তোর অনুরাগে পর্ব-০৩

0
367

#তোর অনুরাগে
#তানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_৩

___________

প্রিন্সিপালঃ আর কয়েকদিন পরে কলেজের অনুষ্ঠান। আমি চাই তোমরা দুজন ও তোমাদের টিম সবকিছুর দায়িত্ব নিক।

আহসান একটু অবাক হলো। আদ্রিকা নতুন স্টুডেন্ট তাও স্যার ওনাকে এত বড়ো একটা কাজের দায়িত্ব দিচ্ছেন কেন?

আদ্রিকা প্রিন্সিপাল স্যার এর দিকে কটমট করে তাকালো।স্যার ওর তাকানো কে পাত্তা না দিয়ে বললোঃ তোমাদের কাজগুলো মাথায় রেখো। আর সবকিছু সামলে নিয়ো।তোমরা এবার যাও।

আহসান বেরিয়ে গেলো। আদ্রিকা রাগী একটা লুক দিয়ে গটগট করে চলে গেলো।আহসান বাইরে আসতেই ওর বন্ধুরা ওকে চেপে ধরলো।

আহসানঃ বলছি চল।

ওরা সকলে চলে গেলো। আদ্রিকা বের হয়ে আসতেই দেখলো ওর মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে। ওরা বুঝলে ভালো কিছু হয়নি বা এমন কিছু হয়েছে যেটা আদ্রিকার পছন্দ হয়নি।তাই আর ওরা কিছু কথা বাড়ালো না।

রাত্রিবেলা…

আদ্রিকা খাবার টেবিলে গম্ভীর হয়ে বসে আছে। অর্ক( আদ্রিকার দাদা) আদ্রিকার পাশে বসে বললেনঃ কি হয়েছে আমার পাখির মন খারাপ কেন?

আদ্রিকা কিছুই না বলে চুপচাপ বসে আছে। ওর মা বললোঃ ওই বাবু তুই আর ওকে মাথায় তুলিস না। এমনিতেই মেয়েটা একেবারে যা তা হয়ে গেছে।

আদ্রিকা ইনোসেন্ট ফেস করে ওর মায়ের দিকে তাকালো।ওর মা ওকে ধমক দিয়ে বললোঃ বেশি নাটক করে বলে ফেল না কি হয়েছে।

আদ্রিকাঃ মম মিষ্টার রায়জাদা আমাকে নিয়ে মাতামাতি করা কবে বন্ধ করবে।

মিষ্টার রায়জাদা এর নাম শুনেই আনিকা ( আদ্রিকার মম) ও অর্ক চমকে উঠলো।

আনিকাঃ হঠাৎ করে কি হলো ওনার নাম তোর মুখে।

আদ্রিকাঃ কিছু না বাদ দাও। তবে দাভাই ওনাকে বলে দিস আমার ব্যাপারে নাক গলাতে গেলে আমি কিন্তু ওনাকে ছেড়ে দেবো না।

আদ্রিকা কিছু না খেয়েই উঠে চলে গেলো।আনিকা অর্কের দিকে তাকিয়ে বললোঃ এই মেয়েটাকে নিয়েও পারিনা।

অর্ক হেসে বললোঃ আমার বোনটা যে বড্ড বেশি অভিমানী। একদিন দেখবে সবটুকু অভিমান ভেঙ্গে গেছে।

আনিকাঃ তাই যেন হয়। আমি আর তোদের কান্ড সহ্য করতে পারি না।

অর্কঃ মম ড্যাডকে খুব মিস করো তাই না।

আনিকা নিজের ছেলের দিকে তাকালেন। অর্ক পুরোপুরি ওনার স্বামীর মতো।

অর্কঃ আমি জানি মম তুমি ঠিক কতটা ড্যাডকে মিস করো। আর তুমি তো আমাদের জন্যই বাবাই এর হাত ধরেছিলে।

আনিকাঃ কিন্তু এই কথাটা তো তোর আদরের বোন বোঝে না।

অর্কঃ আচ্ছা মম পাখির কি রাগ,অভিমান করাটা স্বাভাবিক না।

আনিকা চুপ করে গেলেন। কি বলবে উত্তরে সেটা ওনার জানা নেয়।

অর্কঃ আমি জানি মম হয়তো এখানে তোমার বা বাবাই এর কোনো দোষ নেয় কিন্তু পাখি তো এসবের কিছুই জানে না। ওহ তো ছোট আর ওর ছোট মনে এসব জিনিস গুলো আটকে আছে তার থেকেই ওর বাবাই এর উপরে এতটা রাগ অভিমান ক্ষোভ।

আনিকাঃ সবই বুঝি কিন্তু আমি কি করবো বল আমি ওহ মানুষ আমার ওহ তো ইচ্ছা করে সবাইকে নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করতে। কিন্তু এই অশান্তি আমার আর ভালো লাগছে না।

অর্কঃ ধৈর্য্য ধর। পাখি একদিন সবটা বুঝতে পারবে।

আনিকাঃ কিন্তু সহ্য করতে পারবে তো।

অর্ক চুপ করে গেলো। অর্ক জানে তার বোনের মনটা খুব নরম। এই ধাক্কাটা সহ্য করার ক্ষমতা ওর নেয়। কিন্তু ভাগ্য তো একদিন এই ধাক্কার মুখোমুখি ওকে করবেই তখন কি হবে।

২ দিন পর..

আদ্রিকারা পাঁচজন যথাসময়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো। আদ্রিকাদের পরনে আজকে ড্রেস।

প্রত্যেক দিনই ওরা সকলকে চমকে দেয়। ওদের বন্ধুত্ব দেখে সকলেই মুগ্ধ।

আহসানরা আড্ডা দিচ্ছে। আদ্রিকা আর ওর বন্ধুরা ওদের গ্রুপের সামনে এসে দাঁড়ালো।

আদ্রিকাঃ আপনাকে প্রিন্সিপাল স্যার একটা কাজ দিয়েছে। আপনি সেই কাজটা না করে এখানে আড্ডা দিচ্ছেন।

আহসান আদ্রিকার কথা শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে থমকে গেলো। সাদা রঙের টি-শার্ট, ব্ল্যাক জিন্স। চুল গুলো হাত খোঁপা করা। ঠোঁটে হালকা করে পিংক কালারের লিপস্টিক দেওয়া তাতেই অপরূপ লাগছে আদ্রিকাকে।

আদ্রিকা আহসানের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললোঃ হ্যালো আছেন কি।

আহসানঃ হুম বলো।

আদ্রিকাঃ বলছি প্ল্যান হয়ে গেছে অনুষ্ঠানের।

আহসানঃ না।

আদ্রিকা রাগী চোখে তাকিয়ে বললোঃ তা করবেন কেন। মেয়েদের র্যাগিং করার সময় সেটা খুব ভালো করে করতে পারেন।

আহসানঃ এই দ্যাখো উল্টো পাল্টা কথা বলবে না। তুমি আমাকে দেখেছো কখনো র্যাগিং করতে।

আদ্রিকা কিছু একটা কথা বলতে যাচ্ছিল তখন আহান থামিয়ে দিয়ে বললোঃ এই তোরা ঝগড়া বন্ধ কর। নাহলে দুটো কেই মারবো ধরে।

আদ্রিকা কাঁদো কাঁদো গলায় বললঃ তুমি এটা আমাকে বলতে পারলে। তোমার সাথে আমার কথা নেয় যাও।

আদ্রিকার এমন আচরনে সকলে অবাক হয়ে গেলো। আহসান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে আদ্রিকার দিকে।

আহান হেসে উঠে বললোঃ নাটক বন্ধ কর বইন।

আদ্রিকা মুখটাকে গম্ভীর করে বললোঃ আহান দা এটা কিন্তু ঠিক না।

আহান আদ্রিকার মাথায় চাঁটি মেরে বললোঃ কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল সেটা আমাকে শেখাতে আসিস না।‌ঝামেলা করিস না কোনো।

আদ্রিকাঃ আমি ঝামেলা করি এটা বলতে পারলে তুমি।

আহানঃ হ্যা তুমি খুব ভালো মেয়ে তো আমার জানা আছে।

আহসান আর চুপ করে থাকতে পারলো না। কথার মাঝে বললোঃ আহান তুই ওকে চিনিস।

আহান কিছু বলতে যাবে। তখন আদ্রিকা বললোঃ একই ভার্সিটিতে পড়ি। উনি আমার সিনিয়র দাদা ওনাকে চিনবো না।এসব কথা বাদ দিন। অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্ল্যান করতে হবে।

নীলিঃ আদ্রি তুই কি ডান্স করবি।

আদ্রিকা খেয়ে ফেলবো এরকম একটা লুক নিয়ে নীলির দিকে তাকালো।

নীলি মেকি হাসি দিয়ে মুখটা কাঁচুমাচু করে ফেললো।

রোশানঃ হেই তুমি ডান্স করতে পারো।

আদ্রিকা দাঁত বের করে বললোঃ আমি শুধু না আমাদের গ্রুপের সকলেই ভালো ডান্স করতে পারে। আর সবথেকে ভালো পারে ওহ( নীলি কে দেখিয়ে বললো।)

আদ্রিকার কথা শুনে নীলির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।

সাদ্দামঃ তাহলে তো ভালোই হলো। তোমার নাচে অংশ গ্রহণ করবে আমাদের সাথে।

মারিয়াঃ আপনাদের সাথে মানে?

রোশানঃ আমাদের সাথে ডান্স কম্পিটিশন হবে তোমাদের।

আদ্রিকারা চমকে উঠলো।

মাহিয়াঃ কম্পিটিশন।

আহসান ওদের দিকে একবার তাকিয়ে বললোঃ আজ পর্যন্ত কেউ আমাদের নাচে হারাতে পারেনি আর এরা।

আদ্রিকা আহসানের কথা শুনে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললোঃ সেটা তো সময়ই বলবে। আমরা সকলেই গ্রুপ ডান্সে নাম দেবো।

আহসান হাসলো।

আসতে আসতে চলে আসলো সেই দিনটা। আগামী কাল কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠান। জোড় কদমে অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। আহসান আর আদ্রিকার গ্রুপ মিলে মিশে কাজ করছে আবার কখনো ঝামেলা লেগে যাচ্ছে এভাবেই চলছে কাজ।

#চলবে…