তোর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-০৩

0
861

#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া🥀
তৃতীয় খন্ড
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

–কি আমার থেকে দুরত্ব সয় না বুঝি তাই কি সারা দিন শুধু আমার কথাই ভাবো।
হটাৎ নির্ঝর এর কন্ঠ শুনে ধ্যান ফিরলো আমার।
চুল আঁচড়ানো ছেড়ে তার দিকে তাকালম।
আমার পাশ থেকে চিরুনিটা নিয়ে সে আমার মাথার চুল আঁচড়ে দিতে লাগলো।
আমি চুপচাপ তার কাজ দেখছি।
★★★
নির্ঝর ছায়াকে কিছু বলবে ঠিক তখনি সে জানার দিকে তাকায়।
এবং ভয়ানক কিছু দেখতে পায়।
তার চোখ দুটো ভয়ে ঘিরে গেল।
সামনে থাকা ছায়াকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।
হটাৎ নির্ঝর এর ধাক্কা খেয়ে সোজা ফ্লোরে পরলাম।
হাত দিয়ে আঘাত ঠেকাতে চাইলেও পরালাম না।
মুখ থুবড়ে পরলাম।
হাতে ভিশন ব্যাথা পেলাম।
সঙ্গে সঙ্গে কালো হয়ে গেল আঘাতের স্থান।
নির্ঝর ছায়ার কাছে এসে তার চুলের মুঠি ধরে টান দিলো,
–তোর কি মনে হয় আমি তোকে ভালোবাসি।
কখনো না তোকে বলেছিলাম বিয়েটা না করতে আমি অন্যা কাউকে ভালোবাসি।
তুই সেটা করলি না এখন তোকে সারা জীবন এভাবে কষ্ট দিবো।
হটাৎ নির্ঝর এর এমন রুপ দেখার জন্য সত্যি প্রস্তুত ছিলাম না।
–অবাক হবার কিছু নেই বাইরে মা ছিল তাই তোমায় কিছু সময়ের জন্য ভালোবাসা দেখালাম।
এর পর থেকে আমার ধারে কাছে আসার চেষ্টা করলে খবর আছে।
কথাটা বলে নির্ঝর বেরিয়ে গেল।
আমি সেখানে বসে কাঁদতে লাগলাম।
হে আল্লাহ কি পরিক্ষা নিচ্ছো তুমি আমার।
,
,
নির্ঝর বাইরে এসে সোজা তার অফিসে চলে যায়।
সে বসে আছে আর সামনে তার গার্ড রা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
–পাশের বিল্ডিং এ দুটো লোক দাড়িয়ে ছিল।
এক জনের হাতে সুটার গান অন্য জনের হাতে ম্যাগনিফাইট গ্লাস।
এক জন নজর রাখছিল অন্য জন ছায়াকে সুট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
আমার বাড়ি আমারি বেড রুমে ওরা পাহারা বসিয়ে ছিল।
একটু দেরি হলে এখন ছায়া আর আমার সামনে থাকতো না।
আর আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।
নির্ঝর এর কথা গুলো শুনে সবার নিশ্বাসের শব্দ ও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারন তারা জানে নির্ঝর কতোটা রেগে আছে।
–আমার বাসার সিকিউরিটি সিস্টেম কার আমানত ছিল?
–স্যার আ আমার (এক জন গার্ড)
–আমার ছায়ার সিকিউরিটি কার হাতে ছিল।
–আমার স্যার। (অন্য এক জন)
–তবে কি তোমরা দু’জন বসে বসে ঘাস খাচ্ছিলে?
–স্যার এবারের মতো মাফ করে দিন এমনটা আর হবে না।
–তোমাদের মাফ করতে করতে হয়ত আমি কখন আমার সর্বস্ব হারিয়ে ফেলব।
কথাটা একটা বড়ো নিশ্বাস নিয়ে বলল নির্ঝর।
তার গার্ড রা তার কথাটা শুনে চুপচাপ হয়ে গেল।





কালো কোর্ট পরে একটা লোক চেয়ারে বসে আছে।
মুখে চাপা দাঁড়ি হলুদ ফর্সা বর্ন তার গায়ের।
–স্যার নির্ঝর ম্যামকে ভালোবাসে না আজকে আমরা প্রামন পেয়েছি।
–হুম সব তো বুঝলাম কিন্তু তাও মন কেমন মানছে না।
নির্ঝর আর ছায়ার উপর নজর রাখো।
ছায়া শুধু আমার।
ওর জীবনের উপর অধিকার ও আমার।
কথাটা মাথায় রেখো।
–জি স্যার অবশ্যই।




দুরে ওই আকাশে এক বিশাল কালো মেঘ নীল আকাশের বুকে ভাসতে থাকা পাজা তুলোর মেঘ গুলোকে ঢেকে দিয়েছে।
পাজা তুলোর মেঘ গুলো দেখতে ভিশ মিষ্টি ছিল।
এই মেঘের উপর কালো মেঘের আস্তরনের মতো আমার জীবন টাকেও কালো মেঘে ঢেকে রেখেছে।
নির্ঝর কেন এমন করছেন
আমি কি মানুষ না আমার কি ভাবনা নেই আমার কি দুঃখ নেই।
আমি কি ইচ্ছে করে করছি। আমাকে এটা করতে তো বাধ্য করা হয়েছে।
আমি যদি বিয়েটা করতাম নিজের জন্য তবে আপনার হাজার কথা মেনে নিতাম।
কিন্তু আমি যে নিরুপায় ছিলাম
কেন এভাবে কাছে এসে কষ্ট দিচ্ছেন।
আকাশ পানে চেয়ে কথা গুলো বলে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে ছায়া।
ভিশন কষ্ট হচ্ছে তার।
,
–ছায়া।
হটাৎ কারোর কথায় জলদি চোখ মুছে নিলাম।
পেছনে ফিরে দেখি আপু দাঁড়িয়ে হাতে দু কাপ চা।
–কিরে তুই।
–কি করছিস এখনে।
–কিছু না আপু আকাশ দেখছিলাম সুন্দর লাগছে তাই না।
–হুম সুন্দর লাগছে তুই কি কাঁদছিস বোন।
–না কাঁদবো কেন?
–ভাইয়া ঠিক আছে তো?
–হ্যাঁ তোর ভাইয়া ঠিক আছে।
–সত্যি।
–হুম রে সত্যি
–ভালোবাসে ভাইয়া?
–হুম রে খুব ভালোবাসে।
ওর ভালোবাসা এতোটা বেশি যে তুইও বুঝতে পারবি না।
–আমি জানতাম তুই সুখী হবি।
চা খাবি?
–তুই নিয়ে আসছিস।
–হুম৷।
নে।
আমি আপুর থেকে চা টা নিলাম।
আমি হাসি মুখে চা টা নিয়ে চুমুক দিতে যাবো তখন হটাৎ নির্ঝর এসে আমার হাত থেকে চা টা ছো মেরে ফেলে দিলো।
ঘটনা চক্রে কিছু বুঝে ওঠার আগে নির্ঝর আমাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে এলো।
আমরা রুমে পৌঁছাতে আমি তার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলাম ঝাড়ি মেরে।
–অসহ্য এমন করেন কেন আপনি কি সমস্যা আপনার (রেগে)
–তুমি আমার স্ত্রী হয়ে এ বাসায় এসেছো কি খাবে কি না খাবে সেটা আমি ঠিক করবো।
এবার ছায়া সহ্য করতে পারলো না।
অনেক শুনেছে আর না।
–ব্যাস ব্যাস মি.চৌধুরী অনেক শুনেছি আর না। থামুন আমার কোন সখ ছিল না আপনাকে বিয়ে করার আপনার মা আমাকে বলেছিলেন আপনাকে যদি আমি বিয়ে ন করি তবে আমার আপুর বিয়েটা হবে না ভাইয়ার সাথে সেই জন্য বিয়েটা করেছি নাহলে আমারো সত্যি কোন সখ ছিল না এগুলা করার।
বিয়ে করেছি বলে কি আপনার হাতের পুতুল পেয়েছেন যা ইচ্ছে তাই করাবেন।
রাগে চিল্লিয়ে।
(কল্পনা থেকে বাস্তবে)
–বুঝেছো তুমি।
নির্ঝর কথাটা বললো
ছায়া শুধু কল্পনা করলো এটা সে নির্ঝর কে বলেছে সত্যি যদি ও বলে দিত তবে কি হতো নির্ঝর এর মা ছায়ার আপুকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিত।
কথাটা ভেবে ছায়ার বুক কেঁপে উঠে।
ইচ্ছে থাকা সত্বেও কিছু বলতে পারে না।
–কি হলো এভাবে কি দেখছো।
–কিছু না।
কথাটা বলে ছায়া ওয়াসরুমে চলে এলো
ছায়া ওয়াসরুমে যেতে নির্ঝর বসে পরলো।
–এ কেমন পরিক্ষা নিচ্ছো।
ওকে এভাবে আর কতো বাঁচাবো আমি আর পারছি না।
আমাকে ক্ষমতা দেও।
ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
,
ওয়াসরুমে এসে সাওয়ার চালিয়ে অনেক কান্না করলাম।
চোখের পানি গুলো শুকায় না কখনো পড়তেই থাকে।
–মা তুমি কই।
তোমার কোলে মাথা দিয়ে কাঁদতে মন চায়।
,
,
,
–মা।
–হুম তমা বলো।
–বলছি ছায়া কে না দাদাভাই খুব রুড ভাবে রুমে নিয়ে গেল।
–কেন।
–কেন তা তো জানি না।
আসলে চা নিয়প ছাঁদে গেছিলাম৷ আমি ছায়াকে চা টা দিচ্ছিলাম আর তখনি দাদাভাই ওকে হুট করে টেনে রুমে নিয়ে গেল।
–তুমি দেখেও কিছু বললে না।
–কি বলব মা ছায়া তো দাদাভাই এর স্ত্রী।
–কিন্তু তুমি ওর বড়ো বোন।
–কিন্তু সম্পর্কে আর বয়সে তো দাদ বড়ো।
–আচ্ছা তুমি রুমে যাও।
–জি মা।
তমা রুমে চলে গেল।
–কিছু কি ভুল হচ্ছে আমার৷
আমি যা করেছি তা কি সব আদও ঠিক করেছি। নাকি আমার ভুল।হচ্ছে।
কথা টা ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে আসে নির্ঝর এর মা।
,
,
,
একের পর এক ড্রিংক করতেই আছে নির্ঝর।
বুকের মধ্যে কষ্ট টা যেন পেয়ে বসেছে ওকে।
ভিশন ভাবে কষ্ট হচ্ছে তার।
এই কষ্ট কেউই দেখতে পারবে না।
কারন এটা ও কাউকে বলতেও পারবে না।
–স্যার অনেক হয়েছে এবার উঠুন আপনি ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলছেন।
–হুহ জীবনের ব্যালেন্স আমি এমনি হারিয়েছি আর কি হারানোর বাকি।
গার্ড বুঝতে পারে নির্ঝর এখন ঠিক নেই।
তাই নির্ঝর কে জোর করে বাসায় দিতে যায়।
চৌধুরী বাড়িতে এসে কলিং বেল দিতে ছায়া দরজা খুলে।
দরজা খুলে নির্ঝর এর এই অবস্থা দেখে ছায়া অবাক হয়।
ছায়া কখনো নির্ঝর কে এমন দেখেনি।
–ম্যাম স্যার একটু ড্রিংস করে ফেলেছে ওনাকে সামলান।
নির্ঝরকে ছায়ার কাছে দিয়ে গর্ড চলে যায়।
চলবে,