দম বন্ধ ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
4874

#দম_বন্ধ_ভালোবাসা
#পার্ট_০৪
#Mst_Liza

আট বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল আমার।তখন আমি বিয়ে শব্দটার মানেও জানতাম না।স্কুল থেকে ফিরছিলাম। হুট করে এসে কিছু আঙ্কেল জোড় করে আমাকে গাড়িতে তুলে নেই। আমাকে ওই বজ্জাতটার সাথে বিয়ে দিতে চাই।আমি অনেক কেঁদেছি।চিৎকার করেছি। তবুও আমাকে বাড়িতে ফিরতে দেয় নি। বজ্জাতটা বলেছে বিয়ে করলে যেতে দিবে।আমি তো বুঝতাম না বিয়ে কি।আমি রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু ওই বজ্জাতটা বিয়ের পর বলেছে আমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে।বিয়ের পর নাকি শ্বশুর বাড়িতে মেয়েদের থাকতে হয়।তার মাও থাকছে। আমাকেও থাকতে হবে।আমি রাজি হয় নি।জোর করে আমাকে নিয়ে গিয়েছে।উনার বাবা খুব ভালো।তাইতো বিয়ের কথাটা জানতে পেরে উনাকে শাস্তি দিয়েছে।অনেক মেরেছে।আমাকে আমার বাড়িতে দিয়ে এসেছে।তারপরও ভয়ে কিছু দিন বাসা থেকে বের হইনি আমি।যখন সাহস করে স্কুলে আসলাম।আমার বাবা স্কুলে দিয়ে আসতো আর স্কুল ছুটির পর নিজে গিয়ে নিয়ে আসতো।দেখতাম না উনাকে আর আমি।ভেবে ছিলাম উনি হয়তো মারা গেছে।মারা গেলেই ভালো হবে।স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করছিলাম।এতো বছর পর উনি আমার জীবনে আবার এভাবে আসবে।এটা আমি কখনো ভাবিনি।এখন আমার জীবনটা আর শান্তিতে কাটাতে দেবে না বুঝতে পারছি।ঘুমের মধ্যেও উনার মুখটা ভেসে উঠছে।ঘুমের মধ্য ঠোঁটের উপরে আঙুলের ছোঁয়া পরতে ব্যাথা অনুভব করলাম।উঠে বসলাম আমি।ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নাতে দেখলাম ঠোঁটটা ফোলা ফোলা লাগছে।কি ভাবে কামড়েছে আজ।এই মানুষটার সাথে সারাটা জীবন থাকা কল্পনায়ও ভাবতে পারি না আমি।মানি না উনি আমার স্বামী।ওটাকে বিয়ে বলে?

আমাকে সায়ান কতটা ভালোবাসে।কত খেয়াল রাখে আমার।বিয়ে আমি সায়ানকেই করবো।

ঘুম আসছে না বলে আলোটা আর জ্বালালাম না।মিনি, নিশি, প্রিয়ার ঘুম না ভাঙিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।বাবাকে খুব মনে পরছে আজ।কত স্বপ্ন ছিলো বাবার আমি ডাক্তার হবো।আমি যদি জানতাম এই হসপিটালটা উনার বাবার তাহলে এখানে ডাক্তারি পড়তে কিছুতেই আসতাম না।এখন কিছুই করার নেই উনাকে সহ্য করতে হবে।সায়ান জানলে বিয়েটা না ভেঙে দেয়।

হঠাৎ আমার পেটে কারও স্পর্শ অনুভব করলাম। এতো রাতে আচমকা এমন হওয়ায় ভয়ে চিৎকার করতে চাইলাম আমি।তখন আমার মুখটা চেপে ধরে ঘুরিয়ে নিলো কেউ।

চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম উনি।আমার চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেলো।ভয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।উনি আমাকে ঠেলে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিলেন।উনার হাতের ঘড়িটার থেকে টিকটিক টিকটিক শব্দ বের হচ্ছে। আমার ওড়নাটা সরিয়ে দিয়ে বুকে আলতো করে একটা উঞ্চ পরস ছুঁইয়ে দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালেন।আমাকে বললেন,

—“আমি জানতাম জানেমন, তোমাকে এখন এখানেই পাবো।কারণ এটাকেই ভালোবাসা বলে।তুমি যেখানে যেখানে যাবে আমার মন ছুটে চলে আসবে।দেখও না পাইপ বেয়ে চলে আসলাম।সায়ন কি পারবে এটা করতে?”

আমি উনার মুখের দিকে তাকালাম।ভাবলাম সায়ানের কথা কিভাবে জানলো? উনি আমার গালটা চেপে ধরে বলল,

—“কি ভাবছো? ভালোবাসি তোমায়। তোমার মনের খবর জানবো না? দেখও জানেমন।এতোদিন যা করেছো করেছো।এখন আমি এসে গিয়েছি। কাউকে ভাবতে ইচ্ছে করলে আমাকে নিয়েই ভেবো।ভালোবাসবে শুধুই আমাকে।আরে তুমি আমার ছোট্ট কালের বিয়ে করা বউ।এতো সহজে ছেড়ে দিবো? কত মাইর খেয়েছি তোমার জন্য বলো তো? সায়ন কি পারবে তোমাকে এতোটা ভালোবাসতে? আচ্ছা আমি এখন চলে যাবো।রাত তিনটা বাজে দেখেছো।তুমি এভাবে আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে চাইলে।তোমার চিন্তায় ঘুম হবে না রাতে আমার।এখন একটু ভালোবাসা দাও তো আমি চলে যায়।কি হলো দাও?”

কথাটা আমাকে ঝাকিয়ে বললেন উনি।আমি উনার মুখের দিকে শুধু তাকিয়ে আছি।কিচ্ছু বলছি না।কারণ আমি জানি উনার যা মন চাই শুধু তাই করে।আমার খুব রাগ হচ্ছে উনার উপরে।উনি আচমকা আমার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিলেন।ব্যাথা ঠোঁটে আমার যন্ত্রণা হচ্ছে।আমি উনাকে ধাক্কা দিলাম না।আমি বুঝে গেছি রেগে কিছু বললে আমাকেই কস্ট দিবেন উনি।সকালের মতোন যদি কামড় দেয়? আমি চোখদুটো বন্ধ করে নিলাম। উনার পিঠে হাত রেখে খুব জোরে নখ দিয়ে খামচে ধরলাম।উনি ব্যাথা পেয়ে আমার ঠোঁট ছেড়ে দিলেন।আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,

—“কি হলো জানেমন? ভালো লাগছে না আমাকে? এভাবে খামচি দেয় কেউ? ব্যাথা পেলো তো তোমার ছোট্ট কালের বিয়ে করা স্বামীটা।কাল যেন তোমার হাতের এই নখগুলো না দেখি।ঠিক আছে?”

আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি।উনি আমাকে ঝাকিয়ে বললেন,

—“কি হলো বলছো না কেন?”

আমি মাথা কাত করে হ্যাঁ অর্থ বোঝালে উনি মুচকি হেসে পাইপ বেয়ে নিচে চলে যায়।

আমার খুব রাগ হচ্ছে। কেন হচ্ছে বারবার এমনটা? উনি কেন বারবার আসছে আমার কাছে।রাগে মন চাইছে নিজের চুল টেনে টেনে ছিড়তে।ভাবছি কি করবো উনাকে আমি?

চলবে,