তোর রঙে রাঙাবো পর্ব-০৬

0
2107

#তোর_রঙে_রাঙাবো
#Part_06
#Writer_NOVA

চৌধুরী বাড়ি……

রাতের বেলা আবছা অন্ধকার রুমের রকিং চেয়ারে বসে আছেন মধ্য বয়স্ক লোক সোবহান চৌধুরী। কিছু একটা ভেবে থেকে থেকে রেগে উঠছেন তিনি।তার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার দুই ছেলে সোহাগ ও সোহান চৌধুরী।তাদের বাবা যে খুব রেগে আছে তা তারা বেশ ভালোই আঁচ করতে পেরেছে।

সোহানঃ ড্যাড, আমি জানতাম না বিষয়টা।মেয়েটা তাসিনের বোন জানলে আমি আরো বেশি কিছু করতাম।সামান্য এসাইনমেন্ট নষ্ট করে চলে যেতাম না।তুমি তাহলে এই তাসিনকেই খুঁজছিলে?

সোহাগঃ তোর দ্বারা এই জীবনে কিছুই হবে না। দিলি তো তাসিনকে রাগিয়ে।এবার ওর হাত থেকে বাঁচাবে কে?সবসময় প্ল্যানে পানি ঢালিস তুই। এখন তাসিন নিশ্চয়ই তোকে হন্যি হয়ে খুঁজবে।আর খুঁজতে খুঁজতে আমাদের পরিচয় জেনে ফেললে সমস্যা হয়ে যাবে।

সোবহানঃ থাম তোরা।যা করার তো করেছিস।এখন পরবর্তী পরিকল্পনা চিন্তা কর।তাসিনের বোনকে তুলে এনে ওকে দিয়ে সম্পত্তির দলিলে সই করে নিতাম।কিন্তু এখন তোকে বাঁচাতে হবে আমায়।এতখনে তাসিন তোর খোঁজ পেয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে তোকে কষিয়ে দুটো মারতে।তোর জন্য এত সামনে রাইকে পেয়েও আমরা এখন কিছু করতে পারবো না। নিজের ভালো চাইলে শহর ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাক।

সোহাগঃ ড্যাড, গ্রামে আমাদের যে জমি ও বাড়িটা আছে সেটা কি আদোও আমাদের?

সোহানঃ বড় ভাইয়া,হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন করছো?

সোহাগঃ ড্যাড,বারবার আমাদের বলছে সম্পত্তির দলিলে তাসিনের সাইন লাগবে।তাই আমার সন্দেহ হচ্ছে। তাছাড়া ড্যাড, এটা নিয়ে অনেক টনশনে আছে।

সোবহানঃ এখন এসব কথা কিসের জন্য? যা কাজ দিয়েছি তা কর।পূর্বের কথা নিয়ে তোদের ভাবতে হবে না। আমার কালো ধান্দায় গত কয়েক বছর ধস নেমেছে ঐ মাফিয়া কিং-এর জন্য। আজ পর্যন্ত ঐ ছেলের দেখা তো দূরেই থাক কোন ছবি পেলাম না। সোহাগ,তোকে আমি একটা কাজ দিয়েছিলাম।তা কি তুই করেছিস?তাসিনের কোন ইনফরমেশন পেয়েছিস?আমার সন্দেহ হচ্ছে তাসিন সেই মাফিয়া কিং। এখন আমার সন্দেহ কি সঠিক কিনা তা বল।

সোহাগঃ ড্যাড,আমি গত কয়েক দিন তাসিনকে ২৪ ঘন্টা ফোলো করেছি।কিন্তু কোন ক্লু পাইনি।ও সারাদিন রাজনীতি নিয়ে থাকে।২/৩ দিন আগে আমি ওর বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।কিন্তু কিছুই পায়নি।ও আমাকে দেখে নিয়েছিলো।আমি দ্রুত গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছি।আমি সিউর মাফিয়া কিং অন্য কেউ।

সোহানঃ আমি কিছু দিনের জন্য রাঙামাটি চলে যাচ্ছি। তাসিন আমাকে হাতে পেলে মোয়া করবে। আজ সকালে ওর বোনের সাথে যা করেছি তাতে ও আমাকে ছেড়ে দিবে না।

সোবহানঃ তোর রাঙামাটি যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।আর সোহাগ তুই খোঁজ লাগা এই মাফিয়া কিং কে?এই সপ্তাহে আমি তার মুখোমুখি হতে চাইছি।কোন অযুহাত শুনতে চাই না।আমার এতবড় কালো ধান্দা আমি নিমিষেই নষ্ট হতে দিতে পারি না।

সোহাগঃ ড্যাড,আজ পর্যন্ত মাফিয়া কিং-কে যারা শুধু যারা দেখেছে তাদের অস্তিত্ব কেউ খুঁজে পায়নি।আমিও যদি লাপাত্তা হয়ে যাই।

সোবহানঃ এট এনি কোস্ট, আমার ঐ মাফিয়া কিং-কে চাই। কিভাবে আনবি,কোথা থেকে আনবি আমি জানি না। (রেগে)

সোহাগঃ গত পরশু আপনি ওর ডেরা থেকে জিনিসপত্র সরালেন। সেই খবর খুব দ্রুত ওর কাছে পৌঁছে গেছে। যার কারণে সব ক্যাটনগুলো আমাদের লোক গোডাউনেও ঢুকাতে পারেনি।যাদের কাজে নিয়ে ছিলেন তারা দেখেছে ছেলেটাকে।কিন্তু তাদের কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না আমাদের লোক।ঐ ছেলেটা গরীব,অসহায়দের জন্য কাজ করে।ওকে ধরা এতো সহজ হবে বলে মনে হয় না।

সোবহানঃ কোনটা সহজ আর কোনটা জটিল তা আমি বুঝবো।তোদের এতো মাথা ঘামাতে হবে না। যা করতে বলেছি তা কর।এখন রুম থেকে যা।আমাকে একা থাকতে দে।সোহাগ,তুই সোহানের রাঙামাটি যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দে।

সোহাগঃ ওকে ড্যাড।
সোহানঃ আমি আসছি ড্যাড।
সোবহানঃ সাবধানে থাকিস।

সোহান ও সোহাগ বের হয়ে গেলো। ওরা বের হতেই সোবহান চৌধুরী বিরবির করে বলে উঠলো।

সোবহানঃ আমার শুধু তাসিনের বোনকে চাই আপাতত।তাহলে তাসিন আমার হাতের মুঠোয়।
কথায় আছে না কান টানলে মাথা আসে।রাইকে নিয়ে এলে তাসিনও সুড়সুড় করে চলে আসবে।সরকারি অফিস থেকে ঝামেলা না হলে আমি তো নিশ্চিন্তে ছিলাম।সরকার এখন আমার ভোগকৃত সকল জমি ও সম্পত্তির দলিল দেখতে চাচ্ছে। কিন্তু কিছুই তো আমার নামে নেই। এখন আমাকে দাবার গুটি খুব সাবধানে চালতে হবে।যাতে করে পালের গোদা নিজে এসে ধরা দেয়।তারপর ওদের দুজনকে এই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিবো।যেমন দিয়ে ছিলাম ওদের বাবা-মা কে।আর তাদের হত্যাকান্ডকে একটা নাটকে রূপান্তর করে সবকিছু আমি ভোগ করতে লাগলাম।সৈয়দ বংশের এই পিচ্চি ছেলে-মেয়ে দুটোকে কত খুঁজেছি।আর ওরা আমার নাকের ডোগা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো।ভাগ্যিস, ঐ ছেলেটা আমাকে সঠিক সময় সঠিক তথ্য দিয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো।তাই আমি তাসিনের খোঁজ পেয়েছি। অপেক্ষা কর তাসিন, তোকে ও তোর বোনকে তোদের বাবা-মায়ের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।

কথাগুলো নিজে নিজে বলে রুম কাঁপিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো সোবহান চৌধুরী।কিন্তু সে হয়তো জানে না, পাপ কখনো নিজের বাপ কেও ছাড়ে না।পাপের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হয়।তাহলে তাকে কি করে ছেড়ে দিবে।খুব শীঘ্রই তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে।

🌺🌺🌺

ভোরে সকালে গুলির শব্দ পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠে পরলো সবাই। একটু আগেও পুরো গোডাউন জুড়ে ছিলো পিনপিনে নিরবতা।সবাই ঘুমিয়ে ছিলো।কিন্তু এখন হাসিব বাদে সবার মাঝে একটা চাপা ভয় দেখা দিয়েছে। তাদের সামনে উঁচু টিলায় বসে রাগে ফুঁসছে ছেলেটি।মুখটা অসম্ভব লাল হয়ে আছে। চোখ দুটোর দিকে তাকানো যাচ্ছে না।এক হাতে গান নিয়ে বসে আছে সে। এত সকালে তাকে যে দেখতে পাবে তা কেউ ভাবতে পারেনি। হাসিব নির্ভয়ে সামনে এগিয়ে এলো।

হাসিবঃ কি হয়েছে ভাই? আপনি এতো রেগে আছেন কেন? কোন বড় সমস্যা? এত সকালে তো আপনি ডেরায় আসেন না।

ছেলেটা বিনিময়ে কোন উত্তর দিলো না। কিছুটা ভ্রু কুঁচকে হাসিবের দিকে তাকালো। তারপর অগ্ন দৃষ্টিতে বাকি গার্ডদের দিকে তাকালো।

হাসিবঃ ভাই, আপনি শান্ত হোন।কি হয়েছে আমাকে খুলে বলুন।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

ছেলেটা নিজেকে শান্ত করার যথা সম্ভব চেষ্টা করলো।বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে হাত দুটোকে মুঠ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো। তারপর দৃষ্টি নিচের দিকে করে বললো

—- সোহান গত রাতে শহর ছেড়ে পালিয়েছে। ওকে তুলে আনার দায়িত্ব কাদের ছিলো? আমার গার্ড থাকতে সোহান পালালো কি করে? রাই-য়ের সাথে অসভ্যতামী করে,আমাদের চোখে ধূলো দিয়ে, রাতের অন্ধকারে নিজের বাড়ি ছেড়ে পালালো কীভাবে? রাই কে কাঁদিয়েছে ও,সবার সামনে অপমান করেছে। আমি এগুলো কি করে সহ্য করবো?এন্সার মি।

ছেলেটার চিৎকারে সবাই কিছুটা কেঁপে উঠলো। সবার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অপু,রিপন,শান্ত,আযিম ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। কারণ গতকাল সোহানকে ধরে আনার দায়িত্বে তারা ছিলো।তারা দরদর করে ঘামছে।গলা শুকিয়ে আসছে, বারবার শুকনো ঢোক গিলছে।

হাসিবঃ আপনি চিন্তা করেন না ভাই। পালিয়ে যাবে কোথায়? এই শহরে ফিরে ওকে আসতেই হবে। ফিরে এলে না হয় উপরে শিফট করে দিবো।

ছেলেটি সবার দিকে চোখ বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো

—- বাকিগুলোর খবর কি? ঠিকমতো আদর, যত্ন করেছিস তো? গতকাল রাতে আমার শরীরটা বেশি একটা ভালো লাগে নি বলে রইলাম না।সবগুলোকে তুলে এনেছিলি তো?

হাসিবঃ শোভা নামের মেয়েটা বাদে সবাইকে তুলে এনেছি।ছেলেগুলোকে গোডাউনের ওপরে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখেছিলাম দুই ঘন্টা। যতক্ষণ পর্যন্ত নাক, মুখ দিয়ে রক্ত গরিয়ে না পরেছে ততক্ষণ পর্যন্ত সেভাবেই ছিলো।যে ছেলেটা রাই-য়ের হাত ধরেছিলো তার অবস্থা বেশি করুন। কারণ সে যে হাত দিয়ে ধরেছিলো সেই হাতের তার কব্জি কেটে ফেলেছি।বাকিগুলোকে ইচ্ছে মতো গরম পানিতে চুবিয়েছি।ঘন্টাখানিক পর সবগুলোকে অজ্ঞান করে সব ভুলিয়ে হসপিটালে ভর্তি করে রেখে আসবো।নো টেনশন,
আমাদের চিনবে না। এমন ড্রাগস দিবো গতরাত সহ আজকের দিনও ভুলে যাবে।তবে একটু ব্রেণ ওয়াস করতে হবে। যাতে ওরা নিজ থেকে সারা কলেজের স্টুডেন্টের সামনে রাইয়ের কাছে গিয়ে মাফ চায়।

ছেলেটা কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো

—- মেয়েদের গায়ে হাত তুলিস নি তো? আমি তো বলে গিয়েছিলাম ভাড়া করে পুলিশের দারোগা মেয়ে অফিসার গুলোকে নিয়ে আসতে।তা কি করেছিলি?

হাসিবঃ আপনার কথা মতো সব হয়েছে ভাই। দরোগা মহিলা গুলো ইচ্ছে মতো শাস্তি দিয়েছে মেয়ে দুটোকে।চুল ধরে পানিতে চুবিয়েছে।সারা রাত ভেজা কাপড়-চোপড়ে রেখেছে। মেয়ে দুটোকে দারোগার হাতে তুলে দিয়ে আমরা ছেলে তিনটাকে শিক্ষা দিয়েছি।সারারাতে মেয়ে দিটোর রুমের দিকে পা মাড়ায়নি।তবে ঠাস ঠাস চড়ের শব্দও পেয়েছি। নিশ্চয়ই গাল দুটো লাল টমেটো হয়ে গেছে।

—– সবগুলোকে হসপিটালে ভর্তি করে দিয়ে আয়।আর আজকের মধ্যে সোহানের সব ডিটেইলস আমার চাই। ও কোথায় আছে তা আমি জানতে চাই। জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো ওকে।ওর কলিজা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।এতবড় কলিজা ওকে কে দিয়েছে? নিজেদের কাজে লেগে পর।

মুখে মাফলার পেঁচাতে পেঁচাতে গোডাউন থেকে বের হয়ে গেলো ছেলেটি।সে যেতেই সবাই স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে যার যার কাজে লেগে পরলো।হাসিব বুকে ফুঁ দিয়ে ধপাস করে চেয়ারে বসে পরলো।ছেলেটির সামনে যতটাই সাহসিকতা দেখাক না কেন, সেও কম ভয় পায় না।তবে সবসময় নয়।ছেলেটার রাগী ও গম্ভীর চেহারাটা তাদের জন্য ঘূর্ণিঝড়ের থেকেও কম নয়।নিজের লোকরা তার রাগ সম্পর্কে অবগত আছে।তাই ছেলেটিকে এতো ভয় পায় তারা।

#চলবে

রি-চেইক দেওয়া হয়নি।ভূল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।