#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_৯
#Jechi_Jahan
আমি রুমে এসে দেখি জোবান আমার বইপত্র সব এলোমেলো করে রেখেছে।এলেমেলো করে রেখেছে বললে ভুল হবে,,কি জানি খুঁজছে।আমি ওনার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করি।
আমি-কি করছেন???
জোবান-কি করছি দেখছোনা।
আমি-দেখছি,,কিন্তু বই এ কি খুঁজচ্ছেন???
জোবান-লাভ লেটার।
আমি-আপনি দিয়েছিলেন???(ওনার পাশে বসে)
জোবান-আমি না,,,অন্য কেও দিয়েছে কিনা দেখছি।
আমি-অন্য কেও মানে???
জোবান-আজকে ভার্সিটিতে গিয়েছো,,,কেও হয়তো তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছে।আর পছন্দ করে তোমার ব্যাগে একটা লাভ লেটার দিয়ে দিলো।
আমি-আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন???
জোবান-আরে দূর সন্দেহ কেনো করবো।
আমি-সন্দেহ না করলে আমার ব্যাগ চেক করতেন না।শুনুন,,,যদি এমন কিছু হয় আমি নিজে এসে আপনাকে বলবো।আপনার এসব নিয়ে খোঁজ করতে হবেনা।(বলে ওনার পাশে থেকে উঠে গেলাম)
জোবান-রাগ করেছো বুঝি???
আমি-আমি রাগ করলেও কি না করলেও কি।আপনি তো আর আমাকে ভালবাসেন না।যে আমার রাগ করা নিয়ে আপনার কিছু আসবে যাবে।
জোবান-তা ঠিক,,,যে আমি তোমাকে ভালোবাসিনা।
কিন্তু একদিন না একদিন তো বাসবোই তাই না।
আমি-কচু ভালোবাসবেন।(বলে শুয়ে পরলাম)
আমি শোয়ার কিছুক্ষণ পরে উনি আমার বইগুলো সব গুছিয়ে রেখে দিলেন।আর আমার পাশে শুয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলেন।
সকালেঃ-
আমি ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরে ছাদে চলে এলাম।বাড়ীতে থাকতে আমি আর শিরিন সকালে ছাদে আসতাম আর গল্প করতাম।আজ আমি একা ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর কেও আমার কাঁধে হাত রাখে।আমি চমকে উঠে পেছনে ফিরে দেখি জেরিন আপু দাঁড়িয়ে আছে।
আমি-আপু তুমি কখন এলে??
জেরিন-তুমি যখন এসেছো।
আমি-কই,,,আমার পাশে তো দেখলাম না।
জেরিন-আমি নিচে ছিলাম,,তোমাকে ছাদে আসতে দেখেই আমি সহ এলাম।
আমি-ওহ,,,,,
জেরিন-আচ্ছা ভাবী তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি??
আমি-আপু তোমাকে বলেছিনা আমাকে ভাবী ডেকোনা।তুমি আমার বড় আর আমি তোমার ছোট।তাও তুমি ভাবীই কেনো ডাকো।
জেরিন-আচ্ছা সরি,,,তো শিশির তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
আমি-করো।
জেরিন-তোমার আর ভাইয়ার মাঝে সব ঠিক আছে তো??
আমি- আলহামদুলিল্লাহ ঠিক আছে।
জেরিন-সত্যি বলছো তো???
আমি-হুম।
জেরিন-আসলে আমি আজকে চলে যাবো,,,তাই তোমাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে নিলাম।
আমি-কি!!!চলে যাবে?
জেরিন-হুম,,,কালকে আমার শ্বাশুড়ি ফোন দিয়েছিলো।বলেছে আমি যেনো আজকে চলে যাই।
আমি-তুমি চলে গেলে তো আমি একা হয়ে যাবো।তুমি আর কিছু দিন থাকো না প্লিজ।
জেরিন-জানো আমি এখানে কতদিন ছিলাম।পুরো তিন মাস আর বাকি দিনগুলো তো বাদই দিলাম।
আমি-তিন মাস থাকতে দিয়েছে তো এই কয়দিন থাকতে দিবেনা।
জেরিন-আরে আমি আবার আসবো তো।আর তাছাড়া তুমি তো এখন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছো।তোমার সময় এমনি এমনিই চলে যাবে।
আমি-ঠিক আছে।
জেরিন-চলো,,আজ আমরা দুজন একসাথে নাস্তা বানাই।
আমি-চলো।
আমি আর জেরিন আপু সকালে একসাথে নাস্তা বানাই।তারপর সবাই একসাথে নাস্তা করলে যে যার কাজে চলে যাই।আমি চলে যাই ভার্সিটিতে।আজ জোবানের দেরিতে অফিস তাই আমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসেনি।আর আমি একাই আসি ভার্সিটিতে।
লিনা-কিরে এত দেরি করলি ভার্সিটিতে আসতে?
আমি-তুই আমাকে ফোন দিয়ে বলবি না যে তুই ভার্সিটিতে চলে এসেছিস।
লিনা-কেনো কি হয়েছে???
আমি-কি হয়েছে মানে,,,আমি তোর চাচার বাসায় গিয়েছিলাম তোকে আনার জন্য।কিন্তু তোর চাচী বলেছিলো তুই নাকি ভার্সিটিতে চলে গেছিস।
লিনা-ওহ সরি।
আমি-হুম,,আচ্ছা তুই ভার্সিটিতে এসেছিস কতক্ষণ হলো।
লিনা-এই ১৫-২০ মিনিট হবে।
আমি-ওহ ক্লাসের তো এখনও আরো দেরি আছে??
লিনা-হুম।
আমি-চল,,আশেপাশে একটু হাঁটি।
লিনা-চল।
আমি আর লিনা ভার্সিটির আশেপাশে হেঁটে হেঁটে দেখতে লাগলাম।হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সামনে থেকে আসাবএকটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খাই।ধাক্কা সামলা তে না পেরে মেয়েটা একটু দূরে সরে যায়।আমি তাকিয়ে দেখি মেয়েটা আশিকের বান্ধবী মানে অর্না।
অর্ণা-ওই,,,চোখ কোথায় রেখে হাঁটো হ্যাঁ।(রেগে)
আমি-সরি,,,
অর্ণা-ওই,,,তুমি কি ভেবেছো সরি বললেই তুমি ক্ষমা পেয়ে যাবে।(রেগে)
আমি-আপু আমি খেয়াল করিনি।আর তাছাড়া আপনিই তো তাড়াহুড়ো করে আসছিলেন।
অর্ণা-ওই,,,এখন তুমি আমার দোষ দিবে?
আমি-আমি আপনার দোষ দিচ্ছি না।আমি বলতে চাচ্ছি আপনি তাড়াহুড়ো করে আসায় আমরা আপনাকে খেয়াল করিনি।
অর্ণা-তুমি আমার মুখের উপর কথা বলছো।ওয়েট,, তোমাকে এর জন্য পস্তাতে হবে।(বলে কাকে যােনো ফোন করলো)
——
আশিক আর ওর বাকি তিন বন্ধু বান্ধবী একসাথে বসে গল্প করছে।হঠাৎ আশিকের ফোনে একটা কল এলো।আশিক কলটা রিসিভ করে বললো।
আশিক-হ্যাঁ অর্ণা বল।
অর্ণা-আশিক তুই এখন কই??
আশিক-কই মানে???যেখানে সবসময় আড্ডা দিই সেখানে।কিন্তু তুই কোথায় বল তো??
অর্ণা-তুই একটু ভার্সিটির সামনে আয়।
আশিক-কেনো???
অর্ণা-কারণ আমি এখানে আছি তাই।
আশিক-ওই তোর কি হয়েছে বলতো,,,এভাবে কথা বলছিস কেনো??
অর্ণা-তুই আসবি কি না???
আশিক-আচ্ছা আসছি।
এই বলে আশিক ওর বন্ধু বান্ধবী দের নিয়ে ভার্সিটি এর সামনে গেলো।ওখানে গিয়ে দেখলো অর্ণা আর ওর সাথে কালকের ওই মেয়ে দুইটা।
আশিক-কিরে কি হয়েছে???
অর্ণা-কি হয়নি সেটা বল।
আবির-কি হয়েছে খোলাখুলি বলবি???
অর্ণা-কিছুক্ষণ আগে এই মেয়েটা আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েছে।আর আমি যখন বলেছি দেখে শুনে চলতে পারোনা ওমনি আমার সাথে ঝগড়া লেগে গেলো।
আমি-আপু আপনি মিথ্যা কথা কেনো বলছেন।আমি কখন আপনার সাথে ঝগড়া করলাম।
অর্ণা-দেখেছিস আবার আমার সাথে কেমন করে কথা বলছে।
আমি-ভাইয়া(আশিককে)আমি ওনাকে খেয়াল করিনি।আর উনি খুব জোরে জোরে হাঁটছিলেন যার জন্য আমরা ব্যালেন্সও হারিয়ে ফেলি।
আশিক-অর্ণা,,,এতে কিন্তু তোর দোষ।
অর্ণা-কি???
আশিক-হুম,,ও তো বলেছে ও খেয়াল করেনি তাও তুই এমন কেনো করছিস।
অর্ণা-সিরিআসলি আশিক,,,ও তোর বেষ্টফ্রেন্ডকে ধাক্কা দিয়েছে।আর তুই এটা এত নরমালি নিয়ে নিচ্ছিস।
আশিক-তো আর কি করবো,,,এতে তো আমি ওর কোনো দোষই দেখছি না।যাই গে,,,এই মেয়ে তোমাদের নাম কি??(শিশিরকে)
আমি-আমি শিশির রহমান আর ও লিনা হক।
আশিক-ওহ,,,সুন্দর নাম।
লিনা-ওই শিশির রহমান কি??শিশির চৌধুরী।
আমি-ওহ সরি,,,শিশির চৌধুরী।(জোবানের দেওয়া শর্তটা ভুলেই গেছিলাম)
আশিক-মাত্র না রহমান বললে।
আমি-ভুলে ভুলে।
আশিক-ওকে,,,যাও তোমরা ক্লাস করতে যাও।
আমি-জ্বি(আমরা চলে এলাম)
অর্ণা-আশিক তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড এটা আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।মেয়েটাকে তুই কিছুই বললি না উল্টো চলে যেতে বললি।
লিজা-অর্ণা তুই এমন করছিস কেনো???এটা একটা নরমাল ব্যাপার।
অর্ণা-এটা কেমন করে নরমাল হলো।ওই থার্ড ক্লাস মেয়েটা আমায় ধাক্কা দিল আর তোরা,,,,
আশিক-অর্ণা রিলাক্স,,,তুই শুধু দেখ আমি কি করি।
(বলে চলে গেল)
আমি আর লিনা সবগুলো ক্লাস শেষ করে নিচে এলাম।নিচে আসার সাথে সাথে আমার ফোনে জোবানের কল এলো।জোবানের কল দেখে লিনা আমাকে ধাক্কা বলে উঠলো।
লিনা-বাহ বউকে তো খুব মিস করছে দেখছি।
আমি-চুপ থাকতো।
লিনা-আচ্ছা ফোন ধর।
আমি-হ্যালো।(ফোন রিসিভ করে)
জোবান-হুম,,শিশির তুমি কই??
আমি-ভার্সিটিতে।(গেটের সামনে যেতে যেতে বলছি)
জোবান-এখনো ছুটি হয় নাই?
আমি-এইতো,,,কিছুক্ষণ আগে ছুটি হলো।
জোবান-তো এখনো ভার্সিটিতে কি করছো???
আমি-কিছুনা,,,মাত্র বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলাম।
জোবান-ওহ,,তো যার জন্য ফোন দিলাম।শুনো…..
আমি-হুম।
জোবান-আমি আজকেও তোমায়,,,,,,,,(ওনার পুরো কথাটা শুনার আগেই আমি গেটের সামনে পরে গেলাম।পরে গেলাম বললেও ভুল হবে আসলে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আশিক আমাকে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছে।)
আমি-আউ।(হাত ছিলে রক্ত বের হচ্ছে সাথে ব্যাথাও করছে।ওদিকে নিচে পড়ে থাকা ফোন থেকে জোবান এর আওয়াজ এখনো আসছে।
জোবান-হ্যালো শিশির কি হয়েছে?কথা বলছো না কেনো?হ্যালো,,(আর কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিলাম)
আমি-লিনা,,,আমাকে উঠতে একটু সাহায্য করতো।
আমার কথায় লিনা আমাকে নিচে থেকে তুলে দাঁড় করালো।আমি অবাক দৃষ্টিতে আশিকের দিকে তাকিয়ে আছি।আশিক আমার এসে একটা বাঁকা হাসি দিলো।
আশিক-আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডকে ধাক্কা দিয়েছো,ওর সাথে ঝগড়া করেছো,ওর মুখের উপর কথা বলেছো ফল তো ভোগ করতেই হতো।
আমি-আমি তখনও বলেছিলাম এতে আমার কোনো দোষ ছিলো না।
আশিক-যাক গে,,,আমার শাস্তি দেওয়ার ছিলো আমি দিয়েছি এখন তুমি যেতে পারো।
আশেপাশের লোকজন কেমন করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আবার গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।কিছুক্ষণ পর আমার জন্য গাড়ী এলো।গাড়ী থেকে ডাইবার নেমে আমাকে বললো।
ডাইবার-ম্যাডাম,,,স্যার নাকি আজকেও আসতে পারবে না।তাই আমাকে বলেছে আপনাকে নিয়ে যেতে।
আমি-চলুন।(বলে আমি আর লিনা গাড়ীতে উঠে বসলাম।গাড়ীর জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখি আশিক আমার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে।)
যখন বাড়ীতে আসি তখন আর জেরিন আপুকে দেখিনা।মনে হয় বমার আসার আগেই চলে গেছে।দুপুর গেলো বিকাল গেলো রাত হলো তবুও জোবান আর আসলো না।এর মাঝে আমি শিরিন আর শান্তর সাথেই গল্প করে সময় কাটালাম।বেশ রাত করে উঠে বাড়িতে ফেরেন।আমি তখন ভার্সিটির পড়া শেষ করে মাত্র উঠলাম।উনি রুমে এসে কিছু না বলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেন।
-চলবে,,