তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব-০৯

0
2658

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana (Saba)
#পর্ব_৯
–“দিশা! তুমি এখানে। মানে কবে ব্যাক করলে। খানিকটা হেসে বলে ওঠে সাঁঝ।
.
–“এই তো কিছুক্ষণ মাত্র। আর এয়ারপোর্ট থেকে সোজা তোমার কাছে চলে আসলাম। দিশা হেসে দু হাত দিয়ে সাঁঝ এর গলায় জড়িয়ে রেখে বলে ওঠে।
.
–“আই মিস ইউ বেব। সাঁঝ কে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা দিয়ে বলে ওঠে দিশা।
.
–“ওকে ওকে । সাঁঝ হেসে বলে ওঠে।
.
. এদিকে বেলার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। বেদ নিশান ওম রুহি অসহায় মুখ নিয়ে বেলার দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে সারা আর সারিফ বেলার চোখে পানি দেখে অবাক হয়ে যায়।
.
–“মিষ্টি ভাবি। কি হয়েছে তোমার তোমার চোখে পানি কেনো। সারা বলে ওঠে।
.
. এদিকে সারার কথা শুনে সাঁঝ পিছনে ঘোরে দিশা কে ছাড়িয়ে। অবাক হয়ে বেলার দিকে তাকায়। যেই মুখে এতক্ষণ আনন্দ খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছিলো। এখন সেই মুখে ফুটে আছে অসহ্য ব্যাথা বেদনা। যেটা দেখে সাঁঝ এর বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে ওঠে।
.
–“ভাবি কি হয়েছে তোমার? সারিফ বলে ওঠে।
.
–” কিছু না। তোমরা অযথা চিন্তা করছো। আসলে আমার হাতে চিলি পাউডার এর গুড়ো লেগেছিল আর সেটা ভুল করে চোখে চলে গেছে। বেলা মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলে ওঠে।
.
–“বেলা। আর ইউ ওকে ।দেখে কাজ করবে তো। এত কেয়ারলেস কেনো তুমি সাঁঝ বেলার দিকে আসতে আসতে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ বেলার কাছে এসে হাত দিয়ে বেলা কে ধরতে গেলে বেলা সরে দাঁড়ায়।
.
–” বেদ নিশান ওম রুহি চল আমাদের প্র্যাক্টিস দেরি হয়ে যাচ্ছে। বেলা একটা তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিয়ে সাঁঝ এর দিকে না তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
. এদিকে বেদ নিশান এরা জানে বেলার কি হয়েছে। তারা এখন এটা ও জানে যে বেলা এই মুহূর্তে প্রচুর পরিমাণে ভেঙে পড়েছে।
.
–” হ্যাঁ হ্যাঁ। আমাদের দেরি হচ্ছে চল। বেদ তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে।
.
–“আরে এটা বেলা না। দিশা হেসে বলে ওঠে।
.
–“হ্যাঁ এটাই বেলা। আর বেলা এ হলো দিশা মির্জা এস.আর গ্রুপ এর ন্যাশনাল ট্রেজার। সুপার মডেল। আর ওর নিজের একটা ফ্যাশন লেভেল আছে যা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির টপে আছে। আর হ্যাঁ পরেশ আঙ্কেল এর মেয়ে আর আমার ফ্রেন্ড। সাঁঝ হেসে দিশা কে দেখিয়ে বলে ওঠে।
.
–“হে বেলা। বলে দিশা বেলা কে জড়িয়ে ধরে।
. বেলা কোনো কথা না বলে শুধু বিষাদময় একটা হাসি দেয়।
.
–“হে সারিফ সারা কেমন আছো তোমরা। দিশা বলে ওঠে।
.
–“অনেক ভালো। সারা মিষ্টি হেসে বলে ওঠে।
.
–” সাঁঝ তুমি অফিসে যাচ্ছ তো চলো আমিও যাব। দিশা হেসে বলে ওঠে।
.
–” হুম চল । বলেই সাঁঝ আর দিশা বেরিয়ে যায়।
.
. এদিকে পিছনে দাঁড়ানো বেলা ওদের যাওয়া দেখতে থাকে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। এতক্ষণ আটকে রাখলে ও এখন অঝোর ধারায় গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। বেলা কোনো কথা না বলে মিউজিক রুমে চলে যায়। ওর এখন নিজেকে শান্ত করার প্রয়োজন।
.
. এদিকে বেদ নিশান ওম রুহি ও পিছন পিছন ছুটে যায়। এই মুহূর্তে তারা বেলা কে একা ছাড়তে চাইছে না। সারা আর সারিফ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে হতভম্বের মত যা হচ্ছে সব ওদের মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। ওরা দাঁড়িয়ে থেকে ওদের পিছনে যায়।
.
. মিউজিক রুমে আসতে দেখে দেখে চেয়ারে বসে ইলেকট্রনিক গিটার নিয়ে হার্ড রক টন প্লে করছে। গিটার এর আওয়াজ পুরো রুমের চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেলা চোখ বন্ধ করে আছে। রুমের এক পাশে দাঁড়িয়ে বেদ নিশান রুহি ওম অসহায় হয়ে বেলার দিকে তাকিয়ে আছে। বেলা যখন খুব কষ্ট পায় যখন নিজেকে আর সামলাতে পারে না তখন ও মিউজিক আর ডান্স এর মধ্যে ডুবে যায় তখন হার্ড থেকে হার্ড মিউজিক প্লে করতে থাকে।আর ডান্স ও ঠিক পুরো উন্মত্ত হয়ে থাকে তখন। সারা আর সারিফ। মুখে হাসি নিয়ে বেলার গিটার বাজানো দেখছে। বেলা যে এত ধরনের গিটার প্লে করতে পারে তারা জানত না প্রথমে একটু অবাক হয়েছিলো বটে।
.
. বেলা গিটার বাজাতে বাজাতে চোখ বন্ধ করে আছে। চোখের সামনে চলে আসছে কিছু পুরোনো বিষাক্ত স্মৃতির দৃশ্য পট। আসতে আসতে যেনো বেলার দম আটকে আসছে। শেষে আর না পেরে গিটার এর তার টেনে ছিড়ে ফেলে। গিটার টা কে পাশে ছুড়ে ফেলে। চোখ খুলে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। বেলার হাত থেকে রক্ত পড়ছে। গিটার এর তারে জোরে টান দেয়ার ফলে হাত কেটে গেছে। এদিকে বেদ নিশান বেলার কাছে ছুটে যেতে নিলে বেলা পাশ কেটে বেরিয়ে যায়।
.
.আর বাকিরা সব এখনও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর তারাও ছুটে যায়। বাইরে এসে দেখে বেলা টেবিলে বসে খাচ্ছে। চোখ মুখ লাল রক্তের মত হয়ে গেছে চোখে পানি টলমল করছে। কিন্তু বেলা সেটা কে পড়তে দিচ্ছে না।
.
–“আরে মিষ্টি ভাবি তুমি ভাই এর রাখা খাবার টা খাচ্ছ। বাহ কত ভালোবাসা। সারা হেসে বলে ওঠে।
.
–” ওহহো ভাবি তোমার খিদে পেয়েছিল তাই তুমি কান্না করছিলে। সারিফ হেসে বলে ওঠে।
.
. বেলা কোনো কথা না বলে চুপ চাপ খেয়ে যাচ্ছে। এদিকে বেদ নিশান অবাক হয়ে দেখছে বেলার লাল হয়ে ফুলে যাওয়া চোখ মুখের দিকে।
–” বেলা খাবার টা কি খুব ঝাল নাকি। রুহি বলে ওঠে।
.
–“হোয়াট দ্য হেল বেলা। তুই এই খাবার কি করে খাচ্ছিস এতে তো প্রচুর ঝাল। বেদ চিৎকার করে বলে ওঠে।
.
–“হোয়াট! বেলা এটা তুই কি করে করতে পারলি। তুই জানিস তোর ঝাল খাওয়া বারণ। খেলে তোর প্রবলেম শুরু হয়। তার পর ও কি করে। রুহি চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে।
.
–“নিশান জলদি মেডিসিন এর ব্যবস্থা কর। বেদ নিশান কে বলে।
.
–“ইয়েস । আমি এক্ষুনি আসছি। বলে নিশান ছুটে বেরিয়ে যায়।
.
. এদিকে সারা সারিফ অবাক হয়ে দেখছে তাদের মাথায় কিছু ঢুকছে না। কোথায় থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছে না। এদিকে বেলার থেকে খাবার এর প্লেট টেনে সরিয়ে নেয়। বেলার চোখ থেকে এবার পানি গড়িয়ে পড়ছে চোখ ভয়ঙ্কর ভাবে লাল হয়ে ফুলে গেছে। বেদ রুহি ওম দু দিকে থেকে বেলা কে জড়িয়ে রেখেছে।
.
. বেলা আসতে আসতে নিসতেজ হয়ে পড়ছে। চোখ দুটো বুঝে আসছে। আসতে আসতে ঢোলে পড়ে বেলা।

——————-

–“বেব । আজ অনেক দিন পর এখানে এসে সব কিছু আবার নতুন লাগছে। আমাদের কত স্মৃতি আছে তাই না দিশা পিছন থেকে সাঁঝ এর গলায় হাত রেখে বলে ওঠে।
.
–” হুম ঠিক তাই। এখন তুমি নিজের কেবিনে যাও। আমার কিছু ইমপটেন্ট কাজ পেন্ডিং আছে সেগুলো করতে হবে। সাঁঝ নিজের গলায় থেকে দিশার হাত ছাড়িয়ে বলে ওঠে।
.
–” ইয়ার সাঁঝ ।চলো না আজ আমরা আগের মত ঘুরতে যাই। শুধু তুমি আর আমি। দিশা আবার ও সাঁঝ এর ঘাড়ে মুখ রেখে পিছন থেকে জড়িয়ে বলে ওঠে।
.
–” আমার কাজ আছে দিশা। আর প্লিজ এটা আমার অফিস। তাই সোজা হয়ে দাঁড়াও। সাঁঝ বলে ওঠে।
.
–“বেবি । দিশা কিছু বলতে নিলে সাঁঝ এর ফোন বেজে ওঠে।
.
. সাঁঝ এর ফোনে সারিফ নাম সো হতেই সাঁঝ চমকে ওঠে। অজানা কোনো কারণে বুকের মধ্যে ব্যাথা হতে শুরু করে। তাড়াতাড়ি করে ফোন কানে ধরতে ওপারে থেকে ভেসে আসে সারিফ উদ্বিগ্ন গলা।
.
–” ভাই ভাবি।
.
–“কি হয়েছে সারিফ। সাঁঝ চিন্তা ভরা কন্ঠে বলে ওঠে।
.
–“ভাই ভাবি সেন্সলেস হয়ে গেছে আধঘণ্টা হয়ে গেছে। তারপর একটু আগের বেলার খাবার খাওয়ার কথা বলে ওঠে সারিফ।
.
–” হোয়াট দ্য হেল সারিফ। এতক্ষণ পর আমাকে জানাচ্ছিস। আর তোরা কি করছিলিস ওকে কেনো বাধা দিস নি। সাঁঝ রাগে ভয়ে চিন্তায় চিৎকার করে বলে ওঠে।
.
.এদিকে সাঁঝ এর এমন চিৎকার শুনে দিশা সাঁঝ এর কাছে হাত জড়িয়ে ধরতে সাঁঝ ঝটকা দিয়ে দিশার হাত সরিয়ে দেয়। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
.
. এদিকে রুমের মধ্যে মেঝেতে পড়ে আছে দিশা। সাঁঝ ওকে এত জোরে ধাক্কা দিয়েছে যে তাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে পড়ে যায়। রাগী চোখে সাঁঝ এর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর হঠাৎ বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। সাথে সাথে সে ও ছুটে বেরিয়ে যায়।

————-

–শাওয়ার এর নিচে দাঁড়িয়ে আছে। পিঠ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। পিছন থেকে এই দৃশ্য যতো দেখছে নিজের ইচ্ছা বেড়ে যাচ্ছে। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারে না। নিজের ড্রেস খুলে পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে নেয়।
.
–“আই মিস ইউ বেবি। তোমার কাছে আসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আর এম।
.
–” তাই নাকি। তাহলে সাঁঝ এর কি হবে। পিছন থেকে হ্যাচকা টানে সামনে ঘুরিয়ে এনে কোমর ধরে দেয়ালের সাথে চেপে বলে ওঠে।
.
–“রনি বেবি। সাঁঝ কে তো আমার চাই। প্রতিশোধ নিতে। কিন্তু এখন আমার তোমাকে চাই। বলেই ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে। দুজনে মেতে বন্য শরীরের প্রেমে। ডুবে যায় একে অপরের মাঝে। শরীরি খেলায়। বেশ কিছুক্ষণ মজা নেয়ার পর। ঠোঁট থেকে ঠোঁট সরিয়ে বলে ওঠে রনি।
.
–” তোমার কাজ কতদূর হল তানভি । সব রেডি তো। রনি বলে ওঠে।
.
–“কাজ। হা হা হা। সেটা তো শুরু হয়ে গেছে বেবি। তানভি বাঁকা হেসে বলে ওঠে। তার পর চোখ মুখ শক্ত করে আবার ও বলে ওঠে। আমাকে ইনসাল্ট করা। আমাকে রিজেক্ট করেছিলো ওই সাঁঝ রওশন। তাই ওকে তো এবার শেষ হতে হবে।
সব প্ল্যান মত এগিয়ে যাচ্ছে বেবি। শুধু সময়ের অপেক্ষা। তারপর আমি ও দেখি ওই সাঁঝ কি ভাবে নিজেকে এই তানভির মায়া জাল থেকে বেরোতে পারে।
.
–“ইয়েস ওকে তো আমি শেষ হতে দেখতে চাই ওর জন্য আমি বেলা কে পাই নি। ওর জন্য আমি লিডারশিপ হারিয়েছি। সবার সামনে আমাকে ও অপমান করেছে সেই অপমান এর বদলা তো আমি নেবো। সব হিসেব পাই টু পাই মিলিয়ে নেবো। এই আর এম রনি মেহতা কখন ও নিজের অপমান ভোলে না। আমার শিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। ওকে তো আমি শেষ করেই ছাড়ব। রনি দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
.
–“বেলা কে পাওয়ার জন্য ওর মামী অর্থাৎ ওর সো-কল্ড মা কে টাকার লোভ দেখিয়ে ওকে আমার করে নিতে চেয়েছিলাম। টাকা দিয়ে ওই মহিলা কে বশ ও করে নিয়েছিলাম কিন্তু শেষ মুহূর্তে ওই সাঁঝ এসে সব কিছু গুলিয়ে দেয়। বেলা কে বিয়ে করে নেয়। আমার শিকার কেড়ে নেয় ওই সাঁঝ রওশন। কিন্তু আমি এত সহজে মানব না। বেলা কে তো আমার চাই চাই। যে কোনও উপায়ে। রনি দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
.
.
.
. 💝💝💝
.
. চলবে…