তোর উঠনে বিকাল ছায়া পর্ব-০২

0
1049

#তোর_উঠনে_বিকাল_ছায়া🥀
দ্বিতীয় খন্ড
লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
আমি কলেজে পৌঁছে ছাতাটা মেলে ক্লাসের দিকে অগ্রসর হলাম।
আমি কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো,
–কিরে ছায়া তুই তো আমার ড্রিম বয় কে বিয়ে করে নিলি।
ডক্টর. নির্ঝর চৌধুরী তুই জানিস আমার কতো দিনের স্বপ্ন তার সাথে সেলফি নিবো।।
আজ পর্যন্ত একটা সেলফি নিতে পারলাম না আর তুই তার বউ হয়ে গেলি৷
–অথই আর কিছু বলার আছে?
–ও মা তুই এতো রাগছিস কেন রে।
–আমি রাগছি না আর কিছু বলার না থাকলে আমাকে জ্বালাস না প্লিজ৷ এটা কলেজ ক্লাস করতে দে।
কথাটা বলে অথই কে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম।
ক্লাস রুমে বসতে রুহি এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
–কিরে মেরে জান উদাস কেন এতো?
–কই।। —
–কই মানে আমি দেখতে পাচ্ছি ত৷
–ধুর ভালো লাগে না৷।
–কি হয়েছে।।
–তোর থেকে ত কখনো কিছুই লুকায় না তুই ত সব জানিস তাই না।
–হুম জানি ত কি হয়েছে বল।
–চল আম তলায়।। —
–আচ্ছা চল।।
রুহি আর ছায়া ওদের কলেজের পুরেন আম গাছের তলায় বসলো,
–শুন,
ছায়া বলতে শুরু করলো ওর বিয়ের গল্প।
এদিকে,
–স্যার আমাদের সামনে মস্ত বিপদ অপেক্ষা করছে।
মাথা নিচু করে নির্ঝর এর সামনে কথাটা বলল তার গার্ড।। —
–তার মানে কাজটা আজও হয় নি।
–ধরেই ফেলেছিলাম কিন্তু শেষ মুহুর্তে ।
নির্ঝর রেগে তার সামনের টেবিল টা উল্টে ফেলে দিলে আর বিকট কাচ ভাঙা শব্দ হলো,
–শেষ মুহূর্তে শেষ মুহুর্তে শুনতে শুনতে আজ ৫ মাস পর্যন্ত আমি ক্লান্ত।
তুমি ভুলে যাচ্ছো এখন আমি একা নই আমার সাথে ছায়ার জীবন টাও বিপদের মধ্যে তুমি কি করে এতোটা কেয়ারলেস হতে পারো।
–স্যার সরি স্যার৷ কি করব ওরা ভিশন চালাক আর শক্তিশালী বটে।
–ডক্টর নির্ঝর নিজের রুপে আসলে ওরা বুঝবে ওরা ওদের বাপের উপর কথা বলছে।
–স্যার এবার কি করব।
–ছায়াকে ২৪ ঘন্টা কড়া গার্ড এ রাখো আমার ছায়ার কিছু হলে একটাকেও ছাড়বো না।
নাউ গেট লস্ট।।
গর্ড নির্ঝর এর কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।
আর নির্ঝর ছায়ার ছবি হাতে বসে বসে ভাবছে,
–কি করলে ছায়া কেন করলে বিয়েটা।
,
,
এদিকে,
–ছায়া সব ত শুনলাম কিন্তু এখন কি করবি।। –
–জানি না রুহি।
–তুই ওনাকে সত্যি বলে দে।
–পারবো না সত্যি বলে দিলেও সমস্যা।
–তাই ত কিন্তু এখন করব টা কি।
–জানি না হয়ত এভাবে সারা জীবন নির্ঝরের ঝামটা রাগ সহ্য করতে হবে।
–তুই চিন্তা করিস না ছায়া সব ঠিক হয়ে যাবে।
–চিন্তা করা আমি ছেড়ে দিছি৷ জীবন টাকেও যেভাবে চলবে চলুক।
ছায়ার চোখের পানি গুলো কষ্ট দিচ্ছে রুহি কে।। কিন্তু রুহি করবে টা কি ওরা দু জন ই এখন প্রাপ্ত বয়স্ক না।।
দু’জন দু’জনের দুঃখ বুঝতে পারে ফিল করতে পারে কিন্তু সমাধান দিতে পারে না।
কলেজের ক্লাস শেষ হলে ছায়া বাইরে বের হলো বাসায় আসার উদ্দেশ্য।
রিকশা ডাকতে গিয়ে মনে পরলো নির্ঝর এর কথা,
–খবরদার আমি না আসলে কোথাও গেলে খবর আছে।
কথাটা মনে পরতে ছায়া থেমে যায়৷। এবং কলেজ গেটের সাইডে দাঁড়িয়ে পরে।
তখন মেইন রোড থেকে একটা গাড়ি ফুল স্প্রিডে সামনের দিকে ছুটেছে ।
হটাৎ ছায়ার চোখ পরলো নির্ঝর এর দিকে।
ফর্সা ছেলেটা নীল রঙের সার্ট আর প্যান্ট পরা।
উপরের সাদা এপ্রন টা হাতে,
হটাৎ ছায়া খেয়াল করলো নির্ঝর দৌড়াচ্ছে ওর কাছে আসছে৷। ছায়া এক অন্য জগতে হারিয়ে গেল।। সে মুগ্ধ নয়নে নির্ঝর এর দিকে তাকিয়ে আছে।।
কিছু সময় পর নির্ঝর প্রচুর বেগে ছায়াকে পেছন থেকে আসা গাড়িটা থেকে বাঁচিয়ে আনে।
ঘটনা চক্রে ছায়া কিছু বুঝে উঠার আগে সবার সামনে ছায়ার গালে চড় পরে।
–এই বেয়াদব মেয়ে কতো বার বলছি গাড়ি গাড়ি তুমি আমাকে কি শুনতে পাও না নাকি।। তোমার কিছু হয়ে গেলে কি হতো।
(হাঁপাতে হাঁপাতে)
–আপনি মুক্তি পেয়ে যেতেন।
আমার কথা শুনে নির্ঝর আমার দিকে তাকিয়ে পরলো।
তার কল্পনায় ছিল না ছায়া এমন রিপ্লাই দিবে।
নির্ঝর হুট করেই ছায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
এতে ছায়া ভিশন অবাক হলো কিন্তু তার কাছে নির্ঝর এর কাছে আসা টা ভিশন ভালো লাগলো।
–বাসায় চলো।
কথাটা বলে নির্ঝর ছায়াকে নিয়ে বাসায় চলে এলো।
রাস্তায় কেউ কোন কথা বলে নি।
ছায়া কখনোই একটা চুপচাপ মেয়ে নয়।
ও সব সময় কথা বলে।
খুবই ফাজিল টাইপ মেয়ে ও।
বাচ্চামি করতে পছন্দ করে।
কিন্তু আজ হটাৎ এমন চুপচাপ কেন।
নির্ঝর এর বুকের মাঝে ধক ধক শব্দ শুরু হয়েছে।
ধিরে ধিরে তারা তাদের বাসায় পৌঁছে যায়।
বাসায় পৌঁছে ছায়া গাড়ি থেকে নেমে চুপচাপ ঘরে চলে এলো।। নির্ঝর গাড়ি পার্ক করে ভেতরে এলো।
–কিরে নির্ঝর ছায়াকে উদাস কেন লাগছে কিছু হয়েছে?
–জানি না মা৷
–তুই জানিস না তো কে জানে নির্ঝর।
(কিছুটা রেগে)
–মা আমি দেখছি তোমরা কেন চিন্তা করো।
কথাটা বলে নির্ঝর রুমের দিকে চলে এলো।
,
ছায়া এসে কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নামাজে বসেছে।
১ঃ২০ বাজে।।
নামাজ শেষ করে উঠে বসতে নির্ঝর কে দেখতে পায়।
হাত দুটো বুকে গুঁজে বসে আছে। ছায়ার সামনে এক দৃষ্টিতে ছায়াকে দেখে চলেছে।
ছায়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
–কিছু বলবেন।
নির্ঝর ছায়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে ছায়ার দিকে এগোতে থাকে।
একটা সময় ছায়া মিশে যায় দেয়ালে আর নির্ঝর তার হাত দুটো দিয়ে ছায়াকে আটকে নেয়।
–বলো কি বলছিলে।
–ক কখন?
–কেন তখন কলেজের সামনে।। কি আমি মুক্তি পেতাম নাকি।
এবার ছায়া শক্ত হয়ে বলল,
–আমি বলেছিলাম আমার মৃত্যু হলে আপনি মুক্তি পেতেন।
–আবার বলো।। –
–কেন শুনতে পান নি।
–আমি বলেছি আবার বলো।
ছায়ার দিকে রক্ত চক্ষু নিক্ষেপ করে।
ছায়া কিছুটা ভয় পেয়ে যায় নির্ঝর কে দেখে।
তার পরেও বলে,
–আমার মৃত্যু হলে আপনি মুক্তি পেতে.
কথাটা শেষ করার আগের নির্ঝর ছায়ার ঠোঁট জোড়া আবদ্ধ করে নেয়।। হুট করেই এমন কিছু হবে ছায়া কল্পনা করে নি। তাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হতভম্ব চোখে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু সময় পর,
–দ্বিতীয় বার এ কথা বললে এর থেকে বাজে কিছু হবে সো বি কেয়ারফুল।
কথাটা বলে নির্ঝর ওয়াশরুমে চলে গেল।। –
ছায়া নির্ঝর এর দিকে তাকিয়ে অবাক হচ্ছে।
কিছু সয়ম পর মৃদু হাসি হেসে দিলো।।
ভালোবাসার মানুষের থেকে পাওয়া স্পর্শ তৃপ্তি।
ছায়া শাড়ি পরে নিচে চলে আসে।
–ছায়া মা তোর কি হয়েছে (নির্ঝর এর মা)
–কই কিছু না তো মা।
–মন খারাপ লাগছিল যে তখন
–আসলে,
–আসলে মা তখন মিষ্টি খেতে চেয়েছিল আমার কাছে বাইরে থেকে। তো আমি বললাম এখন না বাসায় চকলেট আছে তাই নিয়ে রাগ করেছিল।
তো বাসায় এসে চকলেট দেওয়াতে এখন সে খুশি।। কি তাই না ছায়া।
ছায়ার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল নির্ঝর।
ছায়া বেশ বুঝতে পারছে নির্ঝর ঠিক কি বুঝাতে চাইছে।
তাই ছায়া চুপচাপ হয়ে মাথা নিচু করে নেয়।
–লুচু ব্যাটা (মনে মনে)
–ওহ তুই বাচ্চা টি রয়ে গেলি ছায়া আমি তো ভাবলাম কি না কি।
আয় খাবার বেড়ে দিচ্ছি খেয়ে নে।
ছায়ার শাশুড়ী মা খাবার দিলেন ছায়া আর নির্ঝর খেয়ে নিলো।
বাসার বাকি সবাই সবার কাজে ব্যাস্ত।
তাই সবাই এক সাথে খেতে পারলো না।
খাবার শেষে ছায়া ঘরে চলে আসে।
চুল গুলো আঁচড়ে।
ভাবতে থাকে নির্ঝর এর কালকের রুপ আর আজকের রুপ দুটো কেমন গোলমাল ঠেকছে।
কি হয়েছে ঠিক তা ছায়া নিজেও জানে না।
চলবে,