দূরত্ব পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

0
363

#দূরত্ব
#part:17
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)

🌼🌼
পাঁচ বছর পর,,,💕

কবরস্থানে একটি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে একটা ছেলে। দৌড়ে এসে একটা বাচ্চা ছেলে পিছন থেকে ছেলে টাকে জরিয়ে ধরল বাবাই বলে।
ছেলেটা বাচ্চা টার দিকে ফিরে বাচ্চা টা কে জরিয়ে ধরল।তারপর বাচ্চা টার কপালে গালে অনবরত কিস করতে লাগল। বাচ্চা টা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল—

-আচ্ছা বাবাই তুমি সবসময় এখানে আসো কেন?
-এখানে তোমার আমার আপন একজন মানুষ ঘুমিয়ে আছে যে আমাদের খুব ভালোবাসত। আমাদের ভালোবেসে নিজের ভালোর চিন্তা করে নি কখনও ।
-আমাদের ভালোবাসত বাবাই?
-হুম,,,,তোমার মাম্মা কে আমাকে খুব ভালোবাসত এই মানুষ টা তোমাকে ও।
-আচ্ছা বাবাই ওনি এইখানে ঘুমিয়ে থাকেন কেন?আমাদের সাথে দাদা দাদুর সাথে বাসায় থাকে না কেন?
-ওনি আর আমাদের সাথে থাকতে পারবে না বাবা। ওনি এইখানেই ঘুমিয়ে থাকবে সবসময় ।
-ওহ,,,বাবা ওনি আমার কি হয়?
🌼

ছেলেটা আচমকা বলে উঠল বাবা হয়। তারপর হাত দিয়ে নিজের চোখের জল মুছে নিল।
-বাবাই তুমি তো আমার বাবা তাহলে ওনি আমার বাবা হয় কিভাবে?
-ওনি ও তোমার বাবা হয় । বড় বাবা।।।
-বড় বাবাই?
-হুম । আচ্ছা তুমি কার সাথে এসেছো এখানে?
-মাম্মা নিয়ে এসেছে।
ওই দেখো মাম্মা দাঁড়িয়ে আছে।



প্রীতি লাল কালার একটা শাড়ি পড়ে আছে। তাকে একদম পরীর মতো লাগছে আজ। রোহান আর রাহাত এর বেগুনি পরী আজ লাল শাড়ি পড়েছে।
ছেলেটা বাচ্চা ছেলেটা কে কোলে তুলে নিয়ে প্রীতির দিকে এগিয়ে আসল।

রিহাব কে তুমি এইখানে কেন নিয়ে আসছ প্রীতি?
-রিহাব খুব জেদ করছিল আপনার কাছে আসার জন্য রোহান শেখ।
রিহাব শেখ টা আপনার মতোই জেদি হয়েছে।আর রাহাত শেখ এর মতো হয়েছে দেখতে একদম।
(কথাটা বলার সময় প্রীতির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল)

রোহান রিহাব কে গাড়িতে বসিয়ে প্রীতি নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল।
-কাঁদছ কেন?তোমাকে কাঁদতে দেখলে একদম ভালো লাগে না। এমনিতেই আমার কারণে পাঁচ বছর আগে খুব কষ্ট পেয়েছো।রাহাত ভাই আজ আমার জন্য না ফেরার দেশে চলে গেল। শেষ বারের মতো একটু ও কথা বলতে পারলাম না ভাইটার সাথে।

-তোমার কোনো দোষ নেই রোহান । প্লিজ নিজেকে আর কখনও দোষী মনে করবে না।
-গাড়িতে বসো।
-হুম,,,,


রোহান প্রীতি রিহাব কে নিয়ে পার্কে আসল। রিহাব অন্য বাচ্চা দের সাথে খেলা শুরু করল।প্রীতি আর রোহান একটা বেঞ্চে বসল। প্রীতি রোহান এর কাঁধে মাথা রেখে বসল। রোহান রিহাব এর দিকে তাকিয়ে বলল—

-প্রীতি?
-হুম,,,
-রিহাব একদম রাহাত ভাই এর প্রতিচ্ছবি তাই না?
-হুম,,,
-আচ্ছা রিহাব যদি কখনও জানতে পারে আমি ওর আসল বাবাই না?
-এমন কখনও হবে না। তুমিই ওর আসল বাবাই। ও যখন বুঝতে শিখবে তখন আমরা ওকে সব খুলে বলব। আমার বিশ্বাস ও তোমাকেই বাবাই বলবে তখন।
-হুম,,,আমি যদি সেদিন মরে যেতাম ?
-আর কখনও এমন বলবা না রোহান । রাহাত এর প্রতি অনেক সম্মান ছিল আমার। কিন্তু আমি ওনাকে ভুল বুঝলাম । আজও খুব ঘৃণা হয় নিজের প্রতি রাহাতের মন টা বুঝতে পারি নি । কিন্তু তিনি মনের মধ্যে সম্মানের স্থানে থাকবে আজীবন ।


পাঁচ বছর আগে সেদিন হাসপাতালে প্রীতি চোখ খুলে নিজের হাতের মুঠোয় রোহান এর হাত টা দেখতে পেল। দেখল রোহান বেডে শুয়ে আছে তার হাতটা ধরে।প্রীতি রোহান এর দিকে তাকিয়ে দেখল রোহান চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তারপর সামনে তাকিয়ে দেখল নিহা দাঁড়িয়ে আছে। প্রীতি নিহা বলে ডাকতে যাবে তখন নিহা হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে বলল চুপ হতে। তারপর আলতো করে রোহান এর হাত থেকে প্রীতির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে প্রীতি কে বাহিরে নিয়ে আসল নিহা।

-চল,,,
-কোথায়?
-রাহাত এর কাছে?
-রাহাত এর কি অবস্থা?
-আগে তুই চল আমার সাথে,,,

নিহা প্রীতি কে নিয়ে রাহাত এর কেবিনে আসল।প্রীতি রাহাত এর কেবিনে ঢুকে অবাক হয়ে গেল। সবার দিকে তাকিয়ে দেখল সবার চোখে জল। রাহাত এর মুখ টা সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। প্রীতি নিহার দিকে তাকিয়ে বলল-নিহা।।

-রাহাত ভাইয়া আর নেই প্রীতি(কথাটা বলে কেঁদে দিল নিহা। )রোহান ভাইয়া বেঁচে আছে কিন্তু ওনি রাহাত ভাই এর ব্যাপারে এখনও কিছু জানে না। তুই যখন বেহুঁশ ছিলি তখন রোহান ভাই এর একবার হুশ ফিরেছিল। তোকে এই অবস্থায় দেখে ওনি হাইপার হয়ে যাচ্ছিল তোর হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় নেয় তখন।

“দুইদিন পর রোহান কে বাড়িতে আনা হয় তখন সে রাহাত এর ব্যাপারে জানতে পেরে নিজেকে দোষী করতে লাগল রাহাত এর মৃত্যুর জন্য । সবাই তাকে অনেক বুঝালো। দুইদিন ধরে প্রীতি নিজেকে রুমে বন্দি করে রেখেছিল । আফসানা বেগম রোহান আর প্রীতি আর পরিবারের বাকি সবার সামনে রোহান কে বলল—

-তুই কি তোর ভাইয়ের বলা শেষ কথাটা রাখবি রোহান?
-কি কথা মা?
-রাহাত মৃত্যুর আগে আমাকে আর তোর বাবাকে বলে গিয়েছে ওর মৃত্যুর পর যেনো তোর হাতে প্রীতির হাত টা তুলে দেই। তুই প্রীতি কে বিয়ে কর বাবা। আমরা সবাই চাই তোরা দুইজন একসাথে যেন সুখে থাকতে পারিস।


রোহান এর ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসল প্রীতি। সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরল ওরা তিনজন।সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই না ঢুকতে সবাই এসে ওদের মুখে স্প্রে করতে লাগল। চারদিকে তাকিয়ে দেখল পুরো বাড়ি বেলুন দিয়ে সাজানো আর দেয়ালে লিখা বড় করে Happy Anniversary.
প্রীতি আর রোহান দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। রিহা আর নিহা এসে বলল সারপ্রাইজ,,,,,
‘”””

-এতোকিছু? (প্রীতি)
-সব তোর পিচ্ছি ছেলেটার জন্য করতে পেরেছি।
প্রীতি বুঝতে পারল রিহাব কেনো আজ ঘুরতে যাওয়ার জন্য জেদ করছিল।সবাই মিলে প্রীতি আর রোহান কে ওইশ করল। অনুষ্ঠান শেষে প্রীতি রুমে এসে শুয়ে পড়ল। রোহান প্রীতির পাশে শুয়ে প্রীতি কে জরিয়ে ধরল।
-এই কি করছো?রিহাব চলে আসবে তো?
-আসবে না,,,ও মা আর বাবার সাথে ঘুমাবে আজ।
-আচ্ছা আমি ঘুমাবো। সরো আমার ওপর থেকে,
-জ্বী না।।(দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল রোহান )
-মানে ?
-মানে হলো আজ তোমার আর আমার মাঝে আর কোনো দূরত্ব থাকবে না। পাঁচ বছর আগে যেই দূরত্ব ছিল সব দূরত্ব কেটে যাবে আজ। আজ আমাদের মাঝে কোনো দূরত্ব নয় থাকবে শুধু ভালোবাসা ।


(সমাপ্ত )