তোর শহরে প্রেম পর্ব-০৩

0
278

#তোর_শহরে_প্রেম

#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-৩

এই মূহুর্তে অনুর আগমন আগুনে ঘি ঢালার মতো। সবাই আশ্চর্য দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে, অনু বোকার মত সবার দিকে তাকিয়ে আছে। আদিল সাহেব বলেন বাহ বাহ বাহ ভালোই তো বিয়ে করার আগেই শশুড় বাড়ি হাজির। অনু তখন দরজার বাহিরে।তাই আদিল সাহেবের কথা শুনতে পেলো না। আদিল সাহেব বললেন তা এসেই যখন পরেছো বাহিরে কেনো ভেতরে আসো!

অনু এখনো তন্ময় কে দেখেনি। অনু ভিতরে এসে সারা কে দেখলো। সারার দিকে তাকিয়ে আছে।
সায়লা হাসান এসে বললো, তুমি কেনো এসেছে?
আসসালামু আলাইকুম আন্টি আমি অনহিতা, মিফতা ভাবি আমাকে পাঠিয়েছে আপনার বাসায়।
তন্ময়ের চাচি ইরা বেগম বললো,তোমাকে মিফতা পাঠিয়েছে?

-জ্বী আন্টি
– তুমি প্রাইভেট টিউটর?
– জ্বি আন্টি
– আচ্ছা তুমি ওর সাথে উপরে যেয়ে বসো। সারা ওকে আনহা আর আয়ানের রুমে নিয়ে যাও।

সারা অনুকে নিয়ে আসললো,রুমে ঢুকতেই সারা বলল,তোমার কি পৃথিবীতে কাজ করার আর কোন জায়গা নেই খুঁজে খুঁজে আমাদের বাসায় কেনো?

– প্লিজ আপু তন্ময় ভাইয়ার মতো আপনি আমাকে তাড়িয়ে দিয়েন না।এই টিউশনি আমার খুব প্রয়োজন এটাও যদি চলে যায় তবে হয়তো না খেয়ে থাকতে হবে।

– কেনো তোমার বাবা, মা নেই?
– থাকবেনা কেনো আ়ছেন। তবে আমাদের এমাসের খরচ ছিনতাই হয়ে গেছে। আমার বাবা আর টাকা পাঠাতে পারবে না। শুধু এই মাসটা তারপর এখানে আর পড়াতে আসবো না।

সারা বললো তুমি বসো আমি আসছি। সারা নিজের রুমে যেয়ে হাজার দশেক টাকা নিয়ে আসলো। টাকাগুলো অনুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, আশা করি এতে হয়ে যাবে! না হলে বল বাড়িয়ে দেবো।

অনু টাকাগুলো না নিয়ে বলে, আমি সাহায্য চাইনি! কোন বিনিময় ছাড়া কারো থেকে টাকা নিতে পারবো না আপু! দরিদ্র হতে পারি তবে ভিক্ষুক নই! আমার পরিবার আমাকে কারো থেকে এভাবে হাত পেতে নিতে শেখায়নি।

– দেখো তোমাকে আমি লেকচার শোনাতে বলিনি! এমনিতেই এই বাসায় তুমি পড়াতে পারবে না।
– আপনার বাসা আপনি না বললে হয়তো চলে যেতে হবে। তবে কোথাও না কোথাও ঠিক একটা কাজ পেয়ে যাবো। কষ্ট হবে একটু আর কিছু না।

– এতো যে কথা বলছো, এই বাসাটা কার জানো তুমি?

– না আপু আমি কি ভাবে জানবো!

– এটা তন্ময় হাসানের বাসা। এবার মনের সুখে পড়াও।

– চলে যেতে বললে তো চলেই যাবো তাই বলে মিথ্যে বলবেন?

– তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি! ওয়েট আনহা,আয়ান এদিকে আসো।

দরজার পেছন থেকে দুটো দশ, বারো বছরের ছেলে মেয়ে বের হয়ে আসলো। ইনি হচ্ছে তোমাদের নতুন টিচার!
দু’জনে একসাথে বলে উঠলো টিচার৷

অনু বোকার মতো তাকিয়ে আছে।
সারা বলরো হুম টিচার। তবে জানো ইনি হলেন তোমার তন্ময় ভাইয়ার ফ্রেন্ড।

– আনহা এসে অনুর হাত ধরে বললো এই সত্যি তুমি ভাইয়ার ফ্রেন্ড?
আয়ান এসে বললো, তুই সরতো জানিস না মেয়েরা হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে উত্তর তাড়াতাড়ি দেয়। এই এবার বলো তুমি সত্যি তন্ময় ভাইয়ার ফ্রেন্ড?

অনু আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে, যাদেরকে বাচ্চা ভেবেছিলো,এরা যে এক একটা বিচ্ছু সেটা বুঝতে বাকি নেই। কোন উত্তর না দিয়ে সারার দিকে তাকালো।

সারা বললো শোন ওরা তোর তন্ময় ভাইয়ার সেই ফ্রেন্ড যে তোদের তন্ময় ভাইয়াকে থাপ্পড় মেরেছিলো।

– আয়ান ওহহহহ আগে বলবে তো? তাহলে তুমি সেই মেয়ে যে কিনা শেখ বাড়ির ছেলের গায়ে হাত তোলার দুঃসাহস করেছো!

অনু মাথা নিচু করে কিছু ভেবে নিয়ে বললো,তাহলে আমি আসি। ভালো থেকো।

আনহা অনুর হাত ধরে বলে আসি মানে কি?এসেই তো পরেছো এখন আর যেতে পারবে না।
আমরা তোমার কাছেই পড়বো।

-কিন্তু তোমার ভাই আমাকে বাসা থেকে বের করে দেবে।আর আমিও তোমাদের পড়াবো না। যেতে দাও।

আয়ান অনুর সামনে এসে বলে, ইহাপে আনা বহত আসান হে, লেকিন নিকালনা মুশিকল হ্যাঁ।

অনুর বুঝতে বাকি নেই এরা হলো প্রচন্ড চালাক,এদের সাথে এতো সহজে পারা যাবেনা।
সারা বললো ওকে তোরা টিচারের সাথে ডিল কর আমি আসছি।

আদিল সাহেব বললেন,এই মেয়েকে বাসার ঠিকানা তুমি দিয়েছো?

– তন্ময় নিচের দিকে তাকিয়ে বলে, বললে বিশ্বাস করবে?

– বিশ্বাস করার মতো কথা হলে বিশ্বাস করবো না কেনো। আর এই মেয়েকে দেখে তো মনে হচ্ছে সাধারণ ঘরের মেয়ে। তোমার এতো মেয়ে থাকতে এই মেয়েকে কেনো পছন্দ হলো?

তানিম বললো, বড় আব্বু তুমি শুধু শুধু রাগ করছো, ও ছোট মানুষ কি বলতে কি বলে ফেলেছে। ছাড়ো তো ওর কথা।

– তোমার কি মনে হয় তানিম। ও ছয়, সাত বছরের বাচ্চা। যা খুশি বলে ফেলেছে! একজন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক যার বয়স ছাব্বিশের কোঠায়। এতো দিনে বিয়ে করলে এক বাচ্চার বাপ হয়ে যেতো। সে ছোট মানুষ!

-তন্ময় সামনে এসে বললো, তাহলে বিয়েটা করিয়ে দাও।
কথা শেষ হওয়ার আগে আরো একটা থাপ্পড় পরলো তন্ময়ের গালে।

আদিল সাহেব বললো,,মায়ের হোটেলে খাও আর বাপের টাকায় ফুটানি করো। নিজেতো বাপের ঘাড়ে বসে খাচ্ছে আবার আরেকজন কেও নিয়ে আসতে চায়! যাও পারলে নিজে ইনকাম করো তারপর কথা বলতে এসো। আসছে বিয়ে করিয়ে দাও।

ইরা বেগম এসে বলল,ভাইয়া আমার মনে হয় মেয়েটা সত্যি জানেনা এটা তন্ময়ের বাসা। কারণ আমি নিজেই মিফতাকে বলেছিলাম একজন প্রাইভেট টিউটর ঠিক করে দিতে। তখন ও বলেছিলো একজন আছে ও আমাকে কথা বলে জানাবে। দু’ঘন্টা আগেই এই মেয়ের কথা বলল।সাথে এটাও বললো এমাসের টাকাটা যেনো এডভান্স দিয়ে দেই।

– শেখো কিছু একটা মেয়ে হয়ে নিজের খরচ নিজে বহন করে। এবার বুঝতে পেরেছি এজন্যই এই মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে! ভাবছেএখন বাপের টাকায় চলছি, পরে বউয়ের টাকায় চলবো।

সবাই মুখ চেপে হাসি আটকে রাখছে।

আদিল সাহেব আবার বললেন তোমার মতো কেয়ারলেস ছেলেকে এই মেয়ে বিয়ে করবে বলে তো আমার মনে হয়না!

তানিম বললো বড় আব্বু হতেই পারে ওরা একে অপরকে পছন্দ করে।

– তুই আমাকে বোঝাতে আসিস না। আমার চুল বাতাসে পাকেনি। আচ্ছা যদি ও এই মূহুর্তে প্রমাণ করতে পারে মেয়েটাও ওকে ভালোবাসে তবে এই মেয়ের সাথেই আমি ওর বিয়ে দেবো।

তন্ময় চুপ করে আছে, দেখে আদিল সাহেব হেসে বলে, আমি জানতাম এটা পারবেনা।শোন জোড় করে ভালোবাসা হয়না ভালোবাসা ভালোবেসে অর্জন করে নিতে হয়।তানিম ওকে বলে দাও মেয়েটার আশেপাশেও যেনো ওকে না দেখা যায়। বলে লম্বা লম্বা পা ফেলে নিজের ঘরে চলে গেলেন।

সায়লা বেগম এসে বলে, হ্যাঁরে তুই তো বলেছিলে তোর নিজের কোন পছন্দ নেই তাহলে এই মেয়ে কে?

তন্ময় মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে তোমার ছেলের বউ।
তানিম এসে বলে যতই যা বলিস না কেনো আমার মনে হচ্ছে কোথাও কোণ গন্ডগোল আছে। না হলে তোর মতো ঢেঁড়সকে দিয়ে মা*রা*মা*রি সম্ভব প্রেম না।

– তুমি নিজেও তো ঢেঁড়স। এখন পর্যন্ত বিয়ে করতে পারলে না। আবার ছোট ভাইকে ঢেঁড়স বলছো।

– কি বললি আমি ঢেঁড়স তবে-রে। বলেই দু’জনে ছোটাছুটি করতে লাগলো।

ইরা বেগম সায়লা বেগমকে বললো, বুঝলে ভাবি এরা যে বড় হয়েছে নিজেরাও ভুলে যায়। আর আমাদেরকেও ভুলিয়ে দেয়। কে বলবে কিছু সময় পূর্বেই দুই দু’টো থাপ্পড় পরেছে এই ছেলের গালে।মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি।

– এদেরকে নিয়ে আর পারিনা। যেমন বাবা তেমন ছেলে। না জানি দুই বাপ ছেলে মেয়েটার সাথে কি করে?

– এটা ঠিক বলেছো ভাবি, এখন ভাইয়া চাইবে এই মেয়ে এই বাড়ির বউ না হোক! আর তন্ময় চাইবে বউ করতে মাঝখানে বেচারি মেয়েটা ফেঁসে যাবে।

এরমধ্যেই সারা নিচে এসে বলে খেতে দাও আমাকে।

ইরা বেগম সারাকে বললো, হ্যাঁরে মেয়েটা কি সত্যি তন্ময় কে ভালোবাসে?

– এসব আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছো আম্মু! যার যার পার্সোনাল বিষয় আমি কি জানি!

সায়লা বেগম এসে বলেন তুই তো জানিস ছোট, এরা একজন আরকেজনের কথা কখনোই বলবে না। তার চেয়ে আমরা নিজেরাই জেনে নেবো।

সারা উঠে এসে বলে,বড় আম্মু তুমিও কি বড় আব্বুুর মতো হয়েছো। যা হওয়ার তাতো দেখতেই পাবে। এখন আমাকে খাবার দাও তো।

তন্ময় এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে তাড়াতাড়ি খাবার দাও খুব খিদে পেয়েছে।

তানিম নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে, অনু আনহাদের রুম থেকে বের হচ্ছে…..

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰