দম বন্ধ ভালোবাসা পর্ব-০২

0
6313

#দম_বন্ধ_ভালোবাসা
#পার্ট_০২
#Mst_Liza

আমার হাত ছেড়ে দিয়ে কোমড়ে হাত গুজে টেনে ধরলেন উনি।আমি কেঁপে উঠতে কিছু বলার আগে আমার ঠোঁটে নিজের আঙুল চেপে রাখলো।উনি আমার এতো কাছে যে উনার নিঃশ্বাস গুলো আমার বুকে পরছে।উনি ধীরে ধীরে আমার ঠোঁটের দিকে আগাচ্ছে আর আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আমি উনার বুকে হাত বাঁধিয়ে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলাম।উনি আমার হাতটা চেপে ধরলেন। আর কড়া শব্দে বললেন,

—আমার চেম্বারে এসো ফুল।

ঘুরে দাড়িয়ে আমার হাতটা শক্ত করে চেপে টেনে ধরলেন। নিজের সাথে করে নিয়ে যেতে লাগলেন চেম্বারের দিকে।উনি আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আর সকলে সিঁড়িতে উঠতে নামতে চলতে গিয়ে সেটা দেখছেন।আমি উনার থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেস্টা করছি।কিন্তু পারছি না।আমি বলে উঠলাম,

—আমি আসছি স্যার প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন।

উনি কোনো পাত্তা দিলো না নিজের মতো চলছেন।নিজের চেম্বারে ঢুকে আমাকে আচমকা কোলে তুলে নিলো।এটা কি হলো বুঝতে পারলাম না আমি।এতোক্ষণ সব তো ঠিকই ছিলো এখন কি হলো? তখন যে সকলের সামনে বলল কোনো মেয়ের সাথে লাইফে মিশি নি।ওটা কি তাহলে ঢপ দেওয়া কথা ছিলো?

_____________

উনার চেয়ারের সোজা সোজি রাখা অন্য একটা চেয়ার।চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসিয়ে দিলেন আমাকে।তারপর ঘুরে গিয়ে নিজের চেয়ারটাতে বসলেন উনি।টেবিলের উপর হাতের কনুই ঠেকিয়ে থুতনিতে হাত রেখে আমার মুখের দিকে এক পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।আমি উঠতে নিলে অন্য হাতটা দিয়ে আমার ওড়নাটা টেনে ধরলেন।আমি চাইলেও আর উঠতে পারলাম না।আমি যেন যেতে না পারি তারজন্য আমার ওড়নাটা নিজের হাতে ভালো করে কয়েক প্যাচ দিয়ে রাখলেন।তারপর খুব আদুরে গলায় বললেন,

—কি খাবে ফুল চা না কফি?

আমি মুখটা হা করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।মনে মনে ভাবছি কি করছে এটা স্যার? উনি হেসে উঠে ঘুরে আমার পেছনে আসলেন।পেছনের থেকে দুইহাতে আমার কাঁধে নিজের হাতদুটো চেপে রেখে বললেন,

—ভয় পেও না ফুল।এটাই তোমার শাস্তি।আমার ভালোবাসার শাস্তি দেবো তোমায়।এই হসপিটালটা আমার বাবার।আমি কতটা ভদ্র সেটা আমার বাবা জানে।খুব ছোট্ট বেলায় তোমাকে দেখে পছন্দ হয়েছিলো আমার।তোমার পেছনে অনেক ছুটেছি।তোমার স্কুল শেষে তোমাকে ফলো করতাম বলে তোমার বাবার হাতে মাইরও খেয়েছি।জেদ ধরেছিলাম তোমাকেই আমি বিয়ে করবো।তাই আমার জেদ পূরণ করতে ছোট থাকতেই তোমাকে টাকা খাইয়ে গুন্ডাদের দিয়ে উঠিয়ে আনি।তারপর জোড় করে বিয়েও করি।বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে বাড়িতে আসলে বাবা আমাকে অনেক মেরেছিলো।তোমাকে তোমার বাবার কাছে দিয়ে এসে আমাকে আমেরিকায় ফুপ্পির বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।বাবা বলেছিলো যখন আমি লেখাপড়া শেষ করবো।নিজের পায়ে দাড়াবো তখন দেশে ফিরলে তোমাকে এনে দেবে আমার জীবনে।আমি মন দিয়ে পড়ালেখা করেছি এতোদিন ধরে।আজ আমি একজন সফল ডাক্তার।দেশে আসার পর আমার বাবার কাছে তোমাকে চাইলাম।বাবা নিজের কথা রাখতে গিয়েছিলো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কিন্তু তোমার মা রাজি হয় নি।তিনি বলেছেন কিছুদিন আগে তোমার বাবা মারা গেছে।আর তার বন্ধুর ছেলের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করে রেখে গেছে।তোমার বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে তোমার বিয়ে তোমার বাবার বন্ধুর ছেলের সাথেই হবে।বাবা এটাও জেনে এসেছিলো তোমার মায়ের কাছ থেকে তুমি আমাদের হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করছো।আমাদের মেডিকেল কলেজে পড়ছো।এইজন্য আমি আর দেরি করলাম না।আজই জয়িন করলাম হসপিটালে।শুধু তোমার জন্য।

কথাগুলো বলে উনি একটু নিচু হয়ে আমার কাঁধে নিজের থুতনিটা রাখলেন।সামনে থেকে হাত এনে আমার গলাতে আলতো হাতের আঙুল ছুঁইয়ে আস্তে করে বুক পর্যন্ত আসতেই আমি ঘুরে উঠে দাড়ালাম।উনাকে ঠেলে কিছুটা দূরে ঠেলে দিয়ে বললাম,

—খবরদার।আমাকে আপনার নোংরা হাতে স্পর্শ করবেন না।আমার গা ঘিনঘিন করে আপনাকে দেখলে।ঘৃণা করি আপনাকে আমি।

উনি আমার নাম ধরে ডেকে এগিয়ে আসতে চাইলে আমি টেবিলের উপর থেকে একটানে সবকিছু ফেলে দিলাম। উনাকে বললাম,

—ওইদিনটা আমি আজও ভুলি নি।আমাকে জোড় করে তুলে নিয়ে গিয়ে ওইটুকু বয়সে বিয়ে করেছেন আপনি।এখনো আমার ঘৃণা হয় আপনার ছোটবেলার ওই মুখটাকে।

কথাটা বলে আমি বেড়িয়ে আসতে চাইলাম উনি আমাকে টেনে ধরলেন।আমাকে বোঝাতে চাইলেন আমি উনার কোনো কথা শুনতে চাইলাম না।রেগে গিয়ে উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে টেবিলের উপরে ফেললেন। আর শক্ত করে আমার কাঁধে হাত চেপে ধরে বললেন,

—তোর জন্য আমি এতোগুলো বছর নিজেকে তৈরি করেছি।এতো অপেক্ষা করেছি।এখন তুই বলছিস আমাকে ঘৃণা করিস? চলে যাবি? আমার কথা কি শেষ হয়েছে? তোকে আমি নিজের করে ছাড়বো।যে তোর জীবনে আসবে মেরে ফেলবো তাকে।

কথাটা বলে উনি আমার ঘাঢ়ে একটা কামড় বসিয়ে দিলো।আমি চিৎকার দিতে গেলে আমার মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে ঘাঢ় ছেড়ে দিয়ে নিজের মুখটা একটু উঁচু করে বলল,

—তুই আর আমার থেকে দূরে থাকতে পারবি না ফুল।

উনার কামড় এতো জোড়ে ছিলো যে ঘাঢ়টা মনে হচ্ছে অবাস হয়ে আছে।ব্যাথায় কুকড়ে আছি আমি।উনি এবার একটু নিচু হয়ে ঘাঢ়ে আলতো ভাবে ঠোঁটের পরস ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,

—খুব লেগেছে ফুল? বিশ্বাস কর রাগে আমার মাথার ঠিক থাকে না।তুই আমাকে রাগালি কেন ফুল? বল আমাকে ভালোবাসবি?

চলবে,,,