তোর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-১৪

0
594

#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া🥀
১৪তম খন্ড
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

–কাল সকালে ছায়া আমার সাথে থাকবে।
–কিন্তু স্যার কিভাবে।
–সেটা আমি জানি,
আদনান ঢুলতে ঢুলতে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।
আর তার গার্ড রা যে যার কাজে।
,
,
,
ছায়াকে জড়িয়ে নির্ঝর এর ঘুমটা বেশ ভালোই হয়।
কিন্তু তার তো কাজে যেতেই হবে।
কাজে না গেলে ত হবে না।
নির্ঝর নিজের পরম শান্তির ঘুমটাকে বিসর্জন দিয়ে উঠতে না উঠতে ফোন কল,
–হ্যালো আসসালামু আলাইকুম,
–ওয়া আলাইকুম সালাম স্যার জলদি হসপিটালে আসুন এমারজেন্সি তে রুগি আসছে ভিশন বাজে অবস্থা।
–কি বলো কখন,
–স্যার মাত্র আপনি না আসলে ওনার চিকিৎসা করার সাহস কেউ নিতে চাচ্ছে না৷
–ওনাকে ওটিতে সিফট করো আসছি।
নির্ঝর জলদি সার্ট পরে বাইরে চলে আসে,
নির্ঝর সার্ট এর হাতা ফোল্ড করতে করতে গাড়ি স্টার্ট দেয় অন্য দিকে কিছু লোক তার বাড়িতে প্রবেশ করে।
নির্ঝর এতোই ব্যাস্ত হয়ে বেরিয়ে যায় যে দেখতেই পায় না।
ছায়া ঘুম ঘুম চোখ দুটো হালকা খুলে সামনে দেখে, হাত মাথার নিচে দিয়ে আরাম করে শুয়ে আছে কেউ সাদা সার্ট দেখে কিছু সময়ের জন্য তাকে নির্ঝর বলে মনে হলো।
কিন্তু হটাৎ হুস আসতে ছায়া লাফিয়ে উঠে পরে।
সম্পূর্ণ অচেনা একটা লোক তার সামনে শুয়ে আছে,
–কে আপনি (চিৎকার করে)
–উফ ছায়া এতো চিৎকার করে কথা বলো কেন আমি কি বয়রা নাকি।
–আপনি আমার নাম জানলেন কি করে আর এখানে কি করে এলেন।
নির্ঝর কই।
নির্ঝর।
মা
আপু।
ছায়া এক এক জন করে তাকছে আর লোকটা বিকট হাসি দিচ্ছে।
ছায়ার ভিশন ভয় হচ্ছে।
ছায়া জলদি খাট থেকে নিচে নামতে গেলে লোকটা ছায়ার হাত ধরে বসে,
–কোথায় যাচ্ছো ছায়া।
আর কেথাও যাবার জায়গা নাই আমার সাথে যেতে হবে তোমায়।
–কে আপনি ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন।
মা
আপু।।
ছায়ার চিৎকার শুনে লোকটা আরো জোরে জোরে হাসছে।
যেন ছায়ার চিৎকার শুনে লোকটার ভিশন ভালো লাগছে।
–চলো ছায়া চলো আমার সাথে।
ছায়ার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে আদনান।
ছায়া ভিশন ভাবে চিৎকার করছে কিন্তু কেউই বেরোলো না।
ছায়া ভিশন অবাক।
কি হচ্ছে তার সাথে।
ছায়ার অনেক চিৎকার শুনে লোকটা পেছন থেকে ছায়াকে একটা ইনজেকশন পুশ করলো।
হটাৎ ভিশন ব্যাথায় ছায়ার চোখ দুরো ধিরে ধিরে বুজে এলো।
চোখের সামনে শুধুই নির্ঝর কে দেখতে পেল।
হয়ত এই দেখা টুকুই শেষ দেখা।
,
,
,
নির্ঝর হসপিটালে পৌঁছে দেখলো কেউ তাকে মিথ্যা কল করেছে।
কেউই আসে নি এমন।
হটাৎ নির্ঝর এর মাথায় খেললো এই কাজ কার আর কে এই কাজ করতে পারে,
তখনি তার ফেন বেজে উঠলো,।-
–আবির।
–ভাইয়া ছায়াকে ওরা নিয়ে গেছে ভাইয়া জলদি যা তুই যা বলেছিলি সব সত্যি ভাইয়া মা ও কিছু বলল না।
নির্ঝর এর পৃথিবী তচনচ হয়ে যেতে লাগলো।
নির্ঝর ফোনটা রেখে বেরিয়ে পরলো।
পৃথিবীতে সবার ধোঁকা সহ্য করা যায় কিন্তু যে হলো মা তার ধোঁকা কি সহ্যা করা আদও সম্ভব ।
নির্ঝর এর চোখ দিয়ে এক ভাবে পানি পড়ছে।
,
নির্ঝর ড্রাইভ করে নিজের বাসায় এসে আগে তার মায়ের রুমে যায়,
–আমার ছায়া কই মা।
নির্ঝর শান্ত কন্ঠে শান্ত চাহনিতে নয়লা বেগম কে কথাটা বলল।
নয়লা বেগম চমকে উঠে বলল,
–আমি জানি মা রুমে হবে হয়ত।
–তুমি ভালো করে জানো তুমি সব জানো।
ছোট থেকে যখন সব থেকে বেশি ভালোবাসা আবির আর বাইরের একটা ছেলে পেত তখন থেকে বুঝে গেছিলাম আমি তোমার কেউ হই না।
তার পরেও নিজের প্রথম মাইনে দিয়ে তোমায় আগে শাড়ি দিয়েছিলাম।
তোমার সব কথা শুনতাম।
নিজের সব কিছু তোমার কথায় বিসর্জন দিয়েছি।
আর তুমি কি করলে মা আমার ছায়া কে কেড়ে নিতে সাহায্য করলে।
–বিশ্বাস কর বাবা ওকে আমি বার বার ঠেকাতে চেয়েছি কিন্তু পারি নি।
–কাজ টা ঠিক হয় নি মা।
আমার ছায়ার কিছু হলে মনে রেখো তচনচ করে ফেলবো সব।
কথাটা বলে নির্ঝর বেরিয়ে যায়।
,
,
হাত পা মুখ বাঁধা ছায়ার।
পরনে কালকের সেই গোল জামাটা।
বারে বার কথা বলার প্রচেষ্টা করছে সে কিন্তু কোন মতে এক চুল নড়ার ক্ষমতা করতে পারছে না।
এতো জোরে হাত পা বাঁধা যে রক্ত চলাচল বন্ধ হবার উপক্রম।
কিন্তু সে দিকে আদনানের কেন খেয়াল নেই সে ছায়ার কাছে থাকার খুশিতে উম্মাদ পাগল হয়ে গেছে।
সেরোয়ানী পরে খুব ধির গতিতে সাজগোজ করছে বরের বেশ ধরার জন্য।
ছায়া বুঝতে পারছে না চারিদিকে কি হচ্ছে কিন্তু একটুকু বুঝতে পারছে আদনান কোব ক্ষতি ছাড়া ভালো করবে না তার।
এক মনে আল্লাহকে ডাকছে ছায়া।
চোখের সামনে শুধুই নির্ঝর এর প্রতিবিম্ব।
হাতের বাঁধন এবং পায়ের বাঁধন লাল রক্তের রুপ ধরেছে।
ছায়ার শরীরের কিছু অংশ সাদা হতে শুরু করেছে ধিরে ধিরে চোখের সামনে সব কেমন অদ্ভুত অন্ধকার দেখাচ্ছে।
এই একটা আলোর ঝলকানি মাথার মধ্যে বাজে একটা শব্দ আর চোখের সামনে কালো কালো।
প্রচুর পরিমানে প্রেশার লো হওয়াতে ছায়ার মাথা এক দিকে ঢুলে পরে।
চোখ বন্ধ হয়ে যায় এক দম।
চোখের সামনে ছায়াকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আদনান একটা বেনারসি নিয়ে ছায়ার মাথায় পরিয়ে দেয়।
ঘোমটা তুলে দেয়,
–কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
–কিন্তু কন্যার এই অবস্থায় বিয়ে হবে না ত।
ভয়ে ভয়ে কাজি কথাট বলল।
–কি বললি তুই আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস তোকে কে দিয়েছে যা বলেছি তাই কর।
কাজি ভয়ে ভয়ে আবারো বলে,
–বলছিলাম মেয়েটার অবস্থা ভিশন খারাপ ওকে একটু দরি ডিল করে দিলে হতোনা৷।
–এই বুড়ো যা বলছি তাই কর নাহলে তোর খবর আছে। এতো সাহস তোকে কে দিয়েছে আমার মুখে কথা বলার,
–আমি দিয়েছি।
হটাৎ পেছন থেকে খুব চেনা একটা কন্ঠ শুনে আদনান চমকে যায়।
ফুল ফোর্স নিয়ে এগোচ্ছে নির্ঝর।
ছায়ার এমন অবস্থা দেখে নির্ঝর এর মাথায় রক্ত উঠে যায়।
পাশে থাকা একটি চেয়ার এমন ভাবে তুলে ফেলে যে সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার টা খন্ড খন্ড হয়ে বিভক্ত হয়ে যায়।
আদনান সের দাঁড়ায় তার সব লোক বাইরে পরে আছে।
নির্ঝর কিছু না বলে ছায়ার বাঁধন খুলে ওকে পাজ কোলে করে নিয়ে আসে।
আদনান সেখানে পরে রয়।
নির্ঝর ছায়াকে নিজের বাসায় নেয় না এমন এক জায়গায় নেয় যেখানে কেউই থাকে না।
তাদের বাংলো বাড়ি তে।
নির্ঝর ছায়ার ট্রিটমেন্ট শুরু করে।
বেশি কিছু সময় পর,
টিপ টিপ করে চোখ খুলে ছায়া।
চোখ খুলতে সামনে নির্ঝর কে খাবার হাতে দেখতে পায়।
নির্ঝর কে দেখে ছায়ার ভেতরে প্রান আসে।
উঠে নির্ঝর কে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
নির্ঝর ছায়ার মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
–ভয় পেও না আমি আছি ত।
–আমি ভিশন কষ্ট হচ্ছিল।
–আমি জানি ত৷। কথা দিচ্ছি আর এমন হতে দিবো না।
–ও কে ছিল নির্ঝর।
–ও কে ছিল সব বলব আগে খেয়ে নেও।
নির্ঝর ছায়াকে খাইয়ে দেয়।
তার পর নিজের বুকের উপর ছায়ার মাথাটা নিয়ে হাত বুলাতে থাকে,
–ওর গল্পটা অনেক বড়ো ছায়া।
–কে ও।
–ও এই পৃথিবীতে এমন এক জন মানুষ যাকে আমি মারতেও পারবো না আবার বাচিয়ে রাখাটা সহ্য হবে না।
–মানে,
–শুন তবে,
চলবে,