তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-০৫

0
453

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_৫)

তুহা মেধার কাছে এসে কিছুই না বলে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মেধা ওর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে ব্যাপারটা কি! অনেকক্ষন হয়ে গেলো কিন্তু আর থাকা যাচ্ছে না। মেধা তুহার মাথায় একটা চাঁটি মেরে বললো…
– এই ভাবুক রানি সত্যি করে বল তো কি হয়েছে তোর। একটা কথা বলবি বললি তারপরেই ভাবনার জগতে চলে গেলি তা বলি কি কাকে নিয়ে ভাবছিস।

– আমার জমকে নিয়ে( করুন কন্ঠে)
– তোর জম মানে তো দাদাই। তুই দাদাই কে নিয়ে ভাবছিস সত্যি ( উৎফুল্ল হয়ে)

মেধার কথা শুনে তুহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো…
– হুম তোর ওই শয়তান দাদাই আমাকে প্যাচে ফেলে দিয়েছে। আমি এবার শেষ।

মেধা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না‌। এইটুকু সময়ের মধ্যে কি হয়েছে সেটাই বারবার ভাবাচ্ছে ওকে।
-আরে ভাবুক রানি বলবি তো সবটা ক্লিয়ার করে।

তুহা কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে মেধাকে সবটা বললো। মেধা সবটা শুনে তুহার মাথায় একটা চাঁটি মারলো। তুহা মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো…
– আ মারছিস কেন?
– তোকে মারবো না তো কি করবো। মানুষ এতটা বোকা কেমন করে হয় নিজে গায়ে পড়ে ঝামেলা নিয়ে আসলি এখন আবার আমার সাহায্য চাইছিস আমি পারবো না গেলাম।

মেধা রাগ দেখিয়ে গটগট করে চলে যায়। তুহা কিছুটা ভাবুক হয়ে নিজের মনেই বিরবির করে বললো…
– সত্যি আমি খুব বোকা। নাহলে কবেই তো মানুষটিকে খুঁজে পেতাম। আচ্ছা উনি কি জানেন ওই জমরাজ আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আর উনি তো সবসময়ই আমাকে হেল্প করেন এবারেও কি করবেন।

তুহার মনের কোনো অনেকগুলো প্রশ্ন‌ ভীড় করছে। তুহা হঠাৎ কেন জানি আর ভয় লাগছে না মনে হচ্ছে সবকিছুই ঠিক হবে কিন্তু তার কারনটা কি?

মাঝে কেটে যায় ২ দিন। আজকে সন্ধ্যায় তিশা আর অয়নের এনগেজমেন্ট পার্টি। এই দুদিন তুহা কিছুই করেনি সবার সাথে আড্ডা আর শপিং করে বেড়িয়েছে আর ফারাবিকেও এই বাড়িতে দেখেনি। তুহা এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে এমন সময় বিচ্ছু দুটো অর্থাৎ.. মিহা আর কুহু ওকে ঘুম থেকে তুলতে লাগলো। তুহা তো রেগে বোম।
-এই তাড়াতাড়ি কেন তুলেছিস আজকে তো ছুটির দিন একটু ঘুমায় না।
-নো দিভাই উঠ। সবকিছু সাজানোর দায়িত্ব তোর ছিলো তাই না।

মিহার কথাতে তুহা তাড়াতাড়ি উঠে বসে পড়লো। কথাটা মনে পড়তেই মাথাটা ভো ভো করে ঘুরছে। কিছুই সাজানো হয়নি এবার নিশ্চয় সবার কাছে‌ বকা খাবে আর ফারাবি তো ওকে অপমান করবে।

তুহা আরো‌ কিছু ভেবে উঠার আগেই ঘরের ভেতরে সকলে হুড়মুড় করে ঢুকে আসলো। সকলেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুহার দিকে তুহা তো ভয়েই শেষ এখুনি কেঁদে ফেলবে এইরকম অবস্থা। এমন সময় হুট করেই মেধা গিয়ে তুহাকে জড়িয়ে ধরে‌ বলতে লাগলো…
– ভাবুক রানি আমি তো ভাবতেই পারিনি তুই এত সুন্দর করে সবকিছু সাজানোর দায়িত্ব দিবি তোর এত প্ল্যান কোথায় ছিলো একটু বলবি।

তুহা তো হতবাক। কি সব বলছে মেধা মাথা ঠিক আছে। তুহা কিছু বলে ওঠার আগেই কুহু আর মিহা ওকে টেনে টেনে নিচে নিয়ে এলো। তুহা তো হতবাক খুব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। প্রায় কাজ শেষের পথে কিন্তু তুহা তো কিছুই করেনি কে করলে এইসব।

ভাবনার মাঝেই মেধার মা বললো…
-আমাদের তুহা রানির এত গুন আগে তো জানতাম না।

মেধার মায়ের কথায় সহমত প্রকাশ করে মেধার বাবা বললেন…
– হ্যা তিশার বিয়ের সময় সব দায়িত্ব ফারাবি আর তুহাকে দিয়ে দেবো।

তুহার মাথায় কিছুই আসছে না মাথা তো হ্যাং করে গেছে কিভাবে কি হলো কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।

তিশাকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে,কোনো পার্লারের প্রয়োজন পরেনি তুহা নিজেই খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে তিশাকে। মিহা তো তিশাকে দেখে তুহাকে রাগানোর জন্য বললো..
– এই দিভাই তিশামনিকে কি সাজিয়েছিস,পুরোই তো পেত্মী লাগছে ‌
– মিহা রাগাবি না ২ ঘন্টা ধরে সাজিয়েছি এখন যদি বলিস পেত্মী লাগছে তাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে। তোকে এমন সাজাবো তোর হ্যান্ডসাম কেন কোনো ছেলেই তোর দিকে তাকাবে না।( দাঁতে দাঁত চেপে)
– এই না দিভাই আমি তো মজা করছিলাম তিশামনিকে খুব সুন্দর লাগছে। পুরোই কিউট সুইট।এবার আমাকে সাজিয়ে দে সুন্দর করে।
– বস। কিন্তু একটুও দুষ্টুমি করলে মা/ র খাবি আমার হাতে বলে দিলাম।

মিহা বাধ্য মেয়ের মতো বসে পড়লো।‌ফ্যামিলির সবথেকে ছোট এন্ড বিচ্ছু মেয়ে হলো মিহা।কুহু ওর থেকে কিছুদিনের বড়ো দুজন দুজনের বেষ্টফ্রেন্ড হলেও দুজন দুই স্বভাবের । কুহু খুব শান্ত আর মিহা তো শয়তানের গাছ। তবে মিহা সবথেকে শান্ত হয়ে যায় সাজার সময়। এটাই একদম ঠিক জায়গা যেখানে মিহাকে চুপ করে রাখা যায়। আর বাকি সময়ে তো দুষ্টুমী লেগেই থাকে। তবে মিহা সবার খুব আদরের।‌ তাই কেউ কিছুই বলেনা।

সবাইকে রেডি করে দিয়ে তুহা নিজেও রেডি হয়ে গেলো। তিশা একটা লেহেঙ্গা পড়েছে পিংক কালারের। মিহা গোল্ডেন কালারের। মেধা স্কাই ব্লু রঙের। কুহু সি গ্রিন কালারের আর তুহা অ্যাশ কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। পাঁচ জনকেই খুব সুন্দর লাগছে। মিহা তুহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো…
-দিভাই তোর হাতে জাদু আছে দ্যাখ কি সুন্দর করে সবাইকে সাজিয়ে দিলি। সত্যি তোর কোনো তুলনা হয় না।
– এত তেল কেন মারছিস।
– আরে না তেল নয় সত্যি। তুই আমার বেষ্ট দিভাই।

তুহাও হেসে দিলো মিহার কথাতে। মেধা গিয়ে তিশাকে জড়িয়ে ধরলো। কুহু সেটা দেখে ন্যাকা স্বরে বলল…
-আমি তো কারোর কিছুই হয় না।‌আমি তো বন্যার পানিতে ভেসে এসেছি।

কুহুর কথাতে সবাই হেসে দিলো। তিশা আদর করে বললো..
-কুহু সোনা তুই আমার কাছে আয়।

কুহু খুশি হয়ে তিশাকে জড়িয়ে ধরলো। তাই দেখে সকলেই তিশাকে জড়িয়ে ধরলো। বোনদের ভালোবাসাগুলো একদম অন্যরকম হয় এইভাবেই সারাজীবন ওদের সম্পর্ক ভালো থাকুক।

সময় হয়ে যাওয়াতে সকলেই ড্রইংরুমে আস্তে লাগলো। ওরা পাঁচ বোন একসাথেই আসছে,সকলের দৃষ্টি ওদের দিকে কাকে ছেড়ে কাকে দেখবে সেটাই বুঝতে পারছে না সবগুলোই এক একটা কিউটের ডিব্বা। মেধার মা সব মেয়েগুলোর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন…
-আমার মেয়েগুলোর উপর কারোর নজর না লাগে।

তুহা শয়তানি করে বললো…
-মামনি তোমার মেয়ের উপরে তো আমাদের জিজুর নজর পরেই গেছে আর নজর কাটিয়ে লাভ নেয়।

মেধার মা তুহার কানটা ধরে বললো…
-বড্ড পেকে গেছিস তোর মাকে বলছি দাঁড়া।
-না মা কে কিছু বলবে না আমি তো মজা করছি।

তুহার কান্ড দেখে কেউ একজন দূর থেকে দাঁড়িয়ে হাসছে। তার তাহুপাখিকে কি সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে একে বারে কলিজার ভেতরে ঢুকিয়ে রাখতে।

– বড়ো মনি।

ডাকটা শুনে সকলেই দরজার দিকে তাকালো। কথা দাঁড়িয়ে আছে। অনেকদিন পরে সবাই কথাকে দেখে খুব খুশি হয়ে গেলো।‌কথা ওর স্বামীর সাথে দেশের বাইরে থাকে তাই সবার সাথে দেখা খুব কমই হয়।

তুহা তো খুব খুশি। ইচ্ছা করছে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু তুহা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। কথা তুহাকে খুব ভালোবাসে। কথার প্রান ছিলো তুহা। কিন্তু বিয়ের পর আর ওদের যোগাযোগই হয়নি ঠিক মতো বলে দূরত্ব বেড়ে যায়। তুহার মনের একরাশ অভিমান জমে আছে কথার বিরুদ্ধে। কিছূতেই কথার সাথে কথা বলবে না মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো তুহা।

কথা সবার সাথে কথাবার্তা বলে তুহার সামনে এসে দাঁড়ালো।তুহা নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।

– পাখি আমার সাথে কথা বলবি না।।

ব্যাস আর পারলো না কথাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। কথা সহ সকলের চোখেই পানি।

– পাগলি কাঁদছিস কেন দ্যাখ আমি তোর কাছেই আছি। আর কাঁদিস না পাগলি মেয়ে।
– তুমি এত দিন কেন আমার সাথে যোগাযোগ করোনি বলো না।
– পরে সব বলবো এখন তো একটু চুপ কর। এখন তো তিশার এনগেজমেন্ট পরে রাতে তোকে সবকিছু বলবো।
– আচ্ছা।

সবার চোখ এড়িয়ে গেলেও তুহার চোখ এড়িয়ে গেলো না কথার হাসির আড়ালে থাকা ফ্যাকাশে মুখটা। কিন্তু কেন? কথা কি তাহলে ভালো নেয় কোনো কারনে!

#চলবে…