তোর শহরে প্রেম পর্ব-০২

0
312

#তোর_শহরে_প্রেম

#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-২

তন্ময় আর তার বন্ধুরা মিলে কর্ণারের একটা টেলিবে বসেছে। তন্ময় মোবাইলে কিছু দেখছে। বাকিরা নিজেদের মধ্যে গল্প করতে ব্যস্ত।

সর্বপ্রথম মাহির চোখে পরলো তন্ময়কে, মাহি অনুকে বললো,দেখ জম আমাদের পিছু ছাড়বে না।

-জম মানে,

– তন্ময়ের দিকে ইশরা করে বলে জম মানে জম

– এবার কি হবে? এই চাকরিটা তো আমাদের একমাত্র ভরসা।
– কিছুই হবেনা তুই শুধু স্বাভাবিক থাক। ওদের কাছে আমি যাই।

মাহি ওদের সামনে যে ভদ্র ভাবে বললো,হাই, স্যার আপনাদের কিভাবে সাহায্য করতে পারি।

জেনী বললো, চিকেন শাশলিক,চিকেন কাবাব,চিকেন মাসালা আর ফ্রাইড রাইস। কথা শেষ করে সামনে তাকিয়ে বলে তুমি?

জেনীর কথা শুনে সবাই সামনে তাকায়।

মাহি নিজেকে সামলে নিয়ে কোনমতে বলে জ্বি ম্যাম আমি এখানে জব করি।

জেনী হেসে বলে এই লেভেলে থেকে আবার আমাদের সাথে লাগতে আসো।
আবির বললো,জেনী এসব কি হচ্ছে আমরা এখানে খেতে এসেছি। কারো সাথে ব্যক্তিগত শত্রুতা করতে না।

ইয়ামিন তন্ময়কে বললো তুইকি সিরিয়াসলি ওই মেয়েকে বিয়ে করবি!

-তোর এটা নিয়ে এতো ভাবতে হবে না। আমারটা আমি বুঝবো।

মাহি আর অনু খাবার নিয়ে আসছে মাহির একার পক্ষে এতো খাবার নিয়ে আসা সম্ভব না।

বর্ষা বললো, ভাবিজি আপনিও কি এখানে জব করেন?

মাহি খাবার সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললো,জ্বি ম্যাম আমারা অতি সাধারণ ফ্যামিলির তাই নিজেদের খরচ নিজেদের বহন করতে হয়।

তন্ময় মোবাইলটা টেবেলি রেখে অনুর হাত ধরে টেনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে দিলো। রেস্টুরেন্টে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
তন্ময় ম্যানেজারকে ডাকতে লাগলো, ম্যানেজার এসে বলে জ্বি স্যার।
– এদেরকে জব কেনো দিয়েছো?
– অনু বললো, জবটা আমাদের প্রয়োজন ছিলো।
তন্ময় জোড়ে বললো,মন্টু মিয়া প্রশ্নটা আপনাকে করেছি!
– স্যার এনাদের জবটা ভিষণ প্রয়োজন ছিলো তাই

– তাই বলে যাকে তাকে জব দিয়ে দেবে। জানো ইনি কে?
মন্টুমিয়া মাথা নারিয়ে না বোঝালো।

-ভবিষ্যতে এই রেস্টুরেন্টে মালকিন।

অনু তন্ময়ের কোল থেকে উঠার জন্য চেষ্টা করছে।। তন্ময় বললো,সুইটহার্ট একটু ধৈর্য ধরো এতো উতলা হচ্ছ কেনো? আমি না চাইলে তুমি নড়তেও পারবেনা।

কেনো করছেন এরকম। আমি পুরো ভার্সিটির সবার সামনে আপনার পায়ে হাত রেখে ক্ষমা চাইবো তবুও ছেড়েদিন আমাকে।

– সো সেম অন ইউ বেবি। এখন পা কেনো কোন কিছুতেই কাজ হবে না। আমার এই গালে থাপ্পড় দিয়েছিলে, আর মুখে থুথু নিক্ষেপ করছো সেই অন্যায়ের শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।

তন্ময় অনুকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, অনু তন্ময়ের পায়ের কাছে পরেল। তন্ময় কিছুটা ঝুকে বলে,স্বামী পায়ের নীচ মহিলাদের জন্য উত্তম জায়গা। তাই এখন থেকে অভ্যাস করো বেবি।

তন্ময় বললো, মন্টু মিয়া মালকিন যেনো আর কাজ না করে খেয়াল রাখবেন।

মাহি সাহস করে তন্ময়ের সামনে এসে বললো ভাইয়া, প্লিজ এমন করবেন না জবটা আমাদের প্রয়োজন!

অনু উঠে দাঁড়িয়ে মাহিকে বললো, এদের কাছে ভিক্ষে না চেয়ে চল রাস্তায় ভিক্ষে করবো।কারণ রাস্তায় মানুষ থাকে এনাদের মতো অমানুষ নয়।

তন্ময় বললো,আই লাইক ইউর এটিটিউড বেবি। এতোই যখন ভিক্ষে করার শখ তাহলে ভার্সিটিতে ভর্তি না হয়ে। ভিক্ষুক সমিতির সভাপতি হতে পারতে।

সবাই হো হো কে হেসে উঠলো।তন্ময় বললো,তোরা এভাবে হাসছিস কেনো! মত হোক তোদের দুই মাসের ভাবি বলে কথা।
আবির এগিয়ে এসে তন্ময়ের কানে মুখে বললো, এটা কিন্তু ঠিক করছিস না। পার্সোনাল প্রবলেম পার্সোনাল রাখ। এভাবে কাউকে অপমান করা ঠিক না। চল এখান থেকে।

তন্ময় বলে, জান চলে যাচ্ছি, তবে আর যাই করো ভিক্ষে না শতহোক শেখ বাড়ির ৬০দিনের বউ হবে ভবিষ্যতে সো বি কেয়ার ফুল বেবি। বলেই ফ্লাইং কিস দিয়ে বের হয়ে গেলো।

অনু মাহিকে বললো এখন কি করবো!
– চল আজকের টাকা নিয়ে চলে যাই টুকটাক বাজার করে দু’তিন চলে যাবে আর অন্যকোন ব্যবস্তাও হয়ে যাবে ।
ম্যানেজার মন্টু মিয়ার থেকে আটশ টাকা নিয়ে বেরিয়ে আসলো। টুকটাক বাজার করে বাসে করে বাসায় ফিরলো।

নীলাভ্র বললো, মেয়েটা কিন্তু ন্যাচরাল বিউটি।কি সুন্দর গোলাপি ঠোঁট, কাজল বিহীন টানা টানা চোখ, হলদে ফর্সা গায়ের রঙ। তন্ময় নীলাভ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ওর দিকে নজর দিবি না। যতদিন আমি ওকে ছেড়ে না দিচ্ছি। বর্ষা বললো, তোর ওকে বিয়ে করার দরকার কি?বিয়ে ছাড়াই তো ওকে বাদঁর নাচ নাচানো যাবে।

তোদেরকে কতবার বলবো, ওর বিষয়টা সম্পূর্ণ আমার উপর ছেড়ে দে! তোদের ভাবতে হবে না ওর সাথে যা করার আমি করবো।

তোরা বাসায় যা আমি সারাকে নিয়ে ফিরছি।

ক্লাস শেষ করে সারা লাইব্রেরিতে কিছু সময় নোট করলো বসে বসে। লাইব্রেরি থেকে বের হতেই তন্ময় কে দেখে মুচকি হেসে বলে, চলে এসেছিস!

– হু তোকা না নিয়ে বাসায় ফিরলে চাচ্চাু,আর বাবা বাসায় ঢুকতে দেবে না।

-এবার কথা না বাড়িয়ে চল তাড়াতাড়ি। আর হ্যাঁ ওই অনাহিতা মেয়েটা তোকে খুঁজছিলো! মেয়েটা কিন্তু ইনোসেন্ট আর সুইট।

– তোর ওই বিচ্ছু মেয়েকে সুইট,আর ইনোসেন্ট মনে হচ্ছে। ভুলে গেছিস কি কান্ড ঘটিয়ে ছিলো?

– দোষ কিন্তু মেয়েটার একার না। নিজের সম্মানে আঘাত লাগলে প্রতিবাদ তো বোবাও করবে।

– সো হোয়াট, আমি বলেছিলাম তো সমাধান আমি করবো।সে কি করেছিলো?
– তুই ভুলে যাস না বর্ষা আর জেনী তোর সামনে মেয়েটার সাথে কি করেছিলো, ওই মেয়ের জায়গায় যদি সেম কাজটা কেউ আমার সাথে করতো তখন কি করতি?
– তোর জ্ঞান তোর কাছে রাখ! চল বাসায় চল।

-মেয়েটা আমার পছন্দ হয়েছে,তানিম ভাইয়ার জন্য।
– তোর মাথা ঠিক আছে তো?
– একটা রাস্তার মেয়ে পছন্দ করেছিস ইয়াং বিজনেস ম্যান তানিম হাসানের জন্য?আর ইউ ক্রেজি!

-কয়লার খনিতে কিন্তু হিরে পাওয়া যায়।

– চুপ কর আগমী সাত দিন পর সে হবে মিসেস তন্ময়। তারপর গুনে গুনে ষাট দিন আমার ওয়াইফ। দুই মাস পর তোর ওই কয়ালার হিরেকে যার ইচ্ছে তার বউ বানাস।

অনু বাসায় এসে রান্না করলো,আলু সেদ্ধ আর ভাত
মাহি বললো,দু’দিন পর তো এটুকুও জুটবে না।
– চিন্তা করিস না। বাড়িওয়ালা ভাবি বলেছে আমাকে টিউশন ঠিক করে দেবে আর অগ্রিম বেতন পাইয়ে দেবে।
– সত্যি বলছিস!
– হুম সত্যি তুই যখন ওয়াশরুমে ছিলি তখন ভাবি এসেছিলো।

সাজু মিয়া তার স্ত্রীকে বলছেন, তোমার মেয়ের জেদ আমার মান সম্মান না ধুলোয় মিশিয়ে দেয়ে!এই সাজু বেপারির একটা নাম আছে সমাজে।

সুফিয়া বেগম বললেন,তুমি বেশি চিন্তা করছো,আমাদের মেয়ের উপর আমার বিশ্বাস আছে। ও এমন কিছু করবেনা। যাদে আমাদের সম্মান নষ্ট হয়।

শেখ বাড়িতে ঢুকতেই তন্ময় দেখতে পেলো সবাই সোফায় বসে আসে। তন্ময় নিচের দিকে তাকিয়ে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আদিল সাহেব বললেন,ভার্সিটিতে তুমি পড়তে যাও নাকি গু*ন্ডা*মি করতে!

নিজের বাবাকে যথেষ্ট সম্মান করে তন্ময় সাথে ভয়ও পায়।

তন্ময় কিছু বলবে তার আগেই আদিল সাহেব তন্ময়ের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন।
বাসার সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো, কেউ বুঝতে পারেনি আদিল হাসেব এমন একটা কাজ করবে। তানিম এগিয়ে এসে বলে চাচ্চু কি হয়েছে? শান্ত হও। আমি দেখছি বিষয়টা।

– কি দেখবে তুমি! কিভাবে একটা মেয়ের সাথে তোমার আদরের ভাই অসভ্যতা করেছে? নিজের মোবাইলে একটা ভিডিও বের করে বলে, তাহলে দেখো। ভিডিও দেখে সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তন্ময়ের দিকে।
সারা বলল চাচ্চু আমি বলছি ঘটনাটা।

– তোমারা কেউ কিছু বলবেনা আজকে কথা হবে ওর আর আমার মধ্যে। তোমাদের জন্য এতো সাহস পেয়েছে। বেশি আদর দিয়ে বাঁদর তৈরি করেছো।

তন্ময় সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলে,মেয়েটার নাম অনাহিতা আমি মেয়েটাকে ভালোবাসি, আর ওকে বিয়ে করতে চাই!

এমন সিরিয়াস মূহুর্তে গেটের সামনে কারো আওয়াজ শোনা গেলো,কেউ বলছে, আসতে পারি?

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰