দম বন্ধ ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
4738

#দম_বন্ধ_ভালোবাসা
#পার্ট_পাঁচ
#Mst_Liza

লিফট বন্ধ থাকায় সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি।ছয়তলা পর্যন্ত এসেছি।সামনেই শিশু ওয়ার্ড।রোগীদের চেকাব করে বের হলেন উনি।উনার সাথে আরও তিন-চারজন ডাক্তার আছে।আমাকে দেখে উনি দাড়িয়ে পরলেন। সবাইকে যেতে বলে এগিয়ে আসলেন আমার দিকে। আমি না দেখার ভান করে সিঁড়ির উপরে ছুটলাম। কিছুটা এসে দাড়িয়ে পেছনে মাথাটা ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম উনি আছে নাকি।দেখলাম উনি আমার পেছনেই দাড়ানো।ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার।আমাকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে উনি হেসে উঠলেন।গালটা টেনে ধরে বললেন,

—এতো ভয় পাওয়ার কি আছে জানেমন? আমিতো তোমারই।মুখটা দেখেতো মনে হচ্ছে বাঘ দেখেছো।আচ্ছা শোনো এভাবে ভয়ে ভয়ে আর থাকতে হবে না।আমি আজ থেকে তোমাদের কোনো ক্লাস নেবো না।জাস্ট হসপিটালেই থাকবো।তুমি মন দিয়ে তোমার পড়ালেখাটা চালিয়ে যাও।তোমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করও।

আমি ভাবছি উনি কি বলছে এটা? একদিনে এতো পরিবর্তন কিভাবে হলো উনার?

উনি মুচকি হেসে আমাকে ঘুরিয়ে দিয়ে কাঁধ ধরে ঠেলতে ঠেলতে ক্লাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে,

—তুমি আমার ছিলে আমারই থাকবে।শুধু ভয় কি জানো? তোমার মনে আমি নেই।তবে এসে যাবো।একটু ভালোবাসলে আর কেয়ারিং তোমাকে বোঝাবে আমার ভালোবাসাটা।

ক্লাসরুমের সামনে আসলে উনি আমার হাতটা ধরে বসলেন। আমি কেঁপে উঠলাম। উনি আহ্লাদ স্বরে বললেন,

—স্বামীকে এভাবে বিদায় দেবে?

আমার চোখদুটো বড় বড় হয়ে উঠলো।উনার হাতের মাঝ থেকে নিজের হাতটা অহেতুক ছাড়াবার চেষ্টা করলাম। অসহায় দৃষ্টিতে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম,

—প্লিজ যেতে দিন আমায়।আপনি কেন বুঝছেন না আমি আপনাকে…

এটুকু বলতেই আমার ঠোঁট দুটো বন্ধ হয়ে গেলো।আমার মাথাটা এক হাতে আকড়ে ধরে ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলো।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।উনি আমায় ছেড়ে দিয়ে আমার ওড়নার আঁচলটা দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছতে লাগলেন। আমি ঘুরে চলে আসতে লাগলে আমার হাতটা আবার ধরলেন। আমাকে টেনে নিজের সামনে এনে বললেন,

—তোমাকে আমি বলেছি যেতে?

আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি। ভাবছি আর কি করবেন উনি? না চাইলেও উনার এসব সহ্য করতে হবে।উনাকে এগিয়ে আসতে দেখে নিজের চোখদুটো বন্ধ করে নিলাম। উনি আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁটের নিচটা মুছে দিয়ে বললেন,

—তোমার লিপস্টিক লেপ্টে গেছে। এই অবস্থায় সকলের সামনে যাবে?

উনার কথায় আমি নড়ে চড়ে উঠলাম। আমার চোখ থেকে চশমাটা খুলে উনি মুখের সামনে এনে ধরে বললেন,

—নিজেই দেখে ঠিক করে নাও।এখন তোমায় স্পর্শ করে আমি আর পাগল হতে চায় না।

উনি এটা বলতেই আমি চশমাটা উনার হাত থেকে একটানে নিয়ে ক্লাস রুমের মধ্যে ঢুকে পড়লাম।

আজ অনেক দ্রুত কলেজ এসেছি।ক্লাসরুম একদম ফাঁকা। হোস্টেলে থাকলে এক মুহূর্ত শান্তি নেই।উনার কথা ভেবে পাগল হওয়ার উপক্রম।শুধু ভাবি একটা মানুষ এতোটা নিলর্জ্জ হয় কিভাবে? পৃথিবীতে এতো মেয়ে থাকতে আমার পেছনেই পরেছেন উনি।আর এখানে আসলে উনার এই দম বন্ধ ভালোবাসা। আমার অসহ্য লাগছে উনাকে।কিছুদিন পর সায়ানের সঙ্গে বিয়ে। সায়নকে এসব জানলে বিয়ে করবে আমাকে?

আমি সায়ানকে ফোন করলাম।তিন থেকে চার বার রিং হওয়ার পর সায়ান নিজেই ব্যাক করলো।আর রেগে গিয়ে কথা বললো।আমি রিসিভ করতেই আমাকে বলে উঠলো,

—এখন আমি মিটিংয়ে আছি।বারবার কল দিয়ে বিরক্ত কেন করছো ফুল? তোমাকে না বলেছি যখন সময় পাবো আমি নিজেই তোমাকে কল দিবো।তাড়াতাড়ি বলো কি বলবে? আমি বিজি আছি হাতে বেশি সময় নেই আমার।যে তোমার সাথে বসে বসে কথা বলবো।

এইটুকু শুনে আমি কি জবাব দিবো ভাবছি।সায়ান আমাকে একটা ধমক দিয়ে বললো,

—কথা বলছো না কেন? এভাবে চুপ করে থাকলে আমার রাগ হয়।

সায়ানের কথা এমন যে শুনলেই ভুলে যায় সব।কি বলতে ফোন করেছিলাম আর কি বলবো ভুলে গেছি।শুধু বললাম,

—আমার সাথে একটু দেখা করবে সায়ান?অনেকদিন তো আমাদের দেখাও হয় না।

সায়ান চিৎকার করে উঠে বললো,

—এটা ছাড়া আর কিছু বলতে পারো না তুমি? যখনই ফোন দাও এক কথা।দেখা করার সময় আমার হাতে নেয়। বাবার বিজনেস এখন আমি সামলাচ্ছি। এখন আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।এখানের অনেক দায়িত্ব আমার উপর।আর তুমি বলছো তোমার সাথে গিয়ে দেখা করবো আমি? একদিনে কত লোকসান হবে তুমি জানো? তা কিভাবে জানবে? তুমি তো ডাক্তারি পড়ছো।মানুষের সেবা করতে।বলেছি বিয়ে করে। সংসার করও। কি নেই আমার? রাখও তো তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না আমার।

কথাগুলো বলেই কলটা কেটে দিলো সায়ান।আমার খুব কান্না আসছে সায়ান এমন কেন? একটু হেসে কথা বললে কি হয়? এমন সময় পেছনের থেকে কেউ হেসে উঠে বললেন,

—জানেমন এমনটাই হবে সায়ানকে যদি তুমি বিয়ে করও।বাবাহ এতো তেজ।এইজন্যই তো বলি আমার মতো এতোটা ভালো কেউ বাসতে পারবে না তোমাকে।

এমনিতেই সায়ানের কথায় রাগ হচ্ছে তার উপর উনি এসে এসব বলছে।আমি রেগে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

—কতটা চেনেন আপনি সায়ানকে? সায়ান যেমনই হোক আমাকে ভালোবাসে।আমি জানি সায়ান আমাকে ভালোবাসে।সায়ান একটু ভিন্ন।কিন্তু সায়ানের এই ব্যাবহারে আমি অভ্যাস্ত।অন্তত আপনার মতোন তো না সায়ান।একটুও খারাপ লাগেনি আমার।সায়ানের এই ব্যাবহারটা আমি সহ্য করতে পারি কিন্তু আপনাকে না।

আমার কথাটা শুনে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বললেন উনি,

—কিন্তু আমার কস্ট হয় জানেমন।খুব কস্ট হয়।আমি এতো কস্ট নিতে পারি না।তুমি সামান্য রেগে কথা বললেই আমার এই বুকে লাগে।আমি পারিনা নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে।এই ভাবে কথা বলার জন্য একদিন কাঁদতে হবে তোমার।সায়ানের এক অংশটুকু যদি তুমি আমাকে বুঝতে তাহলে আজ আমরা দু’জনে সুখি হতাম।ভালো থাকতাম।সায়ান খুব খারাপ। ও তোমায় শুধু কষ্ট দেয়।

আমার বিরক্ত লাগছে এখন উনার কথা শুনতে।এগিয়ে গিয়ে উনার শার্টের কলারটা টেনে ধরে বললাম,

—আর একটা কথা বলবেন না আপনি।নইলে আমি কি করবো নিজেও জানি না।সায়ানের নামও আপনার মুখে শুনতে চাই না আমি।নইলে…

উনি ছলছল চোখে তাকিয়ে বললেন,

—নইলে আমায় মারবে? মারো! ছোটবেলা তোমার জন্য আমি অনেক মাইর খেয়েছি।আমাকে যতো অপমান করও।আমার ভালোবাসা নিয়ে যতো মজাই করও।তোমাকে আমি কারও হতে দেবো না যতদিন আমি বেঁচে আছি।সায়ান তোমাকে পাওয়ার যোগ্যতাও রাখে না।তুমি আমার ভালোবাসা ফুল।

—নাহ!

—হ্যাঁ।

চলবে,,,,