দম বন্ধ ভালোবাসা পর্ব-০৩

0
5497

#দম_বন্ধ_ভালোবাসা
#পার্ট_তিন
#Mst_Liza

উনার কামড় এতো জোড়ে ছিলো যে ঘাঢ়টা মনে হচ্ছে অবাস হয়ে আছে।ব্যাথায় কুকড়ে আছি আমি।উনি এবার একটু নিচু হয়ে ঘাঢ়ে আলতো ভাবে ঠোঁটের পরস ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,

—খুব লেগেছে ফুল? বিশ্বাস কর রাগে আমার মাথার ঠিক থাকে না।তুই আমাকে রাগালি কেন ফুল? বল আমাকে ভালোবাসবি?

উনিকে আমি ধাক্কা দিতে চাইলাম আমার হাতটা ধরে বসলো।আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম উনি চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে রইলো।আমাকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—আমি কিন্তু খুব রেগে যাচ্ছি ফুল।রাগলে আমি কি করি নিজেও জানি না।তোকে আবারও বলছি ফুল শান্ত হ।আমি যা বলি শোন।আমার মতো এতোটা ভালো তোকে কেউ বাসতে পারবে না।তোকে ছাড়া আমার জীবনটাই বৃথা।

আমি উনার হাতে জোড়ে একটা কামড় বসিয়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। উঠে চলে আসতে লাগলে পেছনের থেকে উনি আমার ওড়নাটা টেনে ধরলেন।আমি বললাম উনাকে ছেড়ে দিতে।উনি আমার ডান হাতটা টেনে ধরে এমন ভাবে ঘুরিয়ে নিলেন আমি এসে উনার বুকের উপরে পরলাম। আমার কোমড়টা শক্ত করে চেপে ধরলে আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগলাম।উনার বুকে নখের আচর দিতে লাগলাম।উনি রেগে গিয়ে আমার কোমড় ছেড়ে দিয়ে ঠেলে টেবিলের উপরে ফেললেন আমাকে।তারপর আমার ঠোঁটে জোড়ে কামড় বসিয়ে মুখটা বন্ধ করে রাখলেন।আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।আমার দু’চোখ বেয়ে পানি গাড়িয়ে পরছে।অনেকক্ষণ পর উনি আমার ঠোঁট ছেড়ে দিলে আমি হাত দিয়ে নিজের ঠোঁটটা ঢেকে রাখি।প্রচন্ড ব্যাথা করছে আমার।রাগ হচ্ছে, ঘৃণা হচ্ছে, এই মানুষটার উপর।আমি বুঝতে পারছি ছোটবেলা থেকে আরও অনেক হিংস্র হয়ে ফিরে এসেছে আমার জীবনে উনি।আমার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই আমি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ছুটে চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসলাম।

বাইরে এসে জোরে জোরে হাঁপাতে লাগলাম।পায়ের শব্দ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম উনি এগিয়ে আসছেন।আমি ভয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে পাশেই হসপিটালের স্টাফ লিফটটা দেখতে পেলাম।খুব দ্রুত এসে লিফটের ভেতরে ঢুকলাম।আর লিফটটা বন্ধ হয়ে গেলো।উনি পারলেন না আমার কাছে আসতে।

হসপিটালে আমাদের কলেজ সপ্তম ফ্লোরে।থার্ড ফ্লোরে উনার চেম্বারটা ছিলো।লিফট নিচের দিকেই আসছে।উনি যদি সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নিচে চলে আসে? এটা ভেবে ভয়ে আমার মুখ থেকে ঘাম ছুটছে।এক মুহূর্ত সময় নেই আমার হাতে।পাশে ঘুরে একটা সুইচ দেখতে পেলাম।আমার মনে পরলো কিছুদিন ধরে লিফটে কাজ চলছে।মাঝে মাঝে লিফট চলে মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়।সুইচটার পাশে বড় বড় অক্ষরে লেখা সাইনবোর্ড ঝুলানো।সুইচ অফ করতেই লিফট বন্ধ হয়ে যাবে। আমি আর দেরি না করে সুইচটা টিপে ধরলাম।আর সারা লিফটের মধ্যে আলো জ্বলতে নিভতে লাগলো।লিফট কাঁপতে কাঁপতে মাঝ পথেই বেঁধে রইলো।কিছু দেখা যাচ্ছে না।নিশ্বাসও নিতে পারছি না।ভয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।লিফটের মধ্যে আমি একা আটকে পরে আছি।কি করবো বুঝতে পারছি না।নিশ্বাস নেওয়ার চেস্টা করছি কিন্তু পারছি না।হাঁপাতে হাঁপাতে নিচে নুইয়ে পরলাম আমি।আমার দম বন্ধ হয়ে আসলো।মনে হলো কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ হচ্ছে।কিন্তু ফিল করতে পারছি না কিছু।আমার চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসলো।

হঠাৎ মুখের মধ্যে গরম গরম ধোয়া আসতে লাগলো।এটা ধোয়া না অন্যকিছু আমি বুঝতে পারছি না।চোখদুটো কাঁপছে আমার।কেউ ধোয়া দিচ্ছে আমি টানছি।আচমকা কিছু একটা ভেবে উঠে বসলাম আমি। অনেক লম্বা একটা নিশ্বাস ছেড়ে তাকিয়ে দেখলাম আমার মুখের সামনে উনি।আমি উনাকে ধাক্কা দিতেই উনি সরে গেলেন।নিশি আমাকে পাশ থেকে টেনে জড়িয়ে ধরলো।সামনে তাকিয়ে দেখলাম প্রিয়া আর মিনি আমার পায়ের তলায় তেল মালিশ করছিলো।মিনি বলে উঠলো,

—হৃদ স্যারকে ধন্যবাদ দে ফুল।উনি আজকে তোর জীবন বাঁচিয়েছে।

আমি রাগি দৃষ্টিতে তাকালাম উনার মুখের দিকে।প্রিয়া আমার পায়ের দিক থেকে ঘুরে পাশে এসে বসলো।আমাকে একটা খোঁচা দিয়ে বলল,

—কিরে ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? জীবনে ছেলে দেখিস নি? উনার দিকে তাকিয়ে লাভ নাই বুঝলি উনি আমার পছন্দ।আমার ক্রাশ।ওয়াউ কি সুন্দর দেখতে।কত্ত ভদ্র, কত্ত সুদর্শন।কিউটের ডিব্বা একখান।মন চাই বিয়ে করে নিই।জীবনে কখনো কোনো মেয়ের সাথে মিশে নি বলেছিলো না? এখন যেভাবে হিরোর মতোন লিফট ভেঙে তোকে বাঁচিয়ে তুললো।তোর দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো বলে বুদ্ধি খাটিয়ে তোকে মুখ থেকে নিশ্বাস দিলো। এত ভালো ছেলে কোথাও পাওয়া যায় না।আমার তো উনাকে চাই ই চাই!

আমি প্রিয়াকে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলাম। ভাবলাম প্রিয়ার যখন এতোই পছন্দ আমার এমন কিছু একটা করতে হবে উনি যেন আমার জীবন থেকে সরে বরাবরের মতো প্রিয়ার জীবনে চলে যায়। আমাকে ভয় পেয়ে পালালে চলবে না।এই হসপিটালটা উনার বাবার।আমি পালালে আমার মায়ের স্বপ্ন আমার ডাক্তার হওয়া সেটা কখনো সম্ভব হবে না।উনার সাথে যে ছোটবেলা আমার বিয়ে হয়েছিলো এটা আমার বাড়িতে কেউ জানে না।উনি যদি এমন কিছু শিকার করে বা প্রমাণ দেখাই তাহলে আমার মা খুব কস্ট পাবে।আর সায়ানও আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি ওকে ঠকাতে পারবো না।আমি মুখে হাসি তুলে উনাকে একটা ধন্যবাদ জানিয়ে প্রিয়া আর নিশির সাথে হোস্টেলে চলে এলাম।

চলবে,