তোমার চোখের অনন্ত মায়ায় পর্ব-২৩+২৪+২৫

0
270

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_২৩

—কিন্তু কিভাবে কি করলি,এতো দ্রুত এভাবে কেমনে কি?

—তাহলে বলি শোন,আজ সকালে আমি শুভ’র সঙ্গে পারসোনালি দেখা করেছিলাম,ওকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলার পর ও নিজেই আমাকে সঙ্গ দিয়েছে,বাট এই কাজে আমাকে হেল্প করেছে মিথিলা।
আজ মিথিলার জন্যই এটা সম্ভব হলো।
ইয়ানা নিজেই বিয়েতে রাজী,ফ্যামিলির সবাই আমার এগেইন্স্টে।আম্মুকে বারবার বোঝানোর পরেও কোনো লাভ হয়নি,এটলাস্ট ভেবে দেখলাম এভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে কাজের কাজ কিছুই হবে না,হারিয়ে ফেলবো আমি ইয়ানা’কে,আমি এতটাও ভালো মানুষ নই যে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের চোখের সামনে অন্যের হতে দেখবো,ছোট থেকে একটু একটু করে গড়ে ওঠা এই ভালোবাসা এতটাও স্বস্তা নয়।
আমি নিজেরটা বুঝে নিতে জানি,তবে শুভ ছেলেটা বেশ ভালো,একটু বুঝিয়ে বলতেই সরে গেছে,আমাকে কোনো সিনক্রিয়েট করতে হয়নি।
মিথিলা’র সাহায্যে আমি শুভ’র সঙ্গে বাইরে দেখা করি,সবটা বুঝিয়ে বললাম।প্রথমে একটু রিয়াক্ট করেছিলে,কিন্তু পরে ঠিকই বুঝেছে।

—কিন্তু তোদের ফ্যামিলি,ওরা এতো সহজে মেনে নিলো?

—বর যদি বিয়ের দিনে হঠাৎ করে বিয়ে ভেঙে দেয় তাহলে ফ্যামিলি আর কি করবে,ছোটআব্বু কেস করতে চেয়েছিলো বাট আম্মু আটকে দিয়েছে,আই থিঙ্ক আম্মু বুঝতে পেরেছে এসবের পেছনের কারণ টা,আর আমি যে ইয়ানা’কে ভালোবাসি সেটা বাড়ির সকলেই জানতো,বাট মাঝখানে এইভাবে বেইমানি করেছে সবাই।
আমি আম্মুকে কালকেই যা বোঝানোর বুঝিয়েছি,আম্মুই সব ম্যানেজ করে নিয়েছে,দোষ তো আমার ছিলোনা,আমি কোনো সিনক্রিয়েটও করিনি।

—বুঝলাম,ঠান্ডা মাথায় কাজ করেছিস।সাপও মরলো,লাঠিও ভাঙলো না,গ্রেট ইয়ার।
তবে হসপিটালে জইন করার আগেই বিয়েটা করা কি ঠিক হলো?

—সেটা পরেও হবে বাট আজ বিয়েটা না হলে আমি ইয়ানা’কে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলতাম।

—ভাইয়া,আপনি যখন ওকে এতোটাই ভালোবাসেন তাহলে এতো ইগনোর কেন করেন?

—একেকজন প্রকাশ একেকরকম,সেটা তুমি বুঝবে না।


রাত ১১টা…
ইন্তিহাজ নিজের বোনদের দাবী পূরণ করে অবশেষে রুমে প্রবেশের অনুমতি পেলো,রুমে এসে দেখে ইয়ানা নেই,জানা কথা এমন কিছুই হবে।
ইন্তিহাজ এদিক ওদিক তাকিয়ে ইয়ানা’কে খুজছে,কিন্তু কোথায় সে?হঠাৎ নজর গেলো আলমারির সাইডে,বেনারসি শাড়ীর এক অংশ দেখা যাচ্ছে,মুচকি হাসি দিয়ে ইন্তিহাজ সেদিকে এগোতে এগোতে বললো,

—লুকানোর এতো জায়গা থাকতে আলমারির সাইডে কি করছিস এক আনা,নিজেই বের হবিই নাকি আমি নিজে গিয়ে নিয়াসবো,অবশ্য আমি নিয়াসলে সেটা তোর জন্য মোটেও সুখকর হবে না।

—ভাইয়া প্লিজ,আমাকে কিছু করবে না প্রমিস করো,আমি আর কখনো তোমার সাথে মিসবিহেভিয়ার করবোনা প্রমিস, প্লিজ কোনো শাস্তি দিওনা,ভাইয়া কিছু বলবে না তো?

—তুই বের হয়ে আমার সামনে আসবি (পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে বললো ইন্তিহাজ)

—আগে তুমি প্রমিস করো আমায় শাস্তি দিবে না (অসহায় স্বরে)

—ওকে ফাইন,ওখানেই থাক আমি নিজেই আসছি,তারপ…

ইন্তিহাজ পুরো কথা শেষ করার আগেই ইয়ানা তড়িঘড়ি করে ইন্তিহাজের সামনে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো,ভয়ে ওর শরীর কাঁপছে।
ইন্তিহাজ ওর দিকে হাত বাড়াতেই দু-পা পিছিয়ে গেলো ইয়ানা, ইন্তিহাজ কড়া গলায় বললো,

—ইচ্ছে ছিল আমার বউ লজ্জামিশ্রীত মুখে ঘোমটা টেনে বিছানায় বসে আমার জন্য অপেক্ষা করবে,কিন্তু হলো কি,বউ আমার,আমার ভয়ে লুকিয়ে আছে,আড়ষ্ট হয়ে আছে।
দেনমোহরের টাকা টা নিবি নাকি আমি সারারাত এখানেই এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো?

ইন্তিহাজের কথা শুনে মাথা উঁচু করে ওর দিকে তাকালো ইয়ানা,ইন্তিহাজ টাকার বান্ডিল টার দিকে ইশারা করে সেটি নিতে বললো,কিন্তু ইয়ানা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

—এটা তোর হক,নিজের হক বুঝে নিতে শেখ,ভয় পাচ্ছিস কেন,ধর (ধমক দিয়ে)

ইয়ানা টাকাটা নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে পেছনে ঘুরে দেখে ইন্তিহাজ পাঞ্জাবী খুলার চেষ্টা করছে,ইন্তিহাজ কে পাঞ্জাবি খুলতে দেখে ইয়ানা জোড়ানো কণ্ঠে বললো,

—একই,পাঞ্জাবি খুলছো কেন ভাইয়া,দেখো একদম উল্টাপাল্টা মতলব করবে না,আমি এসবের জন্য একদম প্রস্তুত নই।

—স্টুপিড,আমি কি তোর মতো সারারাত এভাবে সং সেজে বসে থাকবো নাকি,তোর জন্য সারাদিন অনেক ধকল গেছে আমার।চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে অজু করে আয়,আমিও করবো। আজকের রাতের নফল নামাজটা কিছুতেই মিস দেওয়া যাবে না।

—ওও আচ্ছা আচ্ছা,তাই বলো
(বাপরে,ভয় পেয়ে গেছিলাম,আমিতো কি-না কি ভাবছি,যাক বাঁচলাম)

ইয়ানা বিরবির করতে করতে ওয়াসরুমে যেতে নিলে ইন্তিহাজ পেছনে থেকে বলে উঠলো,

—এটা তোর নয়,আমার রুম।
চেঞ্জ করে কি পরবি,জামা নিয়ে যা,ওইযে ওয়াল র‍্যালিং এর ওপর আছে দেখ।

—ওহ্ হ্যাঁ হ্যাঁ,খেয়াল ছিলো না।

ইয়ানা কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো,ইন্তিহাজ মুচকি হেসে বললো,

—পা*গলি একটা

কিছুক্ষণ পরে ইয়ানা চেঞ্জ করে অজু করে রুমে আসতেই ইন্তিহাজ ওয়াসরুমে গেলো,ওর অজু করা হয়ে গেলে দু’জনে একসঙ্গে দু’রাকাআত নফল নামাজ পড়ে নিলো।
ইন্তিহাজ মোনাজাত শেষে উঠে দেখে ইয়ানা কম্বল মুড়ি দিয়ে গুটিয়ে শুয়ে আছে বিছানায়,ইন্তিহাজ শয়তানী হাসি দিয়ে ইয়ানা’র পাশে শুয়ে কম্বল টেনে নিজের গায়ে নিলো,তারপর শয়তানী হাসি দিয়ে নিজের ঠান্ডা পা ইয়ানা’র গায়ের ওপর দিতেই ইয়ানা চেচিয়ে উঠে বসলো,

—কমনসেন্স নেই তোমার,এইভাবে কেউ গায়ের ওপর ঠান্ডা পা তুলে দেয়,ভয় পেয়ে গেছি

—এখানে তুই ছিলি আমি তো জানতাম না,আমি ভাবছি কোলবালিশ তাই পা উঠায় দিছি,এখন কেউ যদি নিজেকে কোলবালিশের মতো মুড়িয়ে ফেলে রাখে তাতে আমার কি দোষ।

—ফাইজলামি করছো আমার সাথে?
ভাইয়া একদম ঠিক হচ্ছে না কিন্তু,আমি সত্যি সত্যিই ভয় পাইছি

—ভাইয়া?এখানে আমার কোনো বোন আছে আমি তো জানিনা

—ভাইয়াআআআআ

—কোথায় তোর ভাইয়া,কি-রে বাসরঘরে তুই আবার তোর কোন ভাই’কে নিয়াসলি,ছিছিছি ইয়ানা,বাসরঘরে জামাই থাকতে কেউ ভাইকে নিয়াসে

—রাতবিরেতে ফাইজলামি করছো আমার সাথে,আমি আবার অন্য ছেলেকে কেন আনতে যাবো,আমিতো তোমা….

—আমি কি?আমি কে হই তোর? (ভ্রু নাচিয়ে)

—কেন ভাই….(জিহ্বায় কামড় দিলো ইয়ানা) ইয়ে মানে আআসলে…

—জামাই লাগি তোর,জামাইকে কি কেউ ভাইয়া ডাকে?

—আমি ডাকি,এভাবে বিয়ে করেছো,ভাইয়া বলেই ডাকবো

—ওহ্ রিয়্যালি,দ্যাট মিনস বাচ্চারা আমাকে মামা ডাকবে নয়তো তোকে ফুপি বলে ডাকবে,খুব ভালো হবে বল।

—মানে,কোন বাচ্চা কিসের বাচ্চা?

—কেন,আমাদের বাচ্চা।বিয়ে করেছি আর বাচ্চা নিবো না?
বয়স তো কম হলো না,আমিতো প্ল্যানিং করেছি ১ইয়ারের মধ্যেই বাচ্চা নিব,আর এখন থেকেই সেই প্রিপারেশন স্টার্ট করে দিব (চোখ মেরে)
কিন্তু তুই যেহেতু আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবি,তাহলে বাচ্চারা তো আমাকে বা তোকে দু’জনের একজনকে ফুপি বা মামা বলেই ডাকবে।
প্রবলেম নেই,আমি ওদের শিখিয়ে দিব তোকে ফুপি বলে ডাকতে,খুব মজা হবে,আমিতে বসে বসে শুধু মজা নি…

ইন্তিহাজ পুরো কথা শেষ করার আগেই ইন্তিহাজের দিকে বালিশ ছুড়ে মারলো ইয়ানা,রেগে বললো,

—তোমাকে মামা ডাকবে,বাচ্চা আমার,পেটে রাখবো আমি,জন্ম দিব আমি,বড় করবো আমি আর আমাকে ফুপি ডাকবে,জীবনেও না।তুমিতো ম্যাক্সিমাম টাইম হসপিটালে থাকবে,বাড়িতে থাকবো আমি,বাচ্চাদের টাইম দিব আমি,সো আমি ওদের যা শেখাবো ওরা সেটাই শিখবে।

—তাই নাকি,এখন থেকেই তোর এতো প্ল্যানিং করা হয়ে গেছে?
বাট যাদের নিয়ে তুই এতো প্ল্যানিং করেছিস তাদের তো কোনো অস্তিত্বই নেই,এখন তোর যখন এতো ইচ্ছে,স্বপ্ন তাহলে সেটা পূরণ করার প্রিপারেশন শুরু করা যাক কি বলিস?(চোখ টিপ দিয়ে)

—মানে?

—মানে বুঝিস না?বাচ্চা পৃথিবীতে নিয়াসার প্রিপারেশন (ইয়ানা’র দিকে এগোতে এগোতে বললো ইন্তিহাজ)

—একই আমার দিকে এভাবে এগোচ্ছো কেন,দেখো একদম আমার কাছে আসবে না বলে দিচ্ছি (পেছোতে পেছোতে)

—বাচ্চাও চাস আবার কাছেও আসতে দিবিনা তাহলে কিভাবে হবে?এমনি এমনিকি বাচ্চা হবে নাকি (ভ্রু নাচিয়ে)

—আমার লাগবে না বাচ্চা,আমিতো এমনি এমনি বলছিলাম

—কিন্তু আমারতো লাগবে,একটা না,অনেকগুলো লাগবে।

পেছোতে পেছোতে ইয়ানা বেড থেকে পরে যেতে লাগলে ইন্তিহাজ ওর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকে নিয়াসলো,

—কি বউ,তাহলে শুরু করা যাক প্রিপারেশন?
—ভাইয়া দেখো,একদম ঠিক হচ্ছে না কিন্তু।
—আবার ভাইয়া,তাহলে তো এখুনি শুরু করা দরকার

—না,ভাইয়া প্লিজ,দেখো ধুরর ভাইয়া না,ওই আমি,ধ্যাত কি বলে ডাকবো তাহলে,তুমি তে আমার অনেক সিনিয়র,নাম ধরে ডাকা যাবে না,তাহলে কি বলবো।

—আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে,বলি?
—কিই?

—ম্যাক্সিমাম লোকজনই কিন্তু বাচ্চার নাম নিয়ে তার হাজবেন্ড/ওয়াইফকে ডাকে।অমুকের আম্মু,তমুকের আব্বু।তুইও আমাকে সেভাবে ডাকিস

—কিন্তু আমাদের তো বাচ্চা নেই,তাহলে কার নাম নিবো?

—নেই তো কি হয়েছে,হবে তো।আমিতো নিয়াসার প্রিপারেশনই শুরু করতে চাইছি। (ইয়ানা’র কপালে এসে পরা চুল গুলো তে ফুঁ দিয়ে বললো ইন্তিহাজ)

—মানে ঘুরেফিরে যেই লাউ সে-ই কদু,লুইচ্চা কোথাকার

—বউয়ের সাথে লুইচ্চামি না করলে কার সাথে করবো,লুইচ্চামি না করলে বউ তো তখন রাগ করবে।কিন্তু আমাকে যখন লুইচ্চা বললিই তাহলে এবার সত্যি সত্যিই লুচ্চামি শুরু করে দি কি বলিস

—নাহ্,প্লিজ
—আজবতো,ভয় পাচ্ছিস কেন,আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে তোকে খেয়ে ফেলবো?
—আমি ঘুমাবো,ঘুম পাচ্ছে

ইন্তিহাজ ফোঁস করে দম ছেড়ে ইয়ানা কে ছেড়ে বেডের এক সাইডে এসে উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পরলো,কম্বল গায়ে টানতে টানতে বললো,

—ঘুমা,রাত অনেক হয়েছে।ল্যাম্প টা অফ করে দিস,গুড নাইট

ইয়ানা টেবিল ল্যাম্প অফ করে কম্বল টেনে নিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে পরলো,কিছু মূহুর্ত যেতেই ইয়ানা ইন্তিহাজের দিকে এগিয়ে এসে উঁচু হয়ে ইন্তিহাজের দিকে তাকিয়ে দেখে, ইন্তিহাজ চোখ বুজে রয়েছে,তবে মনে হয়না ঘুমাইছে।ইয়ানা ইন্তিহাজ কে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

—ভাইয়া,এই ভাইয়া,ঘুমাইছো?
কি হলো,কথা বলছো না কেন,আমি কিন্তু জানি তুমি ঘুমাওনি।
ওই ভাইয়া,রাগ করছো?

—ঘুমা,তোর নাকি ঘুম পেয়েছে,ঘুমানো বাদ দিয়ে ডিস্টার্ব করছিস কেন?অনেক রাত হয়েছে,ঘুমিয়ে পর,সকাল সকাল উঠতে হবে।

—ভাইয়া সরি,আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি,সত্যিই আমার ভয় লাগছিলো।

—কালকে আমার জইনিং ডেট,হসপিটালে যেতে হবে,ঘুমাতে দে।

—কালকে জইনিং ডেট মানে,কালকেই জইন করবে?
এইতো সবে আসলে,এতো তাড়াতাড়ি কেন?

—আমি সব রেডি করেই দেশে ব্যাক করেছি,আমি টাইম ওয়েস্ট করতে চাইনা।

—ভাইয়া,কাল আমাদের বিয়ের রিসেপশন
—তো?তুই কি এই বিয়েটা মানিস?
তুইতো শুভ’কে বিয়ে করতে চেয়েছিলি তাইনা,আমিতো তোকে জোর করে বিয়ে করলাম,তুই তো আমাকে এক্সেপ্টই করতে পারছিস না,আবার রিসেপশনের কথা বলছিস?

—ভাইয়া…
—কানের কাছে ভাইয়া ভাইয়া করিস না,আমি ঘুমাবো,প্লিজ তুইও ঘুমা,নয়তো আমাকে ডিস্টার্ব করা বন্ধ কর

কথাটা ব’লেই ইন্তিহাজ কম্বল মুড়ি দিয়ে চোখ বুজে নিলো।


পরদিন সকালে….
খাবার টেবিলে সবাই ব্রেকফাস্ট করছে,ইয়ানা ওর মায়ের হাতে হাতে সাহায্য করছে,কারণ তৃষা আর বহ্নি গতরাতে কিকি হলো সে-সব কথা বলে ওকে পচাচ্ছে,মূলত এই কারণেই ইয়ানা নিজের মা’কে কাজে হেল্প করছে যাতে ওদের সামনে পরতে না হয়,তবুও বহ্নি হিংস মেরে বললো,

—বাহ্,ভালোইতে।যে মেয়ে কুটোটাও নেড়ে দেখে না,সে আজ সংসারী হয়ে গেছে দেখছি,একরাতে এতো পরিবর্তন,বাহ্ বইন বাহ্,উফস সরি ভাবিজী।

বহ্নি’র কথা শুনে ইয়ানা অসহায় দৃষ্টিতে খাদিজাতুল নেসার দিকে তাকালে তিনি বহ্নিকে ধমক দিয়ে বললেন,

—আহ্ বহ্নি,ইয়ানা’র সাথে এমন করছিস কেন বলতো?
কি ধরনের আচরণ এগুলো,আমরা এখানে উপস্থিত আছি।তুই বড় হয়েই যদি এরকম করিস,তাহলে ছোটরা কি শিখবে?
—সরি আম্মু

ইন্তিহাজ ব্লাক শার্ট,প্যান্ট,ও সাদা এপ্রোন পরে হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে ড্রয়িংরুমে এসে বললো,

—আম্মু,খাবার হয়েছে?
আমি বের হবো

—কিরে,তুই এইভাবে কোথায় যাচ্ছিস?
আজ তোদের বিয়ের জন্য বউভাতর আয়োজন করা হয়েছে আর তুই এভাবে…

—আমার হসপিটালে যেতে হবে,আজ জইনিং ডেট.

—কিসের জইনিং ডেট,ফাইজলামি করছিস তুই? (ইয়াকুব জামান)

—না আব্বু,আগে থেকেই ডিসাইড করা ছিল,মাঝখানে হঠাৎ করে এসব হয়ে গেলো তাই তোমাদের কিছু জানানো হয়নি।

—বুঝলে ইন্তিহাজের আব্বু,ছেলেতো এখন বড় হয়ে গেছে,নিজের লাইফের ডিসিশন নিজেই নেয়,আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই ওর,আমাদেরকে কেন জানাবে বলো।

—আম্মু,এভাবে বলো না প্লিজ,বুঝার চেষ্টা করো একটু।
আমি তোমাদের…
—থাক কিছু বলতে হবে না তোকে,পরিবারের কথা,আমাদের কথা কেন ভাববি তুই,এখনতো তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস না?

—আম্মু,আমি সময়মতো চলে আসবো প্রমিজ,কিন্তু এখন আমাকে আটকিও না,আর্জেন্টলি যেতেই হবে।

—হয়ে গেছে সব,আয় বস।
সময়মতো চলে আসিস বাবা,বুঝিসতো সব (আমেনা খাতুন)

ইন্তিহাজ সবার সাথে কথা বললেও একবারও ইয়ানা’র দিকে তাকায়নি,ইন্তিহাজ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর ইয়ানা দৌড়ে ওপরে চলে আসলো।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখে ইন্তিহাজ মিথিলার সাথে একটা রিকশায় করে চলে গেলো।এইসময় মিথিলার সঙ্গে ইন্তিহাজ কে দেখে মনে খটকা লাগলো ইয়ানা’র,ইন্তিহাজ মিথিলা’র কোই গেলো এ-সময়?


হসপিটালের সামনে রিকশা থামতেই ইন্তিহাজ ও মিথিলা নেমে আসলো,দ্রুত পায়ে হসপিটালে ঢুকতে ঢুকতে মিথিলা বললো,

—ভাইয়া,শুভর অবস্থা কিন্তু অনেক সিরিয়াস,নাকে গুরুতর ভাবেই আঘাতটা লেগেছে কালকে আপনি যে জোড়ে ঘুষিটা দিয়েছেন,অবস্থা খুব খারাপ,ব্লেডিং বন্ধ হচ্ছে না…..

To be continue……

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_২৪

—কালকে আপনি যে জোড়ে ঘুষিটা দিয়েছেন,অবস্থা খুব খারাপ,ব্লেডিং বন্ধ হচ্ছে না।

—আমি দেখছি কি করা যায়,নরমাল ট্রিটমেন্টে কাজ হবে না, আমি গতকাল তো আর সময়ই পেলামনা।

—কিন্তু ভাইয়া,ব্লেডিং বন্ধ না হলে তো বিপদ,আমরা অনেক চেষ্টা করেছি বাট লাভ হয়নি,ডক্টর রহমানও ছিলেন।

—ডক্টর রহমান একজন জেনারেল ডক্টর,উনি প্যারামেডিকেল কোর্স কমপ্লিট করে রোগী দেখেন,সিরিয়াস কেস উনি কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন আজব।
আমি রেগে ছিলাম ঠিক আছে,বাট আমি আঘাতটা এমন ভাবে করিনি যে ব্যাপার টা এতো সিরিয়াস হয়ে যাবে,এজ এ ডক্টর হিসেবে সেই কমনসেন্সটা আমার আছে।

—সরি ভাইয়া,আমরা বুঝতে পারিনি এতটা সিরিয়াস হয়ে যাবে।
—স্টুপিডস

ইন্তিহাজ কেবিনে গিয়ে দেখে শুভর নাকে ব্যান্ডেজ করা,শুভ বেডে শুয়ে আছে।ইন্তিহাজ কে দেখে উঠে বসলো শুভ,মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

—ব্রো,রাগটা কন্ট্রোল করতে শেখো।
না মরে বেঁচে আছি আমি,এতটা হাইপার না হলেও পারতে,আমি তো জাস্ট ফান করছিলাম

—ওই সিচুয়েশনে আমার মাথা ঠিক ছিলো না,আর তুই ইয়ানা’কে নিয়ে যেভাবে বলছিলি,মাথা আরও গরম হয়ে গেছিলো,এনিওয়েস,টেনশন করিস না আমি দেখছি।

—স্যার আমরা ড্রেসিন করতে গেলেই ব্লেডিং হচ্ছে,কি করবো? (একজন নার্স)

—আপনাদের কিছু করতে হবে না,আমি দেখছি


বেলা ১২টা…
হসপিটালের হেড অফিসে সকল পেপার্স জমা দিয়ে বাইরে আসলো,মিথিলা বাইরে ওয়েট করছে।ইন্তিহাজ কে দেখে এগিয়ে এসে বললো,

—ভাইয়া,বাড়ি থেকে বারবার কল আসছে,বাড়ি যাওয়া দরকার এবার,আজকে তো বউভাত।

—হুম,চলো।
আমার জন্য শুধু শুধু তোমাকেও আজ কষ্ট করতে হলো,তুমি তো ছুটিতে ছিলে

—নো প্রবলেম ভাইয়া,এটা আমার দ্বায়িত্ব ছিল।
—হাউ ইজ হি?
—এখন ঠিক আছে,রাতেই রিলিজ দিয়ে দিবো
—হুড,মেডিসিনের প্রেসক্রিপশন টা বুঝিয়ে দিও।
—আমি অন্য সিস্টারসদের বলেছি সব,ওরাই বুঝিয়ে দিবে।
—গুড

বাড়িতে আসার পর মিথিলার হাজবেন্ড মারিয়া কে নিয়ে মিথিলা’র কাছে এনে দিলো,

—এতো টাইম কেউ নেয়,বাবু কান্না করছিলো,ক্ষুধা লাগছে ওর,আমি তো খাওয়াইতে পারিনা,অনুষ্ঠানের বাড়ি,কেউ ফ্রী নেই,পরে বহ্নি হেল্প করলো।

—ওই একটা ইমারজেন্সি পেশেন্টের জন্য আটকে গেছিলাম, এখন ফ্রী আমি,চলো।

বউ ভাতের অনুষ্ঠানে বর’কে বাইরে থেকে আসতে দেখে অনেকেই কানাঘুষা করছে,ইন্তিহাজ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ওপরে নিজের রুমে এসে চেঞ্জ করে নিলো,এরপর তোয়ালে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলো,গোসল করা প্রয়োজন।
গোসল শেষে রুমে আসতেই ইয়ানা দৌড়ে এসে ওর সামনে দাড়িয়ে গম্ভীর ভাবে বললো,

—কোথায় গেছিলে তুমি?
—হসপিটালে

—আমি নিজের চোখে দেখেছি,তুমি মিথিলা’র সঙ্গে রিকশা করে যাচ্ছো,সত্যি করে বলো কোই গেছিলে?

—আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছিলাম হয়েছে? এবার সামনে থেকে সর,আমি রেডি হবো।

—আবার রেডি হবে মানে,কোই যাবে তুমি,ভাইয়া ভুলে যেওনা আজ আমাদের বিয়ের রিসেপশন।

—আমি সেইজন্যই রেডি হচ্ছি,এই থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট আর সেন্টু গেঞ্জি পরে সবার সামনে যাব নাকি স্টুপিড কোথাকার (রেগে বললো ইন্তিহাজ)

—আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি ভাইয়া,মিথিলা’র সঙ্গে তুমি কোথায় গেছিলে বলো?

—তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস মিথিলা একজন নার্স,ইমারজেন্সি থাকলে ও হসপিটালে যাবে সেটা স্বাভাবিক।তোর মনে কি নেগেটিভ চিন্তা ছাড়া পজিটিভ কিছু আসে না,সবাইকে কি তুই নিজের মতো মনে করিস নাকি?

—নিজের মতো মানে,আমিকি নেগেটিভ কিছু করছি নাকি?

—মুখ খোলাসনা আমাকে,তুই কি মনে করছিস আমি দেশে ছিলাম না বলে কোনো খোঁজখবর নেইনি তোর,সব খবরই আমি পেয়েছি।

—মমানে?

—শুভ’র সাথে তো ভালোই রিলেশন ছিলো তোর,ভুল বললাম কি?আর অনলাইনের কথা নাহয় বাদই দিলাম

—বিশ্বাস করো ভাইয়া শুভ’র সাথে আমি প্রেম করিনি,এমনেই ফ্রেন্ডলি রিলেশন ছিল আমাদের।তবে মানছি শুভ আমাকে প্রপোজ করেছিলো কিন্তু আমি বলেছিলাম আমার পক্ষে এসব করা সম্ভব না,আমি এসবে জড়াতে চাইনা,বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নাই,তোমার যদি আমাকে ভালো লাগে তাহলে সেটা আমার বাবা-মাকে জানাও,তারা যদি মানে তাহলে আমিও আছি নয়তো না।
এই ৫বছর শুভ আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের মতোই রিলেশন ছিল,তখনতো আমরা ছোট ছিলাম তাই বাসায় জানানোর সাহস পায়নি।কিন্তু শুভ এখন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে,আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর পরপরই সবাই রাজি হয়ে যায় আর তারপরই এই বিয়ে,আমি কিছুই জানতাম না।

—তুই-ইতো শুভ’কে বলেছিলি,ও তোর বাবা-মাকে রাজি করাতে পারলে তুইও রাজি,এ-র মানে তোরও ওর প্রতি ইন্টারেস্ট ছিল,আর হয়েছে তো সেটাই,সেজেগুজে হাসিমুখে বিয়ের আসরে চলে গেলি বিয়ে করতে।আর আমাকে তো ইগনোর করে চলছিলি

—আমি ইচ্ছে করে করিনি,আমারই বা কি করার ছিল বলো, কিন্তু শেষপর্যন্ত তো ওর সাথে আমার বিয়েটা হয়নি,শুভ নিজেই নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে হঠাৎ করে বিয়ে ভেঙে দিয়ে।

—বিশ্বাস কর ইয়ানা,আমি যখন তখন তোর সাথে খারাপ কিছু করে ফেলতে পারি যেটা আমি মোটেও চাইনা।এই মূহুর্তে আমার চোখের সামনে থেকে যা,নাহলে আমি কি করে বসবো আমি নিজেও জানিনা,মন-মেজাজ বিগড়ে আছে আমার।

—ভাইয়া,এখনো রাগ করছো?

-আবার ভাইয়া (চোখ বুজে দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইন্তিহাজ)
তুই যাবি নাকি থাপ্পড় খাবি,প্লিজ যা এখানে থেকে (ধমকে)


ইন্তিহাজ কালো রঙের শেরওয়ানি পরে বাইরে আসলো,চুলগুলো সেট করা,ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি,হাতে দামি ঘড়ি,সব মিলিয়ে সুঠাম দেহি এই পুরুষটিকে অসাধারণ দেখাচ্ছে,চেয়ারে বসে ইন্তিহাজের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ইয়ানা।
ইয়ানা আজকে খুব একটা সাজুগুজু করেনি,ইন্তিহাজ ব্রাইডাল সাজ পছন্দ করেনা।কালো-খয়েরী কালারের কম্বিনেশনে তৈরি একটা জামদানী শাড়ি,হাল্কা মেকআপ, হালকা লিপস্টিক,চোখে কাজল,গলায় নেকলেস,কানে ঝুমকো,হাতভর্তি চুড়ি পরেছে ইয়ানা।
হাসান,শায়ন,আজিম ইন্তিহাজ কে টেনে নিয়ে গিয়ে ইয়ানা’র পাশের চেয়ারে বসিয়ে ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ফটোশুট শুরু করে দিলো,ইয়ানা এখনো আগের মতো করেই রয়েছে।ইন্তিহাজ ইয়ানা’র দিকে হালকা ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,

—মুখটা বন্ধ কর,মশা ঢুকে যাবে,আমি তোর পাশেই আছি।

—আমি মোটেও তোমাকে দেখছিলাম না,আমিতো ওই আরকি…

—আমিকি একবারও বলেছি নাকি তুই আমাকে দেখছিলি,তুই নিজে থেকেই এই কথা বললি,দ্যাট মিনস তুই আমাকেই দেখছিলি।

—ধুরর,বেশি বুঝো তুমি।

পরিবারের সবাই দূরে দাড়িয়ে ইন্তিহাজ ও ইয়ানা’র খুশিটা দেখছে,দু’জনের মুখেই হাসি,কতটা খুশি তারা একে-অপরকে পেয়ে,কিন্তু পরিবারের সবাই মিলে ছেলেমেয়ে দুটোকে আলাদা করার চেষ্টা করেছিলো,ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন খাদিজাতুল নেসা।
একজন গেস্ট মহিলা হঠাৎই বলে উঠলেন,

—কিরে খাদিজা,নিজেদের মধ্যেই বিয়ে দিছিস ভালো কথা কিন্তু মেয়েটার নাক ফুরাসনি কেন,নাক ফুরিয়ে নাকফুল না পরলে স্বামীর অকল্যাণ হয় জানিস না,তোর ছেলের তো অমঙ্গল হবে রে।

—কোনো প্রয়োজন নেই ভাবি,নাক ফোরানো কোনো বাধ্য- বাধকতা নিয়ম নয়,এটা আমাদের তৈরি করা কুসংস্কার।কোনো হাদিসেই পাবেননা যে নাক ফুরাতেই হবে।মেয়েরা নাক ফুরায় শখ করে,আর ম্যাক্সিমাম ফ্যামিলি গুলোই কুসংস্কারে বিশ্বাসী,তাই তারা জোর করে নাক ফুরাইতে বাধ্য করে।

—সত্যিই কিছু বলার নেই,দিনযুগ কেমন আইলো রে বাবা, তোরা সবাই পড়ালেখা করে নিজেদের বাঙালিপোনা সব ভুলে গেছিস,আদবকায়দা,নিয়মকানুনের কোনো বালাই নাই।
নাক না ফুরানো খ্রিস্টানদের লক্ষন রে।

—ভাবি আমি আপনার সঙ্গে তর্কে জড়াতে চাইনা,আমার ছেলেবউ,আমি বুঝবো,আপনাদের কিছু না বললেও চলবে।
ওহ্ হ্যাঁ,আমার ৪টা ভাই এর ২জন ডাক্তার,দু’জন ইন্জিনিয়ার,আমার কোনো ভাবির নাক ফুরানো নেই, এতগুলো বছর ধরে তারাতো দিব্যি ভালো আছে,কোনো অমঙ্গল হয়নি,কুসংস্কার ভুলে বাস্তবে আসুন।

—আজকাল কাউকে ভালো কিছুও বলা যায়না (বিড়বিড় করে)

—ভাবি,খাওয়াদাওয়া করছেন?
আরেকটা ব্যাচ কিন্তু উঠে গেলো,পরের ব্যাচে খেতে বসে যাবেন।

কথাটা বলেই চলে আসলেন খাদিজাতুল নেসা,শুধু শুধু তর্কে জড়ানোর কোনো মানেই হয়না।তর্ক যদি করতেই হয় কোনো জ্ঞানীর সাথে করো,জিততে না পারলেও অন্তত কিছু শিখতে পারবে,কিন্তু মূর্খের সাথে তর্ক করার অর্থ নিজেকে মূর্খ প্রমাণিত করা।
রিসেপশনের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো,খুব একটা বড় অনুষ্ঠান করা হয়নি,তাই বাইরের আত্মীয়স্বজনরাও তেমন আসেনি,যারা এসেছিলো সন্ধ্যার আগেই তারা চলে গেছে।


সন্ধ্যায় ইন্তিহাজ রুমে এসে দেখে ইয়ানা রুমের মধ্যে পায়চারী করছে,ইন্তিহাজ সেদিকে নজর না দিয়ে শেরওয়ানি খুলতে গেলে ইয়ানা নিজেই এগিয়ে এসে ইন্তিহাজের শেরওয়ানির ওপরের বোতাম খুলে দিতে দিতে বললো,

—ভাইয়া,এখন থেকে তোমার এই কাজগুলো আমি করে দিব বুঝছো,গলার টাই টাও আমি বেঁধে দিব,আমি বৃষ্টির থেকে সব শিখে নিয়েছি।

—সরি,এগুলো বউয়ের দ্বায়িত্ব,বোনের না।
তোর এসব করার কোনো প্রশ্নই আসে না

—তো আমিকি অন্যকেউ নাকি,আমি তো তোমার বউ-ই

—কেন,আমি তো তোর ভাই হই,সারাটাদিন কানের কাছে ভাই,ভাই করে যাস,ইভেন এখনো সেটাই করছিস।
আমি যদি তোর ভাই হই,তাহলে তো তুই আমার বোন তাইনা?

—ভাইয়া,ভালো হচ্ছে না কিন্তু

—ওকে বোন,এবার থেকে অবশ্যই ভালো হবে,এবার দয়া করে আপনি রুম থেকে যান,আমি কাপড় টা বদলে আসি,আর যাইহোক বোনের সামনে তো কাপড় বদলাতে পারবো না,মানইজ্জত বলে তো কিছু একটা আছে।

ইয়ানা কোনো কথা না বলে চোখ পিটপিট করে তাকালো, ইন্তিহাজ ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো,

—কিরে,কি হলো,যাবি?নাকি আমার আমার চেঞ্জ করা দেখতে চাস,আচ্ছা লুচু তো তুই ইয়ানা,দিস ইজ নট ফেয়ার।

—আমি তোমার বউ,আমি থাকবো না তো কি বাইরের মানুষ থাকবে নাকি,আমি এক পা-ও নড়বো না এখানে থেকে,আমার সামনেই পারলে চেঞ্জ করো হুহ

—ওকে,বাট গতবার তোর সামনে চেঞ্জ করার সময় কি হয়েছিল মনে আছে,উফস আমার তো মনে হলে এখনও কেমন কেমন লাগে,এরকম যদি রোজ হয় তাহলে তো আমার জন্য ঈদের দিন।

টিশার্ট খুলতে খুলতে ভ্রু নাচিয়ে বললো ইন্তিহাজ,ওইদিনের কথা মাথায় আসতেই ইয়ানা লজ্জা ও অজানা আতঙ্কে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো,ইন্তিহাজ বুকে হাত দিয়ে বিছানায় বসে পরলো,

—কি আছে তোর ওই চোখে,নিত্যদিন নতুন-নতুনভাবে তোর চোখের প্রেমে পরি,ডুবে যাই আমি #তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়

সন্ধ্যা পর ইন্তিহাজও কিছু প্রয়োজনে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়েছে,শুভ’র সঙ্গে একটু দেখা করা দরকার,কি অবস্থা স্ব-চোখে না দেখলে প্রশান্তি মিলবে না,যদিও নেগেটিভ কিছু হওয়ার চান্স নেই।
গতকাল ইন্তিহাজ শুভ’র সঙ্গে দেখা করে সবটা বুঝালেও শুভ ইয়ার্কি করে বলেছিলো সে ইয়ানা’কে ছাড়বেনা,ওকেই বিয়ে করবে,ইন্তিহাজ কীভাবে কি করে দেখা যাক,কারণ এই ৫বছর ইয়ানা ওর জন্য অনেক কষ্ট পাইছে,জেনেশুনে এমন একজনের সঙ্গে ইয়ানা’কে কিছুতেই থাকতে দিবে না,তখনই রাগের বসে ইন্তিহাজ শুভ’কে নাক বরাবর ঘুষি মেরে দেয়।


রাত ১০টা…
বহ্নি আর তৃষা ইন্তিহাজের রুমে ইয়ানা’র সাথে বসে আছে, ইয়ানা’র মন খারাপ দেখে তারা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে হয়তোবা ওদের মাঝে মনোমালিন্য চলছে কারণ ইন্তিহাজ কে ওরা ভালো ভাবেই চিনে।
ইয়ানা’কে জিজ্ঞেস করার পর ইয়ানা মোটামুটি সবটাই শেয়ার করেছে,এখন কি করা যায় মূলত সেই ভাবনাতেই রয়েছে সবাই।

—শোন ইয়ানা,ভাইয়া কিন্তু এমনিতেই বদমেজাজী টাইপের লোক,তুই এতো ত্যাড়ামি করলে পরে ভাইয়াকে না হারাইতে হয় বলে দিলাম।বর’কে আচলে বাঁধার চেষ্টা করবি তা-না,উনি জিদ দেখাচ্ছেন

—আমি কি করবো,ভয় লাগে আমার।
এই ৫বছর আমি যে ব্যবহার করছি,ভাইয়া যে আমার উপরে চরম ক্ষিপ্ত সেটা আমার জানতে বাকি নেই,আমাকে যে চাপা শাস্তি দিবে সেটাও জানি,এইজন্যই এমন করছিলো,তানাহলে এত কাহিনির পরেও এতো ভালো ব্যবহার কেন করবে,বলো?

—হ্যা,তুই সব জেনে বসে আছিস।
আরে পাগলি এটা শাস্তি না,ভালোবাসা।বিয়ের পর কাছাকাছি আসতে চাওয়াটা স্বাভাবিক,বোকার মতো কথা বলিস কেন

—আমিও জানি,বাচ্চা নই আমি,বুঝি সব।
কিন্তু ভাইয়াতো আর এমনিএমনি ছেড়ে দিবে না।

—ওরে আল্লাহ রে,ইয়ানা আপু তুমি এখনো ভাইয়া ভাইয়া করে যাচ্ছো,ইন্তিহাজ ভাইয়াতো এখন তোমার হাজবেন্ড, নিজের হাজবেন্ড কে কি কেউ ভাইয়া বলে ডাকে? (তৃষা)

—তো কি বলবো,আমার কতো সিনিয়র,নাম ধরে তো ডাকতে পারবোনা, আর ভাইয়া বলাটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে,সেই ছোট থেকেই তো বলি।

—আমার কাছে আইডিয়া আছে,তুই বরং তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিয়ে নে তারপর বাচ্চার নাম নিয়ে ডাকিস। (বহ্নি হেসে দিয়ে)

—বুঝাই যাচ্ছে তোরা একই মায়ের গর্ভে জন্মাইছিস,আহা কি বুদ্ধি (রেগে বললো ইয়ানা)

—আমার কাছে ভালো বুদ্ধি আছে।
সিনেমার মতো বলবে ওগো শুনছো,হ্যাঁ গো এসো,ওগো খাবে (তৃষা)

—কানের নিচে দিব,বড্ড পেকে গেছিস তুই তৃষা (রেগে বললো ইয়ানা)

—ও তো ঠিকই বলেছে,আমারতো হ্যাভি লাগলো (বহ্নি হাসতে হাসতে)

ওদের হাসি দেখে রাগে ফুঁসছে ইয়ানা,এভাবে একজনের ইমোশনস নিয়ে হাসাহাসি করবে,সত্যিই বেয়াদব।
ইয়ানা রেগে কিছু বলতে যাবে তখনই রুমে প্রবেশ করলো ইন্তিহাজ,ইন্তিহাজ কে আসতে দেখে সকলে কিপ সাইলেন্ট হয়ে গেলো।ইন্তিহাজ ভ্রু-কুচকে বললো,

—কি হচ্ছে এখানে?

—তোমার বউকে সংসার জীবনের করণীয় কি কি,কিভাবে আদর্শ বউ হতে হয় সেই শিক্ষা দিচ্ছিলাম,বাচ্চা মেয়েতো তাই (বহ্নি)

ইন্তিহাজ তৃষা’র দিকে তাকালে তৃষা’ও মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝালো ও নিজেও সেম কাজ করছিলো।

—দু’জনেই বড় হয়ে গেছিস তাইনা,উড়তেছিস খুব,ডানা ছাটতে হবে দেখছি।বহ্নি তোর হাজবেন্ড কে যা বলার বলবো, আর তৃষা তুইতো সব বুঝিস দেখছি,তাহলে বিয়ের ব্যবস্থা করি নাকি

বহ্নি আর তৃষা একমূহুর্ত না দাঁড়িয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো, ইয়ানা উঠে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

—তুই সং এর মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন,ক্ষুধা লাগছে খাবার সার্ভ কর যা,এতরাতে আম্মু,কাকিয়া’কে ডাকাডাকির দরকার নেই,এখন থেকে আদর্শ বউ এর দ্বায়িত্ব পালন করবি।
ওহ্ হ্যাঁ,আদর্শ বউ রা কিন্তু স্বামী না খেলে খাবার খায়না,আই থিঙ্ক তুইও এখনো কিছু খাসনি

—না মানে আসলে,আমিতো অনেক আগেই মানে আরকি…

—তাহলে কি শিখলি ওদের থেকে,ওরা তো তোকে আদর্শ বউ হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছিলো তাইনা।

—ভাইয়া আসলে ওরা…

—আবার ভাইয়া

ইন্তিহাজ রেগে বেলকনিতে চলে গেলো,ইয়ানা নিজেই নিজের মাথায় মাথায় গাট্টা মেরে বিরবির করছে।অভ্যাস টা কিছুতেই পরিবর্তন করা যাচ্ছে না,মুখ ফসকে বারবার ভাইয়া শব্দ টাই বেড়িয়ে আসছে।
ঘুমানোর সময় আগের দিনের মতো আজকেও ইন্তিহাজ বিছানার এক সাইডে এসে উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে আছে,ইয়ানা কাচুমাচু করছে,একবার এপাশ তো আবার ওপাশ,মাথা কাজ করছে না এইমূহুর্তে কি করা উচিত……

To be continue…..

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_২৫

ইয়ানা কাচুমাচু করছে,একবার এপাশ তো আবার ওপাশ,মাথা কাজ করছে না এইমূহুর্তে কি করা উচিত,সাহস করে ইয়ানা এগিয়ে এসে ইন্তিহাজ কে ডাকতে শুরু করলো,

—ও-ই,শুনেছো,ঘুমাইছো?
দেখো,আমি জানি তুমি ঘুমাওনি,ড্রামা না করে এদিকে ঘুরো।
রাগ করছো আমার ওপর,সরি,দেখো কান ধরছি।
ইফাজে’র আব্বু,শুনছো

ইয়ানা’কে এতক্ষণ ইগনোর করলেও এবার চমকে এদিকে ঘুরে ইয়ানা’র দিকে ভ্রু-কুচকে তাকালো ইন্তিহাজ,

—কি বললি তুই?

—বললাম ঘুমাইছো নাকি,রাগ করছো আমার ওপর?এটাই বলছিলাম।

—না না,এটা না।আমাকে কি বলে সম্বোধন করলি মাত্র?

—কোই কিছু না তো ভাইয়া,কি বলে সম্বোধন করবো।

—আমি স্পষ্ট শুনেছি তুই আমাকে ইফাজে’র আব্বু বললি, এখন আবার কথা ঘুরাচ্ছিস কেন?

—কথা ঘুরাবো কেন,তুমি যখন শুনতেই পাইছো তাহলে আমাকে আবার জিগাচ্ছো।

—ইফাজ টা কে,জানতে পারি?
—কেউ না

—তাহলে আমাকে ইফাজে’র আব্বু বললি কেন,কে ইফাজ?

—ইয়ে মানে আসলে,আমি ভেবেছি ভবিষ্যতে আমার ছেলে হলে নাম রাখবো ইফাজ,আমাদের দু’জনের নামের সঙ্গে মিক্স করে এই নামটাই ভেবেছি,সুন্দর না নামটা?

—হুম সুন্দর কিন্তু তোর আর আমার বাচ্চাতো হবে না,তাহলে এটা বলে আমাকে ডাকার কোনো মানেই হয়না।

—বাচ্চা হবে না মানে,কেন হবে না,অবশ্যই হবে,আমি কি অসুস্থ নাকি নাবালিকা যে কনসিভ করতে পারবোনা,আই এম ইন ২৪ইয়ার্স ওল্ড ওকে,আমার বাচ্চা নেওয়ার যথেষ্ট বয়স হয়েছে।

—তো বাচ্চা কি এমনি এমনিই হবে নাকি,বাচ্চা নিতে হলে তো হাজবেন্ডকে অনেক ভালোবাসতে হবে,তাকে আদর করতে হবে,কাছাকাছি আসতে হবে,বাসর…

—থামো থামো,আমি কি আমার বর’কে ভালোবাসি না নাকি হুম,আমি বেশ যথেষ্ট ভালোবাসি।

—তাহলে স্বীকার করলি তুই আমাকে ভালোবাসিস,কান ধন্য হলো আমার।তুই বাচ্চা চাস তাইতp,আই মিন ইফাজ কে চাস রাইট,তাহলে তাকে নিয়াসার প্রিপারেশন স্টার্ট করে দিই কি বলিস (ইয়ানা’কে চোখ মেরে বললো ইন্তিহাজ)

—এ্যাঁহ
—সো রেডি মিসেসঃ ইয়ানা ইন্তিহাজ জামান? (ইয়ানা’কে কাছে টেনে নিয়ে বললো ইন্তিহাজ

—আমিতো ওই এমনিএমনি কথায়কথায় বলছিলাম, ভবিষ্যতের কথা বলছিলাম আরকি (ঘাবড়ে গিয়ে)
তুমি শুধু কথায় কথায় উল্টাপাল্টা ভেবে নিয়ে বসে থাকো

—কিন্তু আমিতো একদম সিরিয়াস,ভবিষ্যতে কিছু পেতে হলে বীজ তো বর্তমানেই রোপণ করতে হবে তাইনা,সো শুরু করা যাক (ইয়ানা’র ঘাড়ে নিজের নাক ঘষতে ঘষতে বললো ইন্তিহাজ)

ইন্তিহাজের এমন স্পর্শে ইয়ানা’র হার্টবিট বেড়ে গেছে,শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে,পুরো শরীর কাঁপছে ওর।শিহরণে ইয়ানা ইন্তিহাজের পিঠের টি-শার্ট খামছে ধরে বললো,

—আমার সুরসুরী লাগছে,ছাড়ো
—সামান্য একটু লাগবেই তো মিসেস,পরে সব ঠিক হয়ে যাবে

ইয়ানা এই অদ্ভুত শিহরণের জন্য ঠিকভাবে কথাও বলতে পারছে না,নিঃশ্বাস আটকে আসছে ওর।ইন্তিহাজের হাত ইয়ানা’র পেটে বিচরণ করছে,ইয়ানা শিহরণ সইতে না পেরে চেপে ধরলো ইন্তিহাজের হাত,হাত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ইন্তিহাজ ইয়ানা’কে টেনে নিজের নিচে ফেলে ওর ওপরে আধশোয়া হলো,নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ইয়ানা’র ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে বললো,

—লেট’স স্টার্ট
—না

ইয়ানা ডানে-বামে মাথা নাড়াচ্ছে,ইন্তিহাজ ওপর-নিচে মাথা নাড়াতে নাড়াতে এগিয়ে যাচ্ছে ইয়ানা’র দিকে,ধীরেধীরে ইয়ানা’র একদম সন্নিকটে গিয়ে ওর ঠোঁটজোড়া নিজের ঠোঁট যুগল দ্বারা দখল করে নিলো ইন্তিহাজ,ধীরে ধীরে স্পর্শ গাঢ় থেকে আরও গাঢ় হতে শুরু করলো,ডুব দিলো দু’জনেই পবিত্র ভালোবাসার সাগরে।


ভোর সাড়ে ৪টা…
ইন্তিহাজের হালকা লোমশ বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে ইয়ানা,শুয়ে থেকে লোম ধরে টানার চেষ্টা করছে,ইয়ানা’র এমন কান্ডে ঘুম ভেঙে গেলো ইন্তিহাজের,চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ইয়ানা ওর বুকের লোম ধরে টানছে,ইন্তিহাজ ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো,

—সকাল সকাল দুষ্টামি করছিস কেন,সারারাত ঘুম হয়নি ঘুমাতে দে।
কি হলো,আরে আজবতো,এগুলো কি ধরনের ছেলেমানুষী, নিজেও ঘুমা আর আমাকেও ঘুমাইতে দে।
কি হচ্ছে টা কি ইয়ানা,লোম ধরে টানছিস কেন,ব্যথা লাগছে আমার।

—আমারও লাগছে,আমার ঘুম নষ্ট করে তুমি শান্তিতে ঘুমাবে, এটাতো হবে না,অনেক জ্বালাইছো আমাকে।

—আমার ঘুম নষ্ট করলে জ্বালাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে, সো ভালোয় ভালোয় বলছি দুষ্টামী বন্ধ কর।

—তুমিওতো অনেক দুষ্টামি করছো আর আমি করলেই দোষ, আমার ঠোঁট জ্বলছে এখনো,ঘুমাইতে পারছিনা আমি,তুমি একটা এক নম্বরের লুচু,খাটা’স।

—কি বললি তুই,আবার বল (রাগিস্বরে)
—নাহ্,কিছু বলিনি তো

—চুপচাপ ঘুমা,আর আমাকেও ঘুমাইতে দে,ঘুমানোর সময় ডিস্টার্ব করা আমার একদম পছন্দ না,আমি সবকিছুতে ডিসিপ্লিন মেনে চলি,মানুষের কাঁচা ঘুম নষ্ট করলে তার মাথার ব্রেনে চাপ পরে,ঘুম কম হলেও মাথার সমস্যা হয়,একজন মানুষের মিনিমাম ৪ঘন্টা ঘুমানো দরকার,ঘুমে বিঘাত ঘটানো উচিত নয়।

—তাহলে আমার ঘুম নষ্ট কেন করলে বলো,আচ্ছা পাঁজি তো তুমি,শুধু নিজেরটাই বুঝো।

—বয়স কতো তোর?
—কিহ্
—বললাম বয়স কত তোর
—২৪

—তোর মুখ থেকে এধরণের গাঁজাখোরি প্রশ্ন আশা করা যায়না,নাকি ইচ্ছে করে এমন করছিস,এইসব বিষয়ে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে তাইনা,তাহলে আবারও প্র্যাকটিক্যালি করে দেখাবো নাকি (রেগে বললো ইন্তিহাজ)

—নাআআআ,একদম না।
তুমি ঘুমাও ভাইয়া,আমি তো মজা করছিলাম (জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে)

ইন্তিহাজ কোনো প্রতিত্তোর না করে ডিরেক্ট চুম্বন করলো ইয়ানার ঠোঁটযুগলে।

—এটা কি হলো ভাইয়া,আমি ক….(পুনরায় কিস করার পর) তুমি নাকি ঘুমাবে তাহলে এগুলো কি শুরু করছো,এবার কিন্তু দুষ্টামি তুমি করছো।

—বউ যখন ভাইভাই করে,তখন বউকে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন আমি তার কে হই,সো যতবার ভাইয়া বলবি ততবারই এরকম হবে মনে রাখিস।

—এটা কিন্তু ঠিক না,আমার সময় লাগবে হ্যাবিট চেঞ্জ করতে, ছোট থেকে এভাবে ডাকছি,একদিনে কি এতবছরের অভ্যাস এভাবে চেঞ্জ করা যায় নাকি।

—সো,আমিতো হেল্পই করছি তোকে,যতবার ভুল করবি ততবারই এভাবে মনে করিয়ে দেব কেমন (দুষ্টু হাসি দিয়ে)

—সুযোগের সৎ ব্যবহার করছো তাইনা,এটা কিন্তু ঠিক না।

—বিয়ে করা বউয়ের থেকে সুযোগ নিতেই পারি,আমার রাইট আছে।এনিওয়েস,ঘুমাইতে দে নাহলে রোমান্টিক টর্চার কিন্তু শুরু হয়ে যাবে,আই থিঙ্ক তুই সেটাই চাচ্ছিস।

—এইতো ঘুমাচ্ছি,তুমিও ঘুমাও হ্যাঁ।
গুডনাইট

—হুম
—একটা কথা ছিল
—আবার কি (বিরক্তির স্বরে)

—বউকে কি কেউ তুইতোকারি করে?আমায় যখন চেঞ্জ হতে বলছো,আই থিঙ্ক তোমারও নিজের হ্যাবিটস চেঞ্জ করা প্রয়োজন।
— অবশ্যই,আই উইল বি ট্রাই


কিছু মাস পর….
ড্রয়িংরুমে ইয়ানা’কে ঘিরে বসে আছে সবাই,তৃষা ইয়ানা’র মুখে একটা মিষ্টি দিয়ে বললো,

—কংগ্রাচুলেশনস আপু,আমিতো ভাবতেই পারিনি এতো তাড়াতাড়ি আমি আন্টি হয়ে যাবো (আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বললো তৃষা)

—ঠিকই করেছে,আমিই বলেছিলাম কোনো প্রটেকশন না নিতে,বয়স অনুযায়ী আর দেরি করা ঠিক হবে না,আমাদের ইন্তিহাজের বয়স তো কম হলো না,আর ইয়ানা’রও ২৪চলছে, দেরী করতে গেলে পরে যদি আবার বাচ্চাকাচ্চা না হয় তখন?, আমাদের বহ্নি তো এতো চেষ্টা করেও কনসিভ করতে পারছে না (খাদিজাতুল নেসা)

—ঠিকই বলছেন ভাবি,মেয়েটার যে কি হলো,এতো ডাক্তার দেখানো হলো তবুও কোনো কাজ হচ্ছে না (আমেনা খাতুন)

—ইয়ানা,মা এখন থেকে সাবধানে চলাফেরা করবি কেমন, কোনো ভাড়ি কিছু করার চেষ্টা করবি না,কিছু প্রয়োজন হলে আমাদের বলবি,আমরা আছি তো।
প্রথমবার মা হতে চলেছিস,তারওপর তোদের ব্লাডগ্রুপ নিয়ে কিছু সমস্যা আছে,অনেক সিনড্রোম দেখা দিতে পারে, সাবধানে থাকতে হবে।

—হুম মামনী
—আপু,ভাইয়াকে বলছো?

—নারে,কল করছি কিন্তু রিসিভ করছে না,বিজি আছে মনে হয়,অনেকবার কল করছি

—ওরতো আজকে একটা অপারেশন আছে বলছিলো,অনেক ক্রিটিকাল পেশেন্ট,মনে হয় অপারেশন থিয়েটারে আছে।কল করিসনা,ফ্রী হলে ও নিজেই কল করবে (আমেনা খাতুন)

—বলার দরকার নেই,আমরা ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিব,ভাইয়া বাড়ি আসুক (তৃষা)

ওদের কথার মাঝেই নাহিদ বাইরে থেকে দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

—আম্মু,আপু সর্বনাশ হয়ে গেছে
—তুই আগে পানি খা,কি হয়েছে হাঁপাচ্ছিস কেন রে (তৃষা)

—টিভি অন করো,দেখো নিউজে কি দেখাচ্ছে,ইন্তিহাজ ভাইয়াকে পুলিশ জার্জ করছে,মনে হয় থানায় নিয়ে যাবে
—কিহ্

ইয়ানা দ্রুত রিমোট দিয়ে টিভি অন করে নিউজ চ্যানেলে দিলো,নিউজে দেখাচ্ছে…

❝ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের গাফিলতির কারণেই মৃত্যু হয়েছে ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলামের বড় ছেলে জাহিদ ইসলামের,গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সিরাজুল ইসলামের প্রতিপক্ষ দীপক মুখার্জির থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে ডক্টর ইন্তিহাজ জামান ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজটি করেছে।এটা কোনো অ্যাকসিডেন্টলি মৃত্যু নয়,জেনে-বুঝে করা মার্ডার,ডক্টর ইন্তিহাজ জামান নিজের দ্বায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি,তিনি টাকা খেয়ে ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে জাহিদ ইসলাম কে খুন করে নরমাল ডেড হিসেবে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন,কিন্তু তার সহকারী ডক্টর নিলয় মন্ডল কিছু একটা সন্দেহ করে ডক্টর ইন্তিহাজ জামানের অগোচরে ডেডবডির পোস্টমর্টেম করান, সেই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য,অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন চলাকালীন সময়ে জাহিদ ইসলামের শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে টক্সিক প্রবেশ করানো হয়, বিষক্রিয়ায় ফুসফুস পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে যাওয়ায় শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছে জাহিদ ইসলামের।
কিন্তু ডক্টর ইন্তিহাজ জামান নিজের দোষ স্বীকার করতে নারাজ,তিনি কি বলছেন এ বিষয়ে চলুন তার মুখ থেকেই শোনা যাক।❞

জার্নালিস্ট মেয়েটি ইন্তিহাজের ওদিকে এগিয়ে গিয়ে মাউথস্পিকার এগিয়ে ধরলো,আরও বিভিন্ন নিউজচ্যানেলের জার্নালিস্ট দাঁড়িয়ে আছে ইন্তিহাজের সামনে,ইন্তিহাজের দু’পাশে পুলিশরাও রয়েছে।

—ডক্টর ইন্তিহাজ জামান,ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলামের ছেলে জাহিদ ইসলাম ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে এই হসপিটালে এডমিট হয়েছিলো,আজ বিকাল ৫টায় অপারেশন চলাকালীন সময়ে মৃত্যু ঘটে তার,আপনার দিকে আঙুল উঠেছে আপনার দ্বারাই নাকি এই খুন হয়েছে,এবিষয়ে আপনার মতামত কি?

—দেখুন,আমি অপারেশনের মূল দ্বায়িত্বে ছিলাম মানছি,তবে আমি অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত থাকলেও অপারেশন চলাকালীন সময়ে শারীরিক অসুস্থতা বোধ করায় নিজে সার্জারী করতে পারিনি,আমি সাইডে বসে থেকে অন্য ডক্টর ও সিস্টার্স দের অপারেট করছিলাম,সার্জারী ওনারাই করছিলেন। (ইন্তিহাজ)

—বাট তারা তো আপনার কথাতেই কাজ করছিলো রাইট, আপনি যখন যে মেডিসিন ইউজ করতে বলেছেন,যখন যেভাবে যেটা করতে বলেছেন তারা সেভাবেই কাজ করছিলো,তাহলে ওনার শরীরে টক্সিক আপনিই প্রবেশ করিয়েছেন,নিজের দায়বদ্ধতা আপনি এরিয়ে যেতে পারেন না ডক্টর জামান।

—আমরা খবর পেয়েছি,জাহিদ ইসলাম হসপিটালে এডমিট হওয়ার পর থেকে এই ১সপ্তাহে মিঃদীপক মূখার্জীর সঙ্গে আপনাকে বেশ কয়েকবার দেখা গেছে,সকলের সন্দেহ আপনি তার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ইচ্ছেকৃত ভাবে জাহিদ ইসলামের মার্ডার করিয়েছেন।

—এটা আপনাদের ভুল ধারণা,দীপক মুখার্জির সঙ্গে আমার কোনো লেনদেন হয়নি,উনি নিজের প্রবলেমের জন্য আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন,ওনার মাথায় প্রচন্ড পেইন হচ্ছিলো, উনি ভেবেছিলেন হয়তো সিরিয়াস কিছু,তাই আমার এপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলেন দ্যাটস অল।
জাহিদ ইসলামের অপারেশনের সঙ্গে ওনার কোনো কানেকশন নেই। (ইন্তিহাজ)

পুলিশের লোকজন মিডিয়ার লোকজনদেরকে সরিয়ে দিয়ে ইন্তিহাজের কাছে এসে বললো,

—আই এম সরি ডক্টর জামান,আপনাকে আমাদের সঙ্গে থানায় যেতে হবে।
—বাট ইন্সপেক্টর…

—প্লিজ সিনক্রিয়েট করবেননা,মামলা সিরিয়াস হয়ে গেছে,যা হবার এবার কোর্টেই হবে,আমাদেরও কিছু করার নেই,সো প্লিজ।
—চলুন

এদিকে নিউজ দেখার পর ইয়ানা পরে যেতে লাগলে নাহিদ ওকে ধরে নিলো,সবাই শোকের মধ্যে চলে গেছে।
ইয়ানা বলতে শুরু করলো,

—আমি এক্ষুনি থানায় যাব,আমি ওর সাথে দেখা করতে চাই।
আমি জানি,ও এরকমটা করতেই পারে না।মামনি তাইনা বলো, তুমি তো তোমার ছেলেকে চেনো,সে কেমন জানোতো,ও এরকমটা কোনোদিন করবে না,ও একদম নির্দোষ,ফাঁসানো হচ্ছে ওকে।

—আমি জানি ইন্তিহাজ এরকমটা কোনদিন করবে না,ও মরে যাবে কিন্তু নিজের রেসপনসেবলিটি,সেল্ফ-রেসপেক্ট কখনো নষ্ট করবে না,ইন্তিহাজ কে ফাঁসানো হচ্ছে ভাবি (আমেনা খাতুন)

—আমাদের থানায় যেতে হবে,তৃষা ইয়ানা’কে ঘরে নিয়ে যা,আমি নাহিদকে নিয়ে বের হচ্ছি,ইন্তিহাজের আব্বু মনে হয় এতক্ষণে রওনা দিয়ে দিয়েছে। (খাদিজাতুল নেসা)

—মামনি,আমিও যাব,আমাকে থানায় নিয়ে চলো প্লিজ,আমি ওনার সাথে দেখা করতে চাই (কাঁদতে কাঁদতে বললো ইয়ানা)

—না মা,তোর এই অবস্থায় থানায় যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই,তুই বাড়িতেই মা’য়ের সঙ্গে থাক,আমি বের হচ্ছি,তোকে কল করে সব জানাবো,চিন্তা করিস না,কিছু হবে না,আমাদের ইন্তিহাজ নির্দোষ।

—না আমি যাব,আমাকে আটকিওনা,আমার কিছু হবে না প্লিজ।
—আমেনা,ইয়ানা’কে সামলে রাখ,আমি আসছি
নাহিদ চল


জেল কাস্টার্ডিতে টেবিলের একে-অপরের অপজিটে বসে আছে ইন্তিহাজ ও লয়্যার আব্দুল জব্বার শেখ,ইন্তিহাজের থেকে সবটা শুনে কাগজে লিখিতো সিগনেচার নিয়ে বের হয়ে আসলেন তিনি,আয়ুব জামান ও ইয়াকুব জামান এগিয়ে এসে বললেন,

—কি মনে হয় ভাই,সব ঠিক হয়ে যাবে তো?

—চিন্তা করিস না ইয়াকুব,আমি সোর্স লাগাচ্ছি,অফিসাররাও ইনভেস্টিগেশন শুরু করে দিয়েছে,আমিও নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো ইন্তিহাজ কে নির্দোষ প্রমাণ করার।
আমিতো ছোট থেকেই ওকে চিনি,ছেলে কেমন আমি কি জানিনা,আমিও শিওর ওকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করছে….

To be continue….

(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করুন,ধন্যবাদ)