#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৩
রাতের আধার কেটে যেয়ে উদিত হলো নতুন দিনের সূর্য। অনু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরলো, এবার ঘরের টুকটাক কাজ শেষ করে। পড়তে বসতেই মোবাইলটা বেজে উঠলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কল রিসিভ করে কানে ধরতেই। ওপাশ থেকে তন্ময় বললো, এই মিস কি করছো তুমি?
– আপনি এতো সকালে?
– রাতেই তো কথা বলার ইচ্ছে ছিলো তবে ব্যস্ততার কারণে হয়ে উঠেনি। সে-সব কথা রাখ, তোমাদের বাসার পাশেই যে পার্কটা আছে, সেখানে চলে এসো যাস্ট ফাইভ মিনিট। কোন অজুহাত শুনবোনা। তুমি না আসলে কোলে করে নিয়ে আসবো।
আচ্ছা আমি আসছি। আয়নায় নিজের চেহারাটা একবার দেখে নিলো। চুলগুলো খোঁপা করে ওড়নাটা সুন্দর করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে পরলো।
তন্ময় একটা বেঞ্চের উপর বসে আছে। অনু ধীর পায়ে সেখানটাতে এগিয়ে গেলো।
অনুর উপস্থিতি বুঝতে পেরে, তন্ময় মৃদু স্বরে বললো, বস। অনু খানিকটা ফাঁকা রেখে তন্ময়ের পাশে বসে পরলো। তন্ময় পূর্ণ দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকালো। রেড আর ব্লাকের কম্বিনেশনে একটা সুতি প্রিন্টের থ্রিপিস পরা। মুখে নেই কোন প্রসাধনী। একদম ন্যাচারল বিউটি যাকে বলে, লিপস্টিক বিহীন গোলাপি দুটি ঠোঁট, কাজলহীন টানা টানা এক জোড়া চোখ। চেহারায় এক অদ্ভুত রকমের মায়া জড়িয়ে আছে। নিজের মনকে নিজেই প্রশ্ন করলো তন্ময়।তুমি এতো সাধারণ না হলে কি? খুব বেশি ক্ষতি হতো? তোমার এই অতি সাধারণ থাকা তোমাকে কেমন সবার থেকে অসাধারণ করে তুলেছে।
তন্ময়কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনু অপ্রস্তুত হয়ে পরে। আমতা আমতা করে বলে, আপনি কিছু বলবেন?
– বেখেয়ালাী ভাবে উত্তর দেয়, বলতে তো চাই অনেক কিছু কিন্তু তোমার সামনে আসলে সব কথা এলোমেলো হয়ে যায়।
– অনু বললো, মানে
-মানে তুমি বুঝবে না।
– বোঝালেই বুঝবো।
– আমি ভালো, ভদ্র ছেলে তাই তোমাকে ভালো ভাবে বলছি বিয়ে কিন্তু সাতদিন পরেই হবে। অলরেডি সাতদিনের তিন দিন শেষ আর বাকি আছে চারদিন।
– আমি ভেবেছিলাম আপনি ভালো হয়ে গেছেন। কিন্তু আমার ধারনা ভুল। আপনি আর ভালো হওয়া কেনদিন সম্ভব না।
তন্ময় হুট করেই অনুর কোলে মাথা রেখে বলে, এবার থেকে তোমার কাছ থেকে ভালো হওয়ার ট্রিকস নেবো
এবার আমার মাথাটা একটু টিপে দাওতো।
– উঠুন বলছি, এটা কি ধরণের অসভ্যতা।
– এখানে অসভ্যতা আসলো কোথা থেকে! প্রেমিকা তার প্রেমিকের মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে এটা তো ভালোবাসা। আর এখন এদিকটাতে মানুষ খুব কম তাই অতো না ভেবে দাও তো।
– দেখনু এসব আপনার জন্য নরমাল হলেও আমার জন্য এসব অসভ্যতা। কোন ভদ্র ঘরের মেয়ে বিয়ের আগে এসব করবে না।
তন্ময় উঠে বসে হাসতে লাগলো, সিরিয়াসলি তুমি ভার্সিটির স্টুডেন্ট!
অনু ভ্রু কুঁচকালো।
– না মানে তোমার কোলে যাস্ট মাথাটা রেখেছি তাতে তুমি যে ভাষণ দিচ্ছ, মনে হচ্ছে আমরা বিয়ের আগেই অবৈধ কোন কাজ করছি।
– তো এটা কি বৈধ?প্রতিটি মেয়ে হচ্ছে তার ভবিষ্যত হ্যাসবেন্ডের আমানত। তার মানে হলো তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গে স্পর্শ করার একমাত্র অধিকার শুধু তার হ্যাসবেন্ডের। আমার মা বলে, সেই মেয়েই হলো সবচেয়ে উত্তর যে তার স্বামীর কাছে নিজেকে পবিত্র একজন স্ত্রী হিসেবে সোপর্দ করতে পারে।
– তুমি তো আমার স্ত্রী হবে।
– ভবিষ্যতের কথা আপনি কি করে বলেন? যেখানে বেঁচে থাকার কোন গ্যারান্টি নেই। সেখানে আমি আপনার বউ হবোই তার কি গ্যারান্টি আছে?
– তাহলে চলো বিয়েটা আজকেই করে ফেলি।তাছাড়াও তোমাকে তো আমি দু’দুবার ছুঁয়েছি।
– সেটাই তো আমার ঊনিশ বছরের পবিত্রতা আপনি এক মূহুর্তে শেষ করে দিয়েছেন। আপনার জন্য এসব হ্যাসকর কিন্তু আমার জন্য আ*মৃ*ত্যু যন্ত্রণাদায়ক। কথাগুলো বলতে যেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলে অনুর চোখ থেকে।
– আরে তারজন্য কাঁদতে হবেনা। আজকে থেকে আমি তোমাকে আর টাচ করবো না। তবে চারদিন পর আমি তোমাকেই বিয়ে করবো।
– আমি এভাবে বিয়ে করতে পারবো না। আপনি যদি সত্যি সত্যি আমাকে বিয়ে করতে চান!তাহলে আমার বাবা,মায়ের পারমিশন নিয়ে আসুন। আমি বিনাবাক্য ব্যয়ে যখন বলবেন তখনি আপনার বউ হতে রাজি।
– ব্যাস এতোটুকু
– আপনার কাছে এতোটুকু হলেও এটাই আমার কাছে সব কিছু। আমার বাবা যা বলবে আমি তাই শুনবো।
– ওকে জানেমান। তুমি শুধু আমাকে ঠিকানা দাও তোমার বাসার। আগামীকাল এই সময় তোমার বাবা,মায়ের অনুমতি নিয়ে তোমাকে আংটি পরাবো।
– আপনি কেনো করছেন এমন। এই বিয়ে কেনো আপনার করতেই হবে? আমার চেয়ে রুপে, গুনে সবদিক দিয়ে পার্ফেক্ট মেয়ে আপনি পেয়ে যাবেন। তাহলে কেনো বিয়ে করতে চাইছেন?
– সে কৈফিয়ত আমি তোমাকে দেবো না। তবে তুমি সেই মেয়ে যে ভরা ভার্সিটির মাঠে আমার কালে চড় দিয়েছিলে।
– তাহলে আপনি আমাকে তার জন্য শাস্তি দিন! আপনার দেয়া যে কোন শাস্তি আমি মাথা পেতে নেবো।
– তাহলে আমাকে বিয়ে করে নাও এটাই তোমার সবচেয়ে বড় শাস্তি।
– এতোটা অবুঝ তো আপনি নন। তাহলে কেনো বুঝতে পারছেনা। বিয়ে কোন পুতুল খেলা নয় বিয়ে হচ্ছে দুটি হৃদয়ের গভীর প্রনয়।
– হইছে আজকের মতো অনেক জ্ঞান দিয়েছো। এখন আর জ্ঞান দিতে হবে না, কারণ যতই জ্ঞান দাওনা কেনো! বিয়ে আমি তোমাকেই করবো।
-আপনার কথা শেষ? তাহলে আমি এখন আসতে পারি!
– তন্ময় অনুর দুকে একটা শপিং ব্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে বলে, এটা নাও।
– কি আছে এতো? আর আমি বা কেনো নেবো?
– তুমি কি চাও আমি তোমাকে টাচ করি?
– না।
– তাহলে লক্ষী মেয়ের মতো নিয়ে নাও। আর হ্যাঁ আজকে এখান থেকেই একটা ড্রেস পড়ে আসবে।
– যদি না নেই? বা না পরে আসি?
– তাহলে জোড় করে আমার নিজের হাতে পড়িয়ে দেবো। এবার বাকিটা তোমার ইচ্ছে।
শপিং ব্যাগটা নিয়ে অনু বাসায় চলে আসলো। তন্ময় অনুর চলে যাওয়ার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলে, তোমাকে তো আমার মনের শহরে বন্ধি হতেই হবে। সেটা তোমার ইচ্ছেতে হোক বা জোড় করেই হোক।
______________________________________________
তানিম অফিসে কাজ করছে, এমন সময় অফিসের স্টাফ এসে বললো, স্যার আপনার সাথে দেখা করতে একজন ম্যাডাম এসেছে। পাঠিয়ে দেবো তাকে আপনার কেবিনে।
– পরিচয় কি বলেছে?
– বললো আপনার ফ্রেন্ড
– আচ্ছা পাঠিয়ে দাও। বলেই নিজের কাজে মন দিলো।
মেঘা চুপিচুপি এসে তানিমের চোখ ধরে বলে বলতো কে?
তানিম মেঘার হাত ছাড়িয়ে বলে মেঘা তুই?
– দেখেছিস তুই আমাকে কত ভালো মনে রেখেছিস।
– তোর কন্ঠ আমি চিনবো না।
– আমার কন্ঠ কোনদিন ভুলতে পারবা না। আমার কন্ঠ সব সময় তোমার কানে টেপ রেকর্ডের মতো বাজতে থাকবে।
– এই তুই আমাকে বিরক্ত করতে কেনো এসেছিস সেটা বল।
– তোর সাথে তোর বাসায় যাবো,কোন না শুনবো না যাবো মানে যাবো।
– অন্যদিন আজ হবেনা।
মেঘা তানিমের হাত থেকে ফাইল গুলো রেখে দিয়ে বলে, তুই যদি ভেবে থাকিস মেঘা ডাক্তার হয়ে ভদ্র হয়ে গেছে তাহলে ভুল ভাবছিস। আমি যেমন ছিলাম তেমন আছি। তবে আগের চেয়ে সুন্দরী হয়েছি, এই আর কি।
– তুই আর সুন্দরী। শেওড়া গাছের পেত্নী।
– আর তুই আমার শেওড়া গাছের ভূত। আয় ভূতে আর পেত্নীতে মিলে সংসার শুরু করেই দেই।
– মেঘা চা, কফি আইসক্রিম, কোনটা খাবি বল।
তানিমের হাত ধরে বলে, তোর বাসায় যাবো মানে তোর বাসায় যাবোই। চল।
– তোকে আমার অফিসের ঠিকান কে দিলো সেই কথাটা আগে বল।
– সেটা তোর জানতে হবে না। আমার কিউট দেবর আছে কত তাদের থেকে মেনেজ করেছি।
– তুই ফাইজলামি করছিস। তোর দেবর আসলো কোথা থেকে?
– সেটা যদি তুই বুঝতি তাহলে আর এতো বছর সিঙ্গেল থাকতে হতো না। চল তোরে আমি করলাপাতা থেকে গোলাপ ফুল বানিয়ে দেবো।
আর কিছু বলবে তার আগেই কেউ একজন এসে বলে, আসতে পারি স্যার?
#চলবে
#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১৪
অনু ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে বের হয়েছে, ঠিক তখনি একজন ছেলে এসে অনুর হাতে একটা চিঠি আর কিছু ফুল দিয়ে বলে, তন্ময় ভাইয়া বলেছে তোর ভাবির ক্লাস শেষ হলে এগুলো তাকে দিবি!
কিছু বলতে চেয়েও কিছু বললো না অনু,জিনিস গুলো নিয়ে সামনে একটা ফাঁকা জায়গায় বসলো। মাহিও দৌড়ে এসে অনুর পাশে বসলো।
অনু কাগজটা খুলে পড়া শুরু করলো, ডিয়ার হবু ওয়াইফ, আমি শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি। চিন্তা করো না, তোমাকে নিজের করে নেয়ার অনুমতি নিয়েই আসবো।
বাকিটুকু না পরে কাগজটা ফেলে দিলো।
মাহি বললো পুরোটা পরে দেখতি কি লিখেছে?
– বাদদে তো এসব আমার একদম অসহ্য লাগছে। এই ছেলের সাথে আমাকে সারা জীবন থাকতে হবে!এটা ভাবতেই পারছিনা। সারে শরীরে শুধু এটিটিউড, আর একশ মেয়ে এর পিছনে ঘুরঘুর করে। আর সাবিহা ম্যামের কথা মনে আছে!, তিনি বলেছিলেন সুন্দর ছেলেদের ক্যারেক্টার ভালো থাকে না।আর এই তন্ময় তো সার্টিফিকেট প্রাপ্ত অসভ্য।
– তোর এসব ভুল ধারণা। আমি খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি, তন্ময় ভাইয়া সব সময় মেয়েদের এরিয়া চলতো। তবে তার আগে একটা রিলেশন ছিলো! কোন কারনে সেটা ব্রেকআপ হয়ে যায়। তারপর থেকে উনি মেয়েদের থেকে আরো দূরত্ব রেখে চলে।আর ওনার কোন বেড রেকর্ড নেই ভার্সিটিতে।
– তুই এতো কিছু কিভাবে জানতে পারলি?
– ওনাদের ক্লাসের সিমন্তিনী দিদি বলেছে।
– সে আবার কে?
– ওইতো দেখ সিমন্তিনী দিদি। উনি খুব ভালো জানিস।
দিদি তো এটাও বলছে, তন্ময় ভাইয়া মানুষ হিসেবে অমায়িক।
– আমি চিন্তা করছি অন্য কথা।
– কি
– এই ছেলে হাত ধুয়ে আমার পিছে কেনো পরলো?
– হয়তো প্রথম দেখায় তোর প্রেমে পরেছে।
– সে আমার প্রেমে পরেনি।
– তুইো তো প্রথম দেখায় এক আগন্তুকের প্রেমে পরেছিলি।
– সে তো আমার কম্পমান।
– যদি বাস্তবে আসে?
– সম্ভব না আমি তার চোখ দেখেছি, দেখেছিলাম তার চলে যাওয়ার দৃশ্য। তার চেহারা দেখার সৌভাগ্য আমার কোনদিন হবেনা।
– তুই তো খুঁজিসনি
_ কি ভাবে খুঁজবো!না জানি নাম আর না জানি ঠিকানা। এভাবে কাউকে খোঁজা যায়। সে আমার কল্পনাতেই থাক। তার দেয়া সেই শার্টটা আঝো রেখে দিয়েছি যত্নে।
– ভাইরে তোর প্রেম দেখে আমি শেষ। যে সারাদিন পিছু পিছু ঘুরঘুর করে তার প্রেম চেখে পরে না।
– ভালোবাসা হলো একটা অব্যক্ত অনূভুতি কখন কি ভাবে কার জন্য তা- জন্ম নেয় বলা যায় না। আবার জোড় করে অনূভুতি তৈরীও করা যায় না।
– মনে হচ্ছে তুই প্রেমের উপর পিএইচডি করে রেখেছিস!
– জীবনে প্রেম না করেই পিএইচডি করে ফেলেছি সো ফানি।
– আচ্ছা বাসায় চল। দুজনেই উঠে হাঁটা হাঁটা শুরু করলো। কাগজের টুকরোটা উড়ে আবারো অনুর পায়ের কাছে এসে পরলো।
– তোকে হয়তো ছাড়তে চাইছে না।হয়তো সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট কথা তুই মিস করেছিস। তাই তোর কাছে এসে আবার পরলো।
অনু কাগজটা তুলে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো। আমার মনে হয়না কোন ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।
______________________________________________
অফিসের একজন স্টাফ তানিমের হাতে একটা কাগজ দিয়ে চলে গেলো।
মেঘা বললো, কিরে তোকে এখনো মেয়েরা লাভ লেটার দেয়?
– তুই চুপ থাক আমি দোখছি এটা কে? কাগজটা খুলতেই তন্ময়ের হাতের লেখা চোখে পরলো। দাভাই বাসায় একটু মেনেজ করিস। আমি শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি। বিয়ের আগে যাচ্ছি তাই একা একা আসলাম। কথা দিচ্ছি বিয়ের পর তোদেরকেও নিয়ে আসবো,।বাসায় সামলে নিস। তানিম টেবিলে কাগজটা রেখে দিয়ে বলে, এই ছেলে কখন যে কি করে।
– যাই করুক ভালোই করে।
– তুই কি বুঝলি যে বললি ভালোই।
– না মানে আমিও উঁকি দিয়ে পড়েছি তাই বললাম।
– এবার তুই চলে যা।
– বললেই হলো চলে যা। আমি তোর বাসায় যাবো মানে আজ যাবোই। এবার তাড়াতাড়ি চল।
ঘন্টা খানিক পর মেঘা আর তানিম বাসায় ফিরলো। প্রথম বার তানিম কোন মেয়েকে নিয়ে বাসায় এসেছে।
সবাই অবাক হয়ে বলে, যাক অবশেষে বউ-মাকে নিয়ে এসেছিস। বলেই মিসেস সায়লা বেগম মেঘার হাত ধরে নিয়ে সোফায় বসালেন। ভিষণ এক্সাইটেড হয়ে জিজ্ঞেস করল ন তোমার নাম কি মা? বাসা কোথায়? বাবা,মা তারা কেমন আছেন?
মেঘা পুরোই বোকা বনে গেলো, ভাবতেই পারেনি এমন গম্ভীর মানুষের পরিবারে মানুষগুলো এতো সুইট হবে।
– আমার নাম মেঘলা। বাসা উত্তরা, বাবা,মা ভালো আছেন। আপনি কেমন আছেন আন্টি?
– আমি ভালো আছি। তুমি বসো প্রথম বার আসলো আমি নাস্তার ব্যবস্থা করি।
সায়লা বেগম চলে যেতেই। ইরাবেগম আসলেন, আমার ছেলের পছন্দ আছে, কি সুন্দর একটা মেয়েকে আমার বউ করে এনেছে। বলেই নিজের হাত থেকে চুরি খুলে মেঘার হাতে পরিয়ে দিলো।
তানিম এসে বলে কি শুরু করছো আম্মু।এটা আমার। বলার আগেই মেঘ বলে, থাক জান তোমাকে এতো লজ্জা পেতে হবেনা। শ্বাশুড়ি আম্মুকে আমার পছন্দ হয়েছে।
তানিম বলে মেঘা বেশি হয়ে যাচ্ছে না।
– আরে তুমি যাও রেস্ট নাও। আজকে একটু শ্বাশুড়ি আম্মুদের সাথে আড্ডা দেই।
তানিম মুখ ফুলিয়ে চলে গেলো, মনে মেনে নিজেকে গালি দিচ্ছে আর বলছে, তোর আর কাজ ছিলো না।এই মেয়েকে বাসায় নিয়ে আসতে হবে!এবার বোঝ মজা। এসব ভাবতে ভাবতেই শান্ত তানিমের মাথায় এক দুষ্ট বুদ্ধি আসলো। তানিম সোজা চলে আসলো আনহা আর আয়ানের রুমে।
আয়ান তখন গেমস খেলছিলো আর আনহা লিখছিলো।
তানিম কে দেখে আনহা বলে দাভাই তুমি!
– আমার সুইট,কিউট ভাই,বোনরা কি করো।
– আয়ান বলে দেখছোই তো গেমস খেলছি।
– আমার একটা ছোট কাজ করে দিতে হবে।
– কি কাজ দাভাই।
তানিম আনহা,আর আয়ানকে কানে মুখে কিছু বলে দিলো।
দু’জনেই নাচতে নাচতে নিচে চলে আসলো।
তানিম মিটি মিটি হাসছে। রুম থেকে বের হতেই হঠাৎ সে দিনের কথা মনে পরে গেলো। নিজের অজান্তেই বারবার সেই অনুর কথাই মনে আসে। নিজেকে নিজে ধিক্কার জানিয়ে রুমে চলে যাবে এমন সময় খেয়াল করলো সারা কারো ছবি জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।
তানিম একবার ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলো। কিন্তু কিছু একটা ভেবে আর গেলো না। সোজা চলে আসলো রুমে।
আনহা এসেই মেঘার কোলে চড়ে বসলো তারপর মিষ্টি করে বললো, আন্টি আমার চকলেট কোথায়?
মেঘা তো জানেই না তানিমের ছোট ভাই বোন আছে।
মেঘাকে চুপ করে থাকতে দেখে আয়ান বলে, এটা হলো পঁচা আন্টি তাই চকলেট আনেনি। আয় উঠে আয়।
ইরা বেগম ধমক দিয়ে বলে, কি হচ্ছে, আনহা, আয়ান উনি তোমাদের ভাবিমনি হয়।আন্টি কেনো বলছো।
আনহা বললো, আন্টিকে ভাবি মনি মানি না। আযানো বললো আন্টি তো আন্টি।
সায়লা বেগম বললো, তোমরা নিচে কেনো এসেছো? যাও উপরে যাও।
আনহা আর আয়ান মুখে ভেঙচি কেটে চলে গেলো।
সায়লা বেগম বললেন, কিছু মনে করো না মা, এই দু’টো একটু ডানপিটে স্বভাবের।
– না আন্টি কিছুেমনে করিনি।
ইরা বেগম বললেন কিছুি তো নিচ্ছনা কিছু মুখে দাও মা।
মেঘা মনে মনে বলছে, এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। এবার আর আমাকে তোমার বউ হতে কেউ ঠেকাতে পারবেনা। মিস্টার তানিম হাসান শেখ।
______________________________________________
তন্ময় এসে পৌঁছেছে মধুপুর গ্রামে।গ্রামের কিছু মানুষের থেকে খোঁজ নিয়ে সাজু বেপারির সম্পর্কে সব খবর সংগ্রহ করেছে।সময়টা এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল গ্রামের অপরুপ দৃশ্য উপভোগ করছে তন্ময়। এমন সময় দেখা হলো আব্দুল্লাহর সাথে। তন্ময় এগিয়ে এসে বলল, তোমার নাম আব্দুল্লাহ তাইতো?
– আপনি জানলেন কি ভাবে?
– আমি আরো অনেক কিছু জানি শালাবাবু।
– আপনারে তো ঠিক চিনতেওই পারলাম না।
– এখন চেনোনি কিছুক্ষণ পর চিনে যাবে। নিজের ব্যাগ থেকে কিছু চকলেট বের করে আব্দুল্লাহকে দিলো।
– আব্দুল্লাহ মনে মনে বলছে এ হয়তো ছেলে ধরা চকলেট দিয়ে আমাকে বেহুশ করে নিয়ে যাবে।
তন্ময় বুঝতে পারলো আব্দুল্লাহর মনের কথা তাই বললো, শালাবাবু আমি তোমার একমাত্র বোন অনাহিতার একমাত্র জামাই।
কথাটা শেষ করার আগেই পেছন থেকে একজন বললো কি বললে তুমি!
#চলবে
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰