দূরত্ব পর্ব-১৩+১৪

0
191

#দূরত্ব
#part:13+14
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)

রাহাত হাতে থাকা ডায়েরি সামনের মানুষটার দিকে এগিয়ে দিল। রোহান ডায়েরি টা হাতে নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাহাত বলে উঠল এখানে নয় নিরিবিলি একটা জায়গা তে বসে আজ শুনব তোর না বলা সব কথা চল!!!!!!!!


সকাল বেলা মায়ের ফোন পেয়ে রাহাত ছুটে আসল এয়ারপোর্টে। যেই ছেলে আজ পর্যন্ত দেশের বাহিরে কোথায়ও যায় নি এমনকি পড়ালেখার জন্য সবাই মিলে জোর করেও লন্ডন পাঠাতে পারে নি সেই ছেলে আজ কাউকে না জানিয়ে লন্ডন চলে যাচ্ছে সেইটা ভালোভাবে মেনে নিতে পারে নি আফসানা বেগম তাই চিন্তিত হয়ে সাথে সাথে ফোন দিল বড় ছেলেকে। একমাত্র রাহাত ই পারে রোহান মনের কথা বের করে আনতে কারণ বড্ড ভালোবাসে সে তার ভাই টা কে।।।।


রাহাত আর রোহান একটা নিরিবিলি জায়গায় এসে বসল। দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ হয়ে বসে রইল। রাহাত নিরবতা ভেঙে রোহান এর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল—-
-হঠাৎ লন্ডন যাচ্ছিস যে? (রাহাত)
-এমনিতেই ভালো লাগছিল না ভাবলাম কিছুদিন গিয়ে ঘুরে আসি। আর ঐখানেই কিছু করার প্ল্যানিং করছি।(হাল্কা হেসে বলল রোহান )
-মিথ্যে বলছিস রোহান?
-মিথ্যে কেন বলবো ভাই?
-তুই তো জানিস তোর মিথ্যে কথা বুঝতে আমার এক মিনিট ও সময় লাগে না?
-হুম,,,,আমার সত্যি কিছুদিন গিয়ে ঘুরে আসতে ইচ্ছে হলো।
-ঘুরে আসতে ইচ্ছে হলো নাকি প্রীতি কে প্রতি মুহূর্তে ভাই এর বউ হিসেবে দেখতে কষ্ট হচ্ছে? ?

রাহাত এর কথায় রোহান এর হাত থেকে ডায়েরি টা পরে গেল।
তার মানে কি ভাই সব জেনে গেল?আমার আর প্রীতির ব্যাপারে? (মনে মনে বলল রোহান)


-কিরে কথা বলছিস না যে?
-ভাই তুমি যা ভাবছো তা না।।।
-কেন এমন করলি রোহান? মেয়ে টা তোকে খুব ভালোবাসে। মেয়ে টা যে আমার সাথে খুশি না রে,,,আর কেন তুই বললি না যে তুই ওকে ভালোবাসতি?আমি কি কখনও তোদের মাঝে আসতাম বললে?????বল??জিবনে যা পেয়েছি সব তোকে দিয়ে দিয়েছি কারণ আমি যে তোকে নিজের চেয়ে ও অনেক ভালোবাসি রোহান । প্রীতি তো তোকে ভালোবাসে তুই একবার বলে দেখতি আমি কি কখনও পারতাম আমার ভাই এর ভালোবাসা কেড়ে নিতে বল??????

রোহান খেয়াল করল রাহাত এর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল কথাগুলো বলার সময় ।
রাহাত ডায়েরি নিচে থেকে তুলে খুলে কালকে রাতে পড়া চিরকুট টা বের করল আর বলতে শুরু করল-

-এই চিরকুট এর হাতের লিখা গুলো আজ আমার সামনে সবটা সত্য তুলে ধরেছে জানিস তো?কাল রাতে প্রীতির একটা বই থেকে এই চিরকুট টা পেলাম যা তোর দেওয়া উপহার। তারপর ছাদে গিয়ে অনেকক্ষণ ভাবতে লাগলাম হঠাৎ খেয়াল হলো হাতের লিখাটা যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার আমার কলিজা ভাইটার। প্রীতি যখন রাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন ডায়রি টা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম। সারারাত ধরে পুরোটা ডায়েরি পড়লাম আর চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ল।

রোহান চুপচাপ বসে রাহাত এর বলা কথাগুলো শুনছে।

-জানিস রোহান প্রীতি খুব কষ্ট পাচ্ছে তোকে ছাড়া । ও যে আমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারছে না রে। ওর সরল মন টা যে খুব করে চাই তোকে খুব। আজ ডায়েরি টা না পড়লে আমি কখনও জানতাম না মেয়ে টা এতো ভালোবাসে তোকে। তোর আর ওর ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা যে খুবই সামান্য রোহান খুবই সামান্য । রোহান তুই আমার জন্য এতো বড় একটা সেক্রিফাইচ করেছিস তাই না?নিজের এই ভাইটার জন্য নিজের ভালোবাসার কেনো কুরবানি দিলি রোহান কেন আমাকে ছোট বানিয়ে দিলি প্রীতির কাছে?ও যে আমাকে সহ্যই করতে পারে না।আরেকটা কথা জানিস রোহান প্রীতি তোকে ভুল বুঝছে। কিন্তু আমি জানি তুই প্রীতি কে ঠকাস নি শুধু মাত্র আমার জন্য এমন করেছিস। প্লিজ আমার সাথে চল প্রীতির ভুল ভাঙগাতে হবে আর তোদের দুজনকে এক করতে হবে।

কথাটা বলে রাহাত রোহান হাত ধরে টেনে তুলল। রোহান রাহাত সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।

-এই রোহান তুই বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস কেনো ভাই?আমি তোদের দুজঁনকে এক করে দিবো।


রোহান কান্না থামিয়ে রাহাত এর হাতে ধরে বলল আর চাইলেও যে আমরা এক হতে পারবো না ভাই।
-কেনো পারবি না?(অবাক হয়ে )
-সেইটা আমি বলতে পারবো না। আর প্রীতি আমাকে ভুল বুঝে ঘৃণা করুক সেইটা আমি চাই। প্রীতি তোমার বউ ওর জোর করে হলেও তোমাকেই ভালো বাসতে হবে।
-আমাকে আর ছোট করিস না মেয়ে টার সামনে। মেয়ে টা মনে প্রাণে শুধু তোকে চাই।
-আমি যখন থাকবো না তখন ও চাইলেও তো আমাকে পাবে না ভাই। আমি চাই না আমাকে ভালোবেসে ও সারারজীবন একা কাটিয়ে দিক। আমি চাই ও তোমাকে ভালোবেসে সারাজীবন ভালো থাকুক । আমার হাত ধরে মাত্র কয়েক টা মাস কাটিয়ে সারাজীবন একা না থাকুক।



রোহান এর কথায় অবাক হয়ে রাহাত জিজ্ঞেস করল—-
-মাত্র কয়েক মাস মানে?
-,,,,,,,,,,,,,
-চুপ করে আছিস কেনো রোহান বল,,,,,,,,
-,,,,,,,,,,
-আমি তোকে বলতে বলেছি ডেমেড????? (ধমক দিয়ে বলল রাহাত)


রোহান ব্যাগ খুলে একটা কাগজ রাহাত এর দিকে এগিয়ে দিল। রাহাত কাগজ টা খুলে দেখে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অনেকক্ষণ নিরবতা বিরাজমান করল দুই ভাইয়ের মাঝে……….

আচমকা রাহাত খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরল রোহান কে। দুই ভাই জরিয়ে ধরে শুধু চোখের জল ফেলতে লাগল।
-এতো বড় একটা কথা কেনো লুকালি রোহান? (কান্না করতে করতে বলল রাহাত)
-তোমাদের কে জানানোর সাহস যে আমার হয় নি ভাই। ভেবেছিলাম চিকিত্সা করালে ভালো হয়ে পড়ব কিন্তু দিন দিন আমি যে আরো মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ভাই। আমার হাতে মাত্র দুই মাস সময় আছে। আমি যখন জানতে পারলাম আমার ব্রেইন টিউমার তখন নিজেই নিজেকে শান্তনা দিলাম যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ভালো করে ট্রিটমেন্ট করালে কিন্তু ডক্টর আংকেল জানালো আমার হাতে মাত্র দুই মানথ সময় আছে। আর আমি যদি রিস্ক নিয়ে অপারেশন করি তাহলে হয়তো বাঁচব না হয় মরব। আমি যে তোমাদের ছেড়ে যেতে চাই না ভাই দুই মানথ তোমাদেরকে চোখের সামনে তো দেখতে পারব অপারেশন না করালে। আর প্রীতি কে ছাড়া থাকার কথা আমি কল্পনায় ও কখনও ভাবি নি। বড্ড ভালোবাসি মেয়ে টা কে বড্ড বেশি। যখন জানতে পারলাম তুমি প্রীতি কে বিয়ে করতে চাও তখন আমার ভাবলাম তুমিই পারবা মেয়ে টা কে সারাজীবন ভালো রাখতে।

কথাগুলো বলতে বলতে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়ল রোহান ।
-তোমি মেয়ে টা কে জোর করে হলেও তোমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করো ভাই নাহলে মেয়ে টা যে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে আমার ভালোবাসায় ।
-ভালোবাসা জোর করে হয় রোহান?
-জানিনা কিন্তু আমি পারবো না আমার জান টা কে নিজের সাথে জরিয়ে সারাজীবনের জন্য একা করে দিয়ে যেতে।
-ঠিক আছে। তোর কথাই রইল কিন্তু আমার যে সবাই কে জানাতে হবে তোর অসুস্থতার ব্যাপারে ।

রোহান রাহাত কে নিজের কসম দিল যেন কাউকে না জানায়। অনেক চেষ্টা করেও রোহান কে আটকাতে পারল না রাহাত । রোহান চলে গেল লন্ডন ।

গাড়িতে বসে চোখের জল ফেলছে রাহাত নিজের কলিজা ভাই টা আর মাত্র দুই মানথ বাঁচবে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে। ডক্টর আংকেল কে কল দিয়ে ভালো ভাবে সব জেনে নিল সে।

আল্লাহ রোহান কে কেন?আমাকে দিয়ে দিতা এতো বড় রোগ।।রোহান আর প্রীতি যে একৈ অপরকে খুব ভালোবাসে। তুমি কেন ওদের মাঝখানে আনলা আমাকে। আমার ভাই টা কে ভালো করে ওদের মাঝখান থেকে আমাকে সরিয়ে নাও প্লিজ…গাড়িতে নিজের হাত দিয়ে ঘুষি দিতে দিতে কথাগুলো বলল রাহাত।


অপরদিকে বার বার কল দিচ্ছে প্রীতি। সকাল গিয়ে দুপুর হলো এখনও কেনো আসছে না রাহাত চিন্তায় পড়ে গেল প্রীতি। রাহাত ফোন টা রিসিভ করে বলতে শুরু করল-

-বাসায় চলে যাবো তোমাদের বাসার নিচে আছি গাড়ি নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসো।।।।।
-কিন্তু,,,,,,,

প্রীতি কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা কেটে দিয়ে গাড়িতে বসে পড়ল রাহাত।


চলবে,,,,,
#দূরত্ব
#part:14
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)

প্রীতি তার বাবা মা কে বুঝিয়ে নিচে আসল। এসে দেখল রাহাত গাড়িতে বসে আছে।রাহাত কে খুব চিন্তিত আর কেমন যেন দুঃখজনক দেখাচ্ছিল।

প্রীতি গাড়িতে গিয়ে বসে রাহাত এর দিকে তাকিয়ে বলল–
-আজকে তো আমাদের থাকার কথা ছিল হঠাৎ চলে যাচ্ছেন যে?
-অফিসের জরুরি কিছু কাজ ছিল।(গম্ভীর গলায় বলল রাহাত)
-আচ্ছা আপনার কি কোনো কারণে মন খারাপ?
-না….

যেই মানুষ টা এতো শান্তশিষ্ট থাকে সে আজকে এমন গম্ভীর ভাবে কথা বলছে আর ভিতরে ভিতরে কেমন রাগ আর কষ্ট চেপে রেখেছে মনে হচ্ছে (মনে মনে বলল প্রীতি)

আমি কি পারব আমার রোহান এর কথাটা রাখতে?আমি কি পারবো প্রীতি জোর করে আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করতে?রোহান কেন দিলি এমন কসম আমায়?তোর প্রীতি যে শুধু তোকে ভালোবাসে আমাকে নয় (মনে মনে বলল রাহাত)

-আপনার সাথে একটা কথা ছিল? (প্রীতি)
রোহান সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলল -কি কথা বলো?
-জানিনা আপনি কি ভাববেন? তবু ও আমার বলা জরুরি ।
-প্রীতি কি তাহলে আজকের ওর আর রোহান এর ভালোবাসার কথা বলবে?ওর কথা শুনে আমি নিজের কষ্ট চেপে রাখতে পারব? (মনে মনে রাহাত)
কি কথা বলবা তাড়াতাড়ি বল?
🌼
-আসলে রিহার ব্যাপারে কিছু বলতে চাই। আপনি তো আমার চেয়ে ভালো পিয়াশ ভাই কে চিনেন আপনার তো খুব ভালো ফ্রেন্ড ।
-হুম,,,তো? (অবাক হয়ে রাহাত)
-রিহা আর রাহাত ভাইয়া একে অপরকে ভালোবাসে । পিয়াশ ভাইয়া তো কানাডা চলে যাবে তাই চাইছিল সামনের সপ্তাহে রিহা কে তাঁদের বাড়ির বউ বানিয়ে নিতে।

প্রীতির কথা শুনে রাহাত ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।
-কি হলো আপনি এইভাবে তাকাচ্ছেন কেন? (ভয়ে ভয়ে প্রীতি)
-রিহা কে বলো পিয়াশ যেন কালকে ওর মাকে নিয়ে বাসায় আসে বিয়ের কথা পাকা করতে।
(সামনের দিকে তাকিয়ে বলল রাহাত)

-আমি জানতাম আপনি রাজি হয়ে যাবেন। রিহা শুনলে অনেক খুশি হবে।(মুচকি হেসে বলল প্রীতি)



প্রীতি আজ খুব খুশি কারণ সে পেরেছে চারজন ভালোবাসার মানুষ কে সারাজীবন এর জন্য এক করে দিতে। হে,,,,সে আজ তার মা বাবার কাছে নিরব আর নিহার কথা ও বলেছে। তার ফ্যামিলি খুব খুশি নিহার মতো মেয়ে ছেলের বউ হিসেবে পাবে জেনে।
প্রীতি নিজের ভালোবাসার মানুষকে পাই নি বলে কি হয়েছে চারজন ভালোবাসার মানুষ কে এক করতে পেরেছে ভেবে মনের মধ্যে একরকম শান্তি বিরাজ করতে লাগল তার।।।।।
🌼

গাড়ি এসে শেখ বাড়ির সামনে থামল। প্রীতি আর রাহাত দরজার কাছে আসতেই না আসতেই আফসানা বেগম দৌড়ে আসলেন বড় ছেলের কাছে।
-কিরে তোরা চলে এলে যে এতো তাড়াতাড়ি? (প্রীতির শাশুড়ি )
-তোমাকে খুব মিস করছিলাম তো তাই চলে এসেছি(মুচকি হেসে আফসানা বেগম কে জরিয়ে ধরে বলল প্রীতি)

আফসানা বেগম রাহাত এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল রোহান আসে নি?ও কি সত্যি চলে গেছে?
রাহাত এর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না কষ্টে তার বুক টা ফেটে যাচ্ছে ভাই টার জন্য চিৎকার করে মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। তবুও তার বুক ফাটা কষ্ট টাকে চেপে রেখে মায়ের উদ্দেশে বলল—
:
-মা ও ঘুরতে গেছে কিছুদিন এর জন্য । আমি ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলেছি। তুমি কিছু চিন্তা করো না। ওর ঘুরাঘুরি শেষ হলেই চলে আসবে লন্ডন থেকে। যখন আসবে তুমি ওর সাথে কথা বলে নিও।(মিথ্যে হাসার অভিনয় করে বলল রাহাত)
-ঠিক আছে। তোরা রুমে গিয়ে রেষ্ট কর ।
-ঠিক আছে মা।


প্রীতি আর রাহাত রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিল। রাহাত রেডি হয়ে নিল। রাহাত কে দেখে প্রীতি বলল
-আপনি কোথায় ও যাচ্ছেন?
-হুম,,,,
-কখন আসবেন?
-আসলে তো দেখবাই।
-এইভাবে কথা বলছেন কেন?
-জানিনা।।।।।
প্রীতি আর কিছু বলল না রাহাত রুমথেকে বেরিয়ে চলে গেল।
প্রীতি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল রোহান লন্ডন কি সত্যিই ঘুরতে গেছে?কারণ তার যতটুকু মনে আছে রোহান একবার বলেছিল ও দেশের বাহিরে কোথায় ও যাওয়া পছন্দ করে না। একবার যখন প্রীতি হানিমুনে সুইজারল্যান্ড যাওয়ার কথা বলেছিল তখন সে বলেছিল যে তারার দেশের বাহিরে কোথায় ও হানিমুনে যাবে না রাঙামাটি যাবে।।
হে আল্লাহ,,,,আমি রোহান কে ভুল বুঝছি না তো??ওর ভালোবাসা যে কখনও আমার কাছে অভিনয় মনে হয় নি। তাহলে কি আমি ভুল বুঝছি আমার রোহান কে? (কথাগুলো ভাবতে ভাবতে প্রীতির চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়তে লাগল)



পুরো বিকাল প্রীতি রিহার সাথে কথা বলে কাটিয়ে দিল। রিহা খুব খুশি প্রীতির মুখ থেকে ওর বিয়ের কথা শুনে। অপরদিকে নিহা ও খুব খুশি প্রীতি কে ফোন দিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলল।
🌼

রাত নয়টা বেজে গেছে কিন্তু রাহাত এখনও বাসায় ফিরে নি। আফসান বেগম একবার কল দিয়েছিলেন তখন বলেছিল যে অফিসের কাজে ব্যস্ত আছে।তাই প্রীতি আর কল দেয় নি। কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেছে তাই প্রীতি বাধ্য হয়ে অনেকগুলো কল দিল রাহাত কে কিন্তু রাহাত কল ধরছে না।
প্রীতি চিন্তায় পড়ে গেল কোথায় গেল মানুষটা?কল ও ধরছে না এখনও বাসায় ফিরছে না কেন?বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রীতি রাহাত এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। সে রাহাত কে ভালো না বাসুক কিন্তু রাহাত তো তার স্বামী । আর স্ত্রী হিসেবে স্বামীর জন্য এতটুকু চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক ।


প্রীতি গাড়ির শব্দে নিচে তাকাল। রাহাত গাড়ি দেখে প্রীতি নিচে গিয়ে দরজা খুলে দিল বাকি সবাই ঘুমিয়ে আছে তাই। গাড়ি থেকে অচেনা একটা ছেলে বের হয়ে রাহাত কে ধরে ধরে নিয়ে আসল। প্রীতি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রাহাত এর কি হলো?
ছেলেটা প্রীতির কাছে এসে বলল-
ম্যাম আমি স্যার এর পিএ।।। স্যার কে আমি কখনও দেখি নি নেশা করতে কিন্তু স্যার আজ অনেক বেশি নেশা করেছে.।
প্রীতি ছেলেটার কথাগূলো শুনে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে-একি শুনছে সে রাহাত ড্রিঙ্কস করেছে..কেউ দেখার আগে রাহাত কে রুমে নিয়ে যেতে হবে.।।।


প্রীতি আর ছেলেটা মিলে রাহাত কে রুমেএনে শুয়ে দিল। ছেলেটা চলে গেল। প্রীতি রাহাত এর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল-
কি হয়েছে আপনার আপনি এতো ড্রিঙ্কস করেছেন কেন রাহাত???আপনার কি কোনো কারণে কষ্ট হচ্ছে?


রাহাত প্রীতির কথায় পাত্তা না দিয়ে প্রীতি কে বিছানায় শুয়ে দিল। প্রীতির উপর নিজের শরীরের পুরো ভর ছেড়ে দিল। প্রীতি চিৎকার করে বলতে লাগল রাহাত কি করছেন আপনি?প্লিজ আপনার হুশ নেই ছেড়ে দিন আমায়। জোর করে কোনো কিছু হয় না রাহাত। প্লিজ আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না।

কিন্তু রাহাত প্রীতির কোনো কথায় শুনল না । নেশার ঘোরে রাহাত প্রীতির মধ্যে ডুব দিল। প্রীতির চোখ দিয়ে শুধু জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।


চলবে,,,,,,,,

(বানান ভুল হলে প্লিজ নিজেরা একটু বুঝে পড়ে নিবেন))