তোর রঙে রাঙাবো পর্ব-০৫

0
2011

#তোর_রঙে_রাঙাবো
#Part_05
#Writer_NOVA

কলেজ গেইট দিয়ে ঢুকতে না ঢুকতেই বিপদে পরে গেলাম।সেই রাতের ঘটনার পর গত দুই দিন এমনি ঘোরের মধ্যে ছিলাম।ভাইয়ুও কলেজে আসতে দেয়নি।এখন আবার নতুন আপদ এসে জুটলো।আমাদের ভবনে যেতে হলো একটা বাঁক পেরিয়ে যেতে হয়।সেখানেই বসে বসে আড্ডা দেয় সিনিয়ররা।ডিগ্রি ফাইনাল ইয়ারে পড়ুয়া সোহান ও তার দলকে বেশিরভাগ সময় এদিকে দেখা যায়।সোহানের বয়স আমার ভাইয়ুর থেকে বেশি হবে।যেদিন আমার ভাইয়ু কলেজে না থাকবে সেদিনই এই চামচিকাকে দেখা যাবে। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।কারণ আজও ভাইয়ু নেই।ভাইয়ু ও তার বন্ধুরা তাদের রাজনৈতিক এক সম্মেলনে গিয়েছে।রাস্তার মাঝখানে বাইক রেখে তার উপর শুয়ে রেয়েছে সোহান।সাথে তিনটা মেয়ে ও গোটা চারেক ছেলে রিচি, শোভা, তুলি, অনিক,
রাজীব,সৈকত এগুলো ওর চামচা।সোহানের কাজই জুনিয়রদের নানাভাবে হেনেস্তা করা।বাইকের সাইড কেটে যেতে নিলে আমাকে ডাকলো।

সোহানঃ এই মেয়ে দাঁড়াও।

ক্লাশ শুরু হয়ে গেছে। হাতে এসাইনমেন্টের খাতা।তাই আমি শুনেও না শোনার ভান করে যেতে নিলে একটা শক্ত হাত এসে আমাকে হেচকা টান দিয়ে সামনে নিয়ে এলো।তাকিয়ে দেখি রাজীব আমার হাত ধরে রেখেছে। আর সোহান রক্ত চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

সোহানঃ সাহস তো কম বড় না তোমার। আমার কথা অমান্য করো।আমি দাঁড়াতে বললাম তারপরেও আমাকে পাত্তা না দিয়ে এখান থেকে চলে যাও।(রেগে)

রিচিঃ আজকালকার কলেজের পোলাপাইন গুলি একটু বেশি বড় হয়ে গেছে। বড়দের কিভাবে সম্মান করতে হয় তাতো জানেই না।অথচ ডাকলে একটা
ভি আই পি ভাব নিয়ে শুনিও না শোনার ভান করে চলে যায়।একজনকে শিক্ষা দিলে বাকিরা এমনটা করতে সাহস পাবে না। (কড়া গলায়)

আমি রাজীবের থেকে হাত ছুটানোর জন্য হাত মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলাম।তাতে রাজীব বিরক্ত হয়ে আরো শক্ত করে আমার হাত ধরলো।ততক্ষণে সোহান শোয়া থেকে উঠে বসেছে।আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করছে।

আমিঃ আমাকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেন?ছাড়ুন আময়া।আমার ক্লাশ শুরু হয়ে গেছে। এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। (আকুতির সুরে)

সোহান এক লাফে বাইক থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর হেচকা টানে এসাইনমেন্টের খাতাগুলো নিয়ে গেল।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।

সোহানঃ এবার যেতে পারো তুমি।

আমিঃ আমার খাতা দিন।প্লিজ আমার খাতা দিয়ে দিন।আজকে জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট।আজকে জমা না দিতে পারলে খারাপ রেজাল্ট আসবে।এমনটা করবেন না।দিন না খাতাগুলো🥺।

দু চোখ ফেটে কান্না আসছে।গতকাল রাত ১ টা পর্যন্ত জেগে এসাইনমেন্ট কমপ্লিট করেছি।ভাইয়ু বাসায় ছিলো না। নয়তো আমায় এতো কষ্ট করতে হতো না। সেগুলো যদি এখন নষ্ট করে ফেলে তাহলে পুরো কষ্টটাই আমার বৃথা।

সোহানঃ আবরো মুখে মুখে কথা বলছো।প্রথমে আমাকে অপমান করেছো।আমার ডাক কে পাত্তা দেওনি।এখন আবার মুখে মুখে কথা।এর মাশুল তোমাকে দিতে হবে।(রেগে)

রাজীবঃ আহারে, বেচারী বোধহয় এবার কান্না করে দিবে।দিয়ে দে সোহান।(ঠাট্টার সুরে)

তুলিঃ দেখ দেখ মুখটা কিরকম করে আছে? চোখ দুটো পুরো টলমল করছে। এখুনি কান্না করবে।বেচারীর খুব কষ্ট হচ্ছে রে।(ব্যঙ্গ করে)

শোভাঃ মেয়েটার সাথে এমন করছিস কেন? ছেড়ে দে ওকে।নতুন ভর্তি হয়েছে। হয়তো বুঝতে পারেনি।তাই বলে এমনটা করবি।(রেগে)

রিচিঃ হয়েছে তোর আর মেয়েটার জন্য দরদ দেখাতে হবে না।এত দরদ উথলে পরে কেন তোর?যেখানেই কাজ করতে যাই সেখানে তোর মাথা ব্যাথা উঠে যায়।আরেকটা কথা বললে মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে তোকে শাস্তি দিবো।

🌺🌺🌺

শোভা চুপ হয়ে গেল।এদের দলের মধ্যে শোভায় একটু অন্য রকম।ওদের কাজ-কর্ম সে একদম পছন্দ করে না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এই শয়তান বন্ধুগুলোকে ছেড়ে দিতে।কিন্তু ওর কিছু করার নেই। কারণ যদি শোভা ওদের দল ছেড়ে দেয় তাহলে ওকে বিপদে পরতে হবে।এত সহজে তো ওকে ছেড়ে দিবে না।ওর ক্ষতি করতে একটুও বুক কাঁপবে না ওদের। সোহান ও বাকিদের দ্বারা সব সম্ভব।

অনিকঃ সোহান তুই ও না কি যে করিস? এতক্ষণ পর্যন্ত মেয়েটাকে অপেক্ষা কেন করিয়ে রেখেছিস বল তো।দিয়ে দিবি, তা না করে বাচ্চা মেয়েটাকে ভয় দেখাচ্ছিস।

সোহানঃ তোরা যখন এতো করে বলছিস তাহলে তো দিয়ে দিতেই হয়।কি বলিস সবাই? (বাঁকা হেসে)

আমিঃ ভাইয়া আমার খাতাগুলো দিয়ে দিন না।আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। ক্লাশ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে আমি আপনার ডাকটা পাত্তা দেইনি।(কাঁদো কাঁদো সুরে)

সৈকতঃ সোহান,এভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবি না কিছু করবি?

সোহানঃ নিশ্চয়ই করবো।আজ এমন কিছু করবো যাতে পরবর্তীতে আমার চেহারা দেখলেও ভয় পায়।ডাক দেওয়ার আগে দৌড়ে চলে আসে।অনিক,সৈকত গিয়ে বালতি পানি নিয়ে আয় তো।(বাঁকা হেসে)

অনিক,সৈকত দৌড় দিলো পানি আনতে।পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিশাল বড় দুই বালতি ভর্তি পানি নিয়ে এলো।আমি ভয়ে কাঁপছি। কে জানে শয়তানগুলো কি করে?ওরা জানে না আমি যে তাসিনের ছোট বোন।তাই এতকিছু করার সাহস করছে।সোহান বালতি হাতে নিয়ে পানি সামনের মাটিতে ফেলে দিলো।

সোহানঃ এবার তোরা এই মাটিকে ইচ্ছে মতো পারিয়ে কাদা কাদা কর।

সোহানের আদেশ পেয়ে শুধু শোভা ছাড়া বাকি সবাই জুতা খুলে সেখানে পারাতে লাগলো।পা দিয়ে কাঁদার ছিটা আমার শরীরের ছুঁড়ে মারছে।এবার আমার বাধ্য চোখের পানি অবাধ্য হয়ে ঝরে পরলো।মাথা নিচু করে কাঁদছি। আমার পুরো সাদা ড্রেস কাঁদার ছিটে ফোঁটায় মাখামাখি। তামাশা দেখার জন্য পুরো ক্যাম্পাসের ছেলে মেয়ে আমাদের ঘিরে ফেলেছে। সবাই হাসি-ঠাট্টা করছে আমাকে নিয়ে। কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে আমাকে বাঁচাচ্ছে না।আমি ছোট বেলা থেকে কিছুটা চুপচাপ স্বভাবের। কারো সাথে বেয়াদবি করতে পারি না।তাছাড়া আমার প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারি না।কাদা বানানো শেষ হতেই সোহান আমার সামনে এসাইনমেন্টের কাগজগুলো একটা একটা করে সেই কাঁদার মধ্যে ফেলে দিলো। আর পা দিয়ে পিষে সেগুলো নষ্ট করতে লাগলো।আমার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। আমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।আমার কানের কাছে এসে সোহান বললো।

সোহানঃ এরপরের থেকে আমার কথা অমান্য করার আগে আজকের দিনটার কথা মনে রেখো।তাহলে এসব কাজ কখনো করবে না।(উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে) সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছি, এই মেয়েকে দেখে শিখে নেও।আমার কথা অমান্য করলে তোমাদেরও ঠিক একি অবস্থা হবে।কথাটা মনে রেখো।তাহলে তোমাদেরি ভালো।

কথাগুলো বলে হাসতে হাসতে সোহান ও তার দল সেখান থেকে চলে গেল। আমি হাঁটু মুড়ে বসে পরলাম।ধীরে ধীরে সবাই কানাঘুষা করতে করতে চলে গেল। একটা এসাইনমেন্ট ছুঁড়ে অন্যদিকে ফেলেছিলো।আমি দৌড়ে গিয়ে সেটার কাগজ তুলতে লাগলাম।এক হাতে চোখ মুছছি আরেক হাতে কাগজ কুড়াচ্ছি।তখনি কেউ আমার সাথে এসাইনমেন্টের কাগজ কুড়াতে লাগলো।আমি মুখ তুলে দেখলাম একটা বড় গোল চশমা পরা, ছিমছাম গঠনের, শ্যাম বর্ণের একটা বোকা-সোকা দেখতে ছেলে আমার সাথে কাগজ তুলছে।সে সব কাগজ কুড়িয়ে আমার হাতে তুলে দিলো।পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো।

তীব্রঃ আমি ইমতিয়াজ আহমাদ তীব্র।আপনি রুমালটা দিয়ে চোখের পানি মুছে নিন।এই মায়াবী মুখে হাসি মানায়,কান্না নয়।দয়া করে আপনি কান্না বন্ধ করুন। আপনার সাথে ওরা কাজটা ঠিক করলো না।আমি বাঁধা দিতে চাইছিলাম, তখনি কতগুলো ছেলে আমাকে আটকালো।বললো, ওদের সাথে লাগতে যাওয়া আমার ঠিক হবে না। আমি আবার মারামারি থেকে দূরে থাকি। তাই আপনাকে হেল্প করতে পারলাম না।তাছাড়া আমি ঠিক শেষ মুহুর্তে এসেছিলাম।তখন আমি কিছু বললে আপনার ওপর আরো ভেজাল হতো। আপনি হয়তো আমাকে ভুল বুঝতে পারেন।কিন্তু এটাই ঠিক।আমি কিছু বললে আপনার সাথে আরো খারাপ কিছু করতো।

আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে ছোঁ মেরে আমার এসাইনমেন্টের কাগজগুলো নিয়ে দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে কলেজ গেইট দিয়ে বের হয়ে গেলাম।

রাই চলে যেতেই তীব্রর হাতের মুঠ শক্ত হয়ে এলো। রাগে কপালের রগটা ফুলে ফেঁপে উঠছে। যদি সবার শেষে না আসতো তাহলে আজ সোহানের খবর হয়ে যেতো।

তীব্রঃ একটাকেও ছাড়বো না আমি।প্রত্যকটাকে তার কাজের হিসাব দিতে হবে।ওদের জন্য কি অপেক্ষা করছে ওরা নিজেও জানে না। অনেক বড় ভুল করলি তোরা,অনেক বড় ভুল।রেডি হয়ে যাস তোদের প্রাপ্য পাওয়ার জন্য। (রেগে)

সোহান ও তার দল জানে না কার কলিজায় হাত দিয়েছে। যদি জানতো তাহলে এই কাজটা করার আগে হাজারবার ভেবে নিতো।তাসিন ওদের কি করতে পারে তা ওদের ধারণারও বাইরে।ওর বোনের সাথে অসভ্যতামী,সারা কলেজ ক্যাম্পাসে সবার সামনে অপমান,এসাইনমেন্ট নষ্ট করে ফেলা,ওর বোনের হাত ধরা।এগুলো তো জীবনেও মানবে না সে।কি যে অপেক্ষা করছে সোহানদের জন্য তা ওরা ভাবতেও পারবে না।

#চলবে