তোর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-০১

0
1480

#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া❤️
অণু- প্রথম খন্ড
লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

বড়ো আপুর ভাসুরের ফুলসজ্জা খাটে বউ সাজে বসে আছি। হাত পা ভয়ে কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। তার পায়ের জুতার শব্দে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠছে।
বিয়ে মানুষের হয় কিন্তু আমার মতো এমন বিয়ে হয়ত কারোর হয় নি ।
নির্ঝর (আপুর ভাসুর) যতো এগিয়ে আসছে বুকের মাঝের উথাল পাথাল তত বেড়ে চলেছে সাথে ভয়।
কি করা উচিত আমার ! আমার ইচ্ছে হচ্ছে এক ছুটে দৌড় দি।
দেখতে দেখতে সময় চলে এলো নির্ঝর এখন রুমে। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি সে রুমের দরজা বন্ধ করেছে।
বুকের মাঝে এবার ঝড় শুরু হয়েছে।
ধীর গতিতে নির্ঝর আমার দিকে এগিয়ে আসছে। ও আমার ঘোমটা তুললে সব শেষ। আমিও শেষ আমার অন্তর আত্মা ও শেষ।
হুট করে অনুভব হলো কেউ আমার গলা ভিশন জোরে চেপে ধরেছে।
এতোটা সময় চোখ বন্ধ ছিল কিন্তু দম আটকে আসায় জলদি চোখ খুলে নির্ঝরের লাল বর্নের চোখ দু’টো দেখতে পেলাম রাগে ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে।
এদিকে আমার দম যায় যায়।
আমি হাত দিয়ে তার হাতটা ছাড়াতে যাব তখন সে আমারে আরও শক্ত করে ধরলো।
–তুই একটা বার তোর বড়ো বোনের কথা ভাবলি না এতোটা স্বার্থপর হলি তুই। নিজের বড়ো বোনের ভাসুর কে বিয়ে করে নিলি।
আরে কতো মিনতি করেছিলাম তোর কাছে আমি বিয়ে করব না।
আমি তোকে বলেছিলাম এই বিয়ে করলে আমি তোর জীবন নরক বানিয়ে দিবো তুই শুনলি না বিয়েটা তুই করে নিলি।
এক নাগারে কথা গুলো বলে আমার গলাটা ছেড়ে দিলো।
আমি ছাড়া পেয়ে ভীষন শুকনো কাশি দিতে লাগলাম।
আমার দম আটকে আসছে। পানির প্রয়োজন।
নির্ঝর সামনে থেকে আমার এ অবস্থা দেখে আমার মুখে পাশে থাকা পানির জগ থেকে সব পানি ঢেলে দিলো।
হটাৎ এভাবে পানি নাকে মুখে যাওয়া তে বেশি দম আটকে আসছে।
আমি উঠতে যেয়ে বাঁধা পেলাম নির্ঝর তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাকে চেপে ধরেছে বিছনার সাথে।
আমি জানতাম নির্ঝর এর ব্যবহার এমনি হবে। কিন্তু আমিও যে নিরুপায় ছিলাম।
ও কি কখনো আসল সত্যি জানতে চাইবে না।
ও কি সারা জীবন আমায় ভুল বুঝবে।
আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে।
নির্ঝর আমার থেকে সরে এসে আমার টেনে দাঁড় করায় শোয়া থেকে।
এবং আমকে বলে,
–এভাবে ভিজে অবস্থায় আজ এখানে সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকবি।
তোকে আমি মেনে নিবো না তোর যেখানে ইচ্ছে সেখানে গিয়ে মর।
কথাটা বলে নির্ঝর বিছনায় ছায়ার দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পরলো।
এদিকে ছায়া কাঁদতে আছে।
কাঁদতে কাঁদতে দেয়াল ঘেঁসে বসে পরে।
–কি করেছি আমি? কার জন্য করেছি? আপনার জন্য! কেউ আমার কথাটা ভাবে না সবাই স্বার্থ নিয়ে চলল আমাকে এই নরকে ফেলে দিলো।
৫ দিন আগের কথা,
আমাদের পরিবারে ৪ জন মানুষ আমরা আমি বড়ো আপু তপা, মা আর বাবা।
তপা আপু নিরব ভাইয়াকে ভালোবাসে ওদের বিয়েটা হবে ঠিক হবার পর নিরব ভাইয়ের মা আমাকে তার বড়ো ছেলের বউ হিসাবে চেয়েছিল।
নিরব চৌধুরী এবং নির্ঝর চৌধুরী।
দুজন ভাই। নির্ঝর পেশায় ডক্টর এবং নিরব পেশায় ইঞ্জিনিয়ার।
নির্ঝর ভাইয়ার প্রতি আমি একটু দুর্বল অনেক আগে থেকে, তাই আমিও রাজি হই। কিন্তু বিয়ের আগের দিন নির্ঝর এসে আমাকে খুব করে রিকোয়েস্ট করে যেন এ বিয়েটা না করি।
আমি ওনার কথায় রাজি হয়ে যায়।
এটা বেমানান দেখায় যদিও বড়ো আপুর ভাসুরের সাথে বিয়ে।
কিন্তু তাও আমার পরিবার এবং নির্ঝর এর পরিবার উভয় এর সম্মতিতে আমাদের বিয়েটা ঠিক হয়৷।
নির্ঝর বেরোতে আমি মাকে বলি এই বিয়ে আমি করতে চাই না।
আর তার পর যেটা হলো সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল৷। আমি কখনো ভাবি নি আমার সামনে এভাবে এরকম সত্যি আসবে।
আর আমাকে এই বিয়েটা করতে হবে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আমি দেয়াল ঘেঁসে এক কোনে চুপচাপ বসে রইলাম।
জীবনে একটা খুব বড়ো একটা মোড় নিয়েছে।
যাকে এতোটা ভালোবেসে এসেছি সে আমার জীবন সঙ্গী তো হলো কিন্তু শত্রু হিসাবে।
নির্ঝর আমাকে সত্যি কখনো মেনে নিবে না।
আর আমি কখনো সুখী হবো না।
আমার জীবনের সুখ পাখি গুলো উড়াল দিয়েছে।
আমর কিছুই করার নাই শুধু চোখ মেলে দেখা ছাড়া।।
শুধু একটা কথাই ভাবা ইস যদি ওকে একটা বার বলতে পারতাম।
শুধু একটা বার।।
চিৎকার করে নির্ঝর আমি কেন এগুলো করেছি।
সারাটা রাত চোখের পানি দুটো গাল বেয়ে টপটপ করে পেরেছে।
শেষ রাতের দিকে হালকা ঝিমাই পরছিলাম।
কিন্তু অতিরিক্ত কান্নার ফলে চোখ দুটো ফুলে গেছে তাই চোখ খুলে তাকালাম।
কি ভিশন যন্ত্রণা ফজরের আজান দিলো শুনলাম।
উঠে ওয়াশরুমে চলে এলাম।
মাত্র কিছু ঘন্টার ব্যবধানে আমার অবস্থা কি থেকে কি হয়েছে।
নিজেকে দেখে নিজের বড্ড করুনা হচ্ছে।
গোসল করে ওজু করে নামাজ আদায় করে নিলাম।
নামাজ শেষে তাকিয়ে দেখি নির্ঝর উঠে খাটের নিচে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।
কিছুই বললাম না তাকে দেখে পেস নামাজ টা তার জায়গায় রেখে বেরিয়ে আসতে গেলে বাঁধা পেলাম।
কেউ পেছন থেকে হাত ধরে রেখেছে৷।
আমি পেছনে তাকালাম অবাক হয়ে।
–কোথায় যাচ্ছো।
–জি বাইরে।। —
–না যাবে না।
কথাটা বলে আমাকে টেনে নিয়ে বিছনায় বসালো।
আমি তার দিকে আপাতত অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছি।
সে আমার চোখের নিচে একটা মলম লাগিয়ে দিলো।
এবং একটা ড্রপ দিলো চোখ।।
হালকা জ্বালা করছে আমার চোখ কিন্তু কিছু সময় পর শান্ডি পেলাম।।
এবং অটোমেটিক ঘুম চলে এলো।
ছায়া কে ঘুমাতে দেখে নির্ঝর শান্ত ভাবে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
,
,
,
সকাল ১০ টা,
খাবার টেবিলে সবাই বসে।
এমন সময় নির্ঝর আর ছায়া নামলো উপর থেকে।
খুব সুন্দর পরিপাটি ভাবে।। যেন ওদের মতো বিবাহিত দম্পতির দেখা মেলা খুবই মুস্কিল।
নিচে নেমে সবার সাথে নির্ঝর হেসে হেসে কথা বলছে যেন নির্ঝর এর থেকে খুশি ব্যক্তি দুনিয়াতে নেই।
নির্ঝর এর এই রুপ দেখে ছায়া অনেক অবাক হচ্ছে ।
–ছায়া খাবার সেরে তৈরি হয়ে নেও নির্ঝর এর সাথে কলেজ যাবে। (রেহানা বেগম নির্ঝর এর মা)
ছায়া শাশুড়ী মায়ের কথায় এক গাল হাসি দেয়।
ছায়া ভেবেছিল ওর কপালে হয়ত এই ইন্টার পর্যন্ত ই পড়ালেখা আছে নির্ঝর এর যে অবস্থা তাতে কিছুই আসা করে নি ছায়া।
কিন্তু শাশুড়ী মায়ের কথা শুনে বেশ খুশি হচ্ছে ছায়া।
খাবার শেষ করে উপরে গিয়ে কাপড় পাল্টে রেডি হয়ে নির্ঝর এর সাথে বেরিয়ে যায় ছায়া। গাড়িতে নির্ঝর একটা কথাই বলে,
–আমার মা বাবা যেন কখনো একটা বারের জন্য আন্দাজ না করতে পারে তোমার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো নাই।
ভীষন রাগী হয়ে কথাটা বলে ।
আমি মাথা নিচু করে শুধু শুনি হ্যা না উত্তর দেবার ইচ্ছে নাই।
নিজেকে কেমন ফ্যাকাসে মনে হয়।
রং গুলো মুছে গেছে।
দেখতে দেখতে কলেজে পৌঁছে গেলাম।
গাড়ি থেকে নামতে নির্ঝর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
–নিতে আসবো এখান থেকে আমি না আসলে নড়লে খবর আছে।
আমি চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে ঘরে চলে এলাম।
নির্ঝর চলে গেল তার গন্তব্যে,
চলবে?