাকে ঘৃণা করো,এটাই একমাত্র সলিউশন।
তার জন্য তোমার চোখে আমার যতটা নিচে নামতে হয় আমি নামবো,কিন্তু মামনীকে আমি কিছুতেই কষ্ট পেতে দিবো না,আমি যে তাকে কথা দিয়েছি বিয়েটা আমি করবো।
তোমার পজিশন অনুযায়ী তুমি অনেক অনেক ভালো জীবনসঙ্গী পাবে ভাইয়া,এন্ড ইউ ডিজার্ভ দিস।
আমিতো তোমার যোগ্য নই,পড়াশোনায়ও ভালো নই।তোমার সঙ্গে আমাকে কোনোভাবে ম্যাচ করেনা,তাহলে শুধু শুধু আমার মতো মেয়ের জন্য তুমি কেন এমন করবে বলো।
আমিতো কখনো তোমাকে বাবা হওয়ার আনন্দটাও দিতে পারবোনা


পরেরদিন সন্ধ্যায়…
পার্লারের লোকজন ইয়ানা’র মতো মেকআপ শেষ করে বেড়িয়ে আসলো।মিথিলা ইয়ানা’কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

—বাহ্ জানু,তোকে সেই লাগছে বিশ্বাস কর,আমি নিজেই ক্রাশ খাইলাম,বাকিদের তো অবস্থা টাইট হয়ে যাবে।

—আমার কথা বাদ দিয়ে নিজের বরের কথা ভাব,দুলাভাই কোই?
—মায়রা কে নিয়ে বাইরে আছে,মেয়েটা বড় হচ্ছে দিনদিন জ্বালাতনও বাড়ছে
—বাহ্,মেয়েকে তার বাবার ঘাড়ে গছিয়ে দিয়ে মা ধেইধেই করে নেচে বেড়াচ্ছে,ওয়াও,ওয়ান্ডারফুল
—বাচ্চার মা হয়েছি বলে কি জীবনের সব আনন্দ বিসর্জন দিছি নাকি রে,তোর বিয়েতে আমি ফুল এন্জয় করবো।
—বৃষ্টি,রাজিয়া ওরা আসছে কি?
—বলতে পারছিনা,রাজিয়ার তো আসার কথা,ওতো চবি তে পড়ে,চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছে,এসে যাবে।আর বৃষ্টি’র নম্বর আমার কাছে নেই তাই বলতে পারছি না
—ওহ্ ওকে
—আচ্ছা শোন না,তুই বস
আমি দেখে আসি কারা কারা আসলো

মিথিলা ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ইন্তিহাজ ঘরে ঢুকে দরজা লক করে দিলো,ইন্তিহাজের এমন কাজে চমকে উঠলো ইয়ানা,জড়ানো কণ্ঠে বললো,

—ভাইয়া তুমি,এখানে?
ইন্তিহাজ কোনো কথা না বলে হলুদের বাটি থেকে অল্প একটু হলুদ নিজের গালে লাগিয়ে ইয়ানা’র গালের সঙ্গে নিজের গাল ঘষা দিলো,তারপর ইয়ানা’র নাকের সাথে নাক ঘষে বললো,

—প্রথম হলুদ আমি ছোঁয়ালাম তোকে,প্রথম স্পর্শ টাও আমিই করবো,রেডি থাকিস

কথাটা বলেই ইয়ানা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো ইন্তিহাজ।


পরেরদিন সন্ধায়…
মিথিলা ও ইন্তিহাজ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে…

—বাহ্ ভাইয়া,আপনি ডক্টর না হয়ে ভিলেন হলে হ্যাভি হতো, কি কাহিনীটাই না করলেন,সিনেমাকেও হার মানাবে
—থেঙ্কস,এটা তোমার জন্যই সম্ভব হলো,তাছাড়া আমার একার পক্ষে কখনোই এটা পসিবল ছিলো না
—আমার বেস্টুর জন্য আমি সব করতে পারি,আর এটা তো ওর লাইফের প্রশ্ন।
মানছি শুভ ছেলেটা ভালো,কিন্তু এই বিয়েটা হলে আপনাদের দু’জনের পাশাপাশি ওর লাইফটাও নষ্ট হয়ে যেতো।
—কিন্তু শুভ এতো তাড়াতাড়ি রাজী হয়ে যাবে ভাবিনি,ছেলেটা আসলেই অনেক বুঝদার।
—অনেক তো রাত হলো,ইয়ানা বাসরঘরে আপনার জন্য ওয়েট করছে,এবার যান ভাইয়া
—করুক অপেক্ষা,আমিওতো ওর জন্য কম অপেক্ষা করিনি, অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে,আমি একাই সারভাইভ করেছি সকল সিচুয়েশনস।আজ করুক না এতটুকু অপেক্ষা।
—কিরে,তাহলে বিয়েটা করেই নিলি? (হাসান মাহমুদ)
—হুম
—কিন্তু কিভাবে কি হলো?
ওরতো অন্যজায়গায় বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো না?
—হুম,বাট আমি গুটি উল্টিয়ে দিয়েছি,এই ব্রেইন কে কাজে লাগিয়ে ইয়ানা’কে আমার করেছি।
—কিন্তু কিভাবে কি করলি,এতো দ্রুত এভাবে কেমনে কি?
—তাহলে বলি শোন……

To be continue…..